মাহতাব হোসাইন মাজেদ
প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের শেষ রোববার বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। সে হিসাবে এ বছর জানুয়ারি মাসের ২৬ তারিখে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১০০টি দেশে ২০২৫ সালে দিবসটি পালিত হবে। কুষ্ঠ রোগের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে এই দিবস পালন করা হয়। এই দিবসের উদ্দেশ্য হলো কুষ্ঠ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা এবং এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করা। জনবিচ্ছিন্ন কুষ্ঠ আক্রান্ত ব্যক্তিদের সমাজে পুনঃগ্রহণ, সর্বপ্রকার কুষ্ঠজনিত কুসংস্কার দূরীকরণ, এসব লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে জনসাধারণ এবং কুষ্ঠ আক্রান্ত ব্যক্তিদের সঠিক তথ্য ও শিক্ষা প্রদান করাই হচ্ছে এই দিবসের লক্ষ্য।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক কুষ্ঠবিরোধী সংগঠনসমূহের আন্তর্জাতিক ফেডারেশন ‘আইলেপ’, যা ১৩টি আন্তর্জাতিক এনজিও এর সমন্বয়ে গঠিত, এই দিবসটি পালনে উদ্যোগ নেয়। আইলেপ এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রাউল ফোলেরো বিশ্বব্যাপী কুষ্ঠ রোগ বিষয়ক ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধি কল্পে ও কুষ্ঠ রোগের প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য ১৯৫৪ সালে দিবসটি উদযাপনের জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কুষ্ঠ রোগের নাম শুনলে আজও আতঙ্ক ছড়ায়। কারও এমন রোগ হয়েছে শুনলে আজও অনেকে সেই ব্যক্তির চারপাশে ঘেঁষতে চান না, এড়িয়ে থাকেন। কারণ কুষ্ঠ রোগ এখনও অনেক দেশে সামাজিক ও স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ।
কুষ্ঠ রোগ একটি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ যা গুপড়নধপঃবৎরঁস ষবঢ়ৎধব নামক জীবাণু দ্বারা ঘটে। এটি প্রধানত ত্বক, স্নায়ু এবং শ্বাসতন্ত্রকে প্রভাবিত করে। যদি সময়মতো চিকিৎসা না করা হয়, তবে এটি ত্বকের বিকৃতি এবং অঙ্গহানির কারণ হতে পারে।
কুষ্ঠ রোগ বহু প্রাচীন রোগগুলোর মধ্যে একটি। প্রাচীন ভারত, চীন ও মিসরের মতো দেশে এই রোগের উল্লেখ পাওয়া যায়। ১৮৭৩ সালে বিজ্ঞানী গেরহার্ড হ্যানসেন প্রথমবারের মতো এই রোগের কারণ হিসেবে গুপড়নধপঃবৎরঁস ষবঢ়ৎধব ব্যাকটেরিয়াকে চিহ্নিত করেন। প্রাচীন গ্রন্থ এবং সভ্যতায় কুষ্ঠ রোগের উল্লেখ পাওয়া যায়। একসময় এটি অভিশাপ বা পাপের ফল হিসেবে বিবেচিত হত। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির ফলে আমরা এখন জানি যে এটি একটি সংক্রামক রোগ এবং নিরাময়যোগ্য।
কুষ্ঠ রোগের প্রধান কারণ হলো গুপড়নধপঃবৎরঁস ষবঢ়ৎধব ব্যাকটেরিয়া। এটি ধীরে ধীরে শরীরে বিস্তার লাভ করে এবং লক্ষণগুলো দেখা দিতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। নিম্নলিখিত কারণগুলো কুষ্ঠ রোগের সংক্রমণ বাড়াতে পারে: দীর্ঘমেয়াদি ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ, সংক্রামিত ব্যক্তির সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে সরাসরি সংস্পর্শে থাকা। দুর্বল ইমিউন সিস্টেম কুষ্ঠ রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। কিছু ক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাসের কারণে ঝুঁকি বেশি থাকতে পারে। অপরিষ্কার পরিবেশ এবং অপুষ্টি সংক্রমণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
কুষ্ঠ রোগের লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ পায় এবং তা একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে। সাধারণত লক্ষণগুলো হলো:
ত্বকে ফ্যাকাশে বা লালচে দাগ যা অনুভূতিশূন্য। হাত-পা বা শরীরের অন্য কোনো অংশে অনুভূতির অভাব। স্নায়ুর ফুলে ওঠা। চোখ ও মুখের পেশিতে দুর্বলতা। আঙুল বা পায়ের আঙুলে বিকৃতি।
কুষ্ঠ রোগকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়:
পসিবাসিলারি: তুলনামূলকভাবে হালকা।
মাল্টিবাসিলারি: মারাত্মক ও দীর্ঘস্থায়ী।
প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করা গেলে এটি দ্রুত চিকিৎসা করা যায়। তাই লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। পর্যাপ্ত পুষ্টি এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কুষ্ঠ রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
কুষ্ঠ রোগ শুধু শারীরিক নয়, সামাজিকভাবে একটি বড় সমস্যা। কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অনেক সময় সমাজে অবহেলিত হন। তাদের কর্মসংস্থান, শিক্ষা এবং সামাজিক সম্পর্কেও প্রভাব পড়ে।
কুষ্ঠ রোগীরা সুস্থ হওয়ার পরও অনেক সময় তাদের কর্মক্ষমতা কমে যায়। তাই তাদের জন্য বিশেষ পুনর্বাসন কর্মসূচি প্রয়োজন।
বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস পালনের মাধ্যমে মানুষকে জানানো হয় যে কুষ্ঠ রোগ নিরাময়যোগ্য এবং এটি সামাজিক কলঙ্কের কারণ হওয়া উচিত নয়। এই দিনটি কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি সহানুভূতি ও সমর্থন জানাতে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে।
[লেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি]
মাহতাব হোসাইন মাজেদ
রোববার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫
প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের শেষ রোববার বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। সে হিসাবে এ বছর জানুয়ারি মাসের ২৬ তারিখে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১০০টি দেশে ২০২৫ সালে দিবসটি পালিত হবে। কুষ্ঠ রোগের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে এই দিবস পালন করা হয়। এই দিবসের উদ্দেশ্য হলো কুষ্ঠ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা এবং এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করা। জনবিচ্ছিন্ন কুষ্ঠ আক্রান্ত ব্যক্তিদের সমাজে পুনঃগ্রহণ, সর্বপ্রকার কুষ্ঠজনিত কুসংস্কার দূরীকরণ, এসব লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে জনসাধারণ এবং কুষ্ঠ আক্রান্ত ব্যক্তিদের সঠিক তথ্য ও শিক্ষা প্রদান করাই হচ্ছে এই দিবসের লক্ষ্য।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক কুষ্ঠবিরোধী সংগঠনসমূহের আন্তর্জাতিক ফেডারেশন ‘আইলেপ’, যা ১৩টি আন্তর্জাতিক এনজিও এর সমন্বয়ে গঠিত, এই দিবসটি পালনে উদ্যোগ নেয়। আইলেপ এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রাউল ফোলেরো বিশ্বব্যাপী কুষ্ঠ রোগ বিষয়ক ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধি কল্পে ও কুষ্ঠ রোগের প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য ১৯৫৪ সালে দিবসটি উদযাপনের জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কুষ্ঠ রোগের নাম শুনলে আজও আতঙ্ক ছড়ায়। কারও এমন রোগ হয়েছে শুনলে আজও অনেকে সেই ব্যক্তির চারপাশে ঘেঁষতে চান না, এড়িয়ে থাকেন। কারণ কুষ্ঠ রোগ এখনও অনেক দেশে সামাজিক ও স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ।
