alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

রম্যগদ্য : ‘প্রহরীর সাতশ কোটি টাকা...’

জাঁ-নেসার ওসমান

: শনিবার, ০৬ এপ্রিল ২০২৪

শুরু করিতেছি বাংলার অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত জনগণের নামে যাঁরা পরম করুণাময় এবং অন্তত দয়ালু। তাঁহাদের দয়ার কথা বলিয়া শেষ করা যাইবে না। পৃথিবীর সকল সমুদ্রের জল যদি সুলেখা কালিতে রূপান্তরিত হয় তাহা হইলেও এঁদের দয়ার কথা লিখিয়া শেষ করা যাইবে না। সমস্ত কালি হয়তো ফুরাইয়া যাইবে তবুও এঁদের দয়ার কথা ফুরাইবে না। এঁরা এতোই দয়ালু যে এঁদের প্রাণপ্রিয় সন্তানকে মুছুলমানি করিবার সময় মারিয়া ফেলিলে এঁরা কিছু মনে না করিয়া ধন্বন্তরিকে পুনরায় আর এক সন্তানকে মুছুলমানি করিতে দিয়া মারিয়া ফেলেন। কিন্তু কাহারও বিরুদ্ধে এঁরা কিছু বলেন না, সকল কিছু ইহারা ক্ষমাসুন্দর নয়নে অবলোকন করেন। যদিও সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে যে, চেতনানাশক ওষুধটি নকল হওয়ায়, অকালে মুছুলমানির সময় কিছু অবুঝ শিশুর প্রাণ বায়ুনিঃসরণ হয়েছে। তারপরও যেসব প্রতিষ্ঠান এই নকল ওষুধ সরবরাহ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে বাংলার অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত জনগণ দেশের মালিকরা কোনো প্রকার প্রতিবাদ করেননি। এঁরা এমনি দয়ালু যে এঁদের তুলনায় দাতা হাতেম তাই, রাজা হরিশ চন্দ্র এমনকি মহাভারতের কুন্তি নন্দন, দাতা কর্ণও ফেইল। এঁদের তুলনায় এইসব ঐতিহাসিক চরিত্র নস্যি মাত্র। এইতো কদিন আগে, স্থান-কাল-পাত্রভেদে জমি ক্রয় বা বিক্রি করিতে গেলে স্থানীয় প্রতিনিধিকে মোটা অঙ্কের নজরানা প্রদান করিবার জন্য এঁদের মধ্যে কাড়াকাড়ি পড়িয়া যায়। কাহার পূর্বে কে নজরানা প্রদান করিবেন। কারণ স্যারেদের নির্বাচনে প্রচুর খরচ হইয়াছে, অতএব এ খরচ পূরণের দায়িত্ব বাংলার অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত জনগণের তাই সকলেই অর্থ প্রদান করিয়া ইহাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখেন। ইহা লইয়া প্রাইভেট টিভির চ্যানেলে চ্যানেলে এঁরা রীতিমতো প্রতিযোগিতা করিয়া প্রতিবেদন প্রচার করেন। কেউ ‘থ্রি-ফরটি-নাইন ডিগ্রি’, কেউবা শিবের ‘তৃতীয় নয়ন’, অনেকে আবার জনগণের কাছাকাছি পৌঁছে ভিডিও ভাইরাল করার জন্য ‘জাগ ফকিরনির পুত জাগ’ এইসব বিভিন্ন শিরোণামে অডিও ভিজ্যুয়াল প্রতিবেদন প্রচার করেন। এইসব প্রতিবেদনে ওইসব জনদরদি জনপ্রতিনিধিদের দেশের সার্বিক উন্নয়নে তাঁদের অবদানের কথা যুগ যুগ ধরে বাংলার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকার ইঙ্গিত প্রদান করেন। আবার মেট্রোরেল চালু হওয়াতে এঁরা প্রশংসায় পঞ্চমুখ। দেশের ভালো কিছু দেখিলে ইঁহারা যার পরনায় আনন্দিত ও আহ্লাদিত হন। মাওয়া হাইওয়ে, যমুনা সেতু-পদ্মাসেতু, বঙ্গবন্ধু স্যাটালাইট, ফ্লাইওভার, রূপপুরের পারমাণবিক চুল্লি এসব বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করছে এই সুখ এরা সইবে কেমন করে!! বাংলার অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত জনগণ দেশের মালিকরা ভøাদিমির ইলিচ লেনিনের প্রেস্কিপশেন অনুযায়ী মধ্যবিত্তের আফিমে দিন দিন এমন আশক্ত হয়ে পড়ছেন যে এঁরা ভাবছেন, যেই মধূসুদন দত্ত তাঁর ‘বুড়ো শালিখের ঘাড়ে রোঁ’ নাটকে জমিদারের সংলাপে লিখেছেন, ‘মোসলমান মেয়ের মুখে পে্যঁজের গন্ধ ভক ভক করে।’ আরে বেটা খালি কি মুখেই গন্ধ ভক ভক করে শরিরের অন্য কোথাও কি গন্ধ তীব্র হয় না?? এখানে অন্য কোথাও তীব্র গন্ধ হয় না বলতে আমি আর্মপিটের কথা বলছিলাম। আরব দেশে পানির আকাল, এই পানি নিয়ে বিষাদ সিন্ধুর মতো কত বড় ট্র্যাজিক উপন্যাস লেখা হলো, শুধু দজলা ফোরাত কেন রে ভাই আমাদের তিস্তা নদীর পানি বণ্টনও তো শেষ হলো না। তাই পানি কম থাকলে নারীদের গোসল কম হবে, ফলে আর্মপিটে স্মেল হতেই পারে খুবই স্বভাবিক। ন্যাচারাল ফেনোমেনা। এই নিয়ে কেবল মুসলিম নারীদের টিটকারি মারার শোধ হয়তো বাংলার অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত জনগণ একদিন রূপপুরের পারমাণবিক বোমা মেরেই প্রতিশোধ দেবে অথবা ক্রুসেড শুরু করবে। যদিও বাংলার অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত জনগণ বিষম রূপে দয়ালু কিন্তু মোসলমান নারীর অপমানের বিষয়ে কোনো ছাড় নেই। এঁটা হচ্ছে কমিউনিস্ট ভøাদিমির ইলিচ লেলিনের প্রেসক্রাইবড দাওয়াই যা বর্তমান কমিউনিস্ট নেতারাও মধ্যবিত্তের আফিমের প্রভাবে দেশ-কাল-পাত্র ভুলে পরকালে শুখে থাকার জন্য ইহকালটা হারাম কাজে ভরিয়ে তুলছে। এরা এখন পাবলিককে বাম মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ করার জন্য বর্তমানে প্রতিদিন বাংলার যেখানে যত টাকা কালেকশন হয় সেগুলো হাজী মহম্মদ দানেশের ব্রিটিশবিরোধী তেভাগা আন্দোলনের মতো সবাইকে সমান তিন ভাগে ভাগ করে দেন। এ যেন তেভাগা আন্দোলনের ডিজিটাল রূপ। ডিজিটাল বাংলা গড়তে এঁরা বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠ্যপুস্তক থেকে রবীন্দ্রনাথের লেখা বাদ দেয়ার কথা চিন্তা করছেন। কারণ... চালু লেখকদের লেখা বাংলার কোমলমতি শিশুদের ব্রেনওয়াশ করে এঁদের হয়তো ইহজাগতিক বিষয়ে জাগিয়ে তুলবে। আর তখন এঁরা পরকাল ভুলে, ক্লাসিক্যাল গান বা উচ্চাঙ্গ সংগীত পরিবেশন করতে চাইবে, যে উচ্চাঙ্গ সংগীত বহু কষ্টে বিগত পঞ্চাশ বছরের সাধনায় পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে বোমা মেরে সিনেমা হলে বোমা মেরে মেরে বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করা হয়েছে। সেসব যদি আবার ফেরত আসে তাহলে এইসব প্রজন্ম বাংলার আকাশ বাতাশ আবার নোংরা গানে গানে পাখির কলকাকলির মতো ভরিয়ে তুলবে। পাখির কুহু ধ্বনীর সঙ্গে পাখির পুরিষ যেমন ফ্রি, তেমনি এইসব প্রজন্মের সংগীতের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান স্থানীয় প্রতিনিধিদের কায়েমি স্বার্থে ফ্রিলি আঘাত করতে পারে। তাই নাটক, সিনেমা, গান-বাজনা কিছুতেই একটা সমাজের মুখ্য বিষয় হতে পারে না!! এঁটা সম্পূর্ণ না জায়েজ, যাহা সম্পূর্ণ রূপে পরিত্যজ্য। আর যেহেতু জনগণ দেশের মালিক, তাই মালিকরা যা চাইবে তাই হবে। মালিক যদি বলেন পাঠ্যপুস্তকে ছাগল গাছে উঠিবে, তাহা হইলে তাহাই সই। আর মালিক যদি বলেন প্রহরীর চাকুরি করিয়া সাতশ কোটি টাকার মালিক উহা আমরা মানিয়া লইলাম। তাহলে আমরা তাবত অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত জনগণও তাহা মানিয়া লইব। এ দেশের প্রকৃত মালিক হইলো জনগণ অতএব মালিক যাহা চাহিবেন তাহাই প্রজাতন্ত্রের সকলে মানিয়া লইবেন। এক্ষণে আপনারা সকলে ধৈর্য ধরিয়া অপেক্ষা করুন, দেখুন মালিক যেদিন মুছলমানির ফলে নিহত শ্রভ্র সন্তানগুলোর বিচার চাহিবেন? মালিক যবে জমি বিক্রির জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাহায্য চাহিবেন? মালিক কবে লাইনের চাঁদা বন্ধ করার জন্য নগর কোতোওয়ালের সাহায্য চাহিবেন? সেদিন আমরা বাংলার অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত জনগণ বাংলাদেশের প্রকৃত মালিক সকলে মিলিয়া সকল ভুলের মাশুল কড়ায় গ-ায় গুনিয়া লইব। তার আগে, মালিক না বলা পর্যন্ত আপনারা সকলে অপেক্ষা করুন। স্যামুয়েল বেকেটের নাটকের চরিত্রের মতো, অপেক্ষা করুন... অপেক্ষা করুন...অপেক্ষা করুন...

