সাজেদুল ইসলাম
দরিদ্রতা নিরসন, এই পৃথিবীকে সুরক্ষা করা এবং বিশে^র সবাই যাতে ২০৩০ সালের মধ্যে শান্তি ও সমৃদ্ধি উপভোগ করতে পারে সেজন্য জাতিসংঘের উদ্যোগে ২০১৫ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্য একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশও এসডিজি বাস্তবায়নে কাজ করছে, কিন্তু কুষ্ঠ ইস্যু সমাধান না করলে এসডিজি অর্জনে এটা প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ কমপক্ষে তিনটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে অবদান রাখেÑ এসডিজি-৩ (মানুষের জন্য সুস্বাস্থ্য এবং মঙ্গল, যার মধ্যে রয়েছে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা বা কাউকে পিছিয়ে না রাখা), এসডিজি-১০ (বৈষম্য হ্রাসকরণ) এবং এসডিজি-১৭ (লক্ষ্যের জন্য অংশীদারিত্ব)। এসডিজিতে ১৭টি আন্তঃসম্পর্কিত লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে যেখানে একটির কার্যক্রম অপরটির ওপর প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশ এখন এসডিজি অর্জনে কাজ করছে। আমরা যদি কুষ্ঠ নির্মূল করতে ব্যর্থ হই, তাহলে এই এসডিজি অর্জন করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে এখন প্রতি বছর গড়ে প্রায় তিন হাজার নতুন কুষ্ঠ রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এর অর্থ হলো এই রোগের সংক্রমণ আছে, তাই এটি প্রতিরোধ করা প্রয়োজন। কুষ্ঠ অন্যতম একটি জাতীয় স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও এর কারণে আক্রান্ত ব্যক্তিরা শারীরিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মানসিক সমস্যারও মুখোমুখি হন।
কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা প্রতিবন্ধকতা, কুষ্ঠরোগ সম্পর্কিত কুসংস্কার এবং এই রোগের জন্য উচ্চ ব্যয়ের কারণে তাদের জীবিকা হ্রাস এবং বেকারত্বের মুখোমুখী হন। কুষ্ঠ রোগীরা সামাজিক কুসংস্কারের সম্মুখীন হন, যা তাদের প্রতিবেশী এবং এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে তাদের রোগ লুকিয়ে রাখতে উদ্বুদ্ধ করে। ফলে তারা চিকিৎসা খরচ বহন করা এবং আয়মূলক কাজে সক্ষমতা হারানোর মতো পরিস্থিতির সম্মুখীন হন।
সময়মতো চিকিৎসা না করা হলে কুষ্ঠরোগ এ প্রায়শই হাত, পা, চোখ এবং মুখের প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতি কুষ্ঠ-সম্পর্র্কিত কুসংস্কারের সংমিশ্রণে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দৈনন্দিন কাজকর্ম এবং আয়মূলক কাজগুলো সম্পাদন করার শারীরকি ক্ষমতাকে সীমিত করে। অতএব, কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিগণ কর্মসংস্থান এর ক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হন এবং তাদের শিক্ষার সুযোগ হ্রাস পায়। এভাবে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য একটি বড় অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে কাজ করে।
আমাদের ২০৩০ সালের মধ্যে কুষ্ঠমুক্ত দেশ গড়ার একটি লক্ষ্য আছে এবং এটা বাস্তবায়নে দেশে ব্যাপক কুষ্ঠরোগ বিরোধী র্কমসূচি গ্রহণ করতে হবে। আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোতে কুষ্ঠ রোগের জটিলতার চিকিৎসা সেবার ঘাটতি রয়েছে। সরকারের উচিত হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা জোরদার করা যাতে এই ধরনের জটিলতার প্রয়োজনীয় সেবা সেখানে পাওয়া যায়।
এই রোগকে ঘিরে সমাজে এখনও কুসংস্কার প্রচলন রয়েছে, যা শুধুমাত্র এর চিকিৎসাই ব্যাহত করছে না, কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অধিকারও ব্যাহত করছে। তাই সারাদেশে কুষ্ঠ নিয়ে ব্যাপক সচেতনাতামূলক প্রচারণা চালানো উচিত। বাংলাদেশ জাতীয় কুষ্ঠ কৌশলে (২০২৩-২০৩০) একটি শক্তিশালী জাতীয় কুষ্ঠ কর্মসূচী, সমন্বিত কেস ব্যবস্থাপনা এবং সম্প্রদায়-ভিত্তিক অন্তর্ভুক্তমূলক বাস্তবায়নে এর ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। কুষ্ঠ বিরোধী কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমাদের বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে, যেমন প্রাথমিক অবস্থায় রোগী শনাক্তকরণ, কুষ্ঠ বিষয়ক সচেতনাতা তৈরি করা, কুষ্ঠ আক্রান্ত ব্যক্তিদের র্অথনৈতিক ক্ষমতায়ন, কুষ্ঠ ও এর জটিলতা ব্যবস্থাপনার সুবিধা নিশ্চিত করা এবং প্রতিবন্ধিতা প্িরতরোধ, কুসংস্কার দূর করা এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করা।
কুষ্ঠ নির্মূূল র্কমসূচি গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, কিন্তু এই বিষয়ে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে, যেমন কুষ্ঠ কর্মসূচিকে কম গুরুত্ব দেয়া, কর্মসূচির জন্য অর্থের ঘাটতি এবং কর্মীদের সংখ্যা হ্রাস পাবার কারণে নতুন কুষ্ঠ কেস শনাক্ত করার উদ্যোগের অভাব, সচেতনাতা বৃদ্ধিমূলক র্কাযক্রমের অভাব এবং র্কমচারী ও অন্যান্য সেবাপ্রদানকারীদের প্রশিক্ষণের সুযোগ কম থাকা। কুষ্ঠমুক্ত দেশ গঠনের জন্য অপারেশন প্ল্যান প্রণয়ন করা প্রয়োজন। তাই জাতীয় বাজেটে পর্যাপ্ত আর্থিক বরাদ্দ রাখা অপরিহার্য। যদি বাজেটে কুষ্ঠ বিষয়টির প্রতি যথাযথ মনোযোগ না দেওয়া হয়, তাহলে দেশে কুষ্ঠ সংক্রান্ত যাবতীয় দুর্ভোগ চলতেই থাকবে, যা কিনা মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ আমাদের জাতীয় উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
[লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক]
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
সাজেদুল ইসলাম
শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
দরিদ্রতা নিরসন, এই পৃথিবীকে সুরক্ষা করা এবং বিশে^র সবাই যাতে ২০৩০ সালের মধ্যে শান্তি ও সমৃদ্ধি উপভোগ করতে পারে সেজন্য জাতিসংঘের উদ্যোগে ২০১৫ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্য একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশও এসডিজি বাস্তবায়নে কাজ করছে, কিন্তু কুষ্ঠ ইস্যু সমাধান না করলে এসডিজি অর্জনে এটা প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ কমপক্ষে তিনটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে অবদান রাখেÑ এসডিজি-৩ (মানুষের জন্য সুস্বাস্থ্য এবং মঙ্গল, যার মধ্যে রয়েছে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা বা কাউকে পিছিয়ে না রাখা), এসডিজি-১০ (বৈষম্য হ্রাসকরণ) এবং এসডিজি-১৭ (লক্ষ্যের জন্য অংশীদারিত্ব)। এসডিজিতে ১৭টি আন্তঃসম্পর্কিত লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে যেখানে একটির কার্যক্রম অপরটির ওপর প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশ এখন এসডিজি অর্জনে কাজ করছে। আমরা যদি কুষ্ঠ নির্মূল করতে ব্যর্থ হই, তাহলে এই এসডিজি অর্জন করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে এখন প্রতি বছর গড়ে প্রায় তিন হাজার নতুন কুষ্ঠ রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এর অর্থ হলো এই রোগের সংক্রমণ আছে, তাই এটি প্রতিরোধ করা প্রয়োজন। কুষ্ঠ অন্যতম একটি জাতীয় স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও এর কারণে আক্রান্ত ব্যক্তিরা শারীরিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মানসিক সমস্যারও মুখোমুখি হন।
কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা প্রতিবন্ধকতা, কুষ্ঠরোগ সম্পর্কিত কুসংস্কার এবং এই রোগের জন্য উচ্চ ব্যয়ের কারণে তাদের জীবিকা হ্রাস এবং বেকারত্বের মুখোমুখী হন। কুষ্ঠ রোগীরা সামাজিক কুসংস্কারের সম্মুখীন হন, যা তাদের প্রতিবেশী এবং এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে তাদের রোগ লুকিয়ে রাখতে উদ্বুদ্ধ করে। ফলে তারা চিকিৎসা খরচ বহন করা এবং আয়মূলক কাজে সক্ষমতা হারানোর মতো পরিস্থিতির সম্মুখীন হন।
সময়মতো চিকিৎসা না করা হলে কুষ্ঠরোগ এ প্রায়শই হাত, পা, চোখ এবং মুখের প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতি কুষ্ঠ-সম্পর্র্কিত কুসংস্কারের সংমিশ্রণে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দৈনন্দিন কাজকর্ম এবং আয়মূলক কাজগুলো সম্পাদন করার শারীরকি ক্ষমতাকে সীমিত করে। অতএব, কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিগণ কর্মসংস্থান এর ক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হন এবং তাদের শিক্ষার সুযোগ হ্রাস পায়। এভাবে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য একটি বড় অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে কাজ করে।
আমাদের ২০৩০ সালের মধ্যে কুষ্ঠমুক্ত দেশ গড়ার একটি লক্ষ্য আছে এবং এটা বাস্তবায়নে দেশে ব্যাপক কুষ্ঠরোগ বিরোধী র্কমসূচি গ্রহণ করতে হবে। আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোতে কুষ্ঠ রোগের জটিলতার চিকিৎসা সেবার ঘাটতি রয়েছে। সরকারের উচিত হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা জোরদার করা যাতে এই ধরনের জটিলতার প্রয়োজনীয় সেবা সেখানে পাওয়া যায়।
এই রোগকে ঘিরে সমাজে এখনও কুসংস্কার প্রচলন রয়েছে, যা শুধুমাত্র এর চিকিৎসাই ব্যাহত করছে না, কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অধিকারও ব্যাহত করছে। তাই সারাদেশে কুষ্ঠ নিয়ে ব্যাপক সচেতনাতামূলক প্রচারণা চালানো উচিত। বাংলাদেশ জাতীয় কুষ্ঠ কৌশলে (২০২৩-২০৩০) একটি শক্তিশালী জাতীয় কুষ্ঠ কর্মসূচী, সমন্বিত কেস ব্যবস্থাপনা এবং সম্প্রদায়-ভিত্তিক অন্তর্ভুক্তমূলক বাস্তবায়নে এর ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। কুষ্ঠ বিরোধী কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমাদের বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে, যেমন প্রাথমিক অবস্থায় রোগী শনাক্তকরণ, কুষ্ঠ বিষয়ক সচেতনাতা তৈরি করা, কুষ্ঠ আক্রান্ত ব্যক্তিদের র্অথনৈতিক ক্ষমতায়ন, কুষ্ঠ ও এর জটিলতা ব্যবস্থাপনার সুবিধা নিশ্চিত করা এবং প্রতিবন্ধিতা প্িরতরোধ, কুসংস্কার দূর করা এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করা।
কুষ্ঠ নির্মূূল র্কমসূচি গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, কিন্তু এই বিষয়ে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে, যেমন কুষ্ঠ কর্মসূচিকে কম গুরুত্ব দেয়া, কর্মসূচির জন্য অর্থের ঘাটতি এবং কর্মীদের সংখ্যা হ্রাস পাবার কারণে নতুন কুষ্ঠ কেস শনাক্ত করার উদ্যোগের অভাব, সচেতনাতা বৃদ্ধিমূলক র্কাযক্রমের অভাব এবং র্কমচারী ও অন্যান্য সেবাপ্রদানকারীদের প্রশিক্ষণের সুযোগ কম থাকা। কুষ্ঠমুক্ত দেশ গঠনের জন্য অপারেশন প্ল্যান প্রণয়ন করা প্রয়োজন। তাই জাতীয় বাজেটে পর্যাপ্ত আর্থিক বরাদ্দ রাখা অপরিহার্য। যদি বাজেটে কুষ্ঠ বিষয়টির প্রতি যথাযথ মনোযোগ না দেওয়া হয়, তাহলে দেশে কুষ্ঠ সংক্রান্ত যাবতীয় দুর্ভোগ চলতেই থাকবে, যা কিনা মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ আমাদের জাতীয় উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
[লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক]