alt

উপ-সম্পাদকীয়

প্রাণের মেলা

জিল্লুর রহমান

: বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
image

অমর একুশে বইমেলা

অজানাকে জানা ও অচেনাকে চেনার যে চিরন্তন আগ্রহ, তা বই পড়ে মেটানো হয়। একটি ভালো বই-ই হচ্ছে মনের খোরাক জোগানোর অন্যতম উপায়। বই মানুষের জ্ঞানের পরিধি বাড়ায়। একটি ভালো বই ঘুমন্ত বিবেক জাগিয়ে তোলে। জীবনকে সুন্দরভাবে বিকশিত করতে হলে, সুবাসিত করতে হলে জ্ঞানার্জন করতে হয়। আর জ্ঞানার্জন করতে হলে বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। পৃথিবীর যাবতীয় জ্ঞানের কথা যেন বইয়ের মাঝে লুকিয়ে আছে। তাই জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশ করতে হলে বই পড়তেই হবে। নিজেকে জানতে হলে, পৃথিবীকে জানতে হলে বই পড়তেই হবে। বই হচ্ছে সমুদ্রের মতো, এক একটা বই হচ্ছে জ্ঞানের এক ফোঁটা সমুদ্রের জল। বই পড়া এমন এক তৃষ্ণা যা সহজে মেটে না, ভালো বই শুধু পড়তেই মন চায়।

সত্যিকারভাবে বই হচ্ছে সভ্যতার সূতিকাগার, স্বপ্নের কারিগর, জ্ঞানের আধার ও মানুষের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। একজন মানুষ যে পেশায় যত দক্ষই হোক না কেন, যতবড় প-িত বা জ্ঞানীই হোক না কেন, তার দক্ষতা ও পেশাদারত্বে উৎকর্ষতা অর্জনের জন্য তাকে বারবার বইয়ের কাছেই ফিরে আসতে হয়। কারণ জ্ঞানের সূচনা বই থেকে শুরু হয় এবং সে জ্ঞানকে সামগ্রিকভাবে কাজে লাগানোর দক্ষতা বই থেকেই পেয়ে থাকে। মানুষের মননশীল, চিন্তাশীল, সৃষ্টিশীল চিন্তার যাবতীয় সূচনার বিস্ফোরণ একমাত্র বইয়ের মাধ্যমেই শুরু হয়। এজন্য বইকে বলা জ্ঞানার্জনের প্রধান মাধ্যম এবং জীবনকে আপন আলোয় আলোকিত করার প্রধান উপায়ই হচ্ছে বই।

বই পড়েই জ্ঞানার্জন করতে হয়। পৃথিবীতে যারা যত বড় হয়েছেন, জগদ্বিখ্যাত হয়েছেন, তারাই বেশি বেশি জ্ঞান অন্বেষণে বই পড়েছেন। পৃথিবীর যে কোনো বরেণ্য মনীষীদের জীবন ইতিহাস ঘাঁটলে এ কথার সত্যতা প্রমাণিত হয়। দেশ ও জাতি গঠনে বইয়ের ভূমিকা অপরিসীম। শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতির অগ্রগতি সম্ভব নয়। আর সহজ উপায়ে মানুষের মধ্যে শিক্ষা ও জ্ঞানের আলো ছড়াতে সমাজের জন্য বই অপরিহার্য। বইয়ের বিকল্প আর কিছুই হতে পারে না। বই হচ্ছে শেখার, জানার ও জ্ঞানার্জনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। পৃথিবীতে নানা ধরনের মেলা ও হাট বসে, এসবের মধ্যে বইমেলা হচ্ছে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মেলা। কারণ এখানে লেখক পাঠকদের মহামিলন হয়, ভাব ও মতবিনিময় হয়, জ্ঞানের বিস্তার ঘটে, অনেকেই লেখক, কবি, ঔপন্যাসিক হওয়ার স্বপ্ন দেখে এবং আবার অনেকেই বইমেলা থেকে বই কিনে প-িত হিসেবে খ্যাতি লাভ করে। বইমেলা থেকেই জ্ঞানের আলো দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এজন্যই এটা পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মেলা।

