alt

উপ-সম্পাদকীয়

ডেঙ্গুজ্বর : সচেতনতার বিকল্প নেই

শতদল বড়ুয়া

: শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪
image

আমার পরিচিত একজন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে এক চিকিৎসা কেন্দ্রে থাকায় তাকে সেখানে দেখতে গিয়েছি। চিকিৎসকের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনার একপর্যায়ে চিকিৎসক বললেন, সাধারণ জনগণের সচেতনতায় আপনারাও লিখতে পারেন। শুধু চিকিৎসক লিখবে এমনটা ভাবা উচিত নয়। আজকে যা আলোচনা হলো তা আপনারাও লিখতে পারেন।

আমরা অনেকটা ভাগ্যবান। পত্র-পত্রিকাসহ নানা প্রচার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যতœসহকারে প্রকাশিত হচ্ছে। পঞ্চাশের দশকে একবার এ ধরনের তীব্র জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছিলো। সেই ১৯৬৪ সালে ঢাকায় বিশেষ ধরনের জ্বরের প্রকোপ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে ধরা পড়ে। তখন এ জ্বরের কোনো কারণ উদঘাটন করতে না পেরে চিকিৎসকরা ‘ঢাকা ফিভার’ নামে অভিহিত করেছিলো বলে জানিয়েছেন। এখন মনে হয় সেই জ্বরটাই আজকের ডেঙ্গুজ্বর।

পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকাসহ অন্যান্য বড় শহর ও জেলায় আবারো ডেঙ্গুজ্বরের অস্তিত্ব মিলে। সেই থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনেক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। তখন মৃত্যুহার ছিলো ১%। চিকিৎসকের মতে ডেঙ্গুজ্বর দুই ধরনের। হেমোরেজিক ডেঙ্গু ও ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু। অনেক সময় ডেঙ্গুজ্বর তীব্র হয়ে ডেঙ্গু হেমোরেজিক শক-সিনড্রোম হতে পারে।

চিকিৎসক আরো জানালেন, ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি সেরোটাইপ রয়েছে। এগুলো হলো, ডিইএন-১, ডিইএন-২, ডিইএন-৩, ডিইএন-৪। এ থেকে ডেঙ্গুজ্বর হতে পারে। ডিইএন-২ ও ডিইএম-৩ নাকি খুবই মারাত্মক। তবে ডেঙ্গু ভাইরাসের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত নয় এমন এডিস মশা মানুষকে কামড়ালে ডেঙ্গুজ্বর হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ৮ থেকে ১১ দিনের মধ্যে এডিস মশা কামড়ের মাধ্যমে মানুষকে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত করার ক্ষমতা রাখে।

আমরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে মনোযোগী না বলে আসল বিষয়ে তেমন জানি না। চিকিৎসকরা ডেঙ্গুজ্বর সেরে গেলেও বিপদমুক্ত নয় বলে মতপ্রকাশ করেছেন। ডেঙ্গুজ্বর সেরে গেলে রোগীর প্রতি আরো বেশি যতœশীল হওয়ার জন্যে পরামর্শ দিয়েছেন। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোমড় ব্যথা, হাড় ব্যথা হয়ে থাকে। তীব্র ব্যথার কারণে রোগী অস্থির হয়ে পড়ে। এ সমস্ত সুনির্দিষ্ট কিছু কারণের জন্যে এ জ্বরকে ‘ব্রেকবোন ফিভার’ বলে। চিকিৎসা বিজ্ঞানমতে ডেঙ্গুজ্বরের সুনির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই। তবে সঠিক সময়ে যথাযথ চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুরোধ করা কোনো ব্যাপার নয়। শুধু জ্বরের লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করা গেলে কোনো বিপদের আশঙ্কা থাকে না।

এ জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে প্রচুর পরিমাণ পানি খেতে হবে। প্রয়োজনে স্যালাইন অপরিহার্য। তবে ধৈর্যের সাথে সবকিছু মোকাবেলা করা বুদ্ধিমানের কাজ। চিকিৎসকের দেয়া তথ্যমতে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে রোগীর রক্তের প্লাটিলেট কাউন্ট এবং পিসিভি পরীক্ষা করা জরুরি। হেমোরেজিক ডেঙ্গুজ্বরে রোগীর প্লাটিলেট কাউন্ট কমে যেতে পারে। প্লাটিলেট দশ হাজারের নিচে কমে এলে রোগীকে শিরাপথে প্লাটিলেট ট্রান্সফিউশন করতে হবে এবং প্রতিদিন একবার করে প্লাটিলেট কাউন্ট পরীক্ষা করতে হবে। যদি রোগীর রক্তক্ষরণ হতে থাকে তাহলে রোগীকে প্রয়োজনমতো রক্ত দিতে। কারণ এ সময় রোগীর রক্তবমি, রক্তমিশ্রিত পায়খানা, নাক দিয়ে রক্তক্ষরণের ফলে রোগী রক্তশূন্যতা হয়ে পড়বে।

