alt

উপ-সম্পাদকীয়

বিজয়ের প্রেরণা

রহমান মৃধা

: মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪

১৬ ডিসেম্বর, বিজয় দিবস। এটি বাঙালির সংগ্রামের ইতিহাসের গৌরবময় এক অধ্যায়। আমার জীবনের একটি স্মরণীয় ভ্রমণ হয়েছিল এই বিশেষ দিনকে কেন্দ্র করে। একবার আমি সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়েছিলাম। চারপাশে মানুষের ঢলÑ বয়স, পেশা কিংবা সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে সবাই মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একত্রিত হয়েছিলেন। গাঢ় সবুজ আর লাল পতাকায় ঢাকা এই পরিবেশ যেন পুরো জাতির ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছিল।

স্মৃতিসৌধের এক কোণে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে একজন প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্য শুনছিলাম। তিনি বলছিলেন, কীভাবে একটি নিরস্ত্র জাতি দুঃসহ দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। তার কথা শুনতে শুনতে মনে পড়ল, ১৯৭১ সালে বাঙালিরা শুধু একটি ভূখ- চায়নি; তারা চেয়েছিল ভাষার অধিকার, সংস্কৃতির মর্যাদা এবং নিজেদের ভাগ্য নিজেরা গড়ার স্বাধীনতা। ভদ্রলোকের কথা যেন আমার মনের গভীর অনুভূতিগুলোকে জাগিয়ে তুলেছিল। কারণ আমিও সেই ১৯৭১-এর এক স্বাধীনতাকামী শিশু সৈনিক ছিলাম। আমি তখন খুব ছোট হলেও মুক্তিযুদ্ধের কঠিন বাস্তবতা আর স্বাধীনতার চেতনা আমার শৈশবের স্মৃতিতে গভীরভাবে প্রোথিত।

আজ আমরা একটি স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। কিন্তু প্রশ্ন রয়েই যায়Ñ কী চেয়েছিলাম আর কী পেয়েছি? স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে অনেক কিছু অর্জন হয়েছেÑ অর্থনৈতিক অগ্রগতি, শিক্ষার প্রসার, নারীর ক্ষমতায়ন এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন। কিন্তু তবুও, মুক্তিযুদ্ধের সেই শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার স্বপ্ন এখনও সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়নি।

১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ ছিল মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু আজকের বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক বৈষম্য আর দুর্নীতি আমাদের অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবুও এই বিজয় দিবসে আমাদের আশার আলো রয়েছে।

২০২৪ সালের গণআন্দোলন এবং স্বৈরশাসনের পতনের পর, জাতি নতুন করে আশার বাতিঘর খুঁজে পেয়েছে। ১৯৭১ সালের সেই বিজয়ের আলো আবারও আমাদের পথ দেখাচ্ছে। এই নতুন আলো আমাদের ঐক্যবদ্ধ করছে, আমাদের শক্তি এবং সাহস দিচ্ছে একটি উন্নত, দুর্নীতিমুক্ত এবং ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার জন্য। বিজয়ের এই চেতনায় আমরা শপথ নিতে পারি, আমরা একটি সুন্দর, মানবিক এবং সাম্যের বাংলাদেশ গড়ব।

ভবিষ্যতের স্বপ্ন কেমন হবে?

আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে জাতির প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার থাকবে। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কেবল ইতিহাস নয়, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবতায় প্রতিফলিত হবে। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে অনুপ্রাণিত করতে হবে, যেন তারা দেশকে আরও উন্নত এবং মানবিক করে গড়ে তোলে।

বিজয় দিবস উদযাপন শুধু আনন্দের দিন নয়, এটি আমাদের আত্মবিশ্লেষণেরও দিন। এই দিনে আমাদের বিবেক জাগ্রত করতে হবে, আবেগের সঙ্গে অনুভব করতে হবে সেই ত্যাগের মূল্য। বিজয় দিবসের এই বাণী, ‘সালাম সালাম হাজার সালাম সকল শহীদ স্মরণে’ শুধু একটি গান নয়, এটি একটি জাতির হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধা।

