alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

ঈদে মিলবে না নতুন নোট

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

: রোববার, ২৩ মার্চ ২০২৫

বাংলাদেশ ব্যাংক ১০ মার্চ, ২০২৫ তারিখে এক প্রজ্ঞাপন ইস্যু করে তাদের সব অফিসকে আসন্ন পবিত্র ইদ-উল-ফিতর উপলক্ষে জনসাধারণের মাঝে ফ্রেশনোট বিনিময় কার্যক্রম বন্ধ রেখে পুনঃপ্রচলনযোগ্য নোট দ্বারা সকল লেনদেন কার্যক্রম সম্পাদন করতে নির্দেশ দিয়েছে। একই প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গেও ফ্রেশনোট বিনিময় কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলেছে।অর্থাৎ আসন্ন ইদ-উল-ফিতরে কোন ফ্রেশনোট ছাড়া হচ্ছে না। কিন্তু এই প্রজ্ঞাপন জারির কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংক আরেকটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ১৯ মার্চ থেকে ফ্রেশনোট ইস্যু করা হবে মর্মে ঘোষণা দিয়েছিল। অল্প সময়ের ব্যবধানে পরস্পরবিরোধী প্রজ্ঞাপন থেকে প্রতীয়মান হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের গৃহীত পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছে।

ফ্রেশনোট না ছাড়ার মুখ্য কারণ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি বা ছবি সংবলিত নোট আর ইস্যু না করার সিদ্ধান্ত। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে জাতির পিতা বা রাজা-বাদশাহর প্রতিকৃতি দিয়ে নোট ছাপা হয়ে থাকে। কোন কোন দেশে বিখ্যাত ব্যক্তিদের ছবি দিয়েও নোট ছাপা হয়। সৌদি আরবসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশের নোটেও বাদশাহর প্রতিকৃতি আছে। এই সব দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আদর্শ ও মতের ভিন্নতা থাকলেও জাতির পিতা নিয়ে ঐকমত্য রয়েছে এবং এজন্য সরকার পরিবর্তন হলেও নোটে জাতির পিতার প্রতিকৃতি অনবচ্ছিন্নভাবে থেকে যায়। কিন্তু আমাদের দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বজন গ্রাহ্য জাতির পিতার স্বীকৃতি পাননি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেন জাতির পিতা, দাপ্তরিকভাবে তা সবাইকে মানতে হয়। কিন্তু ক্ষমতা হারানোর সঙ্গে সঙ্গে জাতির পিতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর স্বীকৃতি উবে যায়। এই খেলা চলছে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই। বিরোধী দলীয় উপনেতা আবদুল কাসিম মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা চৌধুরী বা বি. চৌধুরী প্রথম সংসদে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

বাংলাদেশের প্রথম রাজনৈতিক দলিল বা সংবিধান হচ্ছে ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের ‘অবিসংবাদিত নেতা’ হিসেবে উল্লেখ করা হলেও ‘জাতির পিতা’ বলা হয়নি। ১৯৭২ সনে প্রণীত সংবিধানেও বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়নি, এমনকি ‘৭২ সনের সংবিধানের কোথাও বঙ্গবন্ধুর নামও উচ্চারিত হয়নি। সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীতে ভিন্ন প্রসঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানের নামের পূর্বে প্রথম ‘জাতির পিতা’ কথাটির উল্লেখ করা হয়, কিন্তু জাতির পিতা হিসেবে গণ্য করার বাধ্যতামূলক কোন অনুচ্ছেদ তখনো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। মুখে মুখে আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা বললেও আওয়ামী লীগের কয়েক মেয়াদের শাসনামলেও সাংবিধানিকভাবে বঙ্গবন্ধুকে ‘জাতির পিতা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়নি। ২০১১ সনে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রথম সংবিধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘জাতির পিতা’ হিসেবে উল্লেখ করে তার প্রতিকৃতি সংরক্ষণ, প্রদর্শনের বিধান যোগ করা হয়। ড. মোহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে আদালতের রায়ে পঞ্চদশ সংশোধনীর অনেক কিছু বাতিল হলেও জাতির পিতার সাংবিধানিক স্বীকৃতি বাতিল হয়নি।

