alt

opinion » editorial

সংবাদমাধ্যমের ভুল ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

: বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩

সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিক কেউই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোনো সাংবাদিকের কখনো ভুল হতে পারে। ভুল হলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দায় স্বীকার করবে, ভুল সংশোধন করে সত্য উন্মোচন করবে সেটাই স্বাভাবিক। দায়িত্বশীল সংবাদমাধ্যম এই নীতি মেনে চলবে, সেটাই রীতি।

আর অনিচ্ছাকৃত কোনো ভুল স্বীকার করে নেয়ার পর গণমাধ্যমকে অভিযুক্ত না করা গণতান্ত্রিক রীতি। উদার গণতান্ত্রিক পরিবেশে স্বাভাবিক হচ্ছে, সংবাদমাধ্যমের ভুল স্বীকার করবার পর তাকে স্বাগত জানানো। কিন্তু কেউ সেটাকে স্বাগত নাও জানাতে পারেন।

কারও কারও কাছে কোনো ভুলকে অমার্জনীয় মনে হতে পারে। ভুল স্বীকার করার পরও সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক বা সংবাদমাধ্যমের প্রতি কেউ অভিযোগের আঙুল তুলতে পারেন। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ভুল প্রতিবেদন প্রকাশের বিচার চাইতে পারেন।

দেশে গণমাধ্যমের ভুল-ত্রুটির প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এবং সেই বিচার চাওয়ার সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়াও রয়েছে। প্রেস কাউন্সিল হচ্ছে গণমাধ্যমের ভুলের প্রতিকার চাওয়ার আদর্শ স্থান। সেই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে না গিয়ে, প্রেস কাউন্সিলের দ্বারস্থ না হয়ে কোনো বিতর্কিত আইনের অপপ্রয়োগ করা হবে, তা কাম্য হতে পারে না। আর কেউ যদি বিতর্কিত আইনের আশ্রয় নেয়ও সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইনপ্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে সেটাই আমাদের আশা। কারণ এ বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকরা সংবাদমাধ্যমের কাছে অঙ্গীকার করেছেন।

ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক রয়েছে। এই আইন সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিক নিপীড়নের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর আগে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘বাক স্বাধীনতা বা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাহরণ করার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়নি। এটি জনস্বার্থেই হয়েছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর মিস ইউজ বা অপপ্রয়োগ হচ্ছে।’ তিনি এই আইন সংস্কার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যদিও অংশীজনরা আইনটি বাতিলের দাবি তুলেছেন। আইনমন্ত্রী আরও বলেছিলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে সাংবাদিকদের অভিযোগের সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হবে না। অভিযোগ করা হলে একটি সেল সিদ্ধান্ত নেবে, যে আইনের আওতায় অপরাধ হয়েছে, তার প্রাথমিক প্রমাণ আছে কিনা।’

বাস্তবে আমরা আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যতয় ঘটতে দেখলাম। যেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে বিতর্ক আছে সেই আইনে প্রথম আলোর একজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হলো। সংবাদমাধ্যম আবারো আইনটির অপপ্রয়োগ দেখলো।

একটি পত্রিকা বা সংবাদমাধ্যমের যে ভুলের সুরাহা হওয়া উচিত প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে সেটার জন্য বিতর্কিত আইনের আশ্রয় নেয়া হলো কেন সেই প্রশ্ন আমরা করতে চাই।

কেউ বিতর্কিত আইনের দ্বারস্থ হলে আর আইনমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাস ভুলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়া একজন পেশাদার সাংবাদিককে তুলে নিয়ে গেল সেটা মেনে নেওয়া যায় না। সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যম ভুল সংশোধনের পরও এমন পদক্ষেপ নেয়া কতটা জরুরি ছিল?

