alt

উপ-সম্পাদকীয়

দেশের কৃষি অর্থনীতির নীরব নায়িকারা

রিফাত হাসান রাব্বি

: শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ, যেখানে জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ জীবিকার জন্য কৃষির ওপর নির্ভর করে। এই কৃষি অর্থনীতির মূলে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামীণ সমাজে নারীরা শুধু গৃহস্থালির কাজে সীমাবদ্ধ নন, বরং কৃষিক্ষেত্রে নীরবে একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে চলেছেন। তাদের এ অবদান কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং পরিবারের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় গভীর প্রভাব ফেলছে।

কৃষিতে নারীদের ভূমিকা ও অংশগ্রহণ

বাংলাদেশের গ্রামীণ নারীরা কৃষির প্রতিটি পর্যায়ে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। বীজ বপন, চারা রোপণ, নিড়ানি, ফসল কাটা, শস্য সংরক্ষণ থেকে শুরু করে পশুপালন, মৎস্যচাষ এবং হাঁস-মুরগি পালনÑ সব ক্ষেত্রেই তাদের হাতের ছোঁয়া রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, গ্রামীণ এলাকায় প্রায় ৬০% নারী কোনো না কোনোভাবে কৃষি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ২০১৩ সালের শ্রমশক্তি জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে মোট ১ কোটি ২০ লাখ নারী শ্রমিকের মধ্যে ৭৪% (প্রায় ৯২ লাখ) কৃষি, মৎস্যচাষ ও সামাজিক বনায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এছাড়া ২০২২ সালের বিবিএস জরিপে শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ ৪২.৬৮%-এ পৌঁছেছে, যার মধ্যে গ্রামীণ কৃষিতে এই হার ৫০.৮৮%। এই পরিসংখ্যান স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, কৃষিতে নারীরা একটি অপরিসীম শক্তি।

নারীদের আয়

কৃষিতে নারীদের আয় বৈচিত্র্যময় তবে প্রায়শই সীমিত। যারা নিজেদের জমিতে কাজ করেন, তারা সরাসরি আর্থিক আয় না পেলেও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অতিরিক্ত উৎপাদন বিক্রির মাধ্যমে পরোক্ষভাবে পরিবারের অর্থনীতিতে অবদান রাখেন।

অন্যদিকে দিনমজুর হিসেবে কৃষিতে নিয়োজিত নারীদের আয় পুরুষদের তুলনায় কম। উদাহরণস্বরূপ, পুরুষ কৃষি শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি গড়ে ৩০০-৬০০ টাকা হলেও নারীদের মজুরি ২৫০-৩৫০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। পশুপালন ও হাঁস-মুরগি পালন থেকে নারীরা মাসিক ২,০০০-৫,০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন, যা পরিবারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পূরক আয়। তবে এ আয়ের বেশিরভাগই পুরুষ সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ১৫.৮% নারী তাদের আয়ের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন।

বৈষম্যের চিত্র

কৃষিতে নারীদের অবদানের পরিমাণ যতই হোক না কেন, তারা নানাবিধ বৈষম্যের শিকার। প্রথমত, তাদের কাজের স্বীকৃতি না পাওয়া একটি বড় সমস্যা। অনেক ক্ষেত্রে তাদের কৃষি কার্যক্রমকে ‘পারিবারিক দায়িত্ব’ হিসেবে গণ্য করা হয়, যা অর্থনৈতিক অবদান হিসেবে বিবেচিত হয় না। বিবিসির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নারীদের দিনের কাজের ৪০% পরিবারের জন্য ব্যয় হয়, কিন্তু এর কোনো আর্থিক মূল্যায়ন হয় না। দ্বিতীয়ত, মজুরি বৈষম্য একটি সুস্পষ্ট সমস্যা। বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এ সমকাজে সমান মজুরির বিধান থাকলেও বাস্তবে নারীরা পুরুষদের তুলনায় ২০-৩০% কম মজুরি পান। যেমন- ধান রোপণ বা ফসল প্রক্রিয়াকরণে পুরুষদের ৫০০ টাকা দেওয়া হলেও নারীরা ৩৫০ টাকার বেশি পান না।

তৃতীয়ত, জমির মালিকানা ও সম্পদের ওপর নারীদের নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত সীমিত। কৃষি তথ্য সার্ভিসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কৃষিজমির মালিকানায় নারীদের অংশ মাত্র ১৯%। এর ফলে তারা কৃষি ঋণ, প্রশিক্ষণ বা আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। চতুর্থত, দীর্ঘ সময় কাজের চাপ নারীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। সিপিডির গবেষণা অনুসারে, নারীরা পুরুষদের তুলনায় তিনগুণ বেশি কাজ করেন, কিন্তু এই শ্রমের স্বীকৃতি বা ন্যায্য প্রতিদান পান না।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব

নারীদের কৃষি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ পরিবার ও দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- কৃষিতে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেলে জিডিপিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তারা যে আয় করেন, তা সন্তানদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং পরিবারের জীবনমান উন্নয়নে ব্যয় হয়, যা দারিদ্র্য হ্রাসে সহায়ক। সামাজিকভাবে, কৃষি কাজের মাধ্যমে নারীরা ক্ষমতায়িত হন এবং পরিবারে তাদের মতামতের গুরুত্ব বাড়ে, যা লিঙ্গ সমতার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

চ্যালেঞ্জ ও সমাধান

নারীদের সামনে প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণে সীমিত প্রবেশাধিকার, পিতৃতান্ত্রিক সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অভাব বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এগুলো মোকাবিলায় সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলো নারীদের জন্য কৃষি প্রশিক্ষণ, সহজ শর্তে ঋণ এবং সমবায় গঠনের মাধ্যমে সমর্থন দিতে পারে। জমির মালিকানায় নারীদের অধিকার নিশ্চিত করা এবং মজুরি বৈষম্য দূর করতে কঠোর আইন প্রয়োগ জরুরি।

বাংলাদেশের কৃষিতে নারীদের অংশগ্রহণ (৫০-৭৪%) এবং তাদের অবদান অমূল্য, কিন্তু বৈষম্য ও স্বীকৃতির অভাব তাদের সম্ভাবনাকে সীমিত করে রেখেছে। তাদের আয় বৃদ্ধি এবং কাজের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কৃষি খাতকে আরও শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করা সম্ভব। নারীদের হাত ধরে কৃষির ভবিষ্যৎ গড়ে উঠবেÑ এই বিশ্বাসে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

[লেখক : শিক্ষার্থী, কৃষিবিজ্ঞান বিভাগ, ড্যাফোডিল আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়]

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

দেশের অর্থ পাচারের বাস্তবতা

খাদ্য নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত

আবারও কি রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবে বিশ্ব?

প্লান্ট ক্লিনিক বদলে দিচ্ছে কৃষির ভবিষ্যৎ

ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী করতে করণীয়

রম্যগদ্য : ‘ডন ডনা ডন ডন...’

ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব : কে সন্ত্রাসী, কে শিকার?

সুস্থ ও শক্তিশালী জাতি গঠনে শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব

প্রতিরোধই উত্তম : মাদকমুক্ত প্রজন্ম গড়ার ডাক

ছবি

বিকাশের পথকে পরিত্যাগ করা যাবে না

বর্ষা ও বৃক্ষরোপণ : সবুজ বিপ্লবের আহ্বান

প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়া রোধে শিক্ষকের করণীয়

পারমাণবিক ন্যায়বিচার ও বৈশ্বিক ভণ্ডামির প্রতিচ্ছবি

পরিবেশের নীরব রক্ষক : শকুন সংরক্ষণে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন

মশার উপদ্রব : জনস্বাস্থ্য ও নগর ব্যবস্থাপনার চরম ব্যর্থতা

ভুল স্বীকারে গ্লানি নেই

ভাঙনের বুকে টিকে থাকা স্বপ্ন

একটি সফর, একাধিক সংকেত : কে পেল কোন বার্তা?

দেশের কারা ব্যবস্থার বাস্তবতা

ইসলামী ব্যাংক একীভূতকরণ : আস্থা ফেরাতে সংস্কার, না দায়মুক্তির প্রহসন?

রম্যগদ্য : চাঁদাবাজি চলছে, চলবে

বায়ুদূষণ : নীরব ঘাতক

ইসরায়েলের কৌশলগত ঔদ্ধত্য

পরিবার : সুনাগরিক ও সুশাসক তৈরির ভিত্তিমূল

শিল্পে গ্যাস সংকট : দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নিন

আমাদের লড়াইটা আমাদের লড়তে দিন

tab

উপ-সম্পাদকীয়

দেশের কৃষি অর্থনীতির নীরব নায়িকারা

রিফাত হাসান রাব্বি

শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ, যেখানে জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ জীবিকার জন্য কৃষির ওপর নির্ভর করে। এই কৃষি অর্থনীতির মূলে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামীণ সমাজে নারীরা শুধু গৃহস্থালির কাজে সীমাবদ্ধ নন, বরং কৃষিক্ষেত্রে নীরবে একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে চলেছেন। তাদের এ অবদান কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং পরিবারের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় গভীর প্রভাব ফেলছে।

কৃষিতে নারীদের ভূমিকা ও অংশগ্রহণ

বাংলাদেশের গ্রামীণ নারীরা কৃষির প্রতিটি পর্যায়ে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। বীজ বপন, চারা রোপণ, নিড়ানি, ফসল কাটা, শস্য সংরক্ষণ থেকে শুরু করে পশুপালন, মৎস্যচাষ এবং হাঁস-মুরগি পালনÑ সব ক্ষেত্রেই তাদের হাতের ছোঁয়া রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, গ্রামীণ এলাকায় প্রায় ৬০% নারী কোনো না কোনোভাবে কৃষি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ২০১৩ সালের শ্রমশক্তি জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে মোট ১ কোটি ২০ লাখ নারী শ্রমিকের মধ্যে ৭৪% (প্রায় ৯২ লাখ) কৃষি, মৎস্যচাষ ও সামাজিক বনায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এছাড়া ২০২২ সালের বিবিএস জরিপে শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ ৪২.৬৮%-এ পৌঁছেছে, যার মধ্যে গ্রামীণ কৃষিতে এই হার ৫০.৮৮%। এই পরিসংখ্যান স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, কৃষিতে নারীরা একটি অপরিসীম শক্তি।

নারীদের আয়

কৃষিতে নারীদের আয় বৈচিত্র্যময় তবে প্রায়শই সীমিত। যারা নিজেদের জমিতে কাজ করেন, তারা সরাসরি আর্থিক আয় না পেলেও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অতিরিক্ত উৎপাদন বিক্রির মাধ্যমে পরোক্ষভাবে পরিবারের অর্থনীতিতে অবদান রাখেন।

অন্যদিকে দিনমজুর হিসেবে কৃষিতে নিয়োজিত নারীদের আয় পুরুষদের তুলনায় কম। উদাহরণস্বরূপ, পুরুষ কৃষি শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি গড়ে ৩০০-৬০০ টাকা হলেও নারীদের মজুরি ২৫০-৩৫০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। পশুপালন ও হাঁস-মুরগি পালন থেকে নারীরা মাসিক ২,০০০-৫,০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন, যা পরিবারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পূরক আয়। তবে এ আয়ের বেশিরভাগই পুরুষ সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ১৫.৮% নারী তাদের আয়ের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন।

বৈষম্যের চিত্র

কৃষিতে নারীদের অবদানের পরিমাণ যতই হোক না কেন, তারা নানাবিধ বৈষম্যের শিকার। প্রথমত, তাদের কাজের স্বীকৃতি না পাওয়া একটি বড় সমস্যা। অনেক ক্ষেত্রে তাদের কৃষি কার্যক্রমকে ‘পারিবারিক দায়িত্ব’ হিসেবে গণ্য করা হয়, যা অর্থনৈতিক অবদান হিসেবে বিবেচিত হয় না। বিবিসির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নারীদের দিনের কাজের ৪০% পরিবারের জন্য ব্যয় হয়, কিন্তু এর কোনো আর্থিক মূল্যায়ন হয় না। দ্বিতীয়ত, মজুরি বৈষম্য একটি সুস্পষ্ট সমস্যা। বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এ সমকাজে সমান মজুরির বিধান থাকলেও বাস্তবে নারীরা পুরুষদের তুলনায় ২০-৩০% কম মজুরি পান। যেমন- ধান রোপণ বা ফসল প্রক্রিয়াকরণে পুরুষদের ৫০০ টাকা দেওয়া হলেও নারীরা ৩৫০ টাকার বেশি পান না।

তৃতীয়ত, জমির মালিকানা ও সম্পদের ওপর নারীদের নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত সীমিত। কৃষি তথ্য সার্ভিসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কৃষিজমির মালিকানায় নারীদের অংশ মাত্র ১৯%। এর ফলে তারা কৃষি ঋণ, প্রশিক্ষণ বা আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। চতুর্থত, দীর্ঘ সময় কাজের চাপ নারীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। সিপিডির গবেষণা অনুসারে, নারীরা পুরুষদের তুলনায় তিনগুণ বেশি কাজ করেন, কিন্তু এই শ্রমের স্বীকৃতি বা ন্যায্য প্রতিদান পান না।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব

নারীদের কৃষি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ পরিবার ও দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- কৃষিতে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেলে জিডিপিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তারা যে আয় করেন, তা সন্তানদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং পরিবারের জীবনমান উন্নয়নে ব্যয় হয়, যা দারিদ্র্য হ্রাসে সহায়ক। সামাজিকভাবে, কৃষি কাজের মাধ্যমে নারীরা ক্ষমতায়িত হন এবং পরিবারে তাদের মতামতের গুরুত্ব বাড়ে, যা লিঙ্গ সমতার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

চ্যালেঞ্জ ও সমাধান

নারীদের সামনে প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণে সীমিত প্রবেশাধিকার, পিতৃতান্ত্রিক সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অভাব বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এগুলো মোকাবিলায় সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলো নারীদের জন্য কৃষি প্রশিক্ষণ, সহজ শর্তে ঋণ এবং সমবায় গঠনের মাধ্যমে সমর্থন দিতে পারে। জমির মালিকানায় নারীদের অধিকার নিশ্চিত করা এবং মজুরি বৈষম্য দূর করতে কঠোর আইন প্রয়োগ জরুরি।

বাংলাদেশের কৃষিতে নারীদের অংশগ্রহণ (৫০-৭৪%) এবং তাদের অবদান অমূল্য, কিন্তু বৈষম্য ও স্বীকৃতির অভাব তাদের সম্ভাবনাকে সীমিত করে রেখেছে। তাদের আয় বৃদ্ধি এবং কাজের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কৃষি খাতকে আরও শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করা সম্ভব। নারীদের হাত ধরে কৃষির ভবিষ্যৎ গড়ে উঠবেÑ এই বিশ্বাসে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

[লেখক : শিক্ষার্থী, কৃষিবিজ্ঞান বিভাগ, ড্যাফোডিল আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়]

back to top