জাঁ-নেসার ওসমান
“হেঁঃ হেঁঃ হেঁঃ “বোধ যখন ক্রোধ”। একটা “প-বর্গের শব্দ আর একটা “ক” বর্গের শব্দ। অথচ কয়া ফালায়লেন, “বোধ যখন ক্রোধ”। ওই মিয়া ত্যেলে জলে কখনো মিশ খায়। হাতে মাউস আছে, কম্পিউটারের মনিটারে লেখা উটতাছে, ব্যাস কি-বোর্ড চাইপ্পা লিখলেন “বোধ যখন ক্রোধ” মানে বর্তমান বাংলাদেশের কখন যে কোন হালায় রাস্তার মাঝে বয়া প্রতিবাদ করবো, মাইল কা মাইল রাস্তা জ্যাম, আর হাজার হাজার পাবলিকের ভোগান্তি, এর যেমন ঠিক নাই তেমনি আপনের হেডিংয়েরও কোনো মাথামুন্ডু নাই, হাঃ হাঃ “বোধ যখন ক্রোধ” “ক” বর্গ “প” বর্গ সব সমান!! হেঁঃ হেঁঃ!”
“ঠিক আছে একটা শব্দ একটা “প” বর্গের আর একটা “ক” বর্গের। তো এখানে “বোধ” বলতে তুই কি বুঝছিস?”
“ক্যা “বোধ” তো সিম্পেল, “বোধ” মানে বুদ্ধগো বোধিসত্ত্ব। বুদ্ধ ধর্মের পঞ্চশীলা।”
“পঞ্চশীলা”?
“হ, “পঞ্চশীলা” যিশুখ্রিস্টের জন্মের ১৭০০ বছর আগে গৌতম বুদ্ধ কইছে “পঞ্চশীলা”। মানে প্রাণীহত্যা করা পারবা না, মিছাকতা কবা না, পরের জিনিস চুরি করবা না, ব্যাভিচার মানে চামে চুমে এদিক সেদিক চান্স নিবা না, আর তাড়ি মানে মদ খাবা ন। এই তো “পঞ্চশীলা”।
“আচ্ছা ধরলাম তোর ভাষায় “বোধ” মানে “পঞ্চশীলা” মানে প্রাণীহত্যা, মিথ্যাকথা, পরের জিনিস চুরি, ব্যাভিচার ও মদ্যপান নিষেধ। তা তোর সমাজে মানুষের মাঝে এই বোধ কি জন্মেছে? এইতো সেদিন বৃহত্তর ময়মনসিংহ’-এর ইফতার মাহফিলে গিয়েছিলাম, তখন দেখি মাইকে বীর মুক্তিযোদ্ধা সভাপতি সাহেব চিৎকার করছেন “ওই রহিম, চুপ করো, বক্তৃতার সময় কথা বলছো ক্যেনো, ওই সেলিম চুপ করো। তোমরা নিজেরা না খায়া মেহমানদের খাবার দিও। কিন্তু কে শোনে কার কথা। সব খাবার কমিটির লোকেরা খেলো আর বেশ কিছু মেহমান খাবার না পেয়ে পরে নিজের টাকায় হোটেলে যেয়ে রোজা ভাঙলো।”
“এই সব গাঁইয়া গো কথা কইলে হোইবো। এগুলা তো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তাছাড়া কোন অজ পাড়াগাঁয়ের ইফতার মাহফিল ক্যাচাল তো একটু হোইবোই। এতে আশ্চর্য্য হওয়ার কী আছে।”
“ওই গাঁড়ল, অজ পাড়াগাঁ!! আরে ব্যাটা ঢাকার অফির্সাস ক্লাব, ২৬ বেইলি রোডে, ইফতার মাহফিল, এই সব বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর জায়গায় যদি এই হাল তাহলে অন্য জায়গার অবস্থা চিন্তা কর। বৃহত্তর ময়মনসিংহ’ যদি সামান্য একটা ইফতার পার্টি, না না ইফতার মাহফিল, সুষ্ঠু রূপে পরিচালনা করতে না পারে তো এরা বড় কাজ করবে কিভাবে??”
“আরে ভাই এই কতা কোইলে তো, ওই যে আপনে গো বামদলের কি যেন, দধিচী, নাকি প্রকিচী নাকি কি যে কয় হালায় কুরুচি, ওগোরে যখন কথাশিল্পী শওকত ওসমানের জন্মশত বার্ষিকীর আয়োজন করতে বলা হলো দধিচীরা ওইহান থ্যেইক্কা পয়সা মারল। তো এইডারে কী কোইবেন কন??”
