alt

উপ-সম্পাদকীয়

যোগাযোগ অধ্যয়ন কেন গুরুত্বপূর্ণ

রুশাইদ আহমেদ

: বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০২৪

তথ্য ও গণমাধ্যম সাক্ষরতার ওপরে ন্যূনতম জ্ঞান না থাকায় আমাদের তরুণ সমাজ ও শিশু-কিশোররা নানা অপতথ্য ও গুজবের প্রসারে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছে। যা দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশোনায় ‘যোগাযোগ অধ্যয়ন’র অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং তথ্য ও গণমাধ্যম সাক্ষরতার ওপর জনসচেতনতা সৃষ্টির বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আনার পথের জন্ম দিয়েছে। তবে সে আলোচনায় যাওয়ার আগে আমাদের দেশের শিশু-কিশোরদের যোগাযোগে অনীহা প্রকাশের বা শঙ্কিত হওয়ার কারণগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করা প্রয়োজন।

সাম্প্রতিক সময়ে বিপত্তির বিষয় হিসেবে এ ক্ষেত্রে প্রথমেই যে দিকটি সামনে আসে তা হলো সাধারণত আধুনিক ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো (বিশেষত তথ্য ও গণমাধ্যম পণ্যগুলো) ব্যবহারের জন্য প্রাপ্তবয়স্করাই সর্বোচ্চ উপযোগী হলেও বর্তমানে আমাদের দেশের শিশু-কিশোররা দিনের অধিকাংশ সময় পার করছে এই আধুনিক প্রযুক্তির ডিভাইসগুলো ব্যবহার করে অসংখ্য অভিভাবকের অসচেতনতার কারণে। এতে করে শিশু-কিশোরদের অনেকে তথ্য ও গণমাধ্যম সাক্ষরতার কোনো জ্ঞান ছাড়াই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন ভিডিও শেয়ারিং সাইটগুলোতে ভিডিও, শর্টস ভিডিও, দেশি-বিদেশি কার্টুন ও অন্যান্য ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় ধরনের কনটেন্ট দেখে অনায়াসে কাটিয়ে দিচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

আবার কেউ কেউ বুঁদ হয়ে থাকছে কম্পিউটার কিংবা স্মার্টফোনের ভিডিও গেমস খেলার আসক্তিতে। এর ফলে মুখোমুখি যোগাযোগের দিক থেকে এ শিশু-কিশোররা রীতিমতো মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এমনকি অনলাইন গেমে আসক্ত হওয়ার কারণে অনেক শিশু-কিশোরদের মধ্যে মুঠোফোনে কল এলেও, তা রিসিভ করে কথা না বলে গেম খেলায় নিমগ্ন থাকার প্রবণতা নজরে পড়ছে। অর্থাৎ অতিরিক্ত বা অযাচিত প্রযুক্তির ব্যবহার এখনকার শিশু-কিশোরদের ভয়ানকভাবে যোগাযোগবিমুখ করে তুলছে। ফলে এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোমলমতি শিশু-কিশোরদের যোগাযোগ এবং তথ্য ও গণমাধ্যম সাক্ষরতার মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পাশাপাশি, এখনকার সামাজিক অবকাঠামোতে ক্রমবর্ধমান হারে একক পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধির জায়গাগুলোতে শিশু-কিশোররা পূর্বের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে। কেননা আগেকার যৌথ পরিবারগুলোতে বাচ্চারা একসঙ্গে দাদা-দাদি, নানা-নানি এবং চাচাতো, মামাতো, খালাতো, ফুফাতো ভাইবোনদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া বা কথোপকথনে লিপ্ত হয়ে নিজেদের যোগাযোগ সক্ষমতা যেভাবে ধীরে ধীরে বাড়ানোর সুযোগ পেত, তা এখন আর একক পরিবারে বেড়ে ওঠার মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব নয়। এছাড়াও, অনেক পরিবারের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের অন্যের সঙ্গে মিশতে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে থাকেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তাদের যোগাযোগ দক্ষতা ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। এর সঙ্গে অনেক সময় দেখা যায়, অভিভাবকরা নিজেরাও পৃথক কিংবা একসঙ্গে খুবই কম কথা বলেন সন্তানদের সঙ্গে। এতে করে যোগাযোগহীনভাবে থাকতেই শিশু-কিশোররা দিন দিন অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু একটি সামাজিক (বা রাজনৈতিক) জীব হিসেবে মানবসন্তানদের এমন যোগাযোগবিমুখতায় অভ্যস্ত হয়ে উঠতে থাকাকে মোটেও শুভ লক্ষণ হিসেবে পরিগণিত করার কোনো সুযোগ নেই।

প্রযুক্তির অপব্যবহার এবং পারিবারিক কারণ ছাড়া সামাজিক নানা কারণও শিশু-কিশোরদের যোগাযোগ স্থাপনে অনাগ্রহী করে তুলছে। পরিবারের সামাজিক অবস্থান নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগার বিষয়টি এ ক্ষেত্রে সবথেকে উল্লেখযোগ্য। কেননা অনেক সময় দেখা যায়, একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত বা একই এলাকায় বসবাসরত সমবয়সী অনেক শিশু-কিশোর উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতে চায় কিংবা কম মিথস্ক্রিয়া করে তাদের সামাজিক অবস্থানের তারতম্যের কারণে। আবার মুদ্রার অপর পিঠের চিত্রের কথাও বলা যেতে পারে যে, কিছু কিছু উচ্চবিত্ত শ্রেণীর সন্তানরাও নিম্নবিত্ত শ্রেণীর সমবয়সীদের সঙ্গে কথা বলতে ইতস্তত বোধ করে প্রচ-ভাবে। এর সঙ্গে সঙ্গে গণমাধ্যম সাক্ষরতার অভাবে পশ্চিমা সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বা অন্যত্র কতিপয় শিশু-কিশোরের অন্যকে বুলিং ও বডি শেইমিং করার মতো নেতিবাচক প্রবণতা এবং আচরণও ব্যাপকভাবে ভুক্তভোগীদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করছে।

এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে তাই গত বছরের নভেম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথা নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক ওয়ালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. মুসতাক আহমেদ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে গণযোগাযোগ বা যোগাযোগ সাক্ষরতা বিষয় অন্তর্ভুক্তিকরণের জন্য উন্মুক্ত আবেদন জানিয়েছিলেন। নিঃসন্দেহে তার এ আবেদনটিকে অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং যথার্থ বলে উল্লেখ করা যায়। কেননা বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের আগামী প্রজন্মকে সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের করাল গ্রাস থেকে রক্ষায় গঠনমূলক যোগাযোগের কলাকৌশলগুলোর মৌলিক ধারণা দেয়ার পাশাপাশি তথ্য ও গণমাধ্যম সাক্ষরতার মৌলিক আঙ্গিকগুলো সম্পর্কে নিয়মতান্ত্রিকভাবে পাঠদানের বিষয়ে অবিলম্বে এ ধরনের যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া এখন সময়ের দাবি।

[লেখক : শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ]

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

দেশের অর্থ পাচারের বাস্তবতা

খাদ্য নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত

আবারও কি রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবে বিশ্ব?

প্লান্ট ক্লিনিক বদলে দিচ্ছে কৃষির ভবিষ্যৎ

ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী করতে করণীয়

রম্যগদ্য : ‘ডন ডনা ডন ডন...’

ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব : কে সন্ত্রাসী, কে শিকার?

সুস্থ ও শক্তিশালী জাতি গঠনে শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব

প্রতিরোধই উত্তম : মাদকমুক্ত প্রজন্ম গড়ার ডাক

ছবি

বিকাশের পথকে পরিত্যাগ করা যাবে না

বর্ষা ও বৃক্ষরোপণ : সবুজ বিপ্লবের আহ্বান

প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়া রোধে শিক্ষকের করণীয়

পারমাণবিক ন্যায়বিচার ও বৈশ্বিক ভণ্ডামির প্রতিচ্ছবি

পরিবেশের নীরব রক্ষক : শকুন সংরক্ষণে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন

মশার উপদ্রব : জনস্বাস্থ্য ও নগর ব্যবস্থাপনার চরম ব্যর্থতা

ভুল স্বীকারে গ্লানি নেই

ভাঙনের বুকে টিকে থাকা স্বপ্ন

একটি সফর, একাধিক সংকেত : কে পেল কোন বার্তা?

দেশের কারা ব্যবস্থার বাস্তবতা

ইসলামী ব্যাংক একীভূতকরণ : আস্থা ফেরাতে সংস্কার, না দায়মুক্তির প্রহসন?

রম্যগদ্য : চাঁদাবাজি চলছে, চলবে

বায়ুদূষণ : নীরব ঘাতক

ইসরায়েলের কৌশলগত ঔদ্ধত্য

পরিবার : সুনাগরিক ও সুশাসক তৈরির ভিত্তিমূল

শিল্পে গ্যাস সংকট : দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নিন

আমাদের লড়াইটা আমাদের লড়তে দিন

tab

উপ-সম্পাদকীয়

যোগাযোগ অধ্যয়ন কেন গুরুত্বপূর্ণ

রুশাইদ আহমেদ

বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০২৪

তথ্য ও গণমাধ্যম সাক্ষরতার ওপরে ন্যূনতম জ্ঞান না থাকায় আমাদের তরুণ সমাজ ও শিশু-কিশোররা নানা অপতথ্য ও গুজবের প্রসারে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছে। যা দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশোনায় ‘যোগাযোগ অধ্যয়ন’র অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং তথ্য ও গণমাধ্যম সাক্ষরতার ওপর জনসচেতনতা সৃষ্টির বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আনার পথের জন্ম দিয়েছে। তবে সে আলোচনায় যাওয়ার আগে আমাদের দেশের শিশু-কিশোরদের যোগাযোগে অনীহা প্রকাশের বা শঙ্কিত হওয়ার কারণগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করা প্রয়োজন।

সাম্প্রতিক সময়ে বিপত্তির বিষয় হিসেবে এ ক্ষেত্রে প্রথমেই যে দিকটি সামনে আসে তা হলো সাধারণত আধুনিক ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো (বিশেষত তথ্য ও গণমাধ্যম পণ্যগুলো) ব্যবহারের জন্য প্রাপ্তবয়স্করাই সর্বোচ্চ উপযোগী হলেও বর্তমানে আমাদের দেশের শিশু-কিশোররা দিনের অধিকাংশ সময় পার করছে এই আধুনিক প্রযুক্তির ডিভাইসগুলো ব্যবহার করে অসংখ্য অভিভাবকের অসচেতনতার কারণে। এতে করে শিশু-কিশোরদের অনেকে তথ্য ও গণমাধ্যম সাক্ষরতার কোনো জ্ঞান ছাড়াই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন ভিডিও শেয়ারিং সাইটগুলোতে ভিডিও, শর্টস ভিডিও, দেশি-বিদেশি কার্টুন ও অন্যান্য ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় ধরনের কনটেন্ট দেখে অনায়াসে কাটিয়ে দিচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

আবার কেউ কেউ বুঁদ হয়ে থাকছে কম্পিউটার কিংবা স্মার্টফোনের ভিডিও গেমস খেলার আসক্তিতে। এর ফলে মুখোমুখি যোগাযোগের দিক থেকে এ শিশু-কিশোররা রীতিমতো মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এমনকি অনলাইন গেমে আসক্ত হওয়ার কারণে অনেক শিশু-কিশোরদের মধ্যে মুঠোফোনে কল এলেও, তা রিসিভ করে কথা না বলে গেম খেলায় নিমগ্ন থাকার প্রবণতা নজরে পড়ছে। অর্থাৎ অতিরিক্ত বা অযাচিত প্রযুক্তির ব্যবহার এখনকার শিশু-কিশোরদের ভয়ানকভাবে যোগাযোগবিমুখ করে তুলছে। ফলে এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোমলমতি শিশু-কিশোরদের যোগাযোগ এবং তথ্য ও গণমাধ্যম সাক্ষরতার মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পাশাপাশি, এখনকার সামাজিক অবকাঠামোতে ক্রমবর্ধমান হারে একক পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধির জায়গাগুলোতে শিশু-কিশোররা পূর্বের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে। কেননা আগেকার যৌথ পরিবারগুলোতে বাচ্চারা একসঙ্গে দাদা-দাদি, নানা-নানি এবং চাচাতো, মামাতো, খালাতো, ফুফাতো ভাইবোনদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া বা কথোপকথনে লিপ্ত হয়ে নিজেদের যোগাযোগ সক্ষমতা যেভাবে ধীরে ধীরে বাড়ানোর সুযোগ পেত, তা এখন আর একক পরিবারে বেড়ে ওঠার মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব নয়। এছাড়াও, অনেক পরিবারের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের অন্যের সঙ্গে মিশতে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে থাকেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তাদের যোগাযোগ দক্ষতা ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। এর সঙ্গে অনেক সময় দেখা যায়, অভিভাবকরা নিজেরাও পৃথক কিংবা একসঙ্গে খুবই কম কথা বলেন সন্তানদের সঙ্গে। এতে করে যোগাযোগহীনভাবে থাকতেই শিশু-কিশোররা দিন দিন অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু একটি সামাজিক (বা রাজনৈতিক) জীব হিসেবে মানবসন্তানদের এমন যোগাযোগবিমুখতায় অভ্যস্ত হয়ে উঠতে থাকাকে মোটেও শুভ লক্ষণ হিসেবে পরিগণিত করার কোনো সুযোগ নেই।

প্রযুক্তির অপব্যবহার এবং পারিবারিক কারণ ছাড়া সামাজিক নানা কারণও শিশু-কিশোরদের যোগাযোগ স্থাপনে অনাগ্রহী করে তুলছে। পরিবারের সামাজিক অবস্থান নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগার বিষয়টি এ ক্ষেত্রে সবথেকে উল্লেখযোগ্য। কেননা অনেক সময় দেখা যায়, একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত বা একই এলাকায় বসবাসরত সমবয়সী অনেক শিশু-কিশোর উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতে চায় কিংবা কম মিথস্ক্রিয়া করে তাদের সামাজিক অবস্থানের তারতম্যের কারণে। আবার মুদ্রার অপর পিঠের চিত্রের কথাও বলা যেতে পারে যে, কিছু কিছু উচ্চবিত্ত শ্রেণীর সন্তানরাও নিম্নবিত্ত শ্রেণীর সমবয়সীদের সঙ্গে কথা বলতে ইতস্তত বোধ করে প্রচ-ভাবে। এর সঙ্গে সঙ্গে গণমাধ্যম সাক্ষরতার অভাবে পশ্চিমা সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বা অন্যত্র কতিপয় শিশু-কিশোরের অন্যকে বুলিং ও বডি শেইমিং করার মতো নেতিবাচক প্রবণতা এবং আচরণও ব্যাপকভাবে ভুক্তভোগীদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করছে।

এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে তাই গত বছরের নভেম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথা নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক ওয়ালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. মুসতাক আহমেদ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে গণযোগাযোগ বা যোগাযোগ সাক্ষরতা বিষয় অন্তর্ভুক্তিকরণের জন্য উন্মুক্ত আবেদন জানিয়েছিলেন। নিঃসন্দেহে তার এ আবেদনটিকে অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং যথার্থ বলে উল্লেখ করা যায়। কেননা বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের আগামী প্রজন্মকে সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের করাল গ্রাস থেকে রক্ষায় গঠনমূলক যোগাযোগের কলাকৌশলগুলোর মৌলিক ধারণা দেয়ার পাশাপাশি তথ্য ও গণমাধ্যম সাক্ষরতার মৌলিক আঙ্গিকগুলো সম্পর্কে নিয়মতান্ত্রিকভাবে পাঠদানের বিষয়ে অবিলম্বে এ ধরনের যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া এখন সময়ের দাবি।

[লেখক : শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ]

back to top