image

আশা ছিল সরকার আলোচনার জায়গা তৈরি করবে: মাহিন সুলতান

শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
নাসরীন গীতি

মাহিন সুলতান, একজন শিক্ষাবিদ এবং উন্নয়ন অনুশীলনকারী। বর্তমানে তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের একজন সিনিয়র ফেলো হিসেবে কাজ করছেন। প্রতিষ্ঠানটির সেন্টার ফর জেন্ডার অ্যান্ড সোশ্যাল ট্রান্সফর্মেশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন মাহিন, যা পরবর্তীতে বিআইজিডি-র অংশ হয়ে ওঠে। এই কেন্দ্রটি দক্ষিণ এশিয়ায় লিঙ্গ ও সামাজিক রূপান্তরের উপর গবেষণা এবং নীতিগত সম্পৃক্ততা পরিচালনা করে।

দীর্ঘ ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে উন্নয়ন খাতে কাজ করছেন। তিনি বেসরকারি সংস্থা, জাতিসংঘ, গ্রামীণ ব্যাংক এবং বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার কাজ সামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য, নাগরিক সমাজ, সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ এবং নারী ও লিঙ্গ সমতার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের অন্যতম সদস্য মাহিন সুলতান। সম্প্রতি সংবাদের সাথে আলাপচারিতায় নারীর প্রতি সহিংসতা ও আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক বিষয়সহ সমসাময়িক নানা দিক নিয়ে কথা হয় এই প্রতিবেদকের সাথে। যা সাক্ষাৎকারের আলোকে তুলে ধরা হলো:

সংবাদ: নতুন একটি সরকার এক বছর পার করলো। এই এক বছরে আগের চেয়ে নারী নির্যাতন, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা কি বেড়েছে?

মাহিন সুলতান: নির্যাতন অন্যমাত্রায় এসেছে। কমে নাই। মব সৃষ্টি করে নারী নির্যাতন হচ্ছে। যদিও মবের শিকার নারী-পুরুষ সবাই হচ্ছেন। নির্যাতন আগেও ছিলো। তবে এখন তো পার্সোনালইজ করে করে হচ্ছে। আমার মনে হয়, গত এক বছরে মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। রাস্তা-ঘাটেও কিন্তু মানুষ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কি চায়ের দোকানে বসা, কি বাসে চড়া- বিভিন্ন জায়গায় যে কোনো কথা বললেই হলো, কারো মতের বাইরে গেলেই হয়রানি, নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

সংবাদ: তাহলে যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষিতে এই নতুন সরকারের যাত্রা হলো, নারীর ক্ষেত্রে সেই বৈষম্য কতটা দূর হয়েছে?

মাহিন সুলতান: বৈষম্য কোনদিনই কমে নাই। তবে একটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিলো। এখন যেহেতু মানুষ মনে করছে- আমি যা খুশি বলতে পারবো, করতে পারবো; তখন তাদের মনের কথাগুলি কিন্তু প্রকাশ পাচ্ছে। আমি মনে করি না যে, আগে এগুলো ছিলো না। কিন্তু এখন মানুষ সাহস পাচ্ছে এগুলো বলার। যেমন ধরেন, আগে যে ইসলামিক দলগুলো ছিলো, তারা কিন্তু খুব সাবধানে কথা বলতো। কিন্তু এখন যেমন হেফাজত খুবই ওপেন হয়ে গেছে, অনেক কথা বলে। তবে জামায়াত মেজারমেন্ট করে কথা বলে, ব্যালান্স করে কথা বলে।

নারী সংস্কার কমিশনের যখন রিপোর্ট এলো হেফাজত যেমন অ্যাগ্রেসিভ ভঙ্গিতে কথা বলে, পোস্টার করে, নারীর কুশপুত্তলিকা করে পেটালো- এই ধরণের জিনিস কিন্তু গত ১০/১৫ বছর দেখা যায়নি। কিন্তু তার মানে এটা নয় যে, তাদের চিন্তা-ভাবনাগুলো ছিলো না। এগুলো চিন্তা-ভাবনাতেই ছিলো, প্রকাশ পায়নি।

সংবাদ: এই যে ডাকসু, জাকসু নির্বাচনের নারী প্রার্থীরা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েছে, বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন?

