রহমান মৃধা
আমি এখানে দুটি ভিন্ন ধরনের ছবি দিয়েছি। প্রথম ছবিটি একটি ছোট্ট শিশুর, যার বয়স ৪-৬ বছরের বেশি নয় যে কিনা দুয়ারে-দুয়ারে, রাস্তার আশেপাশে, বাসে, রিকশার পাশে, বা ফুটপাথে ফুল বিক্রি করছে। এই সাধারণ একটি ছবির মাঝেই যেনো একটি উপন্যাস দেখতে পাচ্ছি। দেশের পুরো চিত্র ফুটে ওঠেছে এই একটা ছবির মাঝে।
প্রথমে আলোচনা করি ছবির মাঝে থাকা অন্যান্য ব্যক্তিদের কথা। শিশুটি মূলত ট্রাফিক জ্যামের সময় তার ফুল বিক্রি করে। আমরা যারা মধ্যবিত্ত তারা তাদের মত করে ৫ টাকার ফুল ১০ বা ২০ টাকায় কিনে নেই। আবার ফুল কিনে তাকেই উপহার হিসেবে ফেরত দেই। আবার অনেকের নিজেরই সাহায্য প্রয়োজন তারা চুপচাপ দেখি। অনেকে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেই। যারা ধনীর শ্রেণীতে পড়ে তারা হয়ত ১০০ টাকায় ফুল কিনে নেই। আর যারা একবারেই উচ্চ শ্রেণীর, তারা অনায়াসে এরকম ১০০ শিশুর দায়িত্ব নিতে পারে। আবার যারা হয়তো এতই উচুতে থাকে যে নিচের দিকে দেখেই না, গাড়ির জানালার কাঁচ নিচে নামায়ও না। তবে সবাই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখলে হয়তো এরকম শিশু রাস্তায় দেখাই যেত না। আমরা সবাই যদি চেষ্টা করি তবে শুধু আর্থিক নয় আরো অন্যান্য অনেক পদক্ষেপ নিতে পারি।
এবার আসি শিশুর জীবন নিয়ে আলোচনায়।
এই শিশুটি একদিন বড় হবে এবং সেও নিজে ফুলের মত করে ফুটে উঠবে। কোন এক সময় তাকেও কেও না কেও কিনতে চাইবে বা কিনবে। শিশুর হাতের ফুল যেমন কোন এক সময় তার সুগন্ধ এবং শোভা থেকে সরে যাবে ঠিক তেমন করে এই শিশু মেয়েটির যৌবনের ভাটা পড়বে সেও ঝরে যাবে। তবে কিছুটা পার্থক্য থাকবে, ফুল যতক্ষণ তার বাহার দিবে ততক্ষণ তাকে সবাই ভালোবাসবে, ফুলদানিতে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখবে। পরে ছুঁড়ে ফেলবে নর্দমায়। আর শিশুটি যখন বড় হবে তাকে সমাজ নানাভাবে ব্যবহার করবে সাথে থাকবে লাঞ্চনা, গঞ্জনা এবং ঘৃণা যা তাকে লতাপাতার মত জড়িয়ে ধরবে। তারও যৌবন একদিন শেষ হয়ে যাবে, তবে বাকি জীবন নির্যাতিত, নিপতিত হয়ে সমাজের অন্ধকারে ধুঁকে ধুঁকে মরবে যদি শিশুটিকে এখন থেকেই যত্ন করে গড়তে বাবা-মা বা সমাজ ব্যর্থ হয়। এটা একটা দিক, আরেকটি দিক বাবা-মা ছোট্ট শিশুটিকে কাজে লাগিয়ে অর্থ উপার্জন করার একটি অসাধু পথ তৈরি করেছে।
এত অল্প বয়সী একটি শিশুর চরম আর্তনাদ অনেক যাত্রীর মনে বা বিবেকে যন্ত্রণার ঢেউ ফেলে অর্থ রোজগার করছে। হয়ত বাবা-মা বলবে পেটের দায়ে, তবুও এটা অন্যায় এর প্রতিবাদ করা দরকার। একই সাথে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়ভার যারা জোর করে নিয়েছে যেমন শুনেছি জনগণের ভোট ছাড়া, তাঁদেরকেও এর জবাবদিহীতা দিতে হবে, কেন এমনটি হচ্ছে! তাহলে যদি পুরো বিষয়টিতে একটু মনোযোগী হই তবে ভাবুন কোন জগতে আমাদের বাস!
