alt

opinion » post-editorial

প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন গ্রেডে সংস্কার দরকার

গাজী আরিফ মান্নান

: শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪

পৃথিবীর প্রায় সব উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে শিক্ষকতা একটি মর্যাদাসম্পন্ন ও সম্মানজনক পেশা। পৃথিবীর সব জায়গায় শিক্ষকের কদর ও মূল্যায়ন বেশি। শিক্ষকদের রাষ্ট্রীয় সম্মানের পাশাপাশি তাদের বেতনও উচ্চতর স্কেলে দেওয়া হয়। শিক্ষকরা আর্থিক সুবিধা ছাড়াও রাষ্ট্র থেকে বিভিন্নরকম সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে। সেই হিসেবে উন্নত দেশের তুলনায় আমাদের দেশের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও সুযোগ সুবিধা একেবারেই নগন্য। বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ও মর্যাদা এখনো সেইভাবে রাষ্ট্র দিতে পারেনি, এজন্যই শিক্ষকরা এখনো সমাজে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারেননি।

সব শ্রেণী-পেশার মানুষ সুন্দরভাবে চলতে পারলেও একজন প্রাথমিকের শিক্ষককে অনেক কষ্ট করে দিন-মাস পার করতে হয়। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের সমাজে শিক্ষক ও তার পরিবার পারিপার্শ্বিকভাবে হেয় বা অবমূল্যায়িত হবে। রাষ্ট্রকে সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে একজন শিক্ষক যেন তার পরিবার-পরিজন নিয়ে সুন্দরভাবে সমাজে চলতে পারে। একজন শিক্ষক যদি মাসের বেতনের টাকায় ঠিকমতো চলতে না পারেন, তবে তিনি শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো শিক্ষা দিতে পারবেন না।

প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের দাবি প্রধান শিক্ষকদের মতো (যদিও আদালতের রায় এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি) সহকারী শিক্ষকদেরও ১০ম গ্রেড প্রদান করা হোক। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হয়ে গেল কিন্তু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্তরে স্নাতক-স্নাতকোত্তর শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেডে তৃতীয় শ্রেণীর মর্যাদায় রেখে দেওয়া হয়েছে। চরম একটা গ্রেড-বৈষম্যের শিকার হয়ে আছেন প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকরা। প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড নিছক কোনো দাবি নয়, এটা ন্যায্য অধিকার। প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের নিয়োগের জন্য যোগ্যতা, স্নাতক সমমান (২য় বিভাগ) বেতন গ্রেড ১৩তম। পাশাপাশি হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষকদের নিয়োগের যোগ্যতা স্নাতক সমমান, বেতন গ্রেড ১০ম। পুলিশের উপপরিদর্শকের নিয়োগের যোগ্যতা স্নাতক বা সমমান, বেতন গ্রেড ১০ম। হাসপাতালের নার্সদের নিয়োগের যোগ্যতা বিএসসি ইন নার্সিং, বেতন গ্রেড ১০ম। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার নিয়োগের যোগ্যতা ৪ বছর মেয়াদি কৃষি ডিপ্লোমা, বেতন গ্রেড ১০ম। ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের নিয়োগের যোগ্যতা স্নাতক, বেতন গ্রেড ১০ম।

শিক্ষক সমাজ বিভিন্নভাবে লাঞ্ছনা ও বঞ্ছনার শিকার বহুদিন থেকে। একজন শিক্ষক তার প্রাপ্য সম্মানটুকু যদি না পান তাহলে তিনি কিভাবে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেবেন। শিক্ষক জ্ঞান বিতরণ করবেন নিজের ও পরিবারের পেট খালি রেখে, নাকি অন্যকোন ধান্ধায় লিপ্ত হয়ে। সমাজ বা দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে একজন শিক্ষকের অর্থনৈতিক দিক এবং বৃদ্ধি করতে হবে মান-মর্যাদা। বর্তমান সময়ে শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে নেওয়া অসম্ভব কিছু নয়। শিক্ষকদের এই দাবি অবাস্তব অযৌক্তিক নয়। সরকারকে শিক্ষকদের কল্যাণের জন্য এবং মঙ্গলের জন্য দাবি পূরণ করতে হবে। একজন মাস্টার্স, বিএড, বিপিএড ট্রেনিংপ্রাপ্ত শিক্ষক এখনো তৃতীয় শ্রেণীর ক্যাটাগরির লোক হিসেবে গণ্য হবে তা মেনে নেওয়া যায় না। বর্তমান সময়ে শিক্ষকরা অন্য পেশাজীবীদের তুলনায় সব কিছুতেই এগিয়ে রয়েছে কিন্তু সে তুলনায় তার বেতন স্কেল মোটেও সন্তোষজনক নয়।