এই ঘটনা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি তৈরি করেছে। আর এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সরকার। এখানে আরও উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওই সাংবাদিককে আটকের বিষয়ে বিস্তারিত জানতেন না, যা তিনি নিজেই বলেছেন। কারও অতিউৎসাহ সরকারকে বিপদে ফেললো কিনা, সেটাও প্রশ্ন। এটা রাজনৈতিক সরকারকে বুঝতে হবে। এবং রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব রাজনৈতিক সরকারের হাতেই থাকতে হবে।

যেই প্রতিবেদনের কারণে এই পরিস্থিতি তা নিয়ে আমাদের ভিন্নমত রয়েছে, তবে সেটা ভিন্ন আলোচনা।

আমরা বলতে চাই, খবরের ভুলের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার গণমাধ্যম, সমাজ, রাষ্ট্র কারও জন্যই ভালো হবে না। আমরা আশা করতে চাই যে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার সাংবাদিককে অনতিবিলম্বে মুক্তি দেয়া হয়েছে- এমনটাই আমরা দেখতে চাই। আর এই আইনের যথেচ্ছ প্রয়োগ হবে না এবং আইনমন্ত্রীর আশ্বাসের বাস্তবায়ন হবে বলে আমরা বিশ্বাস করতে চাই।

অ্যান্টিভেনম সংকট দূর করুন

বিলাসবহুল গাড়ি কেনার ‘অতিআগ্রহ’ নিয়ে প্রশ্ন, উত্তর কি মিলবে?

তাপমাত্রা বাড়ার মূল্য

গাছে পেরক ঠোকার নিষ্ঠুরতার অবসান হোক

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি : দায় চাপানোর সংস্কৃতি নয়, ব্যবস্থা নিন

কবর থেকে লাশ তুলে আগুন: কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অচলাবস্থা ও নাগরিক দুর্ভোগ

ঈদে মিলাদুন্নবী : মহানবীর আদর্শ অনুসরণ করা জরুরি

নীলফামারীতে শ্রমিকের প্রাণহানি: এই মৃত্যু কি এড়ানো যেত না

বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন: নারী সহপাঠীকে ‘গণধর্ষণের’ হুমকি, নারী প্রার্থীদের সাইবার হয়রানি

নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার পর কেন এই নৈরাজ্য

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে দুর্নীতির অভিযোগ আমলে নিন

নারী ও শিশু নির্যাতনের উদ্বেগজনক চিত্র

ভবদহের জলাবদ্ধতা: শিক্ষা ও জীবনযাত্রার উপর অব্যাহত সংকট

সৈয়দপুরে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের দুর্দশা

জমি রেজিস্ট্রিতে ঘুষের বোঝা: সাধারণ মানুষের ভোগান্তি

মবের নামে মানুষ হত্যা : সমাজ কোথায় যাচ্ছে?

‘জুলাই জাতীয় সনদ’ : কেন প্রশ্ন তোলা যাবে না

সুন্দরবন রক্ষায় টেকসই ব্যবস্থা নিন

মামলা, গ্রেপ্তার, জামিন : প্রশ্নবিদ্ধ আইনের শাসন

শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাশ্রমে সাঁকো নির্মাণ : ঐক্য ও উদ্যমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

বন্যা ও ভাঙন : দ্রুত ব্যবস্থা নিন

অ্যান্টিভেনমের সরবরাহ নিশ্চিত করুন

ভূমি অফিসে ঘুষ বন্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিন

জন্ম নিবন্ধনে জটিলতা দূর করা জরুরি

‘সাদা পাথর’ লুটের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিন

সার বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ আমলে নিন

তরুণদের জন্য আলাদা বুথ! সিদ্ধান্ত কার? কেন?

চিকিৎসক সংকটে জীবননগরের স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত

গণপিটুনির সংস্কৃতি রুখতে হবে এখনই

সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের ঘটনার বিচার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন

ইউনিয়ন পরিষদে নাগরিক সেবায় ভোগান্তির অবসান ঘটান

সড়কে মৃত্যু : দুর্ঘটনা নাকি অব্যবস্থাপনার ফল?

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর

নির্বাচনের ঘোষণায় স্বস্তি, তবে আছে অনেক চ্যালেঞ্জ

‘জুলাই ঘোষণাপত্র’: কিছু জিজ্ঞাসা

tab

opinion » editorial

সংবাদমাধ্যমের ভুল ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩

সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিক কেউই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোনো সাংবাদিকের কখনো ভুল হতে পারে। ভুল হলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দায় স্বীকার করবে, ভুল সংশোধন করে সত্য উন্মোচন করবে সেটাই স্বাভাবিক। দায়িত্বশীল সংবাদমাধ্যম এই নীতি মেনে চলবে, সেটাই রীতি।