কুষ্ঠ রোগ একটি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ যা গুপড়নধপঃবৎরঁস ষবঢ়ৎধব নামক জীবাণু দ্বারা ঘটে। এটি প্রধানত ত্বক, স্নায়ু এবং শ্বাসতন্ত্রকে প্রভাবিত করে। যদি সময়মতো চিকিৎসা না করা হয়, তবে এটি ত্বকের বিকৃতি এবং অঙ্গহানির কারণ হতে পারে।
কুষ্ঠ রোগ বহু প্রাচীন রোগগুলোর মধ্যে একটি। প্রাচীন ভারত, চীন ও মিসরের মতো দেশে এই রোগের উল্লেখ পাওয়া যায়। ১৮৭৩ সালে বিজ্ঞানী গেরহার্ড হ্যানসেন প্রথমবারের মতো এই রোগের কারণ হিসেবে গুপড়নধপঃবৎরঁস ষবঢ়ৎধব ব্যাকটেরিয়াকে চিহ্নিত করেন। প্রাচীন গ্রন্থ এবং সভ্যতায় কুষ্ঠ রোগের উল্লেখ পাওয়া যায়। একসময় এটি অভিশাপ বা পাপের ফল হিসেবে বিবেচিত হত। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির ফলে আমরা এখন জানি যে এটি একটি সংক্রামক রোগ এবং নিরাময়যোগ্য।
কুষ্ঠ রোগের প্রধান কারণ হলো গুপড়নধপঃবৎরঁস ষবঢ়ৎধব ব্যাকটেরিয়া। এটি ধীরে ধীরে শরীরে বিস্তার লাভ করে এবং লক্ষণগুলো দেখা দিতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। নিম্নলিখিত কারণগুলো কুষ্ঠ রোগের সংক্রমণ বাড়াতে পারে: দীর্ঘমেয়াদি ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ, সংক্রামিত ব্যক্তির সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে সরাসরি সংস্পর্শে থাকা। দুর্বল ইমিউন সিস্টেম কুষ্ঠ রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। কিছু ক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাসের কারণে ঝুঁকি বেশি থাকতে পারে। অপরিষ্কার পরিবেশ এবং অপুষ্টি সংক্রমণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
কুষ্ঠ রোগের লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ পায় এবং তা একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে। সাধারণত লক্ষণগুলো হলো:
ত্বকে ফ্যাকাশে বা লালচে দাগ যা অনুভূতিশূন্য। হাত-পা বা শরীরের অন্য কোনো অংশে অনুভূতির অভাব। স্নায়ুর ফুলে ওঠা। চোখ ও মুখের পেশিতে দুর্বলতা। আঙুল বা পায়ের আঙুলে বিকৃতি।
কুষ্ঠ রোগকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়:
পসিবাসিলারি: তুলনামূলকভাবে হালকা।
মাল্টিবাসিলারি: মারাত্মক ও দীর্ঘস্থায়ী।
প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করা গেলে এটি দ্রুত চিকিৎসা করা যায়। তাই লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। পর্যাপ্ত পুষ্টি এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কুষ্ঠ রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
কুষ্ঠ রোগ শুধু শারীরিক নয়, সামাজিকভাবে একটি বড় সমস্যা। কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অনেক সময় সমাজে অবহেলিত হন। তাদের কর্মসংস্থান, শিক্ষা এবং সামাজিক সম্পর্কেও প্রভাব পড়ে।
কুষ্ঠ রোগীরা সুস্থ হওয়ার পরও অনেক সময় তাদের কর্মক্ষমতা কমে যায়। তাই তাদের জন্য বিশেষ পুনর্বাসন কর্মসূচি প্রয়োজন।
বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস পালনের মাধ্যমে মানুষকে জানানো হয় যে কুষ্ঠ রোগ নিরাময়যোগ্য এবং এটি সামাজিক কলঙ্কের কারণ হওয়া উচিত নয়। এই দিনটি কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি সহানুভূতি ও সমর্থন জানাতে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে।
[লেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি]