alt

উপ-সম্পাদকীয়

দুর্নীতি প্রতিরোধ সময়ের দাবি

শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ

: বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪

দুর্নীতি শেখার জন্য কোথাও কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে এরকম আমার জানা নেই। আবার কোথাও দুর্নীতি শেখার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এমনও না। তবে দুর্নীতি প্রতিরোধে সম্পৃক্ত সুনির্দিষ্ট কিছুসংখ্যক কর্মীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় মাত্র। অথচ যারা এ অপকর্মের সাথে যুক্ত তারা অতীব নিপুণভাবে এবং দক্ষতার সাথে এ কাজটি সম্পন্ন করতে সক্ষম হচ্ছেন। তাদের চাতুর্যের সৌকর্য অবিমিশ্র। তাহলে বলতেই হয়, দুর্নীতি করার জন্য আনুষ্ঠানিক বা উপানুষ্ঠানিক কোন শিক্ষারই প্রয়োজন হয় না। একাজে তারা স্ব-শিক্ষিত। অথচ কত মানুষকে তারা সুচতুরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে, ধোঁকা দিচ্ছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিরোধ যন্ত্রকে দিনের পর দিন ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে। নতুন নতুন উদ্ভাবনীপন্থায় চোখ ধাঁধানো অঢেল সম্পদের পাহাড় চূড়ায় সমাসীন হয়ে দাঁত কেলিয়ে আপনমনে তৃপ্তির হাসি হাসছে। নিঃসন্দেহে তাদের মেধাযোগ্যতার কোন ঘাটতি নেই। আর এ যোগ্যতাকে খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নেই। বরং এ বিরল যোগ্যতার জন্য তাদের সমীহ করতে হয় বৈকি।

দুর্নীতি শব্দের মানে হলো আর্থিক অনিয়ম ও অসাধুতা, নীতিবিরুদ্ধ আচরণ। এটি এক ধরনের অসততা এবং ফৌজদারি অপরাধ। কোন ব্যক্তি কর্তৃত্বের পদে থেকে নিজের ব্যক্তিগত লাভের জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার করে এ ধরনের অপরাধে যুক্ত হন। কোন সংস্থাও অবৈধ সুবিধা অর্জনের জন্য এধরনের অপরাধ করতে পারে। বিশ্বব্যাংক এর মতে- ‘Corruption-the abuse of public office for private gain-covers a wide range of bebavior, from bribery to theft of public funds.’ ট্রান্সফারেন্সি ইন্টারনেশনালের সংজ্ঞা হলোÑ ‘Corruption is the abuse of entrusted power for private gain.’ দুর্নীতিকে দার্শনিক, ধর্মতাত্ত্বিক এবং নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও বিবেচনা করা যেতে পারে। সেই হিসেবে কোন আদর্শের নৈতিক বা আধ্যাত্মিক অসাধুতা বা বিচ্যুতিও দুর্নীতি।

সারাবিশ্বে দুর্নীতির বিস্তৃতি রয়েছে। কোথাও কম কোথাও বেশি। আমাদের দেশও তার ব্যতিক্রম নয়। সাধারণত উন্নত দেশগুলোতে এর মাত্রা কম। তবে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত দেশ একেবারেই অলীক চিন্তা। দুর্নীতির আবার রকমফের আছে। ক্ষুদ্র বনাম গ্র্যান্ড দুর্নীতি, প্রচলিত বনাম অপ্রচলিত দুর্নীতি, সরকারি বনাম ব্যক্তিগত দুর্নীতি ইত্যাদি। অন্যভাবেও দুর্নীতিকে বিভাজন করা যায়। যেমন-রাজনৈতিক দুর্নীতি, প্রশাসনিক দুর্নীতি এবং প্রফেশনাল বা পেশাগত দুর্নীতি। রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করা, আইনের শাসনের বাইরে গোপনে নিজেদের সমৃদ্ধ করা, সরকারি তহবিল আত্মসাৎ কিংবা অপব্যবহার করা ইত্যাদি রাজনৈতিক দুর্নীতি।