ধুরোন্দার হওয়াকেও কিন্তু এক ধরনের স্মার্ট বলা যেতে পারে। যেমন বাবা-মা সন্তানকে কাজে লাগিয়ে অর্থ রোজগার করছে। একটি শিশু যার এসময় স্কুলে থাকার কথা, সমবয়সীদের সঙ্গে খেলাধুলা করার কথা অথচ সংসারের দায়ভার নিয়ে জীবনের কঠিন সময়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই শিশুটি কি জানে তার পরিণাম কি হবে! শিশু জানে না, যার ফলে বাবা-মাকেই আমরা শ্রেষ্ঠ গার্ডিয়ান বলে বিশ্বাস করি কিন্তু সে বিশ্বস্ততা কি বাবা-মা ধরে রাখতে সক্ষম হচ্ছে?
সমাজ চেয়ে চেয়ে দেখছে, রাষ্ট্র নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে আর স্বপ্ন দেখছে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বে। এখন আর কেও বলে না সোনার বাংলা গড়ার কথা, এতদিন বলেছে ডিজিটাল বাংলাদেশ আর এখন বলা শুরু করেছে স্মার্ট বাংলাদেশ। শিশুকে রাস্তায় সরাসরি ভিক্ষার পরিবর্তে ফুল বিক্রি করার কাজে লাগানো নিশ্চয়ই স্মার্ট বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি!
অন্যদিকে বিশ্ব পরস্পর পরস্পরকে খুন করছে, এটাও যে সর্বদা গ্রহনযোগ্য কিছু তাও না। যাই হোক এই হচ্ছে বর্তমান পৃথিবীর একটি চিত্র।
অন্যদিকে দেখুন পরের ছবিটা;
এ ছবিটাও অনেক কথা বলছে তার মত করে। প্রেমিক তার প্রমিকাকে সেদিন হয়ত বলেছিল মনের অজান্তে একটা ছবি এঁকো আমার জন্য। সে ছবি যেন গোটা বিশ্বকে উজাড় করে নেয়, সে ছবি যেন সবাইকে ব্যাকুল করে দেয় এবং আমি যেন হই তোমার মাঝে ধন্য। কে জানতো সেদিন ফ্রান্সের ল্যুভ মিউজিয়ামে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ শুধু মোনালিসার রহস্যময় হাসি দেখতে আসবে! সামান্য একটা ছবি গোটা বিশ্বকে উজাড় করে নেবে? কারো জীবনের ভালোবাসাকে ঘিরে কেও হয়ত কখনও একটা ছবি এঁকেছে, যা আজও হাজারও মানুষকে ব্যাকুল করে দেয়! যাইহোক আমি দুটো ছবিকে তুলে ধরেছি। আমার ভাবনা থেকে কিছু কথা লিখেছি। জানিনে কারো হৃদয় স্পর্শ করবে কিনা!
লিখাটির শেষ এখানেই হতে পারত কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে শুধু বিরহ দিয়ে শেষ করলে ঠিক হবে না। আমরা তো মানুষ; মানবতা, প্রেম বিরহ এর সব কিছু নিয়েই তো জীবন। তাই একজন অতি কাছের মানুষের জীবন থেকে নেয়া একটি প্রেমের কাহিনী দিয়ে লিখাটি শেষ করি।
‘ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো - তোমার মনের মন্দিরে ..’ – আশি বছর বয়সেও প্রতিদিনের মতো আজ সকালে সাইমন তার স্ত্রী গুনিলার জন্য এক কাপ কফি বিছানার পাশে এনে আস্তে আস্তে ডাকছে, গুনিলা, তোমার জন্য কফি এনেছি। গুনিলা এই প্রথম সাইমনের নিজ হাতে তৈরি কফি মুখে দিতে পারেনি। গুনিলা কখন হঠাৎ ঘুমিয়ে গেছে শান্ত হয়ে সাইমন তা বুঝতে পারেনি।
সাইমন সর্বহারা, কারণ তাদের বাষট্টি বছরের ভালোবাসার সংসারে হয়নি কোনো নতুন অতিথির আগমন। বহু বছর আগে গুনিলার সঙ্গে সাইমনের দেখা হয়েছিল সুইডেনের ছোট্ট একটি লেকের ধারে। চিত্রশিল্পী সাইমন লেকের ধারে বসে গুনিলার পুরো দেহটার চিত্রাঙ্কন করেছিল একটি পাথরের ওপর। গোসল শেষে উঠতে পথে গুনিলার নজর কেড়ে নিয়েছিল এই সুদর্শন চিত্রশিল্পী সাইমন।
গুনিলা একজন স্কুল শিক্ষক, সে সাইমনের আঁকা নিজের ছবিটি দেখে মুগ্ধ হয় এবং সাইমনের হাত ধরে সেই যে তার প্রেমে বন্দি হয়েছে আর কোনোদিন মুক্তি পায়নি। তবে তাদের বিয়ের পর একবার সংসারে ঝড় উঠেছিল বিচ্ছেদের। গুনিলা সাইমনের জীবন থেকে সরেও গিয়েছিল। ওই যে কথায় বলে ভাগ্যের লিখন না যায় খণ্ডন!
