বাবুল রবিদাস
মানুষ সামাজিক জীব। সৃষ্টির আদিকাল থেকেই মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করে আসছে। সমাজে বসবাস করতে হলে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন অনুকূল পরিবেশ। সুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন সুন্দর মানুষ। একজন মানুষ অন্য মানুষের সঙ্গ খোঁজে। সঙ্গী যদি ভালো হয়, তবে তা সৎসঙ্গী। সৎসঙ্গীদের পরশে গড়ে ওঠে সুন্দর জীবন; কিন্তু খারাপ লোকদের সংস্পর্শে তা রূপ নেয় অসৎসঙ্গে।
আমাদের সমাজে ভালো-মন্দ উভয়ের সমন্বয় রয়েছে। ফলে সমাজে যেমন ভালো কাজ হয়, তেমনই খারাপ কাজও ঘটে। জীবনকে সার্থকভাবে গড়ে তুলতে হলে ভালোকে ধারণ এবং মন্দকে এড়িয়ে চলতে হবে। অসৎসঙ্গ বর্জন করে সৎসঙ্গ গ্রহণ করতে হবে।
শিশুকাল থেকে চরিত্র গঠনের গুরুত্ব
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ জন্মের পর থেকেই তার আশপাশের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করে। শিশুরা অত্যন্ত অনুকরণপ্রিয়। তারা যা দেখে, তা-ই শেখে। এজন্য শিশুকাল থেকেই তাদের সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়া অত্যন্ত জরুরি। সঠিক পরিবেশ এবং আদর্শে শিশুদের গড়ে তুললে তারা সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে সক্ষম হবে।
পরিবার, বিদ্যালয় এবং সামাজিক পরিবেশ শিশুর চরিত্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিশুর খেলার সঙ্গী বা বন্ধুবান্ধব নির্বাচনে পিতা-মাতার সতর্কতা প্রয়োজন। কারণ সঙ্গদোষে শিশুর চরিত্র বিকৃত হতে পারে।
মাদকাসক্তির প্রভাব ও পরিণতি
আজকাল অনেক তরুণ অন্ধকার পথে পা বাড়াচ্ছে। সিগারেট, গাঁজা, মদ, এবং অন্যান্য মাদকদ্রব্যের প্রতি আসক্তি তাদের জীবনকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। প্রথমে মাদকদ্রব্য ব্যবহার সামান্য হলেও তা ধীরে ধীরে নেশায় পরিণত হয়। ফলে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি তো হয়ই, পাশাপাশি পরিবার ও সমাজে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
গাঁজা বা অন্যান্য মাদকের আসক্তি শুরুতে সাময়িক আনন্দ দিলেও দীর্ঘমেয়াদে এটি স্নায়ুতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ব্যক্তি তার দায়িত্ববোধ হারিয়ে ফেলে। তাছাড়া মাদকাসক্তদের হাতে সমাজও নিরাপদ থাকে না।
চরিত্র গঠনের মর্মার্থ
মানব জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ চরিত্র। সততা, নিষ্ঠা, কর্তব্যপরায়ণতা, ভক্তি, শ্রদ্ধা এবং আত্মসংযমÑ এই গুণগুলো সচ্চরিত্রের প্রধান লক্ষণ। উত্তম চরিত্রের স্পর্শে যেমন অবহেলিত জীবনও শোধন হতে পারে, তেমনি চারিত্রিক দুর্বলতা জীবনকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মানুষকে চরিত্রবান হওয়ার জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে। শৈশব থেকে শিক্ষার পরিবেশ, পরিবার ও সমাজের সমর্থন, এবং ব্যক্তির আত্মপ্রচেষ্টা চরিত্র গঠনের ভিত্তি স্থাপন করে।
জীবনের প্রতিটি ধাপে সৎসঙ্গ গ্রহণ এবং অসৎসঙ্গ বর্জন করা উচিত। সমাজে মাদকাসক্তি বা চারিত্রিক দুর্বলতার মতো সমস্যাগুলো দূর করতে হলে ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজÑ সবাইকে সম্মিলিতভাবে সচেষ্ট হতে হবে। ভালো চরিত্রের আলোয় আলোকিত জীবনই হতে পারে সমাজে সুগন্ধ ছড়ানোর প্রকৃত উপায়।
[লেখক : আইনজীবী, জজ কোর্ট, জয়পুরহাট ]
বাবুল রবিদাস
বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫
মানুষ সামাজিক জীব। সৃষ্টির আদিকাল থেকেই মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করে আসছে। সমাজে বসবাস করতে হলে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন অনুকূল পরিবেশ। সুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন সুন্দর মানুষ। একজন মানুষ অন্য মানুষের সঙ্গ খোঁজে। সঙ্গী যদি ভালো হয়, তবে তা সৎসঙ্গী। সৎসঙ্গীদের পরশে গড়ে ওঠে সুন্দর জীবন; কিন্তু খারাপ লোকদের সংস্পর্শে তা রূপ নেয় অসৎসঙ্গে।
আমাদের সমাজে ভালো-মন্দ উভয়ের সমন্বয় রয়েছে। ফলে সমাজে যেমন ভালো কাজ হয়, তেমনই খারাপ কাজও ঘটে। জীবনকে সার্থকভাবে গড়ে তুলতে হলে ভালোকে ধারণ এবং মন্দকে এড়িয়ে চলতে হবে। অসৎসঙ্গ বর্জন করে সৎসঙ্গ গ্রহণ করতে হবে।
শিশুকাল থেকে চরিত্র গঠনের গুরুত্ব
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ জন্মের পর থেকেই তার আশপাশের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করে। শিশুরা অত্যন্ত অনুকরণপ্রিয়। তারা যা দেখে, তা-ই শেখে। এজন্য শিশুকাল থেকেই তাদের সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়া অত্যন্ত জরুরি। সঠিক পরিবেশ এবং আদর্শে শিশুদের গড়ে তুললে তারা সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে সক্ষম হবে।
পরিবার, বিদ্যালয় এবং সামাজিক পরিবেশ শিশুর চরিত্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিশুর খেলার সঙ্গী বা বন্ধুবান্ধব নির্বাচনে পিতা-মাতার সতর্কতা প্রয়োজন। কারণ সঙ্গদোষে শিশুর চরিত্র বিকৃত হতে পারে।
মাদকাসক্তির প্রভাব ও পরিণতি
আজকাল অনেক তরুণ অন্ধকার পথে পা বাড়াচ্ছে। সিগারেট, গাঁজা, মদ, এবং অন্যান্য মাদকদ্রব্যের প্রতি আসক্তি তাদের জীবনকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। প্রথমে মাদকদ্রব্য ব্যবহার সামান্য হলেও তা ধীরে ধীরে নেশায় পরিণত হয়। ফলে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি তো হয়ই, পাশাপাশি পরিবার ও সমাজে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
গাঁজা বা অন্যান্য মাদকের আসক্তি শুরুতে সাময়িক আনন্দ দিলেও দীর্ঘমেয়াদে এটি স্নায়ুতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ব্যক্তি তার দায়িত্ববোধ হারিয়ে ফেলে। তাছাড়া মাদকাসক্তদের হাতে সমাজও নিরাপদ থাকে না।
চরিত্র গঠনের মর্মার্থ
মানব জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ চরিত্র। সততা, নিষ্ঠা, কর্তব্যপরায়ণতা, ভক্তি, শ্রদ্ধা এবং আত্মসংযমÑ এই গুণগুলো সচ্চরিত্রের প্রধান লক্ষণ। উত্তম চরিত্রের স্পর্শে যেমন অবহেলিত জীবনও শোধন হতে পারে, তেমনি চারিত্রিক দুর্বলতা জীবনকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মানুষকে চরিত্রবান হওয়ার জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে। শৈশব থেকে শিক্ষার পরিবেশ, পরিবার ও সমাজের সমর্থন, এবং ব্যক্তির আত্মপ্রচেষ্টা চরিত্র গঠনের ভিত্তি স্থাপন করে।
জীবনের প্রতিটি ধাপে সৎসঙ্গ গ্রহণ এবং অসৎসঙ্গ বর্জন করা উচিত। সমাজে মাদকাসক্তি বা চারিত্রিক দুর্বলতার মতো সমস্যাগুলো দূর করতে হলে ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজÑ সবাইকে সম্মিলিতভাবে সচেষ্ট হতে হবে। ভালো চরিত্রের আলোয় আলোকিত জীবনই হতে পারে সমাজে সুগন্ধ ছড়ানোর প্রকৃত উপায়।
[লেখক : আইনজীবী, জজ কোর্ট, জয়পুরহাট ]