জাঁ-নেসার ওসমান
‘কি রে ভাই, এতো সকাল সকাল রেডি হয়া কোই যাইতেছেন?’
‘আরে ব্যাটা ‘যঃ পলায়তিঃ স্বঃ জীবতিঃ।’
‘এইডার মানে কি? ‘যঃ পলায়তিঃ স্বঃ জীবতিঃ?’
‘মিয়া এইডার মানে বুঝো না! ‘যঃ পলায়তিঃ স্বঃ জীবতিঃ’ মানে যে পালায় সেই বাঁচে।’
‘তো আপনে কোই পালাইবেন, তাছাড়া আপনে পালাইবেনই বা ক্যেন?’
‘আরে ব্যাটা কথা কম কাজ বেশি, আগে পলা তারপর কথা কইস!’
‘কিছু বুঝলাম না, কিছু শুনলাম না, খামাখা খামাখা পলামু? এইডা কি কন?’
‘হোমুন্দির পো কার কখন পালা আসে কেউ বলতে পারে! তাই মান-সম্মান থাকতে থাকতে যলদি পালা। যদি তোর পিতৃদত্ত জানের কোনো মায়া থাকে তায়লে দ্রুত পলায়া যা।’
‘আরে ভাই সিরিয়াসলি কনতো কোই পলামু ক্যান পলামু!’
‘তাহলে শোন তোকে বুঝিয়ে বলি, শুরু করিতেছি বাংলার অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত জনগণের নামে যাঁরা পরম করুণাময় এবং অত্যন্ত দয়ালু। আমাদের এই দয়ালু ও করুণাময় দেশবাসীর জানমাল রক্ষার জন্য নগর কোতোয়ালকে স¤্রাট স্বয়ং নিয়োগপত্র প্রদান করিলেন, দোর্দন্ড প্রতাপ এই পুলিশের পোলা, নগর কোতোয়ালের ভয়ে সকল দুস্কৃতিকারীরা দিগি¦দিক জ্ঞানশূন্য হইয়া শহর ছাড়িয়া পলাইতে লাগিলো। আর বড় বড় রাঘব-বোয়ালরা নিজ মাতৃভূমি ছাড়িয়া দুই বছরের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভাই¹া গেলেন। কেহ কেহ ইহাকে মাইনাস-টুর, মহা প্রলয়ঙ্করী ঘুর্ণি ঝড়ের সময়কার কথা স্মরণ করাইয়া দেন।’
‘এখনতো মাইনাস-টু’র সময় না, এখন আমি পালাইবো কেন? কেন? কেন?’
‘ওই হালা ওরাং ওটাং’-এর সাহেবজাদা, তুমি দেখ নাই ওই পুলিশের পোলানগর কোতোয়াল যার ভয়ে বড় বড় চোর-ডাকাত ভাগতো সেই এখন, ৭০০ কোটি টাকা কামায়া ১৫টা পাসপোর্ট বানায়া চুরের মতো ভাই¹া গেলো। কোই যে গেল, কেউ জানে না।’
‘আইচ্ছা বুঝলাম কার কখন পালা আসে সে কথা আগে থেইক্কা কেউ কইতে পারেনা, তাই চামে চামে পলানোই ভালো।’
‘ভালো মানে ভালো! হালায় দেখোস নাই, ক্যাসিনো কান্ডের টার্ম আইলো পনেরো বছর পরে। রামছগলের দিন আসলো পবিত্র ঈদুল-আজহার কালে, সাগিরার ভাসুর বনজ দা’র হতে ধরা খাইলো ২৩ বছর পরে। তাই আমি ভাই কুনো রিস্কের মইধ্যে নাই আমি আগে ভাগেই ভাগুম রে ভাই আগেভাগেই ভাগুম।’
‘ভাগবেন তো ভালো কথা তয় নিচে যে দেখলাম, কুইনি, হাবিব, কানিজ, জ্যাকসন সব জেন্টস ও বিউটি পার্লারের বাঘা বাঘা পিলিয়ারেরা ছুরি কাঁচিতে সান দিতাছে?’
‘সান তো দিবোই, একলা আমি ভাগলে তো, এতো কথা ছিলো না!’
‘মানে কি, আজীবন শুনলাম আপনে ডেপুটি কর্মকর্তা, তো আপনার একার জন্য এতোগুলা ক্ষৌরকার? বিস্ময়তো কাটছে না, গুরু! কোথাকার কোথাকার কেশ মুন্ডন করবেন যে এতোগুলা ক্ষৌরকার লাগতাছে?’
‘তুই মনে হয় আজকাল আর পত্র-পত্রিকা পড়িসনা!’
‘ঠিকই ধরছেন, সব বড় বড় ব্যবসায়ীগো নিজস্ব সংবাদপত্র, সাংবাদিক শ্যামল তো টকশো’তে কোইলোই, আগে বড় লোক চোর ঠেকাইতে কুত্তা পালতো আর এখন চুরি ঠেকাইতে সাংবাদিক পালে। তাই এইসব পেপার আর পড়িনা!’
‘কিন্তু ভাইডি, পেপার না পড়লে জানবা কেমনে যে, ধরা খাওয়ার পর থলের বেড়াল, বেরিয়ে পড়ে, শ্বশুরের নামে জমি, শ্যালকের নামে, ফ্ল্যাটস, মেয়ের নামে রির্সোট, বৌ’এর নামে, ম্যাসাজ পার্লার, ছেলের নামে, পৌলট্রি, শাশুড়ির নামে চেইন-শপ, ভায়রার নামে হসপিটাল, ভাইয়ের নামে রোড ট্রান্সপোর্ট, ভাবির নামে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট মানে লঞ্চ,ভায়ের শ্বশুরের নামে...।’
‘বুঝছি বুঝছি চৌদ্দগুষ্ঠীর নামে ব্যবসা করতাছেন তয় নিচে এ্যাতো চুল-কাটোনের পাবলিক ক্যান?’
‘এই সামান্য জিনিসটা তুই বুঝলি না, এই সব গুলারে ন্যাড়া কইরা পলাইতে হইবো। যদি একজন ক্ষৌরকার ডাকতাম তায়লে দুই-মাস লাগতো সবগুলার কেশ ফালাইতে, তাই বুদ্ধি কইরা বাইশটা ক্ষৌরকার ডাকছি, ব্যেবাগতে দু’ই ঘন্টার মইধ্যে কাম সাইরা দিবো আর আমরা পলামু। মানি ইজ নো প্রবলেম।’
‘পার্লারে যেয়ে কাটলে...’
‘পার্লারে যেয়ে কাটলে তুমরা সি সি টিভির ফুটেজ ভাইরাল কইরা ইউটিউবে ব্যেইচ্চা লাখ লাখ ডলার কামাইতা। তাই ঘরে ডাইক্কা ক্ষৌরকর্ম।’
‘পালাবেন তো পালাবেন ঠিক আছে, কিন্তু ন্যাড়া হয়ে মানে বেলমুন্ডা হয়ে পালানো, না মানতে পারলাম না!’
‘তুমি না মানলে কি হবে ইমিগ্রেশেন তো মাইন্না নিছে, ওরা সোজা সাজে’ করছে, ন্যাড়া হয়া আয়া পড়েন, আপনেগো চিনবার পারুমনা, সোজা গ্রীন চ্যানেল দিয়া ভিআইপির মতো ভাই¹া যাইবেন।’
‘ভাবিদের কেশ মুন্ডন দেখতে ক্যেমন লাগবে বলুন। না না ছ্যা ছ্যা, গাটা কেমন গুলিয়ে উঠছে।’
‘ম্যেথরানীর পো, গা-টা গুলিয়ে উঠছে, বরাহ পূত্র, কেশ কাটলে আবার কেশ গজাবে কিন্তু ধরা খেলে, ডিমথেরাপির জ্বালা সহ্য করতে পারবা! তার চেয়ে কেশমুন্ডন অনেক সহজ থেরাপি।’
‘কিন্তু এই যে সব মানে চৌদ্দগুষ্ঠী নিয়ে পালাচ্ছেন, আপনাদের মানে দুর্নীতিবাজদের ধরবে এটা নিশ্চিত হলেন কিভাবে?’
‘আরে ব্যাটা দেশ-বিদেশের সবাই জানে, যে এ-দেশে আর দুর্নীতিবাজদের জায়গা হবেনা! বড় বড় রাঘববোয়ালরা পালানোর নজির রেখেছেন, যেমন ধর- রহিম, করিম, আলম, সেলিম, ওসমান, কামরুজ্জামান; সব সব পালিয়েছে তাই পথ ধরে আমরা পালাচ্ছি ব্যাস। ‘যঃ পলায়তিঃ স্বঃ জীবতিঃ’ যে পালায় সেই বাঁচে।’
‘কন কি!এতো বড় বড় ইন্ডাস্ট্রিয়ালি’ সব দেশ ছাইড়া ভাই¹া গ্যেছে ?’
‘ওই ওই কোই যাস কোই যাস তুই কোই যসি...?’
‘ যাই, জলদি দশ-বিশটা নাইপতা লয়া বাড়িত গেলাম... সি ইয়ু ইন ফরেইন ল্যান্ড...গুড বাইইইই...।’
[লেখক : চলচ্চিত্রকার]
জাঁ-নেসার ওসমান
শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪
‘কি রে ভাই, এতো সকাল সকাল রেডি হয়া কোই যাইতেছেন?’
‘আরে ব্যাটা ‘যঃ পলায়তিঃ স্বঃ জীবতিঃ।’
‘এইডার মানে কি? ‘যঃ পলায়তিঃ স্বঃ জীবতিঃ?’
‘মিয়া এইডার মানে বুঝো না! ‘যঃ পলায়তিঃ স্বঃ জীবতিঃ’ মানে যে পালায় সেই বাঁচে।’
‘তো আপনে কোই পালাইবেন, তাছাড়া আপনে পালাইবেনই বা ক্যেন?’
‘আরে ব্যাটা কথা কম কাজ বেশি, আগে পলা তারপর কথা কইস!’
‘কিছু বুঝলাম না, কিছু শুনলাম না, খামাখা খামাখা পলামু? এইডা কি কন?’
‘হোমুন্দির পো কার কখন পালা আসে কেউ বলতে পারে! তাই মান-সম্মান থাকতে থাকতে যলদি পালা। যদি তোর পিতৃদত্ত জানের কোনো মায়া থাকে তায়লে দ্রুত পলায়া যা।’
‘আরে ভাই সিরিয়াসলি কনতো কোই পলামু ক্যান পলামু!’
‘তাহলে শোন তোকে বুঝিয়ে বলি, শুরু করিতেছি বাংলার অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত জনগণের নামে যাঁরা পরম করুণাময় এবং অত্যন্ত দয়ালু। আমাদের এই দয়ালু ও করুণাময় দেশবাসীর জানমাল রক্ষার জন্য নগর কোতোয়ালকে স¤্রাট স্বয়ং নিয়োগপত্র প্রদান করিলেন, দোর্দন্ড প্রতাপ এই পুলিশের পোলা, নগর কোতোয়ালের ভয়ে সকল দুস্কৃতিকারীরা দিগি¦দিক জ্ঞানশূন্য হইয়া শহর ছাড়িয়া পলাইতে লাগিলো। আর বড় বড় রাঘব-বোয়ালরা নিজ মাতৃভূমি ছাড়িয়া দুই বছরের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভাই¹া গেলেন। কেহ কেহ ইহাকে মাইনাস-টুর, মহা প্রলয়ঙ্করী ঘুর্ণি ঝড়ের সময়কার কথা স্মরণ করাইয়া দেন।’
‘এখনতো মাইনাস-টু’র সময় না, এখন আমি পালাইবো কেন? কেন? কেন?’
‘ওই হালা ওরাং ওটাং’-এর সাহেবজাদা, তুমি দেখ নাই ওই পুলিশের পোলানগর কোতোয়াল যার ভয়ে বড় বড় চোর-ডাকাত ভাগতো সেই এখন, ৭০০ কোটি টাকা কামায়া ১৫টা পাসপোর্ট বানায়া চুরের মতো ভাই¹া গেলো। কোই যে গেল, কেউ জানে না।’
‘আইচ্ছা বুঝলাম কার কখন পালা আসে সে কথা আগে থেইক্কা কেউ কইতে পারেনা, তাই চামে চামে পলানোই ভালো।’
‘ভালো মানে ভালো! হালায় দেখোস নাই, ক্যাসিনো কান্ডের টার্ম আইলো পনেরো বছর পরে। রামছগলের দিন আসলো পবিত্র ঈদুল-আজহার কালে, সাগিরার ভাসুর বনজ দা’র হতে ধরা খাইলো ২৩ বছর পরে। তাই আমি ভাই কুনো রিস্কের মইধ্যে নাই আমি আগে ভাগেই ভাগুম রে ভাই আগেভাগেই ভাগুম।’
‘ভাগবেন তো ভালো কথা তয় নিচে যে দেখলাম, কুইনি, হাবিব, কানিজ, জ্যাকসন সব জেন্টস ও বিউটি পার্লারের বাঘা বাঘা পিলিয়ারেরা ছুরি কাঁচিতে সান দিতাছে?’
‘সান তো দিবোই, একলা আমি ভাগলে তো, এতো কথা ছিলো না!’
‘মানে কি, আজীবন শুনলাম আপনে ডেপুটি কর্মকর্তা, তো আপনার একার জন্য এতোগুলা ক্ষৌরকার? বিস্ময়তো কাটছে না, গুরু! কোথাকার কোথাকার কেশ মুন্ডন করবেন যে এতোগুলা ক্ষৌরকার লাগতাছে?’
‘তুই মনে হয় আজকাল আর পত্র-পত্রিকা পড়িসনা!’
‘ঠিকই ধরছেন, সব বড় বড় ব্যবসায়ীগো নিজস্ব সংবাদপত্র, সাংবাদিক শ্যামল তো টকশো’তে কোইলোই, আগে বড় লোক চোর ঠেকাইতে কুত্তা পালতো আর এখন চুরি ঠেকাইতে সাংবাদিক পালে। তাই এইসব পেপার আর পড়িনা!’
‘কিন্তু ভাইডি, পেপার না পড়লে জানবা কেমনে যে, ধরা খাওয়ার পর থলের বেড়াল, বেরিয়ে পড়ে, শ্বশুরের নামে জমি, শ্যালকের নামে, ফ্ল্যাটস, মেয়ের নামে রির্সোট, বৌ’এর নামে, ম্যাসাজ পার্লার, ছেলের নামে, পৌলট্রি, শাশুড়ির নামে চেইন-শপ, ভায়রার নামে হসপিটাল, ভাইয়ের নামে রোড ট্রান্সপোর্ট, ভাবির নামে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট মানে লঞ্চ,ভায়ের শ্বশুরের নামে...।’
‘বুঝছি বুঝছি চৌদ্দগুষ্ঠীর নামে ব্যবসা করতাছেন তয় নিচে এ্যাতো চুল-কাটোনের পাবলিক ক্যান?’
‘এই সামান্য জিনিসটা তুই বুঝলি না, এই সব গুলারে ন্যাড়া কইরা পলাইতে হইবো। যদি একজন ক্ষৌরকার ডাকতাম তায়লে দুই-মাস লাগতো সবগুলার কেশ ফালাইতে, তাই বুদ্ধি কইরা বাইশটা ক্ষৌরকার ডাকছি, ব্যেবাগতে দু’ই ঘন্টার মইধ্যে কাম সাইরা দিবো আর আমরা পলামু। মানি ইজ নো প্রবলেম।’
‘পার্লারে যেয়ে কাটলে...’
‘পার্লারে যেয়ে কাটলে তুমরা সি সি টিভির ফুটেজ ভাইরাল কইরা ইউটিউবে ব্যেইচ্চা লাখ লাখ ডলার কামাইতা। তাই ঘরে ডাইক্কা ক্ষৌরকর্ম।’
‘পালাবেন তো পালাবেন ঠিক আছে, কিন্তু ন্যাড়া হয়ে মানে বেলমুন্ডা হয়ে পালানো, না মানতে পারলাম না!’
‘তুমি না মানলে কি হবে ইমিগ্রেশেন তো মাইন্না নিছে, ওরা সোজা সাজে’ করছে, ন্যাড়া হয়া আয়া পড়েন, আপনেগো চিনবার পারুমনা, সোজা গ্রীন চ্যানেল দিয়া ভিআইপির মতো ভাই¹া যাইবেন।’
‘ভাবিদের কেশ মুন্ডন দেখতে ক্যেমন লাগবে বলুন। না না ছ্যা ছ্যা, গাটা কেমন গুলিয়ে উঠছে।’
‘ম্যেথরানীর পো, গা-টা গুলিয়ে উঠছে, বরাহ পূত্র, কেশ কাটলে আবার কেশ গজাবে কিন্তু ধরা খেলে, ডিমথেরাপির জ্বালা সহ্য করতে পারবা! তার চেয়ে কেশমুন্ডন অনেক সহজ থেরাপি।’
‘কিন্তু এই যে সব মানে চৌদ্দগুষ্ঠী নিয়ে পালাচ্ছেন, আপনাদের মানে দুর্নীতিবাজদের ধরবে এটা নিশ্চিত হলেন কিভাবে?’
‘আরে ব্যাটা দেশ-বিদেশের সবাই জানে, যে এ-দেশে আর দুর্নীতিবাজদের জায়গা হবেনা! বড় বড় রাঘববোয়ালরা পালানোর নজির রেখেছেন, যেমন ধর- রহিম, করিম, আলম, সেলিম, ওসমান, কামরুজ্জামান; সব সব পালিয়েছে তাই পথ ধরে আমরা পালাচ্ছি ব্যাস। ‘যঃ পলায়তিঃ স্বঃ জীবতিঃ’ যে পালায় সেই বাঁচে।’
‘কন কি!এতো বড় বড় ইন্ডাস্ট্রিয়ালি’ সব দেশ ছাইড়া ভাই¹া গ্যেছে ?’
‘ওই ওই কোই যাস কোই যাস তুই কোই যসি...?’
‘ যাই, জলদি দশ-বিশটা নাইপতা লয়া বাড়িত গেলাম... সি ইয়ু ইন ফরেইন ল্যান্ড...গুড বাইইইই...।’
[লেখক : চলচ্চিত্রকার]