alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চাই সচেতনতা

কামরুজ্জামান

: মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪

নীরব ঘাতকের মতো যে সমস্যাটি দেশে ভয়াবহ আকার ধারণ করে চলেছে তা হলো এডিস মশার উপদ্রব। প্রতি বছরই আমাদের দেশে ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। এ বছর দেশে নানা রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকায় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সরকারি লোক, রাজনৈতিক নেতা সবাই ভুলে গেছে ডেঙ্গুর বিষয়টি। অথচ অনেক খবরের ভিড়ে প্রতিদিন দেখা যায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। মারাও যাচ্ছে মানুষ। কিন্তু এডিস মশা নিয়ে নেই কোনো সচেতনতা, নিয়ন্ত্রণে নেই কোনো পদক্ষেপ বা কার্যকরী উদ্যোগ।

দেশে এডিস মশার আক্রমণে মানুষ সাধারণত অসুস্থ হয় বর্ষাকালে, জুন থেকে অক্টোবর মাসের শেষ সময় পর্যন্ত। এই সময় এডিস মশার বংশবিস্তার এবং আক্রমণ দুটোই বেড়ে যায়। তবে মিডিয়া থেকে দেখা যায়, এবার এই নভেম্বর মাসেও ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। যেটি খুবই শঙ্কা প্রকাশ করে।

আমাদের দেশে একসময় ধারণা করা হতো এডিস মশা শহরে মশা। এখন ধারণা পরিবর্তন হয়েছে। সারাদেশেই এখন এডিস মশার আক্রমণ দেখা যায়। সারাদেশেই ডেঙ্গুরোগী পাওয়া যায়। এতে বোঝা যায়Ñ এডিস মশার উপদ্রব এখন দেশজুড়েই।

আগে বলা হতো এডিস মশা শুধু দিনের বেলায় কামড়ায়। বিকাল থেকে সন্ধ্যার সময়ে বেশি আক্রমণ করে। কিন্তু এর কোনো বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা নেই। এখন দেখা যায় রাতদিন সব সময়ই এডিস মশা আক্রমণ করে থাকে। এডিস মশা সব বয়সী মানুষকেই কামড়ায় তবে শিশু ও কিশোররা বেশি ঝুঁকিতে থাকে। এর কারণ হচ্ছেÑ শিশুরা দীর্ঘসময় ঘুমায়। মশারি টানানো না থাকলে এডিস মশায় আক্রমণ করে। কিশোররা টেবিলে বসে পড়ালেখা করার সময় এডিস মশার আক্রমণের শিকার হয়।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের মোক্ষম হাতিয়ার হচ্ছে এডিস মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করা। দেশে প্রতি বছর বর্ষায় ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়লে হাসপাতালগুলোতে নেয়া হয় বাড়তি সুবিধার ব্যবস্থা। করা সুনির্দিষ্ট ডেঙ্গুরোগীর হাসপাতাল। অথবা অনেক হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগীর জন্য আলাদা সাইড করা হয়। বাড়তি চিকিৎসা ব্যবস্থা নেয়া হয়। বরাদ্দ বাড়ানো হয়। এগুলো নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। কিন্তু এতসব কিছু করেও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয় না। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। এডিস মশার উৎসস্থল ধ্বংস করতে না পারলে ডেঙ্গুজ্বর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তাই আগে এডিস মশার উৎসস্থল ধ্বংস করতে হবে।

বাসাবাড়ির ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। বাড়ির আঙ্গিনায়, আশপাশে ডাবের খোসা, টায়ার টিউব, পলিথিন ও চিপসের প্যাকেট ফেলে রাখা যাবে না। এগুলোতে পানি জমতে দেয়া যাবে না। একটা নির্দিষ্ট এলাকার (সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ) ময়লা আবর্জনা পরিশোধনের ব্যবস্থা করতে হবে। নদী খাল ও প্রাকৃতিক জলাশয়ে ময়লা আবর্জনা ফেলা যাবে না।

বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত ফুলের টব, ফুলদানি, ফ্রিজ, এসি ইত্যাদিতে পানি জমা রাখা যাবে না। ফুলের টব ও ফুলদানির পানি প্রতিদিন পরিবর্তন করে দিতে হবে। এসি, ফ্রিজের পানি প্রতিদিন অপসারণ করতে হবে।

সরকারিভাবে ময়লা আবর্জনা অপসারণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অতিরিক্ত বরাদ্দ দিতে হবে। বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে দেশব্যাপী এডিস মশার উৎসস্থল ধ্বংসে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। ধোঁয়া দিয়ে মশা নিধনের পাশাপাশি ড্রেনে জমে থাকা ময়লা আবর্জনা সরাতে হবে।

