alt

উপ-সম্পাদকীয়

সমৃদ্ধির সোপান মাতারবাড়ি

ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি

: শুক্রবার, ১০ নভেম্বর ২০২৩
image

শনিবার মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনালের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং চ্যানেলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

রূপকথার গল্পের মতো সাগর সেঁচা মুক্তো নয়, বাস্তবিকই সাগর থেকে মাটি তুলে এনে তৈরি করা হয়েছে নতুন ভূমি। সেই ভূমিতে গড়ে তোলা হয়েছে ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। বাংলাদেশ সরকার ও কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল)-এর নিজস্ব তহবিল ও জাপানের সহযোগিতায় কক্সবাজার জেলার সাগরদ্বীপ মহেশখালীর মাতারবাড়িতে গড়ে উঠেছে এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। গত ২৯ জুলাই ২০২৩ তারিখে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রকল্পসমূহের মধ্যে এটি অন্যতম। মহান স্বাধীনতার পরপরই অনন্য কূটনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে বন্ধুদেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় ধ্বংসপ্রাপ্ত জাহাজ ও মাইন অপসারণ করে পরিত্যক্ত চট্টগ্রাম বন্দরকে দ্রুততম সময়ে পুরোপুরি সচল করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কেননা, কর্ণফুলী তীরবর্তী বন্দর থেকে বহির্নোঙর অবধি জাহাজ চলাচলের পুরো চ্যানেলজুড়ে মাইন ফেলে গিয়েছিল পরাজিত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই চ্যানেল ঝুঁঁকিমুক্ত না করলে যে অর্থনৈতিক চাকার পুনরুজ্জীবন ঘটানো অসম্ভব- সেটা বঙ্গবন্ধু অনুধাবন করেছিলেন। এভাবেই চট্টগ্রাম বন্দরকে নবজন্ম দান করেন তিনি। বঙ্গবন্ধু একটা কথা প্রায়ই বলতেন, ‘তোরা দেখিস, যেদিন আমার চট্টগ্রাম জাগবে সেদিনই আমার বাঙালি জাগবে।’ বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন বিপ্লবের কল্যাণে ইতোমধ্যে শতভাগ নাগরিককে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র হয়ে উঠবে এক অনন্য সংযোজন।

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সিপিজিসিবিএল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি এই প্রকল্পের জন্য ১২০টি জাহাজ চলাচলের উপযোগী গভীর সমুদ্রবন্দর চ্যানেল এবং দুটি জেটি নির্মাণ করেছে। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না হলেও গত সাত মাসে প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে ভিড়েছে বিশাল আকৃতির ১০টি জাহাজ। সিপিজিসিবিএল ইতোমধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর চ্যানেলটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করেছে।

১১ নভেম্বর মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর চ্যানেল উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিনই তিনি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের আরেক বিপুল সম্ভাবনা- ‘মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর’ এর প্রথম টার্মিনাল নির্মাণকাজের। বঙ্গোপসাগরের তীরঘেঁষে ১ হাজার ৩১ একর জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে এই বন্দরটি। জাইকার সহযোগিতায় নির্মীয়মান মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান হয়ে গেছে। মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প ২০২০ সালের ১০ মার্চ একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। ২০২৬ সালে এর অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হবে। তখন এখানে ৮ হাজার টিইইউসের বেশি সক্ষমতাসম্পন্ন কন্টেনার বহনকারী জাহাজ নোঙর করতে পারবে। সহজেই আসতে পারবে বৃহদাকার কন্টেনার জাহাজ। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিগুলোতে সাধারণত মাত্র ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটবিশিষ্ট জাহাজ বার্থ করতে পারে, যেগুলো ৮০০ থেকে সর্বোচ্চ ২৪০০ টিইইউএস কন্টেনার বহন করতে পারে।

মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের আর পণ্য নিয়ে সিঙ্গাপুর, কলম্বো ও মালয়েশিয়ার বন্দরে অপেক্ষায় থাকতে হবে না। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় একটি পণ্যের চালান পাঠাতে সময় লাগে ৪৫ দিন। মাতারবাড়ি বন্দর চালু হলে পণ্য মাত্র ২৩ দিনেই সরাসরি নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম থেকে সমুদ্রপথে মাতারবাড়ির দূরত্ব ৩৪ নটিক্যাল মাইল, পায়রাবন্দর থেকে মাতারবাড়ির দূরত্ব ১৯০ নটিক্যাল মাইল ও মোংলা বন্দর থেকে গভীর সমুদ্রবন্দরের দূরত্ব ২৪০ নটিক্যাল মাইল। তাই মাতারবাড়িতে মাদার ভেসেল (বৃহদাকার কন্টেনার জাহাজ) থেকে পণ্য খালাস করে অল্প সময়ের মধ্যে সড়ক ও সমুদ্রপথে অন্যান্য বন্দরে পরিবহন করা যাবে। পুরোদমে মাতারবাড়ি বন্দর চালু হলে দেশের অর্থনীতিতে তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। পরিসংখ্যান বলছে গভীর সমুদ্রবন্দর জাতীয় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে ২-৩ শতাংশ অবদান রাখবে।

মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরে সড়কপথে যাতায়াত সহজ করার জন্য কক্সবাজারের চকরিয়ার ফাসিয়াখালী থেকে মাতারবাড়ি পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে ২৭ দশমিক ২ কিলোমিটার সড়ক। এর মধ্যে মাতারবাড়ি বন্দর থেকে ধলঘাট গোলচত্বর পর্যন্ত সোয়া ১ কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়ক চারলেনে উন্নীত করা হবে। এছাড়া ধলঘাট থেকে ফাসিয়াখালী পর্যন্ত পণ্য পরিবহনের জন্য ২ লেনের ২৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে, যা ভবিষ্যতে ৪ লেনের মহাসড়কে উন্নীত করা হবে। গভীর সমুদ্রবন্দর সম্পন্ন হওয়ার আগেই নির্মাণ প্রক্রিয়ায় কর্মসংস্থান হয়েছে দুই থেকে তিন হাজার স্থানীয় মানুষের।

‘রূপকল্প ২০২১’-এর সফল বাস্তবায়নের পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ‘রূপকল্প ২০৪১’- স্বপ্ন দেখাচ্ছে একটি সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশের। মাতারবাড়ি তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দর চ্যানেল ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর বাস্তবায়নের মাধ্যমে মহেশখালী হয়ে উঠবে দক্ষিণ এশিয়ার ব্যবসাকেন্দ্র- কিছুদিন আগেও যা ছিল নাগরিক সুবিধাহীন লবণচাষ নির্ভর, দুর্যোগপ্রবণ এক প্রত্যন্ত এলাকা মাত্র।

সমৃদ্ধির উদাহরণ হিসেবে সিঙ্গাপুরের রূপক ব্যবহৃত হয়েছে বহু বছর, মাতারবাড়ি হয়ে উঠবে সমৃদ্ধির ইতিহাসে আমাদের নিজস্ব এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

এ কেবল স্বপ্ন বা প্রত্যাশা নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বে সমৃদ্ধির স্বপ্ন এখন বাস্তবায়নের পথে। আমাদের একজনই শেখ হাসিনা আছেন- যিনি স্বপ্ন দেখান এবং স্বপ্ন বাস্তবায়নের পরিকল্পিত পদক্ষেপও গ্রহণ করেন। সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়নে তার অনেকগুলো সফল উদ্যোগের অন্যতম নাম হয়ে উঠবে মাতারবাড়ি।

[লেখক: এমপি; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক]

আকস্মিক বন্যা প্রতিরোধ ও প্রস্তুতির কৌশল

পতিতাবৃত্তি কি অপরাধ?

বন্যা-পরবর্তী কৃষকের সুরক্ষা করণীয়

নদী সংস্কার : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

নিজের চরকায় তেল দেবার নাম দেশপ্রেম

রম্যগদ্য : ডাক্তারি যখন আইসিইউতে

ডায়াবেটিস ও মুখের স্বাস্থ্য

বাঙালির ইলিশচর্চা

এসডিজি অর্জনে চ্যালেঞ্জ হতে পারে কুষ্ঠ রোগ

প্রসঙ্গ : পরিসংখ্যানের তথ্য বিকৃতি

বোরো ধান বিষয়ে কিছু সতর্কতা এবং সার ব্যবস্থাপনা

বন্যার জন্য ভারত কতটুকু দায়ী

গ্রাফিতিতে আদিবাসীদের বঞ্চনার চিত্র

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা

পুলিশের সংস্কার হোক জনগণের কল্যাণে

জলবায়ু পরিবর্তন ও আমাদের মনস্তত্ত্ব

উন্নয়নের সুফল সবার কাছে পৌঁছাতে হবে

বন্যার বিভিন্ন ঝুঁকি ও করণীয়

প্রশ্নে জর্জরিত মানুষ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আবির্ভাব

রম্যগদ্য : এ-পাস, না ও-পাস?

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি, উত্তরণের উপায়

গৃহকর্মী নির্যাতনের অবসান হোক

মাঙ্কিপক্স : সতর্কতা ও সচেতনতা

সবার আগে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে

শিক্ষাক্ষেত্রে দ্রুত যেসব পদক্ষেপ নিতে হবে

বাদী কিংবা বিবাদীর মৃত্যুতে আইনি ফলাফল কী?

নদ-নদীর সংজ্ঞার্থ ও সংখ্যা : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

রাষ্ট্র সংস্কার ও পরিবেশ ন্যায়বিচার

আন্তঃক্যাডার বৈষম্য কি দূর হবে

আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা

অন্তর্বর্তী সরকারের অন্তহীন কাজ

নিষ্ঠার সাথে নিজের কাজটুকু করাই দেশপ্রেম

দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করতে হবে

ছবি

ইসমাইল হানিয়ের করুণ মৃত্যু

ক্যাপিটল : মার্কিনিদের গণতন্ত্রের প্রতীক

হাওর উন্নয়নে চাই সমন্বিত উদ্যোগ

tab

উপ-সম্পাদকীয়

সমৃদ্ধির সোপান মাতারবাড়ি

ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি

image

শনিবার মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনালের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং চ্যানেলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

শুক্রবার, ১০ নভেম্বর ২০২৩

রূপকথার গল্পের মতো সাগর সেঁচা মুক্তো নয়, বাস্তবিকই সাগর থেকে মাটি তুলে এনে তৈরি করা হয়েছে নতুন ভূমি। সেই ভূমিতে গড়ে তোলা হয়েছে ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। বাংলাদেশ সরকার ও কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল)-এর নিজস্ব তহবিল ও জাপানের সহযোগিতায় কক্সবাজার জেলার সাগরদ্বীপ মহেশখালীর মাতারবাড়িতে গড়ে উঠেছে এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। গত ২৯ জুলাই ২০২৩ তারিখে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রকল্পসমূহের মধ্যে এটি অন্যতম। মহান স্বাধীনতার পরপরই অনন্য কূটনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে বন্ধুদেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় ধ্বংসপ্রাপ্ত জাহাজ ও মাইন অপসারণ করে পরিত্যক্ত চট্টগ্রাম বন্দরকে দ্রুততম সময়ে পুরোপুরি সচল করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কেননা, কর্ণফুলী তীরবর্তী বন্দর থেকে বহির্নোঙর অবধি জাহাজ চলাচলের পুরো চ্যানেলজুড়ে মাইন ফেলে গিয়েছিল পরাজিত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই চ্যানেল ঝুঁঁকিমুক্ত না করলে যে অর্থনৈতিক চাকার পুনরুজ্জীবন ঘটানো অসম্ভব- সেটা বঙ্গবন্ধু অনুধাবন করেছিলেন। এভাবেই চট্টগ্রাম বন্দরকে নবজন্ম দান করেন তিনি। বঙ্গবন্ধু একটা কথা প্রায়ই বলতেন, ‘তোরা দেখিস, যেদিন আমার চট্টগ্রাম জাগবে সেদিনই আমার বাঙালি জাগবে।’ বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন বিপ্লবের কল্যাণে ইতোমধ্যে শতভাগ নাগরিককে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র হয়ে উঠবে এক অনন্য সংযোজন।

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সিপিজিসিবিএল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি এই প্রকল্পের জন্য ১২০টি জাহাজ চলাচলের উপযোগী গভীর সমুদ্রবন্দর চ্যানেল এবং দুটি জেটি নির্মাণ করেছে। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না হলেও গত সাত মাসে প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে ভিড়েছে বিশাল আকৃতির ১০টি জাহাজ। সিপিজিসিবিএল ইতোমধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর চ্যানেলটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করেছে।

