alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

ওজোন স্তর: পৃথিবীর সুরক্ষা-ছাতা

আল জারসাম হোসেন রাফিদ

: শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৩

বৈচিত্র্যময় এই পৃথিবীতে জলবায়ু প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ হচ্ছে ওজোন স্তর ক্ষয়। সূর্য থেকে আসা ক্ষতিকর অতি বেগুনি রশ্মিকে প্রতিহত করে পৃথিবীকে টিকিয়ে রেখেছে ঊর্ধাকাশের ওজোন স্তর।

বর্তমান শতব্দীতে পৃথিবীর পরিবেশগত অবক্ষয়ের মধ্যে অন্যতম হলো ওজোন স্তরের ক্ষয়। ওজোন স্তর ক্ষয়ের জন্য দুটি কারণ লক্ষ্য করা যায়- মানবসৃষ্ট কারণ ও প্রাকৃতিক কারণ। বেশ কিছু প্রাকৃতিক কারণে ওজোন স্তর ক্ষয় হয় যেমন- আলোর বিক্রিয়ায় ইউভি রশ্মির উপস্থিতিতে ওজোন গ্যাসের বিনাশ, নাইট্রোজেন অক্সাইড, হাইড্রোক্লোরিক এসিড, ক্লোরিন দিয়ে ওজোন গ্যাসের বিনাশ। আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত দ্বারাও প্রাকৃতিকভাবে ওজোন ধ্বংস হয়।

ওজোন অবক্ষয়ের ফলে পৃথিবীর জীবজগৎ মারাত্মক হুমকির মুখে। অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাবে ত্বক ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, লিউকোমিয়া, চোখে ছানি সহ ্আরো জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। ইউভি-এর প্রভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, প্রজননক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। ওজোন স্তর ক্ষয় উদ্ভিদের জন্যও ব্যাপক হুমকিস্বরূপ। সালোকসংশ্লেষণ ও বীজের অঙ্কুরোদগম ব্যাহত হবে। পাতার রঙ পরিবর্তন হয়ে সাদা দাগ লক্ষ্য করা যায়। ইউভি-এর প্রভাবে ২০-২৫ শতাংশ পাতায় ক্লোরোফিলের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। পর্যাপ্ত ক্লোরোফিলের অভাবে উদ্ভিদ খাদ্য তৈরিতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।

বায়ুমন্ডলের ওজোন স্তরে ক্ষয়ের কারণে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আগামী ৪০ বছর ওজোন অবক্ষয়ের দরুন ভূপৃষ্ঠের ৫ থেকে ২০ ভাগ ইউভি রশ্মি বেশি পতিত হবে ফলে ভূপৃষ্ঠে বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং দেখা দিবে। যার ফলে মেরু অঞ্চলে বরফ গলবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে শুরু করবে। স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ওজোনের পরিমাণ হ্রাস পেলে ট্রপোস্ফিয়ারে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের পরিমাণ বাড়বে ফলস্বরূপ এসিড বৃষ্টির সৃষ্টি হবে। ওজোন হ্রাস নিয়ন্ত্রণ না করলে বাস্তুতন্ত্রের উৎপাদনশীলতা ও স্থায়ীত্বের ভারসাম্য বিলীন হয়ে যাবে। পরিবেশের বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও জলবাযু পরিবর্তন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করছে এই ওজোন স্তর।

বিভিন্ন জ্বালানি থেকে নিঃসৃত কার্বন ওজোন ধ্বংসের অন্যতম কারণ। পৃথিবীর ৬০ ভাগ কার্বন নিঃসরণ করে থাকে আমেরিকা, চীন, রাশিয়া, ভারত, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য। ওজোন স্তর রক্ষায় এসব দেশকে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে এনে বিকল্প জ্বালানির ব্যবস্থা করতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানির প্রয়োগ কমিয়ে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে যেমন সূর্যশক্তি, বায়ুশক্তি, পানিশক্তির মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার করতে হবে।

পৃথিবীর আজ সর্বত্রই প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েই চলেছে দৃশমান হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। তাই আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর বাসযোগ্য সবুজ পৃথিবী রেখে যেতে হলে ওজান স্তর রক্ষায় শিল্পোন্নত দেশগুলোকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে।

