alt

মুক্ত আলোচনা

ফরগেট মি নট

আসফাক বীন রহমান

: মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ ২০২৪

‘Time you old Gypsy man ,

Will you not stay,

Put up your caravan

Just for one day,’

(Time ,you old Gypsy man, রালফ হডসন )

আব্বার উদাত্ত কণ্ঠের আবৃত্তি ইমনের মতো চঞ্চল মানুষকেও থমকে দেয় । আব্বা আমাদের বোঝান, সময় বুড়ো যাযাবরের চেয়েও চঞ্চল । সে থেমে থাকে না , অনেক শহর ঘুরে বেড়ায় অনেক উত্থান-পতন দেখে । ইন্টারমিডিয়েটে ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি কলেজে ভর্তির পর পরই ‘ফাস্ট ইয়ার ডোন্ট কেয়ার’ ভাবটা জেঁকে বসেছে । সায়েন্সের ছাত্র বাংলা-ইংরেজিতে দুর্বল ,এটা হাসিমুখে মেনে নিয়েই পাবলিক লাইব্রেরী - ফুলার রোডের বৃটিশ কাউন্সিলে ঘুরে বেড়াই । বিকালে মহসিন হলের মাঠে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের প্র্যাকটিসে এমেকা , নালজেগার ,নাসের হেজাজি, কায়সার হামিদদের প্র্যাকটিস সরাসরি দেখতে যাই । কি উত্তেজনা !!

কিন্তু , চঞ্চল সময়তো থেমে থাকে না- সেকেন্ড ইয়ার উঠার পরীক্ষা চলে আসে । ইমনও ঘাড়ে নিঃশ্বাস ছাড়ছে , ঢাকা কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়ে । আমি ইংরেজি কঠিন কঠিন গদ্য- পদ্য নিয়ে খাবি খাচ্ছি । আব্বা বুকে জড়িয়ে ধরে বলেন ,“ সাহস হারাবে না, আমিতো আছি ।” প্রশাসক পরিচয় ছাপিয়ে বের হয়ে আসে ‘হাজী আসমত কলেজ, ভৈরব’ এবং ‘আবুজর গিফারী কলেজ ,মালিবাগ’এর দয়ালু -ছাত্র অন্তঃপ্রাণ একজন শিক্ষক । ডায়েরি বের করে একটির পর একটি poem-prose এর সমাধান দেন গল্পের মতো করে ।

আব্বা আমাদেরকে বোঝান, ক্ষণস্থায়ী সুন্দর ডেফোডিল ফুলের মতোই ক্ষণজন্মা মানুষের জীবন । মানুষের ও নিজেদের কল্যাণের জন্য ড্যাফোডিল ফুলের মতোই হাসিমুখে নিজেকে বিলিয়ে দিতে হবে-

‘ Like to the summer’s rain ;

Or as the pearls of morning’s dew ,

Never to be found again. ’

(To Daffodils-Robert Herrich)

গ্রীষ্মের বৃষ্টি আর মুক্তার মত সকালের শিশির কখনো আর ফেরত আসবে না ।

ইমনকে নিয়ে আম্মার চিন্তার শেষ নেই । কয়দিন থেকে জীবন্ত বেড়া ‘ঢোল কলমী ’ পোকার বিষক্রিয়ায়,ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলা ,সাপ্তাহিক বিচিত্রায় একের পর এক মৃত্যুর সংবাদ দেখে আম্মা দিশেহারা । সাড়া দেশে ঢোল কলমীর মত উপকারী গুল্মের নিধনের বিরুদ্ধে পরিবেশবাদী আর জীব -বিজ্ঞানীরা সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। হুজুগে বাঙ্গালী কোন এক কৃষককে ঢোল কলমী ঝোপে সাপের কামড়ে মরতে দেখে এই উপকারী বন্যা সহনীয় বেড়ালতার উপর হামলে পড়ে । ইমনের উপর মাঠে খেলতে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা দেন আম্মা । কিন্তু , ম্যারাডোনার মতো ইমনও দূরন্ত । হঠাৎ ঢাকা কলেজের বড় পরিসরে এসে উড়ন্ত পাখির মত বাধাহীন হয়ে যায় । সন্ধ্যার সাথে সাথে বাসায় আসতেও অনীহা ; বাঁধন -সন্ধানী- রেড ক্রিসেন্ট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ।