ঠিক তেমনটি ঘটেছিল তাদের জীবনে। গুনিলা স্কুল শিক্ষক, ক্লাসে একটি ছেলে প্রতিদিনই দেরি করে আসে, বেশ অমনোযোগী। মাঝে মধ্যে সে ঘুমিয়ে পড়ে বেঞ্চের ওপর। ক্লাসের কেউই ছেলেটিকে পছন্দ করে না বললেই চলে। গুনিলা সিদ্ধান্ত নেয় ছেলেটির বাবা-মার সঙ্গে দেখা করার। সে একজন শিক্ষক হিসেবে মনে করে এটা তার নৈতিক দায়িত্ব।
যে কথা সেই কাজ। ক্লাস শেষে ছেলেটিকে সঙ্গে নিয়ে তার বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা দেয়। যেতে যেতে পথে অনেক পারিবারিক বিষয়ে আলোচনা হয় দুইজনের মাঝে। ও, ছেলেটির নাম ডানিয়েল, বয়স আট বছর। মা মারা গেছে জন্মের পর, বাবা নতুন করে বিয়ে করেছে। সংসারে ডানিয়েল একটি বোঝা কিন্তু দায়ভার এড়ানোর উপায় না থাকার কারণে ডানিয়েলকে তারা যতটুকু না করলেই নয় তার বেশিকিছু করে না।
ফলে ডানিয়েল অঙ্কুরে বিনাশ হতে চলেছে। গুনিলা ডানিয়েলের বাবা-মার সঙ্গে দেখা করে, ডানিয়েলের বিষয় আলোচনা করে, কিন্তু তেমন আশাপূর্ণ ফল না পেয়ে ফিরে আসে বাড়িতে। বাড়িতে এসে সাইমনের সঙ্গে ডানিয়েলের বিষয়টি আলোচনা করে। আলোচনা শেষে তারা ডানিয়েলের দায়ভার নেওয়ার এবং নিজেদের সন্তানের মতো লালন পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা নিঃসন্তান বলেই সহজে এ সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
এদিকে টমাস এই প্রথম ষাঁড়ের ঘাড়ে দুই মিনিট বসে ষাঁড়কে ক্লান্ত করে তখনকার সময় সর্বকালের সেরা রেকর্ড করেছে যা জেসিকার নজর কেড়েছে নিউইয়র্কের একটি সংবাদপত্রের মাধ্যমে। টমাসের এমন একটি আনন্দঘন মুহূর্তে সে মিস করছে জেসিকাকে। টমাস হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে ষাঁড়যুদ্ধ খেলা ছেড়ে দেবে। টমাস সাইমনের চিত্রাঙ্কনের গ্যালারিতে নতুন চাকরি নিয়েছে। চলছে জীবন তার নিজ নিজ গতিতে। কিছুদিন যেতে সাইমনের উকিল নোটিশ দিয়েছে সাইমনের সমস্ত সম্পত্তি নিলামে বিক্রি হবে, মৃত্যুর আগে সাইমনের লিখে রেখে যাওয়া উইলের ভিত্তিতে।
কী লেখা আছে এই গোপনীয় উইলে সাইমোনের উকিল ছাড়া অন্য কেউ তা জানে না। বহু লোকের আগমন হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে। নিলামে নামি-দামি চিত্রগুলো বিক্রি হবে চড়া দামা-দামির মাধ্যমে এমনটি আশা নিয়ে সবাই সেদিন বসে আছে। উকিল এসে প্রথমে সাইমনের যে ছবিটি বিক্রি করার জন্য প্রস্তাব দিলেন সেটা ছিল সাইমনের আঁকা সেই লেকের ধারে বসে গুনিলার পুরো দেহটার চিত্রাঙ্কন, যার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র এক হাজার ডলার। প্রসঙ্গত জেসিকা আর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, স্বাভাবিকভাবে সেও সেদিন এসেছে সাইমনের আর্ট গ্যালারিতে, তবে সে জানে না সেখানে টমাস কাজ করে।
দামা-দামি হচ্ছে না, কেউই আগ্রহ দেখাচ্ছে না গুনিলার ছবিটির জন্য। শেষে দাম কমতে শুরু করে। কোনো এক পর্যায়ে মাত্র পাচঁশো ডলার ধার্য্য করা হয়, তারপরও কেউ গুনিলার ছবিটি কিনতে রাজি হচ্ছে না। জেসিকা জানে কী চমৎকার হৃদ্যতা ও স্মৃতি জড়িত এই পাথরে আঁকা ছবিটির মধ্যে। হঠাৎ পেছন থেকে একটি সুদর্শন যুবক হাত তুলেছে, নিলামে পাচঁশো ডলারের বিনিময়ে গুনিলার ছবিটি কেনার জন্য।
সবার নজর পেছনে, জেসিকা পেছনে মুখ ঘোরাতেই বিস্ময়ে হতবাক, আরে, এতো সেই টমাস যাকে সে একদিন ভালোবেসেছিল। হঠাৎ দেখে চমকে মুগ্ধ হয়ে থমকে যায় জেসিকা, টমাস কেন এখানে এবং কেনই বা গুনিলার ছবিটি কিনলো যেখানে অন্য কেউ কোনো আগ্রহ দেখালো না!