ওজোন স্তর রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো সিএফসি বা ক্লোরোফ্লোরো কার্বন, মিথাইল ব্রোমাইড ও নাইট্রাস অক্সাইড এর মতো ক্ষতিকারক গ্যাসগুলোর ব্যবহার রোধ করা। কার্বন মনোক্সাইড এবং নাইট্রোজেন অক্সাইড যুক্ত করে এমন ব্যক্তিগত যানবাহনের ব্যবহার হ্রাস করা। রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার, স্প্রে ক্যান এগুলোর ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে কিংবা এগুলোর বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ সিএফসি গ্যাস বায়ুমন্ডলে ছড়াতে পারে। রাসায়নিক সার তৈরির সময় বেশ কয়েকটি গ্রিনহাউস গ্যাস তৈরি হয়। সুতরাং আমাদের কৃষিতে সারের ব্যবহার কমানো উচিত জৈব পদার্থের ব্যবহার বাড়ানো উচিত। নির্বিচারে বনভূমি উজাড় রোধ করতে হবে।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে ২০০৮ সালে ওজোন স্তরের ফাটলের পরিমাণ ছিল ২৭ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার, ২০০৬ সালে ছিল ২৫ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার, ২০০৯ সালে পরিমাণ ছিল ২৪ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার, ২০০৯ সালে এই পরিমাণটি একটু কমিয়ে আনা সম্ভব হলেও তা কিন্তু আশঙ্কার বাইরে নয়।

১৯৮৫ সালে বিশ্বস্তরে সরকারগুলো ওজোন স্তর সংরক্ষনের জন্য ভিয়েনা কনভেনশন গ্রহণ করেছিল। এর দুই বছর পর ১৯৮৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর কানাডার মন্ট্রিলে ওজোন স্তন ক্ষয়ের জন্য দায়ী দ্রব্যগুলোর ব্যবহার নিষিদ্ধ বা সীমিত করার লক্ষ্যে ‘মন্ট্রিল প্রোটোকল’ গৃহীত হয়। ওই দিনটি স্বরণে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৬ সেপ্টেম্বরকে ‘বিশ্ব ওজোন স্তর সুরক্ষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। মন্ট্রিল প্রোটোকলে গৃহীত চুক্তির সারমর্ম হলো ১৯৯৫ সালের মধ্যে সমস্ত উন্নত দেশগুলোকে সিএফসি ও হ্যালন গ্যাস উৎপাদন বন্ধ করতে হবে কার্বন ট্রেটাক্লোরাইড এবং ট্রাইক্লোরো ইথেন-এর উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বন্ধ করতে হবে। ক্লোরোফ্লোরো কার্বনের পরিবর্ত দ্রব্য হিসেবে হাইড্রোক্লোরোফ্লোরো কার্বন এবং হাইড্রোফ্লোরো কার্বন যৌগের ব্যবহার ২০৪০ সালের মধ্যে বন্ধ করতে হবে।

বায়ুমন্ডলের ওজোন স্তর ক্ষয়ের কারণে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে

১৯৮৯ সালের ব্রিটিশ সরকার এবং ইউএনও পরিবেশ প্রোগ্রাম নামে লন্ডনে একটি সম্মেলন গঠন করে যা লন্ডন কনফারেন্স নামে পরিচিত। এ সম্মেলনে স্থির হয় যে ওজোন স্তর ধ্বংসকারী সিএফসির উৎপাদন ও ব্যবহার হ্রাস করতে হবে বিকল্প রাসায়নিক পদার্থ তৈরি করতে হবে যা ওজোন স্তরকে ধ্বংস করবে না। সিএফসি ঊৎপাদন শতকরা ২০ ভাগ হ্রাস করতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যেতে মন্ট্রিল প্রোটোকলসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি।

