রোকনুজ্জামান নাহিদ
দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬টিতে এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১৪টি। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন উচ্চশিক্ষার সংকটে একটি বড় প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে। আমাদের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার সম্প্রসারণ প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট পরিকল্পনার ঘাটতি ছিল। দেশের কতটি বিশ্ববিদ্যালয় সেন্টার অব এক্সিলেন্স হবে, কতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় নেতৃত্ব দেবে, কী মানের গবেষণা হবে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রিসার্চ সেন্টারের কাঠামোগত উন্নয়নের দিকে নজর না দিয়ে অনুমোদন দেয়া হয়েছে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির; যা পুরাতন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়নের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রয়েছে শিক্ষক সংকট, অবকাঠামো উন্নয়নে ঘাটতি এবং বিভিন্নরকম সমস্যা। এসব সংকট সমাধান না করেই অনুমোদন দেয়া হয়েছে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়। এটি উচ্চশিক্ষার জন্য কখনই ভালো ফল বয়ে আনবে না। দেশের বিদ্যমান অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে শ্রেণী সংকট, আবাসন সংকট ও অনেক রকম সমস্যা। শিক্ষাঙ্গনের শ্রেণীকক্ষই শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জীবনের প্রস্তুতির ক্ষেত্র। পৃথিবীর প্রায় সব দেশই বর্তমান সমাজের প্রয়োজনমতো চাহিদা ও ভবিষ্যৎ সমাজের সম্ভাব্য চিত্রকে সামনে রেখে তাদের শিক্ষাব্যবস্থা তথা শিক্ষাঙ্গনে ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টিতে সচেষ্ট হতে হবে।
উত্তম শিক্ষাব্যবস্থার জন্য প্রয়োজন অনুকূল পরিবেশ। আর এই পরিবেশ গড়ে তোলার দায়িত্ব শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সম্পৃক্ততাই গড়ে দিতে পারে গুণগত শিক্ষার মজবুত ভিত। উপরন্তু দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র; যার ফলে শিক্ষার্থীরা মানসম্মত ওর রুচিশীল শিক্ষা পাচ্ছে না। সংকট সমাধানের কোনো উদ্যোগ না নিয়েই অনুমোদন দেয়া হয়েছে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের চেয়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিদ্যমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংকট নিরসন করা। মানসম্মত উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করা।
প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার এই দেশে ১৭০টি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও এর কোনোটিই বিশ্বের সেরা ৫০০ এর মধ্যে নেই। উপযুক্ত কারণ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামগত উন্নয়নের অভাব, পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার অভাব, শিক্ষক সংকট, শ্রেণী সংকট, বাসস্থান সংকটসহ রয়েছে বিভিন্ন রকম সমস্যা। এসব সমস্যা সমাধানে ভ্রƒক্ষেপ না করেই অনুমোদিত হয় নতুন বিশ্ববিদ্যালয়। নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার থেকে বিদ্যমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কিভাবে উন্নয়নের মাত্রায় নিয়ে যাওয়া যায় সেদিকে নজর দিলে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে। নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে; কিন্তু নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয় যেন ভূমিহীন-গৃহহীন।
দেশের ১৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চলছে কলেজের শ্রেণীকক্ষে, বিদ্যালয়ের ভবনে এবং ভাড়া করা জায়গায়। সিরাজগঞ্জে অবস্থিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার আইন পাস হয়। ক্লাস শুরু হয় ২০১৮ সালের এপ্রিলে। বর্তমানে পাঁচটি বিভাগে পড়ছেন ১ হাজার ৪১ জন শিক্ষার্থী; কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়টি চলছে তিনটি কলেজের শ্রেণিকক্ষে এবং দুইটি ভবনে ও একটি কনভেনশন সেন্টারের জায়গা ভাড়া নিয়ে। ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী নিজস্ব ক্যাম্পাসবিহীন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৮টি। যার মধ্যে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ডিজিটাল এবং কৃষি শিক্ষার মত বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়; কিন্তু সেখানে নেই স্থায়ী ক্যাম্পাস। শিক্ষার জন্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত না করে অনুমোদন দেয়া হয়েছে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের। প্রশ্ন উঠছে শিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা যেনতেনভাবে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের শিক্ষা শেষ করছেন এবং কার্যত ঠেকছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পুঁথিগত শিক্ষা দেওয়া হলেও নেই ব্যবহারিক শিক্ষার সুযোগ; যার ফলে গবেষণার জন্য নেই পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা। বিভিন্ন সংকট থাকা সত্ত্বেও নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন কতটা যৌক্তিক? সুতরাং নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন না দিয়ে বিদ্যমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন শিক্ষাক্ষেত্রে এবং গবেষণার জন্য সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে সেদিকে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
[লেখক : শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়]
রোকনুজ্জামান নাহিদ
বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪
দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬টিতে এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১৪টি। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন উচ্চশিক্ষার সংকটে একটি বড় প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে। আমাদের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার সম্প্রসারণ প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট পরিকল্পনার ঘাটতি ছিল। দেশের কতটি বিশ্ববিদ্যালয় সেন্টার অব এক্সিলেন্স হবে, কতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় নেতৃত্ব দেবে, কী মানের গবেষণা হবে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রিসার্চ সেন্টারের কাঠামোগত উন্নয়নের দিকে নজর না দিয়ে অনুমোদন দেয়া হয়েছে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির; যা পুরাতন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়নের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রয়েছে শিক্ষক সংকট, অবকাঠামো উন্নয়নে ঘাটতি এবং বিভিন্নরকম সমস্যা। এসব সংকট সমাধান না করেই অনুমোদন দেয়া হয়েছে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়। এটি উচ্চশিক্ষার জন্য কখনই ভালো ফল বয়ে আনবে না। দেশের বিদ্যমান অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে শ্রেণী সংকট, আবাসন সংকট ও অনেক রকম সমস্যা। শিক্ষাঙ্গনের শ্রেণীকক্ষই শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জীবনের প্রস্তুতির ক্ষেত্র। পৃথিবীর প্রায় সব দেশই বর্তমান সমাজের প্রয়োজনমতো চাহিদা ও ভবিষ্যৎ সমাজের সম্ভাব্য চিত্রকে সামনে রেখে তাদের শিক্ষাব্যবস্থা তথা শিক্ষাঙ্গনে ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টিতে সচেষ্ট হতে হবে।
উত্তম শিক্ষাব্যবস্থার জন্য প্রয়োজন অনুকূল পরিবেশ। আর এই পরিবেশ গড়ে তোলার দায়িত্ব শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সম্পৃক্ততাই গড়ে দিতে পারে গুণগত শিক্ষার মজবুত ভিত। উপরন্তু দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র; যার ফলে শিক্ষার্থীরা মানসম্মত ওর রুচিশীল শিক্ষা পাচ্ছে না। সংকট সমাধানের কোনো উদ্যোগ না নিয়েই অনুমোদন দেয়া হয়েছে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের চেয়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিদ্যমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংকট নিরসন করা। মানসম্মত উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করা।
প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার এই দেশে ১৭০টি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও এর কোনোটিই বিশ্বের সেরা ৫০০ এর মধ্যে নেই। উপযুক্ত কারণ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামগত উন্নয়নের অভাব, পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার অভাব, শিক্ষক সংকট, শ্রেণী সংকট, বাসস্থান সংকটসহ রয়েছে বিভিন্ন রকম সমস্যা। এসব সমস্যা সমাধানে ভ্রƒক্ষেপ না করেই অনুমোদিত হয় নতুন বিশ্ববিদ্যালয়। নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার থেকে বিদ্যমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কিভাবে উন্নয়নের মাত্রায় নিয়ে যাওয়া যায় সেদিকে নজর দিলে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে। নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে; কিন্তু নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয় যেন ভূমিহীন-গৃহহীন।
দেশের ১৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চলছে কলেজের শ্রেণীকক্ষে, বিদ্যালয়ের ভবনে এবং ভাড়া করা জায়গায়। সিরাজগঞ্জে অবস্থিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার আইন পাস হয়। ক্লাস শুরু হয় ২০১৮ সালের এপ্রিলে। বর্তমানে পাঁচটি বিভাগে পড়ছেন ১ হাজার ৪১ জন শিক্ষার্থী; কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়টি চলছে তিনটি কলেজের শ্রেণিকক্ষে এবং দুইটি ভবনে ও একটি কনভেনশন সেন্টারের জায়গা ভাড়া নিয়ে। ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী নিজস্ব ক্যাম্পাসবিহীন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৮টি। যার মধ্যে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ডিজিটাল এবং কৃষি শিক্ষার মত বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়; কিন্তু সেখানে নেই স্থায়ী ক্যাম্পাস। শিক্ষার জন্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত না করে অনুমোদন দেয়া হয়েছে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের। প্রশ্ন উঠছে শিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা যেনতেনভাবে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের শিক্ষা শেষ করছেন এবং কার্যত ঠেকছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পুঁথিগত শিক্ষা দেওয়া হলেও নেই ব্যবহারিক শিক্ষার সুযোগ; যার ফলে গবেষণার জন্য নেই পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা। বিভিন্ন সংকট থাকা সত্ত্বেও নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন কতটা যৌক্তিক? সুতরাং নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন না দিয়ে বিদ্যমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন শিক্ষাক্ষেত্রে এবং গবেষণার জন্য সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে সেদিকে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
[লেখক : শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়]