আমাদের দেশে লেখক পাঠক শিশু বৃদ্ধ সবার কাছে সবচেয়ে প্রিয় ফেব্রুয়ারি মাস। কারণ ফেব্রুয়ারিজুড়েই চলে সবার প্রাণপ্রিয় অমর একুশে বইমেলা। দেশের সর্ববৃহৎ এই সাংস্কৃতিক উৎসবের জন্য প্রকাশক লেখক পাঠকরা বাকি এগারো মাস মুখিয়ে থাকে। বইমেলার সবচেয়ে প্রাণবন্ত দৃশ্য হলো যেদিকেই দৃষ্টি যায় সেদিকেই শুধু বই আর বই, যেন এক জ্ঞানসমুদ্র। এ কারণেই মাসব্যাপী এই বইয়ের হাট সবার সবচেয়ে প্রিয় মিলনমেলা। বইমেলায় গেলে সবচেয়ে বেশি আনন্দ পায় শিশুরা। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ, নতুন বইয়ের সুন্দর সুন্দর প্রচ্ছদ, নতুন বইয়ের চোখ ধাঁধানো বাঁধাই, নতুন বইয়ের চমৎকার সব লেখা, তারা এসব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে প্রচুর আনন্দ পায়, প্রিয় বইটি কিনে নেয়। এমনকি বইমেলা থেকে অনেকে নতুন নতুন বিষয় নিয়ে চিন্তা করারও খোরাক পায়। কেউ কেউ লেখক, কবি, ঔপন্যাসিক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। যে কারণে অমর একুশে বইমেলা সবার প্রাণের মেলা।

আগে শুধু পত্র-পত্রিকায় বইমেলা নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনা সীমাবদ্ধ থাকত। কিন্তু ইদানীং গণমাধ্যমের পাশাপাশি প্রতি বছরই আমরা অমর একুশে বইমেলার ভালো এবং মন্দ দিক নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ সরব থাকি। আমাদের একটাই উদ্দেশ্য থাকে প্রাণের এই অমর একুশে বইমেলা যেন আরও সুন্দর হয়, আরও পরিপাটি হয়, আরও গোছানো হয়, আরও পরিচ্ছন্ন হয়, আরও নির্বিঘ্ন হয়, আরও স্বতঃস্ফূর্ত ও সার্বজনীন হয়, সেটি যেন আয়োজক বাংলা একাডেমি যথাযথভাবে পালন করে।

বইমেলায় গেলে সারাদেশ ও বিদেশ থেকে আগত লেখক পাঠকদের একটি মিলনমেলা হয়, অনেক পাঠক প্রিয় লেখকের অটোগ্রাফ নেয়ার জন্য মুখিয়ে থাকে এবং অটোগ্রাফ নেয়ার পর যেন তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে। অনেকেই আগত বন্ধুদের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও চুটিয়ে আড্ডা দেয়ার সুযোগ পায়। তারা কেবল অমর একুশে বইমেলার মাসেই এই সুযোগটি পায়। বইমেলায় গেলে নতুন বই নিয়ে শিশুদের অবারিত আনন্দ দেখার সুযোগ সত্যিই মনোমুগ্ধকর এবং এটাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আনন্দ। বই নিয়ে শিশুদের আনন্দময় চোখ দেখা যে কোনো লেখকের জন্য একটি অনিন্দ্য সুন্দর দৃশ্য।

