alt

উপ-সম্পাদকীয়

ট্রাম্পের বিজয় ও কিছু প্রশ্ন

ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ

: সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪
image

ডনাল্ড ট্রাম্প

অভিবাসী, মুসলমান, নারী, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন বিষয়ে তার নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তীব্রভাবে সমালোচিত ও বিতর্কিত ট্রাম্প। তার বিরুদ্ধে অশালীন আচরণ ও যৌন হয়রানি, এমনকি ধর্ষণের অভিযোগও ওঠেছে। এত কিছুর পরও দ্বিতীয়বারের মতো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর, মুসলিম নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন বিষয়ে একের পর এক বিতর্কিত সব কাজকর্ম করেন ট্রাম্প। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন রিপাবলিকান নেতা ডনাল্ড ট্রাম্প।

ট্রাম্পের বিজয়ে বৈশ্বিক পরিবর্তনের হাঁকডাকও নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। বিশ্ববাসীর প্রশ্নÑ ট্রাম্পের বিজয় মার্কিন নীতিকে কতটা প্রভাবিত করবে? ট্রাম্পের বিজয়ে বৈশ্বিক কোন ধরনের পরিবর্তন প্রাধান্য পাবে? রুশ ও ইউক্রেন নীতিতে কি পরবর্তন আসবে? তবে একথা বলা যায় যে, গোটা মধ্য প্রাচ্যের দাবানলের হ্রাস-বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসবে। এমনকি গাজা ও ইসরায়েলের আগ্রাসী নীতিতে পরিবর্তন আসতে পারে। ভারত ও চীন প্রসঙ্গের যদি অবতারনা করিÑ তবে সেক্ষেত্রে ভারত অনেকটা স্বস্তিজনক অবস্থায় থাকবে। যা-ই ঘটুক না কেন, মার্কিন নীতিতে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে এবং প্রায় একই রকম ভূমিকা পালন করে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী এবং দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। পুরো বিশ্বব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রীক হওয়ায় এ নির্বাচন সারা পৃথিবীর জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিশ্বের অর্থনীতি, সংঘাত, বাজার ব্যবস্থা এবং আরও বহুকিছুর ওপর প্রভাব ফেলবে এই নির্বাচনের ফলাফল। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পকে দ্বিতীয়বারের মতো বেছে নিতে আমেরিকান ভোটারদের সিদ্ধান্তটি এসেছে ব্যাপক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে। মূল্যস্ফীতি বাড়াবাড়ি মাত্রায় বেশি। চাকরির অনিশ্চয়তা নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। এর বিপরীতে স্থানীয় কর্মসংস্থান জোরদার এবং বিদেশি শ্রমের ওপর নির্ভরতা কমাতে ট্রাম্পের সুরক্ষাবাদী এজেন্ডা উদ্বিগ্ন ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করেছে। ‘আমেরিকাই প্রথম’ নীতির প্রতি নতুন করে অঙ্গীকার এবং অবৈধ অভিবাসীদের ব্যাপারে ট্রাম্পের কঠোর অবস্থান সীমান্তে কড়াকড়িপ্রত্যাশী ভোটারদের মধ্যে ভালো সাড়া ফেলেছে।

অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনী দৌড়ে গত জুলাইয়ে কমলা হ্যারিসের আসার বিষয়টি ছিল প্রত্যাশিত সময়ের চেয়েও দেরিতে। তিনি একজন অশ্বেতাঙ্গ নারী। এসব কারণে মূল ভোটারদের মধ্যে কমলার ব্যাপারে আবেদন থাকতে পারে। অনিশ্চিত এই সময়ে তারা ট্রাম্পকে তুলনামূলক ভালো প্রার্থী হিসেবে দেখেছেন। বিশ্বজুড়ে অনেককেই অবাক করেছে ২০২৪ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল। ক্ষমতাসীন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে নির্বাচন করে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক পছন্দগুলোর জোরালো পরিবর্তনের প্রতিফলন। এগুলোর মূলে নবায়নকৃত রিপাবলিকান নেতৃত্বের আন্তর্জাতিক প্রভাবের পাশাপাশি অর্থনৈতিক হতাশা, অভিবাসন ঘিরে উদ্বেগ ও জাতিগত সমীকরণও ছিল। ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের নতুন করে আবেদনের জোরালো কারণ এবং দক্ষিণ এশিয়া, বিশেষ করে বাংলাদেশের ওপর এর প্রভাবগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অগ্রাধিকার ও বিদেশে এর কৌশলগত বিন্যাসের মধ্যে গভীর আন্তঃসম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করে।