মাহিন সুলতান: এটা নারীকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে ফেলার একটি কৌশল- এই রাজনীতি হচ্ছে একটা পুরুষের স্থান, আমরা তোমাদের এখানে চাই না। এটা হুমকি দিয়ে, ভয় দেখিয়ে করা হচ্ছে। আর তখন নারীরা সরে যায়, কারণ তখন তাদের উপর থেকে পরিবারের সাপোর্টটা সরে যায়। তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যায়। যদিও অনেকদিন থেকে যারা রাজনীতি করছেন, তারা এই ধরণের ভয়, কুৎসাকে আমলে নিচ্ছেন না। কিন্তু যারা নতুন এসেছেন, তাদের এটাকে স্বাভাবিকভাবে নিতে কষ্ট হয়। তারা কিন্তু অভ্যস্ত নয়।

এখানে আরেকটা বিষয় হতে পারে, এই জেনারেশান সোশ্যাল মিডিয়াকে খুব গুরুত্ব দেয়। আর পরিবারও তখন মেয়েটির ভবিষ্যত, সোশ্যাল স্ট্যাটাস নিয়ে দুশ্চিন্তায় পিছু হটে।

সংবাদ: নারীর পোশাক নিয়ে হেনস্তা, মব তৈরি করে শ্লীলতাহানীর চেষ্টাসহ ইত্যাদি ঘটনাগুলো কি নারীকে ঘরবন্দী করে রাখার প্রথাগত দৃষ্টিভঙ্গীর বহিঃপ্রকাশ?

মাহিন সুলতান: একটা বিষয় হচ্ছে কি, সামাজিকভাবেই ভালো নারী মানেই সে ঢেকে চলবে, আস্তে হাঁটবে, জোরে হাসবে না, চোখ নিচে রাখবে, তার কথা শোনা যাবে না। যখনই এর বাইরে চলবে-তখনই হয় হেনস্তা, শ্লীলতাহানির চেষ্টা ইত্যাদি। কারণ এটা তো একটা চ্যালেঞ্জ।

এখন বিষয়টা হলো, আমি শালীনভাবে চললেই তো হয়। আর আমার পোশাক আমি পড়বো, তুমি না তাকালেই হলো। সুতরাং আমাদের রাস্তা ছাড়া যাবে না, পাবলিক স্পেস ছাড়া যাবে না। এটাতে অভ্যস্ত হতে হবে সমাজকে। এই স্বভাবটি আত্মস্থ করতে আমাদের কাজ করতে হবে।

আমরা দেখেছি, তনু, নুসরাতের মতো মেয়েরা তো পোশাকে ঢাকাই ছিলো। তারপরও তো রেইপ হলো, খুন হলো। আমাদের দেখতে হবে যেসব নারীরা রেইপ হলো- তাদের পোশাক কি ছিলো। দেখা যাবে কোনো আউটরেজাস ড্রেস ছিলো না। তাছাড়া, বৃদ্ধা ও শিশুরাও তো রেইপের শিকার হচ্ছে। সুতরাং এটা আসলে পোশাক না, পুরুষের নিয়ন্ত্রণ নীতি।

সংবাদ: নারী সংস্কার কমিশনের দেয়া রিপোর্টে আপনার সম্পৃক্ততা বেশি বলেই জানি। এতো কষ্ট করে আপনারা একটা রিপোর্ট তৈরি করলেন, এ নিয়ে যে উগ্রপন্থীদের এতো বিষোদগার, এই বিষয়ে সরকারের প্রতিক্রিয়া কি যথেষ্ট ছিলো?

মাহিন সুলতান: না। মোটেও ছিলো না। এর জন্য আমি আরেকটু ইতিহাস টানতে চাই। আমাদের গত ১০/১৫ বছরের চর্চাতে যেতে চাই। আমাদের দেশে কিন্তু আলোচনা করা, কোন একটা ইস্যুতে আমি একমত না-ও হতে পারি, কিন্তু এ নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসে তুমি তোমার মত দিবে, আমি আমার মত দিবো, আমরা দ্বিমত করতে পারি, একমতে আসতে পারি, একজন আরেকজনকে কনভিন্স করতে পারি- ভদ্রভাবে তো করা যায়! এই চর্চাটা নেই। মানে আমি তোমারটা পছন্দ করছি না বলে তুমি খারাপ- এই এটিচ্যুডটা কিন্তু খুবই খারাপ।

তো আমরা নারী কমিশন থেকে যে সুপারিশটা দিয়েছি, আমরা জানতাম সবাই একমত হবে না। আমরা চেয়েছিলাম যে, এটা আলোচনার সূত্র হোক। আমরা কিছু দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা দিয়েছি, আমরা জানি যে, এখন এটা বাস্তবায়ন সম্ভব না। সবাই এটাতে একমত না, কিন্তু আলোচনা করে করে কোন একদিন তো একমতে পৌঁছাতে পারি। আলোচনার সুযোগটা তো আসতে হবে।