যথাসময়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা গেলে জটিলতা এড়ানো সম্ভব। একবার ডেঙ্গু হলে দ্বিতীয়বার ওই রোগীর ডেঙ্গু হবে কিনা চিকিৎসকের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি সেরোটাইপ রয়েছে। এ চারটির মধ্যে যেকোনো একটি সেরোটাইপ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে গেলে ভবিষ্যতে সেই ভাইরাসটিতে আবার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না; কিন্তু বাকি তিনটি সেরোটাইপ ভাইরাসের যেকোনোটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।

প্রাথমিকভাবে ধারণা পাওয়া যায় যে, এডিস মশা প্রথমে আফ্রিকায় গাছের কোটরে বাস করতো। তখন এ মশা বৃষ্টির ঠিক পরপরই গর্তে জমে থাকা পানিতে ডিম পাড়ত। বর্যাকালে এবং অতিরিক্ত আর্দ্র পরিবেশ এডিস মশা বংশ বৃদ্ধির জন্যে খুবই উপযোগী ক্ষণ। বৃষ্টির পানি শুকিয়ে যাওয়ার পরও এডিস মশার ডিম বেঁচে থাকতে পারে। ডিম ফোটার জন্যে এদের আর পানি লাগে না। যার কারণে বৃষ্টি কমে যাওয়ার পরপরই এডিস মশার প্রকোপ কিন্তু বেড়েই চলে। মোট কথা এডিস মশা বর্যাকালেই বেশি কামড়ায়।

এডিস মশার বিরুদ্ধে সতর্কতামূলক প্রহরা হিসেবে বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর, সীমান্ত এলাকা এবং এসব স্থানে বিদেশ থেকে আনা ড্রাম, যেকোনো কনটেইনার, আমদানিকৃত টায়ার ও এলাকার আশপাশে পড়ে থাকা টায়ার ইত্যাদিতে এডিস মশা আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখা একান্ত অপরিহার্য বিষয়। বিশ্বের ডেঙ্গু আক্রান্ত প্রতিটি দেশেই পারিবারিক এবং কর্মস্থলের বর্জ্য নিষ্কাশন, পয়ঃনিষ্কাশন পদ্ধতির উন্নয়ন এবং প্লাস্টিক ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার মাধ্যমে স্থায়ীভাবে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সফলতা আসতে পারে।

এডিস মশার প্রকোপ কমানোর জন্যে সংশ্লিষ্টরা সর্তক রয়েছে। তারপরও ডেঙ্গুরোগী দিন দিন বাড়ছে। গত কয়েক দিনে নানা পত্রপত্রিকা এবং প্রচার মাধ্যমে যা জানা গেলো তা কিন্তু আমাদের জন্যে সুসংবাদ নয়। এর থেকে দ্রুত পরিত্রাণ তথা ডেঙ্গু প্রতিরোধে সর্বস্তরের জনগণকে সচেতন থাকতে হবে। পাশাপাশি স্ব স্ব এলাকার মানুষদের বসতির চারপাশের হাজামজা জলাশয়, জমে থাকা পানি এবং নোংরা স্থান পরিষ্কারে মনোযোগী হতে হবে।

বর্তমানে আমাদের দেশে ডেঙ্গু একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিজ্ঞজনের অভিমত হলোÑ ডেঙ্গু থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় সচেতনতা। আসুন সম্মিলিতভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে নিজে সচেতন হই, অন্যকেও বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করি।

[লেখক : সংবাদকর্মী]

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ

ধর্মভিত্তিক জোট কোন পথে

ছবি

বিদায় অগ্নিকন্যা

রিমান্ড সংস্কৃতি : আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে একটি মানবাধিকার পরিপ্রেক্ষিত

ছবি

উন্নয়ন ও পরিবেশের মধ্যে ভারসাম্য রাখা কেন জরুরি

ছবি

মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ ম-ল

নদীর প্রাণ শুশুক, নিরাপদে বেঁচে থাকুক

ভবন নির্মাণ ও বিল্ডিং কোড

রম্যগদ্য : গণতন্ত্রের গলিতে গলিতে হিটলার

রাষ্ট্র সংস্কার ও আদিবাসী

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে সংবিধান ও অতীত-ইতিহাস

শিক্ষাকে দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত করার উপায়

দিবস যায় দিবস আসে, নিরাপদ হয় না সড়ক

‘ক্ষুদ্রতার মন্দিরেতে বসায়ে আপনারে আপন পায়ে না দিই যেন অর্ঘ্য ভারে ভারে’

একাকিত্ব : নিজেকে আবিষ্কার ও সৃজনশীলতা বিকাশের পথ

লাগামহীন দ্রব্যমূল্য

বাঁশের বংশবৃদ্ধিতে অন্তরায় বাঁশকরুল সংগ্রহ

একতার অভাবে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে করণীয়

শিক্ষা খাতে দলীয় রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাব

কোন পথে জামায়াতের রাজনীতি?

