alt

উপ-সম্পাদকীয়

গুরু রবিদাস জির কথা

বাবুল রবিদাস

: বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫

যারা দূরদর্শী, জ্ঞানী ও গুণী মনীষী ছিলেন, তারা সমাজের অসমতা, বৈষম্য ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। তাদের বাণীগুলো আধুনিক যুগেও প্রাসঙ্গিক ও নতুনের মতো মনে হয়। এই বাণীগুলোর বৈজ্ঞানিক ও মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি অকাট্য। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ‘গুরু রবিদাস জি মহারাজ’।

গুরু রবিদাসের যুগ ও তার সংগ্রাম

প্রায় ছয়শ বছর আগে, যখন সমাজে অস্পৃর্শতা, বর্ণভেদ, জাতিভেদ ও উঁচু-নিচু ভেদাভেদ প্রবল ছিল, তখন গুরু রবিদাস জন্মগ্রহণ করেন। সে সময় পিছিয়ে পড়া মানুষের কোনো অধিকার ছিল না। দলিত, বঞ্চিত ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষরা সমাজে চলাফেরার ন্যূনতম স্বাধীনতাও পেতেন না। তাদের প্রতি বর্বর আচরণ ও অমানবিক আইন প্রচলিত ছিল।

১৩৭৭ সালে, বেনারসের কাছে মন্ডুয়া ডিহিতে রবিবারে জন্মগ্রহণ করেন গুরু রবিদাস। রবিবারে জন্মগ্রহণের কারণে তার নাম রাখা হয় ‘রবিদাস’। তিনি মুচি (চামার) পরিবারের সন্তান ছিলেন, যারা তৎকালীন সমাজে সবচেয়ে নিচু তলার মানুষ হিসেবে বিবেচিত হতেন। ফলে তার বিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। তবে নিজের প্রচেষ্টায় তিনি জ্ঞান অর্জন করেন এবং শাস্ত্র ও বিভিন্ন গ্রন্থে পা-িত্য লাভ করেন। ফারসি ভাষাতেও তার অসামান্য দক্ষতা ছিল।

সমাজ সংস্কারক ও ‘বেগমপুরা’ ধারণা

গুরু রবিদাস চামড়ার কাজ করতেন এবং তার পেশাকে তিনি অপমানজনক নয়, বরং সম্মানের কাজ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। তিনি বলেন, ‘চামার’ শব্দটি মানবজীবনের মাংস, রক্ত ও চামড়ার প্রতীক। তিনি একটি আদর্শ সমাজের পরিকল্পনা করেছিলেন, যার নাম দেন ‘বেগমপুরা’।

‘বেগমপুরা’ ছিল এমন একটি শহরের কল্পনা, যেখানে দুঃখ, বেদনা, চিন্তা ও অভাব থাকবে না। সেখানে কারো প্রতি হিংসা বা বিদ্বেষ থাকবে না, কেউ কর বা শোষণের শিকার হবে না। সবাই সুখে-শান্তিতে, ন্যায় ও সমতার ভিত্তিতে বসবাস করবে।

জাতিভেদ ও মানবতার বাণী

গুরু রবিদাস বলেছিলেন, কাজের ভিত্তিতে জাতি গঠিত হয় না। যে কেউ, ধনী বা গরিব, জ্ঞান ও গুণের মাধ্যমে শ্রদ্ধার পাত্র হতে পারে। তিনি বলেন, ‘রবিদাস, ব্রাহ্মণ মতে পুজিয়ে জোউ হোবে গুনহীন, পুজিয়ে চরণ চন্ডালকো জো হোবে গুন প্রবীণ।’

তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর সব মানুষ একই উপাদানে গঠিত। জন্মের ভিত্তিতে মানুষ বড় বা ছোট হয় না; কর্মই মানুষের প্রকৃত পরিচয়।

দাসত্ব থেকে মুক্তির আহ্বান

গুরু রবিদাস দাসত্ব থেকে মুক্তির আহ্বান জানান এবং পরিশ্রমের মূল্যায়ন করেন। তিনি বলেন, ‘পরাধীন পাপ হৈ জান’। স্বশাসিত দেশ বা সমাজ প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘মানুষের সুখে বাস করার জন্য দুটি স্থান আছেÑ স্বরাজ্য ও শ্মশান।’

ভবিষ্যতের প্রত্যাশা

গুরু রবিদাস জি মনে করতেন, সমাজে মানবতা, সমতা ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতিভেদ ও কুসংস্কার দূর করা সম্ভব। তার আদর্শ ও বাণী ভবিষ্যতের জন্য প্রাসঙ্গিক। কারণ, আইনের চোখে ধনী-গরিব, উঁচু-নিচু, সবাই সমান।

গুরু রবিদাসের শিক্ষা ও চিন্তাধারা আমাদের আজও প্রেরণা জোগায়। তার বাণী মানবতাবাদী সমাজ গঠনের ভিত্তি হতে পারে। তার দেখানো পথ অনুসরণ করলে একটি সমতাভিত্তিক ও মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

[লেখক : আইনজীবী, জজ কোর্ট, জয়পুরহাট]

গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালদের জন্য অশনিসংকেত

নতুন বছরের প্রত্যাশা

নৈতিকতা, শিক্ষা ও উন্নয়ন: আমাদের মুক্তির পথ

কোথায় নাই কোটা?

ছবি

ও আমার স্বপ্ন ঝরা আকুল করা জন্মভূমি

ব্রেন রট: বর্তমান সময়ের এক মারাত্মক ব্যাধি

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলুক দেশের গবেষণা

নির্মোহ ইতিহাস চর্চা ও রাষ্ট্র সংস্কার প্রয়াসে শিক্ষা

জলবায়ুর পরিবর্তন ও দেশের ভবিষ্যৎ

প্রসঙ্গ : থিয়েটার ফর থেরাপির তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক পাঠ

শ্বেতপত্রে নতুন কী আছে?

ছবি

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও জুনো ভাইয়ের স্মৃতি

পরিবেশ সুরক্ষায় সার্কুলার ইকোনমি

বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কেন

ভাড়া ‘নির্ধারণ’ কিংবা ‘নিয়ন্ত্রণ’ করবে কে?

ব্যাংক ও আর্থিক খাতের জন্য কেমন ছিল ২০২৪ সাল?

স্বৈরাচারের শেষ নেই...

ছবি

স্মরণ : বাংলা সাহিত্যের অমর কথাশিল্পী

দোষারোপের রাজনীতি আর কত

জ্ঞান, দক্ষতা ও সৃজনশীলতার বিকাশে চাই বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা

যৌন নিপীড়ন প্রসঙ্গে

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কতটা সফল হবে?

নতুন বছরের প্রত্যাশা

ছবি

মানবিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে জেগে উঠি নতুন বছরে

দোষারোপের রাজনীতি আর কত

প্রশাসনিক সংকট ও ভবিষ্যতের করণীয়

ছবি

বিপ্লবী রাজনীতির কাণ্ডারি : কমরেড মণি সিংহ

স্বাস্ব্য সংস্কার : কী কী বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া জরুরি

জনশিক্ষা, গণশিক্ষা ও পারিবারিক শিক্ষা : রাষ্ট্রসংস্কারের মৌলিক ভিত্তি

জাহাজ ভাঙা শিল্প ও পরিবেশ বিপর্যয়

ছিন্নমূল মানুষের ‘শীত-জীবন’

বিভাজিত তাবলিগ জামাতের দ্বন্দ্ব

কোন পথে দেশ?

অহেতুক মুক্তিযুদ্ধকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে কি লাভ হচ্ছে?

রম্যগদ্য : ‘অন্ডুল নাস্তি...’

অনিরাপদ সড়ক, সমাধান কোথায়?

tab

উপ-সম্পাদকীয়

গুরু রবিদাস জির কথা

বাবুল রবিদাস

বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫

যারা দূরদর্শী, জ্ঞানী ও গুণী মনীষী ছিলেন, তারা সমাজের অসমতা, বৈষম্য ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। তাদের বাণীগুলো আধুনিক যুগেও প্রাসঙ্গিক ও নতুনের মতো মনে হয়। এই বাণীগুলোর বৈজ্ঞানিক ও মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি অকাট্য। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ‘গুরু রবিদাস জি মহারাজ’।

