কামরুজ্জামান
ধারণা করা হয় বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার অটোরিকশা গাজীপুরে চলাচল করছে। গাজীপুরের গাজীপুর সদর ও শ্রীপুরে প্যাডেলচালিত রিকশাও রয়েছে অনেক। আছে সিএনজিচালিত থ্রি হুইলার। এর মধ্যে এই বিপুলসংখ্যক অটোরিকশা গাজীপুরের জন্য এখন বিপজ্জনক মনে হচ্ছে। গাজীপুরের ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়ক, শহরের প্রধান সড়ক, লিংক রোড এবং অলিতে-গলিতে সর্বত্র চলছে অটোরিকশা। গাজীপুরের অটোরিকশায় নেই কোনো শৃঙ্খলা, নেই প্রশিক্ষিত ড্রাইভার। অনেক অটোরিকশার চালক বয়সে কিশোর।
গাজীপুরের শ্রীপুর অঞ্চলে অটোরিকশার কারণে বর্তমানে নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এমনিতেই শ্রীপুর অঞ্চল শিল্পঅধ্যুষিত এলাকা। শিল্প কারখানায় কর্মরত অতিরিক্ত মানুষের চাপ, সব ধরনের পরিবহন চলাচল বৃদ্ধি এবং হঠাৎ করে অল্প সময়ে অটোরিকশার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় শ্রীপুর বাসীকে যানজটে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অনিয়ন্ত্রিত অটোরিকশার কারণে প্রতিদিন বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা।
অটোরিকশার মাধ্যমে যে কারণে সড়কে যানজট, বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনা ঘটে তা হলোÑ অনভিজ্ঞ ও অদক্ষ ড্রাইভার, হঠাৎ করে অটোরিকশার সংখ্যা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং একটি স্থানে প্রয়োজনের চেয়ে অধিক অটোরিকশার উপস্থিতি, মহাসড়কে অটোরিকশার অবাধ চলাচল, অটোরিকশাগুলোর দুর্বল ব্রেক সিস্টেম, আইন ও নিয়ম শৃঙ্খলা সম্পর্কে অটোচালকদের ধারণা না থাকা ইত্যাদি।
আগের চেয়ে শ্রীপুর উপজেলার প্রতিটি রাস্তায় বেড়েছে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা। অটোরিকশার এলোমেলো চলাচলের কারণে দুর্ঘটনাও বেড়েছে অনেক বেশি। বিশেষ করে ইউটার্ন ও লিংক রোড মোড়গুলোতে যানজট লেগেই থাকে। বিপুলসংখ্যক অটোরিকশার চাপে অন্যান্য পরিবহন চলাচলে মারাত্মক বিঘœ ঘটে। বড় গাড়ি ও প্রাইভেট কারের সঙ্গে প্রায়ই সংঘর্ষ হচ্ছে। বড় গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষ হলে অটোরিকশা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি। অটোরিকশাওয়ালাও দুর্ঘটনায় পতিত হয়। প্রাইভেট কার ও অন্যান্য ব্যক্তিগত গাড়িতে সংঘর্ষ হলে গাড়িগুলোর বাইরে খুব বেশি ক্ষতি হয়। এতে গাড়িগুলো ঠিক করতে মালিকের আর্থিক দ- গুনতে হয়। আর সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলোÑ অটোরিকশার সঙ্গে দুর্ঘটনা ঘটলে দুপক্ষই বাকবিত-ায় জড়িয়ে পড়ে। এতে করে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়ে বিশৃঙ্খলা লেগে যায়। অটোরিকশার অস্বাভাবিক গতি এবং দুর্বল ব্রেক সিস্টেম এর কারণে প্রায়ই যাত্রী পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে।
শ্রীপুর অঞ্চলে বর্তমানে শুধু অটোরিকশার কারণে সড়ক মহাসড়ক ও লিংক রোডগুলোর মুখে দীর্ঘ সময় জ্যাম লেগে থাকে। বিপুল কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। আগে অটোরিকশার পরিমাণ কম ছিল। বর্তমানে অটোরিকশার সংখ্যা এতটাই বেড়েছে যে, এদের নেই কোনো হিসাব ও নিয়মশৃঙ্খলা। নেই কোনো ধরা-বাঁধা নিয়ম। সারা বাংলাদেশে থেকেই গাজীপুরে মানুষ আসে কাজের সন্ধানে। এর একটা অংশ কাজ না পেয়ে সহজলভ্য হিসেবে কাজ শুরু করে অটোরিকশা চালানোর। শুধু অটোরিকশা সৃষ্ট জ্যামে পড়ে নাজেহাল হতে হয় সব ধরনের মানুষকে। অটোরিকশার কারণে মানুষকে এখন অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করতে হয়।
একটি খবরের প্রতিবেদনে দেখলাম অতিরিক্ত অটোরিকশার কারণে গাজীপুরের অনেক জায়গায় অবৈধ অটোরিকশা বিদ্যুৎ চার্জ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। যেখানে অটোরিকশা রিচার্জ করা হয়। এই রিচার্জ করতে প্রচুর বিদ্যুতেরও প্রয়োজন হয়। এতে করে দুই ধরনের ক্ষতি হচ্ছেÑ বিদ্যুৎ বিভাগ অর্থ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আর গ্রাহক বিদ্যুৎ কম পাচ্ছে। এর প্রভাবও নগরবাসীর ওপর পড়ছে।
শ্রীপুর অঞ্চলে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে শুরু করে বিভিন্ন লিংক রোডে অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ এবং শৃঙ্খলা আনয়ন করা খুবই প্রয়োজন। এর জন্য সবার সচেতনতা বাড়াতে হবে। পুলিশকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। পরিবহনের বিভিন্ন সংগঠন এবং নেতাদের আরও কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। অটোরিকশা উৎপাদন বন্ধ এবং শৃঙ্খলা আনয়নে শ্রীপুর পৌরসভা ও শ্রীপুর উপজেলা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে অতিরিক্ত দেখভাল প্রয়োজন। প্রয়োজন অটোরিকশা নিবন্ধন ও অটোওয়ালাদের ডাটাবেইজ তৈরি করা। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশাÑ সরকার অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ এবং শৃঙ্খলা আনয়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
[লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা কলেজ, গাজীপুর]
কামরুজ্জামান
বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫
ধারণা করা হয় বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার অটোরিকশা গাজীপুরে চলাচল করছে। গাজীপুরের গাজীপুর সদর ও শ্রীপুরে প্যাডেলচালিত রিকশাও রয়েছে অনেক। আছে সিএনজিচালিত থ্রি হুইলার। এর মধ্যে এই বিপুলসংখ্যক অটোরিকশা গাজীপুরের জন্য এখন বিপজ্জনক মনে হচ্ছে। গাজীপুরের ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়ক, শহরের প্রধান সড়ক, লিংক রোড এবং অলিতে-গলিতে সর্বত্র চলছে অটোরিকশা। গাজীপুরের অটোরিকশায় নেই কোনো শৃঙ্খলা, নেই প্রশিক্ষিত ড্রাইভার। অনেক অটোরিকশার চালক বয়সে কিশোর।
গাজীপুরের শ্রীপুর অঞ্চলে অটোরিকশার কারণে বর্তমানে নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এমনিতেই শ্রীপুর অঞ্চল শিল্পঅধ্যুষিত এলাকা। শিল্প কারখানায় কর্মরত অতিরিক্ত মানুষের চাপ, সব ধরনের পরিবহন চলাচল বৃদ্ধি এবং হঠাৎ করে অল্প সময়ে অটোরিকশার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় শ্রীপুর বাসীকে যানজটে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অনিয়ন্ত্রিত অটোরিকশার কারণে প্রতিদিন বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা।
অটোরিকশার মাধ্যমে যে কারণে সড়কে যানজট, বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনা ঘটে তা হলোÑ অনভিজ্ঞ ও অদক্ষ ড্রাইভার, হঠাৎ করে অটোরিকশার সংখ্যা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং একটি স্থানে প্রয়োজনের চেয়ে অধিক অটোরিকশার উপস্থিতি, মহাসড়কে অটোরিকশার অবাধ চলাচল, অটোরিকশাগুলোর দুর্বল ব্রেক সিস্টেম, আইন ও নিয়ম শৃঙ্খলা সম্পর্কে অটোচালকদের ধারণা না থাকা ইত্যাদি।