রাজনীতির অধ্যাপক স্টিফেন ডি. মরিসের মতে- Political corruption is the illegitimate use of public power to benefit a private interest. সরকারি কেনাকাটায় দুর্নীতি, সরকারি সেবা গ্রহণে দুর্নীতি, রাজস্ব প্রদান ও ট্রেড লাইসেন্স নিতে দুর্নীতি, ব্যাংক ঋণ নিতে ঘুষ প্রদান এগুলো বড় বড় প্রশাসনিক দুর্নীতির উদাহরণ। প্রশাসনিক দুর্নীতির মাধ্যমে সাধারণ জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত ও ভুক্তভোগী হয়; কিন্তু দুর্নীতিপরায়ণ ছোট বড় সবাই পর্যায়ের কর্মচারী এতে আর্থিক ও অ-আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে থাকে। পেশাগত দুর্নীতি সাধারণত বেসরকারি পর্যায়ে হয়ে থাকে। অন্যের ক্ষতি করে ব্যক্তিগতভাবে নিজের বা তার সংস্থার লাভের জন্য অসততা এবং প্রতারণামূলক আচরণের মাধ্যমে তারা এধরনের দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে থাকেন। এ ধরনের দুর্নীতিকে সুনির্দিষ্ট করা খুব একটা সহজ নয়। কারণ এধরনের দুর্নীতিকে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। আইনজীবি, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, ডাক্তার, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, কোম্পানি সেক্রেটারি যারা এধরনের পেশায় যুক্ত তারা এমন পজিশনে থাকেন তাদের এধরনের কার্যক্রমকে দুর্নীতি নয় বরং বিজনেস প্র্যাকটিস হিসেবে তারা মনে করেন। যদিও প্রত্যেক পেশার কোড অব কনডাক্ট বা আচরণবিধি রয়েছে, সেগুলো কতটা কার্যকর তা প্রশ্নসাপেক্ষ।

বিউমল্ট এবং ফ্রিটচার এর মতে- ‘দুর্নীতি এমন একটা বৃক্ষ, যা শাখাগুলো অসম্ভব রকমের দীর্ঘ আর তারা সর্বত্র ছড়িয়ে আছে।’ ঘুষ, চাঁদাবাজি, জালিয়াতি, স্বজনপ্রীতি, পৃষ্ঠপোষকতা, তদবির, কার্টেল, ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থ আত্মসাৎ এবং অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে দুর্নীতি সংঘটিত হতে পারে। যে কোন দুর্নীতিই সাধারণ মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থায় বিরূপ প্রভাব ফেলে। তবে যারা আর্থিকভাবে দুর্বল তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও ভুক্তভোগী হয়। সরকারি বা বেসরকারি যে পর্যায়েই দুর্নীতি সংঘটিত হউক না কেন এতে পণ্য ও সেবার গুণগত মান নিম্নগামী হয়, এগুলোর প্রাপ্তি ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ হয়ে ওঠে। ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে সবাই অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে দেশে অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং অদক্ষতা বৃদ্ধি পায়। সরকারি রাজস্ব আদায়ে কমতি দেখা দেয়। সমাজে অসমতা বাড়তে থাকে। মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। সবচাইতে বড় কথা দুর্নীতির কারণে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক চর্চা ভূলুণ্ঠিত হয়। দেশ সমৃদ্ধির সোপানে এগিয়ে যাওয়ার পথ কণ্টকাকীর্ণ হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশে দুর্নীতি দমনের জন্য সরাসরি দুর্নীতি দমন কমিশন দায়িত্বপ্রাপ্ত। এছাড়া আরও কিছু সংস্থা দুর্নীতি দমনের সাথে সম্পৃক্ত যেমন- বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর কাস্টমস্ ইন্টেলিজেন্স এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডাইরেক্টরেট (সিআইআইডি) এবং কাস্টমস্ ইন্টেলিজেন্স সেল, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এছাড়া এধরনের অপরাধ বিচারের জন্য আদালততো রয়েছেই। বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ধারা- ২(ঙ) অনুসারে এ আইনের তফসিলে উল্লিখিত অপরাধসমূহকে ‘দুর্নীতি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