আর অনিচ্ছাকৃত কোনো ভুল স্বীকার করে নেয়ার পর গণমাধ্যমকে অভিযুক্ত না করা গণতান্ত্রিক রীতি। উদার গণতান্ত্রিক পরিবেশে স্বাভাবিক হচ্ছে, সংবাদমাধ্যমের ভুল স্বীকার করবার পর তাকে স্বাগত জানানো। কিন্তু কেউ সেটাকে স্বাগত নাও জানাতে পারেন।

কারও কারও কাছে কোনো ভুলকে অমার্জনীয় মনে হতে পারে। ভুল স্বীকার করার পরও সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক বা সংবাদমাধ্যমের প্রতি কেউ অভিযোগের আঙুল তুলতে পারেন। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ভুল প্রতিবেদন প্রকাশের বিচার চাইতে পারেন।

দেশে গণমাধ্যমের ভুল-ত্রুটির প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এবং সেই বিচার চাওয়ার সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়াও রয়েছে। প্রেস কাউন্সিল হচ্ছে গণমাধ্যমের ভুলের প্রতিকার চাওয়ার আদর্শ স্থান। সেই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে না গিয়ে, প্রেস কাউন্সিলের দ্বারস্থ না হয়ে কোনো বিতর্কিত আইনের অপপ্রয়োগ করা হবে, তা কাম্য হতে পারে না। আর কেউ যদি বিতর্কিত আইনের আশ্রয় নেয়ও সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইনপ্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে সেটাই আমাদের আশা। কারণ এ বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকরা সংবাদমাধ্যমের কাছে অঙ্গীকার করেছেন।

ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক রয়েছে। এই আইন সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিক নিপীড়নের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর আগে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘বাক স্বাধীনতা বা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাহরণ করার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়নি। এটি জনস্বার্থেই হয়েছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর মিস ইউজ বা অপপ্রয়োগ হচ্ছে।’ তিনি এই আইন সংস্কার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যদিও অংশীজনরা আইনটি বাতিলের দাবি তুলেছেন। আইনমন্ত্রী আরও বলেছিলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে সাংবাদিকদের অভিযোগের সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হবে না। অভিযোগ করা হলে একটি সেল সিদ্ধান্ত নেবে, যে আইনের আওতায় অপরাধ হয়েছে, তার প্রাথমিক প্রমাণ আছে কিনা।’

বাস্তবে আমরা আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যতয় ঘটতে দেখলাম। যেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে বিতর্ক আছে সেই আইনে প্রথম আলোর একজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হলো। সংবাদমাধ্যম আবারো আইনটির অপপ্রয়োগ দেখলো।

একটি পত্রিকা বা সংবাদমাধ্যমের যে ভুলের সুরাহা হওয়া উচিত প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে সেটার জন্য বিতর্কিত আইনের আশ্রয় নেয়া হলো কেন সেই প্রশ্ন আমরা করতে চাই।

কেউ বিতর্কিত আইনের দ্বারস্থ হলে আর আইনমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাস ভুলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়া একজন পেশাদার সাংবাদিককে তুলে নিয়ে গেল সেটা মেনে নেওয়া যায় না। সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যম ভুল সংশোধনের পরও এমন পদক্ষেপ নেয়া কতটা জরুরি ছিল?

এই ঘটনা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি তৈরি করেছে। আর এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সরকার। এখানে আরও উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওই সাংবাদিককে আটকের বিষয়ে বিস্তারিত জানতেন না, যা তিনি নিজেই বলেছেন। কারও অতিউৎসাহ সরকারকে বিপদে ফেললো কিনা, সেটাও প্রশ্ন। এটা রাজনৈতিক সরকারকে বুঝতে হবে। এবং রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব রাজনৈতিক সরকারের হাতেই থাকতে হবে।

যেই প্রতিবেদনের কারণে এই পরিস্থিতি তা নিয়ে আমাদের ভিন্নমত রয়েছে, তবে সেটা ভিন্ন আলোচনা।

আমরা বলতে চাই, খবরের ভুলের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার গণমাধ্যম, সমাজ, রাষ্ট্র কারও জন্যই ভালো হবে না। আমরা আশা করতে চাই যে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার সাংবাদিককে অনতিবিলম্বে মুক্তি দেয়া হয়েছে- এমনটাই আমরা দেখতে চাই। আর এই আইনের যথেচ্ছ প্রয়োগ হবে না এবং আইনমন্ত্রীর আশ্বাসের বাস্তবায়ন হবে বলে আমরা বিশ্বাস করতে চাই।

back to top