বাংলাদেশের অনেকেই বিশ্বাস করেন, ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে তারা একটি পরিবর্তনশীল সময়ে প্রবেশ করেছেন। ক্লিনটন, ওবামাসহ ডেমোক্র্যাট নেতাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততার জন্য পরিচিত ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের সময় তার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জিং মনে করতে পারেন। ট্রাম্প প্রশাসন এই অঞ্চলে মানবাধিকার ও জলবায়ু সুশাসন ইস্যুতে খুব বেছে বেছে প্রভাব খাটায়। বাইডেনসহ ডেমোক্র্যাট প্রশাসনগুলো জলবায়ুবিষয়ক উদ্যোগ ও মানবাধিকারকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। এ দুটিই বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসন জলবায়ু ও মানবাধিকারকে ততটা অগ্রাধিকার না দিয়ে লেনদেনমুখী কূটনীতি অনুসরণ করতে পারে। এতে ইউনূসের আন্তর্জাতিক মিত্র কমতে পারে। ইউনূসের কার্যালয় নিশ্চিত করেছে যে কয়েকজন রিপাবলিকানের সঙ্গে তার ইতিবাচক সম্পর্ক আছে। তবে অন্য রিপাবলিকানদের চেয়ে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি ও অগ্রাধিকার আলাদাÑ এ বিষয়টিও আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন। ট্রাম্পের লেনদেনভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতিতে জলবায়ু ইস্যু সম্ভবত পিছিয়ে যাচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি বিস্তৃত উপকূলরেখার বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। জলবায়ু ইস্যুতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল। ট্রাম্প প্রশাসনের সময় বাংলাদেশ এক্ষেত্রে আরও বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে। জলবায়ু চুক্তির বিষয়ে ট্রাম্পের ঐতিহাসিক অবস্থান, বিশেষ করে তার প্রথম মেয়াদে প্যারিস চুক্তি থেকে প্রত্যাহার, বৈশ্বিক জলবায়ু উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন কমানোর ধারাবাহিকতা জরুরি জলবায়ু অভিযোজন চাহিদা মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্ষমতাকে দুর্বল করতে পারে। জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা ঐতিহ্যগতভাবে ডেমোক্র্যাটদের অগ্রাধিকার। ট্রাম্পের এজেন্ডায় এটি গুরুত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এতে বাংলাদেশের উপকূলীয় সম্প্রদায়গুলোর ঝুঁকি বাড়বে।

নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট কি প্রভাব রাখতে পারেন বাংলাদেশে? এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত নির্বাচন দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে পারেন ডনাল্ড ট্রাম্প। একইসঙ্গে কমে যাবে বিভিন্ন ধরনের মানবিক সহায়তা। সারা বিশ্বের মতো দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের দৃষ্টিও মার্কিন প্রসাশনের দিকে। কেননা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং অভিবাসী নীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। যদিও যুক্তরাষ্ট্র নিজেদেরসহ সারা বিশ্বের টেকসই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী বলে রিপাবলিকান কিংবা ডেমোক্র্যাট যে-ই আসুক না কেন, ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতায় ফেরার একটি চাপ থাকবে বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের প্রভাব কী হবে তা অনুমান করা কঠিন। কারণ ট্রাম্প সম্পর্কেই অনুমান করা কঠিন। অতীতে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ট্রাম্প যা যা করেছেন তা থেকে তার কর্মকা- ও নীতি সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে ধারণা করা যায়। কিন্তু এবার যে তিনি ভিন্ন কিছু করবেন না তা কেউ নাকচ করতে পারে না। জলবায়ু ইস্যুতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যে উদ্যোগ নেবে তা বাইডেন প্রশাসনের চেয়ে অনেক ভিন্ন। জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমনের মতো ইস্যুতে তিনি খুব গুরুত্ব দেননি। এ কারণে আমার মনে হয়, যে দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলো জলবায়ু পরিবর্তন, সহযোগিতা, অভিযোজন ও প্রশমন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আরও নেতৃস্থানীয় ভূমিকা আশা করে, তারা এখনই উদ্বিগ্ন হবে। ট্রাম্প এবার ক্ষমতায় আসার পর আবারও মিত্রদের বিভিন্ন ইস্যুতে আর্থিক বোঝা ভাগাভাগির চাপ পুনর্জীবিত করবেনÑ এমনটি আমি ধারণা করতেই পারি। আমরা হয়তো দেখব, সহযোগিতার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে আর্থিক বোঝা না নিয়ে এক্ষেত্রে ট্রাম্প মিত্র দেশ বা জোটের বাকি শরিকদেরও ভূমিকা প্রত্যাশা করবেন। অঞ্চল হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রভাব খুব বেশি বলব না। আমার ধারণা, বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের সম্পর্কের ধারাবাহিকতা মোটাদাগে প্রায় অভিন্ন থাকবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ইন্দো-প্যাসিফিক নীতির আলোকেই আবর্তিত হয়েছে।