শিক্ষকতা শুধু একটি পেশা নয়, একজন শিক্ষককে দীর্ঘদিনের চর্চার মাধ্যমে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। যার চর্চা যত বেশী তার জ্ঞানের ভান্ডার ততবেশী পরিপূর্ণ হবে কিন্তু সে শিক্ষকের যদি চর্চা করার সুযোগ না থাকে তাহলে আদৌ ভালো শিক্ষক হিসেবে নিজেকে পরিণত করা সম্ভব নয়। শিক্ষকতা পেশায় পদোন্নতি একবারেই নেই বললে চলে, এ কারণে শিক্ষকরা কাজে-কর্মে নিরাশ হয়ে পড়ে।

শিক্ষককে যদি সঠিক মান-মর্যাদা দেওয়া না হয় তাহলে অযথা কেন তিনি কঠোর পরিশ্রম করে নিজের চিন্তাধারা বা সৃজনশীলতা প্রকাশ করবেন। একজন শিক্ষককে যদি প্রতি মুহূর্তে সংসারে অর্থের টানাপোড়েনের চিন্তা করতে হয় তাহলে তার কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করাও বোকামি। প্রত্যেক মানুষেরই জীবন সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য অর্থের প্রয়োজন আছে।

শিক্ষকদের মাঝে যদি প্রেষণা সৃষ্টি করা না যায় তাহলে কিভাবে মেধা ও শ্রম দিয়ে পেশার প্রতি দায়িত্বশীল হবে। একজন দায়িত্বশীল শিক্ষকই শিক্ষার্থী, সমাজ ও দেশকে পরিবর্তন করতে পারবেন। শিক্ষক তার সততা, নিষ্ঠা ও প্রজ্ঞার সাহায্যে বদলে দেবেন বিদ্যালয়ের চেহারা। শিক্ষক সমাজের গুরু, পথ নির্দেশক, আলোকিত ব্যক্তি। তাই তো বলা হয়, দাম্ভিকতাপূর্ণ তর্জন-গর্জনকারী কিংবা রাজনৈতিক মারপ্যাঁচে কলুষিত ব্যক্তির এ মহান পেশায় দায়িত্ব গ্রহণ সাজে না। মহান সৃষ্টিকর্তা শিক্ষকের জীবনকে আলাদা বৈচিত্র্য এবং সুখময় মাধুর্য দিয়ে সম্মানিত করেছেন। যেখানে সুখ আছে, শান্তি আছে এবং আছে আনন্দঘন উচ্ছ্বাসভরা প্রগতিশীলতা। শিক্ষকতা নামক মহান পেশায় পদার্পণকারী ব্যক্তি অবশ্যই সামাজিক ছাঁচে গড়া সুন্দর নৈতিকতা পূর্ণ আদর্শের প্রতীক হবেন। নীতিহীন মানুষ কোনোকালেই আদর্শ শিক্ষক হতে পারেন না। কারণ শিক্ষক হবেন সুন্দর মন ও পবিত্র আত্মার শৈলিনক দৃষ্টিভঙ্গির আধিকারী, প্রজ্ঞাবান আদর্শ মানুষ। আমাদের দেশে মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে চায় না বেতন ও মান মর্যাদা কম এবং পদোন্নতির সুযোগ নেই বলে।

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি করতে হলে সবার আগে শিক্ষকদের চাহিদা পূরণ করতে হবে। শিক্ষকদের সর্বোচ্চ সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে তাদের শিক্ষাদানে আরো বেশি উৎসাহিত এবং অনুপ্রাণিত করতে হবে। মেধাবী ছেলেমেয়েরা যেন শিক্ষকতা পেশায় আসতে পারে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। মেধাবীদের এই পেশার প্রতি আকৃষ্ট করতে বা ধরে রাখতে হলে সকল ধরনের বৈষম্য দূর করতে হবে। শিক্ষকদের দেশ-বিদেশে উচ্চতর প্রশিক্ষণের সুযোগ দিতে হবে, তাহলে তারা নিজেকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ করতে পারবে।

শিক্ষকদের ন্যায়সঙ্গত দাবিগুলো সরকার বিবেচনা করে বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজকে উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করবে এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাবেনÑ এই কামনা করি।

[লেখক : শিক্ষক]

নরসুন্দর পেশার গুরুত্ব ও সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন

বিভাগভিত্তিক এমপিআর নির্বাচন পদ্ধতি

প্ল্যাটফর্ম সমাজে বাংলাদেশ: জ্ঞানের ভবিষ্যৎ কার হাতে?

আনন্দবেদনার হাসপাতাল: সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার বাস্তবতা

ছবি

ভিন্ন ধরনের নির্বাচন, ভিন্ন ধরনের ফল

বেসরকারি খাতে সিআইবি’র যাত্রা: ঋণ ব্যবস্থার নতুন দিগন্ত

স্বাস্থ্যসেবায় মানবিকতা প্রতিষ্ঠা হোক

ছবি

নেপালে সরকার পতন ও বামপন্থীদের ভবিষ্যৎ

ডাকসু নির্বাচন ও সংস্কারপ্রয়াস: রাজনৈতিক চিন্তার নতুন দিগন্ত

নির্বাচন কি সব সমস্যার সমাধান

জিতিয়া উৎসব

ছবি

অলির পর নেপাল কোন পথে?

রম্যগদ্য: “মরেও বাঁচবি নারে পাগলা...”

অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শ্রীপুর পৌরসভা

ভূরিভোজ, উচ্ছেদ এবং আদিবাসী পাহাড়িয়া

অনলাইন সংস্কৃতিতে হাস্যরসের সমাজবিজ্ঞান

মামলাজট নিরসনে দেওয়ানি কার্যবিধির সংস্কার

বাস্তব মস্কো বনাম বিভ্রান্ত ইউরোপ

ছাত্রসংসদ নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ ছাত্ররাজনীতির গতিপ্রকৃতি

সড়ক দুর্ঘটনা: কারও মৃত্যু সাধারণ, কারও মৃত্যু বিশেষ

ঐকমত্য ছাড়াও কিছু সংস্কার সম্ভব

আবার বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম : সংকটে সাধারণ মানুষ

ডায়াবেটিস রোগীর সেবা ও জনসচেতনতা

ভিন্ন ধরনের ডাকসু নির্বাচন

ডাকসু নির্বাচন : পেছনে ফেলে আসি

প্রসঙ্গ : এলডিসি তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ

“কোপা চাটিগাঁ...”

ই-কমার্স হতে পারে প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন

ভারত-চীনের নতুন সমীকরণ

সাইবার যুগে মানুষের মর্যাদা ও নিরাপত্তা

ছবি

ভারত-চীন সম্পর্কে কৌশলগত উষ্ণতার সূচনা

ভারত-চীন সম্পর্কে কৌশলগত উষ্ণতার সূচনা

একজন নাগরিকের অভিমানী বিদায় ও রাষ্ট্রের নৈতিক সংকট

নিষিদ্ধ জালের অভিশাপে হুমকির মুখে সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য

আধিপত্যবাদের শৃঙ্খল এবং পুঁজির লুন্ঠন যাদের রক্তাক্ত করে, তাদের চাই একজোটে

জার্মানি : কৃচ্ছসাধনের বোঝা জনগণের কাঁধে

tab

opinion » post-editorial

প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন গ্রেডে সংস্কার দরকার

গাজী আরিফ মান্নান

শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪

পৃথিবীর প্রায় সব উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে শিক্ষকতা একটি মর্যাদাসম্পন্ন ও সম্মানজনক পেশা। পৃথিবীর সব জায়গায় শিক্ষকের কদর ও মূল্যায়ন বেশি। শিক্ষকদের রাষ্ট্রীয় সম্মানের পাশাপাশি তাদের বেতনও উচ্চতর স্কেলে দেওয়া হয়। শিক্ষকরা আর্থিক সুবিধা ছাড়াও রাষ্ট্র থেকে বিভিন্নরকম সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে। সেই হিসেবে উন্নত দেশের তুলনায় আমাদের দেশের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও সুযোগ সুবিধা একেবারেই নগন্য। বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ও মর্যাদা এখনো সেইভাবে রাষ্ট্র দিতে পারেনি, এজন্যই শিক্ষকরা এখনো সমাজে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারেননি।

