alt

উপ-সম্পাদকীয়

বাইডেন-ট্রাম্প প্রথম বিতর্ক শেষ : ডেমোক্রেট শিবিরে আতঙ্ক

শিতাংশু গুহ

: বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪

প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যকার প্রথম বিতর্ক শেষ হওয়ার আগেই ডেমোক্রেট শিবিরে হতাশা নেমে এসেছে। বাইডেন ব্যর্থ হয়েছেন এ কথা প্রমাণ করতে যে তিনি ফিট। আরও ৪ বছর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশ শাসন করতে শারীরিকভাবে সক্ষম এটি প্রমাণ করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। বাইডেন ডেমোক্রেটদের হতাশ করেছেন। ইতোমধ্যেই কথা উঠেছে, বিকল্প প্রার্থীর চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়েছে। সিএনএনের একজন কমেন্টেটর স্পষ্টত : বলেছেন, ডেমোক্রেট শিবিরে শুধু যে বেদনা তা নয়, ভীতির সঞ্চার হয়েছে। ক্লোজিং ভাষণে বাইডেন ভোটারদের মনে রেখাপাত করার মতো কিচ্ছু বলেননি। ডেমোক্রেট শিবিরে রব উঠেছে, ‘উই হ্যাভ এ প্রব্লেম’।

পক্ষান্তরে ক্লোজিং ভাষণে ট্রাম্প প্রথমেই বাইডেনকে ‘কমপ্লেইনার’ আখ্যায়িত করে বলেছেন, বাইডেন কিচ্ছু করেননি, ইউক্রেন-মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধ তারই জন্য হচ্ছে। আমেরিকা তাকে শ্রদ্ধা করে না, সর্বত্র তিনি ব্যর্থ। কিন্তু এমনটা থাকবে না, ‘উই উইল মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’। দুজনের বয়স সম্পর্কে বাইডেন যা বলেছেন তা অস্পষ্ট, ট্রাম্প বেশ জোরের সঙ্গেই বলেছেন, তিনি ফিট এবং বাইডেনকে তিনি আনফিট বলেছেন। ট্রাম্প অবশ্য বেশকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এড়িয়ে যান। যুক্তিতর্কে বাইডেন কিছুটা ভালো করলেও ট্রাম্পের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হননি, এমনকি ‘গর্ভপাত’ সম্পর্কেও নয়, অথচ এটি ডেমোক্রেটদের একটি প্লাস পয়েন্ট।

ট্রাম্প ভায়োলেন্স নিন্দা করবেন কিনা প্রশ্নটিও এড়িয়ে যান। নির্বাচনের ফলাফল তিনি মেনে নেবেন কিনা জিজ্ঞাসিত হলে ট্রাম্প প্রথমে এড়িয়ে যান, কিন্তু পুনরায় জিজ্ঞাসিত হলে বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে অবশ্যই তিনি মেনে নেবেন। একপর্যায়ে ট্রাম্প বলেন, আমরা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি এবং এজন্য বাইডেন দায়ী, তিনিই আমাদের ৩য় বিশ্বযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। বাইডেন বলেন, আমাদের বিশ্বকে রক্ষা করতে হবে। বাইডেনের বক্তব্য পানসে মনে হচ্ছিল। ট্রাম্প পরিষ্কার বলেছেন তিনি জিতবেন, জরিপ তাই বলছে। বাইডেন বলেন, ভোটের দিন দেখা যাবে। পুরো বিতর্কে বাইডেনের গলার স্বর কর্কশ ও দুর্বল ছিল।

