alt

উপ-সম্পাদকীয়

গ্রাম উন্নয়নে যুব সমাজের ভূমিকা

শতদল বড়ুয়া

: শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫

মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ সময় হলো ‘যৌবন’। এ যৌবনের অপরিহার্য একটা অংশ হচ্ছে যুবসমাজ। যে কোনো দেশ কিংবা জাতির যুবশক্তি হচ্ছে সে জাতি বা দেশের কর্মশক্তির মূল উৎস।

জাতির উন্নয়নকল্পে যুবসমাজকে সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগাতে হবে। দায়সারাগোছের পরিকল্পনা জাতির সর্বনাশের মূল কারণ। উন্নয়নশীল দেশের প্রেক্ষাপটে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, যুবসমাজের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের এ দেশ তৃতীয়বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর অন্যতম। এ দেশের বৃহৎ অংশের জনগোষ্ঠী গ্রামে বাস করে। তাই গ্রামকে বাদ দিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা জুতসই নয়। গ্রামের মানুষের মাথাপিছু আয় অনেক কম। যার কারণে তারা অতিকষ্টে জীবন অতিবাহিত করে। অধিকাংশ গ্রামবাসী সহজ-সরল জীবনযাপন করে বিধায় তারা তেমন কোনো ঝুটঝামেলায় জড়াতে চায় না।

প্রায় ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই ভূখ-ে জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত সমস্যা ও সম্পদের সীমাবদ্ধতা যতোখানি সমস্যার সৃষ্টি করেছে তার চেয়েও অধিক সমস্যা জিইয়ে রেখেছে। তা হলো বেকারত্ব, জনসংখ্যা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি, সম্পদের অপ্রতুলতা এবং একমাত্র কৃষির ওপর নির্ভরশীলতা দেশকে ক্রমাগত পিছিয়ে দিচ্ছে। কোনো অবস্থাতে অর্থনীতিকে চাঙা করা যাচ্ছে না। রুগ্ন অর্থনীতিকে সুস্থ করতে হলে সুষ্ঠু পরিকল্পনা মোতাবেক দেশের যুবসমাজকে কাজে লাগাতে হবে। গ্রামের দৈন্যতা ঘুচাতে এ ধরনের প্রয়োজনীয়তা সেই বহুকাল আগে থেকে অনুভূত হচ্ছে। গ্রামের উন্নয়নে সরকার নানা সেøাগান প্রবর্তন করছে। কেউ বলছে- গ্রাম বাঁচলে দেশ বাঁচবে, কেউ বলছে- গ্রামের উন্নয়ন ছাড়া জাতীয় সমৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়। আবার কেউ বলছে- গ্রাম পর্যায়ে সবুজ বিপ্লব করে দেশকে উন্নত করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। এ সেøাগানের যে একেবারে প্রতিফলন ঘটছে এমন নয়, শতভাগ পারফেক্ট সফলতায় পৌঁছা হলো সবার লক্ষ্য।

দেশ যেহেতু এখনো কৃষিনির্ভর এবং দেশের শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি লোক গ্রামে বাস করেÑ এ কারণেই গ্রামের উন্নয়ন মানে দেশের উন্নয়ন; কিন্তু দুঃখজনক সত্য হলো কয়েক যুগ ধরে সেøাগানের মর্মবাণী কোনো সরকার তেমন প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি। গ্রাম উন্নয়নের স্থায়ী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ কিন্তু একান্ত অপরিহার্য বিষয়। রাজনৈতিক সুবিধার প্রয়োজনে গ্রাম উন্নয়নের ধারা বক্তৃতা বিবৃতিতে সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। ফলে গ্রামের উন্নয়নের ক্ষেত্রে সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া যে তিমিরে ছিলো সেই তিমিরেই রয়ে গেছে।