ওজোন স্তর আমাদের পৃথিবীকে রক্ষা করছে তাই এটিকেও রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। মহাবিশ্বের মাঝে আমাদের পৃথিবী একমাত্র গ্রহ যেখানে মানুষ বসবাসের জন্য সুন্দর পরিবেশে গড়েছেন সৃষ্টিকর্তা। ঝুলন্ত মহাবিশ্ব সদা চলমান। স্ব স্ব দায়িত্ব পালনে মহাজাগতিক বস্তুসমূহের মাঝে নেই কোন অবহেলা। অসর্তকতা-অবহেলা শুধু দেখি মানুষের বেলায়। শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের পক্ষে যা একদম মানায় না। সর্তকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হলে জেরে ফেলতে হবে অলসতা। আসুন আমরা সতর্ক হই। যানবাহনের ধোঁয়া কমাই; রেফ্রিজারেটর, এয়ারকুলারসহ সব যন্ত্রপাতি স্বাস্থ্যসম্মত যথাযথভাবে ব্যবহার করি। সিএফসি গ্যাস উৎপাদন সহ্যসীমার মাঝে রাখি। সার্বিকভাবে দূষণমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখি।

[লেখক: শিক্ষার্থী, জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়]

সোনার প্রাসাদের দেয়ালে ঘামের দাগ

নিরাপদ সড়ক চাই কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ কোথায়?

অবহেলিত শিক্ষার দুর্দশা বাড়ছে

টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত নিরাপদ সড়ক

বাংলার সংস্কৃতি কি মূলধারা হারিয়ে ফেলবে?

ছবি

সমদৃষ্টি, বহুত্ববাদী সমাজ এবং সহিষ্ণুতা

খাদ্য অপচয় : ক্ষুধার্ত পৃথিবীর এক নিঃশব্দ ট্র্যাজেডি

টেকসই বাংলাদেশ গঠনে পরিবেশ সংস্কার কেন অপরিহার্য

সে এক রূপকথারই দেশ

উপকূলের খাদ্যসংকট নিয়ে ভাবছেন কি নীতিনির্ধারকেরা?

মানসিক স্বাস্থ্য: মানবাধিকারের নতুন চ্যালেঞ্জ

ঢাকার যানজট ও বিকেন্দ্রীকরণ

নির্বাচনী মাঠে জামায়াতী হেকমত

শিক্ষা ব্যবস্থায় গভীর বৈষম্য ও জাতির অগ্রযাত্রাধ

উপমহাদেশে সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন, বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ

এইচএসসি ফল: সংখ্যার খেল না কি শিক্ষার বাস্তব চিত্র?

বিনা ভোট, নিশি ভোট, ডামি ভোটের পরে এবার নাকি গণভোট!

কমরেড ইলা মিত্রের শততম জন্মজয়ন্তী

কত মৃত্যু হলে জাগবে বিবেক?

বৈষম্যের বিবিধ মুখ

মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় জরুরি আইনি সহায়তা

গাজা : এখন শান্তি রক্ষা করবে কে?

দোসর, বাই ডিফল্ট!

জমি কেনা দাগে দাগে কিন্তু ভোগদখল একদাগে

রাষ্ট্র কি শুধু শিক্ষকদের বেলায় এসে দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে?

শতরঞ্জ কি খিলাড়ী

শিক্ষক থাকে রাজপথে, আর পুলিশ ছাড়ে থানা

উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা : স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবিষ্যৎ কী?

ছবি

শ্লীলতা, অশ্লীলতার রাজনৈতিক সংস্কৃতি

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: অবক্ষয়ের চোরাবালিতে আলোর দিশারী

অটোমেশন ও দেশের যুব কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ

দুর্যোগে ভয় নয়, প্রস্তুতিই শক্তি

বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন

ছবি

‘আল্লাহ তুই দেহিস’: এ কোন ঘৃণার আগুন, ছড়িয়ে গেল সবখানে!

চেকের মামলায় আসামী যেসব ডিফেন্স নিয়ে খালাস পেতে পারেন

খেলনাশিল্প: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

ওজোন স্তর: পৃথিবীর সুরক্ষা-ছাতা

আল জারসাম হোসেন রাফিদ

শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৩

বৈচিত্র্যময় এই পৃথিবীতে জলবায়ু প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ হচ্ছে ওজোন স্তর ক্ষয়। সূর্য থেকে আসা ক্ষতিকর অতি বেগুনি রশ্মিকে প্রতিহত করে পৃথিবীকে টিকিয়ে রেখেছে ঊর্ধাকাশের ওজোন স্তর।

বর্তমান শতব্দীতে পৃথিবীর পরিবেশগত অবক্ষয়ের মধ্যে অন্যতম হলো ওজোন স্তরের ক্ষয়। ওজোন স্তর ক্ষয়ের জন্য দুটি কারণ লক্ষ্য করা যায়- মানবসৃষ্ট কারণ ও প্রাকৃতিক কারণ। বেশ কিছু প্রাকৃতিক কারণে ওজোন স্তর ক্ষয় হয় যেমন- আলোর বিক্রিয়ায় ইউভি রশ্মির উপস্থিতিতে ওজোন গ্যাসের বিনাশ, নাইট্রোজেন অক্সাইড, হাইড্রোক্লোরিক এসিড, ক্লোরিন দিয়ে ওজোন গ্যাসের বিনাশ। আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত দ্বারাও প্রাকৃতিকভাবে ওজোন ধ্বংস হয়।

ওজোন অবক্ষয়ের ফলে পৃথিবীর জীবজগৎ মারাত্মক হুমকির মুখে। অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাবে ত্বক ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, লিউকোমিয়া, চোখে ছানি সহ ্আরো জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। ইউভি-এর প্রভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, প্রজননক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। ওজোন স্তর ক্ষয় উদ্ভিদের জন্যও ব্যাপক হুমকিস্বরূপ। সালোকসংশ্লেষণ ও বীজের অঙ্কুরোদগম ব্যাহত হবে। পাতার রঙ পরিবর্তন হয়ে সাদা দাগ লক্ষ্য করা যায়। ইউভি-এর প্রভাবে ২০-২৫ শতাংশ পাতায় ক্লোরোফিলের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। পর্যাপ্ত ক্লোরোফিলের অভাবে উদ্ভিদ খাদ্য তৈরিতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।

বায়ুমন্ডলের ওজোন স্তরে ক্ষয়ের কারণে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আগামী ৪০ বছর ওজোন অবক্ষয়ের দরুন ভূপৃষ্ঠের ৫ থেকে ২০ ভাগ ইউভি রশ্মি বেশি পতিত হবে ফলে ভূপৃষ্ঠে বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং দেখা দিবে। যার ফলে মেরু অঞ্চলে বরফ গলবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে শুরু করবে। স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ওজোনের পরিমাণ হ্রাস পেলে ট্রপোস্ফিয়ারে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের পরিমাণ বাড়বে ফলস্বরূপ এসিড বৃষ্টির সৃষ্টি হবে। ওজোন হ্রাস নিয়ন্ত্রণ না করলে বাস্তুতন্ত্রের উৎপাদনশীলতা ও স্থায়ীত্বের ভারসাম্য বিলীন হয়ে যাবে। পরিবেশের বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও জলবাযু পরিবর্তন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করছে এই ওজোন স্তর।

বিভিন্ন জ্বালানি থেকে নিঃসৃত কার্বন ওজোন ধ্বংসের অন্যতম কারণ। পৃথিবীর ৬০ ভাগ কার্বন নিঃসরণ করে থাকে আমেরিকা, চীন, রাশিয়া, ভারত, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য। ওজোন স্তর রক্ষায় এসব দেশকে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে এনে বিকল্প জ্বালানির ব্যবস্থা করতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানির প্রয়োগ কমিয়ে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে যেমন সূর্যশক্তি, বায়ুশক্তি, পানিশক্তির মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার করতে হবে।

পৃথিবীর আজ সর্বত্রই প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েই চলেছে দৃশমান হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। তাই আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর বাসযোগ্য সবুজ পৃথিবী রেখে যেতে হলে ওজান স্তর রক্ষায় শিল্পোন্নত দেশগুলোকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে।

ওজোন স্তর রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো সিএফসি বা ক্লোরোফ্লোরো কার্বন, মিথাইল ব্রোমাইড ও নাইট্রাস অক্সাইড এর মতো ক্ষতিকারক গ্যাসগুলোর ব্যবহার রোধ করা। কার্বন মনোক্সাইড এবং নাইট্রোজেন অক্সাইড যুক্ত করে এমন ব্যক্তিগত যানবাহনের ব্যবহার হ্রাস করা। রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার, স্প্রে ক্যান এগুলোর ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে কিংবা এগুলোর বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ সিএফসি গ্যাস বায়ুমন্ডলে ছড়াতে পারে। রাসায়নিক সার তৈরির সময় বেশ কয়েকটি গ্রিনহাউস গ্যাস তৈরি হয়। সুতরাং আমাদের কৃষিতে সারের ব্যবহার কমানো উচিত জৈব পদার্থের ব্যবহার বাড়ানো উচিত। নির্বিচারে বনভূমি উজাড় রোধ করতে হবে।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে ২০০৮ সালে ওজোন স্তরের ফাটলের পরিমাণ ছিল ২৭ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার, ২০০৬ সালে ছিল ২৫ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার, ২০০৯ সালে পরিমাণ ছিল ২৪ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার, ২০০৯ সালে এই পরিমাণটি একটু কমিয়ে আনা সম্ভব হলেও তা কিন্তু আশঙ্কার বাইরে নয়।

