alt

opinion » post-editorial

নমিনির অনুপস্থিতিতে মৃত ব্যক্তির গচ্ছিত টাকা পাবে কে

সিরাজ প্রামাণিক

: সোমবার, ০৬ মে ২০২৪

আপনার পিতা, মাতা বা পরিবারের কোন সদস্য ব্যাংক, পোস্ট অফিস বা কোন ফাইন্যান্স ইনভেস্টমেন্ট প্রতিষ্ঠান বা বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে টাকা-পয়সা রেখে মৃত্যুবরণ করলে ওই টাকা উত্তোলনে উত্তরাধিকার সনদ অর্থাৎ সাকসেশন সার্টিফিকেট নিতে হয়। যদি ওই মৃত ব্যক্তি কারও নমিনি করে না যায়।

নমিনি ব্যতীত অন্য কাউকে জমানো অর্থ পাওয়ার সুযোগ নেই বলে পূর্ণাঙ্গ রায় দিয়েছেন মহামান্য হাইকোর্ট। ২৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ এ রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, নমিনি-সংক্রান্ত আইন, বিধি-বিধান মেনে যদি কোথাও নমিনি থাকে তাহলে আমানতকারী, বন্ডধারী, শেয়ারহোল্ডার, পেনশনধারী ইত্যাদি ব্যক্তির মৃত্যুর পর সংশ্লিষ্ট নমিনি আমানতকৃত সব অর্থ বা অন্যান্য সুবিধাদির অধিকারী হবেন। ৭৩ ডিএলআর, এপ্রিল ২০২১ ইস্যুতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিদ্যমান সব আইন ও বিধিবিধান অনুযায়ী আমানতকারীর মৃত্যুর পর নমিনিকৃত আমানত বা সুবিধাদি গ্রহণে নমিনিই অধিকারী হবেন এবং অন্য সব ব্যক্তি এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন।

হাইকোর্ট আরও বলেছে নমিনি পদ্ধতিটা বৈধ এবং নমিনি পদ্ধতিটাই থাকবে। ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১, ইন্স্যুরেন্স অ্যাক্ট, গভর্নমেন্ট সেভিং ব্যাংকস অ্যাক্ট ১৮৭৩, পোস্ট অফিস ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট অধ্যাদেশ ১৯৪৪, ইন্স্যুরেন্স অ্যাক্ট ২০১০, কো-অপারেটিভ সোসাইটিস অ্যাক্ট ২০০১, পেনশন সহজীকরন বিধিমালাসহ পার্লামেন্ট কর্তৃক পাস করা বহু আইন আছে যেখানে বলা আছে আমানতকারীর ইচ্ছা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট নমিনি এই অর্থ বা সুবিধা পাবেন। এই ধরনের কোনো আইন বা এর কোনো অংশকে কোনো মামলায় কখনো অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়নি।

আর মৃত ব্যক্তির গচ্ছিত টাকার নমিনি না থাকলে নিতে হবে উত্তরাধিকার সনদ। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে উঠবে। হঠাৎ করে জসীম মিয়া মারা গেলেন। দুই ভাই, এক বোন ও মাকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়লেন মৃত জসীম মিয়ার বড় ছেলে জালাল মিয়া। বাবার মৃত্যুর পর ব্যাংক থেকে টাকা উঠাতে পারছেন না তারা। ব্যাংক থেকে তাকে জানানো হয়েছে তার বাবার নামে জমানো টাকা উঠাতে চাইলে তাদের উত্তরাধিকার সনদ জমা দিতে হবে। এই সনদ ছাড়া ব্যাংকের টাকা তোলা যাবে না। কারণ ব্যাংক হিসাবে জসীম মিয়া কারও নমিনি করে যায়নি।

উত্তরাধিকার সনদ হচ্ছে কোনো মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকার বা ওয়ারিশ কতজন এবং মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া অর্থ কে কতটুকু পাবেন, সে সম্পর্কে আদালত থেকে জারি করা একটি সনদ। এ সনদ শুধু মৃত ব্যক্তির অর্থ-সংক্রান্ত বিষয়ে দেয়া হয়ে থাকে, জমিজমা বিষয়ে জারি করা হয় না। মৃত ব্যক্তির হিসাবের টাকা তোলার জন্য জেলা জজ আদালতে বা জেলা জজের মনোনীত অন্য কোনো আদালত থেকে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে এ সনদ তুলতে হয়। ঢাকায় তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতকে এ সনদ-সংক্রান্ত বিষয় নিষ্পত্তির এখতিয়ার দেয়া হয়েছে। নি¤œ আদালতগুলোতে সাধারণত যুগ্ম জেলা জজ ও ডেলিগেট দ্বিতীয় কিংবা ১ম আদালতকে এ সনদ-সংক্রান্ত বিষয় নিষ্পত্তির এখতিয়ার দেয়া হয়ে থাকে। মৃত ব্যক্তির বৈধ উত্তরাধিকারীরা প্রত্যেকে কিংবা তাদের পক্ষে যিনি টাকা তুলবেন, তাকে আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে আরজি দাখিল করতে হবে।

আবেদনের সঙ্গে হলফনামা দিতে হয়। যে বিষয়গুলো সংযুক্ত করতে হয় তন্মধ্যে-১। আবেদনকারী মৃত ব্যক্তির সম্পর্কে কী হন, ২। মৃত ব্যক্তির এ টাকা কাউকে দান বা উইল করে যাননি, ৩। উইলের জন্য কোনো প্রবেট বা লেটার অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন দরখাস্ত দাখিল করে যাননি, ৪। আবেদনকারীকে অন্য উত্তরাধিকারীরা টাকা তোলার ক্ষমতা দান করেছেন, ৫। আরজিতে মৃত ব্যক্তির টাকার হিসাবের বিবরণ তফসিল আকারে দিতে হবে ৬। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর সনদপত্র জমা দিতে হবে, ৭। মৃত ব্যক্তিকে যে কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে, সে মর্মে একটি প্রত্যয়নপত্র প্রয়োজনে ৮। মৃত ব্যক্তি যদি কোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিকে মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে সেখান থেকে প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দিতে হবে ৯। মৃত ব্যক্তি কোন ব্যাংকে কত টাকা রেখে গেছেন, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে একটি ব্যাংক স্ট্যাটমেন্ট ইত্যাদি। আদালতে আবেদন করার পর আদালত আবেদনকারীর জবানবন্দি নেবেন এবং সত্যতা যাচাই করবেন। পরবর্তী সময়ে আদালতে নির্দিষ্ট কোর্ট ফি জমা দেয়ার জন্য আদেশ দেবেন। কোর্ট ফি জমা দেয়া হলে পরে সনদ জারি করবেন। সনদ নিতে ব্যাংক থেকে কত টাকা ওঠানোর জন্য আবেদন করছেন, তার ভিত্তিতে কোর্ট ফি নির্ধারিত হয়। দাবিকৃত অর্থের পরিমাণ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হলে কোনো কোর্ট ফি দিতে হয় না। কিন্তু ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত এক শতাংশ কোর্ট ফি দিতে হয়। আবার এক লাখ এক টাকা থেকে যে কোনো পরিমাণ অর্থের ওপর দুই শতাংশ কোর্ট ফি জমা দিতে হয়।

উত্তরাধিকার সনদ পেতে দুই থেকে ছয় মাস সময় পর্যন্ত লাগতে পারে। উত্তরাধিকার সনদ উত্তোলনের জন্য আদালতে কোনো কারণে আবেদন খারিজ হলে জেলা জজ আদালতে যেতে পারেন আবার জেলা জজ খারিজ করলে আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে আপিলের সুযোগ রয়েছে। উত্তরাধিকার সনদ ব্যাংকে দাখিল করার পর ব্যাংক প্রত্যেক উত্তরাধিকারীর মধ্যে টাকা বিতরণ করবেন। তবে সব উত্তরাধিকারী বা একাধিক উত্তরাধিকারী মিলে যদি কোনো একজন নির্দিষ্ট উত্তরাধিকারীকে পাওয়ার-অব-অ্যাটর্নি প্রদান করে, সে ক্ষেত্রে একজন উত্তরাধিকারী বরাবরও ব্যাংক অন্যদের অর্থ হস্তান্তর করতে পারে।