‘৮৮’র প্রলয়ংকারী বন্যায় দেশের ৬০ ভাগ ডুবে যায় । আগস্ট -সেপ্টেম্বর জুড়ে এই বন্যা বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি আকর্ষণ করে । রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে সারাদিন এরশাদ সাহেবের-

‘ তোমাদের পাশে এসে

বিপদের সাথী হতে

আজকের চেষ্টা আমার’ -গানটি বাজতেই থাকে । এর মাঝে শিক্ষক -শিক্ষার্থী -সাংস্কৃতিক কর্মীদের আহ্বান - ‘ওগো পুরবাসী ,

আমি দ্বারে দাঁড়ায়ে আছি উপবাসী’

(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর- ওগো পুরবাসী)

-- নগরবাসীর মনে ব্যাপক দ্য়ার সৃষ্টি করে। ইমন আম্মাকে উদ্বুদ্ধ করে বাসায় নাস্তার বাইরে দ্বিগুণ পরিমাণ রুটি তৈরি করতে । তাঁদের বন্ধুরা বাড়ী-বাড়ী রুটি সংগ্রহ করে ঢাকার নীচু এলাকাগুলোতে বন্যার্তদের পৌঁছে দেয়া শুরু করে ।

প্রতিটি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে ছড়িয়ে পড়েছে পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া । হায় ! পানির মধ্যে থেকে পানিকেই বিষবৎ মনে করে বন্যার্তরা । আব্বা আমাদের বুঝিয়ে দেন, স্যামুয়েল ট্যায়লর কলরিজের ‘ Rime of Ancient mariner ’এর বিখ্যাত উক্তি - “ water water everywhere

nor any drop to drink” । প্রাচুর্য থাকলেও ন্যূনতম চাহিদা না মিটলে মানুষের কি কষ্ট !

উজ্জ্বল ঝকঝকে চোখের ইমনকে কয়দিন মনমরা দেখে আব্বা জিজ্ঞেস করেন, “বাবু, তোমার মন কি খারাপ?” সবসময় স্ফূর্তিতে থাকা ইমন মানুষের নীচুতায় কষ্ট পেয়ে বলে ,“ মানুষের এতো কষ্ট ; তারপরও কিছু মানুষ কেন বন্যার্তদের জন্য দেয়া ত্রাণ, টাকা নিজেরা নিয়ে নেয় ?” আব্বা আমাদের বইয়ের কবিতা আওড়িয়ে বলেন -

‘Man is unjust,But God is

just ;

and finally justice

triumphs’

(হেনরী ওয়াডসওয়ার্থ লংফেলো -Evangelike: A Tale of Acadia )

মানুষ ভুল করতে পারে , কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কখনো ভুল করেন না ; সময় শেষে ন্যায় বিচারই বিজয়ী হয় ।

গড়পড়তা কলেজ ছাত্রদের তুলনায় আমরা কিছুটা ছোট হওয়ায় মনে যেন ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স না গড়ে ওঠে এজন্য সবসময় আব্বা-আম্মা উৎসাহব্যন্জক কথা বলতেন ।পাঠ্য বইয়ের রাউলিংসয়ের ‘ A Mother in Mannville’ এর ছোট্ট এতিম ছেলে জেরীর “size does not matte ” - উক্তিটি আব্বা প্রায়ই আমাদের স্মরণ করিয়ে দিতেন । বারো বছরের ছোট্ট এতিম জেরী তাঁর সাহস, সরলতা আর একাগ্রতা নিয়ে এগিয়ে যায় ।