যাইহোক গুনিলার অঙ্কিত চিত্র টমাসের কাছে বিক্রি হয়ে গেল। পরবর্তী চিত্রাঙ্কনগুলো নিলামে দামা-দামির অপেক্ষায় সবাই, এমন সময় উকিল পনেরো মিনিট বিরতির ঘোষণা দিলেন। সবাই বসে আছে আর অপেক্ষা করছে পরবর্তী স্টেপের আশায়। এই ফাঁকে জেসিকা টমাসের সামনে এসে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। টমাস জেসিকাকে দেখছে স্মৃতির জানালা খুলে।
কেমন আছ, জিজ্ঞেস করলো জেসিকা।- আমি ভালো আছি, তুমি?- হ্যাঁ আছি। - তুমি এখানে? তুমি তো কখনও চিত্রাঙ্কন পছন্দ করতে না। তা হুট করে গুনিলার ছবি কেন তুমি কিনলে?- তোমার কথা মনে করে।- আমার কথা মনে করে, মানে? - একদিন তুমি বলেছিল সাইমনের জীবনের ভালোবাসার কথা এবং গুনিলার সঙ্গে তার প্রথম দেখার স্মৃতি। - তোমার সে কথা মনে আছে? -হ্যাঁ।- তা কীভাবে জানলে যে আজ সাইমনের সবকিছু নিলামে বিক্রি হবে?- আমি এখানে কাজ করি।এ কথা শুনে জেসিকা বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো, - মানে? তোমার ষাঁড়যুদ্ধ?-সেটা ছেড়ে দিয়েছি অনেক আগেই।- ওহ! হঠাৎ বিরতির সময় শেষ হয়ে গেল। সবাই যার যার জায়গায় গিয়ে বসতেই উকিল সাইমনের লেখা উইলটি পড়তে শুরু করলেন, যে গুনিলার চিত্রাঙ্কন কিনবে সেই আমার সমস্ত আর্ট গ্যালারির দায়ভার এবং মালিকানা লাভ করবে। উকিলের উইলনামা পড়া শেষ হতেই সবাই হতভাগ! বলে কী? কীভাবে এটা সম্ভব?