বই পড়ার গুরুত্বও অপরিসীম। প্রমথ চৌধুরী বলেছিলেন, ‘সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত’। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হলে মানুষকে বই পড়তে হবে। একমাত্র বই পড়ার মাধ্যমেই মানুষ তার জ্ঞানের পরিধিকে বিস্তৃত করতে পারে। কারণ বই পড়ার মাধ্যমেই প্রকৃত শিক্ষা অর্জিত হয়। বই পড়ার মাধ্যমে মানুষের জ্ঞান আহরণের পাশাপাশি তার চিন্তাশক্তি, যুক্তি, বুদ্ধির জাগরণ ঘটে, যা একজন স্বশিক্ষিত মানুষের জন্য অপরিহার্য। বই পড়ার মাধ্যমে মানুষ জ্ঞানের রাজ্যের সঙ্গে পরিচিত হয়। শিক্ষার সর্বপ্রধান অঙ্গ হলো সাহিত্যচর্চা। আর সাহিত্যচর্চা করতে হয় বই পড়ে। বই পড়া ছাড়া উপায় নেই। যথার্থ শিক্ষিত হতে হলে মনের সংকীর্ণতা পরিহার করা প্রসারতা দরকার, আর তা যা বই পাঠের অভ্যাসের মাধ্যমেই কেবল সম্ভব।

বই পড়া একই সঙ্গে সুস্থ বিনোদন ও শিক্ষামূলক কাজগুলোর মধ্যে একটি। অবসরে বইয়ের চেয়ে ভালো বন্ধু ও বিনোদন আর কিছুই হতে পারে না। বই পড়া মানসিক প্রক্রিয়াকে সক্রিয় রাখে, মস্তিষ্কের চিন্তা করার খোরাক জোগায়, সৃজনশীলতা বাড়ায় এবং তথ্য ধরে রাখার ক্ষমতা সৃষ্টি করে। বই পড়লে মানুষ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিকমনষ্ক হয়ে ওঠে। সুস্থ বিনোদন মানুষের মানসিক বিকাশে নানাভাবে সহায়তা করে। পাঠ অভ্যাস একটি নির্মল বিনোদনের উৎস। ভালো বই পড়া, জীবনশৈলী ভালো সিনেমা দেখা, বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের জীবনীগ্রন্থ পড়া, নিয়মিত খবরের কাগজ পড়া যেমন দক্ষতা ও মনের খোরাক বাড়ায়, তেমনি জ্ঞানচর্চা এবং সৃজনশীল কাজ মানসিক বিকাশে অন্যতম ভূমিকা রাখে। সবচেয়ে কাছের বন্ধুও মানুষকে ছেড়ে যেতে পারে কিন্তু বই সেটা করে না। এজন্য বই হোক মানুষের সবচেয়ে ভালো বন্ধু ও নিত্যসাথী, সুস্থ বিনোদনের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম ও সভ্যতা বিকাশের চাবিকাঠি।

[লেখক : ব্যাংকার]

ছবি

শেকড়ের সন্ধানে সাঁইজির ধামে

বৈষম্যের অন্ধকারে নিমজ্জিত প্রকৌশল শিক্ষার আরেক জগৎ

প্রশাসনিক সংস্কারে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা কতটা প্রতিষ্ঠা পাবে?

বাংলার মৃৎশিল্প

প্রবারণা পূর্ণিমার আলোয় আলোকিত হোক মানবজাতি

খেলাপি ঋণের অপসংস্কৃতি

কথার কথা যত কথা

দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত হোক শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

সুইডেনের গণতন্ত্র

বিচ্ছিন্নতা ও একাকীত্ব : শহুরে জীবনধারার মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব

নতুন প্রেক্ষাপটে ‘চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড’ : স্বাধীনতা না প্রতিরোধ?

ধর্মীয় স্বাধীনতা ও কঠিন চীবরদান

ছবি

দুর্গাপূজার মর্মবাণী

মানুষ মূল্যস্ফীতি থেকে রক্ষা পাবে কীভাবে

গুজব ও মিথ্যা তথ্য : সমাজের এক ভয়াবহ ব্যাধি

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে দৃঢ় পদক্ষেপ প্রয়োজন

পুরাতত্ত্বের ধারায় সনাতনী সমাজের দুর্গাপূজা

জীবন-মৃত্যু কী?