বিজয়ের এই ক্ষণে আমরা যেন নতুন করে প্রতিজ্ঞা করিÑ আমাদের দেশকে গড়ে তুলব সৃষ্টি সুখের উল্লাসে। সেই উল্লাসে প্রতিধ্বনিত হোকÑ ‘মোর মুখ হাসে, মোর চোখ হাসে, মোর টগবগিয়ে খুন হাসে, আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে।’

শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় এই সময়টি হোক জাতীয় ঐক্যের মন্ত্র। বিজয়ের আলো আমাদের পথচলায় চিরজাগ্রত থাকুক।

[লেখক : সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন]

পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র

মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার পুনর্বীক্ষণ

সিদরাত জেবিনের মৃত্যু অথবা প্রশ্নহীন বায়ুদূষণ

বিজয়ের গৌরব ও সম্ভাবনাময় তরুণ সমাজ

ছবি

মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধুদের অবদান

ছবি

বিজয় সংগ্রামের সূচনার সন্ধানে

মানসম্মত কনটেন্ট ও টিআরপির দ্বৈরথ

জিকা ভাইরাস রোধে প্রয়োজন সচেতনতা

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক

স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার গুরুত্ব

ঢাকার বাতাস বিষাক্ত কেন

চরের কৃষি ও কৃষকের জীবন

নিম্ন আয়ের মানুষ ভালো নাই

সবার আগে নিজেকে পরিবর্তন করা দরকার

পুলিশ কবে পুলিশ হবে

জীবন ফিরে আসুক বাংলার নদীগুলোতে

কান্দন সরেন হত্যা ও ভূমি বিরোধ কি এড়ানো যেত না

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র: রাষ্ট্র বিনির্মাণে সমস্যা কোথায়?

মানবাধিকার দিবস : মানুষের অধিকার নিয়ে কেন এত কথা?

আমলাতান্ত্রিক স্বচ্ছতা : সংস্কারের পথে নাকি পুনরাবৃত্তি?

খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কিছু কথা

ছবি

বেগম রোকেয়া : নারী জাগরণের অগ্রদূত

দুর্নীতির সর্বগ্রাসী বিস্তার বন্ধ করতে হবে

মা তোর বদনখানি মলিন হলে

ব্যবসায়ী নেতৃত্বশূন্য ই-ক্যাব

মূল্যস্ফীতির হিসাব নির্ণয়ে নতুন পদ্ধতির প্রাসঙ্গিকতা

মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারের সফলতা চায়

সবার উপরে মানুষ সত্য

এইচএসসিতে ইংরেজিতে ফল বিপর্যয় কেন, করণীয় কী

ছবি

নিরাপদ এবং সুষম পরিবেশের পরিকল্পনা

ফার্মেসি শিক্ষা ও পেশার সংস্কার প্রয়োজন

মশার কয়েলের প্রভাব : জনস্বাস্থ্যের অদৃশ্য হুমকি

“আইনুন কাইনুন সর্বনেশে...”

কুষ্ঠজনিত প্রতিবন্ধকতার ঝুঁকি ও করণীয়

এই সর্বনাশের দায় কার?

জ্ঞানই শক্তি

tab

উপ-সম্পাদকীয়

বিজয়ের প্রেরণা

রহমান মৃধা

মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪

১৬ ডিসেম্বর, বিজয় দিবস। এটি বাঙালির সংগ্রামের ইতিহাসের গৌরবময় এক অধ্যায়। আমার জীবনের একটি স্মরণীয় ভ্রমণ হয়েছিল এই বিশেষ দিনকে কেন্দ্র করে। একবার আমি সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়েছিলাম। চারপাশে মানুষের ঢলÑ বয়স, পেশা কিংবা সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে সবাই মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একত্রিত হয়েছিলেন। গাঢ় সবুজ আর লাল পতাকায় ঢাকা এই পরিবেশ যেন পুরো জাতির ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছিল।

স্মৃতিসৌধের এক কোণে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে একজন প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্য শুনছিলাম। তিনি বলছিলেন, কীভাবে একটি নিরস্ত্র জাতি দুঃসহ দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। তার কথা শুনতে শুনতে মনে পড়ল, ১৯৭১ সালে বাঙালিরা শুধু একটি ভূখ- চায়নি; তারা চেয়েছিল ভাষার অধিকার, সংস্কৃতির মর্যাদা এবং নিজেদের ভাগ্য নিজেরা গড়ার স্বাধীনতা। ভদ্রলোকের কথা যেন আমার মনের গভীর অনুভূতিগুলোকে জাগিয়ে তুলেছিল। কারণ আমিও সেই ১৯৭১-এর এক স্বাধীনতাকামী শিশু সৈনিক ছিলাম। আমি তখন খুব ছোট হলেও মুক্তিযুদ্ধের কঠিন বাস্তবতা আর স্বাধীনতার চেতনা আমার শৈশবের স্মৃতিতে গভীরভাবে প্রোথিত।

আজ আমরা একটি স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। কিন্তু প্রশ্ন রয়েই যায়Ñ কী চেয়েছিলাম আর কী পেয়েছি? স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে অনেক কিছু অর্জন হয়েছেÑ অর্থনৈতিক অগ্রগতি, শিক্ষার প্রসার, নারীর ক্ষমতায়ন এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন। কিন্তু তবুও, মুক্তিযুদ্ধের সেই শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার স্বপ্ন এখনও সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়নি।

১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ ছিল মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু আজকের বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক বৈষম্য আর দুর্নীতি আমাদের অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবুও এই বিজয় দিবসে আমাদের আশার আলো রয়েছে।

২০২৪ সালের গণআন্দোলন এবং স্বৈরশাসনের পতনের পর, জাতি নতুন করে আশার বাতিঘর খুঁজে পেয়েছে। ১৯৭১ সালের সেই বিজয়ের আলো আবারও আমাদের পথ দেখাচ্ছে। এই নতুন আলো আমাদের ঐক্যবদ্ধ করছে, আমাদের শক্তি এবং সাহস দিচ্ছে একটি উন্নত, দুর্নীতিমুক্ত এবং ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার জন্য। বিজয়ের এই চেতনায় আমরা শপথ নিতে পারি, আমরা একটি সুন্দর, মানবিক এবং সাম্যের বাংলাদেশ গড়ব।

ভবিষ্যতের স্বপ্ন কেমন হবে?

আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে জাতির প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার থাকবে। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কেবল ইতিহাস নয়, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবতায় প্রতিফলিত হবে। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে অনুপ্রাণিত করতে হবে, যেন তারা দেশকে আরও উন্নত এবং মানবিক করে গড়ে তোলে।

বিজয় দিবস উদযাপন শুধু আনন্দের দিন নয়, এটি আমাদের আত্মবিশ্লেষণেরও দিন। এই দিনে আমাদের বিবেক জাগ্রত করতে হবে, আবেগের সঙ্গে অনুভব করতে হবে সেই ত্যাগের মূল্য। বিজয় দিবসের এই বাণী, ‘সালাম সালাম হাজার সালাম সকল শহীদ স্মরণে’ শুধু একটি গান নয়, এটি একটি জাতির হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধা।

বিজয়ের এই ক্ষণে আমরা যেন নতুন করে প্রতিজ্ঞা করিÑ আমাদের দেশকে গড়ে তুলব সৃষ্টি সুখের উল্লাসে। সেই উল্লাসে প্রতিধ্বনিত হোকÑ ‘মোর মুখ হাসে, মোর চোখ হাসে, মোর টগবগিয়ে খুন হাসে, আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে।’

শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় এই সময়টি হোক জাতীয় ঐক্যের মন্ত্র। বিজয়ের আলো আমাদের পথচলায় চিরজাগ্রত থাকুক।

[লেখক : সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন]

back to top