ইতোপূর্বে বিএনপি যতবার ক্ষমতায় এসেছে ততবারই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সংবলিত নোটের উৎপাদন বন্ধ করে ভিন্ন ডিজাইনের নোট ছাপিয়ে বাজারে ছেড়েছে। এবার একটি গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে, তাই শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি নোটে থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। একটি রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের পর জাতির পিতার প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য স্থাপনের ক্ষীণ সম্ভাবনাও এখন নেই; তাই কারেন্সি ও ব্যাংকনোটে জাতির পিতার প্রতিকৃতি বাদ দিয়ে নোট মুদ্রণের পরিকল্পনা শুরুতেই নেয়া উচিত ছিল, শুরুতে পরিকল্পনা নেয়া হলে ইদের আগেই নতুন ডিজাইনের নোট বাজারে ছাড়া সম্ভব হতো। ইন্টাগ্লিও কালিবহির্ভূত ২, ৫ ও ১০ টাকার নতুন ডিজাইনের নোট শীঘ্রই ইস্যু করা সম্ভব হলেও ইন্টাগ্লিও যুক্ত অবশিষ্ট নোট ছাপাতে আরও কয়েক মাস লেগে যাবে। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় লাভের দুয়েকদিনের মধ্যেই লন্ডনের এক প্রাইভেট কোম্পানি বাংলাদেশ হাইকমিশনে এসে বাংলাদেশের জন্য নোট মুদ্রণের প্রস্তাব দেয়, কিন্তু নোট মুদ্রণ খরচ নির্বাহ করার বৈদেশিক মুদ্রা না থাকায় তাদের প্রস্তাব বিবেচনা করা হয়নি।

নতুন ডিজাইনের নোট আসতে দেরি হবে, ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সংবলিত নোট উৎপাদন কয়েক মাস আগ থেকেই বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে ছাপানো বিপুল পরিমাণ নোট এখনো টাকশাল এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন অফিসের ভল্টে রয়েছে, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি থাকায় সেই সব নোট আর ইস্যু করা হচ্ছে না। এই সিদ্ধান্ত সুবিবেচনা প্রসূত বলে মনে হয় না। কারণ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সম্বলিত প্রায় তিন লক্ষ কোটি টাকার নোট বাজারে আছে এবং তা আরও দীর্ঘদিন থাকবে। বাজারে থাকা নোটগুলো কেবল বাংলাদেশ ব্যাংকে গেলেই আর ইস্যু হবে না। বাজারের থাকা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সংবলিত সব নোট বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে পৌঁছাতে আরও বহু বছর লেগে যাবে। এক্ষেত্রে আরেকটি কাজ করা যেতে পারে, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সংবলিত নোট বাজারশূন্য করতে সব নোট বাতিল করা যায়; কিন্তু এক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকবে, বাজারে থাকা সব নোটের প্রতিস্থাপন করার মতো নোট উৎপাদনের সক্ষমতা টাকশালের নেই। কয়েক বছর আগে ২০০০ টাকা মূল্যমানের নোট বাতিল করে ভারত বিপদে পড়েছিল, মুদ্রিত পর্যাপ্ত নোট না থাকায় জনগণকে ২০০০ টাকার বিনিময় মূল্য তাৎক্ষণিক দিতে পারেনি।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সংবলিত সব নোট তাৎক্ষণিক উচ্ছেদ করা অসম্ভব বিধায় ইতোমধ্যে ছাপা হয়ে যাওয়া নোটগুলো আসন্ন ইদে ইস্যু করার বিষয়টি বিবেচনা করা যেত। নোটে প্রতিকৃতি থাকলেই যে বঙ্গবন্ধুর প্রতি সবাই আবেগে আপ্লুত হয়ে যাবে তা কিন্তু নয়। একাত্তরে স্বাধীনতা লাভের পরেও পাকিস্তানের জাতির পিতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ছবি বা প্রতিকৃতি সংবলিত নোট বাংলাদেশে চালু ছিল, নোটগুলোতে সিল মেরে কেবল ‘বাংলাদেশ’ লিখে দেয়া হতো। প্রতিকৃতি সংবলিত নোটের পরিবর্তে প্রতিকৃতি বিহীন নোট মুদ্রণের বিকল্প ব্যবস্থাও টাকশালের ছিল। প্রতিটি নোটের প্রতিকৃতি বহির্ভূত মাস্টার প্ল্যাট টাকশালে রয়েছে, টাকশালে সংরক্ষিত সেই প্ল্যাট ব্যবহার করে খুব অল্প সময়ের মধ্যে অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য, অর্থাৎ নতুন ডিজাইনের নোট বাজারে না আসা পর্যন্ত, ভিন্নতর ডিজাইনের নোট উৎপাদন সম্ভব হতো। বাংলাদেশ ব্যাংক ও টাকশাল সেই পথে কেন হাঁটল না তা স্পষ্ট নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ইদে ফ্রেশনোট ইস্যু করার প্রচলিত রীতি থেকে তারা সরে আসবে, কারণ নতুন নোট ছাপাতে তাদের প্রচুর ব্যয় হয়।এটা তাৎপর্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত নয়, এই সিদ্ধান্তে তারা অটল থাকবে না। নোট উৎপাদন ও তার ইস্যু বন্ধ করা যাবে না, ফ্রেশনোট ইদে না ছাড়লেও অন্য সময় ছাড়তে হবে। ৩৩ শতাংশের বেশি নোট প্রতি বছর ধ্বংস করা হয়, অন্যদিকে দেশের অর্থনীতি এবং প্রবাসীদের রেমিট্যান্স বাড়ছে, ধ্বংস হওয়া নোটের প্রতিস্থাপন ও নোটের চাহিদার প্রবৃদ্ধি ফ্রেশনোট দিয়েই পূরণ করতে হয়। উন্নত দেশের মতো আমাদের দেশে ব্যাপক হারে ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডের প্রচলন করা সম্ভব নয়। তাই নোট উৎপাদনও করতে হবে এবং তা ইস্যুও করতে হবে, তবে তা বছরের কখন ইস্যু করবে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিষয়। ফ্রেশনোট যখন বাজারে ছাড়তেই হবে তখন ইদের সময় ছাড়াই উত্তম, কারণ ফ্রেশনোটের সঙ্গে ইদ উৎসবের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে, সবাই ফ্রেশনোটে বাজার করে আনন্দ পায়, ফ্রেশনোটের বকশিস পেয়ে শিশুরা হয় খুশি। এই আনন্দ ও খুশিকে কবর দেয়া অর্থহীন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কথা অনুযায়ী নোট কম ছাপিয়ে আপাতত ব্যয় কমানোর সুযোগ নেই। তবে খরচ কমাতে হলে নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য কমাতে হবে। ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার উচ্চ মূল্যমানের নোটে একাধিক নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য রয়েছে, নকল রোধে এতগুলো নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য থাকার প্রয়োজন নেই। এই তিনটি নোটের ডানপাশের উপরে অঙ্কে লিখিত মূল্যমানে ‘ওভিআই’ বা রং পরিবর্তনশীল নিরাপত্তা কালি ব্যবহৃত হয়, এক সময় শুধু এই কালির খরচ ছিল নোটের মোট খরচের ৮০ শতাংশ। কয়েক বছর আগে ওভিআই কালির পেটেন্ট সত্ব ৩০ বছর অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ায় কারণে এখন তা আর পেটেন্টেড নয়, এখন যে কেউ এই কালি উৎপাদন করার অধিকার রাখে; তাই নোটে পেটেন্টবিহীন এই কালির ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ ও অর্থহীন। পেটেন্টেড না হওয়ায় পরবর্তীতে এই কালির দর কমানো হয়েছে। এই কালির চেয়ে উন্নতমানের নিরাপত্তা কালি ‘স্পার্ক’ বা ‘মোশন ইঙ্ক’ আমাদের উচ্চ মূল্যমানের নোটে সংযোজন করা হয়েছে বিধায় ওভিআই কালির ব্যবহার বাদ দেয়া উচিত। নতুন ডিজাইনে এই কালির ব্যবহার বাদ হয়েছে কিনা জানা নেই। ডিজাইনে বাদ দেয়ার বিষয়টি বিবেচিত না হলেও কোন সমস্যা নেই, যে কোন সময় রহিত করা সম্ভব, রহিত করা হলে নোটের ডিজাইন অক্ষুণœ থাকবে, এতে প্রচুর ব্যয় কমে যাবে।

অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের নির্দেশে গভর্নর ড. ফখরুদ্দিন আহমেদ ‘ক্লিন নোট পলিসি’ গ্রহণ করেছিলেন। পুরাতন, জরাজীর্ণ ও ময়লা নোট বাজার থেকে তুলে নিয়ে ফ্রেশনোট ইস্যু করার নীতির বাস্তবায়নে তখন টাকশাল রাতদিন ২৪ ঘণ্টা কাজ করে দ্বিগুণ নোট উৎপাদন করেছিল। পুরাতন নোটে জীবাণু থাকে বিধায় সাইফুর রহমান ময়লা নোট বাজার থেকে তুলে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন তাদের আগের নীতি পরিবর্তন করে ফ্রেশনোটের পরিবর্তে পুনঃপ্রচলনযোগ্য নোট ইস্যুর ওপর জোর দিয়েছে। কিন্তু নতুন ডিজাইনের ফ্রেশনোট আসতে দেরি হলে প্রচলন অযোগ্য নোটও বাংলাদেশ ব্যাংককে ইস্যু করতে হতে পারে। বর্তমানে তিন লক্ষ কোটি টাকার প্রতিকৃতি সংবলিত নোট বাজারে আছে, ইদে ফ্রেশনোট ছাড়লে তার সঙ্গে মাত্র দুই বা তিন হাজার কোটি টাকার নোট যোগ হতো এবং তাতে নোটের অবস্থানগত পরিবর্তন হতো খুব সামান্য। ইদে ফ্রেশনোট না ছাড়ার কারণে মুদ্রিত নোটগুলো এখন ধ্বংস করে ফেলা হবে। প্রতিকৃতির জলছাপ সংবলিত আমদানিকৃত মজুত কাগজ ও ভিন্ন শেডের ইন্টাগ্লিও কালিও ধ্বংস করা ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না, এতে শত শত কোটি টাকার অপচয় হবে। আসন্ন ইদে ফ্রেশনোট ইস্যু করা হলে এই বিপুল অপচয় রোধ করা সম্ভব হতো।

[লেখক : সাবেক নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক]

শীতকালীন জীবন: সংগ্রাম, সংস্কৃতি ও সহমর্মিতা

অ্যালগরিদমের রাজনীতি

চারদিকে আতঙ্ক আর শঙ্কা

অধ্যবসায়ের বিকল্প নেই

দিপু দাস হত্যাকাণ্ড ও মব সন্ত্রাস

ভোগের দৃশ্যপট: ঢাকায় আধুনিকতা কেন কেবল অল্প কিছু মানুষের জন্য?

স্বর্ণের মোহ ও মানবিক দ্বন্দ্ব

ভালোবাসার দেহধারণ: বড়দিনের তাৎপর্য

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট

বিনা-ভাড়ার ট্রেনযাত্রা

ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে এশিয়া

ছবি

নামে ইসলামী, কাজে আবু জাহেল!

জলবায়ু পরিবর্তন: স্বাস্থ্যঝুঁকি

ছবি

অস্থির পেঁয়াজের বাজার: আমদানি কি সত্যিই সমাধান?

মূল্যবৃদ্ধির ঘেরাটোপ: সংকটাক্রান্ত পরিবার ও সামাজিক রূপান্তর

বায়দূষণে অকালমৃত্যু

লাশের বদলে লাশই যদি চুড়ান্ত হয়, তবে রাষ্ট্রের দরকার কী?

ভিক্ষাবৃত্তি যেখানে অন্যতম পেশা

বুদ্ধিজীবী হত্যা ও এর স্বরূপ সন্ধানে

আদিবাসীদের ভূমি অধিকার ও নিরাপত্তা সংকট

“মুনীর চৌধুরীর কবর...”

বুদ্ধিজীবী হত্যা ও এর স্বরূপ সন্ধানে

জলবায়ু সংকট ও খাদ্য নিরাপত্তা

স্বাধীন তদন্ত কমিশন দাবির নেপথ্যে কি দায়মুক্তি?

বুদ্ধিজীবী হত্যা ও এর স্বরূপ সন্ধানে

প্রহর গুনি কোন আশাতে!

বিজয়ের রক্তাক্ত সূর্য ও আমাদের ঋণের হিসাব

বিজয় দিবস: নতুন প্রজন্মের রাষ্ট্রচিন্তার দিকদর্শন

ছবি

আমাদের বিজয়ের অন্তর্নিহিত বার্তা

প্রাণিসম্পদ: দেশীয় জাত, আধুনিক প্রযুক্তি

জমির জরিপ: ন্যায়বিচার প্রসঙ্গ

বুদ্ধিজীবী হত্যা ও এর স্বরূপ সন্ধানে

উন্নয়নের আড়ালে রোগীর ভোগান্তি: আস্থা সংকটে স্বাস্থ্যসেবা

ছবি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস: অমিত শক্তির উৎস

ছবি

বেগম রোকেয়া এখনো জাগ্রত

পশ্চিমবঙ্গ: বামপন্থীদের ‘বাংলা বাঁচাও’-এর ডাক

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

ঈদে মিলবে না নতুন নোট

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

রোববার, ২৩ মার্চ ২০২৫

বাংলাদেশ ব্যাংক ১০ মার্চ, ২০২৫ তারিখে এক প্রজ্ঞাপন ইস্যু করে তাদের সব অফিসকে আসন্ন পবিত্র ইদ-উল-ফিতর উপলক্ষে জনসাধারণের মাঝে ফ্রেশনোট বিনিময় কার্যক্রম বন্ধ রেখে পুনঃপ্রচলনযোগ্য নোট দ্বারা সকল লেনদেন কার্যক্রম সম্পাদন করতে নির্দেশ দিয়েছে। একই প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গেও ফ্রেশনোট বিনিময় কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলেছে।অর্থাৎ আসন্ন ইদ-উল-ফিতরে কোন ফ্রেশনোট ছাড়া হচ্ছে না। কিন্তু এই প্রজ্ঞাপন জারির কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংক আরেকটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ১৯ মার্চ থেকে ফ্রেশনোট ইস্যু করা হবে মর্মে ঘোষণা দিয়েছিল। অল্প সময়ের ব্যবধানে পরস্পরবিরোধী প্রজ্ঞাপন থেকে প্রতীয়মান হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের গৃহীত পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছে।

ফ্রেশনোট না ছাড়ার মুখ্য কারণ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি বা ছবি সংবলিত নোট আর ইস্যু না করার সিদ্ধান্ত। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে জাতির পিতা বা রাজা-বাদশাহর প্রতিকৃতি দিয়ে নোট ছাপা হয়ে থাকে। কোন কোন দেশে বিখ্যাত ব্যক্তিদের ছবি দিয়েও নোট ছাপা হয়। সৌদি আরবসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশের নোটেও বাদশাহর প্রতিকৃতি আছে। এই সব দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আদর্শ ও মতের ভিন্নতা থাকলেও জাতির পিতা নিয়ে ঐকমত্য রয়েছে এবং এজন্য সরকার পরিবর্তন হলেও নোটে জাতির পিতার প্রতিকৃতি অনবচ্ছিন্নভাবে থেকে যায়। কিন্তু আমাদের দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বজন গ্রাহ্য জাতির পিতার স্বীকৃতি পাননি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেন জাতির পিতা, দাপ্তরিকভাবে তা সবাইকে মানতে হয়। কিন্তু ক্ষমতা হারানোর সঙ্গে সঙ্গে জাতির পিতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর স্বীকৃতি উবে যায়। এই খেলা চলছে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই। বিরোধী দলীয় উপনেতা আবদুল কাসিম মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা চৌধুরী বা বি. চৌধুরী প্রথম সংসদে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

বাংলাদেশের প্রথম রাজনৈতিক দলিল বা সংবিধান হচ্ছে ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের ‘অবিসংবাদিত নেতা’ হিসেবে উল্লেখ করা হলেও ‘জাতির পিতা’ বলা হয়নি। ১৯৭২ সনে প্রণীত সংবিধানেও বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়নি, এমনকি ‘৭২ সনের সংবিধানের কোথাও বঙ্গবন্ধুর নামও উচ্চারিত হয়নি। সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীতে ভিন্ন প্রসঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানের নামের পূর্বে প্রথম ‘জাতির পিতা’ কথাটির উল্লেখ করা হয়, কিন্তু জাতির পিতা হিসেবে গণ্য করার বাধ্যতামূলক কোন অনুচ্ছেদ তখনো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। মুখে মুখে আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা বললেও আওয়ামী লীগের কয়েক মেয়াদের শাসনামলেও সাংবিধানিকভাবে বঙ্গবন্ধুকে ‘জাতির পিতা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়নি। ২০১১ সনে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রথম সংবিধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘জাতির পিতা’ হিসেবে উল্লেখ করে তার প্রতিকৃতি সংরক্ষণ, প্রদর্শনের বিধান যোগ করা হয়। ড. মোহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে আদালতের রায়ে পঞ্চদশ সংশোধনীর অনেক কিছু বাতিল হলেও জাতির পিতার সাংবিধানিক স্বীকৃতি বাতিল হয়নি।

ইতোপূর্বে বিএনপি যতবার ক্ষমতায় এসেছে ততবারই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সংবলিত নোটের উৎপাদন বন্ধ করে ভিন্ন ডিজাইনের নোট ছাপিয়ে বাজারে ছেড়েছে। এবার একটি গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে, তাই শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি নোটে থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। একটি রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের পর জাতির পিতার প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য স্থাপনের ক্ষীণ সম্ভাবনাও এখন নেই; তাই কারেন্সি ও ব্যাংকনোটে জাতির পিতার প্রতিকৃতি বাদ দিয়ে নোট মুদ্রণের পরিকল্পনা শুরুতেই নেয়া উচিত ছিল, শুরুতে পরিকল্পনা নেয়া হলে ইদের আগেই নতুন ডিজাইনের নোট বাজারে ছাড়া সম্ভব হতো। ইন্টাগ্লিও কালিবহির্ভূত ২, ৫ ও ১০ টাকার নতুন ডিজাইনের নোট শীঘ্রই ইস্যু করা সম্ভব হলেও ইন্টাগ্লিও যুক্ত অবশিষ্ট নোট ছাপাতে আরও কয়েক মাস লেগে যাবে। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় লাভের দুয়েকদিনের মধ্যেই লন্ডনের এক প্রাইভেট কোম্পানি বাংলাদেশ হাইকমিশনে এসে বাংলাদেশের জন্য নোট মুদ্রণের প্রস্তাব দেয়, কিন্তু নোট মুদ্রণ খরচ নির্বাহ করার বৈদেশিক মুদ্রা না থাকায় তাদের প্রস্তাব বিবেচনা করা হয়নি।

নতুন ডিজাইনের নোট আসতে দেরি হবে, ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সংবলিত নোট উৎপাদন কয়েক মাস আগ থেকেই বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে ছাপানো বিপুল পরিমাণ নোট এখনো টাকশাল এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন অফিসের ভল্টে রয়েছে, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি থাকায় সেই সব নোট আর ইস্যু করা হচ্ছে না। এই সিদ্ধান্ত সুবিবেচনা প্রসূত বলে মনে হয় না। কারণ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সম্বলিত প্রায় তিন লক্ষ কোটি টাকার নোট বাজারে আছে এবং তা আরও দীর্ঘদিন থাকবে। বাজারে থাকা নোটগুলো কেবল বাংলাদেশ ব্যাংকে গেলেই আর ইস্যু হবে না। বাজারের থাকা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সংবলিত সব নোট বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে পৌঁছাতে আরও বহু বছর লেগে যাবে। এক্ষেত্রে আরেকটি কাজ করা যেতে পারে, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সংবলিত নোট বাজারশূন্য করতে সব নোট বাতিল করা যায়; কিন্তু এক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকবে, বাজারে থাকা সব নোটের প্রতিস্থাপন করার মতো নোট উৎপাদনের সক্ষমতা টাকশালের নেই। কয়েক বছর আগে ২০০০ টাকা মূল্যমানের নোট বাতিল করে ভারত বিপদে পড়েছিল, মুদ্রিত পর্যাপ্ত নোট না থাকায় জনগণকে ২০০০ টাকার বিনিময় মূল্য তাৎক্ষণিক দিতে পারেনি।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সংবলিত সব নোট তাৎক্ষণিক উচ্ছেদ করা অসম্ভব বিধায় ইতোমধ্যে ছাপা হয়ে যাওয়া নোটগুলো আসন্ন ইদে ইস্যু করার বিষয়টি বিবেচনা করা যেত। নোটে প্রতিকৃতি থাকলেই যে বঙ্গবন্ধুর প্রতি সবাই আবেগে আপ্লুত হয়ে যাবে তা কিন্তু নয়। একাত্তরে স্বাধীনতা লাভের পরেও পাকিস্তানের জাতির পিতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ছবি বা প্রতিকৃতি সংবলিত নোট বাংলাদেশে চালু ছিল, নোটগুলোতে সিল মেরে কেবল ‘বাংলাদেশ’ লিখে দেয়া হতো। প্রতিকৃতি সংবলিত নোটের পরিবর্তে প্রতিকৃতি বিহীন নোট মুদ্রণের বিকল্প ব্যবস্থাও টাকশালের ছিল। প্রতিটি নোটের প্রতিকৃতি বহির্ভূত মাস্টার প্ল্যাট টাকশালে রয়েছে, টাকশালে সংরক্ষিত সেই প্ল্যাট ব্যবহার করে খুব অল্প সময়ের মধ্যে অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য, অর্থাৎ নতুন ডিজাইনের নোট বাজারে না আসা পর্যন্ত, ভিন্নতর ডিজাইনের নোট উৎপাদন সম্ভব হতো। বাংলাদেশ ব্যাংক ও টাকশাল সেই পথে কেন হাঁটল না তা স্পষ্ট নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ইদে ফ্রেশনোট ইস্যু করার প্রচলিত রীতি থেকে তারা সরে আসবে, কারণ নতুন নোট ছাপাতে তাদের প্রচুর ব্যয় হয়।এটা তাৎপর্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত নয়, এই সিদ্ধান্তে তারা অটল থাকবে না। নোট উৎপাদন ও তার ইস্যু বন্ধ করা যাবে না, ফ্রেশনোট ইদে না ছাড়লেও অন্য সময় ছাড়তে হবে। ৩৩ শতাংশের বেশি নোট প্রতি বছর ধ্বংস করা হয়, অন্যদিকে দেশের অর্থনীতি এবং প্রবাসীদের রেমিট্যান্স বাড়ছে, ধ্বংস হওয়া নোটের প্রতিস্থাপন ও নোটের চাহিদার প্রবৃদ্ধি ফ্রেশনোট দিয়েই পূরণ করতে হয়। উন্নত দেশের মতো আমাদের দেশে ব্যাপক হারে ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডের প্রচলন করা সম্ভব নয়। তাই নোট উৎপাদনও করতে হবে এবং তা ইস্যুও করতে হবে, তবে তা বছরের কখন ইস্যু করবে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিষয়। ফ্রেশনোট যখন বাজারে ছাড়তেই হবে তখন ইদের সময় ছাড়াই উত্তম, কারণ ফ্রেশনোটের সঙ্গে ইদ উৎসবের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে, সবাই ফ্রেশনোটে বাজার করে আনন্দ পায়, ফ্রেশনোটের বকশিস পেয়ে শিশুরা হয় খুশি। এই আনন্দ ও খুশিকে কবর দেয়া অর্থহীন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কথা অনুযায়ী নোট কম ছাপিয়ে আপাতত ব্যয় কমানোর সুযোগ নেই। তবে খরচ কমাতে হলে নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য কমাতে হবে। ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার উচ্চ মূল্যমানের নোটে একাধিক নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য রয়েছে, নকল রোধে এতগুলো নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য থাকার প্রয়োজন নেই। এই তিনটি নোটের ডানপাশের উপরে অঙ্কে লিখিত মূল্যমানে ‘ওভিআই’ বা রং পরিবর্তনশীল নিরাপত্তা কালি ব্যবহৃত হয়, এক সময় শুধু এই কালির খরচ ছিল নোটের মোট খরচের ৮০ শতাংশ। কয়েক বছর আগে ওভিআই কালির পেটেন্ট সত্ব ৩০ বছর অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ায় কারণে এখন তা আর পেটেন্টেড নয়, এখন যে কেউ এই কালি উৎপাদন করার অধিকার রাখে; তাই নোটে পেটেন্টবিহীন এই কালির ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ ও অর্থহীন। পেটেন্টেড না হওয়ায় পরবর্তীতে এই কালির দর কমানো হয়েছে। এই কালির চেয়ে উন্নতমানের নিরাপত্তা কালি ‘স্পার্ক’ বা ‘মোশন ইঙ্ক’ আমাদের উচ্চ মূল্যমানের নোটে সংযোজন করা হয়েছে বিধায় ওভিআই কালির ব্যবহার বাদ দেয়া উচিত। নতুন ডিজাইনে এই কালির ব্যবহার বাদ হয়েছে কিনা জানা নেই। ডিজাইনে বাদ দেয়ার বিষয়টি বিবেচিত না হলেও কোন সমস্যা নেই, যে কোন সময় রহিত করা সম্ভব, রহিত করা হলে নোটের ডিজাইন অক্ষুণœ থাকবে, এতে প্রচুর ব্যয় কমে যাবে।

অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের নির্দেশে গভর্নর ড. ফখরুদ্দিন আহমেদ ‘ক্লিন নোট পলিসি’ গ্রহণ করেছিলেন। পুরাতন, জরাজীর্ণ ও ময়লা নোট বাজার থেকে তুলে নিয়ে ফ্রেশনোট ইস্যু করার নীতির বাস্তবায়নে তখন টাকশাল রাতদিন ২৪ ঘণ্টা কাজ করে দ্বিগুণ নোট উৎপাদন করেছিল। পুরাতন নোটে জীবাণু থাকে বিধায় সাইফুর রহমান ময়লা নোট বাজার থেকে তুলে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন তাদের আগের নীতি পরিবর্তন করে ফ্রেশনোটের পরিবর্তে পুনঃপ্রচলনযোগ্য নোট ইস্যুর ওপর জোর দিয়েছে। কিন্তু নতুন ডিজাইনের ফ্রেশনোট আসতে দেরি হলে প্রচলন অযোগ্য নোটও বাংলাদেশ ব্যাংককে ইস্যু করতে হতে পারে। বর্তমানে তিন লক্ষ কোটি টাকার প্রতিকৃতি সংবলিত নোট বাজারে আছে, ইদে ফ্রেশনোট ছাড়লে তার সঙ্গে মাত্র দুই বা তিন হাজার কোটি টাকার নোট যোগ হতো এবং তাতে নোটের অবস্থানগত পরিবর্তন হতো খুব সামান্য। ইদে ফ্রেশনোট না ছাড়ার কারণে মুদ্রিত নোটগুলো এখন ধ্বংস করে ফেলা হবে। প্রতিকৃতির জলছাপ সংবলিত আমদানিকৃত মজুত কাগজ ও ভিন্ন শেডের ইন্টাগ্লিও কালিও ধ্বংস করা ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না, এতে শত শত কোটি টাকার অপচয় হবে। আসন্ন ইদে ফ্রেশনোট ইস্যু করা হলে এই বিপুল অপচয় রোধ করা সম্ভব হতো।

[লেখক : সাবেক নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক]

back to top