প্রবেশের সময় বাইডেনকে ফ্যাকাশে দেখাচ্ছিল, ঠিকমতো হাঁটতে পারছিলেন না, মাঝে মধ্যে তিনি তোতলাচ্ছিলেন। ট্রাম্প সাবলীলভাবে হেঁটে রুমে ঢোকেন। দুজন দুজনকে মিথ্যাবাদী বলেছেন। ট্রাম্প বাইডেনকে মিথ্যুক বলেছেন, বাইডেন বলেছেন, আমি জীবনে এত মিথ্যা কথা শুনিনি। ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিল ঘটনার প্রশ্নটি ট্রাম্প প্রথমে এড়িয়ে যান, কিন্তু মডারেটর পুনরায় জিজ্ঞাসা করলে তিনি ন্যান্সি পেলোসিকে দায়ী করেন এবং বলেন, সেদিন দেশপ্রেমিকরা শান্তি মিছিল করছিল। বাইডেন বলেছেন, এজন্য ট্রাম্পই দায়ী, তিনি উসকানি দিয়েছেন, ৩ ঘণ্টা তিনি কিছুই করেননি। দ-িতদের তিনি মাফ করবেন কিনা এ প্রশ্নটি ট্রাম্প এড়িয়ে যান।

মধ্যপ্রাচ্যে দুই রাষ্ট্র ফর্মুলা তিনি সমর্থন করেন কিনা প্রশ্নটিও ট্রাম্প এড়িয়ে যান। বাইডেনও এ নিয়ে কোনো কথা বলেননি। তবে বাইডেন ও ট্রাম্প উভয়েই বলেছেন, ইসরায়েলকে এর কাজ শেষ করার সুযোগ দেয়া উচিত। ট্রাম্প বলেন, বাইডেন এখনও জিম্মিদের উদ্ধার করতে ব্যর্থ। বাইডেন বলেছেন, হামাসকে উৎখাত করাটা দরকার। আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার প্রশ্নে ট্রাম্প বাইডেনকে ধুইয়ে দেন। ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউজে যাওয়ার আগেই প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট হিসেবে তিনি পুতিন-জেলোনস্কির সঙ্গে কথা বলে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করবেন। এ পর্যায়ে ট্রাম্প বলেন, বাইডেনকে এখনই জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।

বাইডেন যখন ট্রাম্পকে দ-িত অপরাধী বলেন, ট্রাম্প তখন ঈর্ষৎ হাসছিলেন। বাইডেন ট্রাম্পকে ফৌজদারি অপরাধে দ-িত অপরাধী বলে উল্লেখ করেন। ট্রাম্প বলেন বাইডেনপুত্র ফৌজদারি অপরাধে দ-িত, হয়তো অফিস ছাড়ার পর বাইডেনও দ-িত হতে পারেন। বাইডেন পুতিনকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে মন্তব্য করেন। ইমিগ্র্যান্ট প্রশ্নে ট্রাম্পের ভালো করার কথা, তিনি করেছেন। অর্থনীতি প্রশ্নে দুজনই ক্রেডিট দাবি করেছেন। মূলত এ বিতর্কে বাইডেনের প্রমাণ করার কথা ছিল যে তিনি ফিট, তা তিনি করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে এই প্রথম ট্রাম্প স্বীকার করেন যে, সুপ্রিম কোর্ট ‘গর্ভপাত পিল’ অনুমোদন দিয়েছে, তিনি সেটি মেনে নেবেন এবং আটকাবেন না। ট্রাম্প পরিষ্কার বলেন, গর্ভপাতের বিষয়টি স্টেটের ওপর থাকা উচিত। বাইডেন বলেন, তিনি ‘রোভি অ্যাক্ট’ পুনরুজ্জীবিত করার পক্ষে।

২৭ জুন ২০২৪ টানা উত্তেজনার মধ্যে বাইডেন-ট্রাম্প প্রথম বিতর্ক শেষ হয়েছে। আটলান্টায় সিএনএন সদর দপ্তরে আয়োজিত এ বিতর্ক রাত ৯টা থেকে দুটি বিজ্ঞাপনী বিরতিসহ রাত ১০টা ৩৮ মিনিট পর্যন্ত চলে। বাইডেন ছিলেন পোডিয়ামের ডানদিকে, ট্রাম্প শেষ কথা বলেন। দুজন মডারেটর জেইক টেপার ও ডানা ব্যাশ সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন দুই প্রার্থীকে সময় মেনে চলতে এবং বিতর্ক ভদ্রোচিত রাখতে। মোটামুটি তা-ই ছিল। বিতর্কে ট্রাম্প জয়ী। বেশির ভাগ মিডিয়া এন্টি-ট্রাম্প, তারাও বাইডেনকে নিয়ে হতাশ। ক্লিন্টন আমল থেকে প্রায় প্রতিটি বিতর্ক আমি দেখেছি, এবারও শেষ পর্যন্ত দেখে আমার মনে হয়েছে, ‘বাইডেন প্রথম থেকেই হেরে বসেছিলেন’।