“এই যে এই সব নোংরামি দেখে তোর যেমন ক্রোধ জন্মাচ্ছে সেটাই আমি বলছিলাম যে মানুষের মাঝে “বোধ” এখন “ক্রোধে” পরিণত হয়েছে। যেমন দ্যেখ গত সরকার বাপ বাপ করে বাপের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিয়েও কিন্তু শান্ত হলো না, ক্রোধাগ্নির অনলে পুড়ে, বিরোধীদের প্রতি মানে নিজের দেশের লোকেদের প্রতি প্রতিহিংসার লাল ঘোড়া দাবড়ে দিল, এখন তার ফল দ্যেখ সারা জাতিটাকে হাজার বছর পিছিয়ে দিল।”
“আরে ভাই, বাবা-মা, ভাইবোন, ভায়ের বৌ, ছোট্টভাই, আত্মীয়স্বজন হারানোর ব্যাথা আপনে বুঝবেন না। যার যায় হ্যেয় বুঝে। তখন সে একটু নিষ্ঠুরতা কোরতেই পারে।”
“ওই ব্যাটা পুলিশ যে নিরীহ পাবলিককে জামিন বাণিজ্যের ট্র্যাপে ফেলে পয়সা কামায় এটা তুই সাপোর্ট করিস??”
“না। এইডা কুনো পাগলেও সাপোর্ট কোরবো না। কারণ পুলিশ আছে সমাজের দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের জন্য। তাছাড়া ঠিকমতো খোঁজ নিলে দেখবেন সাগরের মতো অনেক পুলিশ আছে হ্যেরাও মানে পুলিশেই জামিন বাণিজ্য, হকারের চান্দা খাওয়া এইডারে পছন্দ করব না।”
“জ্বি, আমিও তাই বলছিলাম, তুমি যখন সারাদেশ পরিচালনার সুযোগ পাও তখন দলকানা হলে চলবে না। বর্তমানে তোরা কি করছিস, বিগত স্বৈরাচারের মতো প্রাণ গোপালের মেয়েকে ধরছিস। তার ওপর তোদের রাগ থাকতে পারে কিন্তু মেয়েটার কী দোষ?”
“এই সব রাজনীতি আপনের বুঝনের কাম নাই, বর্তমান সরকার খুব ঠা-া মাথায় সময়ের সাথে বুইজ্জা চলতাছে। যে দিকে মেঘ হ্যারা হে দিকেই ছাতি ধরতাছে। বর্তমান সরকারের “বোধ” এ্যহনো “ক্রোধে” পরিণত হয় নাই। নায়লে দেখছেন না, হ্যেরা খালি বাড়িগুলারে বুলডোজার দিয়া গুঁড়া করছে। মানুষের বাড়ি জ্বালাইছে, কিন্তু একটা মানুষরেও জ্যান্ত জ্বালাই নাই। আপনে ঠিকই কোইছেন বিগত স্বৈরাচার সরকার হ্যেগো “বোধরে” হ্যাগো “চৈতন্যরে” ভুইল্লা খালি অবৈধ পথে ট্যাকা কামাইছে আর “ক্রোধের” রাজত্ব চালায়া ত্বকী, তনু, সাগর-রুনি, নারায়নগঞ্জের সেভেন মার্ডার, গুম খুন কোইরা নিজেগো বারোটার, লগে আমাগোও ভবিষ্যৎ প্রজন্মেরও বারটা বাজাইছে। তয় এক দিক থাইকা আপনের কথাটা ঠিকই আছে “বোধরে” “ক্রোধে” পরিণত করলে আখেরে ফলাফল ভালো হয় না।”
“আমি তো সে কথাই বলছিলাম দয়া করে আপনারা বাঙালি হয়ে বাঙালি খুন, আট বছরের শিশুকে অত্যাচার করা এসব বন্ধ করেন। আর বৌদ্ধদের প্রাণীহত্যা, মিথ্যাকথা, চুরি, ব্যাভিচার ও মদ্যপান নিষেধ এই “পঞ্চশীলা” মেনে চলেন। তাহলেই দেশে আসবে সমৃদ্ধি ও শান্তি।”
ঠিক আছে তাই সই দেশের শান্তির জন্য “বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি...”
[লেখক : চলচ্চিত্রকার]
জাঁ-নেসার ওসমান
শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫
“হেঁঃ হেঁঃ হেঁঃ “বোধ যখন ক্রোধ”। একটা “প-বর্গের শব্দ আর একটা “ক” বর্গের শব্দ। অথচ কয়া ফালায়লেন, “বোধ যখন ক্রোধ”। ওই মিয়া ত্যেলে জলে কখনো মিশ খায়। হাতে মাউস আছে, কম্পিউটারের মনিটারে লেখা উটতাছে, ব্যাস কি-বোর্ড চাইপ্পা লিখলেন “বোধ যখন ক্রোধ” মানে বর্তমান বাংলাদেশের কখন যে কোন হালায় রাস্তার মাঝে বয়া প্রতিবাদ করবো, মাইল কা মাইল রাস্তা জ্যাম, আর হাজার হাজার পাবলিকের ভোগান্তি, এর যেমন ঠিক নাই তেমনি আপনের হেডিংয়েরও কোনো মাথামুন্ডু নাই, হাঃ হাঃ “বোধ যখন ক্রোধ” “ক” বর্গ “প” বর্গ সব সমান!! হেঁঃ হেঁঃ!”
“ঠিক আছে একটা শব্দ একটা “প” বর্গের আর একটা “ক” বর্গের। তো এখানে “বোধ” বলতে তুই কি বুঝছিস?”
“ক্যা “বোধ” তো সিম্পেল, “বোধ” মানে বুদ্ধগো বোধিসত্ত্ব। বুদ্ধ ধর্মের পঞ্চশীলা।”
“পঞ্চশীলা”?
“হ, “পঞ্চশীলা” যিশুখ্রিস্টের জন্মের ১৭০০ বছর আগে গৌতম বুদ্ধ কইছে “পঞ্চশীলা”। মানে প্রাণীহত্যা করা পারবা না, মিছাকতা কবা না, পরের জিনিস চুরি করবা না, ব্যাভিচার মানে চামে চুমে এদিক সেদিক চান্স নিবা না, আর তাড়ি মানে মদ খাবা ন। এই তো “পঞ্চশীলা”।
“আচ্ছা ধরলাম তোর ভাষায় “বোধ” মানে “পঞ্চশীলা” মানে প্রাণীহত্যা, মিথ্যাকথা, পরের জিনিস চুরি, ব্যাভিচার ও মদ্যপান নিষেধ। তা তোর সমাজে মানুষের মাঝে এই বোধ কি জন্মেছে? এইতো সেদিন বৃহত্তর ময়মনসিংহ’-এর ইফতার মাহফিলে গিয়েছিলাম, তখন দেখি মাইকে বীর মুক্তিযোদ্ধা সভাপতি সাহেব চিৎকার করছেন “ওই রহিম, চুপ করো, বক্তৃতার সময় কথা বলছো ক্যেনো, ওই সেলিম চুপ করো। তোমরা নিজেরা না খায়া মেহমানদের খাবার দিও। কিন্তু কে শোনে কার কথা। সব খাবার কমিটির লোকেরা খেলো আর বেশ কিছু মেহমান খাবার না পেয়ে পরে নিজের টাকায় হোটেলে যেয়ে রোজা ভাঙলো।”
“এই সব গাঁইয়া গো কথা কইলে হোইবো। এগুলা তো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তাছাড়া কোন অজ পাড়াগাঁয়ের ইফতার মাহফিল ক্যাচাল তো একটু হোইবোই। এতে আশ্চর্য্য হওয়ার কী আছে।”
“ওই গাঁড়ল, অজ পাড়াগাঁ!! আরে ব্যাটা ঢাকার অফির্সাস ক্লাব, ২৬ বেইলি রোডে, ইফতার মাহফিল, এই সব বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর জায়গায় যদি এই হাল তাহলে অন্য জায়গার অবস্থা চিন্তা কর। বৃহত্তর ময়মনসিংহ’ যদি সামান্য একটা ইফতার পার্টি, না না ইফতার মাহফিল, সুষ্ঠু রূপে পরিচালনা করতে না পারে তো এরা বড় কাজ করবে কিভাবে??”
“আরে ভাই এই কতা কোইলে তো, ওই যে আপনে গো বামদলের কি যেন, দধিচী, নাকি প্রকিচী নাকি কি যে কয় হালায় কুরুচি, ওগোরে যখন কথাশিল্পী শওকত ওসমানের জন্মশত বার্ষিকীর আয়োজন করতে বলা হলো দধিচীরা ওইহান থ্যেইক্কা পয়সা মারল। তো এইডারে কী কোইবেন কন??”
“এই যে এই সব নোংরামি দেখে তোর যেমন ক্রোধ জন্মাচ্ছে সেটাই আমি বলছিলাম যে মানুষের মাঝে “বোধ” এখন “ক্রোধে” পরিণত হয়েছে। যেমন দ্যেখ গত সরকার বাপ বাপ করে বাপের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিয়েও কিন্তু শান্ত হলো না, ক্রোধাগ্নির অনলে পুড়ে, বিরোধীদের প্রতি মানে নিজের দেশের লোকেদের প্রতি প্রতিহিংসার লাল ঘোড়া দাবড়ে দিল, এখন তার ফল দ্যেখ সারা জাতিটাকে হাজার বছর পিছিয়ে দিল।”
“আরে ভাই, বাবা-মা, ভাইবোন, ভায়ের বৌ, ছোট্টভাই, আত্মীয়স্বজন হারানোর ব্যাথা আপনে বুঝবেন না। যার যায় হ্যেয় বুঝে। তখন সে একটু নিষ্ঠুরতা কোরতেই পারে।”
“ওই ব্যাটা পুলিশ যে নিরীহ পাবলিককে জামিন বাণিজ্যের ট্র্যাপে ফেলে পয়সা কামায় এটা তুই সাপোর্ট করিস??”
“না। এইডা কুনো পাগলেও সাপোর্ট কোরবো না। কারণ পুলিশ আছে সমাজের দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের জন্য। তাছাড়া ঠিকমতো খোঁজ নিলে দেখবেন সাগরের মতো অনেক পুলিশ আছে হ্যেরাও মানে পুলিশেই জামিন বাণিজ্য, হকারের চান্দা খাওয়া এইডারে পছন্দ করব না।”
“জ্বি, আমিও তাই বলছিলাম, তুমি যখন সারাদেশ পরিচালনার সুযোগ পাও তখন দলকানা হলে চলবে না। বর্তমানে তোরা কি করছিস, বিগত স্বৈরাচারের মতো প্রাণ গোপালের মেয়েকে ধরছিস। তার ওপর তোদের রাগ থাকতে পারে কিন্তু মেয়েটার কী দোষ?”
“এই সব রাজনীতি আপনের বুঝনের কাম নাই, বর্তমান সরকার খুব ঠা-া মাথায় সময়ের সাথে বুইজ্জা চলতাছে। যে দিকে মেঘ হ্যারা হে দিকেই ছাতি ধরতাছে। বর্তমান সরকারের “বোধ” এ্যহনো “ক্রোধে” পরিণত হয় নাই। নায়লে দেখছেন না, হ্যেরা খালি বাড়িগুলারে বুলডোজার দিয়া গুঁড়া করছে। মানুষের বাড়ি জ্বালাইছে, কিন্তু একটা মানুষরেও জ্যান্ত জ্বালাই নাই। আপনে ঠিকই কোইছেন বিগত স্বৈরাচার সরকার হ্যেগো “বোধরে” হ্যাগো “চৈতন্যরে” ভুইল্লা খালি অবৈধ পথে ট্যাকা কামাইছে আর “ক্রোধের” রাজত্ব চালায়া ত্বকী, তনু, সাগর-রুনি, নারায়নগঞ্জের সেভেন মার্ডার, গুম খুন কোইরা নিজেগো বারোটার, লগে আমাগোও ভবিষ্যৎ প্রজন্মেরও বারটা বাজাইছে। তয় এক দিক থাইকা আপনের কথাটা ঠিকই আছে “বোধরে” “ক্রোধে” পরিণত করলে আখেরে ফলাফল ভালো হয় না।”
“আমি তো সে কথাই বলছিলাম দয়া করে আপনারা বাঙালি হয়ে বাঙালি খুন, আট বছরের শিশুকে অত্যাচার করা এসব বন্ধ করেন। আর বৌদ্ধদের প্রাণীহত্যা, মিথ্যাকথা, চুরি, ব্যাভিচার ও মদ্যপান নিষেধ এই “পঞ্চশীলা” মেনে চলেন। তাহলেই দেশে আসবে সমৃদ্ধি ও শান্তি।”
ঠিক আছে তাই সই দেশের শান্তির জন্য “বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি...”
[লেখক : চলচ্চিত্রকার]