alt

উপ-সম্পাদকীয়

বিজয়ের গৌরব ও সম্ভাবনাময় তরুণ সমাজ

অরূপরতন চৌধুরী

: মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪

গৌরবোজ্জল বিজয়ের ৫৩ বছর পেরিয়েছে বাংলাদেশ। রক্তচোষা শাসকরা যুগ যুগ ধরে স্বর্ণভূমির এই দেশ ও মানুষগুলোকে শোষণ করেছে। সেটা ব্রিটিশ থেকে পাকিস্তানিÑ সবাই। ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি ও বর্বর পশ্চিম পাকিস্তানিদের ধূর্ততা ও শোষণÑ এমনকি শাসনের নামে পৈশাচিকতা ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে রেখেছে, যা যুগ যুগ ধরে থেকে যাবে। তবে ক্ষমতার লোভে যারা অন্যায়ভাবে শাসন করে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাদের ধ্বংস অনিবার্য। মুক্তিকামী প্রাণের বাসনা দমিয়ে রাখা যায় না। পাকিস্তানিরাও হয়তো বুঝতে পারেনি তাদের পতন অত্যাসন্ন। তার প্রমাণ মহান ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি বীরদের গৌরবময় বিজয়। তা-ও আবার সেটা যুদ্ধাস্ত্রসজ্জিত পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। সাম্প্রতিক সময়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনা করছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে এদেশের মানুষ বরাবরই সোচ্চার। অধিকার আদায়ে রক্ত দেয়ার নজির বিশে^ খুব কম। আমরা সেই ভাগ্যবান জাতিদের অন্যতম। মাতৃসম এই সবুজ, শ্যামলা জন্মভূমি ধীরে ধীরে বিজয়ের গৌরবময় হীরকজয়ন্তী ও শতবর্ষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

এই পথচলার সমস্ত কিছু ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ করা আছে, থাকবে। পরিবর্তনের এই ধারাগুলো বেশ কিছু স্বচক্ষে অবলোকন করার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। তাই কঠিন বাস্তবতা হলোÑ সুবর্ণজয়ন্তীর কঠিন পথচলায় ইতোমধ্যে বাংলাদেশ নানাবিধ চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজকের অবস্থানে পৌঁছেছে। মাতৃভূমির আগামীর পথচলা আরো মসৃণ হবে, এটা কোটি কোটি দেশপ্রেমী জনগণের মনের সুপ্ত বাসনা যা আমাকেও সঞ্চালিত করে। এটা গোপন কথা নয় যে, বৈশি^ক পরিম-লে বাংলাদেশকে একসময় ‘তলাবিহীন ঝুঁড়ি’ ট্যাগ লাগিয়ে দেয়া হয়েছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী দুর্ভিক্ষ, অভাব-অনটন, সম্পদের অব্যবস্থাপনার কারণে চরম অবহেলিত ও জর্জরিত ছিল বাংলাদেশ।

আজ অর্ধশত বছর পেরোতেই সেই বাংলাদেশ বিশ^ দরবারে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ হয়েছে। উন্নয়নের ¯্রােতধারায় দেশের অবকাঠামোগত অভূতপূর্ব পরিবর্তন এসেছে। জিডিপি বেড়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। স্বাস্থ্য খাতে আমাদের বড় সাফল্য মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যুর হার কমানো। এছাড়া সংক্রামক ব্যাধি নির্মূলে বাংলাদেশ সফল হয়েছে। যদিও অসংক্রামক রোগের প্রকোপ স্বাস্থ্যখাতের বড় শত্রু হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং চোখ রাঙানি দিচ্ছে। তবুও আমার মনে হয়, সঠিক নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ বাধা অতিক্রম করা সম্ভব। অপরদিকে, অতিরিক্ত মুদ্রাস্ফীতি ও নানামুখী সংকটে গত কয়েক বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বেড়েছে কয়েক গুণ, যা মানুষের আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়! এদিকটায় নজর দেয়া অতীব জরুরি।

সবকিছু ছাপিয়ে বাংলাদেশ বিশে^ যে সমীহ আদায় করতে পেরেছে, যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে সেটা মূলত দেশপ্রেমী জনগণের বড় অর্জন। কৃষক, শ্রমিক, চাকরিজীবী, স্বাস্থ্যকর্মী, প্রবাসী এবং সর্বস্তরের মানুষ ও সব পেশাজীবীদের শরীরের রক্ত পানি করা শ্রম ও ত্যাগের ফসল আজকের বাংলাদেশ। পৃথিবীতে প্রায় সব উন্নত ও সভ্য জাতির সাফল্যের বড় পাথেয় হচ্ছে জনকল্যাণমুখী পদক্ষেপ। জনগণই সবকিছুতে মুখ্য, গৌন নয়। বিশেষ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষায় সেই সমস্ত রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সদা তৎপর। এজন্যই তারা সফলতার শীর্ষে আরোহণ করতে পারে।