নাসা : বিজ্ঞানের পীঠস্থান

শিক্ষা সংস্কারে প্রথাগত চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে

সাংঘাতিক ভাই, সাংঘাতিক...

প্রযুক্তির মায়াজালে বন্দি মানুষ

ছবি

এসএম সুলতান : সংস্কৃতি সত্তার সত্যপাঠ

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস

তরুণ সমাজ ও প্রযুক্তি নির্ভরতা : সামাজিক সম্পর্কের পরিবর্তন ও মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব

বগুড়ার তাঁতপল্লী

অটিজম কোনো রোগ নয়

জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কি আইনসম্মত

দুর্বল ব্যাংকগুলোকে কতদিন সহায়তা দেয়া হবে?

বৈষম্যহীন রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য বয়সবৈষম্য দূর করুন

আসন্ন বোরো উৎপাদন ও কিছু শঙ্কা

ছবি

আইন পেশার জানা-অজানা কথা

ছবি

ব্যাংক খাতের সংকট

একাকিত্ব ও মানসিক অশান্তি

বাংলাদেশের শিক্ষা ও শিক্ষক সমাজ

ব্রি: কিছু প্রশ্ন, কিছু উত্তর

tab

উপ-সম্পাদকীয়

প্রাণের মেলা

জিল্লুর রহমান

image

অমর একুশে বইমেলা

বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

অজানাকে জানা ও অচেনাকে চেনার যে চিরন্তন আগ্রহ, তা বই পড়ে মেটানো হয়। একটি ভালো বই-ই হচ্ছে মনের খোরাক জোগানোর অন্যতম উপায়। বই মানুষের জ্ঞানের পরিধি বাড়ায়। একটি ভালো বই ঘুমন্ত বিবেক জাগিয়ে তোলে। জীবনকে সুন্দরভাবে বিকশিত করতে হলে, সুবাসিত করতে হলে জ্ঞানার্জন করতে হয়। আর জ্ঞানার্জন করতে হলে বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। পৃথিবীর যাবতীয় জ্ঞানের কথা যেন বইয়ের মাঝে লুকিয়ে আছে। তাই জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশ করতে হলে বই পড়তেই হবে। নিজেকে জানতে হলে, পৃথিবীকে জানতে হলে বই পড়তেই হবে। বই হচ্ছে সমুদ্রের মতো, এক একটা বই হচ্ছে জ্ঞানের এক ফোঁটা সমুদ্রের জল। বই পড়া এমন এক তৃষ্ণা যা সহজে মেটে না, ভালো বই শুধু পড়তেই মন চায়।

সত্যিকারভাবে বই হচ্ছে সভ্যতার সূতিকাগার, স্বপ্নের কারিগর, জ্ঞানের আধার ও মানুষের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। একজন মানুষ যে পেশায় যত দক্ষই হোক না কেন, যতবড় প-িত বা জ্ঞানীই হোক না কেন, তার দক্ষতা ও পেশাদারত্বে উৎকর্ষতা অর্জনের জন্য তাকে বারবার বইয়ের কাছেই ফিরে আসতে হয়। কারণ জ্ঞানের সূচনা বই থেকে শুরু হয় এবং সে জ্ঞানকে সামগ্রিকভাবে কাজে লাগানোর দক্ষতা বই থেকেই পেয়ে থাকে। মানুষের মননশীল, চিন্তাশীল, সৃষ্টিশীল চিন্তার যাবতীয় সূচনার বিস্ফোরণ একমাত্র বইয়ের মাধ্যমেই শুরু হয়। এজন্য বইকে বলা জ্ঞানার্জনের প্রধান মাধ্যম এবং জীবনকে আপন আলোয় আলোকিত করার প্রধান উপায়ই হচ্ছে বই।

