alt

উপ-সম্পাদকীয়

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার ভবিষ্যৎ কী

গৌতম রায়

: বুধবার, ২৪ জুলাই ২০২৪

ভোটের ময়দানে আইনসভার আসন জেতা বা না জেতার ওপরে কখনো কোনো মতাদর্শের অস্তিত্বের বিলুপ্তি ঘটতে পারে না। আজ পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ভোট রাজনীতির নিক্ষেপ বামপন্থীরা শূন্য বহু চেষ্টা চরিত্র নির্বাচনী রাজনীতিতে তাদের খরা কাটছে না। তাই বলে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বামপন্থী চিন্তাকে তোমার যে শিকড় মাটির একেবারে গভীরে প্রবেশ করেছে সেই শেকড়কে কি ধর্মান্ধ সম্প্রদায়িক শক্তি বিজেপি বা তাদের বিশ্বস্ত বন্ধু প্রতিযোগিতামূলক সম্প্রদায়িক শক্তি তৃণমূল উপড়ে ফেলতে পেরেছে।

মোহাম্মদ সেলিম যখন বছর আড়াই আগে রাজ্যের পশ্চিমবঙ্গ সিপিআই(এম) দলটির সম্পাদকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন, তখন প্রথমেই তিনি একটি শব্দ বাক্য সাধারণ মানুষের উদ্দেশে বলেছিলেন। সেটি হলো; যারা আমাদের ঘুম কেড়েছে, আমরা তাদের নিশ্চিন্তে ঘুমোতে দেব না।

লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বামপন্থীরা একটি আসন ও পায়নি। সেলিম নিজে পরাজিত হয়েছেন। তবু বলতে হয়, এই নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে সেলিম এবং তার দেখানো পথে, তার সহযোগীরা বিজয় পেয়েছেন।

কি সেই বিজয়?

সেই বিজয় হলো, আজ টিম সেলিম যেভাবে পশ্চিমবঙ্গের বুকে বিজেপি-আরএসএস এবং মমতার সাম্প্রদায়িক অভিসন্ধি আর জনসাধারণের শাসকবিরোধী মানসিকতা, যা সাধারণ মানুষই সামনে তুলে ধরেছেন, সেটা কিন্তু ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক শক্তি হোক আর প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িক শক্তি হোক, তাদের রাতের ঘুম কেটেছে।

আর যেভাবে টিম সেলিম পশ্চিমবঙ্গের বুকে একদিকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের ইলেক্টোরাল বন্ডকে ঘিরে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি আর পশ্চিমবঙ্গে মমতার দল এবং সরকারের মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত প্রত্যেকটি ব্যক্তির ক্ষেত্রে নিয়োগ থেকে শুরু করে সমস্ত ধরনের ক্ষেত্রে দুর্নীতিকে মানুষের সামনে তুলে ধরেছে, তাতে সাধারণ মানুষ এমনকি যারা তৃণমূলের সমর্থক কিন্তু সরাসরি সেই দলের কর্মী নন, কিন্তু তাদের ভোট দেন তাদের মধ্যেও তৃণমূল সম্বন্ধে এতটাই ঘৃণার মানসিকতা তৈরি করতে পেরেছে যে ঘৃণা কিন্তু আজ পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি আর তৃণমূলকে একযোগে রাতের ঘুম নষ্ট করে দিতে পেরেছে।

২০১১ সালে নানা জাতীয় আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির বলি হয়ে বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। বিরোধী শক্তি হিসেবে সিপিআই (এম), মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকালের প্রথম পর্যায়ে বলতে পারা যায়, খানিকটা ভ্যাবাচেকাই খেয়ে গিয়েছিল।

মমতা শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার অব্যহিত পরে লোকসভার যে নির্বাচন হয় ২০০৪ সালে, সেই নির্বাচনে, রায়গঞ্জ কেন্দ্র থেকে সেলিম জয় লাভ করেন। তাছাড়া মুর্শিদাবাদ কেন্দ্র থেকে সিপিআই (এম) প্রার্থী সেবার জিতেছিলেন। তখন এককক্ষমতায় ভারত পরিচালনা করছে বিজেপি। দোর্দ-প্রতাপ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি নিজেকে দেখাতে সব রকমভাবে চেষ্টা করছেন। ধর্মের নামে জাতপাতের নামে, ভাষার নামে, গোটা ভারতকে ছিন্ন ভিন্ন করে দেয়ার জন্য আদা জল খেয়ে নেমে পড়েছে গোটা হিন্দুত্ববাদী শিবির। আড়াল থেকে নানাভাবে তাদের মদত জুগিয়ে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস, তেলুগু দেশম, অসম গণপরিষদ, বিজু জনতা দলÑ ইত্যাদি ইত্যাদিরা।

এইরকম সময়ে পশ্চিমবঙ্গে অরাজকতার যে সূচনা পর্ব চিটফান্ড কেলেঙ্কারির জেরে, পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষ, গরিব-দুর্ব মানুষ, তাদের জীবন-জীবিকা একটা খাদের কিনারাতে এসে দাঁড়িয়েছিল। নারদা কেলেঙ্কারি প্রকাশিত হয়েছে। তৃণমূলের একাধিক নেতা-মন্ত্রীরা কিভাবে ঘুষ খাচ্ছেন, তার ছবি-ভিডিও গোটা ভারত দেখছে। গোটা বিশ্ব দেখছে।

বহু প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দিয়েও সেলিমের নেতৃত্বে বামপন্থীরা গত দুই-আড়াই বছরে যে পরিবেশ তৈরি করতে পেরেছেন পশ্চিমবঙ্গে, এমন পরিবেশ কিন্তু সাম্প্রতিক অতীতে খুব একটা দেখতে পাওয়া যায়নি। বৃহত্তর গণতান্ত্রিক পরিবেশ রচনার ক্ষেত্রে দলের দৃষ্টিভঙ্গিকে একমাত্র উপজীব্য হিসেবে তুলে ধরে লড়াইয়ের ময়দানকে এককেন্দ্রিক করে তোলাÑ এটা সেলিমের রাজনীতিতে কোনদিন নেই। বহুমাত্রিক সংস্কৃতির ধারকবাহক হলেন সেলিম। তাই তিনি তার এই রাজনৈতিক ঔদার্য নিজের সহযোদ্ধাদের মধ্যে যেভাবে সঞ্চারিত করতে পেরেছেন, এমনটাও কিন্তু গত প্রায় অনেক বছর, সেলিমের নেতৃত্বভার গ্রহণের আগে, বিজেপি বা তৃণমূলবিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্রে খুব একটা দেখতে পাওয়া যায়নি।

বহু প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও সেলিম যেভাবে তার কাজের ক্ষেত্রকে প্রসারিত করছেন, তা আমাদের সামনে সাম্প্রতিক অতীতের রাজনীতির বহু সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করার একটা স্পষ্ট ইঙ্গিত হিসেবে উঠে আসতে শুরু করেছে। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে আগে যখন বহু আলাপ-আলোচনা সত্ত্বেও আই এস এফের সঙ্গে কোনো রকম আসন সমঝোতা হলো না বামেদের, তখন বেশ কিছু লোক সমাজমাধ্যমে আইএসএফ নেতাদের উদ্দেশে নানা ধরনের ব্যক্তিগত স্তরের গালিগালাজ করতে শুরু করলেন। অথচ এই লোকগুলোই ২০২১ সালে বামফ্রন্ট, কংগ্রেস বা আইএসএফÑ একসঙ্গে নির্বাচনে লড়েও সেভাবে কোনো ইতিবাচক প্রভাব রাজনীতিতে ফেলতে পারলেন না দেখে আইএসএফের প্রতি সব ধরনের আক্রমণ শনাতে দ্বিধা করেননি। সবথেকে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো যেহেতু আইএসএফ নেতৃত্বের একটা বড় অংশ মুসলমান, তাদের রাজনৈতিক অবস্থানে ধর্মনিরপেক্ষতা থাকলেও, এই সংগঠনটিকে মৌলবাদী মুসলমানদের একটি সংগঠন বলে আখ্যায়িত করতেও তাদের দ্বিধা হলো না।

কিন্তু বিগত লোকসভা নির্বাচনের সময় আইএসএফের সঙ্গে আসন সমঝোতার তার প্রশ্নে সেলিম যথেষ্ট আশাবাদী ছিলেন। শেষপর্যন্ত সেই আশা পূরণ না হওয়া সত্ত্বেও একটিবারের জন্য কখনো অরাজনৈতিক, ব্যক্তির স্তরের আক্রমণ সেলিম তো আইএসএফের উদ্দেশ্যে করেনইনি এমনকি শীর্ষস্তরের বাম-কংগ্রেস নেতারাও যে আইএসএফকে ব্যক্তি আক্রমণের প্রশ্নে অত্যন্ত সুচারু রাজনৈতিক সৌজন্য দেখিয়েছেন তার পেছনেও একমাত্র কৃতিত্বের ভাগীদার হিসেবে আমরা সেলিমের অবদানের কথাই মনে রাখতে পারি।

[লেখক : ভারতীয় ইতিহাসবিদ]

মানুষের পর কারা হবে বিশ্বজয়ী

স্বাস্থ্য খাতে ফার্মাসিস্টদের অবদান

টেকসই রাষ্ট্রীয় সংস্কারে শিক্ষা ব্যবস্থার অব্যাহত বিনির্মাণের বিকল্প নাই

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সামাজিক অর্থায়নের ভূমিকা

বিশ্ব নরসুন্দর দিবস

মধু পূর্ণিমা ও প্রাসঙ্গিক কথা

‘মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়ন জলে ভাসি’

ছয়টি কমিশন গঠিত হলো কিন্তু শিক্ষা কোথায়?

বৃষ্টি হলেই নগরে জলাবদ্ধতা

‘মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়ন জলে ভাসি’

শিক্ষাব্যবস্থার বিনির্মাণে শিক্ষা প্রশাসনের পুনর্গঠন ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা

বন্যা পরবর্তী রোগবালাই

রম্যগদ্য : থামব কবে কাইজ্জা-ফ্যাসাদ

প্রসঙ্গ : জাতীয় সংগীত

পানির ব্যবহার, পানির রাজনীতি

রবীন্দ্র ভাবনায় কৃষি এবং আজকের প্রেক্ষাপট

শিক্ষা ব্যবস্থার বিনির্মাণে শিক্ষা প্রশাসনের পুনর্গঠন ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা

‘আবার তোরা মানুষ হ’

ভোজ্যতেল সংকট মেটাতে পাম চাষের গুরুত্ব

গোপনে ধারণকৃত ভিডিও ও ছবি দিয়ে প্রতারণা

হুন্ডি কেন বন্ধ করা যাচ্ছে না

আকস্মিক বন্যা প্রতিরোধ ও প্রস্তুতির কৌশল

পতিতাবৃত্তি কি অপরাধ?

বন্যা-পরবর্তী কৃষকের সুরক্ষা করণীয়

নদী সংস্কার : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

নিজের চরকায় তেল দেবার নাম দেশপ্রেম

রম্যগদ্য : ডাক্তারি যখন আইসিইউতে

ডায়াবেটিস ও মুখের স্বাস্থ্য

বাঙালির ইলিশচর্চা

এসডিজি অর্জনে চ্যালেঞ্জ হতে পারে কুষ্ঠ রোগ

প্রসঙ্গ : পরিসংখ্যানের তথ্য বিকৃতি

বোরো ধান বিষয়ে কিছু সতর্কতা এবং সার ব্যবস্থাপনা

বন্যার জন্য ভারত কতটুকু দায়ী

গ্রাফিতিতে আদিবাসীদের বঞ্চনার চিত্র

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা

পুলিশের সংস্কার হোক জনগণের কল্যাণে

tab

উপ-সম্পাদকীয়

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার ভবিষ্যৎ কী

গৌতম রায়

বুধবার, ২৪ জুলাই ২০২৪

ভোটের ময়দানে আইনসভার আসন জেতা বা না জেতার ওপরে কখনো কোনো মতাদর্শের অস্তিত্বের বিলুপ্তি ঘটতে পারে না। আজ পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ভোট রাজনীতির নিক্ষেপ বামপন্থীরা শূন্য বহু চেষ্টা চরিত্র নির্বাচনী রাজনীতিতে তাদের খরা কাটছে না। তাই বলে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বামপন্থী চিন্তাকে তোমার যে শিকড় মাটির একেবারে গভীরে প্রবেশ করেছে সেই শেকড়কে কি ধর্মান্ধ সম্প্রদায়িক শক্তি বিজেপি বা তাদের বিশ্বস্ত বন্ধু প্রতিযোগিতামূলক সম্প্রদায়িক শক্তি তৃণমূল উপড়ে ফেলতে পেরেছে।

মোহাম্মদ সেলিম যখন বছর আড়াই আগে রাজ্যের পশ্চিমবঙ্গ সিপিআই(এম) দলটির সম্পাদকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন, তখন প্রথমেই তিনি একটি শব্দ বাক্য সাধারণ মানুষের উদ্দেশে বলেছিলেন। সেটি হলো; যারা আমাদের ঘুম কেড়েছে, আমরা তাদের নিশ্চিন্তে ঘুমোতে দেব না।

লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বামপন্থীরা একটি আসন ও পায়নি। সেলিম নিজে পরাজিত হয়েছেন। তবু বলতে হয়, এই নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে সেলিম এবং তার দেখানো পথে, তার সহযোগীরা বিজয় পেয়েছেন।

কি সেই বিজয়?

সেই বিজয় হলো, আজ টিম সেলিম যেভাবে পশ্চিমবঙ্গের বুকে বিজেপি-আরএসএস এবং মমতার সাম্প্রদায়িক অভিসন্ধি আর জনসাধারণের শাসকবিরোধী মানসিকতা, যা সাধারণ মানুষই সামনে তুলে ধরেছেন, সেটা কিন্তু ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক শক্তি হোক আর প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িক শক্তি হোক, তাদের রাতের ঘুম কেটেছে।

আর যেভাবে টিম সেলিম পশ্চিমবঙ্গের বুকে একদিকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের ইলেক্টোরাল বন্ডকে ঘিরে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি আর পশ্চিমবঙ্গে মমতার দল এবং সরকারের মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত প্রত্যেকটি ব্যক্তির ক্ষেত্রে নিয়োগ থেকে শুরু করে সমস্ত ধরনের ক্ষেত্রে দুর্নীতিকে মানুষের সামনে তুলে ধরেছে, তাতে সাধারণ মানুষ এমনকি যারা তৃণমূলের সমর্থক কিন্তু সরাসরি সেই দলের কর্মী নন, কিন্তু তাদের ভোট দেন তাদের মধ্যেও তৃণমূল সম্বন্ধে এতটাই ঘৃণার মানসিকতা তৈরি করতে পেরেছে যে ঘৃণা কিন্তু আজ পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি আর তৃণমূলকে একযোগে রাতের ঘুম নষ্ট করে দিতে পেরেছে।

২০১১ সালে নানা জাতীয় আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির বলি হয়ে বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। বিরোধী শক্তি হিসেবে সিপিআই (এম), মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকালের প্রথম পর্যায়ে বলতে পারা যায়, খানিকটা ভ্যাবাচেকাই খেয়ে গিয়েছিল।

মমতা শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার অব্যহিত পরে লোকসভার যে নির্বাচন হয় ২০০৪ সালে, সেই নির্বাচনে, রায়গঞ্জ কেন্দ্র থেকে সেলিম জয় লাভ করেন। তাছাড়া মুর্শিদাবাদ কেন্দ্র থেকে সিপিআই (এম) প্রার্থী সেবার জিতেছিলেন। তখন এককক্ষমতায় ভারত পরিচালনা করছে বিজেপি। দোর্দ-প্রতাপ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি নিজেকে দেখাতে সব রকমভাবে চেষ্টা করছেন। ধর্মের নামে জাতপাতের নামে, ভাষার নামে, গোটা ভারতকে ছিন্ন ভিন্ন করে দেয়ার জন্য আদা জল খেয়ে নেমে পড়েছে গোটা হিন্দুত্ববাদী শিবির। আড়াল থেকে নানাভাবে তাদের মদত জুগিয়ে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস, তেলুগু দেশম, অসম গণপরিষদ, বিজু জনতা দলÑ ইত্যাদি ইত্যাদিরা।

এইরকম সময়ে পশ্চিমবঙ্গে অরাজকতার যে সূচনা পর্ব চিটফান্ড কেলেঙ্কারির জেরে, পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষ, গরিব-দুর্ব মানুষ, তাদের জীবন-জীবিকা একটা খাদের কিনারাতে এসে দাঁড়িয়েছিল। নারদা কেলেঙ্কারি প্রকাশিত হয়েছে। তৃণমূলের একাধিক নেতা-মন্ত্রীরা কিভাবে ঘুষ খাচ্ছেন, তার ছবি-ভিডিও গোটা ভারত দেখছে। গোটা বিশ্ব দেখছে।

বহু প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দিয়েও সেলিমের নেতৃত্বে বামপন্থীরা গত দুই-আড়াই বছরে যে পরিবেশ তৈরি করতে পেরেছেন পশ্চিমবঙ্গে, এমন পরিবেশ কিন্তু সাম্প্রতিক অতীতে খুব একটা দেখতে পাওয়া যায়নি। বৃহত্তর গণতান্ত্রিক পরিবেশ রচনার ক্ষেত্রে দলের দৃষ্টিভঙ্গিকে একমাত্র উপজীব্য হিসেবে তুলে ধরে লড়াইয়ের ময়দানকে এককেন্দ্রিক করে তোলাÑ এটা সেলিমের রাজনীতিতে কোনদিন নেই। বহুমাত্রিক সংস্কৃতির ধারকবাহক হলেন সেলিম। তাই তিনি তার এই রাজনৈতিক ঔদার্য নিজের সহযোদ্ধাদের মধ্যে যেভাবে সঞ্চারিত করতে পেরেছেন, এমনটাও কিন্তু গত প্রায় অনেক বছর, সেলিমের নেতৃত্বভার গ্রহণের আগে, বিজেপি বা তৃণমূলবিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্রে খুব একটা দেখতে পাওয়া যায়নি।

বহু প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও সেলিম যেভাবে তার কাজের ক্ষেত্রকে প্রসারিত করছেন, তা আমাদের সামনে সাম্প্রতিক অতীতের রাজনীতির বহু সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করার একটা স্পষ্ট ইঙ্গিত হিসেবে উঠে আসতে শুরু করেছে। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে আগে যখন বহু আলাপ-আলোচনা সত্ত্বেও আই এস এফের সঙ্গে কোনো রকম আসন সমঝোতা হলো না বামেদের, তখন বেশ কিছু লোক সমাজমাধ্যমে আইএসএফ নেতাদের উদ্দেশে নানা ধরনের ব্যক্তিগত স্তরের গালিগালাজ করতে শুরু করলেন। অথচ এই লোকগুলোই ২০২১ সালে বামফ্রন্ট, কংগ্রেস বা আইএসএফÑ একসঙ্গে নির্বাচনে লড়েও সেভাবে কোনো ইতিবাচক প্রভাব রাজনীতিতে ফেলতে পারলেন না দেখে আইএসএফের প্রতি সব ধরনের আক্রমণ শনাতে দ্বিধা করেননি। সবথেকে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো যেহেতু আইএসএফ নেতৃত্বের একটা বড় অংশ মুসলমান, তাদের রাজনৈতিক অবস্থানে ধর্মনিরপেক্ষতা থাকলেও, এই সংগঠনটিকে মৌলবাদী মুসলমানদের একটি সংগঠন বলে আখ্যায়িত করতেও তাদের দ্বিধা হলো না।

কিন্তু বিগত লোকসভা নির্বাচনের সময় আইএসএফের সঙ্গে আসন সমঝোতার তার প্রশ্নে সেলিম যথেষ্ট আশাবাদী ছিলেন। শেষপর্যন্ত সেই আশা পূরণ না হওয়া সত্ত্বেও একটিবারের জন্য কখনো অরাজনৈতিক, ব্যক্তির স্তরের আক্রমণ সেলিম তো আইএসএফের উদ্দেশ্যে করেনইনি এমনকি শীর্ষস্তরের বাম-কংগ্রেস নেতারাও যে আইএসএফকে ব্যক্তি আক্রমণের প্রশ্নে অত্যন্ত সুচারু রাজনৈতিক সৌজন্য দেখিয়েছেন তার পেছনেও একমাত্র কৃতিত্বের ভাগীদার হিসেবে আমরা সেলিমের অবদানের কথাই মনে রাখতে পারি।

[লেখক : ভারতীয় ইতিহাসবিদ]

back to top