alt

উপ-সম্পাদকীয়

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ব্যারোমিটার

শেখর ভট্টাচার্য

: বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪
image

নিউইয়র্ক, ডেট্রয়েট, টেক্সাস, হিউস্টন, ওহিও, লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে বিনোদন নগরী লাসভেগাস কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ছোট রাজ্য থেকে সবচেয়ে বড় রাজ্য, সবচেয়ে বড় শহর থেকে সবচেয়ে ছোট শহরের কোনায় কোনায় অভিবাসী বাঙালিরা বাংলাদেশের দূত হিসেবে ছড়িয়ে আছেন। এই শহরগুলো কিংবা যেসব শহরের নাম উচ্চারিত হলো না এগুলো এখন ভার্চুয়ালি আমাদের খুব পরিচিত। মার্কিন মুল্লুকের জনসমাজে, স্থানীয় সরকার কাঠামোতে বাংলাদেশিরা ধীরে ধীরে দাপটের সঙ্গে প্রভাব বিস্তার করছেন। আমাদের স্বজন, বন্ধুদের পরবর্তী প্রজন্ম বিজ্ঞান, প্রকৌশল, মার্কেটিং, পরিবেশবিজ্ঞান, কর্পোরেট সেক্টরসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দাপুটে নির্বাহী থেকে ধীরে ধীরে আরও উচ্চপদে আসীন হচ্ছেন। নাসাতে বিজ্ঞানী হিসেবে যেমন কাজ করছেন একইভাবে বুয়েট থেকে পাস করা কম্পিউটার প্রকৌশলী এমি এওয়ার্ডের মতো সম্মানজনক পদকও ছিনিয়ে নিচ্ছেন। শৈশব থেকে শুনতাম বাঙালির ব্যবসা-বাণিজ্যের দক্ষতা নেই। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে জানতে পাই, দেখতে পাই আমাদের বন্ধুরা এন্টিক থেকে শুরু করে এমন কোনো ব্যবসা নেই যা তারা করছেন না। দেশে যারা ছিলেন পাড়ার মোড়ে কিংবা চায়ের দোকানে আড্ডায় মত্তÑ তাদের দেখি সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জীবনকে সাজাতে, জীবিকায় গভীর মনোযোগ দিতে।

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন প্রক্রিয়া যখন কিছুটা সহজ হতে শুরু করল বিশেষ করে আশির দশকের শেষের দিক থেকে আমরা অভিবাসীদের চোখ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে দেখতে শুরু করেছি। অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রের মুখাবয়ব দেখতে আমাদের সহায়তা করছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেমন দেশ? জটিল রাজনীতি কিংবা কূটনীতির মারপ্যাচে না গিয়ে অভিবাসীদের ভাষ্যে আমাদের সামনে একটি ছবি দাঁড়িয়ে যায়। বাঙালি অভিবাসীরা এই ধারণা প্রদানের ক্ষেত্রে দুই দেশের মানুষের মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করছেন। অভিবাসী স্বজনদের দৃষ্টি দিয়ে অধিকাংশ বাংলাদেশি এখন ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকানদের অন্দর ও বহিরাঙ্গকে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়া দেশটির বৈচিত্র্য পিয়াস, বৈচিত্র্যের মধ্যে সৌন্দর্য খুঁজে বেড়ানো; বর্ণবাদবিরোধী অবস্থান, মানবাধিকারের সব সূচক অর্জনের সর্বোচ্চ চেষ্টার কথা এখন স্বজনদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে জানতে পারি। নাগরিকদের বিষয়ে সরকারের স্বতঃস্ফূর্ত দায় এবং এই দায়, দায়িত্ব পালনে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের সব কার্যক্রমের কথা জেনে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী কিছুটা হলেও পালটে যায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ মৌলিক অধিকার পূরণে রাজ্য কিংবা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রচেষ্টাগুলো বাঙালিদের কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে এক অনিন্দ সুন্দর ধারণা দিতে সমর্থ হয়।

আমরা যারা ষাটের দশকে জন্ম নিয়েছি তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ব্যারোমিটারের ওঠানামা নানাভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক দশকে, অর্ধদশকে ওঠানামা করেছে। বাংলাদশের রাজনীতি এবং জাতীয় উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি দেশ, যে দেশকে কোনোভাবে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি, কূটনীতিতে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে। বাংলাদেশের জনসমাজের ভেতর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতা এতই প্রবল, প্রভাব এতই গভীর যে দেশের অতীত, বর্তমান এমনকি ভবিষ্যতের পথ চলায় যুক্তরাষ্ট্রের যুক্ততা অবশ্যম্ভাবী। ক্রমাগত ছোট হয়ে আসা পৃথিবীকে আমরা বলি ভূগ্রাম, এই ভূগ্রামে বাংলাদেশের ভৌগোলিক উপস্থিতি এতোই গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যে, কৌশলগত কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষেও উদীয়মান বাংলাদেশকে নিজেদের অর্থনৈতিক, সমরনৈতিক এবং রাজনৈতিক পরিকল্পনায় বিয়োজিত রাখা এখন সম্ভব নয় বলে মনে হয়।

একাত্তর-পূর্ব, একাত্তর-উত্তর সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নির্ভর করেছে ভূ-রাজনীতির গতি প্রকৃতির ওপর। শীতলযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে, যুক্তরাষ্ট্রকে যেভাবে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অগ্রসর মানুষ বিবেচনা করত, গর্বাচভ উত্তর সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সাম্রাজ্যবাদ কিংবা সম্প্রসারণবাদের তকমাটি কিছুটা হলেও ম্লান হয়েছে। ষাটের দশকে আমরা দেখেছি দেয়ালে দেয়ালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তরুণদের মনোভাব। দেয়ালের গায়ে পুঁজিবাদী এদেশটিকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক, নিপাত যাক’। ষাটের দশক থেকে আশির দশক পর্যন্ত দেয়ালে, মিছিলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি যেভাবে ঘৃণা উদগীরণ হতো, নব্বইয়ের দশক থেকে ক্রমাগত এর তীব্রতা কমে এসেছে। আমার সঙ্গে অনেক বামপন্থী ভাইয়েরা দ্বিমত পোষণ করবেন জানি তবে গভীরভাবে বাংলাদেশের রাজনীতি এবং জনমানসকে যারা বিশ্লেষণ করেন তারা কিন্তু দ্বিমত পোষণ করবেন বলে মনে হয় না।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র’ নামের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালি মানসে আরও কতগুলো নাম উচ্চারিত হতো। একাত্তরে রিপাবলিকান সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতার তীব্র বিরোধিতা করেছে। শুধু বিরোধিতা করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি, যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুপ্রতিম দেশ ও ন্যাটো জোট সরাসরি পাকিস্তানকে অর্থ ও মারণাস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে। মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা, অস্ত্র এবং কূটনৈতিক ফ্রন্টে পাকিস্তানকে সহায়তা মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি ছিলো খোলাখুলি চ্যালেঞ্জ। সেই দগদগে ঘা, এখনও শুকিয়ে যায়নি। তবে সময়ের পরিক্রমায় অর্থনীতি এবং কূটনীতি ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিবাচক ভূমিকার কারণে মুক্তিযুদ্ধপূর্ব, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের সঙ্গে যদি মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর সময়ের তুলনা করা হয় তাহলে আমরা দেখতে পাই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ এবং রাষ্ট্রের সম্পর্ক অভাবিত উন্নয়ন ঘটেছে।

বাংলাদেশে এখনও যুক্তরাষ্ট্রের নাম উচ্চারিত হলে, প্রেসিডেন্ট নিক্সন, পররাষ্ট্র সচিব হেনরি কিসিঞ্জারের ভূমিকার কথা ঘৃণা ভরে উচ্চারিত হয় একইভাবে শ্রদ্ধা, ভালোবাসায় উচ্চারিত হয় জর্জ হ্যারিসন, সিনেটর টেড কেনেডির মতো মানুষের নাম। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ এবং রাষ্ট্রের সম্পর্ক শীতল এবং উষ্ণ হয়েছে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক ভিশন এবং কৌশলের ওপর ভিত্তি করে। সর্বোপরি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ রাষ্ট্রটিকে একাত্তর থেকে পঁচাত্তর পর্যন্ত ঘৃণ্য রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি দিয়েছিল। তবে বাংলাদেশের অনেক বিদ্বাণ মানুষ যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করলেও, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চার বিষয়ে দ্বিমত করতে পারেন না। গণতন্ত্রের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা বাংলাদেশের উদার গণতান্ত্রিক মানুষরা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে থাকেন।

বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন, এবং সহায়তা করে অনেক মার্কিন নাগরিক বাংলাদেশের মানুষের কাছে এখনও ভালোবাসার পাত্র হিসেবে স্বীকৃত হয়ে আছেন। এই ভালোবাসা গণত্রন্ত্র এবং মানবাধিকারের প্রতি ব্যক্তির, জনসমাজের ভালোবাসা যা রাজনৈতিক দলের সংকীর্ণ নীতির ঊর্ধ্বে। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ দলের নীতির ঊর্ধ্বে উঠতে পেরেছিলেন। এ প্রসঙ্গে কেনেডির ভূমিকা এখনও বাংলাদেশে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। তিনি যে দলের সিনেটর সেই রিপাবলিকান দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় কনেডি বাংলাদেশের মানুষের যৌক্তিক অধিকার এবং স্বাধীনতার পক্ষে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির এ ভাই টেড কেনেডি। দীর্ঘদিন সিনেটরের দায়িত্ব পালন করেন।

কেনেডির নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করা হলো এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র বলতে আমরা সবসময় যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার এবং এর বিদেশ নীতিকে বুঝে থাকি। যুক্তরাষ্ট্র মূলত গণতন্ত্র ও মানবাধিকার চর্চার একটি উল্লেখযোগ্য দেশ এ কথাটি আমরা বিস্মৃত হয়ে যাই। দেশটিতে সরকারের নীতির থেকে জনমত সব সময় বেশি গুরুত্ব পেয়ে থাকে। এই জনমতকে সংহত করতে একাত্তরে অনেকেই কাজ করেছিলেন। বাংলাদেশের মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে আজও তাদের স্মরণ করে থাকেন। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন জর্জ হ্যারিসন। বাঙালিদের ওপর মির্মম হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ারে হাজার জনতার সামনে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ নামে এক কনসার্টের আয়োজন করে তিনি বিশ্ব মিডিয়ায় বিশেষভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। তার গানের সুরে বাংলাদেশের অসহায় মানুষের বেদনার আর্তি ফুটে উঠেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বাক, ব্যক্তি স্বাধীনতার অবারিত চর্চা পৃথিবীর সব দেশের মানুষের মতো বাংলাদেশের মানুষকেও আকর্ষিত করে।

যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, গণতন্ত্র চর্চা, নাগরিক অধিকার রক্ষার জন্য সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতিকে এক করে দেখলে দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র কেমন তার মূল্যায়ন এবং উপসংহারে পৌঁছা খুব কঠিন। যুক্তরাষ্ট্রকে অভিবাসীর দেশ, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রথম সারির দেশ, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বড় অংশীদার হিসেবে পরিবর্তিত পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা না করে পারা যাবে না। মনে রাখতে হবে ভূ-রাজনীতি এখন আবর্তিত হয় অর্থনৈতিক স্বার্থ বিবেচনা করে।

সম্পর্কের যতই ওঠানামা হোক না কেনো যুক্তরাষ্ট্রকে বাঙালি চিরকাল আব্রাহাম লিংকনের মতো গণতন্ত্রের কর্ণধারের দেশ হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। বাংলাদেশি অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রের সেই চেতনাকে আবার পুনরাবিষ্কার করছেন। লিংকন যিনি বিশ্ব থেকে দাস প্রথার মতো অমানবিক প্রথা বিলাপ করেছিলেন তার চেতনাকে বাংলাদেশি অভিবাসীরা শ্রদ্ধা করেন। যুক্তরাষ্ট্র একসময় যেমন সাম্রাজ্যবাদী, আধিপত্যবাদী দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল, ভিন্ন প্রেক্ষাপটে দেশটি এখন মানবতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার রক্ষার দেশ হিসেবে বাঙালি অভিবাসীদের কাছে স্বীকৃত হয়ে উঠছে। অভিবাসীদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা, পরিবর্তিত ভূ-রাজনীতির প্রেক্ষাপটে দেশটি ধীরে ধীরে বাংলাদেশিদের কাছে ইতিবাচক ভাবমূর্তি প্রদর্শন করতে সমর্থ হয়েছে।