[লেখক : চলচ্চিত্রকার]

স্বর্ণের মোহ ও মানবিক দ্বন্দ্ব

ভালোবাসার দেহধারণ: বড়দিনের তাৎপর্য

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট

বিনা-ভাড়ার ট্রেনযাত্রা

ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে এশিয়া

ছবি

নামে ইসলামী, কাজে আবু জাহেল!

জলবায়ু পরিবর্তন: স্বাস্থ্যঝুঁকি

ছবি

অস্থির পেঁয়াজের বাজার: আমদানি কি সত্যিই সমাধান?

মূল্যবৃদ্ধির ঘেরাটোপ: সংকটাক্রান্ত পরিবার ও সামাজিক রূপান্তর

বায়দূষণে অকালমৃত্যু

লাশের বদলে লাশই যদি চুড়ান্ত হয়, তবে রাষ্ট্রের দরকার কী?

ভিক্ষাবৃত্তি যেখানে অন্যতম পেশা

বুদ্ধিজীবী হত্যা ও এর স্বরূপ সন্ধানে

আদিবাসীদের ভূমি অধিকার ও নিরাপত্তা সংকট

“মুনীর চৌধুরীর কবর...”

বুদ্ধিজীবী হত্যা ও এর স্বরূপ সন্ধানে

জলবায়ু সংকট ও খাদ্য নিরাপত্তা

স্বাধীন তদন্ত কমিশন দাবির নেপথ্যে কি দায়মুক্তি?

বুদ্ধিজীবী হত্যা ও এর স্বরূপ সন্ধানে

প্রহর গুনি কোন আশাতে!