গুরু রবিদাসের যুগ ও তার সংগ্রাম

প্রায় ছয়শ বছর আগে, যখন সমাজে অস্পৃর্শতা, বর্ণভেদ, জাতিভেদ ও উঁচু-নিচু ভেদাভেদ প্রবল ছিল, তখন গুরু রবিদাস জন্মগ্রহণ করেন। সে সময় পিছিয়ে পড়া মানুষের কোনো অধিকার ছিল না। দলিত, বঞ্চিত ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষরা সমাজে চলাফেরার ন্যূনতম স্বাধীনতাও পেতেন না। তাদের প্রতি বর্বর আচরণ ও অমানবিক আইন প্রচলিত ছিল।

১৩৭৭ সালে, বেনারসের কাছে মন্ডুয়া ডিহিতে রবিবারে জন্মগ্রহণ করেন গুরু রবিদাস। রবিবারে জন্মগ্রহণের কারণে তার নাম রাখা হয় ‘রবিদাস’। তিনি মুচি (চামার) পরিবারের সন্তান ছিলেন, যারা তৎকালীন সমাজে সবচেয়ে নিচু তলার মানুষ হিসেবে বিবেচিত হতেন। ফলে তার বিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। তবে নিজের প্রচেষ্টায় তিনি জ্ঞান অর্জন করেন এবং শাস্ত্র ও বিভিন্ন গ্রন্থে পা-িত্য লাভ করেন। ফারসি ভাষাতেও তার অসামান্য দক্ষতা ছিল।

সমাজ সংস্কারক ও ‘বেগমপুরা’ ধারণা

গুরু রবিদাস চামড়ার কাজ করতেন এবং তার পেশাকে তিনি অপমানজনক নয়, বরং সম্মানের কাজ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। তিনি বলেন, ‘চামার’ শব্দটি মানবজীবনের মাংস, রক্ত ও চামড়ার প্রতীক। তিনি একটি আদর্শ সমাজের পরিকল্পনা করেছিলেন, যার নাম দেন ‘বেগমপুরা’।

‘বেগমপুরা’ ছিল এমন একটি শহরের কল্পনা, যেখানে দুঃখ, বেদনা, চিন্তা ও অভাব থাকবে না। সেখানে কারো প্রতি হিংসা বা বিদ্বেষ থাকবে না, কেউ কর বা শোষণের শিকার হবে না। সবাই সুখে-শান্তিতে, ন্যায় ও সমতার ভিত্তিতে বসবাস করবে।

জাতিভেদ ও মানবতার বাণী

গুরু রবিদাস বলেছিলেন, কাজের ভিত্তিতে জাতি গঠিত হয় না। যে কেউ, ধনী বা গরিব, জ্ঞান ও গুণের মাধ্যমে শ্রদ্ধার পাত্র হতে পারে। তিনি বলেন, ‘রবিদাস, ব্রাহ্মণ মতে পুজিয়ে জোউ হোবে গুনহীন, পুজিয়ে চরণ চন্ডালকো জো হোবে গুন প্রবীণ।’

তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর সব মানুষ একই উপাদানে গঠিত। জন্মের ভিত্তিতে মানুষ বড় বা ছোট হয় না; কর্মই মানুষের প্রকৃত পরিচয়।

দাসত্ব থেকে মুক্তির আহ্বান

গুরু রবিদাস দাসত্ব থেকে মুক্তির আহ্বান জানান এবং পরিশ্রমের মূল্যায়ন করেন। তিনি বলেন, ‘পরাধীন পাপ হৈ জান’। স্বশাসিত দেশ বা সমাজ প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘মানুষের সুখে বাস করার জন্য দুটি স্থান আছেÑ স্বরাজ্য ও শ্মশান।’

ভবিষ্যতের প্রত্যাশা

গুরু রবিদাস জি মনে করতেন, সমাজে মানবতা, সমতা ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতিভেদ ও কুসংস্কার দূর করা সম্ভব। তার আদর্শ ও বাণী ভবিষ্যতের জন্য প্রাসঙ্গিক। কারণ, আইনের চোখে ধনী-গরিব, উঁচু-নিচু, সবাই সমান।

গুরু রবিদাসের শিক্ষা ও চিন্তাধারা আমাদের আজও প্রেরণা জোগায়। তার বাণী মানবতাবাদী সমাজ গঠনের ভিত্তি হতে পারে। তার দেখানো পথ অনুসরণ করলে একটি সমতাভিত্তিক ও মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

[লেখক : আইনজীবী, জজ কোর্ট, জয়পুরহাট]

back to top