নির্মাণাধীন বাড়ি, পরিত্যক্ত বাড়িঘর, পরিত্যক্ত গাড়ি ও অব্যবহৃত প্লাস্টিকসামগ্রী যেখানে পানি জমে থাকতে পারে এগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এগুলোতে এডিস মশা বংশবিস্তার করে থাকে।

দিনে বা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। ছেলেমেয়েরা পড়ালেখার টেবিলে বসার সময় মশানিরোধক ওষুধ বা স্প্রে ব্যবহার করতে হবে।

এডিস মশা বংশবিস্তার রোধে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। মিডিয়াকে কাজে লাগাতে হবে। অসচেতন বাসাবাড়ির মালিকদের জরিমানার আওতায় আনতে হবে। সাধারণ নাগরিক যারা এডিস মশা বংশবিস্তার রোধে কাজ করবে তাদের পুরস্কৃত করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনকে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। তবেই সম্ভব হবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ।

[লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা কলেজ, গাজীপুর]

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

প্রকৃতার্থে ফকির কারা

এনসিপি চায় অবিনাশী জুলাই সনদ

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

আলুর প্রাচুর্যে কৃষকের সংকট

তাহলে কী ‘কোটা’ই জয়যুক্ত হবে!

ব্যাংকিং খাতে বিষফোঁড়া: বাংলাদেশের অর্থনীতির ধমনী বিষাক্ত হয়ে উঠছে

ছবি

ঢাকার নদী ও খালের দখল-দূষণ: পুনরুদ্ধার কোন পথে

জমি কী মূলে রেকর্ড হয়েছে, দলিল মূলে না উত্তরাধিকার মূলে?

কার্বন-নিরপেক্ষ শিশুর অনুপ্রেরণায় দেশ

এবার আমরা সভ্য হলাম!

সোনার প্রাসাদের দেয়ালে ঘামের দাগ

নিরাপদ সড়ক চাই কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ কোথায়?

অবহেলিত শিক্ষার দুর্দশা বাড়ছে

টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত নিরাপদ সড়ক

বাংলার সংস্কৃতি কি মূলধারা হারিয়ে ফেলবে?

ছবি

সমদৃষ্টি, বহুত্ববাদী সমাজ এবং সহিষ্ণুতা

খাদ্য অপচয় : ক্ষুধার্ত পৃথিবীর এক নিঃশব্দ ট্র্যাজেডি

টেকসই বাংলাদেশ গঠনে পরিবেশ সংস্কার কেন অপরিহার্য

সে এক রূপকথারই দেশ

উপকূলের খাদ্যসংকট নিয়ে ভাবছেন কি নীতিনির্ধারকেরা?

মানসিক স্বাস্থ্য: মানবাধিকারের নতুন চ্যালেঞ্জ

ঢাকার যানজট ও বিকেন্দ্রীকরণ

নির্বাচনী মাঠে জামায়াতী হেকমত

শিক্ষা ব্যবস্থায় গভীর বৈষম্য ও জাতির অগ্রযাত্রাধ

উপমহাদেশে সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন, বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ

এইচএসসি ফল: সংখ্যার খেল না কি শিক্ষার বাস্তব চিত্র?

বিনা ভোট, নিশি ভোট, ডামি ভোটের পরে এবার নাকি গণভোট!

কমরেড ইলা মিত্রের শততম জন্মজয়ন্তী

কত মৃত্যু হলে জাগবে বিবেক?

বৈষম্যের বিবিধ মুখ

মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় জরুরি আইনি সহায়তা

গাজা : এখন শান্তি রক্ষা করবে কে?

দোসর, বাই ডিফল্ট!

জমি কেনা দাগে দাগে কিন্তু ভোগদখল একদাগে

রাষ্ট্র কি শুধু শিক্ষকদের বেলায় এসে দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে?

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চাই সচেতনতা

কামরুজ্জামান

মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪

নীরব ঘাতকের মতো যে সমস্যাটি দেশে ভয়াবহ আকার ধারণ করে চলেছে তা হলো এডিস মশার উপদ্রব। প্রতি বছরই আমাদের দেশে ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। এ বছর দেশে নানা রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকায় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সরকারি লোক, রাজনৈতিক নেতা সবাই ভুলে গেছে ডেঙ্গুর বিষয়টি। অথচ অনেক খবরের ভিড়ে প্রতিদিন দেখা যায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। মারাও যাচ্ছে মানুষ। কিন্তু এডিস মশা নিয়ে নেই কোনো সচেতনতা, নিয়ন্ত্রণে নেই কোনো পদক্ষেপ বা কার্যকরী উদ্যোগ।