এ দেশে খাদ্য সংকটের পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে শত চেষ্টা করেও কোনো সুফল আসছে না। এখন শীতকাল, এসময়ে সব্জির মূল্য অনেকটা কম। তারপরও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে সরকার সচেতন থাকলেও সহজে নিয়ন্ত্রণে আসছে না। আমি গ্রাম উন্নয়ন এবং যুবসমাজ বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে গ্রামের কিছু মানুষের বর্তমান সমস্যার কথা উল্লেখ করলাম। নানা সমস্যায় জর্জরিত আমাদের এ দেশের ৬৮ হাজার গ্রাম। মৌলিক অধিকার রক্ষায় আমরা কতোটুকু সচেতন? গ্রামীণ মানুষ অধিকাংশ ক্ষেত্রে মৌলিক অধিকার বঞ্চিত। এর কারণ হিসেবে বলা যায় জনসংখ্যার ব্যাপক স্ফীতি, বেকার সমস্যা এবং শিক্ষার অভাব। সঠিক কর্মপন্থা উদ্ভাবন করতে না পারাও একটা অন্তরায়। এসব নানাবিধ সমস্যা গ্রাম পর্যায়ে জগদ্দল পাথরের মতো আঁকড়ে ধরেছে। হরেকরকম সমস্যা থেকে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করতে হলে দেশের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশে অর্থাৎ দেশের যুবসমাজকে গ্রাম উন্নয়নে কাজে লাগাতে হবে। গ্রামীণ কাজেরও অনেক রকমভেদ রয়েছে। কাজের ক্ষেত্র বুঝে যুবকদের যোগ্যতা অনুসারে কাজে নিয়োজিত করা গেলে গ্রাম তথা দেশের উন্নয়ন সম্ভব।

আমাদের দেশ যেহেতু কৃষিপ্রধান দেশ; সেহেতু কৃষকের সুযোগ-সুবিধার কথাও আমাদের ভাবতে হবে। গ্রামের যুবকদের সংগঠিত করে সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ভূমিকা এক্ষেত্রে অগ্রগণ্য। প্রশাসন যদি এ ধরনের উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে গ্রামীণ বেকার যুবকদের তালিকাভুক্ত করে মাছচাষ, হাঁস-মুরগির খামার, কৃষি খামার, বিভিন্ন রকমের কুটির শিল্প স্থাপন ইত্যাদি কার্যক্রম যদি হাতে নেয়া যায় তাহলে দেশের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বেকার যুবকদেরও কর্মের একটা পরিবেশ সৃষ্টি হবে। গ্রামে অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক রয়েছে। এদের মাধ্যমে গণশিক্ষা প্রবর্তন, নৈশ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা, পরিবার পরিকল্পনাতে যুবকদের অন্তর্ভুক্তসহ নানাবিধ কার্যক্রমে যুবসমাজকে নিয়োজিত করা গেলে এর সুফল দেশবাসী ভোগ করবে। এ সমস্ত কাজে দরকার ফান্ড। ফান্ডের ব্যাপারে বিত্তশালীদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বিত্তশালীদেরও উচিত উপযুক্ত স্থানে অর্থ দিয়ে দেশের দারিদ্র্যতা দূরীকরণে এগিয়ে আসা।

সরকারি পর্যায়ে পরিবার কল্যাণ সহকারী এবং সংগঠকদের পাশাপাশি যুবসমাজকে নিয়োজিত করে কার্যক্রম পরিচালনা করলে ইতিবাচক ফল লাভে আমরা সক্ষম হবো। আমাদের দেশের কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা বছরের বেশ উল্লেখযোগ্য সময় অতিবাহিত হয় বিভিন্ন ছুটিতে। এ ছুটিকালীন সময়টুকু যদি ছাত্র-ছাত্রীরা গ্রামে গিয়ে গ্রাম উন্নয়নের কাজে বোনাস সময়টুকু ব্যয় করে তাহলে সমাজ তথা দেশের লাভ। এ ধরনের মন-মানসিকতা যে তাদের মধ্যে নেই তা কিন্তু নয়, এতে আমরাই দোষী। কারণ অভিভাবকরা এ বিষয়ে ভাবলে এবং তাদের ছেলেমেয়েদের গ্রাম উন্নয়ন কাজে উৎসাহিত করলে ছাত্র ছাত্রীরাও অনুপ্রেরণা পাবে। তবে এখানে বাধ সাজছে গ্রামের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ পরিস্থিতি। গ্রামীণ সহজসরল মানুষদের তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করছে কিছু শ্রেণির গ্রামীণ অশিক্ষিত লোকেরা। তারাই নাখোশ হয়ে যায় শিক্ষিত যুবকরা কোনো কাজে গ্রামে গেলে। তার একমাত্র কারণ হলো কুচক্রীরা এদের ওপর খবরদারি করতে পারে না। উলটো তারা আটকে যায় গরিবদের ঠকানোর দায়ে। যার কারণে গ্রামে উন্নয়নমূলক কোনো কাজ সহজে বাস্তবায়ন করা যায় না।

দেশের গ্রাম ও শহরের মধ্যে বিস্তর ফারাক। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তারা আর গ্রামে যেতে চায় না। শিক্ষিত যুবসমাজ গ্রামকে উন্নয়ন বঞ্চিত আখ্যা দিয়ে গ্রামমুখী হতে নারাজ, এ ধরনের ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণিত করতে হলে সরকারকেই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। নানা সেøাগানে কার্যক্রম সীমাবদ্ধ না রেখে প্রকৃত উন্নয়ন কিভাবে করা যায় সেই চিন্তা-ভাবনা করার সময় এসে গেছে। আমরা নেত্রীস্থানীয়রা শুধু মুখের বুলিই আওড়াতে জানি, কাজের কাজ কিছুই করতে জানি না। গ্রামাঞ্চলে চলছে কৃষকদের দুর্যোগকাল। সারের দাম বৃদ্ধিসহ উৎপাদন ব্যয় কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা পরিমিত চাষবাস করতে পারছে না। এখনই তাদের পাশে দাঁড়াতে না পারলে এর প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে। বর্তমান সরকারের নানা উদ্যোগ কৃষকদের জন্য আপাতদৃষ্টিতে শুভ মনে হলেও সরকারের যা আয়োজন তা কৃষকদের প্রয়োজনে খুবই নগণ্য। কৃষকদের সাহায্য সহযোগিতা বণ্টনে যাতে পেশিশক্তির আছড় না লাগে সেই দিকেও দায়িত্বপ্রাপ্তদের নজর রাখতে হবে।

[লেখক : প্রাবন্ধিক]

‘দেশজ নাট্যশৈলী’র কেন্দ্রীয় নাট্যআঙ্গিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি

ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ও কিছু প্রশ্ন

রাখাইন পরিস্থিতি : বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির বড় পরীক্ষা

রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব

রম্যগদ্য : নিশুতিরাতের আগন্তুক

গুরু রবিদাস জির কথা

গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালদের জন্য অশনিসংকেত

নতুন বছরের প্রত্যাশা

নৈতিকতা, শিক্ষা ও উন্নয়ন: আমাদের মুক্তির পথ

কোথায় নাই কোটা?

ছবি

ও আমার স্বপ্ন ঝরা আকুল করা জন্মভূমি

ব্রেন রট: বর্তমান সময়ের এক মারাত্মক ব্যাধি

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলুক দেশের গবেষণা

নির্মোহ ইতিহাস চর্চা ও রাষ্ট্র সংস্কার প্রয়াসে শিক্ষা

জলবায়ুর পরিবর্তন ও দেশের ভবিষ্যৎ

প্রসঙ্গ : থিয়েটার ফর থেরাপির তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক পাঠ

শ্বেতপত্রে নতুন কী আছে?