শ্রমিকের উন্নয়ন ছাড়া গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব নয়

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির ভূমিকা

ডিমের জারিজুরি

যোগ্য নেতৃত্ব সমাজ-সংগঠনকে এগিয়ে নেয়

ব্যক্তি স্বাধীনতার সংকট

কিল মারার গোঁসাই

ছবি

শেকড়ের সন্ধানে সাঁইজির ধামে

বৈষম্যের অন্ধকারে নিমজ্জিত প্রকৌশল শিক্ষার আরেক জগৎ

প্রশাসনিক সংস্কারে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা কতটা প্রতিষ্ঠা পাবে?

বাংলার মৃৎশিল্প

প্রবারণা পূর্ণিমার আলোয় আলোকিত হোক মানবজাতি

খেলাপি ঋণের অপসংস্কৃতি

কথার কথা যত কথা

দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত হোক শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

tab

উপ-সম্পাদকীয়

ডেঙ্গুজ্বর : সচেতনতার বিকল্প নেই

শতদল বড়ুয়া

image

শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

আমার পরিচিত একজন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে এক চিকিৎসা কেন্দ্রে থাকায় তাকে সেখানে দেখতে গিয়েছি। চিকিৎসকের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনার একপর্যায়ে চিকিৎসক বললেন, সাধারণ জনগণের সচেতনতায় আপনারাও লিখতে পারেন। শুধু চিকিৎসক লিখবে এমনটা ভাবা উচিত নয়। আজকে যা আলোচনা হলো তা আপনারাও লিখতে পারেন।

আমরা অনেকটা ভাগ্যবান। পত্র-পত্রিকাসহ নানা প্রচার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যতœসহকারে প্রকাশিত হচ্ছে। পঞ্চাশের দশকে একবার এ ধরনের তীব্র জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছিলো। সেই ১৯৬৪ সালে ঢাকায় বিশেষ ধরনের জ্বরের প্রকোপ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে ধরা পড়ে। তখন এ জ্বরের কোনো কারণ উদঘাটন করতে না পেরে চিকিৎসকরা ‘ঢাকা ফিভার’ নামে অভিহিত করেছিলো বলে জানিয়েছেন। এখন মনে হয় সেই জ্বরটাই আজকের ডেঙ্গুজ্বর।

পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকাসহ অন্যান্য বড় শহর ও জেলায় আবারো ডেঙ্গুজ্বরের অস্তিত্ব মিলে। সেই থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনেক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। তখন মৃত্যুহার ছিলো ১%। চিকিৎসকের মতে ডেঙ্গুজ্বর দুই ধরনের। হেমোরেজিক ডেঙ্গু ও ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু। অনেক সময় ডেঙ্গুজ্বর তীব্র হয়ে ডেঙ্গু হেমোরেজিক শক-সিনড্রোম হতে পারে।

চিকিৎসক আরো জানালেন, ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি সেরোটাইপ রয়েছে। এগুলো হলো, ডিইএন-১, ডিইএন-২, ডিইএন-৩, ডিইএন-৪। এ থেকে ডেঙ্গুজ্বর হতে পারে। ডিইএন-২ ও ডিইএম-৩ নাকি খুবই মারাত্মক। তবে ডেঙ্গু ভাইরাসের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত নয় এমন এডিস মশা মানুষকে কামড়ালে ডেঙ্গুজ্বর হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ৮ থেকে ১১ দিনের মধ্যে এডিস মশা কামড়ের মাধ্যমে মানুষকে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত করার ক্ষমতা রাখে।

আমরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে মনোযোগী না বলে আসল বিষয়ে তেমন জানি না। চিকিৎসকরা ডেঙ্গুজ্বর সেরে গেলেও বিপদমুক্ত নয় বলে মতপ্রকাশ করেছেন। ডেঙ্গুজ্বর সেরে গেলে রোগীর প্রতি আরো বেশি যতœশীল হওয়ার জন্যে পরামর্শ দিয়েছেন। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোমড় ব্যথা, হাড় ব্যথা হয়ে থাকে। তীব্র ব্যথার কারণে রোগী অস্থির হয়ে পড়ে। এ সমস্ত সুনির্দিষ্ট কিছু কারণের জন্যে এ জ্বরকে ‘ব্রেকবোন ফিভার’ বলে। চিকিৎসা বিজ্ঞানমতে ডেঙ্গুজ্বরের সুনির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই। তবে সঠিক সময়ে যথাযথ চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুরোধ করা কোনো ব্যাপার নয়। শুধু জ্বরের লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করা গেলে কোনো বিপদের আশঙ্কা থাকে না।