[লেখক : প্রাবন্ধিক ও উন্নয়ন গবেষক]

দুর্নীতি প্রতিরোধ সময়ের দাবি

লিগ্যাল অ্যানালাইটিক্স ও আধুনিক প্রযুক্তি যেভাবে আইন পেশাকে বদলে দিচ্ছে

বাইডেন-ট্রাম্প প্রথম বিতর্ক শেষ : ডেমোক্রেট শিবিরে আতঙ্ক

সাঁওতাল বিদ্রোহের চেতনা

বেঁটে নারকেল গাছ নিয়ে কিছু কথা

রাসেলস ভাইপার : আতঙ্ক নয়, প্রয়োজন সচেতনতা

ব্যাংকিং সেক্টরের অনিয়ম দেশের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে

হুমকিতে সমুদ্র, ঝুঁকিতে উন্নয়নশীল দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী

পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থকে কি জলাঞ্জলি দিয়েছে মোদি প্রশাসন

বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ : আইন কী বলে

হাজার টাকার বাগান খাইল পাঁচ সিকার ছাগলে

বাংলাদেশের উন্নতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর লজ্জা

মাদকমুক্ত দেশ গড়তে প্রয়োজন প্রতিরোধ কার্যক্রম

রম্যগদ্য : ‘ন্যায়-অন্যায় জানি নে, জানি নে...’

ছবি

কুরবানির ছাগল তাকে চিনতে পেরেছে

ছবি

সুইডিশ মিডসামার : এক আনন্দময় দিনের সূচনা

ছবি

আধুনিক রূপকথা এবং আমাদের রাজাদের গল্প

গাছে গাছে সবুজ হোক দেশ

কত বিষে আমাদের বসবাস

ছবি

তিস্তার দুই নয়নে দুই অশ্রুধারা

বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ান

আদিবাসীরা বৈষম্যের শিকার

ছবি

নারীর অগ্রযাত্রা

ছবি

সিলেট-সুনামগঞ্জের ‘জলাবদ্ধ বন্যার’ দায় কার?

ছবি

বুড়িতিস্তা রিজার্ভার খনন : কৃষক কি উপকৃত হবে?

সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে কী হচ্ছে?

উচ্ছেদকৃত দলিতদের পুনর্বাসন করুন

রম্যগদ্য : অভিযোগ ‘অভিযোগ’ নয়

কেন হেরে গেলেন সেলিম

নীরবে-নিভৃতে কাজ করা এক কৃষিবিজ্ঞানীর কথা

অর্থনীতি কী অবস্থায় আছে?