এ বিতর্কে দুই প্রার্থীর মধ্যে প্রায় সবকিছুই ‘অমিল’, মিল শুধু দুজনেই বুড়ো। ট্রাম্প আগে এক অনুষ্ঠানে বাইডেনকে ‘বুড়ো’ বলেছেন। বাইডেন সিটিং প্রেসিডেন্ট, ট্রাম্প সাবেক প্রেসিডেন্টÑ এমন ঘটনা এই প্রথম, এটি ঐতিহাসিক ঘটনা। ট্রাম্প ফৌজদারি মামলায় দোষী, এটিও নজিরবিহীন ঘটনা। ইতোপূর্বে কোনো দ-িত প্রেসিডেন্ট বিতর্কে অংশ নেননি। মার্কিন ইতিহাসে ট্রাম্পই একমাত্র সাবেক প্রেসিডেন্ট যিনি দ-িত। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আরও ৩টি ফৌজদারি মামলা ঝুলছে। অন্যদিকে ট্রাম্প একমাত্র প্রেসিডেন্ট যিনি দুবার ইম্পিচইড হন, এবং দুবারই খালাস পান। সিএনএনের ভাষ্যমতে আরএফকে জুনিয়র মার্কিন সংবিধানের আর্টিক্যাল-২, সেকশন-১ এর শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় বিতর্কে অংশ নিতে পারেননি।

নিয়ম ছিল এক প্রার্থী কথা বলার সময় অন্য প্রার্থীর মাইক্রোফোন বন্ধ থাকবে, তাই ছিল। কোন প্রার্থীকে পূর্বে বেঁধে দেয়া নিয়মানুযায়ী কোন লিখিত নোট নিতে দেয়া হয়নি, তাদের উভয়কে একটি কলম, একটি লেখার প্যাড, ও এক বোতল জল দেয়া হয়। বিতর্কস্থলে কোন দর্শক ছিল না। ২য় বিতর্ক হওয়ার কথা ১০ সেপ্টেম্বর, আয়োজক এবিসি। সচরাচর ৩টি বিতর্ক হয়ে থাকে, এখন পর্যন্ত দুই প্রাথী ২টি বিতর্কে রাজি হয়েছেন। সিএনএন ফ্ল্যাশ-পোল বলছে, ট্রাম্প জিতেছেন, ৬৭%-বাইডেন ৩৩%। প্রশ্ন হচ্ছে, বাইডেন কি ডেমোক্রেট প্রার্থী থাকছেন? না থাকলে, বিকল্প প্রার্থী কে হবেন?

[লেখক : নিউইয়র্ক প্রবাসী]

দুর্নীতি প্রতিরোধ সময়ের দাবি

লিগ্যাল অ্যানালাইটিক্স ও আধুনিক প্রযুক্তি যেভাবে আইন পেশাকে বদলে দিচ্ছে

সাঁওতাল বিদ্রোহের চেতনা

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ব্যারোমিটার

বেঁটে নারকেল গাছ নিয়ে কিছু কথা

রাসেলস ভাইপার : আতঙ্ক নয়, প্রয়োজন সচেতনতা

ব্যাংকিং সেক্টরের অনিয়ম দেশের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে

হুমকিতে সমুদ্র, ঝুঁকিতে উন্নয়নশীল দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী

পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থকে কি জলাঞ্জলি দিয়েছে মোদি প্রশাসন

বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ : আইন কী বলে

হাজার টাকার বাগান খাইল পাঁচ সিকার ছাগলে

বাংলাদেশের উন্নতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর লজ্জা

মাদকমুক্ত দেশ গড়তে প্রয়োজন প্রতিরোধ কার্যক্রম

রম্যগদ্য : ‘ন্যায়-অন্যায় জানি নে, জানি নে...’