নানা জনের নানা প্রশ্ন কিন্তু উত্তর নেই কোথাও। তাহলে কি টমাস সব জানতো? সে জানবে কী করে। সে আর্ট গ্যালারিতে চাকরি নিয়েছে সাইমনের মৃত্যুর পর।জেসিকা নিঃশব্দে নীরবে তাকিয়ে আছে টমাসের দিকে। টমাস জেসিকাকে জড়িয়ে ধরে শুধু বললো তোমাকে ঘিরে ভালোবাসার জাল বুনেছিলাম। কিন্তু তোমাকে হারিয়ে শুধু অনুভবে স্মৃতিটুকু নিয়ে তোমার পছন্দের জায়গা সাইমনের আর্ট গ্যালারিতে চাকরি নিয়েছি। কারণ একটিই, হয়তো কোনো একদিন তুমি এখানে আসবে।
সাইমনের জীবনের ভালোবাসা ছিল তার গুনিলাকে ঘিরে আর টমাসের জীবনের ভালোবাসা হলো জেসিকার জন্য গুনিলার চিত্রাঙ্কন কিনে।
[লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন]
রহমান মৃধা
মঙ্গলবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
আমি এখানে দুটি ভিন্ন ধরনের ছবি দিয়েছি। প্রথম ছবিটি একটি ছোট্ট শিশুর, যার বয়স ৪-৬ বছরের বেশি নয় যে কিনা দুয়ারে-দুয়ারে, রাস্তার আশেপাশে, বাসে, রিকশার পাশে, বা ফুটপাথে ফুল বিক্রি করছে। এই সাধারণ একটি ছবির মাঝেই যেনো একটি উপন্যাস দেখতে পাচ্ছি। দেশের পুরো চিত্র ফুটে ওঠেছে এই একটা ছবির মাঝে।
প্রথমে আলোচনা করি ছবির মাঝে থাকা অন্যান্য ব্যক্তিদের কথা। শিশুটি মূলত ট্রাফিক জ্যামের সময় তার ফুল বিক্রি করে। আমরা যারা মধ্যবিত্ত তারা তাদের মত করে ৫ টাকার ফুল ১০ বা ২০ টাকায় কিনে নেই। আবার ফুল কিনে তাকেই উপহার হিসেবে ফেরত দেই। আবার অনেকের নিজেরই সাহায্য প্রয়োজন তারা চুপচাপ দেখি। অনেকে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেই। যারা ধনীর শ্রেণীতে পড়ে তারা হয়ত ১০০ টাকায় ফুল কিনে নেই। আর যারা একবারেই উচ্চ শ্রেণীর, তারা অনায়াসে এরকম ১০০ শিশুর দায়িত্ব নিতে পারে। আবার যারা হয়তো এতই উচুতে থাকে যে নিচের দিকে দেখেই না, গাড়ির জানালার কাঁচ নিচে নামায়ও না। তবে সবাই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখলে হয়তো এরকম শিশু রাস্তায় দেখাই যেত না। আমরা সবাই যদি চেষ্টা করি তবে শুধু আর্থিক নয় আরো অন্যান্য অনেক পদক্ষেপ নিতে পারি।
এবার আসি শিশুর জীবন নিয়ে আলোচনায়।
এই শিশুটি একদিন বড় হবে এবং সেও নিজে ফুলের মত করে ফুটে উঠবে। কোন এক সময় তাকেও কেও না কেও কিনতে চাইবে বা কিনবে। শিশুর হাতের ফুল যেমন কোন এক সময় তার সুগন্ধ এবং শোভা থেকে সরে যাবে ঠিক তেমন করে এই শিশু মেয়েটির যৌবনের ভাটা পড়বে সেও ঝরে যাবে। তবে কিছুটা পার্থক্য থাকবে, ফুল যতক্ষণ তার বাহার দিবে ততক্ষণ তাকে সবাই ভালোবাসবে, ফুলদানিতে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখবে। পরে ছুঁড়ে ফেলবে নর্দমায়। আর শিশুটি যখন বড় হবে তাকে সমাজ নানাভাবে ব্যবহার করবে সাথে থাকবে লাঞ্চনা, গঞ্জনা এবং ঘৃণা যা তাকে লতাপাতার মত জড়িয়ে ধরবে। তারও যৌবন একদিন শেষ হয়ে যাবে, তবে বাকি জীবন নির্যাতিত, নিপতিত হয়ে সমাজের অন্ধকারে ধুঁকে ধুঁকে মরবে যদি শিশুটিকে এখন থেকেই যত্ন করে গড়তে বাবা-মা বা সমাজ ব্যর্থ হয়। এটা একটা দিক, আরেকটি দিক বাবা-মা ছোট্ট শিশুটিকে কাজে লাগিয়ে অর্থ উপার্জন করার একটি অসাধু পথ তৈরি করেছে।
এত অল্প বয়সী একটি শিশুর চরম আর্তনাদ অনেক যাত্রীর মনে বা বিবেকে যন্ত্রণার ঢেউ ফেলে অর্থ রোজগার করছে। হয়ত বাবা-মা বলবে পেটের দায়ে, তবুও এটা অন্যায় এর প্রতিবাদ করা দরকার। একই সাথে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়ভার যারা জোর করে নিয়েছে যেমন শুনেছি জনগণের ভোট ছাড়া, তাঁদেরকেও এর জবাবদিহীতা দিতে হবে, কেন এমনটি হচ্ছে! তাহলে যদি পুরো বিষয়টিতে একটু মনোযোগী হই তবে ভাবুন কোন জগতে আমাদের বাস!