ছবি

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও জুনো ভাইয়ের স্মৃতি

পরিবেশ সুরক্ষায় সার্কুলার ইকোনমি

বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কেন

ভাড়া ‘নির্ধারণ’ কিংবা ‘নিয়ন্ত্রণ’ করবে কে?

ব্যাংক ও আর্থিক খাতের জন্য কেমন ছিল ২০২৪ সাল?

স্বৈরাচারের শেষ নেই...

ছবি

স্মরণ : বাংলা সাহিত্যের অমর কথাশিল্পী

দোষারোপের রাজনীতি আর কত

জ্ঞান, দক্ষতা ও সৃজনশীলতার বিকাশে চাই বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা

যৌন নিপীড়ন প্রসঙ্গে

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কতটা সফল হবে?

নতুন বছরের প্রত্যাশা

ছবি

মানবিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে জেগে উঠি নতুন বছরে

দোষারোপের রাজনীতি আর কত

প্রশাসনিক সংকট ও ভবিষ্যতের করণীয়

ছবি

বিপ্লবী রাজনীতির কাণ্ডারি : কমরেড মণি সিংহ

স্বাস্ব্য সংস্কার : কী কী বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া জরুরি

জনশিক্ষা, গণশিক্ষা ও পারিবারিক শিক্ষা : রাষ্ট্রসংস্কারের মৌলিক ভিত্তি

জাহাজ ভাঙা শিল্প ও পরিবেশ বিপর্যয়

tab

উপ-সম্পাদকীয়

গ্রাম উন্নয়নে যুব সমাজের ভূমিকা

শতদল বড়ুয়া

শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫

মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ সময় হলো ‘যৌবন’। এ যৌবনের অপরিহার্য একটা অংশ হচ্ছে যুবসমাজ। যে কোনো দেশ কিংবা জাতির যুবশক্তি হচ্ছে সে জাতি বা দেশের কর্মশক্তির মূল উৎস।

জাতির উন্নয়নকল্পে যুবসমাজকে সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগাতে হবে। দায়সারাগোছের পরিকল্পনা জাতির সর্বনাশের মূল কারণ। উন্নয়নশীল দেশের প্রেক্ষাপটে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, যুবসমাজের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের এ দেশ তৃতীয়বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর অন্যতম। এ দেশের বৃহৎ অংশের জনগোষ্ঠী গ্রামে বাস করে। তাই গ্রামকে বাদ দিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা জুতসই নয়। গ্রামের মানুষের মাথাপিছু আয় অনেক কম। যার কারণে তারা অতিকষ্টে জীবন অতিবাহিত করে। অধিকাংশ গ্রামবাসী সহজ-সরল জীবনযাপন করে বিধায় তারা তেমন কোনো ঝুটঝামেলায় জড়াতে চায় না।

প্রায় ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই ভূখ-ে জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত সমস্যা ও সম্পদের সীমাবদ্ধতা যতোখানি সমস্যার সৃষ্টি করেছে তার চেয়েও অধিক সমস্যা জিইয়ে রেখেছে। তা হলো বেকারত্ব, জনসংখ্যা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি, সম্পদের অপ্রতুলতা এবং একমাত্র কৃষির ওপর নির্ভরশীলতা দেশকে ক্রমাগত পিছিয়ে দিচ্ছে। কোনো অবস্থাতে অর্থনীতিকে চাঙা করা যাচ্ছে না। রুগ্ন অর্থনীতিকে সুস্থ করতে হলে সুষ্ঠু পরিকল্পনা মোতাবেক দেশের যুবসমাজকে কাজে লাগাতে হবে। গ্রামের দৈন্যতা ঘুচাতে এ ধরনের প্রয়োজনীয়তা সেই বহুকাল আগে থেকে অনুভূত হচ্ছে। গ্রামের উন্নয়নে সরকার নানা সেøাগান প্রবর্তন করছে। কেউ বলছে- গ্রাম বাঁচলে দেশ বাঁচবে, কেউ বলছে- গ্রামের উন্নয়ন ছাড়া জাতীয় সমৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়। আবার কেউ বলছে- গ্রাম পর্যায়ে সবুজ বিপ্লব করে দেশকে উন্নত করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। এ সেøাগানের যে একেবারে প্রতিফলন ঘটছে এমন নয়, শতভাগ পারফেক্ট সফলতায় পৌঁছা হলো সবার লক্ষ্য।