বিজয়ের রক্তাক্ত সূর্য ও আমাদের ঋণের হিসাব

বিজয় দিবস: নতুন প্রজন্মের রাষ্ট্রচিন্তার দিকদর্শন

ছবি

আমাদের বিজয়ের অন্তর্নিহিত বার্তা

প্রাণিসম্পদ: দেশীয় জাত, আধুনিক প্রযুক্তি

জমির জরিপ: ন্যায়বিচার প্রসঙ্গ

বুদ্ধিজীবী হত্যা ও এর স্বরূপ সন্ধানে

উন্নয়নের আড়ালে রোগীর ভোগান্তি: আস্থা সংকটে স্বাস্থ্যসেবা

ছবি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস: অমিত শক্তির উৎস

ছবি

বেগম রোকেয়া এখনো জাগ্রত

পশ্চিমবঙ্গ: বামপন্থীদের ‘বাংলা বাঁচাও’-এর ডাক

সবার বাংলাদেশ কবে প্রতিষ্ঠিত হবে?

বিদেশি বিনিয়োগ : প্রয়োজন আইনের শাসন ও সামাজিক স্থিতি

চিকিৎসা যখন অসহনীয় ব্যয়, তখন প্রতিবাদই ন্যায়

মস্কোর কৌশলগত পুনর্গঠন

“সব শিয়ালের এক রা’ মারা গেল কুমিরের ছা”

ছবি

বিচূর্ণ দর্পণের মুখ

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

রম্যগদ্য : ‘প্রহরীর সাতশ কোটি টাকা...’

জাঁ-নেসার ওসমান

শনিবার, ০৬ এপ্রিল ২০২৪

শুরু করিতেছি বাংলার অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত জনগণের নামে যাঁরা পরম করুণাময় এবং অন্তত দয়ালু। তাঁহাদের দয়ার কথা বলিয়া শেষ করা যাইবে না। পৃথিবীর সকল সমুদ্রের জল যদি সুলেখা কালিতে রূপান্তরিত হয় তাহা হইলেও এঁদের দয়ার কথা লিখিয়া শেষ করা যাইবে না। সমস্ত কালি হয়তো ফুরাইয়া যাইবে তবুও এঁদের দয়ার কথা ফুরাইবে না। এঁরা এতোই দয়ালু যে এঁদের প্রাণপ্রিয় সন্তানকে মুছুলমানি করিবার সময় মারিয়া ফেলিলে এঁরা কিছু মনে না করিয়া ধন্বন্তরিকে পুনরায় আর এক সন্তানকে মুছুলমানি করিতে দিয়া মারিয়া ফেলেন। কিন্তু কাহারও বিরুদ্ধে এঁরা কিছু বলেন না, সকল কিছু ইহারা ক্ষমাসুন্দর নয়নে অবলোকন করেন। যদিও সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে যে, চেতনানাশক ওষুধটি নকল হওয়ায়, অকালে মুছুলমানির সময় কিছু অবুঝ শিশুর প্রাণ বায়ুনিঃসরণ হয়েছে। তারপরও যেসব প্রতিষ্ঠান এই নকল ওষুধ সরবরাহ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে বাংলার অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত জনগণ দেশের মালিকরা কোনো প্রকার প্রতিবাদ করেননি। এঁরা এমনি দয়ালু যে এঁদের তুলনায় দাতা হাতেম তাই, রাজা হরিশ চন্দ্র এমনকি মহাভারতের কুন্তি নন্দন, দাতা কর্ণও ফেইল। এঁদের তুলনায় এইসব ঐতিহাসিক চরিত্র নস্যি মাত্র। এইতো কদিন আগে, স্থান-কাল-পাত্রভেদে জমি ক্রয় বা বিক্রি করিতে গেলে স্থানীয় প্রতিনিধিকে মোটা অঙ্কের নজরানা প্রদান করিবার জন্য এঁদের মধ্যে কাড়াকাড়ি পড়িয়া যায়। কাহার পূর্বে কে নজরানা প্রদান করিবেন। কারণ স্যারেদের নির্বাচনে প্রচুর খরচ হইয়াছে, অতএব এ খরচ পূরণের দায়িত্ব বাংলার অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত জনগণের তাই সকলেই অর্থ প্রদান করিয়া ইহাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখেন। ইহা লইয়া প্রাইভেট টিভির চ্যানেলে চ্যানেলে এঁরা রীতিমতো প্রতিযোগিতা করিয়া প্রতিবেদন প্রচার করেন। কেউ ‘থ্রি-ফরটি-নাইন ডিগ্রি’, কেউবা শিবের ‘তৃতীয় নয়ন’, অনেকে আবার জনগণের কাছাকাছি পৌঁছে ভিডিও ভাইরাল করার জন্য ‘জাগ ফকিরনির পুত জাগ’ এইসব বিভিন্ন শিরোণামে অডিও ভিজ্যুয়াল প্রতিবেদন প্রচার করেন। এইসব প্রতিবেদনে ওইসব জনদরদি জনপ্রতিনিধিদের দেশের সার্বিক উন্নয়নে তাঁদের অবদানের কথা যুগ যুগ ধরে বাংলার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকার ইঙ্গিত প্রদান করেন। আবার মেট্রোরেল চালু হওয়াতে এঁরা প্রশংসায় পঞ্চমুখ। দেশের ভালো কিছু দেখিলে ইঁহারা যার পরনায় আনন্দিত ও আহ্লাদিত হন। মাওয়া হাইওয়ে, যমুনা সেতু-পদ্মাসেতু, বঙ্গবন্ধু স্যাটালাইট, ফ্লাইওভার, রূপপুরের পারমাণবিক চুল্লি এসব বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করছে এই সুখ এরা সইবে কেমন করে!! বাংলার অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত জনগণ দেশের মালিকরা ভøাদিমির ইলিচ লেনিনের প্রেস্কিপশেন অনুযায়ী মধ্যবিত্তের আফিমে দিন দিন এমন আশক্ত হয়ে পড়ছেন যে এঁরা ভাবছেন, যেই মধূসুদন দত্ত তাঁর ‘বুড়ো শালিখের ঘাড়ে রোঁ’ নাটকে জমিদারের সংলাপে লিখেছেন, ‘মোসলমান মেয়ের মুখে পে্যঁজের গন্ধ ভক ভক করে।’ আরে বেটা খালি কি মুখেই গন্ধ ভক ভক করে শরিরের অন্য কোথাও কি গন্ধ তীব্র হয় না?? এখানে অন্য কোথাও তীব্র গন্ধ হয় না বলতে আমি আর্মপিটের কথা বলছিলাম। আরব দেশে পানির আকাল, এই পানি নিয়ে বিষাদ সিন্ধুর মতো কত বড় ট্র্যাজিক উপন্যাস লেখা হলো, শুধু দজলা ফোরাত কেন রে ভাই আমাদের তিস্তা নদীর পানি বণ্টনও তো শেষ হলো না। তাই পানি কম থাকলে নারীদের গোসল কম হবে, ফলে আর্মপিটে স্মেল হতেই পারে খুবই স্বভাবিক। ন্যাচারাল ফেনোমেনা। এই নিয়ে কেবল মুসলিম নারীদের টিটকারি মারার শোধ হয়তো বাংলার অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত জনগণ একদিন রূপপুরের পারমাণবিক বোমা মেরেই প্রতিশোধ দেবে অথবা ক্রুসেড শুরু করবে। যদিও বাংলার অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত জনগণ বিষম রূপে দয়ালু কিন্তু মোসলমান নারীর অপমানের বিষয়ে কোনো ছাড় নেই। এঁটা হচ্ছে কমিউনিস্ট ভøাদিমির ইলিচ লেলিনের প্রেসক্রাইবড দাওয়াই যা বর্তমান কমিউনিস্ট নেতারাও মধ্যবিত্তের আফিমের প্রভাবে দেশ-কাল-পাত্র ভুলে পরকালে শুখে থাকার জন্য ইহকালটা হারাম কাজে ভরিয়ে তুলছে। এরা এখন পাবলিককে বাম মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ করার জন্য বর্তমানে প্রতিদিন বাংলার যেখানে যত টাকা কালেকশন হয় সেগুলো হাজী মহম্মদ দানেশের ব্রিটিশবিরোধী তেভাগা আন্দোলনের মতো সবাইকে সমান তিন ভাগে ভাগ করে দেন। এ যেন তেভাগা আন্দোলনের ডিজিটাল রূপ। ডিজিটাল বাংলা গড়তে এঁরা বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠ্যপুস্তক থেকে রবীন্দ্রনাথের লেখা বাদ দেয়ার কথা চিন্তা করছেন। কারণ... চালু লেখকদের লেখা বাংলার কোমলমতি শিশুদের ব্রেনওয়াশ করে এঁদের হয়তো ইহজাগতিক বিষয়ে জাগিয়ে তুলবে। আর তখন এঁরা পরকাল ভুলে, ক্লাসিক্যাল গান বা উচ্চাঙ্গ সংগীত পরিবেশন করতে চাইবে, যে উচ্চাঙ্গ সংগীত বহু কষ্টে বিগত পঞ্চাশ বছরের সাধনায় পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে বোমা মেরে সিনেমা হলে বোমা মেরে মেরে বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করা হয়েছে। সেসব যদি আবার ফেরত আসে তাহলে এইসব প্রজন্ম বাংলার আকাশ বাতাশ আবার নোংরা গানে গানে পাখির কলকাকলির মতো ভরিয়ে তুলবে। পাখির কুহু ধ্বনীর সঙ্গে পাখির পুরিষ যেমন ফ্রি, তেমনি এইসব প্রজন্মের সংগীতের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান স্থানীয় প্রতিনিধিদের কায়েমি স্বার্থে ফ্রিলি আঘাত করতে পারে। তাই নাটক, সিনেমা, গান-বাজনা কিছুতেই একটা সমাজের মুখ্য বিষয় হতে পারে না!! এঁটা সম্পূর্ণ না জায়েজ, যাহা সম্পূর্ণ রূপে পরিত্যজ্য। আর যেহেতু জনগণ দেশের মালিক, তাই মালিকরা যা চাইবে তাই হবে। মালিক যদি বলেন পাঠ্যপুস্তকে ছাগল গাছে উঠিবে, তাহা হইলে তাহাই সই। আর মালিক যদি বলেন প্রহরীর চাকুরি করিয়া সাতশ কোটি টাকার মালিক উহা আমরা মানিয়া লইলাম। তাহলে আমরা তাবত অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত জনগণও তাহা মানিয়া লইব। এ দেশের প্রকৃত মালিক হইলো জনগণ অতএব মালিক যাহা চাহিবেন তাহাই প্রজাতন্ত্রের সকলে মানিয়া লইবেন। এক্ষণে আপনারা সকলে ধৈর্য ধরিয়া অপেক্ষা করুন, দেখুন মালিক যেদিন মুছলমানির ফলে নিহত শ্রভ্র সন্তানগুলোর বিচার চাহিবেন? মালিক যবে জমি বিক্রির জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাহায্য চাহিবেন? মালিক কবে লাইনের চাঁদা বন্ধ করার জন্য নগর কোতোওয়ালের সাহায্য চাহিবেন? সেদিন আমরা বাংলার অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত জনগণ বাংলাদেশের প্রকৃত মালিক সকলে মিলিয়া সকল ভুলের মাশুল কড়ায় গ-ায় গুনিয়া লইব। তার আগে, মালিক না বলা পর্যন্ত আপনারা সকলে অপেক্ষা করুন। স্যামুয়েল বেকেটের নাটকের চরিত্রের মতো, অপেক্ষা করুন... অপেক্ষা করুন...অপেক্ষা করুন...

[লেখক : চলচ্চিত্রকার]

back to top