সমীর কুমার সাহা
মানুষের জীবনযাত্রার মান ও গড় আয়ূুষ্কাল যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে নানাবিধ অসংক্রামক রোগ-ব্যাধির প্রকোপও পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সারা বিশ্বে বর্তমানে যেসব অসুখ মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে তার তালিকায় ডিমেনশিয়ার অবস্থান পাঁচ নম্বরে। আতঙ্কের বিষয় হলো বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়েই ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ রোগের ভয়াবহতা দিনে দিনে বাড়ছে। বর্তমান বিশ্বে এ জাতীয় রোগীর সংখ্যা ৫ কোটি। ২০৩০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৭ কোটি ৬০ লাখে এবং ২০৫০ খ্রিস্টাব্দে এর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ১৩ কোটি ৫০ লাখে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো পাঁচ লাখ। আলঝোইমার সোসাইটি অব বাংলাদেশ এর তথ্য মতে, যা বর্তমান বাংলাদেশে ১১ লাখেরও বেশি। আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ ২২ লাখ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তথাপি সরকারি বা বেসরকারি কোন দিক থেকেই ডিমেনশিয়া বিষয়ে তেমন কোন গুরুত্ব এখনো পায়নি। ১৯০৬ সালে একজন জার্মান চিকিৎসক আলোইস আলঝেইমার কাছ থেকে প্রথম ডিমেনশিয়ার কথা জানা যায়। সাধারণত মস্তিষ্কের সেরেব্রাল কর্টেক্স ও হিপোকেম্পাস নামক স্থানের অসুস্থতার জন্য স্মৃতিশক্তি কমে যায়। এ অবস্থায় মানুষের বুদ্ধিমত্তা, আচরণ ও ব্যক্তিত্তে¦র পরিবর্তন হয়ে পড়ে। যে কোনো বয়সে হতে পারে ডিমেনশিয়া বা মেমরি লস। তবে ষাট বা তার বেশি বয়সী মানুষের বেশি হয়ে থাকে। চল্লিশ বছর বয়সের মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। চিকিৎসা খাতে আমাদের দেশে নানা বিষয় গবেষণা হয় কিন্তু ডিমেনশিয়ার ওপর তেমন উল্লেখযোগ্য কোন উদ্যোগ বা গুরত্ব দিয়ে গবেষণা হয়েছে বা হচ্ছে বলে জানা নেই। যদিও বর্তমান বাস্তবতায় তার দরকার আছে। ডিমেনশিয়ার ব্যাপারে আমাদের সকলের যেমন সচেতন হওয়া উচিত পাশাপাশি চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষকদের আরো গবেষণা করা উচিত, তথ্য সংগ্রহ করা উচিত। এর সঠিক চিত্রটি পেলে এ নিয়ে আমাদের যা করণীয়Ñ তা নিয়ে কথা বলা যাবে।
বলা হয়ে থাকে রোগটির তেমন চিকিৎসা নেই। কিন্তু এটি শুধু চিকিৎসার বিষয় নয়, রোগটি নিয়ে সচেতনতা তৈরি হওয়া গুরত্বপূর্ণ। হাসপাতালগুলোতে ডিমেনশিয়া কর্নার তৈরি করার দরকার। পাশাপাশি ডাক্তার ও নার্সদের তাদের করণীয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা বা দেয়া উচিত। এমনটি হলে রোগটিকে আমরা অন্তত নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব। অপরদিকে পারিবারিকভাবে সচেতনতা তৈরি হলে রোগীরা জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে করুণ পরিণতি থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাবেন। ডিমেনশিয়ার সঠিক কারণও এখনও জানা যায়নি। তবে যাদের পরিবারে ডিমেনশিয়া আছে তাদের হতে পারে। আবার কিছু কিছু লোকের ডিমেনশিয়া হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় বেশি হতে পারে, যেমনÑ যাদের স্ট্রোক হয়েছে তাদের, যাদের রয়েছে ডায়াবেটিস, হাই কোলেস্টেরলস, বিষণœতা অথবা যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, ধূমপান করেন, অতিরিক্ত মদ্যপান করেন। এছাড়া থাইরয়েডের সমস্যা যদি কারো থাকে তাদের ডিমেনশিয়া হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যক্রম থেকে যারা দূরে আছেন তাদের হতে পারে। তবে এগুলো সরাসরি ডিমেনশিয়ার কারণ না, এগুলোকে ঝুঁকি বলা হয়। যদিও এখন পর্যন্ত কারো ডিমেনশিয়া হওয়া আটকানোর কোনো নিশ্চিত উপায় নেই, কিন্তু এমন কিছু জিনিস আছে যা আনুসরণ করলে আমরা ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ করতে পারি বা ডিমেনশিয়া হওয়ার সম্ভাবনাকে কমতে পারে। যেমন স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণে রাখা। সক্রিয় মস্তিষ্কের মানুষের ডিমেনশিয়া কম হয়, চেষ্টা করা উচিত বিভিন্নভাবে মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখার। রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলসহ হার্টের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা। প্রচুর ফল এবং শাক-সবজিসহ সুষম খাবার খাওয়া। আপনি যদি মনে করেন যে, আপনার পরিচিত কারো ডিমেনশিয়া হয়ে থাকতে পারে, তাহলে তাদের ডাক্তারের কাছে যেতে উৎসাহিত করুন। ডিমেনশিয়া রোগীদের জন্য নিউরোলজিস্ট বা স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ এবং মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ উভয়েরই সম্মিলিত চিকিৎসার প্রয়োজন আছে। রোগীর সমস্যা কী কারণে হতে পারে ডাক্তার তা পরীক্ষা করবেন। কখনো কখনো ব্যক্তিটিকে দ্বিতীয় ডাক্তারের কাছে পাঠানো হতে পারে যিনি তাদের ডিমেনশিয়া আছে কিনা তা তাদের বলতে পারবেন।
স্মৃতিশক্তির কারণে যে সমস্যাগুলো হয় তা নিউরোলজিস্টরা দেখবেন এবং বুদ্ধিবৃত্তিক ও ব্যক্তিত্বের কারণে যে সমস্যা হয় সেটি মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা দেখবেন। অনেক সময় ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হয়। ডিমেনশিয়া রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা করানোর প্রয়োজন নেই। তবে কখনো কখনো রোগীকে পরীক্ষা করে সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য হাসপাতালে ভর্তি করানোর প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে রোগীর ডিমেনশিয়ার মূল কারণ শনাক্ত করে তার চিকিৎসা প্রদান করা। যদি রোগীর ইরিভারসিভল ডিমেনশিয়া হয়ে থাকে অর্থাৎ যেটা চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ আরোগ্য সম্ভব নয়, তখন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে রোগীর নিকট আত্মীয় বা সেবা প্রদানকারীকে বিশদভাবে রোগীর রোগের বর্ণনা দিতে হবে এবং ভবিষ্যতে এই রোগের প্রকৃতি, সেবার ধরন ও চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে ধৈর্যসহকারে আলোকপাত করতে হবে। সেবা প্রদানকারী বা কেয়ার গিভারদের প্রশিক্ষণ লাগে, পরিবারের সদস্যদেরও প্রশিক্ষণ লাগে। অর্থাৎ ডিমেনশিয়ার চিকিৎসা এককভাবে নয়, বরং একটি টিমের মাধ্যমে সমন্বিতভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। ডিমেনশিয়ার কারণে অনেক বয়স্ক ব্যক্তি বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসতে পারেন না। সমস্ত পৃথিবীতেই ডিমেনশিয়া রোগের ভয়াবহতা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশে এ রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। হোম কেয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ওইসব বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় সেবাপ্রাপ্তি ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মান বজায় রাখা সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন সচেতনতা বৃদ্ধি। এ রোগ সম্পর্কে চিকিৎসক, চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের মাঝে সচেতনতা সন্তুষ্টির পাশাপাশি পরিবারে, সমাজেও ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি হওয়া দরকার। সাধারণ মানুষের মধ্যে ডিমেনশিয়া সম্পর্কে যত সচেতনতা তৈরি হবে, ততই এই রোগে আক্রান্তরা উপকৃত হবেন। ডিমেনশিয়া বিষয়টি নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপকভাবে সচেতনাতা তৈরি করা জরুরি, তা না হলে বিষয়টি সবার অন্তরালে থেকে যাবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটি মোকাবিলা করা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
[লেখক : সাবেক নির্বাহী পরিচালক, পাবলিক হেল্থ ফাউন্ডেশন]
সমীর কুমার সাহা
শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
মানুষের জীবনযাত্রার মান ও গড় আয়ূুষ্কাল যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে নানাবিধ অসংক্রামক রোগ-ব্যাধির প্রকোপও পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সারা বিশ্বে বর্তমানে যেসব অসুখ মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে তার তালিকায় ডিমেনশিয়ার অবস্থান পাঁচ নম্বরে। আতঙ্কের বিষয় হলো বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়েই ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ রোগের ভয়াবহতা দিনে দিনে বাড়ছে। বর্তমান বিশ্বে এ জাতীয় রোগীর সংখ্যা ৫ কোটি। ২০৩০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৭ কোটি ৬০ লাখে এবং ২০৫০ খ্রিস্টাব্দে এর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ১৩ কোটি ৫০ লাখে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো পাঁচ লাখ। আলঝোইমার সোসাইটি অব বাংলাদেশ এর তথ্য মতে, যা বর্তমান বাংলাদেশে ১১ লাখেরও বেশি। আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ ২২ লাখ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তথাপি সরকারি বা বেসরকারি কোন দিক থেকেই ডিমেনশিয়া বিষয়ে তেমন কোন গুরুত্ব এখনো পায়নি। ১৯০৬ সালে একজন জার্মান চিকিৎসক আলোইস আলঝেইমার কাছ থেকে প্রথম ডিমেনশিয়ার কথা জানা যায়। সাধারণত মস্তিষ্কের সেরেব্রাল কর্টেক্স ও হিপোকেম্পাস নামক স্থানের অসুস্থতার জন্য স্মৃতিশক্তি কমে যায়। এ অবস্থায় মানুষের বুদ্ধিমত্তা, আচরণ ও ব্যক্তিত্তে¦র পরিবর্তন হয়ে পড়ে। যে কোনো বয়সে হতে পারে ডিমেনশিয়া বা মেমরি লস। তবে ষাট বা তার বেশি বয়সী মানুষের বেশি হয়ে থাকে। চল্লিশ বছর বয়সের মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। চিকিৎসা খাতে আমাদের দেশে নানা বিষয় গবেষণা হয় কিন্তু ডিমেনশিয়ার ওপর তেমন উল্লেখযোগ্য কোন উদ্যোগ বা গুরত্ব দিয়ে গবেষণা হয়েছে বা হচ্ছে বলে জানা নেই। যদিও বর্তমান বাস্তবতায় তার দরকার আছে। ডিমেনশিয়ার ব্যাপারে আমাদের সকলের যেমন সচেতন হওয়া উচিত পাশাপাশি চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষকদের আরো গবেষণা করা উচিত, তথ্য সংগ্রহ করা উচিত। এর সঠিক চিত্রটি পেলে এ নিয়ে আমাদের যা করণীয়Ñ তা নিয়ে কথা বলা যাবে।
বলা হয়ে থাকে রোগটির তেমন চিকিৎসা নেই। কিন্তু এটি শুধু চিকিৎসার বিষয় নয়, রোগটি নিয়ে সচেতনতা তৈরি হওয়া গুরত্বপূর্ণ। হাসপাতালগুলোতে ডিমেনশিয়া কর্নার তৈরি করার দরকার। পাশাপাশি ডাক্তার ও নার্সদের তাদের করণীয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা বা দেয়া উচিত। এমনটি হলে রোগটিকে আমরা অন্তত নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব। অপরদিকে পারিবারিকভাবে সচেতনতা তৈরি হলে রোগীরা জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে করুণ পরিণতি থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাবেন। ডিমেনশিয়ার সঠিক কারণও এখনও জানা যায়নি। তবে যাদের পরিবারে ডিমেনশিয়া আছে তাদের হতে পারে। আবার কিছু কিছু লোকের ডিমেনশিয়া হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় বেশি হতে পারে, যেমনÑ যাদের স্ট্রোক হয়েছে তাদের, যাদের রয়েছে ডায়াবেটিস, হাই কোলেস্টেরলস, বিষণœতা অথবা যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, ধূমপান করেন, অতিরিক্ত মদ্যপান করেন। এছাড়া থাইরয়েডের সমস্যা যদি কারো থাকে তাদের ডিমেনশিয়া হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যক্রম থেকে যারা দূরে আছেন তাদের হতে পারে। তবে এগুলো সরাসরি ডিমেনশিয়ার কারণ না, এগুলোকে ঝুঁকি বলা হয়। যদিও এখন পর্যন্ত কারো ডিমেনশিয়া হওয়া আটকানোর কোনো নিশ্চিত উপায় নেই, কিন্তু এমন কিছু জিনিস আছে যা আনুসরণ করলে আমরা ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ করতে পারি বা ডিমেনশিয়া হওয়ার সম্ভাবনাকে কমতে পারে। যেমন স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণে রাখা। সক্রিয় মস্তিষ্কের মানুষের ডিমেনশিয়া কম হয়, চেষ্টা করা উচিত বিভিন্নভাবে মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখার। রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলসহ হার্টের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা। প্রচুর ফল এবং শাক-সবজিসহ সুষম খাবার খাওয়া। আপনি যদি মনে করেন যে, আপনার পরিচিত কারো ডিমেনশিয়া হয়ে থাকতে পারে, তাহলে তাদের ডাক্তারের কাছে যেতে উৎসাহিত করুন। ডিমেনশিয়া রোগীদের জন্য নিউরোলজিস্ট বা স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ এবং মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ উভয়েরই সম্মিলিত চিকিৎসার প্রয়োজন আছে। রোগীর সমস্যা কী কারণে হতে পারে ডাক্তার তা পরীক্ষা করবেন। কখনো কখনো ব্যক্তিটিকে দ্বিতীয় ডাক্তারের কাছে পাঠানো হতে পারে যিনি তাদের ডিমেনশিয়া আছে কিনা তা তাদের বলতে পারবেন।
স্মৃতিশক্তির কারণে যে সমস্যাগুলো হয় তা নিউরোলজিস্টরা দেখবেন এবং বুদ্ধিবৃত্তিক ও ব্যক্তিত্বের কারণে যে সমস্যা হয় সেটি মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা দেখবেন। অনেক সময় ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হয়। ডিমেনশিয়া রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা করানোর প্রয়োজন নেই। তবে কখনো কখনো রোগীকে পরীক্ষা করে সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য হাসপাতালে ভর্তি করানোর প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে রোগীর ডিমেনশিয়ার মূল কারণ শনাক্ত করে তার চিকিৎসা প্রদান করা। যদি রোগীর ইরিভারসিভল ডিমেনশিয়া হয়ে থাকে অর্থাৎ যেটা চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ আরোগ্য সম্ভব নয়, তখন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে রোগীর নিকট আত্মীয় বা সেবা প্রদানকারীকে বিশদভাবে রোগীর রোগের বর্ণনা দিতে হবে এবং ভবিষ্যতে এই রোগের প্রকৃতি, সেবার ধরন ও চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে ধৈর্যসহকারে আলোকপাত করতে হবে। সেবা প্রদানকারী বা কেয়ার গিভারদের প্রশিক্ষণ লাগে, পরিবারের সদস্যদেরও প্রশিক্ষণ লাগে। অর্থাৎ ডিমেনশিয়ার চিকিৎসা এককভাবে নয়, বরং একটি টিমের মাধ্যমে সমন্বিতভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। ডিমেনশিয়ার কারণে অনেক বয়স্ক ব্যক্তি বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসতে পারেন না। সমস্ত পৃথিবীতেই ডিমেনশিয়া রোগের ভয়াবহতা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশে এ রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। হোম কেয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ওইসব বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় সেবাপ্রাপ্তি ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মান বজায় রাখা সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন সচেতনতা বৃদ্ধি। এ রোগ সম্পর্কে চিকিৎসক, চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের মাঝে সচেতনতা সন্তুষ্টির পাশাপাশি পরিবারে, সমাজেও ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি হওয়া দরকার। সাধারণ মানুষের মধ্যে ডিমেনশিয়া সম্পর্কে যত সচেতনতা তৈরি হবে, ততই এই রোগে আক্রান্তরা উপকৃত হবেন। ডিমেনশিয়া বিষয়টি নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপকভাবে সচেতনাতা তৈরি করা জরুরি, তা না হলে বিষয়টি সবার অন্তরালে থেকে যাবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটি মোকাবিলা করা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
[লেখক : সাবেক নির্বাহী পরিচালক, পাবলিক হেল্থ ফাউন্ডেশন]