দেশ যেহেতু এখনো কৃষিনির্ভর এবং দেশের শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি লোক গ্রামে বাস করেÑ এ কারণেই গ্রামের উন্নয়ন মানে দেশের উন্নয়ন; কিন্তু দুঃখজনক সত্য হলো কয়েক যুগ ধরে সেøাগানের মর্মবাণী কোনো সরকার তেমন প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি। গ্রাম উন্নয়নের স্থায়ী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ কিন্তু একান্ত অপরিহার্য বিষয়। রাজনৈতিক সুবিধার প্রয়োজনে গ্রাম উন্নয়নের ধারা বক্তৃতা বিবৃতিতে সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। ফলে গ্রামের উন্নয়নের ক্ষেত্রে সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া যে তিমিরে ছিলো সেই তিমিরেই রয়ে গেছে।

এ দেশে খাদ্য সংকটের পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে শত চেষ্টা করেও কোনো সুফল আসছে না। এখন শীতকাল, এসময়ে সব্জির মূল্য অনেকটা কম। তারপরও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে সরকার সচেতন থাকলেও সহজে নিয়ন্ত্রণে আসছে না। আমি গ্রাম উন্নয়ন এবং যুবসমাজ বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে গ্রামের কিছু মানুষের বর্তমান সমস্যার কথা উল্লেখ করলাম। নানা সমস্যায় জর্জরিত আমাদের এ দেশের ৬৮ হাজার গ্রাম। মৌলিক অধিকার রক্ষায় আমরা কতোটুকু সচেতন? গ্রামীণ মানুষ অধিকাংশ ক্ষেত্রে মৌলিক অধিকার বঞ্চিত। এর কারণ হিসেবে বলা যায় জনসংখ্যার ব্যাপক স্ফীতি, বেকার সমস্যা এবং শিক্ষার অভাব। সঠিক কর্মপন্থা উদ্ভাবন করতে না পারাও একটা অন্তরায়। এসব নানাবিধ সমস্যা গ্রাম পর্যায়ে জগদ্দল পাথরের মতো আঁকড়ে ধরেছে। হরেকরকম সমস্যা থেকে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করতে হলে দেশের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশে অর্থাৎ দেশের যুবসমাজকে গ্রাম উন্নয়নে কাজে লাগাতে হবে। গ্রামীণ কাজেরও অনেক রকমভেদ রয়েছে। কাজের ক্ষেত্র বুঝে যুবকদের যোগ্যতা অনুসারে কাজে নিয়োজিত করা গেলে গ্রাম তথা দেশের উন্নয়ন সম্ভব।

আমাদের দেশ যেহেতু কৃষিপ্রধান দেশ; সেহেতু কৃষকের সুযোগ-সুবিধার কথাও আমাদের ভাবতে হবে। গ্রামের যুবকদের সংগঠিত করে সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ভূমিকা এক্ষেত্রে অগ্রগণ্য। প্রশাসন যদি এ ধরনের উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে গ্রামীণ বেকার যুবকদের তালিকাভুক্ত করে মাছচাষ, হাঁস-মুরগির খামার, কৃষি খামার, বিভিন্ন রকমের কুটির শিল্প স্থাপন ইত্যাদি কার্যক্রম যদি হাতে নেয়া যায় তাহলে দেশের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বেকার যুবকদেরও কর্মের একটা পরিবেশ সৃষ্টি হবে। গ্রামে অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক রয়েছে। এদের মাধ্যমে গণশিক্ষা প্রবর্তন, নৈশ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা, পরিবার পরিকল্পনাতে যুবকদের অন্তর্ভুক্তসহ নানাবিধ কার্যক্রমে যুবসমাজকে নিয়োজিত করা গেলে এর সুফল দেশবাসী ভোগ করবে। এ সমস্ত কাজে দরকার ফান্ড। ফান্ডের ব্যাপারে বিত্তশালীদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বিত্তশালীদেরও উচিত উপযুক্ত স্থানে অর্থ দিয়ে দেশের দারিদ্র্যতা দূরীকরণে এগিয়ে আসা।