ধুরোন্দার হওয়াকেও কিন্তু এক ধরনের স্মার্ট বলা যেতে পারে। যেমন বাবা-মা সন্তানকে কাজে লাগিয়ে অর্থ রোজগার করছে। একটি শিশু যার এসময় স্কুলে থাকার কথা, সমবয়সীদের সঙ্গে খেলাধুলা করার কথা অথচ সংসারের দায়ভার নিয়ে জীবনের কঠিন সময়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই শিশুটি কি জানে তার পরিণাম কি হবে! শিশু জানে না, যার ফলে বাবা-মাকেই আমরা শ্রেষ্ঠ গার্ডিয়ান বলে বিশ্বাস করি কিন্তু সে বিশ্বস্ততা কি বাবা-মা ধরে রাখতে সক্ষম হচ্ছে?
সমাজ চেয়ে চেয়ে দেখছে, রাষ্ট্র নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে আর স্বপ্ন দেখছে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বে। এখন আর কেও বলে না সোনার বাংলা গড়ার কথা, এতদিন বলেছে ডিজিটাল বাংলাদেশ আর এখন বলা শুরু করেছে স্মার্ট বাংলাদেশ। শিশুকে রাস্তায় সরাসরি ভিক্ষার পরিবর্তে ফুল বিক্রি করার কাজে লাগানো নিশ্চয়ই স্মার্ট বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি!
অন্যদিকে বিশ্ব পরস্পর পরস্পরকে খুন করছে, এটাও যে সর্বদা গ্রহনযোগ্য কিছু তাও না। যাই হোক এই হচ্ছে বর্তমান পৃথিবীর একটি চিত্র।
অন্যদিকে দেখুন পরের ছবিটা;
এ ছবিটাও অনেক কথা বলছে তার মত করে। প্রেমিক তার প্রমিকাকে সেদিন হয়ত বলেছিল মনের অজান্তে একটা ছবি এঁকো আমার জন্য। সে ছবি যেন গোটা বিশ্বকে উজাড় করে নেয়, সে ছবি যেন সবাইকে ব্যাকুল করে দেয় এবং আমি যেন হই তোমার মাঝে ধন্য। কে জানতো সেদিন ফ্রান্সের ল্যুভ মিউজিয়ামে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ শুধু মোনালিসার রহস্যময় হাসি দেখতে আসবে! সামান্য একটা ছবি গোটা বিশ্বকে উজাড় করে নেবে? কারো জীবনের ভালোবাসাকে ঘিরে কেও হয়ত কখনও একটা ছবি এঁকেছে, যা আজও হাজারও মানুষকে ব্যাকুল করে দেয়! যাইহোক আমি দুটো ছবিকে তুলে ধরেছি। আমার ভাবনা থেকে কিছু কথা লিখেছি। জানিনে কারো হৃদয় স্পর্শ করবে কিনা!
লিখাটির শেষ এখানেই হতে পারত কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে শুধু বিরহ দিয়ে শেষ করলে ঠিক হবে না। আমরা তো মানুষ; মানবতা, প্রেম বিরহ এর সব কিছু নিয়েই তো জীবন। তাই একজন অতি কাছের মানুষের জীবন থেকে নেয়া একটি প্রেমের কাহিনী দিয়ে লিখাটি শেষ করি।
‘ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো - তোমার মনের মন্দিরে ..’ – আশি বছর বয়সেও প্রতিদিনের মতো আজ সকালে সাইমন তার স্ত্রী গুনিলার জন্য এক কাপ কফি বিছানার পাশে এনে আস্তে আস্তে ডাকছে, গুনিলা, তোমার জন্য কফি এনেছি। গুনিলা এই প্রথম সাইমনের নিজ হাতে তৈরি কফি মুখে দিতে পারেনি। গুনিলা কখন হঠাৎ ঘুমিয়ে গেছে শান্ত হয়ে সাইমন তা বুঝতে পারেনি।
সাইমন সর্বহারা, কারণ তাদের বাষট্টি বছরের ভালোবাসার সংসারে হয়নি কোনো নতুন অতিথির আগমন। বহু বছর আগে গুনিলার সঙ্গে সাইমনের দেখা হয়েছিল সুইডেনের ছোট্ট একটি লেকের ধারে। চিত্রশিল্পী সাইমন লেকের ধারে বসে গুনিলার পুরো দেহটার চিত্রাঙ্কন করেছিল একটি পাথরের ওপর। গোসল শেষে উঠতে পথে গুনিলার নজর কেড়ে নিয়েছিল এই সুদর্শন চিত্রশিল্পী সাইমন।
গুনিলা একজন স্কুল শিক্ষক, সে সাইমনের আঁকা নিজের ছবিটি দেখে মুগ্ধ হয় এবং সাইমনের হাত ধরে সেই যে তার প্রেমে বন্দি হয়েছে আর কোনোদিন মুক্তি পায়নি। তবে তাদের বিয়ের পর একবার সংসারে ঝড় উঠেছিল বিচ্ছেদের। গুনিলা সাইমনের জীবন থেকে সরেও গিয়েছিল। ওই যে কথায় বলে ভাগ্যের লিখন না যায় খণ্ডন!