আমরা সরকার থেকে আশা করেছিলাম, সরকার একটা আলোচনার জায়গা তৈরি করবে, আহ্বান দিবে, সবাইকে ডেকে আলোচনায় এনে বলবে- শোন, আমরা কিন্তু সব কিছু অনুমোদন করে দিইনি। মাথা ঠান্ডা করে আলোচনায় সব সিদ্ধান্ত হবে।

সংবাদ: সুপারিশ দাখিলের পর ঐকমত্য কমিশনে আপনাদের ডাকেনি কেন সরকার?

মাহিন সুলতান: আমরাও ভেবেছিলাম সরকার আমাদের ডাকবে। আপনার মনে থাকার কথা- ঐকমত্য কমিশন যখন গঠন হয়, তখন বলেছিলো যে ছয়টা কমিশন নিয়ে এটা তৈরি হয়েছে, সেই ছয় কমিশন প্রধান থাকবেন এবং ঐ ছয়টা নিয়েই আলোচনা হবে। তখনই আমরা একটু চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। তার মানে কি- যে পাঁচটা পরে হয়েছে, তারা কোনো জায়গা পাবে না? তখন আমরা আলোচনা শুরু করলাম, যে কমিশনগুলো পরে এসেছে- সেগুলোও তো কোনো অংশে কম না।

যখন আমরা ড. ইউনূসের সাথে দেখা করলাম, রিপোর্টটি জমা দিলাম, তখন তিনি বলেছিলেন, তোমাদের রিপোর্টটা আমি ঐকমত্য কমিশনে জমা দিবো, সেখানে বিষয়টি আলোচনার মধ্যে থাকবে। তারপর আমাদের পক্ষ থেকে এই ব্যাপারে মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দিলাম। কিন্তু তার আর কোনো জবাব না পেয়ে কিছুদিন পর আমরা আরেকটি চিঠি দিলাম ড. আলী রিয়াজ বরাবর। তো তিনি দু’দফা উত্তর দিলেন। শেষ উত্তরে জানালেন- বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হবে না, কারণ এটা তাদের টার্মস অব রেফারেন্সে নাই।

এটা আমাদের বড় একটা হতাশার জায়গা।

সংবাদ: বৈবাহিক ধর্ষণকে (যৌন সম্পর্ক) ফৌজদারি আইনে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ দিয়েছে সংস্কার কমিশন। নারী আন্দোলনে সম্পৃক্তরাও এটাকে নোটিস করে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- আইন মন্ত্রণালয় বা শিশু ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় কি বিষয়টিকে আমলে নিয়েছে?

মাহিন সুলতান: পারিবারিক নির্যাতন, সুরক্ষা ও প্রতিরোধ আইনটা এখন সংস্কারের পর্যায়ে আছে। সেখানেই বৈবাহিক ধর্ষণকে (যৌন সম্পর্ক) ফৌজদারি আইনে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি আছে। কারণ এটা একটা ফর্ম অব ডমেস্টিক ভায়োলেন্স, তাই না। সুতরাং বাইরে যতই হৈচৈ করুক, এটা কিন্তু একটা আইনের মধ্যে চলে এসেছে।

তবে এটা নিয়ে একটা সমস্যা আছে। এটাকে আপনি কিভাবে প্রমাণ করবেন? কোন ডিগ্রিতে গেলে এটা ভায়োলেন্স হবে? কতটা জোর করেছে? ইত্যাদি বিষয় তো থাকেই। মোদ্দা কথা হলো- আমরা যদি প্রিন্সিপালটা মেনে নিই, তাহলে আস্তে আস্তে প্রক্রিয়াটা বের হবেই।

সংবাদ: ধর্ষণের শিকার অন্যান্য লিঙ্গের মানুষের জন্য বিচার ও আইন-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে ধর্ষণ আইনে সংস্কার আনা জরুরিও বলছেন। সেই সাথে যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিও চলছে। সমাজ, রাষ্ট্র এই বিষয়গুলো বুঝতে সক্ষম বা মেনে নিতে প্রস্তুত?