অর্থাৎ ১৮৬০ সালের দল-বিধির কতিপয় ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের অধীন শাস্তিযোগ্য অপরাধসমূহ এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর অধীন শাস্তিযোগ্য অপরাধসমূহ দুর্নীতিমূলক কার্য। মূলত মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর অধীন সংঘটিত অপরাধসহ সরকারি কর্মচারী, ব্যাংকার বা সরকার কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত যে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ঘুষ বা উপঢৌকন গ্রহণ; সরকারি কর্মচারী, সরকার কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত যে কোনো ব্যক্তি বা অন্য যে কোনো ব্যক্তির অবৈধভাবে নিজ নামে বা বে-নামে সম্পদ অর্জন; সরকারি অর্থ বা সম্পত্তি আত্মসাৎ বা ক্ষতিসাধন; সরকারি কর্মচারী কর্তৃক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করা; সরকারি কর্মচারী কর্তৃক জ্ঞাতসারে কোনো অপরাধীকে শাস্তি থেকে রক্ষার প্রচেষ্টা; কোনো ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের জন্য সরকারি কর্মচারী কর্তৃক আইন অমান্যকরণ; সরকারি কর্মচারী বা ব্যাংকার কর্তৃক জাল-জালিয়াতি এবং প্রতারণা করা ইত্যাদি দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের অধীন অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ধারা- ২(শ) অনুসারে মোট ২৯টি অপরাধকে সম্পৃক্ত অপরাধ (Predicate offence) হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

এডমন্ড বার্ক এর মতে- ‘দুর্নীতি এমন একটি বৃক্ষ যার শাখা-প্রশাখার দৈর্ঘ্য পরিমাপ করা যায় না।’ তবে বার্লিনভিত্তিক আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী অ-লাভজনক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর দুর্নীতির ধারণা সূচক (করাপশন পারসেপশনস ইনডেক্স বা সিপিআই) প্রকাশ করে আসছে, যা বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির ব্যাপকতার একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে। যদিও এই সূচকের বিষয়ে কিছুটা বিতর্ক রয়েছে। ২০০১ সালে বাংলাদেশ এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। তখন তালিকায় দেশের সংখ্যা ছিল ৯১টি। ২০২২ সালে এ সংখ্যা উন্নীত হয় ১৮০ টিতে। তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম থেকেই বৈশ্বিক গড় স্কোর থেকে অনেক কম। স্কোর যাই হোক, এটা তো সত্যি আমাদের দেশে দুর্নীতির অবস্থা নিঃসন্দেহে অস্বস্তিকর।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর শূন্য সহনশীলতার অঙ্গীকারসহ দুর্নীতিবিরোধী বিভিন্ন ঘোষণা এবং কার্যক্রম সত্ত্বেও এক্ষেত্রে চোখে পড়ার মতো তেমন কোন উন্নতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। মাঝে-মধ্যেই দুর্নীতির দুই-একটা বড় বড় খোলস উন্মোচিত হয়। তৎক্ষণাৎ আলোচনার কেন্দ্র হয়ে ওঠে সর্বত্র। সুশীল সমাজ, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং সরকারি সংস্থাসমূহের মাতামাতি তখন চরমে ওঠে। কিছুদিন পর আবার সবকিছু থিতিয়ে যায়, হারিয়ে যায়, ঢাকা পড়ে যায় অন্য কোন নতুন প্রেক্ষাপটে। বাস্তবতা হলো এগুলোই চূড়ান্ত নয়। এর স্বরূপ হয়তো আরো অনেক গভীর কুৎসিত। অনেক রাঘব বোয়াল আড়ালে আবডালে শ্বেতশুভ্র পোশাকে দক্ষতারসাথে নিজেদের লুকিয়ে রেখেছেন।

দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয়ের অংশত ভোগের জন্য ব্যয় হয়। বাকিটুকু মানুষ সঞ্চয় ও বিনিয়োগ করে। উল্লিখিত আয়ের এ ব্যবস্থাপনা দেশে এবং দেশের বাইরেও করতে পারেন তারা। বিদেশের ক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে এ অর্থ দেশ থেকে বিদেশে নিয়ে যেতে হয়, যাকে আমরা অর্থ পাচার বলি। উভয় ক্ষেত্রেই বছরের পর বছর তারা সরকারের সব প্রতিরোধ-জাল ছিন্ন করে নির্বিঘ্নে এ কাজগুলো করে যাচ্ছেন। দুর্নীতির অপ্রতিরোধ্য যাত্রায় নিজেদের সবকিছুর ঊর্ধ্বে আসীন করছেন। স্পষ্টতই এটি আমাদের আইনের যথাযথ প্রয়োগে গাফিলতি এবং কাঠামোগত দুর্বলতা। অনেকেই দুর্নীতির কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন- অর্থলিপ্সা, শিক্ষার অভাব, বেকারত্ব, দারিদ্র্য, জেন্ডার অসমতা, রাজনৈতিক মনোপলি, গণতন্ত্র চর্চায় ঘাটতি, রাজনৈতিক স্বচ্ছতার কমতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজের প্রতি অঙ্গীকারের অভাব, দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর পলিসির অভাব, উচ্চমাত্রায় আমলাতান্ত্রিকতা, অদক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো, অর্থনৈতিক স্বাধীনতার কমতি, জনসাধারণের কার্যকর অংশগ্রহণের অভাব, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার অভাব ইত্যাদি।

