alt

উপ-সম্পাদকীয়

আদিবাসী নেতাদের দেখে নেয়ার হুমকি

মিথুশিলাক মুরমু

: শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

গত ১৬ নভেম্বর ‘উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরাম’র দেয়া একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক প্রদীপ হেমব্রম স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে চরম আশঙ্কা ও উদ্বেগের কথা বলা হয়েছে। প্রদীপ হেমব্রমের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি। তিনি জানালেন, গত ৫ আগস্টের পর উত্তরবঙ্গে আদিবাসী মানুষ, পরিবার হামলার শিকার হচ্ছে। অনেকের ঘরবাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। উচ্ছেদের ঘটনাও ঘটেছে। উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে।

ফোরামের নেতারা আদিবাসীদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার, সরকারি অফিস-আদালতে লিয়াজোঁ করেন, ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় রাজপথে অগ্রগামী। তাদের যদি বৃহত্তর সম্প্রদায়ের লোকজন দেখে নেয়ার হুমকি দেন তাহলে সাধারণ আদিবাসীদের অবস্থা কী! এই ঘটনা আদিবাসী পল্লীতে আতঙ্ক তৈরি করেছে। আদিবাসীরা দিনের আলো এবং রাতের অন্ধকারের মধ্যে কোনো তফাৎ দেখছেন না। ক্ষমতাবানরা হরহামেশাই আদিবাসীদের গ্রামে গিয়ে নিরীহ আদিবাসীদের অতিষ্ঠ করে তুলেছে।

ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর গত ৭ আগস্ট এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ‘উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরাম’ আগস্ট ৫ থেকে ৭ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে মাত্র ৩ দিনে ২২টি ঘটনার চিত্র তুলে ধরেছিল। সে সময় প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছিল, ‘চলমান কোটা আন্দোলনের সফল পরিসমাপ্তির ক্ষণে দেশের উত্তরবঙ্গের জাতিগত সংখ্যালঘু আদিবাসী সাঁওতাল, উরাঁও, মাহালী, মু-ারা চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করছেন। প্রকাশ্যে দিনের আলোয় কিংবা রাতের আঁধারে একদল দুর্বৃত্ত আদিবাসীদের পরিবার, গ্রাম লুণ্ঠন করে নিঃস্ব করে তুলেছে। ঘরের আসবাবপত্র, টাকা-পয়সা, গরু-ছাগল, গাছ-গাছালি হরণের পর অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। এতে পুরো এলাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন আদিবাসীরা। ইতোমধ্যেই স্থানচ্যুত হয়েছেন অনেকেই। সমতলে প্রায় ত্রিশ লক্ষাধিক আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস থাকলেও প্রায় প্রতিটি সরকার আমলে এই জনগোষ্ঠীকে উপেক্ষা করা হয়েছে। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, উত্তরবঙ্গ থেকে কোনো আদিবাসীকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে নেয়া হয়নি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরবর্তীকালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে। আমরা আশা করেছিলাম, দেশে বসবাসরত আদিবাসীরা বিগত সময়ের থেকে অপেক্ষাকৃত ভালো থাকবেন। বাস্তবে কোনো উন্নতি হয়নি। আদিবাসীরা জানিয়েছেন, এখন একটি গোষ্ঠী বলছে, আওয়ামী লীগ সরকার নেই, কে তোমাদের বাঁচাবে। নেতারা যুগের পর যুগ ধরে বসবাসরত আদিবাসীদের জন্মভিটা এবং পৈতৃক সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা সমগ্র উত্তরবঙ্গে মড়কের মতো ছড়িয়ে গেছে। ‘উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরাম’র নেতারা অসহায় আদিবাসীদের পাশে দাঁড়াতেই তারাও টার্গেটে পরিণত হয়েছেন।

দেশের নাগরিক হিসেবে নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার প্রত্যেকের আছে, সেক্ষেত্রে যারা সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত ও প্রান্তিক তাদের বিষয়ে প্রশাসনের বিশেষ দৃষ্টি দেয়া জরুরি। ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি হিংগু মুরমু এবং সাধারণ সম্পাদক প্রভাত টুডুকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরাম প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছে, ‘বিগত ৭ নভেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলা চত্বরে আদিবাসীদের জমি-জায়গার সমস্যা নিয়ে আলোচনাকে কেন্দ্র করে খোদ উপজেলা চত্বরেই উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হিংগু মুরমুকে অশালীন ও গালাগাল, শারীরিক অঙ্গভঙ্গি দিয়ে অপমান, মারার জন্য তেড়ে আসা এবং প্রকাশ্যে দেখে নেয়ার হুমকি প্রদান করে চিহ্নিত প্রভাবশালীরা। প্রশাসনিক চত্বরে এহেন পরিস্থিতি এবং দায়িত্বশীলদের মৌনতা আমাদেরকে সংক্ষুব্ধ করে তুলেছে।’

গত ১৫ নভেম্বর সকাল ৮ ঘটিকার দিকে উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট প্রভাত টুডুকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার আমনুরা রেলবাজার থেকে গ্রামের বাড়িতে যাবার প্রাক্কালে চিহ্নিত ব্যক্তিরা দলবল প্রকাশ্যে বাজারে পথরোধ করে অপমান, অপদস্ত করে সম্মান ও সুনামের ক্ষুণœ করেছে। আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেই ক্ষান্ত হননি, কীভাবে এদেশে বসবাস করবে, সেটিরও হুঁশিয়ারি দিয়েছে। উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরাম নির্যাতিত-নিপীড়িত, অত্যাচারিত- উচ্ছেদিত আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় সরব ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশেষত ৫ আগস্টের পরবর্তীকালে মানবাধিকার কর্মীদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরির্দশন এবং প্রশাসনে চাপ সৃষ্টি করে ক্ষমতাবানদের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছে।

উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক-এর ওপর ঘটে যাওয়া পরপর ঘটনাকে কোনোভাবেই স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে গ্রহণ করা যায় না। যারাই আদিবাসীদের অধিকার বিষয়ে সোচ্চার, তারাই ক্ষমতাবানদের টার্গেটে পরিণত হচ্ছেন।

আমরা মনে করি, এটি সাম্প্রদায়িকতা, আদিবাসীদের পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদের নীলনকশা এবং অধিকারকে উপেক্ষা করে দেশকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘... কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে কেউ সমাজে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করলে আমরা তাকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় নিয়ে আসব।

আমরা একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এমন কোন কাজ কেউ কোনোভাবেই করবেন না। ...সবাই মিলে আমাদের পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে, সে ঝাড়–দার হোক, ছাত্র হোক, শিক্ষক হোক, যে কোনো ধর্মের হোক, সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করতে চাই। এই হলো আমাদের সংস্কারের মূল লক্ষ্য।’

আমরা আশা করতে চাই, অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রীতির বাংলাদেশ বির্নিমাণে পিছিয়ে পড়া ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দিকে দৃষ্টি দেবে। আদিবাসীদের মুখে হাসি ফুটলেই বুঝব দেশ ন্যায্যতা ও উন্নয়নের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

[লেখক : কলামিস্ট ]

আর্থিক সংকট কতটা গভীর

সম্পত্তিতে এতিম নাতি-নাতনির অংশ ও বাস্তবতা

দলীয় লেজুড়বৃত্তির শিক্ষক রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাব

বোস-আইনস্টাইন সংখ্যায়ন তত্ত্বের শতবর্ষ

প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো বাঁচানো জরুরি

রঙ্গব্যঙ্গ : শাব্বাশ বিটিভি, জিন্দাবাদ, জিন্দাবাদ

নবজাগরণ : সত্যিই কি জাতি জেগেছে?

গ্রামভিত্তিক কর্মসংস্থানে জোর দিতে হবে

ছবি

কে যাস রে ভাটির গাঙ বাইয়া

লটারিতে ভর্তি : কবে দূর হবে সরকারি স্কুলগুলোর ‘করোনা মহামারী’?