এটা স্পষ্ট যে, যুক্তরাষ্ট্রীয় নীতি রিপাবলিকান, ডেমোক্র্যাটÑ দুই পক্ষই সমর্থন করে। ট্রাম্প যখন প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক নীতি বা কৌশলের আনুষ্ঠানিক উদ্ভব হয়েছিল। ওই নীতি নেয়া হয়েছে চীনকে মোকাবিলার জন্য। আমরা আশা করতে পারি, ডনাল্ড ট্রাম্প এবারও চীনকে মোকাবেলায় ওই নীতি অনুসরণ করে যাবেন। ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের আলোকে ট্রাম্প প্রশাসন দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে দেশগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে কাজ করবে। বিশেষ করে এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব কমাতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বাড়াতে দৃষ্টি থাকবে ট্রাম্পের।

যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিযোগিতার পটভূমিতে দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশ যাতে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চীনের খুব কাছে না যায় তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করবে ট্রাম্প প্রশাসন। সুনির্দিষ্ট কিছু দেশের ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রের কাজ করার ধরন বদলাবে। যেমনÑ ভারত। বাংলাদেশের প্রতিবেশী ওই দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সম্পর্কের অগ্রাধিকারে কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। পরিচ্ছন্ন জ্বালানি খাতে সহযোগিতাকেও ট্রাম্প প্রশাসন অগ্রাধিকার দিতে চাইবে বলেও নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে বাণিজ্যক্ষেত্রে বিশ্বে যে উত্তেজনা ছিল তা আবার নতুন করে দেখা দিতে পারে। তবে রাশিয়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্যমান উত্তেজনা কিছুটা কমতেও পারে বলে। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের জোরালো সম্পর্ক আছে। এটি বাইডেন প্রশাসনের কাছে উদ্বেগের বিষয় ছিল। বিশেষ করে ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান শুরুর পর নয়াদিল্লি-মস্কো জোরালো সম্পর্ক বাইডেন প্রশাসন ভালোভাবে নেয়নি। তবে আমার ধারণা, রাশিয়া নিয়ে ট্রাম্প বাইডেনের চেয়ে আরও সংযত অবস্থান নেবেন। রাশিয়া ফ্যাক্টর, ভারত-রাশিয়া জোরালো সম্পর্কের কারণে ট্রাম্পের নতুন মেয়াদে নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্কের মধ্যে রাশিয়া বড় ইস্যু না-ও হতে পারে।

ট্রাম্পের বিজয়ের প্রভাব দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পড়তে পারে বাংলাদেশে। শেখ হাসিনার সরকার উৎখাত হওয়ার পর সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে নতুনত্ব এসেছে। বাংলাদেশ স্থিতিশীল, পুনর্গঠিত ও সংস্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সহযোগিতা, মানবিক সহায়তা গুরুত্ব পাচ্ছে। মনে হয় না, ট্রাম্প প্রশাসন এই সম্পর্ককে এই কাঠামোতে রাখার চেষ্টা করবে।যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিযোগিতাকে গুরুত্ব দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কে বেশি গুরুত্ব দেবে। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস অতীতে ট্রাম্পের প্রতি কতটা ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেনÑ বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা-ও বিশ্লেষণযোগ্য বিষয়ে পরিণত হতে পারে বলে অনুমান করা যায়। তাদের দুজনের রাজনীতির ধরন এক নয়। রাজনীতি ও বৈশ্বিক বিষয়ে তাদের দুজনের ভাবনায় অনেক পার্থক্য, এ বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি রাখতে হবে। ট্রাম্প প্রশাসন ও ইউনূসের সরকারÑ উভয়েই সফল ও স্বাভাবিক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক দেখতে চাইবে। তবে এই সম্পর্কের শুরুর দিকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। সর্বোপরি ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কিত বিষয়ে এবং ট্রাম্পের বিজয় উত্তর রাজনীতি ও বিশ্ব পরিস্থিতিতে গভীর পর্যবেক্ষণ এ সময়ের আসল কাজ।

[লেখক : সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি]

জ্ঞানই শক্তি

বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস : জোর দিতে হবে প্রতিরোধে

ঋণ ব্যবস্থা : তেলা মাথায় ঢালো তেল, ন্যাড়া মাথায় ভাঙো বেল

বিচারকের ওপর হামলা কেন

বৈশ্বিক নিষ্ক্রিয়তার কবলে রোহিঙ্গা ইস্যু

আন্তর্জাতিক দাসপ্রথা বিলোপ দিবস

বৈষম্য ঘোচাতে চাই একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়

রাজনীতির মূল লক্ষ্য জনকল্যাণ

সমস্যার সূতিকাগার

ছবি

বাংলাদেশে আলু চাষে আধুনিক উৎপাদন পদ্ধতি

দলীয় লেজুড়বৃত্তির শিক্ষক রাজনীতি বন্ধের পথ কী?

ব্যাংক সংস্কার : কাটবে কি অন্ধকার?

ছবি

নিত্যপণ্যের দামে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস

রম্যগদ্য: ম্যাড় ম্যাড়ে সোনা-কাহিনী

রাষ্ট্র সংস্কারে পাঠাগার

কেন এত ধ্বংস, কেন এত মৃত্যু

জলবায়ু সম্মেলন থেকে আমরা কী পেলাম

উচ্চশিক্ষায় মান বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ

ছবি

যানজট আর্থ-সামাজিক বিড়ম্বনাকে প্রকট করে তুলছে

যাচ্ছে দিন, বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা

ছবি

স্বপ্ন দেখতে তো ভুল নেই

ছবি

আহমদুল কবির : সাংবাদিকতা এবং রাজনীতিতে

ইতিহাসের কাছে মানুষ কী চায়?

আর্থিক সংকট কতটা গভীর

আদিবাসী নেতাদের দেখে নেয়ার হুমকি

সম্পত্তিতে এতিম নাতি-নাতনির অংশ ও বাস্তবতা

দলীয় লেজুড়বৃত্তির শিক্ষক রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাব

বোস-আইনস্টাইন সংখ্যায়ন তত্ত্বের শতবর্ষ

প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো বাঁচানো জরুরি

রঙ্গব্যঙ্গ : শাব্বাশ বিটিভি, জিন্দাবাদ, জিন্দাবাদ

নবজাগরণ : সত্যিই কি জাতি জেগেছে?

গ্রামভিত্তিক কর্মসংস্থানে জোর দিতে হবে

ছবি

কে যাস রে ভাটির গাঙ বাইয়া

লটারিতে ভর্তি : কবে দূর হবে সরকারি স্কুলগুলোর ‘করোনা মহামারী’?

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য নীতি খুব একটা পরিবর্তন হবে কি

অবমূল্যায়ন, মুদ্রাস্ফীতি, মূল্যস্ফীতি এবং প্রাসঙ্গিক কিছু চিন্তা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

ট্রাম্পের বিজয় ও কিছু প্রশ্ন

ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ

image

ডনাল্ড ট্রাম্প

সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪

অভিবাসী, মুসলমান, নারী, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন বিষয়ে তার নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তীব্রভাবে সমালোচিত ও বিতর্কিত ট্রাম্প। তার বিরুদ্ধে অশালীন আচরণ ও যৌন হয়রানি, এমনকি ধর্ষণের অভিযোগও ওঠেছে। এত কিছুর পরও দ্বিতীয়বারের মতো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর, মুসলিম নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন বিষয়ে একের পর এক বিতর্কিত সব কাজকর্ম করেন ট্রাম্প। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন রিপাবলিকান নেতা ডনাল্ড ট্রাম্প।