কারণ যাই হোক, বাস্তবে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ পেতে হলে দুর্নীতি প্রতিরোধে আমাদের আক্ষরিক অর্থেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে, আইন প্রয়োগে কঠোর হতে হবে। একই সঙ্গে দুর্নীতি প্রতিরোধ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথার্থ কার্যকর করতে হবে। এটি প্রতিটি মানুষের প্রাণের দাবি। এটি সময়ের দাবি।

[লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক]

গার্মেন্টস খাতে সংকট

সরকারি হাসপাতালের টয়লেট ব্যবস্থাপনায় করুণ দশা

ডেঙ্গু থেকে বাঁচার উপায় কী

শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হার বাড়াতে

বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির দুর্বলতা

ইরানের কেন কৌশলগত পরিবর্তন

শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন একে অন্যের পরিপূরক

রামু ট্র্যাজেডির এক যুগ

প্রত্যাশিত শিক্ষা কমিশনের প্রস্তাবিত রূপরেখা

ব্যাংক খাতের সংস্কার

শিক্ষার একটি স্থায়ী কমিশন সময়ের দাবি

ছবি

ক্ষমতা এখন ‘মব’-এর হাতে

উচ্চ ফলনশীল বারি মসুর-৮

শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে বামপন্থির উত্থান

আমন ধানে আগাম ফুল আসার কারণ

উচ্চ ফলনশীল বারি মসুর-৮

কী হবে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ রাজনীতি

রম্যগদ্য : ‘বল করে দুর্বল...’

মধ্যপ্রাচ্যে প্রযুক্তিগত যুদ্ধ

বন্যাপরবর্তী কৃষি উৎপাদনে সময়োপযোগী সহায়তা প্রদান

গুণগত উন্নয়নই সমাজের প্রকৃত উন্নতির চাবিকাঠি

বিশেষ শিশু ও বিশেষ শিক্ষালয়

বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার অধিকার

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি

প্রসঙ্গ : আনসার বাহিনী

শান্তির সংস্কৃতি : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

মব লিঞ্চিং আইনের শাসনের পরিপন্থি

মব জাস্টিসের মতো বর্বরতা বন্ধ হোক

বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে রাজনীতি

জাতীয় সংগীত নিয়ে বিতর্ক

জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে বিতর্ক

ভূমি অধিগ্রহণে কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হলে কী করবেন?

ছবি

নিবেদিত প্রাণ এক কৃষিবিজ্ঞানী

জনমনে স্বস্তি ফিরুক

দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার সুযোগ

tab

উপ-সম্পাদকীয়

দুর্নীতি প্রতিরোধ সময়ের দাবি

শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪

দুর্নীতি শেখার জন্য কোথাও কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে এরকম আমার জানা নেই। আবার কোথাও দুর্নীতি শেখার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এমনও না। তবে দুর্নীতি প্রতিরোধে সম্পৃক্ত সুনির্দিষ্ট কিছুসংখ্যক কর্মীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় মাত্র। অথচ যারা এ অপকর্মের সাথে যুক্ত তারা অতীব নিপুণভাবে এবং দক্ষতার সাথে এ কাজটি সম্পন্ন করতে সক্ষম হচ্ছেন। তাদের চাতুর্যের সৌকর্য অবিমিশ্র। তাহলে বলতেই হয়, দুর্নীতি করার জন্য আনুষ্ঠানিক বা উপানুষ্ঠানিক কোন শিক্ষারই প্রয়োজন হয় না। একাজে তারা স্ব-শিক্ষিত। অথচ কত মানুষকে তারা সুচতুরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে, ধোঁকা দিচ্ছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিরোধ যন্ত্রকে দিনের পর দিন ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে। নতুন নতুন উদ্ভাবনীপন্থায় চোখ ধাঁধানো অঢেল সম্পদের পাহাড় চূড়ায় সমাসীন হয়ে দাঁত কেলিয়ে আপনমনে তৃপ্তির হাসি হাসছে। নিঃসন্দেহে তাদের মেধাযোগ্যতার কোন ঘাটতি নেই। আর এ যোগ্যতাকে খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নেই। বরং এ বিরল যোগ্যতার জন্য তাদের সমীহ করতে হয় বৈকি।

দুর্নীতি শব্দের মানে হলো আর্থিক অনিয়ম ও অসাধুতা, নীতিবিরুদ্ধ আচরণ। এটি এক ধরনের অসততা এবং ফৌজদারি অপরাধ। কোন ব্যক্তি কর্তৃত্বের পদে থেকে নিজের ব্যক্তিগত লাভের জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার করে এ ধরনের অপরাধে যুক্ত হন। কোন সংস্থাও অবৈধ সুবিধা অর্জনের জন্য এধরনের অপরাধ করতে পারে। বিশ্বব্যাংক এর মতে- ‘Corruption-the abuse of public office for private gain-covers a wide range of bebavior, from bribery to theft of public funds.’ ট্রান্সফারেন্সি ইন্টারনেশনালের সংজ্ঞা হলোÑ ‘Corruption is the abuse of entrusted power for private gain.’ দুর্নীতিকে দার্শনিক, ধর্মতাত্ত্বিক এবং নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও বিবেচনা করা যেতে পারে। সেই হিসেবে কোন আদর্শের নৈতিক বা আধ্যাত্মিক অসাধুতা বা বিচ্যুতিও দুর্নীতি।

সারাবিশ্বে দুর্নীতির বিস্তৃতি রয়েছে। কোথাও কম কোথাও বেশি। আমাদের দেশও তার ব্যতিক্রম নয়। সাধারণত উন্নত দেশগুলোতে এর মাত্রা কম। তবে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত দেশ একেবারেই অলীক চিন্তা। দুর্নীতির আবার রকমফের আছে। ক্ষুদ্র বনাম গ্র্যান্ড দুর্নীতি, প্রচলিত বনাম অপ্রচলিত দুর্নীতি, সরকারি বনাম ব্যক্তিগত দুর্নীতি ইত্যাদি। অন্যভাবেও দুর্নীতিকে বিভাজন করা যায়। যেমন-রাজনৈতিক দুর্নীতি, প্রশাসনিক দুর্নীতি এবং প্রফেশনাল বা পেশাগত দুর্নীতি। রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করা, আইনের শাসনের বাইরে গোপনে নিজেদের সমৃদ্ধ করা, সরকারি তহবিল আত্মসাৎ কিংবা অপব্যবহার করা ইত্যাদি রাজনৈতিক দুর্নীতি।

রাজনীতির অধ্যাপক স্টিফেন ডি. মরিসের মতে- Political corruption is the illegitimate use of public power to benefit a private interest. সরকারি কেনাকাটায় দুর্নীতি, সরকারি সেবা গ্রহণে দুর্নীতি, রাজস্ব প্রদান ও ট্রেড লাইসেন্স নিতে দুর্নীতি, ব্যাংক ঋণ নিতে ঘুষ প্রদান এগুলো বড় বড় প্রশাসনিক দুর্নীতির উদাহরণ। প্রশাসনিক দুর্নীতির মাধ্যমে সাধারণ জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত ও ভুক্তভোগী হয়; কিন্তু দুর্নীতিপরায়ণ ছোট বড় সবাই পর্যায়ের কর্মচারী এতে আর্থিক ও অ-আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে থাকে। পেশাগত দুর্নীতি সাধারণত বেসরকারি পর্যায়ে হয়ে থাকে। অন্যের ক্ষতি করে ব্যক্তিগতভাবে নিজের বা তার সংস্থার লাভের জন্য অসততা এবং প্রতারণামূলক আচরণের মাধ্যমে তারা এধরনের দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে থাকেন। এ ধরনের দুর্নীতিকে সুনির্দিষ্ট করা খুব একটা সহজ নয়। কারণ এধরনের দুর্নীতিকে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। আইনজীবি, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, ডাক্তার, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, কোম্পানি সেক্রেটারি যারা এধরনের পেশায় যুক্ত তারা এমন পজিশনে থাকেন তাদের এধরনের কার্যক্রমকে দুর্নীতি নয় বরং বিজনেস প্র্যাকটিস হিসেবে তারা মনে করেন। যদিও প্রত্যেক পেশার কোড অব কনডাক্ট বা আচরণবিধি রয়েছে, সেগুলো কতটা কার্যকর তা প্রশ্নসাপেক্ষ।

বিউমল্ট এবং ফ্রিটচার এর মতে- ‘দুর্নীতি এমন একটা বৃক্ষ, যা শাখাগুলো অসম্ভব রকমের দীর্ঘ আর তারা সর্বত্র ছড়িয়ে আছে।’ ঘুষ, চাঁদাবাজি, জালিয়াতি, স্বজনপ্রীতি, পৃষ্ঠপোষকতা, তদবির, কার্টেল, ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থ আত্মসাৎ এবং অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে দুর্নীতি সংঘটিত হতে পারে। যে কোন দুর্নীতিই সাধারণ মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থায় বিরূপ প্রভাব ফেলে। তবে যারা আর্থিকভাবে দুর্বল তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও ভুক্তভোগী হয়। সরকারি বা বেসরকারি যে পর্যায়েই দুর্নীতি সংঘটিত হউক না কেন এতে পণ্য ও সেবার গুণগত মান নিম্নগামী হয়, এগুলোর প্রাপ্তি ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ হয়ে ওঠে। ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে সবাই অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে দেশে অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং অদক্ষতা বৃদ্ধি পায়। সরকারি রাজস্ব আদায়ে কমতি দেখা দেয়। সমাজে অসমতা বাড়তে থাকে। মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। সবচাইতে বড় কথা দুর্নীতির কারণে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক চর্চা ভূলুণ্ঠিত হয়। দেশ সমৃদ্ধির সোপানে এগিয়ে যাওয়ার পথ কণ্টকাকীর্ণ হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশে দুর্নীতি দমনের জন্য সরাসরি দুর্নীতি দমন কমিশন দায়িত্বপ্রাপ্ত। এছাড়া আরও কিছু সংস্থা দুর্নীতি দমনের সাথে সম্পৃক্ত যেমন- বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর কাস্টমস্ ইন্টেলিজেন্স এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডাইরেক্টরেট (সিআইআইডি) এবং কাস্টমস্ ইন্টেলিজেন্স সেল, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এছাড়া এধরনের অপরাধ বিচারের জন্য আদালততো রয়েছেই। বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ধারা- ২(ঙ) অনুসারে এ আইনের তফসিলে উল্লিখিত অপরাধসমূহকে ‘দুর্নীতি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

অর্থাৎ ১৮৬০ সালের দল-বিধির কতিপয় ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের অধীন শাস্তিযোগ্য অপরাধসমূহ এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর অধীন শাস্তিযোগ্য অপরাধসমূহ দুর্নীতিমূলক কার্য। মূলত মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর অধীন সংঘটিত অপরাধসহ সরকারি কর্মচারী, ব্যাংকার বা সরকার কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত যে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ঘুষ বা উপঢৌকন গ্রহণ; সরকারি কর্মচারী, সরকার কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত যে কোনো ব্যক্তি বা অন্য যে কোনো ব্যক্তির অবৈধভাবে নিজ নামে বা বে-নামে সম্পদ অর্জন; সরকারি অর্থ বা সম্পত্তি আত্মসাৎ বা ক্ষতিসাধন; সরকারি কর্মচারী কর্তৃক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করা; সরকারি কর্মচারী কর্তৃক জ্ঞাতসারে কোনো অপরাধীকে শাস্তি থেকে রক্ষার প্রচেষ্টা; কোনো ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের জন্য সরকারি কর্মচারী কর্তৃক আইন অমান্যকরণ; সরকারি কর্মচারী বা ব্যাংকার কর্তৃক জাল-জালিয়াতি এবং প্রতারণা করা ইত্যাদি দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের অধীন অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ধারা- ২(শ) অনুসারে মোট ২৯টি অপরাধকে সম্পৃক্ত অপরাধ (Predicate offence) হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

এডমন্ড বার্ক এর মতে- ‘দুর্নীতি এমন একটি বৃক্ষ যার শাখা-প্রশাখার দৈর্ঘ্য পরিমাপ করা যায় না।’ তবে বার্লিনভিত্তিক আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী অ-লাভজনক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর দুর্নীতির ধারণা সূচক (করাপশন পারসেপশনস ইনডেক্স বা সিপিআই) প্রকাশ করে আসছে, যা বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির ব্যাপকতার একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে। যদিও এই সূচকের বিষয়ে কিছুটা বিতর্ক রয়েছে। ২০০১ সালে বাংলাদেশ এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। তখন তালিকায় দেশের সংখ্যা ছিল ৯১টি। ২০২২ সালে এ সংখ্যা উন্নীত হয় ১৮০ টিতে। তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম থেকেই বৈশ্বিক গড় স্কোর থেকে অনেক কম। স্কোর যাই হোক, এটা তো সত্যি আমাদের দেশে দুর্নীতির অবস্থা নিঃসন্দেহে অস্বস্তিকর।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর শূন্য সহনশীলতার অঙ্গীকারসহ দুর্নীতিবিরোধী বিভিন্ন ঘোষণা এবং কার্যক্রম সত্ত্বেও এক্ষেত্রে চোখে পড়ার মতো তেমন কোন উন্নতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। মাঝে-মধ্যেই দুর্নীতির দুই-একটা বড় বড় খোলস উন্মোচিত হয়। তৎক্ষণাৎ আলোচনার কেন্দ্র হয়ে ওঠে সর্বত্র। সুশীল সমাজ, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং সরকারি সংস্থাসমূহের মাতামাতি তখন চরমে ওঠে। কিছুদিন পর আবার সবকিছু থিতিয়ে যায়, হারিয়ে যায়, ঢাকা পড়ে যায় অন্য কোন নতুন প্রেক্ষাপটে। বাস্তবতা হলো এগুলোই চূড়ান্ত নয়। এর স্বরূপ হয়তো আরো অনেক গভীর কুৎসিত। অনেক রাঘব বোয়াল আড়ালে আবডালে শ্বেতশুভ্র পোশাকে দক্ষতারসাথে নিজেদের লুকিয়ে রেখেছেন।

দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয়ের অংশত ভোগের জন্য ব্যয় হয়। বাকিটুকু মানুষ সঞ্চয় ও বিনিয়োগ করে। উল্লিখিত আয়ের এ ব্যবস্থাপনা দেশে এবং দেশের বাইরেও করতে পারেন তারা। বিদেশের ক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে এ অর্থ দেশ থেকে বিদেশে নিয়ে যেতে হয়, যাকে আমরা অর্থ পাচার বলি। উভয় ক্ষেত্রেই বছরের পর বছর তারা সরকারের সব প্রতিরোধ-জাল ছিন্ন করে নির্বিঘ্নে এ কাজগুলো করে যাচ্ছেন। দুর্নীতির অপ্রতিরোধ্য যাত্রায় নিজেদের সবকিছুর ঊর্ধ্বে আসীন করছেন। স্পষ্টতই এটি আমাদের আইনের যথাযথ প্রয়োগে গাফিলতি এবং কাঠামোগত দুর্বলতা। অনেকেই দুর্নীতির কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন- অর্থলিপ্সা, শিক্ষার অভাব, বেকারত্ব, দারিদ্র্য, জেন্ডার অসমতা, রাজনৈতিক মনোপলি, গণতন্ত্র চর্চায় ঘাটতি, রাজনৈতিক স্বচ্ছতার কমতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজের প্রতি অঙ্গীকারের অভাব, দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর পলিসির অভাব, উচ্চমাত্রায় আমলাতান্ত্রিকতা, অদক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো, অর্থনৈতিক স্বাধীনতার কমতি, জনসাধারণের কার্যকর অংশগ্রহণের অভাব, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার অভাব ইত্যাদি।

কারণ যাই হোক, বাস্তবে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ পেতে হলে দুর্নীতি প্রতিরোধে আমাদের আক্ষরিক অর্থেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে, আইন প্রয়োগে কঠোর হতে হবে। একই সঙ্গে দুর্নীতি প্রতিরোধ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথার্থ কার্যকর করতে হবে। এটি প্রতিটি মানুষের প্রাণের দাবি। এটি সময়ের দাবি।

[লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক]

back to top