দেশে এডিস মশার আক্রমণে মানুষ সাধারণত অসুস্থ হয় বর্ষাকালে, জুন থেকে অক্টোবর মাসের শেষ সময় পর্যন্ত। এই সময় এডিস মশার বংশবিস্তার এবং আক্রমণ দুটোই বেড়ে যায়। তবে মিডিয়া থেকে দেখা যায়, এবার এই নভেম্বর মাসেও ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। যেটি খুবই শঙ্কা প্রকাশ করে।

আমাদের দেশে একসময় ধারণা করা হতো এডিস মশা শহরে মশা। এখন ধারণা পরিবর্তন হয়েছে। সারাদেশেই এখন এডিস মশার আক্রমণ দেখা যায়। সারাদেশেই ডেঙ্গুরোগী পাওয়া যায়। এতে বোঝা যায়Ñ এডিস মশার উপদ্রব এখন দেশজুড়েই।

আগে বলা হতো এডিস মশা শুধু দিনের বেলায় কামড়ায়। বিকাল থেকে সন্ধ্যার সময়ে বেশি আক্রমণ করে। কিন্তু এর কোনো বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা নেই। এখন দেখা যায় রাতদিন সব সময়ই এডিস মশা আক্রমণ করে থাকে। এডিস মশা সব বয়সী মানুষকেই কামড়ায় তবে শিশু ও কিশোররা বেশি ঝুঁকিতে থাকে। এর কারণ হচ্ছেÑ শিশুরা দীর্ঘসময় ঘুমায়। মশারি টানানো না থাকলে এডিস মশায় আক্রমণ করে। কিশোররা টেবিলে বসে পড়ালেখা করার সময় এডিস মশার আক্রমণের শিকার হয়।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের মোক্ষম হাতিয়ার হচ্ছে এডিস মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করা। দেশে প্রতি বছর বর্ষায় ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়লে হাসপাতালগুলোতে নেয়া হয় বাড়তি সুবিধার ব্যবস্থা। করা সুনির্দিষ্ট ডেঙ্গুরোগীর হাসপাতাল। অথবা অনেক হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগীর জন্য আলাদা সাইড করা হয়। বাড়তি চিকিৎসা ব্যবস্থা নেয়া হয়। বরাদ্দ বাড়ানো হয়। এগুলো নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। কিন্তু এতসব কিছু করেও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয় না। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। এডিস মশার উৎসস্থল ধ্বংস করতে না পারলে ডেঙ্গুজ্বর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তাই আগে এডিস মশার উৎসস্থল ধ্বংস করতে হবে।

বাসাবাড়ির ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। বাড়ির আঙ্গিনায়, আশপাশে ডাবের খোসা, টায়ার টিউব, পলিথিন ও চিপসের প্যাকেট ফেলে রাখা যাবে না। এগুলোতে পানি জমতে দেয়া যাবে না। একটা নির্দিষ্ট এলাকার (সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ) ময়লা আবর্জনা পরিশোধনের ব্যবস্থা করতে হবে। নদী খাল ও প্রাকৃতিক জলাশয়ে ময়লা আবর্জনা ফেলা যাবে না।

বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত ফুলের টব, ফুলদানি, ফ্রিজ, এসি ইত্যাদিতে পানি জমা রাখা যাবে না। ফুলের টব ও ফুলদানির পানি প্রতিদিন পরিবর্তন করে দিতে হবে। এসি, ফ্রিজের পানি প্রতিদিন অপসারণ করতে হবে।

সরকারিভাবে ময়লা আবর্জনা অপসারণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অতিরিক্ত বরাদ্দ দিতে হবে। বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে দেশব্যাপী এডিস মশার উৎসস্থল ধ্বংসে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। ধোঁয়া দিয়ে মশা নিধনের পাশাপাশি ড্রেনে জমে থাকা ময়লা আবর্জনা সরাতে হবে।

নির্মাণাধীন বাড়ি, পরিত্যক্ত বাড়িঘর, পরিত্যক্ত গাড়ি ও অব্যবহৃত প্লাস্টিকসামগ্রী যেখানে পানি জমে থাকতে পারে এগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এগুলোতে এডিস মশা বংশবিস্তার করে থাকে।

দিনে বা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। ছেলেমেয়েরা পড়ালেখার টেবিলে বসার সময় মশানিরোধক ওষুধ বা স্প্রে ব্যবহার করতে হবে।

এডিস মশা বংশবিস্তার রোধে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। মিডিয়াকে কাজে লাগাতে হবে। অসচেতন বাসাবাড়ির মালিকদের জরিমানার আওতায় আনতে হবে। সাধারণ নাগরিক যারা এডিস মশা বংশবিস্তার রোধে কাজ করবে তাদের পুরস্কৃত করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনকে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। তবেই সম্ভব হবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ।

[লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা কলেজ, গাজীপুর]

back to top