ট্রাম্পের বিজয়ে বৈশ্বিক পরিবর্তনের হাঁকডাকও নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। বিশ্ববাসীর প্রশ্নÑ ট্রাম্পের বিজয় মার্কিন নীতিকে কতটা প্রভাবিত করবে? ট্রাম্পের বিজয়ে বৈশ্বিক কোন ধরনের পরিবর্তন প্রাধান্য পাবে? রুশ ও ইউক্রেন নীতিতে কি পরবর্তন আসবে? তবে একথা বলা যায় যে, গোটা মধ্য প্রাচ্যের দাবানলের হ্রাস-বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসবে। এমনকি গাজা ও ইসরায়েলের আগ্রাসী নীতিতে পরিবর্তন আসতে পারে। ভারত ও চীন প্রসঙ্গের যদি অবতারনা করিÑ তবে সেক্ষেত্রে ভারত অনেকটা স্বস্তিজনক অবস্থায় থাকবে। যা-ই ঘটুক না কেন, মার্কিন নীতিতে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে এবং প্রায় একই রকম ভূমিকা পালন করে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী এবং দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। পুরো বিশ্বব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রীক হওয়ায় এ নির্বাচন সারা পৃথিবীর জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিশ্বের অর্থনীতি, সংঘাত, বাজার ব্যবস্থা এবং আরও বহুকিছুর ওপর প্রভাব ফেলবে এই নির্বাচনের ফলাফল। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পকে দ্বিতীয়বারের মতো বেছে নিতে আমেরিকান ভোটারদের সিদ্ধান্তটি এসেছে ব্যাপক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে। মূল্যস্ফীতি বাড়াবাড়ি মাত্রায় বেশি। চাকরির অনিশ্চয়তা নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। এর বিপরীতে স্থানীয় কর্মসংস্থান জোরদার এবং বিদেশি শ্রমের ওপর নির্ভরতা কমাতে ট্রাম্পের সুরক্ষাবাদী এজেন্ডা উদ্বিগ্ন ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করেছে। ‘আমেরিকাই প্রথম’ নীতির প্রতি নতুন করে অঙ্গীকার এবং অবৈধ অভিবাসীদের ব্যাপারে ট্রাম্পের কঠোর অবস্থান সীমান্তে কড়াকড়িপ্রত্যাশী ভোটারদের মধ্যে ভালো সাড়া ফেলেছে।

অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনী দৌড়ে গত জুলাইয়ে কমলা হ্যারিসের আসার বিষয়টি ছিল প্রত্যাশিত সময়ের চেয়েও দেরিতে। তিনি একজন অশ্বেতাঙ্গ নারী। এসব কারণে মূল ভোটারদের মধ্যে কমলার ব্যাপারে আবেদন থাকতে পারে। অনিশ্চিত এই সময়ে তারা ট্রাম্পকে তুলনামূলক ভালো প্রার্থী হিসেবে দেখেছেন। বিশ্বজুড়ে অনেককেই অবাক করেছে ২০২৪ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল। ক্ষমতাসীন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে নির্বাচন করে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক পছন্দগুলোর জোরালো পরিবর্তনের প্রতিফলন। এগুলোর মূলে নবায়নকৃত রিপাবলিকান নেতৃত্বের আন্তর্জাতিক প্রভাবের পাশাপাশি অর্থনৈতিক হতাশা, অভিবাসন ঘিরে উদ্বেগ ও জাতিগত সমীকরণও ছিল। ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের নতুন করে আবেদনের জোরালো কারণ এবং দক্ষিণ এশিয়া, বিশেষ করে বাংলাদেশের ওপর এর প্রভাবগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অগ্রাধিকার ও বিদেশে এর কৌশলগত বিন্যাসের মধ্যে গভীর আন্তঃসম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করে।