ঠিক তেমনটি ঘটেছিল তাদের জীবনে। গুনিলা স্কুল শিক্ষক, ক্লাসে একটি ছেলে প্রতিদিনই দেরি করে আসে, বেশ অমনোযোগী। মাঝে মধ্যে সে ঘুমিয়ে পড়ে বেঞ্চের ওপর। ক্লাসের কেউই ছেলেটিকে পছন্দ করে না বললেই চলে। গুনিলা সিদ্ধান্ত নেয় ছেলেটির বাবা-মার সঙ্গে দেখা করার। সে একজন শিক্ষক হিসেবে মনে করে এটা তার নৈতিক দায়িত্ব।
যে কথা সেই কাজ। ক্লাস শেষে ছেলেটিকে সঙ্গে নিয়ে তার বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা দেয়। যেতে যেতে পথে অনেক পারিবারিক বিষয়ে আলোচনা হয় দুইজনের মাঝে। ও, ছেলেটির নাম ডানিয়েল, বয়স আট বছর। মা মারা গেছে জন্মের পর, বাবা নতুন করে বিয়ে করেছে। সংসারে ডানিয়েল একটি বোঝা কিন্তু দায়ভার এড়ানোর উপায় না থাকার কারণে ডানিয়েলকে তারা যতটুকু না করলেই নয় তার বেশিকিছু করে না।
ফলে ডানিয়েল অঙ্কুরে বিনাশ হতে চলেছে। গুনিলা ডানিয়েলের বাবা-মার সঙ্গে দেখা করে, ডানিয়েলের বিষয় আলোচনা করে, কিন্তু তেমন আশাপূর্ণ ফল না পেয়ে ফিরে আসে বাড়িতে। বাড়িতে এসে সাইমনের সঙ্গে ডানিয়েলের বিষয়টি আলোচনা করে। আলোচনা শেষে তারা ডানিয়েলের দায়ভার নেওয়ার এবং নিজেদের সন্তানের মতো লালন পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা নিঃসন্তান বলেই সহজে এ সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
এদিকে টমাস এই প্রথম ষাঁড়ের ঘাড়ে দুই মিনিট বসে ষাঁড়কে ক্লান্ত করে তখনকার সময় সর্বকালের সেরা রেকর্ড করেছে যা জেসিকার নজর কেড়েছে নিউইয়র্কের একটি সংবাদপত্রের মাধ্যমে। টমাসের এমন একটি আনন্দঘন মুহূর্তে সে মিস করছে জেসিকাকে। টমাস হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে ষাঁড়যুদ্ধ খেলা ছেড়ে দেবে। টমাস সাইমনের চিত্রাঙ্কনের গ্যালারিতে নতুন চাকরি নিয়েছে। চলছে জীবন তার নিজ নিজ গতিতে। কিছুদিন যেতে সাইমনের উকিল নোটিশ দিয়েছে সাইমনের সমস্ত সম্পত্তি নিলামে বিক্রি হবে, মৃত্যুর আগে সাইমনের লিখে রেখে যাওয়া উইলের ভিত্তিতে।
কী লেখা আছে এই গোপনীয় উইলে সাইমোনের উকিল ছাড়া অন্য কেউ তা জানে না। বহু লোকের আগমন হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে। নিলামে নামি-দামি চিত্রগুলো বিক্রি হবে চড়া দামা-দামির মাধ্যমে এমনটি আশা নিয়ে সবাই সেদিন বসে আছে। উকিল এসে প্রথমে সাইমনের যে ছবিটি বিক্রি করার জন্য প্রস্তাব দিলেন সেটা ছিল সাইমনের আঁকা সেই লেকের ধারে বসে গুনিলার পুরো দেহটার চিত্রাঙ্কন, যার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র এক হাজার ডলার। প্রসঙ্গত জেসিকা আর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, স্বাভাবিকভাবে সেও সেদিন এসেছে সাইমনের আর্ট গ্যালারিতে, তবে সে জানে না সেখানে টমাস কাজ করে।
দামা-দামি হচ্ছে না, কেউই আগ্রহ দেখাচ্ছে না গুনিলার ছবিটির জন্য। শেষে দাম কমতে শুরু করে। কোনো এক পর্যায়ে মাত্র পাচঁশো ডলার ধার্য্য করা হয়, তারপরও কেউ গুনিলার ছবিটি কিনতে রাজি হচ্ছে না। জেসিকা জানে কী চমৎকার হৃদ্যতা ও স্মৃতি জড়িত এই পাথরে আঁকা ছবিটির মধ্যে। হঠাৎ পেছন থেকে একটি সুদর্শন যুবক হাত তুলেছে, নিলামে পাচঁশো ডলারের বিনিময়ে গুনিলার ছবিটি কেনার জন্য।
সবার নজর পেছনে, জেসিকা পেছনে মুখ ঘোরাতেই বিস্ময়ে হতবাক, আরে, এতো সেই টমাস যাকে সে একদিন ভালোবেসেছিল। হঠাৎ দেখে চমকে মুগ্ধ হয়ে থমকে যায় জেসিকা, টমাস কেন এখানে এবং কেনই বা গুনিলার ছবিটি কিনলো যেখানে অন্য কেউ কোনো আগ্রহ দেখালো না!