১১ নভেম্বর মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর চ্যানেল উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিনই তিনি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের আরেক বিপুল সম্ভাবনা- ‘মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর’ এর প্রথম টার্মিনাল নির্মাণকাজের। বঙ্গোপসাগরের তীরঘেঁষে ১ হাজার ৩১ একর জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে এই বন্দরটি। জাইকার সহযোগিতায় নির্মীয়মান মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান হয়ে গেছে। মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প ২০২০ সালের ১০ মার্চ একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। ২০২৬ সালে এর অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হবে। তখন এখানে ৮ হাজার টিইইউসের বেশি সক্ষমতাসম্পন্ন কন্টেনার বহনকারী জাহাজ নোঙর করতে পারবে। সহজেই আসতে পারবে বৃহদাকার কন্টেনার জাহাজ। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিগুলোতে সাধারণত মাত্র ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটবিশিষ্ট জাহাজ বার্থ করতে পারে, যেগুলো ৮০০ থেকে সর্বোচ্চ ২৪০০ টিইইউএস কন্টেনার বহন করতে পারে।

মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের আর পণ্য নিয়ে সিঙ্গাপুর, কলম্বো ও মালয়েশিয়ার বন্দরে অপেক্ষায় থাকতে হবে না। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় একটি পণ্যের চালান পাঠাতে সময় লাগে ৪৫ দিন। মাতারবাড়ি বন্দর চালু হলে পণ্য মাত্র ২৩ দিনেই সরাসরি নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম থেকে সমুদ্রপথে মাতারবাড়ির দূরত্ব ৩৪ নটিক্যাল মাইল, পায়রাবন্দর থেকে মাতারবাড়ির দূরত্ব ১৯০ নটিক্যাল মাইল ও মোংলা বন্দর থেকে গভীর সমুদ্রবন্দরের দূরত্ব ২৪০ নটিক্যাল মাইল। তাই মাতারবাড়িতে মাদার ভেসেল (বৃহদাকার কন্টেনার জাহাজ) থেকে পণ্য খালাস করে অল্প সময়ের মধ্যে সড়ক ও সমুদ্রপথে অন্যান্য বন্দরে পরিবহন করা যাবে। পুরোদমে মাতারবাড়ি বন্দর চালু হলে দেশের অর্থনীতিতে তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। পরিসংখ্যান বলছে গভীর সমুদ্রবন্দর জাতীয় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে ২-৩ শতাংশ অবদান রাখবে।

মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরে সড়কপথে যাতায়াত সহজ করার জন্য কক্সবাজারের চকরিয়ার ফাসিয়াখালী থেকে মাতারবাড়ি পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে ২৭ দশমিক ২ কিলোমিটার সড়ক। এর মধ্যে মাতারবাড়ি বন্দর থেকে ধলঘাট গোলচত্বর পর্যন্ত সোয়া ১ কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়ক চারলেনে উন্নীত করা হবে। এছাড়া ধলঘাট থেকে ফাসিয়াখালী পর্যন্ত পণ্য পরিবহনের জন্য ২ লেনের ২৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে, যা ভবিষ্যতে ৪ লেনের মহাসড়কে উন্নীত করা হবে। গভীর সমুদ্রবন্দর সম্পন্ন হওয়ার আগেই নির্মাণ প্রক্রিয়ায় কর্মসংস্থান হয়েছে দুই থেকে তিন হাজার স্থানীয় মানুষের।

‘রূপকল্প ২০২১’-এর সফল বাস্তবায়নের পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ‘রূপকল্প ২০৪১’- স্বপ্ন দেখাচ্ছে একটি সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশের। মাতারবাড়ি তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দর চ্যানেল ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর বাস্তবায়নের মাধ্যমে মহেশখালী হয়ে উঠবে দক্ষিণ এশিয়ার ব্যবসাকেন্দ্র- কিছুদিন আগেও যা ছিল নাগরিক সুবিধাহীন লবণচাষ নির্ভর, দুর্যোগপ্রবণ এক প্রত্যন্ত এলাকা মাত্র।

সমৃদ্ধির উদাহরণ হিসেবে সিঙ্গাপুরের রূপক ব্যবহৃত হয়েছে বহু বছর, মাতারবাড়ি হয়ে উঠবে সমৃদ্ধির ইতিহাসে আমাদের নিজস্ব এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

এ কেবল স্বপ্ন বা প্রত্যাশা নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বে সমৃদ্ধির স্বপ্ন এখন বাস্তবায়নের পথে। আমাদের একজনই শেখ হাসিনা আছেন- যিনি স্বপ্ন দেখান এবং স্বপ্ন বাস্তবায়নের পরিকল্পিত পদক্ষেপও গ্রহণ করেন। সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়নে তার অনেকগুলো সফল উদ্যোগের অন্যতম নাম হয়ে উঠবে মাতারবাড়ি।

[লেখক: এমপি; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক]

back to top