১৯৮৫ সালে বিশ্বস্তরে সরকারগুলো ওজোন স্তর সংরক্ষনের জন্য ভিয়েনা কনভেনশন গ্রহণ করেছিল। এর দুই বছর পর ১৯৮৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর কানাডার মন্ট্রিলে ওজোন স্তন ক্ষয়ের জন্য দায়ী দ্রব্যগুলোর ব্যবহার নিষিদ্ধ বা সীমিত করার লক্ষ্যে ‘মন্ট্রিল প্রোটোকল’ গৃহীত হয়। ওই দিনটি স্বরণে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৬ সেপ্টেম্বরকে ‘বিশ্ব ওজোন স্তর সুরক্ষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। মন্ট্রিল প্রোটোকলে গৃহীত চুক্তির সারমর্ম হলো ১৯৯৫ সালের মধ্যে সমস্ত উন্নত দেশগুলোকে সিএফসি ও হ্যালন গ্যাস উৎপাদন বন্ধ করতে হবে কার্বন ট্রেটাক্লোরাইড এবং ট্রাইক্লোরো ইথেন-এর উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বন্ধ করতে হবে। ক্লোরোফ্লোরো কার্বনের পরিবর্ত দ্রব্য হিসেবে হাইড্রোক্লোরোফ্লোরো কার্বন এবং হাইড্রোফ্লোরো কার্বন যৌগের ব্যবহার ২০৪০ সালের মধ্যে বন্ধ করতে হবে।

বায়ুমন্ডলের ওজোন স্তর ক্ষয়ের কারণে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে

১৯৮৯ সালের ব্রিটিশ সরকার এবং ইউএনও পরিবেশ প্রোগ্রাম নামে লন্ডনে একটি সম্মেলন গঠন করে যা লন্ডন কনফারেন্স নামে পরিচিত। এ সম্মেলনে স্থির হয় যে ওজোন স্তর ধ্বংসকারী সিএফসির উৎপাদন ও ব্যবহার হ্রাস করতে হবে বিকল্প রাসায়নিক পদার্থ তৈরি করতে হবে যা ওজোন স্তরকে ধ্বংস করবে না। সিএফসি ঊৎপাদন শতকরা ২০ ভাগ হ্রাস করতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যেতে মন্ট্রিল প্রোটোকলসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি।

ওজোন স্তর আমাদের পৃথিবীকে রক্ষা করছে তাই এটিকেও রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। মহাবিশ্বের মাঝে আমাদের পৃথিবী একমাত্র গ্রহ যেখানে মানুষ বসবাসের জন্য সুন্দর পরিবেশে গড়েছেন সৃষ্টিকর্তা। ঝুলন্ত মহাবিশ্ব সদা চলমান। স্ব স্ব দায়িত্ব পালনে মহাজাগতিক বস্তুসমূহের মাঝে নেই কোন অবহেলা। অসর্তকতা-অবহেলা শুধু দেখি মানুষের বেলায়। শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের পক্ষে যা একদম মানায় না। সর্তকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হলে জেরে ফেলতে হবে অলসতা। আসুন আমরা সতর্ক হই। যানবাহনের ধোঁয়া কমাই; রেফ্রিজারেটর, এয়ারকুলারসহ সব যন্ত্রপাতি স্বাস্থ্যসম্মত যথাযথভাবে ব্যবহার করি। সিএফসি গ্যাস উৎপাদন সহ্যসীমার মাঝে রাখি। সার্বিকভাবে দূষণমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখি।

[লেখক: শিক্ষার্থী, জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়]

back to top