আব্বা শুধু পড়া মুখস্ত করতেই বলতেন না, সেইসাথে জীবন চলার পথে হোঁচট খাবারের সম্ভাবনার কথাও বলতেন । সবসময় আওড়াতেন ,“ Hope for the best and prepare for the worst ”- ভালোর জন্য আশা করবে আর সবচেয়ে খারাপের জন্য তৈরী থাকবে । কারণ উনি জানতেন রবার্ট ব্রাউনিং এর ‘The Patriot ’ এর “Thus I entered and thus I go. ”- এর মতোই জীবনে উত্থান - পতন আছে। যতক্ষণ মানুষকে দিতে পারবে , ততক্ষণ নায়ক ; যখন দিতে পারবে না তখনই প্রতিনায়ক ।

[লেখক: সহকারী অধ্যাপক, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ]

রেসলিং

কোটা সমাচার

বাজেট ২০২৪-২৫: তথ্যপ্রযুক্তি খাতের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের যাত্রা শুরু হোক এবার

সীমান্ত সড়ক পশ্চাদপদ পার্বত্য অঞ্চলকে উন্নয়নের স্রোতধারায় একীভূত করেছে

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১: উন্নত ও সমৃদ্ধ আগামীর স্বপ্ন পূরণে বাংলাদেশের মহাকাশ জয়

ছবি

নাটোরের সম্ভাব্য জিআই পণ্য

রিলিফ

মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়

বঙ্গাব্দ প্রচলনের ইতিকথা

পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব

কেউতো অপেক্ষায় নেই

ছবি

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বীমা শিল্পের গুরুত্ব

একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মপরিচয়ের দিন

দিদি, আপা, “বু” খালা

হিজল-করচ-আড়াংবন

ছবি

শেখ হাসিনা, এক উৎসারিত আলোকধারা

মনমাঝি

সেই ইটনা

ছবি

আংকর ওয়াট : উন্নত সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন যেখানে

নিয়ত ও নিয়তি

হারিয়ে যাওয়া ট্রেন

টম সয়ার না রবিনহুড

ছবি

‘ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে’

বাংলাদেশ-জাপান সহযোগিতা স্মারক: স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনন্য মাইলফলক

রাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশনের পরিবর্তন আশু প্রয়োজন

কুয়েতের জীবনযাত্রার সাতকাহন: পর্ব-১-বিয়ে

বিবেকের লড়াই

ছবি

ছবি যেন শুধু ছবি নয়

বাত ব্যথার কারণ ও আধুনিক চিকিৎসা

ছবি

স্বাধীন স্বদেশে মুক্ত বঙ্গবন্ধু

ছবি

মহান নেতার স্বভূমিতে ফিরে আসা

ছবি

মেট্রোরেল : প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী চিন্তার ফসল

ছবি

আমার মা

ডিজিটাল বাংলাদেশ: প্রগতিশীল প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতি

ছবি

৩ নভেম্বর: ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের ধারাবাহিকতা

tab

মুক্ত আলোচনা

ফরগেট মি নট

আসফাক বীন রহমান

মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ ২০২৪

‘Time you old Gypsy man ,

Will you not stay,

Put up your caravan

Just for one day,’

(Time ,you old Gypsy man, রালফ হডসন )

আব্বার উদাত্ত কণ্ঠের আবৃত্তি ইমনের মতো চঞ্চল মানুষকেও থমকে দেয় । আব্বা আমাদের বোঝান, সময় বুড়ো যাযাবরের চেয়েও চঞ্চল । সে থেমে থাকে না , অনেক শহর ঘুরে বেড়ায় অনেক উত্থান-পতন দেখে । ইন্টারমিডিয়েটে ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি কলেজে ভর্তির পর পরই ‘ফাস্ট ইয়ার ডোন্ট কেয়ার’ ভাবটা জেঁকে বসেছে । সায়েন্সের ছাত্র বাংলা-ইংরেজিতে দুর্বল ,এটা হাসিমুখে মেনে নিয়েই পাবলিক লাইব্রেরী - ফুলার রোডের বৃটিশ কাউন্সিলে ঘুরে বেড়াই । বিকালে মহসিন হলের মাঠে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের প্র্যাকটিসে এমেকা , নালজেগার ,নাসের হেজাজি, কায়সার হামিদদের প্র্যাকটিস সরাসরি দেখতে যাই । কি উত্তেজনা !!

কিন্তু , চঞ্চল সময়তো থেমে থাকে না- সেকেন্ড ইয়ার উঠার পরীক্ষা চলে আসে । ইমনও ঘাড়ে নিঃশ্বাস ছাড়ছে , ঢাকা কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়ে । আমি ইংরেজি কঠিন কঠিন গদ্য- পদ্য নিয়ে খাবি খাচ্ছি । আব্বা বুকে জড়িয়ে ধরে বলেন ,“ সাহস হারাবে না, আমিতো আছি ।” প্রশাসক পরিচয় ছাপিয়ে বের হয়ে আসে ‘হাজী আসমত কলেজ, ভৈরব’ এবং ‘আবুজর গিফারী কলেজ ,মালিবাগ’এর দয়ালু -ছাত্র অন্তঃপ্রাণ একজন শিক্ষক । ডায়েরি বের করে একটির পর একটি poem-prose এর সমাধান দেন গল্পের মতো করে ।

আব্বা আমাদেরকে বোঝান, ক্ষণস্থায়ী সুন্দর ডেফোডিল ফুলের মতোই ক্ষণজন্মা মানুষের জীবন । মানুষের ও নিজেদের কল্যাণের জন্য ড্যাফোডিল ফুলের মতোই হাসিমুখে নিজেকে বিলিয়ে দিতে হবে-

‘ Like to the summer’s rain ;

Or as the pearls of morning’s dew ,

Never to be found again. ’

(To Daffodils-Robert Herrich)

গ্রীষ্মের বৃষ্টি আর মুক্তার মত সকালের শিশির কখনো আর ফেরত আসবে না ।

ইমনকে নিয়ে আম্মার চিন্তার শেষ নেই । কয়দিন থেকে জীবন্ত বেড়া ‘ঢোল কলমী ’ পোকার বিষক্রিয়ায়,ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলা ,সাপ্তাহিক বিচিত্রায় একের পর এক মৃত্যুর সংবাদ দেখে আম্মা দিশেহারা । সাড়া দেশে ঢোল কলমীর মত উপকারী গুল্মের নিধনের বিরুদ্ধে পরিবেশবাদী আর জীব -বিজ্ঞানীরা সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। হুজুগে বাঙ্গালী কোন এক কৃষককে ঢোল কলমী ঝোপে সাপের কামড়ে মরতে দেখে এই উপকারী বন্যা সহনীয় বেড়ালতার উপর হামলে পড়ে । ইমনের উপর মাঠে খেলতে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা দেন আম্মা । কিন্তু , ম্যারাডোনার মতো ইমনও দূরন্ত । হঠাৎ ঢাকা কলেজের বড় পরিসরে এসে উড়ন্ত পাখির মত বাধাহীন হয়ে যায় । সন্ধ্যার সাথে সাথে বাসায় আসতেও অনীহা ; বাঁধন -সন্ধানী- রেড ক্রিসেন্ট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ।

‘৮৮’র প্রলয়ংকারী বন্যায় দেশের ৬০ ভাগ ডুবে যায় । আগস্ট -সেপ্টেম্বর জুড়ে এই বন্যা বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি আকর্ষণ করে । রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে সারাদিন এরশাদ সাহেবের-

‘ তোমাদের পাশে এসে

বিপদের সাথী হতে

আজকের চেষ্টা আমার’ -গানটি বাজতেই থাকে । এর মাঝে শিক্ষক -শিক্ষার্থী -সাংস্কৃতিক কর্মীদের আহ্বান - ‘ওগো পুরবাসী ,

আমি দ্বারে দাঁড়ায়ে আছি উপবাসী’

(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর- ওগো পুরবাসী)

-- নগরবাসীর মনে ব্যাপক দ্য়ার সৃষ্টি করে। ইমন আম্মাকে উদ্বুদ্ধ করে বাসায় নাস্তার বাইরে দ্বিগুণ পরিমাণ রুটি তৈরি করতে । তাঁদের বন্ধুরা বাড়ী-বাড়ী রুটি সংগ্রহ করে ঢাকার নীচু এলাকাগুলোতে বন্যার্তদের পৌঁছে দেয়া শুরু করে ।

প্রতিটি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে ছড়িয়ে পড়েছে পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া । হায় ! পানির মধ্যে থেকে পানিকেই বিষবৎ মনে করে বন্যার্তরা । আব্বা আমাদের বুঝিয়ে দেন, স্যামুয়েল ট্যায়লর কলরিজের ‘ Rime of Ancient mariner ’এর বিখ্যাত উক্তি - “ water water everywhere

nor any drop to drink” । প্রাচুর্য থাকলেও ন্যূনতম চাহিদা না মিটলে মানুষের কি কষ্ট !

উজ্জ্বল ঝকঝকে চোখের ইমনকে কয়দিন মনমরা দেখে আব্বা জিজ্ঞেস করেন, “বাবু, তোমার মন কি খারাপ?” সবসময় স্ফূর্তিতে থাকা ইমন মানুষের নীচুতায় কষ্ট পেয়ে বলে ,“ মানুষের এতো কষ্ট ; তারপরও কিছু মানুষ কেন বন্যার্তদের জন্য দেয়া ত্রাণ, টাকা নিজেরা নিয়ে নেয় ?” আব্বা আমাদের বইয়ের কবিতা আওড়িয়ে বলেন -

‘Man is unjust,But God is

just ;

and finally justice

triumphs’

(হেনরী ওয়াডসওয়ার্থ লংফেলো -Evangelike: A Tale of Acadia )

মানুষ ভুল করতে পারে , কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কখনো ভুল করেন না ; সময় শেষে ন্যায় বিচারই বিজয়ী হয় ।

গড়পড়তা কলেজ ছাত্রদের তুলনায় আমরা কিছুটা ছোট হওয়ায় মনে যেন ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স না গড়ে ওঠে এজন্য সবসময় আব্বা-আম্মা উৎসাহব্যন্জক কথা বলতেন ।পাঠ্য বইয়ের রাউলিংসয়ের ‘ A Mother in Mannville’ এর ছোট্ট এতিম ছেলে জেরীর “size does not matte ” - উক্তিটি আব্বা প্রায়ই আমাদের স্মরণ করিয়ে দিতেন । বারো বছরের ছোট্ট এতিম জেরী তাঁর সাহস, সরলতা আর একাগ্রতা নিয়ে এগিয়ে যায় ।

আব্বা শুধু পড়া মুখস্ত করতেই বলতেন না, সেইসাথে জীবন চলার পথে হোঁচট খাবারের সম্ভাবনার কথাও বলতেন । সবসময় আওড়াতেন ,“ Hope for the best and prepare for the worst ”- ভালোর জন্য আশা করবে আর সবচেয়ে খারাপের জন্য তৈরী থাকবে । কারণ উনি জানতেন রবার্ট ব্রাউনিং এর ‘The Patriot ’ এর “Thus I entered and thus I go. ”- এর মতোই জীবনে উত্থান - পতন আছে। যতক্ষণ মানুষকে দিতে পারবে , ততক্ষণ নায়ক ; যখন দিতে পারবে না তখনই প্রতিনায়ক ।

[লেখক: সহকারী অধ্যাপক, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ]

back to top