মোজাম্মেল খান
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বাংলাদেশ নতুন করে বিক্ষোভের সাক্ষী হয়েছে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে, যেখানে শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগ এবং এর ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় যে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছিল তা নিয়ে অসন্তোষের কারণে এই বিক্ষোভ রাজনৈতিক জবাবদিহিতা এবং শাসন নিয়ে বিতর্ককে উসকে দিয়েছে। সমসাময়িক অভিযোগের প্রেক্ষাপটে সংস্কারের আহ্বান বৈধ হলেও, একটি সুস্পষ্ট বিষয় সুস্পষ্টভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে, সেটি হচ্ছে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর অন্ধকার ভূমিকা।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি আজকের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিহিত। ১৯৭১ সালের নৃশংসতায় জামায়াতে ইসলামীর সহযোগিতার জন্য দলটিকে কি দায়ী করা হবে না? এটি এমন একটি দল যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সক্রিয় বিরোধিতা এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতার ফলে অগণিত নির্দোষ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। জামায়াতের নেতৃত্বের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা, ধর্ষণ এবং বুদ্ধিজীবীদের নিয়মতান্ত্রিক লক্ষ্যবস্তুসহ যুদ্ধাপরাধ দেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্ক। এটা উদ্বেগজনক যে বর্তমান বিক্ষোভে এই নৃশংসতাগুলো উপেক্ষা করা হয়েছে। যে কারণে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, জামায়াতের বিষয়ে নীরবতা কেন? ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ অকল্পনীয় আতঙ্কের সাক্ষী ছিল এবং জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর স্বাধীনতা সংগ্রামী ও বেসামরিক নাগরিকদের উপর নিষ্ঠুর দমন-পীড়নে সহায়তা করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
জামায়াতের সদস্যরা আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম রক্তাক্ত অধ্যায় সংগঠিত করতে সহায়তা করেছিল, সরাসরি গণহত্যা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ওপর হামলায় অংশ নিয়েছিল। জামায়াতের অনেক নেতাকে পরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচার ও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল, কিন্তু তাদের অপরাধের উত্তরাধিকার আজকের রাজনৈতিক আলোচনায় মূলত অমীমাংসিত রয়ে গেছে। আজকের বিক্ষোভকারীরা যদি রাজনৈতিক জবাবদিহিতা নিয়ে সত্যিই উদ্বিগ্ন হয়, তাহলে কেন শুধু আওয়ামী লীগের দিকে মনোযোগ দেয়া হচ্ছে?
রাজনৈতিক অঙ্গনে জামায়াতের অনিয়ন্ত্রিত উপস্থিতি একটি সুস্পষ্ট ভুল যা এই বিক্ষোভের মর্যাদাকে ক্ষুণœ করে। ১৯৭১ সালের নৃশংসতায় জামায়াতের অনস্বীকার্য ভূমিকাকে উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানানো বৈপরীত্যপূর্ণ। এই বিষয়ে নীরব থাকলে বিক্ষোভকারীরা কি সত্যিই ন্যায়বিচার চাওয়ার দাবি করতে পারে?
এই নীরবতা অনেক কথা বলে এবং সমালোচনামূলক প্রশ্ন উত্থাপন করে। এটা কি অজ্ঞতার ফল নাকি জামায়াতের যুদ্ধকালীন অপরাধ উপেক্ষা করার সচেতন সিদ্ধান্ত? এক সময় বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়ের ভিত্তি স্তম্ভ ১৯৭১ সালের আখ্যান সম্ভবত নতুন প্রজন্মের কর্মীদের মধ্যে তার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছে। এটি উদ্বেগজনক যে সমসাময়িক অভিযোগগুলো আলাপ-আলোচনায় আধিপত্য বিস্তার করলেও, ১৯৭১ সালের ভয়াবহতাকে একপাশে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামীর নীরব পুনরুত্থান একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। বছরের পর বছর ধরে, দলটি যুদ্ধকালীন অপরাধ থেকে নিজেকে দূরে রাখার জন্য কাজ করেছে, নিজেকে একটি বৈধ রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে পুনরায় ব্র্যান্ড করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এই রিব্র্যান্ডিংয়ে জনসাধারণকে প্রতারিত করা উচিত নয়। ১৯৭১ সালে জামায়াতের কর্মকা- কোন বিস্মৃত অধ্যায় নয়; চরমপন্থি মতাদর্শ দ্বারা চালিত একটি দলকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে কাজ করার অনুমতি দেয়া হলে কী ঘটতে পারে তার একটি স্পষ্ট অনুস্মারক।
আওয়ামী লীগের সমালোচনা যদি বৈধ হয়, বিশেষত যখন দলটি দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনার অভিযোগের সঙ্গে সম্পর্কিত, তবে, রাজনৈতিক সংস্কারের যে কোন আহ্বান অবশ্যই ন্যায্যতা এবং সম্পূর্ণ জবাবদিহিতার অবস্থান থেকে আসতে হবে। জামায়াতের আরও জঘন্য অতীতকে উপেক্ষা করে নিকট অতীতের জন্য শুধু আওয়ামী লীগকে এককভাবে চিহ্নিত করা শুধু একপেশে ক্ষোভই নয়, বিক্ষোভকারীরা যে ন্যায়বিচারের নীতিগুলো সমর্থন করে বলে দাবি করে তার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। ১৯৭১ সালের শহীদদের রক্ত, ধর্ষিতদের আঘাত এবং জামায়াতের সদস্যদের হাতে প্রিয়জনদের হারানো পরিবারগুলোর যন্ত্রণা ন্যায়বিচারের জন্য চিৎকার করে। স্বাধীনতা যুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে নীরবতা শুধু উদ্বেগজনকই নয়, বিপজ্জনকও। এর থেকে ধরে নেয়া যায় যে, অতীতের ভয়াবহতা যদি আজকের রাজনৈতিক বর্ণনার সঙ্গে খাপ না খায় তবে তা সহজেই ভুলে যাওয়া যেতে পারে।
যদি আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে আলোচনা করতে চাই, তবে তা অবশ্যই একটি ব্যাপক আলোচনা হতে হবে। আওয়ামী লীগের বর্তমান ত্রুটিগুলো জামায়াতে ইসলামীকে একাত্তরে জাতির বিরুদ্ধে করা অপরাধ থেকে মুক্ত করে না। জামায়াতের যুদ্ধকালীন কর্মকা- এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা নিন্দা ও জবাবদিহিতার দাবি করে। এই ইতিহাসকে উপেক্ষা করার অর্থ হলো ১৯৭১ সালের ক্ষতগুলোকে নিরাময় না করে জ্বলতে দেওয়া। আজকের ছাত্র এবং আন্দোলনকারীদের এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, সমস্যার শুধু একটি দিককে চিহ্নিত করে ন্যায়বিচার অর্জন করা যায় না। যদি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানানো হয়, তাহলে জামায়াতে ইসলামীকে অবশ্যই সেই আলাপে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ১৯৭১ সালের নৃশংসতায় তাদের সম্পৃক্ততা মুছে ফেলা যায় না এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাদের অব্যাহত উপস্থিতি একটি উপহাস।
নিকট অতীতের রাজনৈতিক ক্ষোভ ২৪-এর আন্দোলনের জন্ম দিয়েছে। তবে ইতিহাসের অঙ্গারগুলোকে কখনই উপেক্ষা করা উচিত নয়। ১৯৭১ সালে জামায়াতের ভূমিকা জাতির ওপর একটি অমোচনীয় দাগ, এবং আজকের রাজনৈতিক দল নিষদ্ধ করার বিতর্কে এ সম্পর্কে নীরবতা যতটা বিপজ্জনক ততটাই উদ্বেগজনক। ন্যায়বিচারের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ জাতি হিসেবে এগিয়ে যেতে হলে আমাদের অতীতের পূর্ণ হিসাব-নিকাশ প্রয়োজন।
[লেখক : কানাডা প্রবাসী অধ্যাপক; কানাডার অন্টারিওর শেরিডান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির শেরিডান সিনেটের প্রাক্তন স্পিকার ]
মোজাম্মেল খান
শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বাংলাদেশ নতুন করে বিক্ষোভের সাক্ষী হয়েছে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে, যেখানে শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগ এবং এর ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় যে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছিল তা নিয়ে অসন্তোষের কারণে এই বিক্ষোভ রাজনৈতিক জবাবদিহিতা এবং শাসন নিয়ে বিতর্ককে উসকে দিয়েছে। সমসাময়িক অভিযোগের প্রেক্ষাপটে সংস্কারের আহ্বান বৈধ হলেও, একটি সুস্পষ্ট বিষয় সুস্পষ্টভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে, সেটি হচ্ছে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর অন্ধকার ভূমিকা।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি আজকের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিহিত। ১৯৭১ সালের নৃশংসতায় জামায়াতে ইসলামীর সহযোগিতার জন্য দলটিকে কি দায়ী করা হবে না? এটি এমন একটি দল যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সক্রিয় বিরোধিতা এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতার ফলে অগণিত নির্দোষ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। জামায়াতের নেতৃত্বের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা, ধর্ষণ এবং বুদ্ধিজীবীদের নিয়মতান্ত্রিক লক্ষ্যবস্তুসহ যুদ্ধাপরাধ দেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্ক। এটা উদ্বেগজনক যে বর্তমান বিক্ষোভে এই নৃশংসতাগুলো উপেক্ষা করা হয়েছে। যে কারণে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, জামায়াতের বিষয়ে নীরবতা কেন? ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ অকল্পনীয় আতঙ্কের সাক্ষী ছিল এবং জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর স্বাধীনতা সংগ্রামী ও বেসামরিক নাগরিকদের উপর নিষ্ঠুর দমন-পীড়নে সহায়তা করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
জামায়াতের সদস্যরা আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম রক্তাক্ত অধ্যায় সংগঠিত করতে সহায়তা করেছিল, সরাসরি গণহত্যা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ওপর হামলায় অংশ নিয়েছিল। জামায়াতের অনেক নেতাকে পরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচার ও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল, কিন্তু তাদের অপরাধের উত্তরাধিকার আজকের রাজনৈতিক আলোচনায় মূলত অমীমাংসিত রয়ে গেছে। আজকের বিক্ষোভকারীরা যদি রাজনৈতিক জবাবদিহিতা নিয়ে সত্যিই উদ্বিগ্ন হয়, তাহলে কেন শুধু আওয়ামী লীগের দিকে মনোযোগ দেয়া হচ্ছে?
রাজনৈতিক অঙ্গনে জামায়াতের অনিয়ন্ত্রিত উপস্থিতি একটি সুস্পষ্ট ভুল যা এই বিক্ষোভের মর্যাদাকে ক্ষুণœ করে। ১৯৭১ সালের নৃশংসতায় জামায়াতের অনস্বীকার্য ভূমিকাকে উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানানো বৈপরীত্যপূর্ণ। এই বিষয়ে নীরব থাকলে বিক্ষোভকারীরা কি সত্যিই ন্যায়বিচার চাওয়ার দাবি করতে পারে?
এই নীরবতা অনেক কথা বলে এবং সমালোচনামূলক প্রশ্ন উত্থাপন করে। এটা কি অজ্ঞতার ফল নাকি জামায়াতের যুদ্ধকালীন অপরাধ উপেক্ষা করার সচেতন সিদ্ধান্ত? এক সময় বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়ের ভিত্তি স্তম্ভ ১৯৭১ সালের আখ্যান সম্ভবত নতুন প্রজন্মের কর্মীদের মধ্যে তার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছে। এটি উদ্বেগজনক যে সমসাময়িক অভিযোগগুলো আলাপ-আলোচনায় আধিপত্য বিস্তার করলেও, ১৯৭১ সালের ভয়াবহতাকে একপাশে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামীর নীরব পুনরুত্থান একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। বছরের পর বছর ধরে, দলটি যুদ্ধকালীন অপরাধ থেকে নিজেকে দূরে রাখার জন্য কাজ করেছে, নিজেকে একটি বৈধ রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে পুনরায় ব্র্যান্ড করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এই রিব্র্যান্ডিংয়ে জনসাধারণকে প্রতারিত করা উচিত নয়। ১৯৭১ সালে জামায়াতের কর্মকা- কোন বিস্মৃত অধ্যায় নয়; চরমপন্থি মতাদর্শ দ্বারা চালিত একটি দলকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে কাজ করার অনুমতি দেয়া হলে কী ঘটতে পারে তার একটি স্পষ্ট অনুস্মারক।
আওয়ামী লীগের সমালোচনা যদি বৈধ হয়, বিশেষত যখন দলটি দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনার অভিযোগের সঙ্গে সম্পর্কিত, তবে, রাজনৈতিক সংস্কারের যে কোন আহ্বান অবশ্যই ন্যায্যতা এবং সম্পূর্ণ জবাবদিহিতার অবস্থান থেকে আসতে হবে। জামায়াতের আরও জঘন্য অতীতকে উপেক্ষা করে নিকট অতীতের জন্য শুধু আওয়ামী লীগকে এককভাবে চিহ্নিত করা শুধু একপেশে ক্ষোভই নয়, বিক্ষোভকারীরা যে ন্যায়বিচারের নীতিগুলো সমর্থন করে বলে দাবি করে তার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। ১৯৭১ সালের শহীদদের রক্ত, ধর্ষিতদের আঘাত এবং জামায়াতের সদস্যদের হাতে প্রিয়জনদের হারানো পরিবারগুলোর যন্ত্রণা ন্যায়বিচারের জন্য চিৎকার করে। স্বাধীনতা যুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে নীরবতা শুধু উদ্বেগজনকই নয়, বিপজ্জনকও। এর থেকে ধরে নেয়া যায় যে, অতীতের ভয়াবহতা যদি আজকের রাজনৈতিক বর্ণনার সঙ্গে খাপ না খায় তবে তা সহজেই ভুলে যাওয়া যেতে পারে।
যদি আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে আলোচনা করতে চাই, তবে তা অবশ্যই একটি ব্যাপক আলোচনা হতে হবে। আওয়ামী লীগের বর্তমান ত্রুটিগুলো জামায়াতে ইসলামীকে একাত্তরে জাতির বিরুদ্ধে করা অপরাধ থেকে মুক্ত করে না। জামায়াতের যুদ্ধকালীন কর্মকা- এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা নিন্দা ও জবাবদিহিতার দাবি করে। এই ইতিহাসকে উপেক্ষা করার অর্থ হলো ১৯৭১ সালের ক্ষতগুলোকে নিরাময় না করে জ্বলতে দেওয়া। আজকের ছাত্র এবং আন্দোলনকারীদের এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, সমস্যার শুধু একটি দিককে চিহ্নিত করে ন্যায়বিচার অর্জন করা যায় না। যদি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানানো হয়, তাহলে জামায়াতে ইসলামীকে অবশ্যই সেই আলাপে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ১৯৭১ সালের নৃশংসতায় তাদের সম্পৃক্ততা মুছে ফেলা যায় না এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাদের অব্যাহত উপস্থিতি একটি উপহাস।
নিকট অতীতের রাজনৈতিক ক্ষোভ ২৪-এর আন্দোলনের জন্ম দিয়েছে। তবে ইতিহাসের অঙ্গারগুলোকে কখনই উপেক্ষা করা উচিত নয়। ১৯৭১ সালে জামায়াতের ভূমিকা জাতির ওপর একটি অমোচনীয় দাগ, এবং আজকের রাজনৈতিক দল নিষদ্ধ করার বিতর্কে এ সম্পর্কে নীরবতা যতটা বিপজ্জনক ততটাই উদ্বেগজনক। ন্যায়বিচারের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ জাতি হিসেবে এগিয়ে যেতে হলে আমাদের অতীতের পূর্ণ হিসাব-নিকাশ প্রয়োজন।
[লেখক : কানাডা প্রবাসী অধ্যাপক; কানাডার অন্টারিওর শেরিডান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির শেরিডান সিনেটের প্রাক্তন স্পিকার ]