বাংলাদেশ তরুণ জনগোষ্ঠীর দেশ। বর্তমানে ৪৯ ভাগ জনগোষ্ঠী বয়সে তরুণ, যে কারণে বাংলাদেশকে ‘ইয়ুথ ডিভিডেন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জাতিসংঘ। আগামী দিনে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন, অগ্রগতি নির্ভর করছে মানবসম্পদ উন্নয়নের ওপর। কিন্তু, ভয়ের কারণ বর্তমান শিশু-কিশোর ও তরুণদের বিপথগামীতা। মাদকাসক্তি, কিশোর গ্যাং অপসংস্কৃতি, চাঁদাবাজি, ইভটিজিং এমনকি হত্যাকা-ের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে তারা। বর্তমানে দেশে ১ কোটিরও বেশি মাদকাসক্ত রয়েছে এবং মাদকসেবীদের মধ্যে মাদকাসক্তদের ৮০ শতাংশই কিশোর তরুণ ও যুবক বয়সী। তাদের মধ্যে ৪৩ শতাংশ বেকার এবং ৬০ শতাংশ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত! মাদকাসক্তদের ৩০ শতাংশই শুধু নেশার খরচ জোগান দিতে অপরাধ, অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে! সুযোগ লুফে নিচ্ছে অসাধু মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারীরা। গবেষণায় প্রমাণিত যে, ধূমপান মাদকের নাটের গুরু। শুরু থেকেই বলে আসছি সেটা। উঠতি বয়সীদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা উদ্বেজনকভাবে বাড়ছে। পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে পড়ছে। এটা সময়ের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

অনেকে ই-সিগারেট সেবনের দিকে ঝুঁকছে। ই-সিগারেট দোকানগুলো বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক গড়ে তোলা হয়েছে শুধু তরুণদের আকৃষ্ট করার জন্য। জাপানে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ই-সিগারেট সাধারণ সিগারেটের চেয়ে ১০ গুণ বেশি ক্ষতিকর! ভেপ, ই-সিগারেট ব্যবহারকারীরা স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, সাডেন কার্ডিয়াক ডেথের শিকার হতে পারেন। তামাক ও মাদকের নেশায় কিশোর-তরুণদের কিডনি, লিভার ছাড়াও মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজকর্ম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে গুটিকয়েক বহুজাতিক কোম্পানির কূটচালের কারণে। এরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংসের গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এ কারণেই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনীর মতো সরকারের শুভ উদ্যোগ বিলম্ব এবং ভেস্তে দিতে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। বিজয়ের প্রকৃত ফল পেতে হলে কর্মক্ষম মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে। বিজয়ের গৌরব সমুন্নত রাখতে হলে তরুণ জনগোষ্ঠীকে মাদক ও তামাকজাত দ্রব্যের আগ্রাসন থেকে দূরে রাখতে হবে। বিজয়ের নেপথ্য নায়ক, জাতির বীর সন্তানদের প্রতি এটা আমাদের সবার দায়বদ্ধতা। সুতরাং, আসুন আমরা সবাই ধর্ম, বর্ণ, দল, জাত, মতনির্বিশেষে হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করি। মহান ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় বিজয় দিবসে এই হোক সবার অঙ্গীকার।

[লেখক : একুশে পদকপ্রাপ্ত শব্দ সৈনিক; অনারারি সিনিয়র কনসালটেন্ট, ডেন্টাল সার্জারি বিভাগ, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল]

পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র

বিজয়ের প্রেরণা

মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার পুনর্বীক্ষণ

সিদরাত জেবিনের মৃত্যু অথবা প্রশ্নহীন বায়ুদূষণ

ছবি

মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধুদের অবদান

ছবি

বিজয় সংগ্রামের সূচনার সন্ধানে

মানসম্মত কনটেন্ট ও টিআরপির দ্বৈরথ

জিকা ভাইরাস রোধে প্রয়োজন সচেতনতা

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক

স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার গুরুত্ব

ঢাকার বাতাস বিষাক্ত কেন

চরের কৃষি ও কৃষকের জীবন

নিম্ন আয়ের মানুষ ভালো নাই

সবার আগে নিজেকে পরিবর্তন করা দরকার

পুলিশ কবে পুলিশ হবে

জীবন ফিরে আসুক বাংলার নদীগুলোতে

কান্দন সরেন হত্যা ও ভূমি বিরোধ কি এড়ানো যেত না

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র: রাষ্ট্র বিনির্মাণে সমস্যা কোথায়?

মানবাধিকার দিবস : মানুষের অধিকার নিয়ে কেন এত কথা?

আমলাতান্ত্রিক স্বচ্ছতা : সংস্কারের পথে নাকি পুনরাবৃত্তি?

খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কিছু কথা

ছবি

বেগম রোকেয়া : নারী জাগরণের অগ্রদূত

দুর্নীতির সর্বগ্রাসী বিস্তার বন্ধ করতে হবে

মা তোর বদনখানি মলিন হলে

ব্যবসায়ী নেতৃত্বশূন্য ই-ক্যাব

মূল্যস্ফীতির হিসাব নির্ণয়ে নতুন পদ্ধতির প্রাসঙ্গিকতা

মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারের সফলতা চায়

সবার উপরে মানুষ সত্য

এইচএসসিতে ইংরেজিতে ফল বিপর্যয় কেন, করণীয় কী

ছবি

নিরাপদ এবং সুষম পরিবেশের পরিকল্পনা

ফার্মেসি শিক্ষা ও পেশার সংস্কার প্রয়োজন

মশার কয়েলের প্রভাব : জনস্বাস্থ্যের অদৃশ্য হুমকি

“আইনুন কাইনুন সর্বনেশে...”

কুষ্ঠজনিত প্রতিবন্ধকতার ঝুঁকি ও করণীয়

এই সর্বনাশের দায় কার?

জ্ঞানই শক্তি

tab

উপ-সম্পাদকীয়

বিজয়ের গৌরব ও সম্ভাবনাময় তরুণ সমাজ

অরূপরতন চৌধুরী

মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪

গৌরবোজ্জল বিজয়ের ৫৩ বছর পেরিয়েছে বাংলাদেশ। রক্তচোষা শাসকরা যুগ যুগ ধরে স্বর্ণভূমির এই দেশ ও মানুষগুলোকে শোষণ করেছে। সেটা ব্রিটিশ থেকে পাকিস্তানিÑ সবাই। ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি ও বর্বর পশ্চিম পাকিস্তানিদের ধূর্ততা ও শোষণÑ এমনকি শাসনের নামে পৈশাচিকতা ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে রেখেছে, যা যুগ যুগ ধরে থেকে যাবে। তবে ক্ষমতার লোভে যারা অন্যায়ভাবে শাসন করে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাদের ধ্বংস অনিবার্য। মুক্তিকামী প্রাণের বাসনা দমিয়ে রাখা যায় না। পাকিস্তানিরাও হয়তো বুঝতে পারেনি তাদের পতন অত্যাসন্ন। তার প্রমাণ মহান ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি বীরদের গৌরবময় বিজয়। তা-ও আবার সেটা যুদ্ধাস্ত্রসজ্জিত পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। সাম্প্রতিক সময়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনা করছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে এদেশের মানুষ বরাবরই সোচ্চার। অধিকার আদায়ে রক্ত দেয়ার নজির বিশে^ খুব কম। আমরা সেই ভাগ্যবান জাতিদের অন্যতম। মাতৃসম এই সবুজ, শ্যামলা জন্মভূমি ধীরে ধীরে বিজয়ের গৌরবময় হীরকজয়ন্তী ও শতবর্ষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

এই পথচলার সমস্ত কিছু ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ করা আছে, থাকবে। পরিবর্তনের এই ধারাগুলো বেশ কিছু স্বচক্ষে অবলোকন করার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। তাই কঠিন বাস্তবতা হলোÑ সুবর্ণজয়ন্তীর কঠিন পথচলায় ইতোমধ্যে বাংলাদেশ নানাবিধ চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজকের অবস্থানে পৌঁছেছে। মাতৃভূমির আগামীর পথচলা আরো মসৃণ হবে, এটা কোটি কোটি দেশপ্রেমী জনগণের মনের সুপ্ত বাসনা যা আমাকেও সঞ্চালিত করে। এটা গোপন কথা নয় যে, বৈশি^ক পরিম-লে বাংলাদেশকে একসময় ‘তলাবিহীন ঝুঁড়ি’ ট্যাগ লাগিয়ে দেয়া হয়েছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী দুর্ভিক্ষ, অভাব-অনটন, সম্পদের অব্যবস্থাপনার কারণে চরম অবহেলিত ও জর্জরিত ছিল বাংলাদেশ।

আজ অর্ধশত বছর পেরোতেই সেই বাংলাদেশ বিশ^ দরবারে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ হয়েছে। উন্নয়নের ¯্রােতধারায় দেশের অবকাঠামোগত অভূতপূর্ব পরিবর্তন এসেছে। জিডিপি বেড়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। স্বাস্থ্য খাতে আমাদের বড় সাফল্য মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যুর হার কমানো। এছাড়া সংক্রামক ব্যাধি নির্মূলে বাংলাদেশ সফল হয়েছে। যদিও অসংক্রামক রোগের প্রকোপ স্বাস্থ্যখাতের বড় শত্রু হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং চোখ রাঙানি দিচ্ছে। তবুও আমার মনে হয়, সঠিক নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ বাধা অতিক্রম করা সম্ভব। অপরদিকে, অতিরিক্ত মুদ্রাস্ফীতি ও নানামুখী সংকটে গত কয়েক বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বেড়েছে কয়েক গুণ, যা মানুষের আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়! এদিকটায় নজর দেয়া অতীব জরুরি।