মাহিন সুলতান: অন্যান্য লিঙ্গ বলতে এখানে মেইল রেইপের বিষয়টি বোঝানো হয়েছে। এটি এখনও সামাজিকভাবে একটি লজ্জার ব্যাপার। যারা শিকার হয় তারা কিন্তু সহজে এটা বলতে চায় না, পারে না। কিন্তু এটা যে ঘটে এবং এর যে বিচার দরকার, আমার মনে হয় না এটা নিয়ে আপত্তি আছে। কিন্তু এটা খুব একটা সেনসেটিভ সাবজেক্ট। সমাজও এটা বোঝে বলেই আমার মনে হয়। ছোট ছেলেরা ঘরে বা বাইরে যেখানেই থাকুক তারা অনেকেই কিন্তু এ ধরণের যৌন হয়রানি বা রেইপের শিকার হচ্ছে। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তেও বিষয়টি আসছে। সেটা হোক মেয়ে বাচ্চা, বা ছেলে বাচ্চা। মানুষ বেশি কথা বলেছে মেয়েদের নিয়ে। তো সেখানে এটা নিয়ে তেমন আপত্তি শুনিনি।

যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশটি নিয়ে আমার মনে হয় ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমরা শুধু সুপারিশ দিয়েছি। এর সামনে-পেছনে আর কিছু বলিনি। তো আমাদের যে ব্যাখ্যাটা ছিলো- আমরা বলছি না যে এটা একটা খুব ভালো পেশা, এখানে সবার আসা উচিত। সেই সেন্সে স্বীকৃতি চাচ্ছি না। আমরা বলছি যে, এখানে এতোগুলো মানুষ এই পেশা করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে, তারা যে এ পেশায় আছে তাদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থান ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং রাষ্ট্রের সুযোগ সুবিধা যাতে তারা পেতে পারে, সেজন্য তো ওদের একটা স্বীকৃতি দরকার। সেজন্যই আমাদের সুপারিশ।

নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হলো সামাজের একটা অংশে প্রচলিত ধারণার।

তবে শ্রম মন্ত্রণালয় কিন্তু বিষয়টি আমলে নিয়েছে। এটা একটা বড় অর্জন। শ্রম আন্দোলন মনে করছে এটা দরকার, শ্রম কমিশনও এটিকে আলোচনায় নিয়েছে। তো আমার মনে হয় আগামী পাঁচ বছরে এটা হয়ে যাবে।

সংবাদ: তো সরকার বাস্তবায়ন করলো, কিন্তু সমাজ প্রস্তুত হয়নি গ্রহণ করতে। তখন কিভাবে কাজ করবেন?

মাহিন সুলতান: এটা বাস্তবায়নে সরকার, সামাজিক ও উন্নয়ন সংস্থার পাশাপাশি মিডিয়ারও কিন্তু একটি বড় ভূমিকা আছে। কারণ দেখুন আগে ‘পতিতা’ ‘পতিতা’ বলা হতো। এখন কি আমরা তা বলি? এখন যে আমরা যৌনকর্মী বা কর্ম বলছি, এটাও কিন্তু একটা অর্জন। এটাকে মিডিয়া যেভাবে ধারণ করেছে, প্রচার করছে- এটাও কম নয়। আমি বলবো, এই ২৪/২৫ বছরে এই ছোট ছোট অর্জনগুলোও কিন্তু কম না। এগুলো ছোট, মূল্য কিন্তু অনেক। যেখানে একজন পতিতা মানে যে নষ্ট হয়ে গেছে, সেখানে আমি বলছি যৌনকর্মী মানে তার কর্মকে প্রাধান্য দিচ্ছি।

সংবাদ: অর্থনৈতিক সংস্কার প্রশ্নে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং নারী শ্রমিকের নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি অনেকদিনের। এখনও কার্যকর ফলাফল নেই। প্রকৃত কারণ কি?

মাহিন সুলতান: অনেকগুলো কারণ। একটা তো হলো আমাদের কর্মক্ষেত্রগুলো। আমরা জানি, ৯৫ ভাগ নারীই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে আছে। সেখানে এমনিতেই তেমন কোনো নিয়ম নাই। আরেকটা হলো দারিদ্র এবং এক ব্যক্তির উপর নির্ভরতা। যেমন- একজন গৃহকর্মী সে যতোই বাসা বদল করুক না কেন, বেশি বেতন তো পাবে না, হয়তো কর্মপরিবেশ একটু ভালো হবে, তাই না। তারপরও তার কোনো হেলথ ইন্স্যুরেন্স নাই, ছুটি নাই, কাজগুলোও তো খুব ভাল ধরা হয় না।