সরকারি পর্যায়ে পরিবার কল্যাণ সহকারী এবং সংগঠকদের পাশাপাশি যুবসমাজকে নিয়োজিত করে কার্যক্রম পরিচালনা করলে ইতিবাচক ফল লাভে আমরা সক্ষম হবো। আমাদের দেশের কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা বছরের বেশ উল্লেখযোগ্য সময় অতিবাহিত হয় বিভিন্ন ছুটিতে। এ ছুটিকালীন সময়টুকু যদি ছাত্র-ছাত্রীরা গ্রামে গিয়ে গ্রাম উন্নয়নের কাজে বোনাস সময়টুকু ব্যয় করে তাহলে সমাজ তথা দেশের লাভ। এ ধরনের মন-মানসিকতা যে তাদের মধ্যে নেই তা কিন্তু নয়, এতে আমরাই দোষী। কারণ অভিভাবকরা এ বিষয়ে ভাবলে এবং তাদের ছেলেমেয়েদের গ্রাম উন্নয়ন কাজে উৎসাহিত করলে ছাত্র ছাত্রীরাও অনুপ্রেরণা পাবে। তবে এখানে বাধ সাজছে গ্রামের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ পরিস্থিতি। গ্রামীণ সহজসরল মানুষদের তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করছে কিছু শ্রেণির গ্রামীণ অশিক্ষিত লোকেরা। তারাই নাখোশ হয়ে যায় শিক্ষিত যুবকরা কোনো কাজে গ্রামে গেলে। তার একমাত্র কারণ হলো কুচক্রীরা এদের ওপর খবরদারি করতে পারে না। উলটো তারা আটকে যায় গরিবদের ঠকানোর দায়ে। যার কারণে গ্রামে উন্নয়নমূলক কোনো কাজ সহজে বাস্তবায়ন করা যায় না।

দেশের গ্রাম ও শহরের মধ্যে বিস্তর ফারাক। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তারা আর গ্রামে যেতে চায় না। শিক্ষিত যুবসমাজ গ্রামকে উন্নয়ন বঞ্চিত আখ্যা দিয়ে গ্রামমুখী হতে নারাজ, এ ধরনের ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণিত করতে হলে সরকারকেই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। নানা সেøাগানে কার্যক্রম সীমাবদ্ধ না রেখে প্রকৃত উন্নয়ন কিভাবে করা যায় সেই চিন্তা-ভাবনা করার সময় এসে গেছে। আমরা নেত্রীস্থানীয়রা শুধু মুখের বুলিই আওড়াতে জানি, কাজের কাজ কিছুই করতে জানি না। গ্রামাঞ্চলে চলছে কৃষকদের দুর্যোগকাল। সারের দাম বৃদ্ধিসহ উৎপাদন ব্যয় কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা পরিমিত চাষবাস করতে পারছে না। এখনই তাদের পাশে দাঁড়াতে না পারলে এর প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে। বর্তমান সরকারের নানা উদ্যোগ কৃষকদের জন্য আপাতদৃষ্টিতে শুভ মনে হলেও সরকারের যা আয়োজন তা কৃষকদের প্রয়োজনে খুবই নগণ্য। কৃষকদের সাহায্য সহযোগিতা বণ্টনে যাতে পেশিশক্তির আছড় না লাগে সেই দিকেও দায়িত্বপ্রাপ্তদের নজর রাখতে হবে।

[লেখক : প্রাবন্ধিক]

back to top