[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

নরসুন্দর পেশার গুরুত্ব ও সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন

বিভাগভিত্তিক এমপিআর নির্বাচন পদ্ধতি

প্ল্যাটফর্ম সমাজে বাংলাদেশ: জ্ঞানের ভবিষ্যৎ কার হাতে?

আনন্দবেদনার হাসপাতাল: সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার বাস্তবতা

ছবি

ভিন্ন ধরনের নির্বাচন, ভিন্ন ধরনের ফল

বেসরকারি খাতে সিআইবি’র যাত্রা: ঋণ ব্যবস্থার নতুন দিগন্ত

স্বাস্থ্যসেবায় মানবিকতা প্রতিষ্ঠা হোক

ছবি

নেপালে সরকার পতন ও বামপন্থীদের ভবিষ্যৎ

ডাকসু নির্বাচন ও সংস্কারপ্রয়াস: রাজনৈতিক চিন্তার নতুন দিগন্ত

নির্বাচন কি সব সমস্যার সমাধান

জিতিয়া উৎসব

ছবি

অলির পর নেপাল কোন পথে?

রম্যগদ্য: “মরেও বাঁচবি নারে পাগলা...”

অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শ্রীপুর পৌরসভা

ভূরিভোজ, উচ্ছেদ এবং আদিবাসী পাহাড়িয়া

অনলাইন সংস্কৃতিতে হাস্যরসের সমাজবিজ্ঞান

মামলাজট নিরসনে দেওয়ানি কার্যবিধির সংস্কার

বাস্তব মস্কো বনাম বিভ্রান্ত ইউরোপ

ছাত্রসংসদ নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ ছাত্ররাজনীতির গতিপ্রকৃতি

সড়ক দুর্ঘটনা: কারও মৃত্যু সাধারণ, কারও মৃত্যু বিশেষ

ঐকমত্য ছাড়াও কিছু সংস্কার সম্ভব

আবার বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম : সংকটে সাধারণ মানুষ

ডায়াবেটিস রোগীর সেবা ও জনসচেতনতা

ভিন্ন ধরনের ডাকসু নির্বাচন

ডাকসু নির্বাচন : পেছনে ফেলে আসি

প্রসঙ্গ : এলডিসি তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ

“কোপা চাটিগাঁ...”

ই-কমার্স হতে পারে প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন

ভারত-চীনের নতুন সমীকরণ

সাইবার যুগে মানুষের মর্যাদা ও নিরাপত্তা

ছবি

ভারত-চীন সম্পর্কে কৌশলগত উষ্ণতার সূচনা

ভারত-চীন সম্পর্কে কৌশলগত উষ্ণতার সূচনা

একজন নাগরিকের অভিমানী বিদায় ও রাষ্ট্রের নৈতিক সংকট

নিষিদ্ধ জালের অভিশাপে হুমকির মুখে সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য

আধিপত্যবাদের শৃঙ্খল এবং পুঁজির লুন্ঠন যাদের রক্তাক্ত করে, তাদের চাই একজোটে

জার্মানি : কৃচ্ছসাধনের বোঝা জনগণের কাঁধে

tab

opinion » post-editorial

নমিনির অনুপস্থিতিতে মৃত ব্যক্তির গচ্ছিত টাকা পাবে কে

সিরাজ প্রামাণিক

সোমবার, ০৬ মে ২০২৪

আপনার পিতা, মাতা বা পরিবারের কোন সদস্য ব্যাংক, পোস্ট অফিস বা কোন ফাইন্যান্স ইনভেস্টমেন্ট প্রতিষ্ঠান বা বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে টাকা-পয়সা রেখে মৃত্যুবরণ করলে ওই টাকা উত্তোলনে উত্তরাধিকার সনদ অর্থাৎ সাকসেশন সার্টিফিকেট নিতে হয়। যদি ওই মৃত ব্যক্তি কারও নমিনি করে না যায়।

নমিনি ব্যতীত অন্য কাউকে জমানো অর্থ পাওয়ার সুযোগ নেই বলে পূর্ণাঙ্গ রায় দিয়েছেন মহামান্য হাইকোর্ট। ২৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ এ রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, নমিনি-সংক্রান্ত আইন, বিধি-বিধান মেনে যদি কোথাও নমিনি থাকে তাহলে আমানতকারী, বন্ডধারী, শেয়ারহোল্ডার, পেনশনধারী ইত্যাদি ব্যক্তির মৃত্যুর পর সংশ্লিষ্ট নমিনি আমানতকৃত সব অর্থ বা অন্যান্য সুবিধাদির অধিকারী হবেন। ৭৩ ডিএলআর, এপ্রিল ২০২১ ইস্যুতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিদ্যমান সব আইন ও বিধিবিধান অনুযায়ী আমানতকারীর মৃত্যুর পর নমিনিকৃত আমানত বা সুবিধাদি গ্রহণে নমিনিই অধিকারী হবেন এবং অন্য সব ব্যক্তি এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন।

হাইকোর্ট আরও বলেছে নমিনি পদ্ধতিটা বৈধ এবং নমিনি পদ্ধতিটাই থাকবে। ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১, ইন্স্যুরেন্স অ্যাক্ট, গভর্নমেন্ট সেভিং ব্যাংকস অ্যাক্ট ১৮৭৩, পোস্ট অফিস ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট অধ্যাদেশ ১৯৪৪, ইন্স্যুরেন্স অ্যাক্ট ২০১০, কো-অপারেটিভ সোসাইটিস অ্যাক্ট ২০০১, পেনশন সহজীকরন বিধিমালাসহ পার্লামেন্ট কর্তৃক পাস করা বহু আইন আছে যেখানে বলা আছে আমানতকারীর ইচ্ছা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট নমিনি এই অর্থ বা সুবিধা পাবেন। এই ধরনের কোনো আইন বা এর কোনো অংশকে কোনো মামলায় কখনো অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়নি।

আর মৃত ব্যক্তির গচ্ছিত টাকার নমিনি না থাকলে নিতে হবে উত্তরাধিকার সনদ। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে উঠবে। হঠাৎ করে জসীম মিয়া মারা গেলেন। দুই ভাই, এক বোন ও মাকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়লেন মৃত জসীম মিয়ার বড় ছেলে জালাল মিয়া। বাবার মৃত্যুর পর ব্যাংক থেকে টাকা উঠাতে পারছেন না তারা। ব্যাংক থেকে তাকে জানানো হয়েছে তার বাবার নামে জমানো টাকা উঠাতে চাইলে তাদের উত্তরাধিকার সনদ জমা দিতে হবে। এই সনদ ছাড়া ব্যাংকের টাকা তোলা যাবে না। কারণ ব্যাংক হিসাবে জসীম মিয়া কারও নমিনি করে যায়নি।

উত্তরাধিকার সনদ হচ্ছে কোনো মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকার বা ওয়ারিশ কতজন এবং মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া অর্থ কে কতটুকু পাবেন, সে সম্পর্কে আদালত থেকে জারি করা একটি সনদ। এ সনদ শুধু মৃত ব্যক্তির অর্থ-সংক্রান্ত বিষয়ে দেয়া হয়ে থাকে, জমিজমা বিষয়ে জারি করা হয় না। মৃত ব্যক্তির হিসাবের টাকা তোলার জন্য জেলা জজ আদালতে বা জেলা জজের মনোনীত অন্য কোনো আদালত থেকে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে এ সনদ তুলতে হয়। ঢাকায় তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতকে এ সনদ-সংক্রান্ত বিষয় নিষ্পত্তির এখতিয়ার দেয়া হয়েছে। নি¤œ আদালতগুলোতে সাধারণত যুগ্ম জেলা জজ ও ডেলিগেট দ্বিতীয় কিংবা ১ম আদালতকে এ সনদ-সংক্রান্ত বিষয় নিষ্পত্তির এখতিয়ার দেয়া হয়ে থাকে। মৃত ব্যক্তির বৈধ উত্তরাধিকারীরা প্রত্যেকে কিংবা তাদের পক্ষে যিনি টাকা তুলবেন, তাকে আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে আরজি দাখিল করতে হবে।

আবেদনের সঙ্গে হলফনামা দিতে হয়। যে বিষয়গুলো সংযুক্ত করতে হয় তন্মধ্যে-১। আবেদনকারী মৃত ব্যক্তির সম্পর্কে কী হন, ২। মৃত ব্যক্তির এ টাকা কাউকে দান বা উইল করে যাননি, ৩। উইলের জন্য কোনো প্রবেট বা লেটার অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন দরখাস্ত দাখিল করে যাননি, ৪। আবেদনকারীকে অন্য উত্তরাধিকারীরা টাকা তোলার ক্ষমতা দান করেছেন, ৫। আরজিতে মৃত ব্যক্তির টাকার হিসাবের বিবরণ তফসিল আকারে দিতে হবে ৬। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর সনদপত্র জমা দিতে হবে, ৭। মৃত ব্যক্তিকে যে কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে, সে মর্মে একটি প্রত্যয়নপত্র প্রয়োজনে ৮। মৃত ব্যক্তি যদি কোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিকে মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে সেখান থেকে প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দিতে হবে ৯। মৃত ব্যক্তি কোন ব্যাংকে কত টাকা রেখে গেছেন, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে একটি ব্যাংক স্ট্যাটমেন্ট ইত্যাদি। আদালতে আবেদন করার পর আদালত আবেদনকারীর জবানবন্দি নেবেন এবং সত্যতা যাচাই করবেন। পরবর্তী সময়ে আদালতে নির্দিষ্ট কোর্ট ফি জমা দেয়ার জন্য আদেশ দেবেন। কোর্ট ফি জমা দেয়া হলে পরে সনদ জারি করবেন। সনদ নিতে ব্যাংক থেকে কত টাকা ওঠানোর জন্য আবেদন করছেন, তার ভিত্তিতে কোর্ট ফি নির্ধারিত হয়। দাবিকৃত অর্থের পরিমাণ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হলে কোনো কোর্ট ফি দিতে হয় না। কিন্তু ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত এক শতাংশ কোর্ট ফি দিতে হয়। আবার এক লাখ এক টাকা থেকে যে কোনো পরিমাণ অর্থের ওপর দুই শতাংশ কোর্ট ফি জমা দিতে হয়।

উত্তরাধিকার সনদ পেতে দুই থেকে ছয় মাস সময় পর্যন্ত লাগতে পারে। উত্তরাধিকার সনদ উত্তোলনের জন্য আদালতে কোনো কারণে আবেদন খারিজ হলে জেলা জজ আদালতে যেতে পারেন আবার জেলা জজ খারিজ করলে আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে আপিলের সুযোগ রয়েছে। উত্তরাধিকার সনদ ব্যাংকে দাখিল করার পর ব্যাংক প্রত্যেক উত্তরাধিকারীর মধ্যে টাকা বিতরণ করবেন। তবে সব উত্তরাধিকারী বা একাধিক উত্তরাধিকারী মিলে যদি কোনো একজন নির্দিষ্ট উত্তরাধিকারীকে পাওয়ার-অব-অ্যাটর্নি প্রদান করে, সে ক্ষেত্রে একজন উত্তরাধিকারী বরাবরও ব্যাংক অন্যদের অর্থ হস্তান্তর করতে পারে।

[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

back to top