আগের চেয়ে শ্রীপুর উপজেলার প্রতিটি রাস্তায় বেড়েছে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা। অটোরিকশার এলোমেলো চলাচলের কারণে দুর্ঘটনাও বেড়েছে অনেক বেশি। বিশেষ করে ইউটার্ন ও লিংক রোড মোড়গুলোতে যানজট লেগেই থাকে। বিপুলসংখ্যক অটোরিকশার চাপে অন্যান্য পরিবহন চলাচলে মারাত্মক বিঘœ ঘটে। বড় গাড়ি ও প্রাইভেট কারের সঙ্গে প্রায়ই সংঘর্ষ হচ্ছে। বড় গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষ হলে অটোরিকশা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি। অটোরিকশাওয়ালাও দুর্ঘটনায় পতিত হয়। প্রাইভেট কার ও অন্যান্য ব্যক্তিগত গাড়িতে সংঘর্ষ হলে গাড়িগুলোর বাইরে খুব বেশি ক্ষতি হয়। এতে গাড়িগুলো ঠিক করতে মালিকের আর্থিক দ- গুনতে হয়। আর সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলোÑ অটোরিকশার সঙ্গে দুর্ঘটনা ঘটলে দুপক্ষই বাকবিত-ায় জড়িয়ে পড়ে। এতে করে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়ে বিশৃঙ্খলা লেগে যায়। অটোরিকশার অস্বাভাবিক গতি এবং দুর্বল ব্রেক সিস্টেম এর কারণে প্রায়ই যাত্রী পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে।
শ্রীপুর অঞ্চলে বর্তমানে শুধু অটোরিকশার কারণে সড়ক মহাসড়ক ও লিংক রোডগুলোর মুখে দীর্ঘ সময় জ্যাম লেগে থাকে। বিপুল কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। আগে অটোরিকশার পরিমাণ কম ছিল। বর্তমানে অটোরিকশার সংখ্যা এতটাই বেড়েছে যে, এদের নেই কোনো হিসাব ও নিয়মশৃঙ্খলা। নেই কোনো ধরা-বাঁধা নিয়ম। সারা বাংলাদেশে থেকেই গাজীপুরে মানুষ আসে কাজের সন্ধানে। এর একটা অংশ কাজ না পেয়ে সহজলভ্য হিসেবে কাজ শুরু করে অটোরিকশা চালানোর। শুধু অটোরিকশা সৃষ্ট জ্যামে পড়ে নাজেহাল হতে হয় সব ধরনের মানুষকে। অটোরিকশার কারণে মানুষকে এখন অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করতে হয়।
একটি খবরের প্রতিবেদনে দেখলাম অতিরিক্ত অটোরিকশার কারণে গাজীপুরের অনেক জায়গায় অবৈধ অটোরিকশা বিদ্যুৎ চার্জ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। যেখানে অটোরিকশা রিচার্জ করা হয়। এই রিচার্জ করতে প্রচুর বিদ্যুতেরও প্রয়োজন হয়। এতে করে দুই ধরনের ক্ষতি হচ্ছেÑ বিদ্যুৎ বিভাগ অর্থ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আর গ্রাহক বিদ্যুৎ কম পাচ্ছে। এর প্রভাবও নগরবাসীর ওপর পড়ছে।
শ্রীপুর অঞ্চলে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে শুরু করে বিভিন্ন লিংক রোডে অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ এবং শৃঙ্খলা আনয়ন করা খুবই প্রয়োজন। এর জন্য সবার সচেতনতা বাড়াতে হবে। পুলিশকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। পরিবহনের বিভিন্ন সংগঠন এবং নেতাদের আরও কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। অটোরিকশা উৎপাদন বন্ধ এবং শৃঙ্খলা আনয়নে শ্রীপুর পৌরসভা ও শ্রীপুর উপজেলা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে অতিরিক্ত দেখভাল প্রয়োজন। প্রয়োজন অটোরিকশা নিবন্ধন ও অটোওয়ালাদের ডাটাবেইজ তৈরি করা। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশাÑ সরকার অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ এবং শৃঙ্খলা আনয়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
[লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা কলেজ, গাজীপুর]