এছাড়া, মেয়েরা যে কর্মক্ষেত্রে আসবে, শিশুযত্ন কেন্দ্রও তো নাই। মেয়েরা এখন বাচ্চাদের মাদ্রাসায় যে দিচ্ছে, কারণ হচ্ছে- সেখানে খাওয়াটা পাচ্ছে, সারাদিন কিংবা সারা মাসের জন্য রাখতে পারছে। এটা সব রকমের নারীর জন্যই সমস্যা। বাচ্চাকে রাখা ও যত্ন নেয়া। হাতেগোণা কিছু নারী হয়তো মা- শাশুড়ির সহায়তা পাচ্ছে।

তাছাড়া সরকারী কর্মজীবী গুটিকয় হোস্টেলগুলোতেও নিরাপত্তার সমস্যা, খাওয়ার সমস্যা দেখা গেছে। বেসরকারিগুলোতে খরচ দিয়ে থাকাও সম্ভব না।

এক্ষেত্রে মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে আমরা বলেছিলাম, তোমাদের অবকাঠামো করার দরকার নাই, নিয়ম-নীতি ও মনিটরিংটা করো। পুরোটা প্রাইভেট খাতে দিয়ে দাও। মানে রেগুলেটরি ফাংশন করো।

সংবাদ: নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন প্রতিটি সংসদীয় এলাকার জন্য একটি সাধারণ আসনের পাশাপাশি নারীদের জন্য একটি সংরক্ষিত আসন রেখে সংসদে মোট ৬০০ আসন করার সুপারিশ করেছে। উভয় ক্ষেত্রে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন করার সুপারিশও এসেছে। প্রশ্ন হলো- সংসদীয় আসনে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা বাড়ালেই কি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নারীর অধিকতর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যাবে?

মাহিন সুলতান: আমরা বলেছি সংসদে সমান প্রতিনিধিত্ব। নারীরা সরাসরি নির্বাচিত হয়ে আসুক। না হলে সম্মান থাকে না, ক্ষমতা তৈরি হবে না, জোরও থাকে না। এখন এটা কিভাবে করা যায়? তিনশ’ সাধারণ আসনের বাইরে আরো তিনশ’ আসন কি শুধু নারীরা লড়বে? নাকি নারী-পুরুষ মিলে লড়বে, নাকি আমরা বলবো প্রত্যেক পলিটিক্যাল পার্টি মিনিমাম ৩৩%, ৫০% মনোনয়ন দাও- এগুলো আলোচনা করে ঠিক হোক।

আরেকটা রেকমেন্ডেশান ছিলো, ওই পিআর সিস্টেমে আসুক। সেখানে একদল যদি ৪০টা আসন পায়, সেখানে ২০ জন পুরুষ ও ২০ জন নারী দেবে তারা। এটা হচ্ছে পিআর সিস্টেম। নরওয়েসহ বেশ কয়েকটি দেশে এই ব্যবস্থা আছে।

সংবাদ: এই সিস্টেমটা কি আমাদের দেশে সম্ভব?

মাহিন সুলতান: ইন্টেরেস্টিং হলো- জামায়াত ও এনসিপি চাচ্ছে হোক। যদিও তারা শুধু নারীদের জন্য এই পিআর চাচ্ছে তা কিন্তু নয়। বিষয়টি এখন না হলেও ২০ বছর পরও এভাবে নারীদের জন্য সহজ হতে পারে। তবে এখন যেটা করতে হবে, নারীদের সরাসরি নির্বাচন করতেই হবে।

সংবাদ: আপা, আপনাকে ধন্যবাদ

মাহিন সুলতান: আপনার মাধ্যমে সংবাদ পরিবারকে ধন্যবাদ।

‘মুক্ত আলোচনা’ : আরও খবর

» নভেম্বর বিপ্লবের ১০৮ বছর: শ্রেণিসংগ্রামের উজ্জ্বলতম আলোকবর্তিকা

» নতুন বাংলাদেশে নারীর পথচলা : অগ্রগতি নাকি পশ্চাদপদতা?

» কপ-৩০ কেন গুরুত্বপূর্ণ: বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ ও বাংলাদেশের বাস্তবতা

» সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং : বুদ্ধিমানরাও প্রতারিত হন!

» জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস

» মানুষের অমরত্বের সন্ধানে

» বইমেলা ফেব্রুয়ারিতেই চাই

» প্রবারণার আলোয় আলোকিত হোক আমাদের জীবন: আত্মশুদ্ধি, মৈত্রী ও ত্যাগের মহিমা

সম্প্রতি