ছবি

কুরবানির ছাগল তাকে চিনতে পেরেছে

ছবি

সুইডিশ মিডসামার : এক আনন্দময় দিনের সূচনা

ছবি

আধুনিক রূপকথা এবং আমাদের রাজাদের গল্প

গাছে গাছে সবুজ হোক দেশ

কত বিষে আমাদের বসবাস

ছবি

তিস্তার দুই নয়নে দুই অশ্রুধারা

বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ান

আদিবাসীরা বৈষম্যের শিকার

ছবি

নারীর অগ্রযাত্রা

ছবি

সিলেট-সুনামগঞ্জের ‘জলাবদ্ধ বন্যার’ দায় কার?

ছবি

বুড়িতিস্তা রিজার্ভার খনন : কৃষক কি উপকৃত হবে?

সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে কী হচ্ছে?

উচ্ছেদকৃত দলিতদের পুনর্বাসন করুন

রম্যগদ্য : অভিযোগ ‘অভিযোগ’ নয়

কেন হেরে গেলেন সেলিম

নীরবে-নিভৃতে কাজ করা এক কৃষিবিজ্ঞানীর কথা

অর্থনীতি কী অবস্থায় আছে?

কোরবানির চামড়ার হকদার

যোগাযোগ অধ্যয়ন কেন গুরুত্বপূর্ণ

এমপি আনারকে নিয়ে যত আইনি জটিলতা

অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আইনের শাসন

দূর হোক মনের পশুত্ব

tab

উপ-সম্পাদকীয়

বাইডেন-ট্রাম্প প্রথম বিতর্ক শেষ : ডেমোক্রেট শিবিরে আতঙ্ক

শিতাংশু গুহ

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪

প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যকার প্রথম বিতর্ক শেষ হওয়ার আগেই ডেমোক্রেট শিবিরে হতাশা নেমে এসেছে। বাইডেন ব্যর্থ হয়েছেন এ কথা প্রমাণ করতে যে তিনি ফিট। আরও ৪ বছর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশ শাসন করতে শারীরিকভাবে সক্ষম এটি প্রমাণ করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। বাইডেন ডেমোক্রেটদের হতাশ করেছেন। ইতোমধ্যেই কথা উঠেছে, বিকল্প প্রার্থীর চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়েছে। সিএনএনের একজন কমেন্টেটর স্পষ্টত : বলেছেন, ডেমোক্রেট শিবিরে শুধু যে বেদনা তা নয়, ভীতির সঞ্চার হয়েছে। ক্লোজিং ভাষণে বাইডেন ভোটারদের মনে রেখাপাত করার মতো কিচ্ছু বলেননি। ডেমোক্রেট শিবিরে রব উঠেছে, ‘উই হ্যাভ এ প্রব্লেম’।

পক্ষান্তরে ক্লোজিং ভাষণে ট্রাম্প প্রথমেই বাইডেনকে ‘কমপ্লেইনার’ আখ্যায়িত করে বলেছেন, বাইডেন কিচ্ছু করেননি, ইউক্রেন-মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধ তারই জন্য হচ্ছে। আমেরিকা তাকে শ্রদ্ধা করে না, সর্বত্র তিনি ব্যর্থ। কিন্তু এমনটা থাকবে না, ‘উই উইল মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’। দুজনের বয়স সম্পর্কে বাইডেন যা বলেছেন তা অস্পষ্ট, ট্রাম্প বেশ জোরের সঙ্গেই বলেছেন, তিনি ফিট এবং বাইডেনকে তিনি আনফিট বলেছেন। ট্রাম্প অবশ্য বেশকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এড়িয়ে যান। যুক্তিতর্কে বাইডেন কিছুটা ভালো করলেও ট্রাম্পের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হননি, এমনকি ‘গর্ভপাত’ সম্পর্কেও নয়, অথচ এটি ডেমোক্রেটদের একটি প্লাস পয়েন্ট।

ট্রাম্প ভায়োলেন্স নিন্দা করবেন কিনা প্রশ্নটিও এড়িয়ে যান। নির্বাচনের ফলাফল তিনি মেনে নেবেন কিনা জিজ্ঞাসিত হলে ট্রাম্প প্রথমে এড়িয়ে যান, কিন্তু পুনরায় জিজ্ঞাসিত হলে বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে অবশ্যই তিনি মেনে নেবেন। একপর্যায়ে ট্রাম্প বলেন, আমরা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি এবং এজন্য বাইডেন দায়ী, তিনিই আমাদের ৩য় বিশ্বযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। বাইডেন বলেন, আমাদের বিশ্বকে রক্ষা করতে হবে। বাইডেনের বক্তব্য পানসে মনে হচ্ছিল। ট্রাম্প পরিষ্কার বলেছেন তিনি জিতবেন, জরিপ তাই বলছে। বাইডেন বলেন, ভোটের দিন দেখা যাবে। পুরো বিতর্কে বাইডেনের গলার স্বর কর্কশ ও দুর্বল ছিল।

প্রবেশের সময় বাইডেনকে ফ্যাকাশে দেখাচ্ছিল, ঠিকমতো হাঁটতে পারছিলেন না, মাঝে মধ্যে তিনি তোতলাচ্ছিলেন। ট্রাম্প সাবলীলভাবে হেঁটে রুমে ঢোকেন। দুজন দুজনকে মিথ্যাবাদী বলেছেন। ট্রাম্প বাইডেনকে মিথ্যুক বলেছেন, বাইডেন বলেছেন, আমি জীবনে এত মিথ্যা কথা শুনিনি। ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিল ঘটনার প্রশ্নটি ট্রাম্প প্রথমে এড়িয়ে যান, কিন্তু মডারেটর পুনরায় জিজ্ঞাসা করলে তিনি ন্যান্সি পেলোসিকে দায়ী করেন এবং বলেন, সেদিন দেশপ্রেমিকরা শান্তি মিছিল করছিল। বাইডেন বলেছেন, এজন্য ট্রাম্পই দায়ী, তিনি উসকানি দিয়েছেন, ৩ ঘণ্টা তিনি কিছুই করেননি। দ-িতদের তিনি মাফ করবেন কিনা এ প্রশ্নটি ট্রাম্প এড়িয়ে যান।

মধ্যপ্রাচ্যে দুই রাষ্ট্র ফর্মুলা তিনি সমর্থন করেন কিনা প্রশ্নটিও ট্রাম্প এড়িয়ে যান। বাইডেনও এ নিয়ে কোনো কথা বলেননি। তবে বাইডেন ও ট্রাম্প উভয়েই বলেছেন, ইসরায়েলকে এর কাজ শেষ করার সুযোগ দেয়া উচিত। ট্রাম্প বলেন, বাইডেন এখনও জিম্মিদের উদ্ধার করতে ব্যর্থ। বাইডেন বলেছেন, হামাসকে উৎখাত করাটা দরকার। আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার প্রশ্নে ট্রাম্প বাইডেনকে ধুইয়ে দেন। ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউজে যাওয়ার আগেই প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট হিসেবে তিনি পুতিন-জেলোনস্কির সঙ্গে কথা বলে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করবেন। এ পর্যায়ে ট্রাম্প বলেন, বাইডেনকে এখনই জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।

বাইডেন যখন ট্রাম্পকে দ-িত অপরাধী বলেন, ট্রাম্প তখন ঈর্ষৎ হাসছিলেন। বাইডেন ট্রাম্পকে ফৌজদারি অপরাধে দ-িত অপরাধী বলে উল্লেখ করেন। ট্রাম্প বলেন বাইডেনপুত্র ফৌজদারি অপরাধে দ-িত, হয়তো অফিস ছাড়ার পর বাইডেনও দ-িত হতে পারেন। বাইডেন পুতিনকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে মন্তব্য করেন। ইমিগ্র্যান্ট প্রশ্নে ট্রাম্পের ভালো করার কথা, তিনি করেছেন। অর্থনীতি প্রশ্নে দুজনই ক্রেডিট দাবি করেছেন। মূলত এ বিতর্কে বাইডেনের প্রমাণ করার কথা ছিল যে তিনি ফিট, তা তিনি করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে এই প্রথম ট্রাম্প স্বীকার করেন যে, সুপ্রিম কোর্ট ‘গর্ভপাত পিল’ অনুমোদন দিয়েছে, তিনি সেটি মেনে নেবেন এবং আটকাবেন না। ট্রাম্প পরিষ্কার বলেন, গর্ভপাতের বিষয়টি স্টেটের ওপর থাকা উচিত। বাইডেন বলেন, তিনি ‘রোভি অ্যাক্ট’ পুনরুজ্জীবিত করার পক্ষে।

২৭ জুন ২০২৪ টানা উত্তেজনার মধ্যে বাইডেন-ট্রাম্প প্রথম বিতর্ক শেষ হয়েছে। আটলান্টায় সিএনএন সদর দপ্তরে আয়োজিত এ বিতর্ক রাত ৯টা থেকে দুটি বিজ্ঞাপনী বিরতিসহ রাত ১০টা ৩৮ মিনিট পর্যন্ত চলে। বাইডেন ছিলেন পোডিয়ামের ডানদিকে, ট্রাম্প শেষ কথা বলেন। দুজন মডারেটর জেইক টেপার ও ডানা ব্যাশ সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন দুই প্রার্থীকে সময় মেনে চলতে এবং বিতর্ক ভদ্রোচিত রাখতে। মোটামুটি তা-ই ছিল। বিতর্কে ট্রাম্প জয়ী। বেশির ভাগ মিডিয়া এন্টি-ট্রাম্প, তারাও বাইডেনকে নিয়ে হতাশ। ক্লিন্টন আমল থেকে প্রায় প্রতিটি বিতর্ক আমি দেখেছি, এবারও শেষ পর্যন্ত দেখে আমার মনে হয়েছে, ‘বাইডেন প্রথম থেকেই হেরে বসেছিলেন’।

এ বিতর্কে দুই প্রার্থীর মধ্যে প্রায় সবকিছুই ‘অমিল’, মিল শুধু দুজনেই বুড়ো। ট্রাম্প আগে এক অনুষ্ঠানে বাইডেনকে ‘বুড়ো’ বলেছেন। বাইডেন সিটিং প্রেসিডেন্ট, ট্রাম্প সাবেক প্রেসিডেন্টÑ এমন ঘটনা এই প্রথম, এটি ঐতিহাসিক ঘটনা। ট্রাম্প ফৌজদারি মামলায় দোষী, এটিও নজিরবিহীন ঘটনা। ইতোপূর্বে কোনো দ-িত প্রেসিডেন্ট বিতর্কে অংশ নেননি। মার্কিন ইতিহাসে ট্রাম্পই একমাত্র সাবেক প্রেসিডেন্ট যিনি দ-িত। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আরও ৩টি ফৌজদারি মামলা ঝুলছে। অন্যদিকে ট্রাম্প একমাত্র প্রেসিডেন্ট যিনি দুবার ইম্পিচইড হন, এবং দুবারই খালাস পান। সিএনএনের ভাষ্যমতে আরএফকে জুনিয়র মার্কিন সংবিধানের আর্টিক্যাল-২, সেকশন-১ এর শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় বিতর্কে অংশ নিতে পারেননি।

নিয়ম ছিল এক প্রার্থী কথা বলার সময় অন্য প্রার্থীর মাইক্রোফোন বন্ধ থাকবে, তাই ছিল। কোন প্রার্থীকে পূর্বে বেঁধে দেয়া নিয়মানুযায়ী কোন লিখিত নোট নিতে দেয়া হয়নি, তাদের উভয়কে একটি কলম, একটি লেখার প্যাড, ও এক বোতল জল দেয়া হয়। বিতর্কস্থলে কোন দর্শক ছিল না। ২য় বিতর্ক হওয়ার কথা ১০ সেপ্টেম্বর, আয়োজক এবিসি। সচরাচর ৩টি বিতর্ক হয়ে থাকে, এখন পর্যন্ত দুই প্রাথী ২টি বিতর্কে রাজি হয়েছেন। সিএনএন ফ্ল্যাশ-পোল বলছে, ট্রাম্প জিতেছেন, ৬৭%-বাইডেন ৩৩%। প্রশ্ন হচ্ছে, বাইডেন কি ডেমোক্রেট প্রার্থী থাকছেন? না থাকলে, বিকল্প প্রার্থী কে হবেন?

[লেখক : নিউইয়র্ক প্রবাসী]

back to top