সবকিছু ছাপিয়ে বাংলাদেশ বিশে^ যে সমীহ আদায় করতে পেরেছে, যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে সেটা মূলত দেশপ্রেমী জনগণের বড় অর্জন। কৃষক, শ্রমিক, চাকরিজীবী, স্বাস্থ্যকর্মী, প্রবাসী এবং সর্বস্তরের মানুষ ও সব পেশাজীবীদের শরীরের রক্ত পানি করা শ্রম ও ত্যাগের ফসল আজকের বাংলাদেশ। পৃথিবীতে প্রায় সব উন্নত ও সভ্য জাতির সাফল্যের বড় পাথেয় হচ্ছে জনকল্যাণমুখী পদক্ষেপ। জনগণই সবকিছুতে মুখ্য, গৌন নয়। বিশেষ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষায় সেই সমস্ত রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সদা তৎপর। এজন্যই তারা সফলতার শীর্ষে আরোহণ করতে পারে।

বাংলাদেশ তরুণ জনগোষ্ঠীর দেশ। বর্তমানে ৪৯ ভাগ জনগোষ্ঠী বয়সে তরুণ, যে কারণে বাংলাদেশকে ‘ইয়ুথ ডিভিডেন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জাতিসংঘ। আগামী দিনে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন, অগ্রগতি নির্ভর করছে মানবসম্পদ উন্নয়নের ওপর। কিন্তু, ভয়ের কারণ বর্তমান শিশু-কিশোর ও তরুণদের বিপথগামীতা। মাদকাসক্তি, কিশোর গ্যাং অপসংস্কৃতি, চাঁদাবাজি, ইভটিজিং এমনকি হত্যাকা-ের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে তারা। বর্তমানে দেশে ১ কোটিরও বেশি মাদকাসক্ত রয়েছে এবং মাদকসেবীদের মধ্যে মাদকাসক্তদের ৮০ শতাংশই কিশোর তরুণ ও যুবক বয়সী। তাদের মধ্যে ৪৩ শতাংশ বেকার এবং ৬০ শতাংশ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত! মাদকাসক্তদের ৩০ শতাংশই শুধু নেশার খরচ জোগান দিতে অপরাধ, অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে! সুযোগ লুফে নিচ্ছে অসাধু মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারীরা। গবেষণায় প্রমাণিত যে, ধূমপান মাদকের নাটের গুরু। শুরু থেকেই বলে আসছি সেটা। উঠতি বয়সীদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা উদ্বেজনকভাবে বাড়ছে। পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে পড়ছে। এটা সময়ের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

অনেকে ই-সিগারেট সেবনের দিকে ঝুঁকছে। ই-সিগারেট দোকানগুলো বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক গড়ে তোলা হয়েছে শুধু তরুণদের আকৃষ্ট করার জন্য। জাপানে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ই-সিগারেট সাধারণ সিগারেটের চেয়ে ১০ গুণ বেশি ক্ষতিকর! ভেপ, ই-সিগারেট ব্যবহারকারীরা স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, সাডেন কার্ডিয়াক ডেথের শিকার হতে পারেন। তামাক ও মাদকের নেশায় কিশোর-তরুণদের কিডনি, লিভার ছাড়াও মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজকর্ম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে গুটিকয়েক বহুজাতিক কোম্পানির কূটচালের কারণে। এরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংসের গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এ কারণেই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনীর মতো সরকারের শুভ উদ্যোগ বিলম্ব এবং ভেস্তে দিতে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। বিজয়ের প্রকৃত ফল পেতে হলে কর্মক্ষম মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে। বিজয়ের গৌরব সমুন্নত রাখতে হলে তরুণ জনগোষ্ঠীকে মাদক ও তামাকজাত দ্রব্যের আগ্রাসন থেকে দূরে রাখতে হবে। বিজয়ের নেপথ্য নায়ক, জাতির বীর সন্তানদের প্রতি এটা আমাদের সবার দায়বদ্ধতা। সুতরাং, আসুন আমরা সবাই ধর্ম, বর্ণ, দল, জাত, মতনির্বিশেষে হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করি। মহান ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় বিজয় দিবসে এই হোক সবার অঙ্গীকার।

[লেখক : একুশে পদকপ্রাপ্ত শব্দ সৈনিক; অনারারি সিনিয়র কনসালটেন্ট, ডেন্টাল সার্জারি বিভাগ, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল]

back to top