alt

উপ-সম্পাদকীয়

একতার অভাবে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

রহমান মৃধা

: সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪

সরকার পরিবর্তনের সময় আমরা ভুলে গেছি যে, দেশের উন্নয়ন বা সংস্কার একক কোন রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব নয়; এটি সমগ্র জাতির দায়িত্ব। আওয়ামী লীগ সরকার তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে দেশ পরিচালনা করেছে, কিন্তু অন্য রাজনৈতিক দলগুলো কী করছে? তাদের ভূমিকা কি শুধু ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য, নাকি সংস্কারের বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণে তারা আগ্রহী? বিএনপির মতো দলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা উচিতÑ তারা কি শুধুমাত্র ক্ষমতায় ফেরার জন্য কাজ করছে, নাকি বাস্তবিক কোনো সংস্কারের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ?

দেশে পেঁয়াজ ও ডিমের মতো সাধারণ পণ্যের অপ্রত্যাশিত সংকট পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার একটি প্রমাণ। বাংলাদেশে যেখানে প্রাকৃতিকভাবে ফসল ফলানো সম্ভব, সেখানে এ ধরনের সংকট শুধুমাত্র দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার ফল। দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করলে উন্নয়ন বা সংকট থেকে উত্তরণের পথ খোলা থাকবে না।

বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান সংকটগুলোÑ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি জাতির ভবিষ্যতকে অনিশ্চিত করে তুলছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস ও সংঘাত গণতন্ত্রের ভিত্তিকে দুর্বল করছে। জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতা ও উত্তেজনা নিয়ে উদ্বিগ্ন, বিশেষত ২০২৪ সালের শেষদিকে সহিংসতায় বহু প্রাণহানির কারণে। এই অবস্থায় দেশটি ক্রমশ একনায়কতন্ত্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন।

অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনও দেশের জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে দেশের অর্থনীতি ও কৃষি খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যদিও বৈশ্বিক নিঃসরণে বাংলাদেশের অবদান সামান্য, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেশটির ওপর ব্যাপকভাবে পড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে দেশের অভ্যন্তরীণ সংকট ও রাজনৈতিক বিভাজন সংস্কার প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করছে। আন্তর্জাতিক মহলও আশঙ্কা করছে, সংকট সমাধান না হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবিলায় দেশটি অক্ষম হবে।

বাংলাদেশে দুর্নীতি একটি পুরনো ও গভীর সমস্যা, যা অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের পথে বড় বাধা। হুন্ডি ব্যবসার মাধ্যমে অর্থ পাচার এবং সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতি দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করছে। দুর্নীতি রোধ ও অর্থ পাচার ঠেকানোর জন্য সরকারের শক্তিশালী পদক্ষেপ প্রয়োজন, তবে প্রশাসন ও সশস্ত্র বাহিনীর প্যাসিভ ভূমিকা এবং কূটনীতিকদের নিষ্ক্রিয়তা এই প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে।

দুর্নীতির ধরনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেÑ

১. হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার : অবৈধ অর্থ লেনদেনের এই পদ্ধতি প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে এড়িয়ে অর্থ পাচারের একটি বড় মাধ্যম। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কমে যাচ্ছে।

২. সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতি : বড় প্রকল্পে তহবিলের অপব্যবহার ও ঘুষ নেওয়ার ঘটনা প্রায়শই ঘটে, যা অর্থ পাচারের পথ খুলে দেয়।

৩. প্রশাসনের প্যাসিভ ভূমিকা : প্রশাসন দুর্নীতি রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, কিন্তু তাদের প্যাসিভ বা নিস্ক্রিয় ভূমিকা সমস্যাকে আরও ঘনীভূত করছে। প্রশাসন প্রায়ই দুর্নীতির তদন্তে সঠিক উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অংশ দুর্নীতিতে জড়িত থাকার কারণে এ সমস্যার সমাধান বিলম্বিত হচ্ছে।

৪. কূটনৈতিকদের নিষ্ক্রিয়তা : কূটনীতিকরা দেশের স্বার্থ রক্ষা এবং পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন, কিন্তু তাদের কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রতা ও নিষ্ক্রিয়তা অর্থ ফেরত আনার প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করছে।

দুর্নীতি এবং অর্থ পাচার রোধে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণÑ

১. দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ক্ষমতা বৃদ্ধি ও সঠিক ব্যবহার : দুদককে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করে আরও স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে এবং তাদের কর্মকা-ের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

২. বৈদেশিক লেনদেনের ওপর কড়াকড়ি : হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার রোধে আন্তর্জাতিক লেনদেনের ওপর আরও শক্ত নজরদারি প্রয়োজন।

৩. প্রশাসনিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশিক্ষণ : দুর্নীতি দমনে সশস্ত্র বাহিনী ও প্রশাসনের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কার্যকর প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।

৪. কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা : পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানো এবং কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা জরুরি।

৫. অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি দমন ইউনিট : আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভ্যন্তরে দুর্নীতি দমন ইউনিট গঠন করা যেতে পারে, যারা দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ বা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

এই কাঠামো কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হলে দুর্নীতির বিস্তার এবং অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। এতে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা মজবুত হবে এবং জনগণের আস্থা ফিরে আসবে।

যদি দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সংকটের সমাধান না হয়, তবে বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় প্রস্তুতির অভাবের কারণে পরিবেশগত বিপর্যয় আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে অভিযোগ না করে নিজেদের দলের ভেতর সংস্কারে মনোযোগ দেওয়া। প্রতিটি দলের মধ্যে দুর্নীতিগ্রস্ত, চাঁদাবাজ ও অপরাধীরা অবস্থান করছে; তাদের সঠিক পথে আনতে ব্যর্থ হলে দলগুলো ভবিষ্যতে দেশের সঠিক নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা হারাবে। এখনই সময় দলমত নির্বিশেষে একসঙ্গে কাজ করার, নাহলে দেশ ধ্বংসের দিকে ধাবিত হবে।

[লেখক : সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন]

‘ক্ষুদ্রতার মন্দিরেতে বসায়ে আপনারে আপন পায়ে না দিই যেন অর্ঘ্য ভারে ভারে’

একাকিত্ব : নিজেকে আবিষ্কার ও সৃজনশীলতা বিকাশের পথ

লাগামহীন দ্রব্যমূল্য

বাঁশের বংশবৃদ্ধিতে অন্তরায় বাঁশকরুল সংগ্রহ

অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে করণীয়

শিক্ষা খাতে দলীয় রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাব

কোন পথে জামায়াতের রাজনীতি?

শ্রমিকের উন্নয়ন ছাড়া গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব নয়

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির ভূমিকা

ডিমের জারিজুরি

যোগ্য নেতৃত্ব সমাজ-সংগঠনকে এগিয়ে নেয়

ব্যক্তি স্বাধীনতার সংকট

কিল মারার গোঁসাই

ছবি

শেকড়ের সন্ধানে সাঁইজির ধামে

বৈষম্যের অন্ধকারে নিমজ্জিত প্রকৌশল শিক্ষার আরেক জগৎ

প্রশাসনিক সংস্কারে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা কতটা প্রতিষ্ঠা পাবে?

বাংলার মৃৎশিল্প

প্রবারণা পূর্ণিমার আলোয় আলোকিত হোক মানবজাতি

খেলাপি ঋণের অপসংস্কৃতি

কথার কথা যত কথা

দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত হোক শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

সুইডেনের গণতন্ত্র

বিচ্ছিন্নতা ও একাকীত্ব : শহুরে জীবনধারার মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব

নতুন প্রেক্ষাপটে ‘চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড’ : স্বাধীনতা না প্রতিরোধ?

ধর্মীয় স্বাধীনতা ও কঠিন চীবরদান

ছবি

দুর্গাপূজার মর্মবাণী

মানুষ মূল্যস্ফীতি থেকে রক্ষা পাবে কীভাবে

গুজব ও মিথ্যা তথ্য : সমাজের এক ভয়াবহ ব্যাধি

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে দৃঢ় পদক্ষেপ প্রয়োজন

পুরাতত্ত্বের ধারায় সনাতনী সমাজের দুর্গাপূজা

জীবন-মৃত্যু কী?

নাসা : বিজ্ঞানের পীঠস্থান

শিক্ষা সংস্কারে প্রথাগত চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে

সাংঘাতিক ভাই, সাংঘাতিক...

প্রযুক্তির মায়াজালে বন্দি মানুষ

tab

উপ-সম্পাদকীয়

একতার অভাবে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

রহমান মৃধা

সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪

সরকার পরিবর্তনের সময় আমরা ভুলে গেছি যে, দেশের উন্নয়ন বা সংস্কার একক কোন রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব নয়; এটি সমগ্র জাতির দায়িত্ব। আওয়ামী লীগ সরকার তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে দেশ পরিচালনা করেছে, কিন্তু অন্য রাজনৈতিক দলগুলো কী করছে? তাদের ভূমিকা কি শুধু ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য, নাকি সংস্কারের বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণে তারা আগ্রহী? বিএনপির মতো দলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা উচিতÑ তারা কি শুধুমাত্র ক্ষমতায় ফেরার জন্য কাজ করছে, নাকি বাস্তবিক কোনো সংস্কারের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ?

দেশে পেঁয়াজ ও ডিমের মতো সাধারণ পণ্যের অপ্রত্যাশিত সংকট পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার একটি প্রমাণ। বাংলাদেশে যেখানে প্রাকৃতিকভাবে ফসল ফলানো সম্ভব, সেখানে এ ধরনের সংকট শুধুমাত্র দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার ফল। দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করলে উন্নয়ন বা সংকট থেকে উত্তরণের পথ খোলা থাকবে না।

বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান সংকটগুলোÑ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি জাতির ভবিষ্যতকে অনিশ্চিত করে তুলছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস ও সংঘাত গণতন্ত্রের ভিত্তিকে দুর্বল করছে। জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতা ও উত্তেজনা নিয়ে উদ্বিগ্ন, বিশেষত ২০২৪ সালের শেষদিকে সহিংসতায় বহু প্রাণহানির কারণে। এই অবস্থায় দেশটি ক্রমশ একনায়কতন্ত্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন।

অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনও দেশের জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে দেশের অর্থনীতি ও কৃষি খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যদিও বৈশ্বিক নিঃসরণে বাংলাদেশের অবদান সামান্য, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেশটির ওপর ব্যাপকভাবে পড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে দেশের অভ্যন্তরীণ সংকট ও রাজনৈতিক বিভাজন সংস্কার প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করছে। আন্তর্জাতিক মহলও আশঙ্কা করছে, সংকট সমাধান না হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবিলায় দেশটি অক্ষম হবে।

বাংলাদেশে দুর্নীতি একটি পুরনো ও গভীর সমস্যা, যা অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের পথে বড় বাধা। হুন্ডি ব্যবসার মাধ্যমে অর্থ পাচার এবং সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতি দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করছে। দুর্নীতি রোধ ও অর্থ পাচার ঠেকানোর জন্য সরকারের শক্তিশালী পদক্ষেপ প্রয়োজন, তবে প্রশাসন ও সশস্ত্র বাহিনীর প্যাসিভ ভূমিকা এবং কূটনীতিকদের নিষ্ক্রিয়তা এই প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে।

দুর্নীতির ধরনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেÑ

১. হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার : অবৈধ অর্থ লেনদেনের এই পদ্ধতি প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে এড়িয়ে অর্থ পাচারের একটি বড় মাধ্যম। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কমে যাচ্ছে।

২. সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতি : বড় প্রকল্পে তহবিলের অপব্যবহার ও ঘুষ নেওয়ার ঘটনা প্রায়শই ঘটে, যা অর্থ পাচারের পথ খুলে দেয়।

৩. প্রশাসনের প্যাসিভ ভূমিকা : প্রশাসন দুর্নীতি রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, কিন্তু তাদের প্যাসিভ বা নিস্ক্রিয় ভূমিকা সমস্যাকে আরও ঘনীভূত করছে। প্রশাসন প্রায়ই দুর্নীতির তদন্তে সঠিক উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অংশ দুর্নীতিতে জড়িত থাকার কারণে এ সমস্যার সমাধান বিলম্বিত হচ্ছে।

৪. কূটনৈতিকদের নিষ্ক্রিয়তা : কূটনীতিকরা দেশের স্বার্থ রক্ষা এবং পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন, কিন্তু তাদের কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রতা ও নিষ্ক্রিয়তা অর্থ ফেরত আনার প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করছে।

দুর্নীতি এবং অর্থ পাচার রোধে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণÑ

১. দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ক্ষমতা বৃদ্ধি ও সঠিক ব্যবহার : দুদককে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করে আরও স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে এবং তাদের কর্মকা-ের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

২. বৈদেশিক লেনদেনের ওপর কড়াকড়ি : হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার রোধে আন্তর্জাতিক লেনদেনের ওপর আরও শক্ত নজরদারি প্রয়োজন।

৩. প্রশাসনিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশিক্ষণ : দুর্নীতি দমনে সশস্ত্র বাহিনী ও প্রশাসনের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কার্যকর প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।

৪. কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা : পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানো এবং কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা জরুরি।

৫. অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি দমন ইউনিট : আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভ্যন্তরে দুর্নীতি দমন ইউনিট গঠন করা যেতে পারে, যারা দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ বা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

এই কাঠামো কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হলে দুর্নীতির বিস্তার এবং অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। এতে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা মজবুত হবে এবং জনগণের আস্থা ফিরে আসবে।

যদি দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সংকটের সমাধান না হয়, তবে বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় প্রস্তুতির অভাবের কারণে পরিবেশগত বিপর্যয় আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে অভিযোগ না করে নিজেদের দলের ভেতর সংস্কারে মনোযোগ দেওয়া। প্রতিটি দলের মধ্যে দুর্নীতিগ্রস্ত, চাঁদাবাজ ও অপরাধীরা অবস্থান করছে; তাদের সঠিক পথে আনতে ব্যর্থ হলে দলগুলো ভবিষ্যতে দেশের সঠিক নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা হারাবে। এখনই সময় দলমত নির্বিশেষে একসঙ্গে কাজ করার, নাহলে দেশ ধ্বংসের দিকে ধাবিত হবে।

[লেখক : সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন]

back to top