সব শ্রেণী-পেশার মানুষ সুন্দরভাবে চলতে পারলেও একজন প্রাথমিকের শিক্ষককে অনেক কষ্ট করে দিন-মাস পার করতে হয়। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের সমাজে শিক্ষক ও তার পরিবার পারিপার্শ্বিকভাবে হেয় বা অবমূল্যায়িত হবে। রাষ্ট্রকে সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে একজন শিক্ষক যেন তার পরিবার-পরিজন নিয়ে সুন্দরভাবে সমাজে চলতে পারে। একজন শিক্ষক যদি মাসের বেতনের টাকায় ঠিকমতো চলতে না পারেন, তবে তিনি শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো শিক্ষা দিতে পারবেন না।

প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের দাবি প্রধান শিক্ষকদের মতো (যদিও আদালতের রায় এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি) সহকারী শিক্ষকদেরও ১০ম গ্রেড প্রদান করা হোক। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হয়ে গেল কিন্তু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্তরে স্নাতক-স্নাতকোত্তর শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেডে তৃতীয় শ্রেণীর মর্যাদায় রেখে দেওয়া হয়েছে। চরম একটা গ্রেড-বৈষম্যের শিকার হয়ে আছেন প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকরা। প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড নিছক কোনো দাবি নয়, এটা ন্যায্য অধিকার। প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের নিয়োগের জন্য যোগ্যতা, স্নাতক সমমান (২য় বিভাগ) বেতন গ্রেড ১৩তম। পাশাপাশি হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষকদের নিয়োগের যোগ্যতা স্নাতক সমমান, বেতন গ্রেড ১০ম। পুলিশের উপপরিদর্শকের নিয়োগের যোগ্যতা স্নাতক বা সমমান, বেতন গ্রেড ১০ম। হাসপাতালের নার্সদের নিয়োগের যোগ্যতা বিএসসি ইন নার্সিং, বেতন গ্রেড ১০ম। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার নিয়োগের যোগ্যতা ৪ বছর মেয়াদি কৃষি ডিপ্লোমা, বেতন গ্রেড ১০ম। ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের নিয়োগের যোগ্যতা স্নাতক, বেতন গ্রেড ১০ম।

শিক্ষক সমাজ বিভিন্নভাবে লাঞ্ছনা ও বঞ্ছনার শিকার বহুদিন থেকে। একজন শিক্ষক তার প্রাপ্য সম্মানটুকু যদি না পান তাহলে তিনি কিভাবে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেবেন। শিক্ষক জ্ঞান বিতরণ করবেন নিজের ও পরিবারের পেট খালি রেখে, নাকি অন্যকোন ধান্ধায় লিপ্ত হয়ে। সমাজ বা দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে একজন শিক্ষকের অর্থনৈতিক দিক এবং বৃদ্ধি করতে হবে মান-মর্যাদা। বর্তমান সময়ে শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে নেওয়া অসম্ভব কিছু নয়। শিক্ষকদের এই দাবি অবাস্তব অযৌক্তিক নয়। সরকারকে শিক্ষকদের কল্যাণের জন্য এবং মঙ্গলের জন্য দাবি পূরণ করতে হবে। একজন মাস্টার্স, বিএড, বিপিএড ট্রেনিংপ্রাপ্ত শিক্ষক এখনো তৃতীয় শ্রেণীর ক্যাটাগরির লোক হিসেবে গণ্য হবে তা মেনে নেওয়া যায় না। বর্তমান সময়ে শিক্ষকরা অন্য পেশাজীবীদের তুলনায় সব কিছুতেই এগিয়ে রয়েছে কিন্তু সে তুলনায় তার বেতন স্কেল মোটেও সন্তোষজনক নয়।

শিক্ষকতা শুধু একটি পেশা নয়, একজন শিক্ষককে দীর্ঘদিনের চর্চার মাধ্যমে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। যার চর্চা যত বেশী তার জ্ঞানের ভান্ডার ততবেশী পরিপূর্ণ হবে কিন্তু সে শিক্ষকের যদি চর্চা করার সুযোগ না থাকে তাহলে আদৌ ভালো শিক্ষক হিসেবে নিজেকে পরিণত করা সম্ভব নয়। শিক্ষকতা পেশায় পদোন্নতি একবারেই নেই বললে চলে, এ কারণে শিক্ষকরা কাজে-কর্মে নিরাশ হয়ে পড়ে।

শিক্ষককে যদি সঠিক মান-মর্যাদা দেওয়া না হয় তাহলে অযথা কেন তিনি কঠোর পরিশ্রম করে নিজের চিন্তাধারা বা সৃজনশীলতা প্রকাশ করবেন। একজন শিক্ষককে যদি প্রতি মুহূর্তে সংসারে অর্থের টানাপোড়েনের চিন্তা করতে হয় তাহলে তার কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করাও বোকামি। প্রত্যেক মানুষেরই জীবন সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য অর্থের প্রয়োজন আছে।

শিক্ষকদের মাঝে যদি প্রেষণা সৃষ্টি করা না যায় তাহলে কিভাবে মেধা ও শ্রম দিয়ে পেশার প্রতি দায়িত্বশীল হবে। একজন দায়িত্বশীল শিক্ষকই শিক্ষার্থী, সমাজ ও দেশকে পরিবর্তন করতে পারবেন। শিক্ষক তার সততা, নিষ্ঠা ও প্রজ্ঞার সাহায্যে বদলে দেবেন বিদ্যালয়ের চেহারা। শিক্ষক সমাজের গুরু, পথ নির্দেশক, আলোকিত ব্যক্তি। তাই তো বলা হয়, দাম্ভিকতাপূর্ণ তর্জন-গর্জনকারী কিংবা রাজনৈতিক মারপ্যাঁচে কলুষিত ব্যক্তির এ মহান পেশায় দায়িত্ব গ্রহণ সাজে না। মহান সৃষ্টিকর্তা শিক্ষকের জীবনকে আলাদা বৈচিত্র্য এবং সুখময় মাধুর্য দিয়ে সম্মানিত করেছেন। যেখানে সুখ আছে, শান্তি আছে এবং আছে আনন্দঘন উচ্ছ্বাসভরা প্রগতিশীলতা। শিক্ষকতা নামক মহান পেশায় পদার্পণকারী ব্যক্তি অবশ্যই সামাজিক ছাঁচে গড়া সুন্দর নৈতিকতা পূর্ণ আদর্শের প্রতীক হবেন। নীতিহীন মানুষ কোনোকালেই আদর্শ শিক্ষক হতে পারেন না। কারণ শিক্ষক হবেন সুন্দর মন ও পবিত্র আত্মার শৈলিনক দৃষ্টিভঙ্গির আধিকারী, প্রজ্ঞাবান আদর্শ মানুষ। আমাদের দেশে মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে চায় না বেতন ও মান মর্যাদা কম এবং পদোন্নতির সুযোগ নেই বলে।

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি করতে হলে সবার আগে শিক্ষকদের চাহিদা পূরণ করতে হবে। শিক্ষকদের সর্বোচ্চ সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে তাদের শিক্ষাদানে আরো বেশি উৎসাহিত এবং অনুপ্রাণিত করতে হবে। মেধাবী ছেলেমেয়েরা যেন শিক্ষকতা পেশায় আসতে পারে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। মেধাবীদের এই পেশার প্রতি আকৃষ্ট করতে বা ধরে রাখতে হলে সকল ধরনের বৈষম্য দূর করতে হবে। শিক্ষকদের দেশ-বিদেশে উচ্চতর প্রশিক্ষণের সুযোগ দিতে হবে, তাহলে তারা নিজেকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ করতে পারবে।

শিক্ষকদের ন্যায়সঙ্গত দাবিগুলো সরকার বিবেচনা করে বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজকে উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করবে এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাবেনÑ এই কামনা করি।

[লেখক : শিক্ষক]

back to top