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য নীতি খুব একটা পরিবর্তন হবে কি

অবমূল্যায়ন, মুদ্রাস্ফীতি, মূল্যস্ফীতি এবং প্রাসঙ্গিক কিছু চিন্তা

মুজিব কি কেবলই ছবি

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন

আধিপত্যের রাজনীতি আর ঢালাও মামলা

বিচারের আগে মিডিয়া ট্রায়াল

ছবি

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন-মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্ক

শাসনব্যবস্থার যে সংস্কার না করলেই নয়

প্রকৃতির বৈরী আচরণ এবং আমাদের প্রস্তুতি

নবান্ন এবং বিশেষ কিছু ধানের কথা

নিজের পায়ে দাঁড়াও

দলীয় লেজুড়বৃত্তির ছাত্ররাজনীতি বন্ধে করণীয় কী

রঙ্গব্যঙ্গ : ভুল সবই ভুল

লালন ফকির : শোষিত-বঞ্চিত মানুষের কণ্ঠস্বর

বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস

ঘরছাড়া করা হয়েছে মুংলু বেসরাকে, দেশে কী তিনি থাকতে পারবেন?

ছবি

জলবায়ু সম্মেলনে সমাধানের আলো দেখতে চাই

ফার্মাসিউটিক্যাল প্যাকেজিংয়ে গ্লাস ব্যবহারের সুবিধা

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চাই সচেতনতা

হৃদয়ে বাংলাদেশ

এত রক্ত এত অশ্রু, তাও কি স্বর্গ হবে না কেনা!

নদ-নদী দূষণমুক্ত রাখতে হবে

বিব্রত হই, বিব্রত নই

ছবি

ট্রাম্পের বিজয় ও কিছু প্রশ্ন

পোশাক শিল্পের সংকট

রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা নিয়ে কিছু কথা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

আদিবাসী নেতাদের দেখে নেয়ার হুমকি

মিথুশিলাক মুরমু

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

গত ১৬ নভেম্বর ‘উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরাম’র দেয়া একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক প্রদীপ হেমব্রম স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে চরম আশঙ্কা ও উদ্বেগের কথা বলা হয়েছে। প্রদীপ হেমব্রমের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি। তিনি জানালেন, গত ৫ আগস্টের পর উত্তরবঙ্গে আদিবাসী মানুষ, পরিবার হামলার শিকার হচ্ছে। অনেকের ঘরবাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। উচ্ছেদের ঘটনাও ঘটেছে। উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে।

ফোরামের নেতারা আদিবাসীদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার, সরকারি অফিস-আদালতে লিয়াজোঁ করেন, ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় রাজপথে অগ্রগামী। তাদের যদি বৃহত্তর সম্প্রদায়ের লোকজন দেখে নেয়ার হুমকি দেন তাহলে সাধারণ আদিবাসীদের অবস্থা কী! এই ঘটনা আদিবাসী পল্লীতে আতঙ্ক তৈরি করেছে। আদিবাসীরা দিনের আলো এবং রাতের অন্ধকারের মধ্যে কোনো তফাৎ দেখছেন না। ক্ষমতাবানরা হরহামেশাই আদিবাসীদের গ্রামে গিয়ে নিরীহ আদিবাসীদের অতিষ্ঠ করে তুলেছে।

ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর গত ৭ আগস্ট এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ‘উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরাম’ আগস্ট ৫ থেকে ৭ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে মাত্র ৩ দিনে ২২টি ঘটনার চিত্র তুলে ধরেছিল। সে সময় প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছিল, ‘চলমান কোটা আন্দোলনের সফল পরিসমাপ্তির ক্ষণে দেশের উত্তরবঙ্গের জাতিগত সংখ্যালঘু আদিবাসী সাঁওতাল, উরাঁও, মাহালী, মু-ারা চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করছেন। প্রকাশ্যে দিনের আলোয় কিংবা রাতের আঁধারে একদল দুর্বৃত্ত আদিবাসীদের পরিবার, গ্রাম লুণ্ঠন করে নিঃস্ব করে তুলেছে। ঘরের আসবাবপত্র, টাকা-পয়সা, গরু-ছাগল, গাছ-গাছালি হরণের পর অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। এতে পুরো এলাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন আদিবাসীরা। ইতোমধ্যেই স্থানচ্যুত হয়েছেন অনেকেই। সমতলে প্রায় ত্রিশ লক্ষাধিক আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস থাকলেও প্রায় প্রতিটি সরকার আমলে এই জনগোষ্ঠীকে উপেক্ষা করা হয়েছে। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, উত্তরবঙ্গ থেকে কোনো আদিবাসীকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে নেয়া হয়নি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরবর্তীকালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে। আমরা আশা করেছিলাম, দেশে বসবাসরত আদিবাসীরা বিগত সময়ের থেকে অপেক্ষাকৃত ভালো থাকবেন। বাস্তবে কোনো উন্নতি হয়নি। আদিবাসীরা জানিয়েছেন, এখন একটি গোষ্ঠী বলছে, আওয়ামী লীগ সরকার নেই, কে তোমাদের বাঁচাবে। নেতারা যুগের পর যুগ ধরে বসবাসরত আদিবাসীদের জন্মভিটা এবং পৈতৃক সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা সমগ্র উত্তরবঙ্গে মড়কের মতো ছড়িয়ে গেছে। ‘উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরাম’র নেতারা অসহায় আদিবাসীদের পাশে দাঁড়াতেই তারাও টার্গেটে পরিণত হয়েছেন।

দেশের নাগরিক হিসেবে নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার প্রত্যেকের আছে, সেক্ষেত্রে যারা সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত ও প্রান্তিক তাদের বিষয়ে প্রশাসনের বিশেষ দৃষ্টি দেয়া জরুরি। ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি হিংগু মুরমু এবং সাধারণ সম্পাদক প্রভাত টুডুকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরাম প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছে, ‘বিগত ৭ নভেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলা চত্বরে আদিবাসীদের জমি-জায়গার সমস্যা নিয়ে আলোচনাকে কেন্দ্র করে খোদ উপজেলা চত্বরেই উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হিংগু মুরমুকে অশালীন ও গালাগাল, শারীরিক অঙ্গভঙ্গি দিয়ে অপমান, মারার জন্য তেড়ে আসা এবং প্রকাশ্যে দেখে নেয়ার হুমকি প্রদান করে চিহ্নিত প্রভাবশালীরা। প্রশাসনিক চত্বরে এহেন পরিস্থিতি এবং দায়িত্বশীলদের মৌনতা আমাদেরকে সংক্ষুব্ধ করে তুলেছে।’

গত ১৫ নভেম্বর সকাল ৮ ঘটিকার দিকে উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট প্রভাত টুডুকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার আমনুরা রেলবাজার থেকে গ্রামের বাড়িতে যাবার প্রাক্কালে চিহ্নিত ব্যক্তিরা দলবল প্রকাশ্যে বাজারে পথরোধ করে অপমান, অপদস্ত করে সম্মান ও সুনামের ক্ষুণœ করেছে। আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেই ক্ষান্ত হননি, কীভাবে এদেশে বসবাস করবে, সেটিরও হুঁশিয়ারি দিয়েছে। উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরাম নির্যাতিত-নিপীড়িত, অত্যাচারিত- উচ্ছেদিত আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় সরব ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশেষত ৫ আগস্টের পরবর্তীকালে মানবাধিকার কর্মীদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরির্দশন এবং প্রশাসনে চাপ সৃষ্টি করে ক্ষমতাবানদের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছে।

উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক-এর ওপর ঘটে যাওয়া পরপর ঘটনাকে কোনোভাবেই স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে গ্রহণ করা যায় না। যারাই আদিবাসীদের অধিকার বিষয়ে সোচ্চার, তারাই ক্ষমতাবানদের টার্গেটে পরিণত হচ্ছেন।

আমরা মনে করি, এটি সাম্প্রদায়িকতা, আদিবাসীদের পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদের নীলনকশা এবং অধিকারকে উপেক্ষা করে দেশকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘... কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে কেউ সমাজে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করলে আমরা তাকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় নিয়ে আসব।

আমরা একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এমন কোন কাজ কেউ কোনোভাবেই করবেন না। ...সবাই মিলে আমাদের পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে, সে ঝাড়–দার হোক, ছাত্র হোক, শিক্ষক হোক, যে কোনো ধর্মের হোক, সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করতে চাই। এই হলো আমাদের সংস্কারের মূল লক্ষ্য।’

আমরা আশা করতে চাই, অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রীতির বাংলাদেশ বির্নিমাণে পিছিয়ে পড়া ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দিকে দৃষ্টি দেবে। আদিবাসীদের মুখে হাসি ফুটলেই বুঝব দেশ ন্যায্যতা ও উন্নয়নের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

[লেখক : কলামিস্ট ]

back to top