বই পড়েই জ্ঞানার্জন করতে হয়। পৃথিবীতে যারা যত বড় হয়েছেন, জগদ্বিখ্যাত হয়েছেন, তারাই বেশি বেশি জ্ঞান অন্বেষণে বই পড়েছেন। পৃথিবীর যে কোনো বরেণ্য মনীষীদের জীবন ইতিহাস ঘাঁটলে এ কথার সত্যতা প্রমাণিত হয়। দেশ ও জাতি গঠনে বইয়ের ভূমিকা অপরিসীম। শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতির অগ্রগতি সম্ভব নয়। আর সহজ উপায়ে মানুষের মধ্যে শিক্ষা ও জ্ঞানের আলো ছড়াতে সমাজের জন্য বই অপরিহার্য। বইয়ের বিকল্প আর কিছুই হতে পারে না। বই হচ্ছে শেখার, জানার ও জ্ঞানার্জনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। পৃথিবীতে নানা ধরনের মেলা ও হাট বসে, এসবের মধ্যে বইমেলা হচ্ছে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মেলা। কারণ এখানে লেখক পাঠকদের মহামিলন হয়, ভাব ও মতবিনিময় হয়, জ্ঞানের বিস্তার ঘটে, অনেকেই লেখক, কবি, ঔপন্যাসিক হওয়ার স্বপ্ন দেখে এবং আবার অনেকেই বইমেলা থেকে বই কিনে প-িত হিসেবে খ্যাতি লাভ করে। বইমেলা থেকেই জ্ঞানের আলো দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এজন্যই এটা পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মেলা।

আমাদের দেশে লেখক পাঠক শিশু বৃদ্ধ সবার কাছে সবচেয়ে প্রিয় ফেব্রুয়ারি মাস। কারণ ফেব্রুয়ারিজুড়েই চলে সবার প্রাণপ্রিয় অমর একুশে বইমেলা। দেশের সর্ববৃহৎ এই সাংস্কৃতিক উৎসবের জন্য প্রকাশক লেখক পাঠকরা বাকি এগারো মাস মুখিয়ে থাকে। বইমেলার সবচেয়ে প্রাণবন্ত দৃশ্য হলো যেদিকেই দৃষ্টি যায় সেদিকেই শুধু বই আর বই, যেন এক জ্ঞানসমুদ্র। এ কারণেই মাসব্যাপী এই বইয়ের হাট সবার সবচেয়ে প্রিয় মিলনমেলা। বইমেলায় গেলে সবচেয়ে বেশি আনন্দ পায় শিশুরা। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ, নতুন বইয়ের সুন্দর সুন্দর প্রচ্ছদ, নতুন বইয়ের চোখ ধাঁধানো বাঁধাই, নতুন বইয়ের চমৎকার সব লেখা, তারা এসব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে প্রচুর আনন্দ পায়, প্রিয় বইটি কিনে নেয়। এমনকি বইমেলা থেকে অনেকে নতুন নতুন বিষয় নিয়ে চিন্তা করারও খোরাক পায়। কেউ কেউ লেখক, কবি, ঔপন্যাসিক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। যে কারণে অমর একুশে বইমেলা সবার প্রাণের মেলা।

আগে শুধু পত্র-পত্রিকায় বইমেলা নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনা সীমাবদ্ধ থাকত। কিন্তু ইদানীং গণমাধ্যমের পাশাপাশি প্রতি বছরই আমরা অমর একুশে বইমেলার ভালো এবং মন্দ দিক নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ সরব থাকি। আমাদের একটাই উদ্দেশ্য থাকে প্রাণের এই অমর একুশে বইমেলা যেন আরও সুন্দর হয়, আরও পরিপাটি হয়, আরও গোছানো হয়, আরও পরিচ্ছন্ন হয়, আরও নির্বিঘ্ন হয়, আরও স্বতঃস্ফূর্ত ও সার্বজনীন হয়, সেটি যেন আয়োজক বাংলা একাডেমি যথাযথভাবে পালন করে।

বইমেলায় গেলে সারাদেশ ও বিদেশ থেকে আগত লেখক পাঠকদের একটি মিলনমেলা হয়, অনেক পাঠক প্রিয় লেখকের অটোগ্রাফ নেয়ার জন্য মুখিয়ে থাকে এবং অটোগ্রাফ নেয়ার পর যেন তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে। অনেকেই আগত বন্ধুদের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও চুটিয়ে আড্ডা দেয়ার সুযোগ পায়। তারা কেবল অমর একুশে বইমেলার মাসেই এই সুযোগটি পায়। বইমেলায় গেলে নতুন বই নিয়ে শিশুদের অবারিত আনন্দ দেখার সুযোগ সত্যিই মনোমুগ্ধকর এবং এটাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আনন্দ। বই নিয়ে শিশুদের আনন্দময় চোখ দেখা যে কোনো লেখকের জন্য একটি অনিন্দ্য সুন্দর দৃশ্য।

বই পড়ার গুরুত্বও অপরিসীম। প্রমথ চৌধুরী বলেছিলেন, ‘সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত’। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হলে মানুষকে বই পড়তে হবে। একমাত্র বই পড়ার মাধ্যমেই মানুষ তার জ্ঞানের পরিধিকে বিস্তৃত করতে পারে। কারণ বই পড়ার মাধ্যমেই প্রকৃত শিক্ষা অর্জিত হয়। বই পড়ার মাধ্যমে মানুষের জ্ঞান আহরণের পাশাপাশি তার চিন্তাশক্তি, যুক্তি, বুদ্ধির জাগরণ ঘটে, যা একজন স্বশিক্ষিত মানুষের জন্য অপরিহার্য। বই পড়ার মাধ্যমে মানুষ জ্ঞানের রাজ্যের সঙ্গে পরিচিত হয়। শিক্ষার সর্বপ্রধান অঙ্গ হলো সাহিত্যচর্চা। আর সাহিত্যচর্চা করতে হয় বই পড়ে। বই পড়া ছাড়া উপায় নেই। যথার্থ শিক্ষিত হতে হলে মনের সংকীর্ণতা পরিহার করা প্রসারতা দরকার, আর তা যা বই পাঠের অভ্যাসের মাধ্যমেই কেবল সম্ভব।

বই পড়া একই সঙ্গে সুস্থ বিনোদন ও শিক্ষামূলক কাজগুলোর মধ্যে একটি। অবসরে বইয়ের চেয়ে ভালো বন্ধু ও বিনোদন আর কিছুই হতে পারে না। বই পড়া মানসিক প্রক্রিয়াকে সক্রিয় রাখে, মস্তিষ্কের চিন্তা করার খোরাক জোগায়, সৃজনশীলতা বাড়ায় এবং তথ্য ধরে রাখার ক্ষমতা সৃষ্টি করে। বই পড়লে মানুষ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিকমনষ্ক হয়ে ওঠে। সুস্থ বিনোদন মানুষের মানসিক বিকাশে নানাভাবে সহায়তা করে। পাঠ অভ্যাস একটি নির্মল বিনোদনের উৎস। ভালো বই পড়া, জীবনশৈলী ভালো সিনেমা দেখা, বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের জীবনীগ্রন্থ পড়া, নিয়মিত খবরের কাগজ পড়া যেমন দক্ষতা ও মনের খোরাক বাড়ায়, তেমনি জ্ঞানচর্চা এবং সৃজনশীল কাজ মানসিক বিকাশে অন্যতম ভূমিকা রাখে। সবচেয়ে কাছের বন্ধুও মানুষকে ছেড়ে যেতে পারে কিন্তু বই সেটা করে না। এজন্য বই হোক মানুষের সবচেয়ে ভালো বন্ধু ও নিত্যসাথী, সুস্থ বিনোদনের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম ও সভ্যতা বিকাশের চাবিকাঠি।

[লেখক : ব্যাংকার]

back to top