বাংলাদেশের অনেকেই বিশ্বাস করেন, ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে তারা একটি পরিবর্তনশীল সময়ে প্রবেশ করেছেন। ক্লিনটন, ওবামাসহ ডেমোক্র্যাট নেতাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততার জন্য পরিচিত ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের সময় তার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জিং মনে করতে পারেন। ট্রাম্প প্রশাসন এই অঞ্চলে মানবাধিকার ও জলবায়ু সুশাসন ইস্যুতে খুব বেছে বেছে প্রভাব খাটায়। বাইডেনসহ ডেমোক্র্যাট প্রশাসনগুলো জলবায়ুবিষয়ক উদ্যোগ ও মানবাধিকারকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। এ দুটিই বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসন জলবায়ু ও মানবাধিকারকে ততটা অগ্রাধিকার না দিয়ে লেনদেনমুখী কূটনীতি অনুসরণ করতে পারে। এতে ইউনূসের আন্তর্জাতিক মিত্র কমতে পারে। ইউনূসের কার্যালয় নিশ্চিত করেছে যে কয়েকজন রিপাবলিকানের সঙ্গে তার ইতিবাচক সম্পর্ক আছে। তবে অন্য রিপাবলিকানদের চেয়ে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি ও অগ্রাধিকার আলাদাÑ এ বিষয়টিও আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন। ট্রাম্পের লেনদেনভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতিতে জলবায়ু ইস্যু সম্ভবত পিছিয়ে যাচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি বিস্তৃত উপকূলরেখার বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। জলবায়ু ইস্যুতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল। ট্রাম্প প্রশাসনের সময় বাংলাদেশ এক্ষেত্রে আরও বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে। জলবায়ু চুক্তির বিষয়ে ট্রাম্পের ঐতিহাসিক অবস্থান, বিশেষ করে তার প্রথম মেয়াদে প্যারিস চুক্তি থেকে প্রত্যাহার, বৈশ্বিক জলবায়ু উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন কমানোর ধারাবাহিকতা জরুরি জলবায়ু অভিযোজন চাহিদা মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্ষমতাকে দুর্বল করতে পারে। জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা ঐতিহ্যগতভাবে ডেমোক্র্যাটদের অগ্রাধিকার। ট্রাম্পের এজেন্ডায় এটি গুরুত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এতে বাংলাদেশের উপকূলীয় সম্প্রদায়গুলোর ঝুঁকি বাড়বে।

নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট কি প্রভাব রাখতে পারেন বাংলাদেশে? এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত নির্বাচন দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে পারেন ডনাল্ড ট্রাম্প। একইসঙ্গে কমে যাবে বিভিন্ন ধরনের মানবিক সহায়তা। সারা বিশ্বের মতো দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের দৃষ্টিও মার্কিন প্রসাশনের দিকে। কেননা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং অভিবাসী নীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। যদিও যুক্তরাষ্ট্র নিজেদেরসহ সারা বিশ্বের টেকসই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী বলে রিপাবলিকান কিংবা ডেমোক্র্যাট যে-ই আসুক না কেন, ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতায় ফেরার একটি চাপ থাকবে বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের প্রভাব কী হবে তা অনুমান করা কঠিন। কারণ ট্রাম্প সম্পর্কেই অনুমান করা কঠিন। অতীতে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ট্রাম্প যা যা করেছেন তা থেকে তার কর্মকা- ও নীতি সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে ধারণা করা যায়। কিন্তু এবার যে তিনি ভিন্ন কিছু করবেন না তা কেউ নাকচ করতে পারে না। জলবায়ু ইস্যুতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যে উদ্যোগ নেবে তা বাইডেন প্রশাসনের চেয়ে অনেক ভিন্ন। জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমনের মতো ইস্যুতে তিনি খুব গুরুত্ব দেননি। এ কারণে আমার মনে হয়, যে দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলো জলবায়ু পরিবর্তন, সহযোগিতা, অভিযোজন ও প্রশমন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আরও নেতৃস্থানীয় ভূমিকা আশা করে, তারা এখনই উদ্বিগ্ন হবে। ট্রাম্প এবার ক্ষমতায় আসার পর আবারও মিত্রদের বিভিন্ন ইস্যুতে আর্থিক বোঝা ভাগাভাগির চাপ পুনর্জীবিত করবেনÑ এমনটি আমি ধারণা করতেই পারি। আমরা হয়তো দেখব, সহযোগিতার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে আর্থিক বোঝা না নিয়ে এক্ষেত্রে ট্রাম্প মিত্র দেশ বা জোটের বাকি শরিকদেরও ভূমিকা প্রত্যাশা করবেন। অঞ্চল হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রভাব খুব বেশি বলব না। আমার ধারণা, বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের সম্পর্কের ধারাবাহিকতা মোটাদাগে প্রায় অভিন্ন থাকবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ইন্দো-প্যাসিফিক নীতির আলোকেই আবর্তিত হয়েছে।

এটা স্পষ্ট যে, যুক্তরাষ্ট্রীয় নীতি রিপাবলিকান, ডেমোক্র্যাটÑ দুই পক্ষই সমর্থন করে। ট্রাম্প যখন প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক নীতি বা কৌশলের আনুষ্ঠানিক উদ্ভব হয়েছিল। ওই নীতি নেয়া হয়েছে চীনকে মোকাবিলার জন্য। আমরা আশা করতে পারি, ডনাল্ড ট্রাম্প এবারও চীনকে মোকাবেলায় ওই নীতি অনুসরণ করে যাবেন। ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের আলোকে ট্রাম্প প্রশাসন দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে দেশগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে কাজ করবে। বিশেষ করে এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব কমাতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বাড়াতে দৃষ্টি থাকবে ট্রাম্পের।

যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিযোগিতার পটভূমিতে দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশ যাতে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চীনের খুব কাছে না যায় তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করবে ট্রাম্প প্রশাসন। সুনির্দিষ্ট কিছু দেশের ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রের কাজ করার ধরন বদলাবে। যেমনÑ ভারত। বাংলাদেশের প্রতিবেশী ওই দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সম্পর্কের অগ্রাধিকারে কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। পরিচ্ছন্ন জ্বালানি খাতে সহযোগিতাকেও ট্রাম্প প্রশাসন অগ্রাধিকার দিতে চাইবে বলেও নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে বাণিজ্যক্ষেত্রে বিশ্বে যে উত্তেজনা ছিল তা আবার নতুন করে দেখা দিতে পারে। তবে রাশিয়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্যমান উত্তেজনা কিছুটা কমতেও পারে বলে। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের জোরালো সম্পর্ক আছে। এটি বাইডেন প্রশাসনের কাছে উদ্বেগের বিষয় ছিল। বিশেষ করে ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান শুরুর পর নয়াদিল্লি-মস্কো জোরালো সম্পর্ক বাইডেন প্রশাসন ভালোভাবে নেয়নি। তবে আমার ধারণা, রাশিয়া নিয়ে ট্রাম্প বাইডেনের চেয়ে আরও সংযত অবস্থান নেবেন। রাশিয়া ফ্যাক্টর, ভারত-রাশিয়া জোরালো সম্পর্কের কারণে ট্রাম্পের নতুন মেয়াদে নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্কের মধ্যে রাশিয়া বড় ইস্যু না-ও হতে পারে।

ট্রাম্পের বিজয়ের প্রভাব দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পড়তে পারে বাংলাদেশে। শেখ হাসিনার সরকার উৎখাত হওয়ার পর সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে নতুনত্ব এসেছে। বাংলাদেশ স্থিতিশীল, পুনর্গঠিত ও সংস্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সহযোগিতা, মানবিক সহায়তা গুরুত্ব পাচ্ছে। মনে হয় না, ট্রাম্প প্রশাসন এই সম্পর্ককে এই কাঠামোতে রাখার চেষ্টা করবে।যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিযোগিতাকে গুরুত্ব দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কে বেশি গুরুত্ব দেবে। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস অতীতে ট্রাম্পের প্রতি কতটা ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেনÑ বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা-ও বিশ্লেষণযোগ্য বিষয়ে পরিণত হতে পারে বলে অনুমান করা যায়। তাদের দুজনের রাজনীতির ধরন এক নয়। রাজনীতি ও বৈশ্বিক বিষয়ে তাদের দুজনের ভাবনায় অনেক পার্থক্য, এ বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি রাখতে হবে। ট্রাম্প প্রশাসন ও ইউনূসের সরকারÑ উভয়েই সফল ও স্বাভাবিক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক দেখতে চাইবে। তবে এই সম্পর্কের শুরুর দিকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। সর্বোপরি ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কিত বিষয়ে এবং ট্রাম্পের বিজয় উত্তর রাজনীতি ও বিশ্ব পরিস্থিতিতে গভীর পর্যবেক্ষণ এ সময়ের আসল কাজ।

[লেখক : সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি]

back to top