কোরবানির চামড়ার হকদার

যোগাযোগ অধ্যয়ন কেন গুরুত্বপূর্ণ

এমপি আনারকে নিয়ে যত আইনি জটিলতা

অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আইনের শাসন

দূর হোক মনের পশুত্ব

tab

উপ-সম্পাদকীয়

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ব্যারোমিটার

শেখর ভট্টাচার্য

image

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪

নিউইয়র্ক, ডেট্রয়েট, টেক্সাস, হিউস্টন, ওহিও, লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে বিনোদন নগরী লাসভেগাস কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ছোট রাজ্য থেকে সবচেয়ে বড় রাজ্য, সবচেয়ে বড় শহর থেকে সবচেয়ে ছোট শহরের কোনায় কোনায় অভিবাসী বাঙালিরা বাংলাদেশের দূত হিসেবে ছড়িয়ে আছেন। এই শহরগুলো কিংবা যেসব শহরের নাম উচ্চারিত হলো না এগুলো এখন ভার্চুয়ালি আমাদের খুব পরিচিত। মার্কিন মুল্লুকের জনসমাজে, স্থানীয় সরকার কাঠামোতে বাংলাদেশিরা ধীরে ধীরে দাপটের সঙ্গে প্রভাব বিস্তার করছেন। আমাদের স্বজন, বন্ধুদের পরবর্তী প্রজন্ম বিজ্ঞান, প্রকৌশল, মার্কেটিং, পরিবেশবিজ্ঞান, কর্পোরেট সেক্টরসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দাপুটে নির্বাহী থেকে ধীরে ধীরে আরও উচ্চপদে আসীন হচ্ছেন। নাসাতে বিজ্ঞানী হিসেবে যেমন কাজ করছেন একইভাবে বুয়েট থেকে পাস করা কম্পিউটার প্রকৌশলী এমি এওয়ার্ডের মতো সম্মানজনক পদকও ছিনিয়ে নিচ্ছেন। শৈশব থেকে শুনতাম বাঙালির ব্যবসা-বাণিজ্যের দক্ষতা নেই। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে জানতে পাই, দেখতে পাই আমাদের বন্ধুরা এন্টিক থেকে শুরু করে এমন কোনো ব্যবসা নেই যা তারা করছেন না। দেশে যারা ছিলেন পাড়ার মোড়ে কিংবা চায়ের দোকানে আড্ডায় মত্তÑ তাদের দেখি সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জীবনকে সাজাতে, জীবিকায় গভীর মনোযোগ দিতে।

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন প্রক্রিয়া যখন কিছুটা সহজ হতে শুরু করল বিশেষ করে আশির দশকের শেষের দিক থেকে আমরা অভিবাসীদের চোখ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে দেখতে শুরু করেছি। অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রের মুখাবয়ব দেখতে আমাদের সহায়তা করছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেমন দেশ? জটিল রাজনীতি কিংবা কূটনীতির মারপ্যাচে না গিয়ে অভিবাসীদের ভাষ্যে আমাদের সামনে একটি ছবি দাঁড়িয়ে যায়। বাঙালি অভিবাসীরা এই ধারণা প্রদানের ক্ষেত্রে দুই দেশের মানুষের মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করছেন। অভিবাসী স্বজনদের দৃষ্টি দিয়ে অধিকাংশ বাংলাদেশি এখন ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকানদের অন্দর ও বহিরাঙ্গকে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়া দেশটির বৈচিত্র্য পিয়াস, বৈচিত্র্যের মধ্যে সৌন্দর্য খুঁজে বেড়ানো; বর্ণবাদবিরোধী অবস্থান, মানবাধিকারের সব সূচক অর্জনের সর্বোচ্চ চেষ্টার কথা এখন স্বজনদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে জানতে পারি। নাগরিকদের বিষয়ে সরকারের স্বতঃস্ফূর্ত দায় এবং এই দায়, দায়িত্ব পালনে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের সব কার্যক্রমের কথা জেনে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী কিছুটা হলেও পালটে যায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ মৌলিক অধিকার পূরণে রাজ্য কিংবা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রচেষ্টাগুলো বাঙালিদের কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে এক অনিন্দ সুন্দর ধারণা দিতে সমর্থ হয়।

আমরা যারা ষাটের দশকে জন্ম নিয়েছি তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ব্যারোমিটারের ওঠানামা নানাভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক দশকে, অর্ধদশকে ওঠানামা করেছে। বাংলাদশের রাজনীতি এবং জাতীয় উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি দেশ, যে দেশকে কোনোভাবে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি, কূটনীতিতে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে। বাংলাদেশের জনসমাজের ভেতর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতা এতই প্রবল, প্রভাব এতই গভীর যে দেশের অতীত, বর্তমান এমনকি ভবিষ্যতের পথ চলায় যুক্তরাষ্ট্রের যুক্ততা অবশ্যম্ভাবী। ক্রমাগত ছোট হয়ে আসা পৃথিবীকে আমরা বলি ভূগ্রাম, এই ভূগ্রামে বাংলাদেশের ভৌগোলিক উপস্থিতি এতোই গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যে, কৌশলগত কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষেও উদীয়মান বাংলাদেশকে নিজেদের অর্থনৈতিক, সমরনৈতিক এবং রাজনৈতিক পরিকল্পনায় বিয়োজিত রাখা এখন সম্ভব নয় বলে মনে হয়।

একাত্তর-পূর্ব, একাত্তর-উত্তর সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নির্ভর করেছে ভূ-রাজনীতির গতি প্রকৃতির ওপর। শীতলযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে, যুক্তরাষ্ট্রকে যেভাবে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অগ্রসর মানুষ বিবেচনা করত, গর্বাচভ উত্তর সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সাম্রাজ্যবাদ কিংবা সম্প্রসারণবাদের তকমাটি কিছুটা হলেও ম্লান হয়েছে। ষাটের দশকে আমরা দেখেছি দেয়ালে দেয়ালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তরুণদের মনোভাব। দেয়ালের গায়ে পুঁজিবাদী এদেশটিকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক, নিপাত যাক’। ষাটের দশক থেকে আশির দশক পর্যন্ত দেয়ালে, মিছিলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি যেভাবে ঘৃণা উদগীরণ হতো, নব্বইয়ের দশক থেকে ক্রমাগত এর তীব্রতা কমে এসেছে। আমার সঙ্গে অনেক বামপন্থী ভাইয়েরা দ্বিমত পোষণ করবেন জানি তবে গভীরভাবে বাংলাদেশের রাজনীতি এবং জনমানসকে যারা বিশ্লেষণ করেন তারা কিন্তু দ্বিমত পোষণ করবেন বলে মনে হয় না।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র’ নামের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালি মানসে আরও কতগুলো নাম উচ্চারিত হতো। একাত্তরে রিপাবলিকান সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতার তীব্র বিরোধিতা করেছে। শুধু বিরোধিতা করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি, যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুপ্রতিম দেশ ও ন্যাটো জোট সরাসরি পাকিস্তানকে অর্থ ও মারণাস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে। মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা, অস্ত্র এবং কূটনৈতিক ফ্রন্টে পাকিস্তানকে সহায়তা মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি ছিলো খোলাখুলি চ্যালেঞ্জ। সেই দগদগে ঘা, এখনও শুকিয়ে যায়নি। তবে সময়ের পরিক্রমায় অর্থনীতি এবং কূটনীতি ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিবাচক ভূমিকার কারণে মুক্তিযুদ্ধপূর্ব, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের সঙ্গে যদি মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর সময়ের তুলনা করা হয় তাহলে আমরা দেখতে পাই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ এবং রাষ্ট্রের সম্পর্ক অভাবিত উন্নয়ন ঘটেছে।

বাংলাদেশে এখনও যুক্তরাষ্ট্রের নাম উচ্চারিত হলে, প্রেসিডেন্ট নিক্সন, পররাষ্ট্র সচিব হেনরি কিসিঞ্জারের ভূমিকার কথা ঘৃণা ভরে উচ্চারিত হয় একইভাবে শ্রদ্ধা, ভালোবাসায় উচ্চারিত হয় জর্জ হ্যারিসন, সিনেটর টেড কেনেডির মতো মানুষের নাম। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ এবং রাষ্ট্রের সম্পর্ক শীতল এবং উষ্ণ হয়েছে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক ভিশন এবং কৌশলের ওপর ভিত্তি করে। সর্বোপরি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ রাষ্ট্রটিকে একাত্তর থেকে পঁচাত্তর পর্যন্ত ঘৃণ্য রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি দিয়েছিল। তবে বাংলাদেশের অনেক বিদ্বাণ মানুষ যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করলেও, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চার বিষয়ে দ্বিমত করতে পারেন না। গণতন্ত্রের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা বাংলাদেশের উদার গণতান্ত্রিক মানুষরা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে থাকেন।

বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন, এবং সহায়তা করে অনেক মার্কিন নাগরিক বাংলাদেশের মানুষের কাছে এখনও ভালোবাসার পাত্র হিসেবে স্বীকৃত হয়ে আছেন। এই ভালোবাসা গণত্রন্ত্র এবং মানবাধিকারের প্রতি ব্যক্তির, জনসমাজের ভালোবাসা যা রাজনৈতিক দলের সংকীর্ণ নীতির ঊর্ধ্বে। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ দলের নীতির ঊর্ধ্বে উঠতে পেরেছিলেন। এ প্রসঙ্গে কেনেডির ভূমিকা এখনও বাংলাদেশে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। তিনি যে দলের সিনেটর সেই রিপাবলিকান দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় কনেডি বাংলাদেশের মানুষের যৌক্তিক অধিকার এবং স্বাধীনতার পক্ষে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির এ ভাই টেড কেনেডি। দীর্ঘদিন সিনেটরের দায়িত্ব পালন করেন।

কেনেডির নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করা হলো এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র বলতে আমরা সবসময় যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার এবং এর বিদেশ নীতিকে বুঝে থাকি। যুক্তরাষ্ট্র মূলত গণতন্ত্র ও মানবাধিকার চর্চার একটি উল্লেখযোগ্য দেশ এ কথাটি আমরা বিস্মৃত হয়ে যাই। দেশটিতে সরকারের নীতির থেকে জনমত সব সময় বেশি গুরুত্ব পেয়ে থাকে। এই জনমতকে সংহত করতে একাত্তরে অনেকেই কাজ করেছিলেন। বাংলাদেশের মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে আজও তাদের স্মরণ করে থাকেন। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন জর্জ হ্যারিসন। বাঙালিদের ওপর মির্মম হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ারে হাজার জনতার সামনে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ নামে এক কনসার্টের আয়োজন করে তিনি বিশ্ব মিডিয়ায় বিশেষভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। তার গানের সুরে বাংলাদেশের অসহায় মানুষের বেদনার আর্তি ফুটে উঠেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বাক, ব্যক্তি স্বাধীনতার অবারিত চর্চা পৃথিবীর সব দেশের মানুষের মতো বাংলাদেশের মানুষকেও আকর্ষিত করে।

যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, গণতন্ত্র চর্চা, নাগরিক অধিকার রক্ষার জন্য সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতিকে এক করে দেখলে দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র কেমন তার মূল্যায়ন এবং উপসংহারে পৌঁছা খুব কঠিন। যুক্তরাষ্ট্রকে অভিবাসীর দেশ, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রথম সারির দেশ, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বড় অংশীদার হিসেবে পরিবর্তিত পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা না করে পারা যাবে না। মনে রাখতে হবে ভূ-রাজনীতি এখন আবর্তিত হয় অর্থনৈতিক স্বার্থ বিবেচনা করে।

সম্পর্কের যতই ওঠানামা হোক না কেনো যুক্তরাষ্ট্রকে বাঙালি চিরকাল আব্রাহাম লিংকনের মতো গণতন্ত্রের কর্ণধারের দেশ হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। বাংলাদেশি অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রের সেই চেতনাকে আবার পুনরাবিষ্কার করছেন। লিংকন যিনি বিশ্ব থেকে দাস প্রথার মতো অমানবিক প্রথা বিলাপ করেছিলেন তার চেতনাকে বাংলাদেশি অভিবাসীরা শ্রদ্ধা করেন। যুক্তরাষ্ট্র একসময় যেমন সাম্রাজ্যবাদী, আধিপত্যবাদী দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল, ভিন্ন প্রেক্ষাপটে দেশটি এখন মানবতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার রক্ষার দেশ হিসেবে বাঙালি অভিবাসীদের কাছে স্বীকৃত হয়ে উঠছে। অভিবাসীদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা, পরিবর্তিত ভূ-রাজনীতির প্রেক্ষাপটে দেশটি ধীরে ধীরে বাংলাদেশিদের কাছে ইতিবাচক ভাবমূর্তি প্রদর্শন করতে সমর্থ হয়েছে।

[লেখক : প্রাবন্ধিক ও উন্নয়ন গবেষক]

back to top