যাইহোক গুনিলার অঙ্কিত চিত্র টমাসের কাছে বিক্রি হয়ে গেল। পরবর্তী চিত্রাঙ্কনগুলো নিলামে দামা-দামির অপেক্ষায় সবাই, এমন সময় উকিল পনেরো মিনিট বিরতির ঘোষণা দিলেন। সবাই বসে আছে আর অপেক্ষা করছে পরবর্তী স্টেপের আশায়। এই ফাঁকে জেসিকা টমাসের সামনে এসে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। টমাস জেসিকাকে দেখছে স্মৃতির জানালা খুলে।
কেমন আছ, জিজ্ঞেস করলো জেসিকা।- আমি ভালো আছি, তুমি?- হ্যাঁ আছি। - তুমি এখানে? তুমি তো কখনও চিত্রাঙ্কন পছন্দ করতে না। তা হুট করে গুনিলার ছবি কেন তুমি কিনলে?- তোমার কথা মনে করে।- আমার কথা মনে করে, মানে? - একদিন তুমি বলেছিল সাইমনের জীবনের ভালোবাসার কথা এবং গুনিলার সঙ্গে তার প্রথম দেখার স্মৃতি। - তোমার সে কথা মনে আছে? -হ্যাঁ।- তা কীভাবে জানলে যে আজ সাইমনের সবকিছু নিলামে বিক্রি হবে?- আমি এখানে কাজ করি।এ কথা শুনে জেসিকা বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো, - মানে? তোমার ষাঁড়যুদ্ধ?-সেটা ছেড়ে দিয়েছি অনেক আগেই।- ওহ! হঠাৎ বিরতির সময় শেষ হয়ে গেল। সবাই যার যার জায়গায় গিয়ে বসতেই উকিল সাইমনের লেখা উইলটি পড়তে শুরু করলেন, যে গুনিলার চিত্রাঙ্কন কিনবে সেই আমার সমস্ত আর্ট গ্যালারির দায়ভার এবং মালিকানা লাভ করবে। উকিলের উইলনামা পড়া শেষ হতেই সবাই হতভাগ! বলে কী? কীভাবে এটা সম্ভব?
নানা জনের নানা প্রশ্ন কিন্তু উত্তর নেই কোথাও। তাহলে কি টমাস সব জানতো? সে জানবে কী করে। সে আর্ট গ্যালারিতে চাকরি নিয়েছে সাইমনের মৃত্যুর পর।জেসিকা নিঃশব্দে নীরবে তাকিয়ে আছে টমাসের দিকে। টমাস জেসিকাকে জড়িয়ে ধরে শুধু বললো তোমাকে ঘিরে ভালোবাসার জাল বুনেছিলাম। কিন্তু তোমাকে হারিয়ে শুধু অনুভবে স্মৃতিটুকু নিয়ে তোমার পছন্দের জায়গা সাইমনের আর্ট গ্যালারিতে চাকরি নিয়েছি। কারণ একটিই, হয়তো কোনো একদিন তুমি এখানে আসবে।
সাইমনের জীবনের ভালোবাসা ছিল তার গুনিলাকে ঘিরে আর টমাসের জীবনের ভালোবাসা হলো জেসিকার জন্য গুনিলার চিত্রাঙ্কন কিনে।
[লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন]