মাহরুফ চৌধুরী
জ্ঞানভিত্তিক সমাজব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমেই নানামুখী বৈষম্য ও স্বৈরাচারী আচার-আচরণ থেকে জাতিকে মুক্তির ব্যবস্থা করার মধ্যে দিয়েই আমাদের বর্তমানে চলমান রাষ্ট্রসংস্কার প্রক্রিয়াকে বেগবান করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে, আমরা যদি শিক্ষাকে জাতির মেরুদ- হিসেবে বিবেচনা করি, তবে সেই মেরুদ-কে সোজা না করে, অন্যক্ষেত্রগুলোকে আমরা যতই প্রাধান্য দেই না কেন, আমাদের সব আয়োজন ব্যর্থ হবে। শিক্ষা নামক জাতির এই মেরুদ-কে সুদৃঢ়, সংহত এবং স্থিতিশীল করতে হলে শিক্ষাসংস্কারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সেজন্যেই আগের একটি লেখায় আমরা শিক্ষা প্রশাসনের পুনর্গঠন ও বিকেন্দ্রিকরণ অপরিহার্যতা নিয়ে আলোচনা করেছি। এ লেখায় সেসবের পুনরাবৃত্তি না করে, শিক্ষা নিয়ে সরকারের গতানুগতিক চিন্তাভাবনাপ্রসূত কয়েকটি সিদ্ধান্তের বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করব। আরও আমরা বলার চেষ্টা করব, শিক্ষার মাধ্যমে আমরা কেন এবং কীভাবে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে আমাদের সক্রিয় হওয়া উচিত যা দেশের সার্বিক উন্নয়ন এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনকে আরও বেগবান করবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তথা দেশের বর্তমান রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারকরা রাষ্ট্রসংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নানা সিদ্ধান্ত গ্রহণে অন্যান্য খাতের পাশাপাশি শিক্ষা খাতকে প্রয়োজনীয় গুরুত্ব দিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সংস্কার প্রক্রিয়াকে গতিশীল ও টেকসই করার জন্যে শিক্ষা হলো প্রধান নিয়ামক এবং ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ খাত। মনে রাখতে হবে যে, শিক্ষাই মূলত আমাদের রাষ্ট্রীয় জাতীয়তার দর্শন, রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ও আদর্শের ভিত্তিতে ‘বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্য’ সৃষ্টির মূলসূত্র হিসেবে কাজ করবে। একটি সুশিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সাধিত হতে পারেÑ এটি যেমন সবার জানা কথা, তেমনি বাস্তবে শিক্ষার বিকাশে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে দূরদর্শিতার অভাব আমাদের সামনে প্রতিনিয়ত স্পষ্ট হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগুলোতে যা ঘটেছে তা ছাত্র-জনতার ‘বৈষম্যহীন ও স্বৈরাচারমুক্ত’ রাষ্ট্রের আকাক্সক্ষা পরিপূরণের সহায়ক হবে বলে মনে হয় না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর অপেক্ষায় ছিলাম, দুটো মন্ত্রণালয়কে এক করে একজন নতুন শিক্ষা উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হবে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে সম্মিলিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা তথা আমাদের শিক্ষা উপদেষ্টা হবেন এমন একজন প্রাজ্ঞ মানুষ যিনি শিক্ষা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, তার পেশাগত জীবনে একটা উল্লেখযোগ্য অংশ শিক্ষাব্যবস্থায় কিংবা শিক্ষাব্যবস্থার নানা দিক নিয়ে কাজ করেছেন এবং শিক্ষা নিয়ে তার বিশেষ গবেষণা বা প্রকাশনা আছে। একই সঙ্গে তিনি হবেন দেশের বেশির ভাগ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য কোন বিশিষ্টজন এবং যিনি শিক্ষার আদর্শিক ও প্রায়োগিক দিকগুলো সম্পর্কে গভীরভাবে অবগত আছেন। এটা বোঝা জরুরি যে, শিক্ষক হিসেবে কাজ করলেই শিক্ষাবিদ হওয়া যায় না। কিন্তু বাস্তবে দেখেছি, গুরুত্বপূর্ণ এই খাতের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এমন ব্যক্তিদের, যারা তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে অত্যন্ত সফল হলেও, শিক্ষার মৌলিক ও মাল্টিডিসিপ্লিনারি বিষয়গুলো নিয়ে তাদের পেশাগত জীবনে কাজ করেননি। আমাদের বর্তমান শিক্ষাবিষয়ক দুজন উপদেষ্টার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে দিকপাল, তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু কেউ প্রশ্ন তোলেনি যে কেন দুটো মন্ত্রণালয়কে এখনো পৃথক রাখা হলো এবং কেন শিক্ষাবিশেষজ্ঞদের থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হয়নি। মূলত সরকারের নীতিনির্ধারকরা প্রথাগত চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে না আসাতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রত্যাশিত পরিবর্তন আসেনি। শিক্ষা খাতের নানা দিকের টেকসই পরিবর্তনের জন্য একজন দক্ষ শিক্ষাবিদকে শিক্ষা উপদেষ্টা করে শিক্ষা সংস্কারের দায়িত্ব দেয়া উচিত ছিল। কেবল একজন দক্ষ শিক্ষাবিদের নেতৃত্বে অন্যান্য শিক্ষাবিশেষজ্ঞ ও অংশীজনের অংশগ্রহণের মাধ্যমেই আমরা ত্রিশঙ্কু অবস্থায় পতিত শিক্ষা খাতকে উদ্ধার করতে পারি। আর এ পথেই রাষ্ট্রসংস্কার প্রক্রিয়ার অনিবার্য মাধ্যম হিসেবে শিক্ষা খাতে একটি দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভব, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অব্যাহত উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিক, জীবনমুখী ও যুগোপযোগী করে তুলবে। শিক্ষাবিজ্ঞান একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি বিষয়। এ কারণে বিশ্বের অনেক দেশেই শিক্ষাবিজ্ঞানকে এডুকেশন স্টাডিজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। শিক্ষার মতো একই সঙ্গে তাত্ত্বিক ও ফলিত একটি বিষয় সম্পর্কে ব্যাপক ও গভীর পড়াশোনা, গবেষণা এবং মাঠপর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতা না থাকলে শিক্ষাব্যবস্থার নানা দিক ও বিষয় সম্পর্কে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব নয়। শিক্ষাবিজ্ঞানকে আমাদের জটিল ও বহুমাত্রিক সামাজিক প্রপঞ্চের ধারক ও বাহক হিসেবে শিক্ষাব্যবস্থার নানা খুঁটিনাটিসহ শিক্ষার প্রাণশক্তি শিক্ষকদের পেশাগত এবং শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন ও আগ্রহ অনুযায়ী শিক্ষাগ্রহণে নানা সমস্যা ও শেখার অভিযাত্রায় তাদের অগ্রগতি অর্জনের নানা দিক নিয়ে কাজ করতে হয়। শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে শিক্ষাবিজ্ঞানের বহুবর্ণীল ও বহুমাত্রিক ধরণ এবং ধারার জ্ঞানের ও মুক্তচিন্তার আবশ্যকতাকে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। কেবল একজন শিক্ষক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকলেই একজন ব্যক্তি শিক্ষাবিদ হয়ে যান না। শিক্ষাবিদ হওয়ার জন্য প্রয়োজন শিক্ষাবিজ্ঞানের মৌলিক অধীত জ্ঞানের পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতা, বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে শিক্ষা নিয়ে গবেষণা, বিভিন্ন শিক্ষাপদ্ধতি নিয়ে কাজ করা এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা। এছাড়া একজন আধুনিক শিক্ষাবিদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শিক্ষার উন্নত মডেলগুলো নিয়ে গবেষণা এবং সেগুলোকে দেশীয় প্রেক্ষাপটে অভিযোজন করার সক্ষমতা থাকতে হবে। একথাটা ভুললে চলবে না যে শিক্ষা জাতি গঠনের মৌলিক হাতিয়ার। সরকারের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের কথা উঠলেও শিক্ষাকে সে প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা ও ব্যবহার করার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি এখন পর্যন্ত। শিক্ষা খাতে বিগত সরকারগুলোর দলীয় ও রাজনৈতিক স্বার্থে নেয়া সিদ্ধান্তগুলো যাচাই-বাছাই করার সময় এসেছে। ছাত্র-জনতার প্রত্যাশা ছিল গণঅভ্যুত্থান-উত্তর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চলমান কাঠামোকে পুনর্বিন্যস্ত করে ‘বৈষম্যহীন ও স্বৈরাচারমুক্ত’ রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কাঠামো পুনর্গঠনের প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা খাতকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, শিক্ষাসংস্কারের ক্ষেত্রে সরকারের নীতিনির্ধারকরা প্রথাগত চিন্তাধারার গ-ি থেকে বের হতে পারেননি। শিক্ষা কেবল পাঠদান কিংবা পরীক্ষা গ্রহণের বিষয় নয়, বরং শিক্ষা একটি জাতির ভবিষ্যৎ তৈরি করার প্রক্রিয়া। জাতি গঠনের রাষ্ট্রীয় মূলনীতি ‘বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্য’ গড়ে তোলার যে মূলসূত্র শিক্ষা হতে পারে, তা আমাদের নীতিনির্ধারকরা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। শিক্ষাব্যবস্থা জাতির চেতনার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ, যা আমাদের রাষ্ট্রীয় উদ্দেশ্য ও আদর্শের প্রতিফলন ঘটিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তুলবে রাষ্ট্রের আদর্শ নাগরিক হিসেবে। শিক্ষা খাতের প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদাসীনতার পরিণতি কী হবে সেটা এখনই ভাবা উচিত। শিক্ষার প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই উদাসীনতা চলতে থাকলে পরবর্তী প্রজন্মকে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে অসুবিধায় পড়তে হবে। বহু বাধা-বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য প্রস্তুতি নিতে প্রয়োজন একটি বিজ্ঞানভিত্তিক ও মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা, যা শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত করবে। শুধু শ্রেণীকক্ষে পাঠদান ও পরীক্ষা গ্রহণ নয় বরং শিক্ষার্থীদের মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জন্য একটি সম্পূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করা প্রয়োজন। অথচ আমরা এমন একটি সময়ে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে আমাদের শিক্ষার সংস্কার ও উন্নয়ন নিয়ে উল্লেখযোগ্য দৃঢ় কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। লক্ষণীয় যে, ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেয়ার মতোই শিক্ষার জন্য একটি স্থায়ী কমিশন গঠন না করে, শিক্ষাক্রম সংশোধনের জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়। সে কমিটিতে আমরা দেখতে পাইনি দেশে শিক্ষা নিয়ে পড়াশোনা করা, শিক্ষাবিজ্ঞানে পাঠদানে অভিজ্ঞ কোন ব্যক্তিকে। যাই হোক পরবর্তীতে সে কমিটি বাতিল করা হয়েছে। শিক্ষা খাতে এই উদাসীনতা শুধু শিক্ষার্থীদেরই ক্ষতি করছে না বরং এটি পুরো জাতির অগ্রগতি এবং ভবিষ্যতকেও প্রভাবিত করছে। তাই এখনই সময় শিক্ষা খাতকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার এবং বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে জাতীয় পর্যায়ে নীতিনির্ধারণের উদ্যোগ গ্রহণ করার। প্রয়োজন প্রথমে একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন করা, তারপর সে কমিশনের তত্ত্বাবধানে নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা ও নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন কমিটি গঠন করা। নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন কমিটি চলমান শিক্ষাক্রমের পরিমার্জন ও পরিবর্তনের কাজটি এগিয়ে নেবে যাতে পূর্বের শিক্ষাক্রমগুলোর ভালো-মন্দ ও সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নে তারা জাতীয় আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফল ঘটাতে পারেন। সরকারের নীতিনির্ধারকদের প্রথাগত চিন্তাধারার গ-ি থেকে বেরিয়ে এসে রাষ্ট্রসংস্কার ও জাতি গঠনের কথা ভাবতে হবে। তাদের সে ভাবনায় শিক্ষা হবে টেকসই রাষ্ট্রসংস্কার ও জাতি গঠনের মৌলিক হাতিয়া। আধুনিক শিক্ষা শুধু শ্রেণীকক্ষে শিক্ষা দান ও পরীক্ষা গ্রহণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। শিক্ষা জাতীয় উন্নয়ন প্রক্রিয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সমযোতা ও সহযোগিতার মাধ্যমে জ্ঞানীয় অর্থনীতির প্রাধান্যের এ যুগে টিকে থাকার প্রধান মাধ্যম। একটি উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা জাতিকে অব্যাহত শিক্ষা-গবেষণা, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং বিশ্বমানে শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে নিজের অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে সহায়তা করে। রাষ্ট্রসংস্কারের পাশাপাশি একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন স্তরে সঠিক ব্যক্তিদের নিয়োগ, প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার পুনর্বিন্যাস, এবং শিক্ষার উন্নয়নে ধারাবাহিক ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করবে। আশা করছি প্রথাগত চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে এসে সরকার শিক্ষাসংস্কারকে অগ্রাধিকার দিয়ে দ্রুত বাস্তবসম্মত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
[লেখক : ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব রোহ্যাম্পটন, যুক্তরাজ্য]
মাহরুফ চৌধুরী
শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪
জ্ঞানভিত্তিক সমাজব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমেই নানামুখী বৈষম্য ও স্বৈরাচারী আচার-আচরণ থেকে জাতিকে মুক্তির ব্যবস্থা করার মধ্যে দিয়েই আমাদের বর্তমানে চলমান রাষ্ট্রসংস্কার প্রক্রিয়াকে বেগবান করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে, আমরা যদি শিক্ষাকে জাতির মেরুদ- হিসেবে বিবেচনা করি, তবে সেই মেরুদ-কে সোজা না করে, অন্যক্ষেত্রগুলোকে আমরা যতই প্রাধান্য দেই না কেন, আমাদের সব আয়োজন ব্যর্থ হবে। শিক্ষা নামক জাতির এই মেরুদ-কে সুদৃঢ়, সংহত এবং স্থিতিশীল করতে হলে শিক্ষাসংস্কারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সেজন্যেই আগের একটি লেখায় আমরা শিক্ষা প্রশাসনের পুনর্গঠন ও বিকেন্দ্রিকরণ অপরিহার্যতা নিয়ে আলোচনা করেছি। এ লেখায় সেসবের পুনরাবৃত্তি না করে, শিক্ষা নিয়ে সরকারের গতানুগতিক চিন্তাভাবনাপ্রসূত কয়েকটি সিদ্ধান্তের বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করব। আরও আমরা বলার চেষ্টা করব, শিক্ষার মাধ্যমে আমরা কেন এবং কীভাবে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে আমাদের সক্রিয় হওয়া উচিত যা দেশের সার্বিক উন্নয়ন এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনকে আরও বেগবান করবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তথা দেশের বর্তমান রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারকরা রাষ্ট্রসংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নানা সিদ্ধান্ত গ্রহণে অন্যান্য খাতের পাশাপাশি শিক্ষা খাতকে প্রয়োজনীয় গুরুত্ব দিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সংস্কার প্রক্রিয়াকে গতিশীল ও টেকসই করার জন্যে শিক্ষা হলো প্রধান নিয়ামক এবং ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ খাত। মনে রাখতে হবে যে, শিক্ষাই মূলত আমাদের রাষ্ট্রীয় জাতীয়তার দর্শন, রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ও আদর্শের ভিত্তিতে ‘বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্য’ সৃষ্টির মূলসূত্র হিসেবে কাজ করবে। একটি সুশিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সাধিত হতে পারেÑ এটি যেমন সবার জানা কথা, তেমনি বাস্তবে শিক্ষার বিকাশে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে দূরদর্শিতার অভাব আমাদের সামনে প্রতিনিয়ত স্পষ্ট হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগুলোতে যা ঘটেছে তা ছাত্র-জনতার ‘বৈষম্যহীন ও স্বৈরাচারমুক্ত’ রাষ্ট্রের আকাক্সক্ষা পরিপূরণের সহায়ক হবে বলে মনে হয় না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর অপেক্ষায় ছিলাম, দুটো মন্ত্রণালয়কে এক করে একজন নতুন শিক্ষা উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হবে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে সম্মিলিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা তথা আমাদের শিক্ষা উপদেষ্টা হবেন এমন একজন প্রাজ্ঞ মানুষ যিনি শিক্ষা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, তার পেশাগত জীবনে একটা উল্লেখযোগ্য অংশ শিক্ষাব্যবস্থায় কিংবা শিক্ষাব্যবস্থার নানা দিক নিয়ে কাজ করেছেন এবং শিক্ষা নিয়ে তার বিশেষ গবেষণা বা প্রকাশনা আছে। একই সঙ্গে তিনি হবেন দেশের বেশির ভাগ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য কোন বিশিষ্টজন এবং যিনি শিক্ষার আদর্শিক ও প্রায়োগিক দিকগুলো সম্পর্কে গভীরভাবে অবগত আছেন। এটা বোঝা জরুরি যে, শিক্ষক হিসেবে কাজ করলেই শিক্ষাবিদ হওয়া যায় না। কিন্তু বাস্তবে দেখেছি, গুরুত্বপূর্ণ এই খাতের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এমন ব্যক্তিদের, যারা তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে অত্যন্ত সফল হলেও, শিক্ষার মৌলিক ও মাল্টিডিসিপ্লিনারি বিষয়গুলো নিয়ে তাদের পেশাগত জীবনে কাজ করেননি। আমাদের বর্তমান শিক্ষাবিষয়ক দুজন উপদেষ্টার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে দিকপাল, তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু কেউ প্রশ্ন তোলেনি যে কেন দুটো মন্ত্রণালয়কে এখনো পৃথক রাখা হলো এবং কেন শিক্ষাবিশেষজ্ঞদের থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হয়নি। মূলত সরকারের নীতিনির্ধারকরা প্রথাগত চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে না আসাতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রত্যাশিত পরিবর্তন আসেনি। শিক্ষা খাতের নানা দিকের টেকসই পরিবর্তনের জন্য একজন দক্ষ শিক্ষাবিদকে শিক্ষা উপদেষ্টা করে শিক্ষা সংস্কারের দায়িত্ব দেয়া উচিত ছিল। কেবল একজন দক্ষ শিক্ষাবিদের নেতৃত্বে অন্যান্য শিক্ষাবিশেষজ্ঞ ও অংশীজনের অংশগ্রহণের মাধ্যমেই আমরা ত্রিশঙ্কু অবস্থায় পতিত শিক্ষা খাতকে উদ্ধার করতে পারি। আর এ পথেই রাষ্ট্রসংস্কার প্রক্রিয়ার অনিবার্য মাধ্যম হিসেবে শিক্ষা খাতে একটি দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভব, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অব্যাহত উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিক, জীবনমুখী ও যুগোপযোগী করে তুলবে। শিক্ষাবিজ্ঞান একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি বিষয়। এ কারণে বিশ্বের অনেক দেশেই শিক্ষাবিজ্ঞানকে এডুকেশন স্টাডিজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। শিক্ষার মতো একই সঙ্গে তাত্ত্বিক ও ফলিত একটি বিষয় সম্পর্কে ব্যাপক ও গভীর পড়াশোনা, গবেষণা এবং মাঠপর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতা না থাকলে শিক্ষাব্যবস্থার নানা দিক ও বিষয় সম্পর্কে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব নয়। শিক্ষাবিজ্ঞানকে আমাদের জটিল ও বহুমাত্রিক সামাজিক প্রপঞ্চের ধারক ও বাহক হিসেবে শিক্ষাব্যবস্থার নানা খুঁটিনাটিসহ শিক্ষার প্রাণশক্তি শিক্ষকদের পেশাগত এবং শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন ও আগ্রহ অনুযায়ী শিক্ষাগ্রহণে নানা সমস্যা ও শেখার অভিযাত্রায় তাদের অগ্রগতি অর্জনের নানা দিক নিয়ে কাজ করতে হয়। শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে শিক্ষাবিজ্ঞানের বহুবর্ণীল ও বহুমাত্রিক ধরণ এবং ধারার জ্ঞানের ও মুক্তচিন্তার আবশ্যকতাকে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। কেবল একজন শিক্ষক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকলেই একজন ব্যক্তি শিক্ষাবিদ হয়ে যান না। শিক্ষাবিদ হওয়ার জন্য প্রয়োজন শিক্ষাবিজ্ঞানের মৌলিক অধীত জ্ঞানের পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতা, বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে শিক্ষা নিয়ে গবেষণা, বিভিন্ন শিক্ষাপদ্ধতি নিয়ে কাজ করা এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা। এছাড়া একজন আধুনিক শিক্ষাবিদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শিক্ষার উন্নত মডেলগুলো নিয়ে গবেষণা এবং সেগুলোকে দেশীয় প্রেক্ষাপটে অভিযোজন করার সক্ষমতা থাকতে হবে। একথাটা ভুললে চলবে না যে শিক্ষা জাতি গঠনের মৌলিক হাতিয়ার। সরকারের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের কথা উঠলেও শিক্ষাকে সে প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা ও ব্যবহার করার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি এখন পর্যন্ত। শিক্ষা খাতে বিগত সরকারগুলোর দলীয় ও রাজনৈতিক স্বার্থে নেয়া সিদ্ধান্তগুলো যাচাই-বাছাই করার সময় এসেছে। ছাত্র-জনতার প্রত্যাশা ছিল গণঅভ্যুত্থান-উত্তর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চলমান কাঠামোকে পুনর্বিন্যস্ত করে ‘বৈষম্যহীন ও স্বৈরাচারমুক্ত’ রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কাঠামো পুনর্গঠনের প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা খাতকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, শিক্ষাসংস্কারের ক্ষেত্রে সরকারের নীতিনির্ধারকরা প্রথাগত চিন্তাধারার গ-ি থেকে বের হতে পারেননি। শিক্ষা কেবল পাঠদান কিংবা পরীক্ষা গ্রহণের বিষয় নয়, বরং শিক্ষা একটি জাতির ভবিষ্যৎ তৈরি করার প্রক্রিয়া। জাতি গঠনের রাষ্ট্রীয় মূলনীতি ‘বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্য’ গড়ে তোলার যে মূলসূত্র শিক্ষা হতে পারে, তা আমাদের নীতিনির্ধারকরা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। শিক্ষাব্যবস্থা জাতির চেতনার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ, যা আমাদের রাষ্ট্রীয় উদ্দেশ্য ও আদর্শের প্রতিফলন ঘটিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তুলবে রাষ্ট্রের আদর্শ নাগরিক হিসেবে। শিক্ষা খাতের প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদাসীনতার পরিণতি কী হবে সেটা এখনই ভাবা উচিত। শিক্ষার প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই উদাসীনতা চলতে থাকলে পরবর্তী প্রজন্মকে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে অসুবিধায় পড়তে হবে। বহু বাধা-বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য প্রস্তুতি নিতে প্রয়োজন একটি বিজ্ঞানভিত্তিক ও মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা, যা শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত করবে। শুধু শ্রেণীকক্ষে পাঠদান ও পরীক্ষা গ্রহণ নয় বরং শিক্ষার্থীদের মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জন্য একটি সম্পূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করা প্রয়োজন। অথচ আমরা এমন একটি সময়ে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে আমাদের শিক্ষার সংস্কার ও উন্নয়ন নিয়ে উল্লেখযোগ্য দৃঢ় কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। লক্ষণীয় যে, ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেয়ার মতোই শিক্ষার জন্য একটি স্থায়ী কমিশন গঠন না করে, শিক্ষাক্রম সংশোধনের জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়। সে কমিটিতে আমরা দেখতে পাইনি দেশে শিক্ষা নিয়ে পড়াশোনা করা, শিক্ষাবিজ্ঞানে পাঠদানে অভিজ্ঞ কোন ব্যক্তিকে। যাই হোক পরবর্তীতে সে কমিটি বাতিল করা হয়েছে। শিক্ষা খাতে এই উদাসীনতা শুধু শিক্ষার্থীদেরই ক্ষতি করছে না বরং এটি পুরো জাতির অগ্রগতি এবং ভবিষ্যতকেও প্রভাবিত করছে। তাই এখনই সময় শিক্ষা খাতকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার এবং বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে জাতীয় পর্যায়ে নীতিনির্ধারণের উদ্যোগ গ্রহণ করার। প্রয়োজন প্রথমে একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন করা, তারপর সে কমিশনের তত্ত্বাবধানে নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা ও নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন কমিটি গঠন করা। নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন কমিটি চলমান শিক্ষাক্রমের পরিমার্জন ও পরিবর্তনের কাজটি এগিয়ে নেবে যাতে পূর্বের শিক্ষাক্রমগুলোর ভালো-মন্দ ও সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নে তারা জাতীয় আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফল ঘটাতে পারেন। সরকারের নীতিনির্ধারকদের প্রথাগত চিন্তাধারার গ-ি থেকে বেরিয়ে এসে রাষ্ট্রসংস্কার ও জাতি গঠনের কথা ভাবতে হবে। তাদের সে ভাবনায় শিক্ষা হবে টেকসই রাষ্ট্রসংস্কার ও জাতি গঠনের মৌলিক হাতিয়া। আধুনিক শিক্ষা শুধু শ্রেণীকক্ষে শিক্ষা দান ও পরীক্ষা গ্রহণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। শিক্ষা জাতীয় উন্নয়ন প্রক্রিয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সমযোতা ও সহযোগিতার মাধ্যমে জ্ঞানীয় অর্থনীতির প্রাধান্যের এ যুগে টিকে থাকার প্রধান মাধ্যম। একটি উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা জাতিকে অব্যাহত শিক্ষা-গবেষণা, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং বিশ্বমানে শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে নিজের অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে সহায়তা করে। রাষ্ট্রসংস্কারের পাশাপাশি একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন স্তরে সঠিক ব্যক্তিদের নিয়োগ, প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার পুনর্বিন্যাস, এবং শিক্ষার উন্নয়নে ধারাবাহিক ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করবে। আশা করছি প্রথাগত চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে এসে সরকার শিক্ষাসংস্কারকে অগ্রাধিকার দিয়ে দ্রুত বাস্তবসম্মত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
[লেখক : ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব রোহ্যাম্পটন, যুক্তরাজ্য]