এ জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে প্রচুর পরিমাণ পানি খেতে হবে। প্রয়োজনে স্যালাইন অপরিহার্য। তবে ধৈর্যের সাথে সবকিছু মোকাবেলা করা বুদ্ধিমানের কাজ। চিকিৎসকের দেয়া তথ্যমতে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে রোগীর রক্তের প্লাটিলেট কাউন্ট এবং পিসিভি পরীক্ষা করা জরুরি। হেমোরেজিক ডেঙ্গুজ্বরে রোগীর প্লাটিলেট কাউন্ট কমে যেতে পারে। প্লাটিলেট দশ হাজারের নিচে কমে এলে রোগীকে শিরাপথে প্লাটিলেট ট্রান্সফিউশন করতে হবে এবং প্রতিদিন একবার করে প্লাটিলেট কাউন্ট পরীক্ষা করতে হবে। যদি রোগীর রক্তক্ষরণ হতে থাকে তাহলে রোগীকে প্রয়োজনমতো রক্ত দিতে। কারণ এ সময় রোগীর রক্তবমি, রক্তমিশ্রিত পায়খানা, নাক দিয়ে রক্তক্ষরণের ফলে রোগী রক্তশূন্যতা হয়ে পড়বে।

যথাসময়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা গেলে জটিলতা এড়ানো সম্ভব। একবার ডেঙ্গু হলে দ্বিতীয়বার ওই রোগীর ডেঙ্গু হবে কিনা চিকিৎসকের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি সেরোটাইপ রয়েছে। এ চারটির মধ্যে যেকোনো একটি সেরোটাইপ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে গেলে ভবিষ্যতে সেই ভাইরাসটিতে আবার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না; কিন্তু বাকি তিনটি সেরোটাইপ ভাইরাসের যেকোনোটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।

প্রাথমিকভাবে ধারণা পাওয়া যায় যে, এডিস মশা প্রথমে আফ্রিকায় গাছের কোটরে বাস করতো। তখন এ মশা বৃষ্টির ঠিক পরপরই গর্তে জমে থাকা পানিতে ডিম পাড়ত। বর্যাকালে এবং অতিরিক্ত আর্দ্র পরিবেশ এডিস মশা বংশ বৃদ্ধির জন্যে খুবই উপযোগী ক্ষণ। বৃষ্টির পানি শুকিয়ে যাওয়ার পরও এডিস মশার ডিম বেঁচে থাকতে পারে। ডিম ফোটার জন্যে এদের আর পানি লাগে না। যার কারণে বৃষ্টি কমে যাওয়ার পরপরই এডিস মশার প্রকোপ কিন্তু বেড়েই চলে। মোট কথা এডিস মশা বর্যাকালেই বেশি কামড়ায়।

এডিস মশার বিরুদ্ধে সতর্কতামূলক প্রহরা হিসেবে বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর, সীমান্ত এলাকা এবং এসব স্থানে বিদেশ থেকে আনা ড্রাম, যেকোনো কনটেইনার, আমদানিকৃত টায়ার ও এলাকার আশপাশে পড়ে থাকা টায়ার ইত্যাদিতে এডিস মশা আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখা একান্ত অপরিহার্য বিষয়। বিশ্বের ডেঙ্গু আক্রান্ত প্রতিটি দেশেই পারিবারিক এবং কর্মস্থলের বর্জ্য নিষ্কাশন, পয়ঃনিষ্কাশন পদ্ধতির উন্নয়ন এবং প্লাস্টিক ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার মাধ্যমে স্থায়ীভাবে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সফলতা আসতে পারে।

এডিস মশার প্রকোপ কমানোর জন্যে সংশ্লিষ্টরা সর্তক রয়েছে। তারপরও ডেঙ্গুরোগী দিন দিন বাড়ছে। গত কয়েক দিনে নানা পত্রপত্রিকা এবং প্রচার মাধ্যমে যা জানা গেলো তা কিন্তু আমাদের জন্যে সুসংবাদ নয়। এর থেকে দ্রুত পরিত্রাণ তথা ডেঙ্গু প্রতিরোধে সর্বস্তরের জনগণকে সচেতন থাকতে হবে। পাশাপাশি স্ব স্ব এলাকার মানুষদের বসতির চারপাশের হাজামজা জলাশয়, জমে থাকা পানি এবং নোংরা স্থান পরিষ্কারে মনোযোগী হতে হবে।

বর্তমানে আমাদের দেশে ডেঙ্গু একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিজ্ঞজনের অভিমত হলোÑ ডেঙ্গু থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় সচেতনতা। আসুন সম্মিলিতভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে নিজে সচেতন হই, অন্যকেও বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করি।

[লেখক : সংবাদকর্মী]

back to top