জাঁ-নেসার ওসমান
‘কি রে ভাই, এইডা আবার কী শুরু করলেন! ‘নিশুতিরাতের আগন্তুক’ কোনো রহস্য উপন্যাস, মানে ডিটেকটিভ গল্প-টল্প লিখবেন নাকি? সামনে তো আবার একুশের বইমেলা, কিছু তো বিক্রি-বাট্টা হোইবোই। হঠাৎ আর্থার কোনান ডোয়াল মানে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ডিটেকটিভ উপন্যাস শার্লক হোমসের লেখক আর্থার কোনান ডোয়াল হওনের শখ জাগছেনি?’
‘আরে ভাই নিশুতিরাতের আগন্তুককে নিয়ে সত্যি কথা লিখলেই কি সেটা গল্প উপন্যাস হয়ে যাবে নাকি! আচ্ছা বলতো ‘নিশুতিরাতের আগন্তুক’ কথাটার মানে কী?’
‘আমারে কি অতো গাড়ল পাইছেননি যে, ওই সব ইঞ্জিনিয়ার ক্লাবের বাঘা বাঘা আঁতেলেকচুয়াল, আর্কিটেক্ট, ইঞ্জিনিয়ার, বামদল নেতাগোরে জিগাইলেন, ‘কনতো বলাকা মানে কী?’ হ্যেরা আপনের বাপেরে অপমান সূচক শব্দ উচ্চারণ কইরা কইলো, এটাতো ক্লাশ ফাইভের পোলাও কোইতে পারবো, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার বই বলাকা, বলাকা মানে বগা।
আরে মিয়া আপনে গান শুনছেন না, ‘কোনো দিনও বলাকারা অতো দূরে যেতো কি কারো আকাশ না ডাকলে, হেঃ হেঃ বলাকা মাইনে বগা।’ আপনে তখন হাইস্যা ওই সব ইঞ্জিনিয়ার ক্লাবের বাঘা বাঘা আঁতেলেকচুয়াল, আর্কিটেক্ট, ইঞ্জিনিয়ার, বাম দল নেতাগোরে কোইলেন ভাই বগা মানে বক বললে, বকের সকল প্রজাতিকে বোঝায়। মদ্দা-মাদি, অর্থাৎ পুরুষ-মহিলা সকল বককেই বোঝায় কিন্তু বলাকা মানে শুধুমাত্র মাদি বক মানে মহিলা বককে বোঝায়। তাই বলাকা মানে বক বললে শব্দের সঠিক অর্থ হয়না। তখন যদি ওই সব ইঞ্জিনিয়ার ক্লাবের বাঘা বাঘা আঁতেলেকচুয়াল, আর্কিটেক্ট, ইঞ্জিনিয়ার, বামদল নেতাগো মুখের অবস্থা দেখতেন, হালারা সবগুলা যেনো মানুষের কাঁচা গোবরে হেঃ হেঃ হেঃ পা দিছে।
যাউক¹া, আমি আপনেরে কোইতাছি ‘নিশুতিরাতের আগন্তুক’ মানে হোইলো এমন কেউ আপনের বাসায় আইছে যারে আপনে চিনেন না, হ্যেয় যে কখন আইবো হ্যেইডাও আপনে জানেননা,আর হ্যেয় আইবো গভীর রাত্রিতে, আর এরেই কয় ‘নিশুতিরাতের আগন্তুক’। ঠিক হোইছে কিনা কন?’
‘নিশুতিরাতের আগন্তুক’ সঠিক, একেবারে দশে দশ। ওই সব বাঘা আঁতেলেকচুয়াল, আকির্টেক্ট, ইঞ্জিনিয়ার, বামদল নেতাদের চেয়ে তুই অনেক শার্প। থ্যাঙ্কইউ।’
‘কিন্তু কথা হচ্ছে এই নিশুতিরাতের আগন্তুকের মাজেজাটা কী?’
‘মাজেজাটা এমন কিছু না, আমার শুধু প্রশ্ন এইযে তোরা শহীদ মিনারে ছাত্র অধিকার ও গণঅধিকারের বক্তা ফারুখ হাসানকে চাপাতি দিয়া কোপায়লো, তারপর তাকে যারা কোপালো সেই ছেলেদের পুলিশ, সাথে সেনাবাহিনী নিয়া রাত চারটা ত্রিশ মিনিটে, চক্ষুবিজ্ঞান ইনিস্টিটউট থেকে গ্রেফতার করে শাহ্বাগ থানায় নিয়ে এলো। রাত চারটা ত্রিশ মিনিট। আবার পরীমনিকে কখন বোট ক্লাবে প্রবেশ করলো রাত বারোটা বিশ মিনিট, পরীমনিকে কখন বনানী থানায় নিয়ে এলো রাত তিনটা বারো মিনিট। তারপর মফস্বলের সাংবাদিককে, টিএনও পিটাতে পিটাতে কখন নিয়ে এলো, রাত দুটার সময়। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে এই যে রাত্রে বেলা তোরা নিশুতিরাতের আগন্তুকের মতো গ্রেপ্তার করতে যাসÑ এটা কি সভ্যতার মধ্যে পড়ে?’
‘আরে এইটা আপনে কি কন! আসামি মানুষরে কোপায়া ভাগবো হ্যেরে রাইতে ধরতে যামু না?’
‘আরে ভাই তুই আসামি ধরতে যা, তোরে মানা করছে কে। খালি আমার প্রশ্ন এরা তোর বাংলাদেশেরই সন্তান। হয়তো ঝোঁকের বশে, মারামারি করেছে। আবার সাংবাদিক সত্য ঘটনা উদঘাটন করেছে তাই বলে শুধু গভীর রাতটাই তোরা বেছে নিবি। আর সবচেয়ে মজার কথা যারা আসামি গ্রেফতার করতে যায় তারাতো চোরচোট্টা, ডাতাক নয়, কিন্তু আসামি ধরতে যেয়ে তাদেরও রাত দুইটা-তিনটার সময় বের হতে হয়।
ওই টিএনও স্যারকেও রাত দুইটায় পুলিশ নিয়া মুভ করতে হয়েছে! কেনরে ভাই তুমি দিনের আলোয় ওয়ারেন্টনিয়ে ভদ্রভাবে যেয়ে ধরে আনো। আসামী তো তোমার দেশের, তোমারই ভাই, হয়তো ভুলকরে একটা বেআইনি কাজ করেছে দেশের আইনানুসারে তার বিচার হবে দোষী হলে সাজা আর নির্দোষ হলে বেকসুর খালাস। তাহলে এতো হইচইয়ের কী আছে?’
‘ও রে বাবারে আপনে তো দেখি কচি খোকা। আমরা যদি সমাজে আতংক বিরাজ না করি, তাইলে জামিন বাণিজ্য, পকেটে ইয়াবা দিয়ে বাণিজ্য, খামাখা খামাখা অবৈধ অস্ত্র পাওয়া গেছে এই সব বাণিজ্য চালাইমু ক্যেমনে?’
‘তাহলে তুই বাঙালি হয়ে বাঙালি নিধনে সাড়া দিবি! আরে যাকে মারছিস সে তোর দেশেরই কারো না কারো ভাই বা বোন, তাহলে নিজে নিজের ভাইকে খুন করবি?’
‘ভাইডি না বালা, সামান্য পাপি পেটের জন্য মানে সামান্য কয়টা ট্যাকা আর ক্ষমতার লোভে এই সব রাজনীতি কোরইতে হয় বুঝছইন!’
‘কিন্তু ভাই টাকা দিয়ে যে কি হয় সে তো দেখতেই পেলি। বস্তা বস্তা টাকা খাটের নিচে ফেলে, বাপ বাপ বলে চাচা আপন পরান বাঁচা করে যে দেশ তোরা লক্ষ লক্ষ মানুষের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে স্বাধীন করলি, আজ টাকার লোভে সেই দেশেরই জেল খাটছিস।
ছি: লজ্জা: লজ্জা: লজ্জা: ।’
‘ভাই কারে কি কবেন কন। বাঙালিগো ট্যাকার লোভ না কমলে, বাঙালিগো মঙ্গল বোধ না জাগলে আপনের ওই ‘নিশুতিরাতের আগন্তুক’ আইতেই থাকবো, আইতেই থাকবো, আপনে হাজার কাইন্দাও রুখতে পারবেন না ভাই রুখতে পারবেন না।’
[লেখক : চলচ্চিত্রকার]
জাঁ-নেসার ওসমান
শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫
‘কি রে ভাই, এইডা আবার কী শুরু করলেন! ‘নিশুতিরাতের আগন্তুক’ কোনো রহস্য উপন্যাস, মানে ডিটেকটিভ গল্প-টল্প লিখবেন নাকি? সামনে তো আবার একুশের বইমেলা, কিছু তো বিক্রি-বাট্টা হোইবোই। হঠাৎ আর্থার কোনান ডোয়াল মানে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ডিটেকটিভ উপন্যাস শার্লক হোমসের লেখক আর্থার কোনান ডোয়াল হওনের শখ জাগছেনি?’
‘আরে ভাই নিশুতিরাতের আগন্তুককে নিয়ে সত্যি কথা লিখলেই কি সেটা গল্প উপন্যাস হয়ে যাবে নাকি! আচ্ছা বলতো ‘নিশুতিরাতের আগন্তুক’ কথাটার মানে কী?’
‘আমারে কি অতো গাড়ল পাইছেননি যে, ওই সব ইঞ্জিনিয়ার ক্লাবের বাঘা বাঘা আঁতেলেকচুয়াল, আর্কিটেক্ট, ইঞ্জিনিয়ার, বামদল নেতাগোরে জিগাইলেন, ‘কনতো বলাকা মানে কী?’ হ্যেরা আপনের বাপেরে অপমান সূচক শব্দ উচ্চারণ কইরা কইলো, এটাতো ক্লাশ ফাইভের পোলাও কোইতে পারবো, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার বই বলাকা, বলাকা মানে বগা।
আরে মিয়া আপনে গান শুনছেন না, ‘কোনো দিনও বলাকারা অতো দূরে যেতো কি কারো আকাশ না ডাকলে, হেঃ হেঃ বলাকা মাইনে বগা।’ আপনে তখন হাইস্যা ওই সব ইঞ্জিনিয়ার ক্লাবের বাঘা বাঘা আঁতেলেকচুয়াল, আর্কিটেক্ট, ইঞ্জিনিয়ার, বাম দল নেতাগোরে কোইলেন ভাই বগা মানে বক বললে, বকের সকল প্রজাতিকে বোঝায়। মদ্দা-মাদি, অর্থাৎ পুরুষ-মহিলা সকল বককেই বোঝায় কিন্তু বলাকা মানে শুধুমাত্র মাদি বক মানে মহিলা বককে বোঝায়। তাই বলাকা মানে বক বললে শব্দের সঠিক অর্থ হয়না। তখন যদি ওই সব ইঞ্জিনিয়ার ক্লাবের বাঘা বাঘা আঁতেলেকচুয়াল, আর্কিটেক্ট, ইঞ্জিনিয়ার, বামদল নেতাগো মুখের অবস্থা দেখতেন, হালারা সবগুলা যেনো মানুষের কাঁচা গোবরে হেঃ হেঃ হেঃ পা দিছে।
যাউক¹া, আমি আপনেরে কোইতাছি ‘নিশুতিরাতের আগন্তুক’ মানে হোইলো এমন কেউ আপনের বাসায় আইছে যারে আপনে চিনেন না, হ্যেয় যে কখন আইবো হ্যেইডাও আপনে জানেননা,আর হ্যেয় আইবো গভীর রাত্রিতে, আর এরেই কয় ‘নিশুতিরাতের আগন্তুক’। ঠিক হোইছে কিনা কন?’
‘নিশুতিরাতের আগন্তুক’ সঠিক, একেবারে দশে দশ। ওই সব বাঘা আঁতেলেকচুয়াল, আকির্টেক্ট, ইঞ্জিনিয়ার, বামদল নেতাদের চেয়ে তুই অনেক শার্প। থ্যাঙ্কইউ।’
‘কিন্তু কথা হচ্ছে এই নিশুতিরাতের আগন্তুকের মাজেজাটা কী?’
‘মাজেজাটা এমন কিছু না, আমার শুধু প্রশ্ন এইযে তোরা শহীদ মিনারে ছাত্র অধিকার ও গণঅধিকারের বক্তা ফারুখ হাসানকে চাপাতি দিয়া কোপায়লো, তারপর তাকে যারা কোপালো সেই ছেলেদের পুলিশ, সাথে সেনাবাহিনী নিয়া রাত চারটা ত্রিশ মিনিটে, চক্ষুবিজ্ঞান ইনিস্টিটউট থেকে গ্রেফতার করে শাহ্বাগ থানায় নিয়ে এলো। রাত চারটা ত্রিশ মিনিট। আবার পরীমনিকে কখন বোট ক্লাবে প্রবেশ করলো রাত বারোটা বিশ মিনিট, পরীমনিকে কখন বনানী থানায় নিয়ে এলো রাত তিনটা বারো মিনিট। তারপর মফস্বলের সাংবাদিককে, টিএনও পিটাতে পিটাতে কখন নিয়ে এলো, রাত দুটার সময়। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে এই যে রাত্রে বেলা তোরা নিশুতিরাতের আগন্তুকের মতো গ্রেপ্তার করতে যাসÑ এটা কি সভ্যতার মধ্যে পড়ে?’
‘আরে এইটা আপনে কি কন! আসামি মানুষরে কোপায়া ভাগবো হ্যেরে রাইতে ধরতে যামু না?’
‘আরে ভাই তুই আসামি ধরতে যা, তোরে মানা করছে কে। খালি আমার প্রশ্ন এরা তোর বাংলাদেশেরই সন্তান। হয়তো ঝোঁকের বশে, মারামারি করেছে। আবার সাংবাদিক সত্য ঘটনা উদঘাটন করেছে তাই বলে শুধু গভীর রাতটাই তোরা বেছে নিবি। আর সবচেয়ে মজার কথা যারা আসামি গ্রেফতার করতে যায় তারাতো চোরচোট্টা, ডাতাক নয়, কিন্তু আসামি ধরতে যেয়ে তাদেরও রাত দুইটা-তিনটার সময় বের হতে হয়।
ওই টিএনও স্যারকেও রাত দুইটায় পুলিশ নিয়া মুভ করতে হয়েছে! কেনরে ভাই তুমি দিনের আলোয় ওয়ারেন্টনিয়ে ভদ্রভাবে যেয়ে ধরে আনো। আসামী তো তোমার দেশের, তোমারই ভাই, হয়তো ভুলকরে একটা বেআইনি কাজ করেছে দেশের আইনানুসারে তার বিচার হবে দোষী হলে সাজা আর নির্দোষ হলে বেকসুর খালাস। তাহলে এতো হইচইয়ের কী আছে?’
‘ও রে বাবারে আপনে তো দেখি কচি খোকা। আমরা যদি সমাজে আতংক বিরাজ না করি, তাইলে জামিন বাণিজ্য, পকেটে ইয়াবা দিয়ে বাণিজ্য, খামাখা খামাখা অবৈধ অস্ত্র পাওয়া গেছে এই সব বাণিজ্য চালাইমু ক্যেমনে?’
‘তাহলে তুই বাঙালি হয়ে বাঙালি নিধনে সাড়া দিবি! আরে যাকে মারছিস সে তোর দেশেরই কারো না কারো ভাই বা বোন, তাহলে নিজে নিজের ভাইকে খুন করবি?’
‘ভাইডি না বালা, সামান্য পাপি পেটের জন্য মানে সামান্য কয়টা ট্যাকা আর ক্ষমতার লোভে এই সব রাজনীতি কোরইতে হয় বুঝছইন!’
‘কিন্তু ভাই টাকা দিয়ে যে কি হয় সে তো দেখতেই পেলি। বস্তা বস্তা টাকা খাটের নিচে ফেলে, বাপ বাপ বলে চাচা আপন পরান বাঁচা করে যে দেশ তোরা লক্ষ লক্ষ মানুষের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে স্বাধীন করলি, আজ টাকার লোভে সেই দেশেরই জেল খাটছিস।
ছি: লজ্জা: লজ্জা: লজ্জা: ।’
‘ভাই কারে কি কবেন কন। বাঙালিগো ট্যাকার লোভ না কমলে, বাঙালিগো মঙ্গল বোধ না জাগলে আপনের ওই ‘নিশুতিরাতের আগন্তুক’ আইতেই থাকবো, আইতেই থাকবো, আপনে হাজার কাইন্দাও রুখতে পারবেন না ভাই রুখতে পারবেন না।’
[লেখক : চলচ্চিত্রকার]