alt

উপ-সম্পাদকীয়

নতুন নোট, নতুন বিতর্ক

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

: শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫

‘নতুন বাংলাদেশ’র নতুন নোট অবশেষে বাজারে এসেছে, তবে বৃহত্তর জনগণের হাতে আসেনি। কোরবানি ঈদের আগে নোট বাজারে আনার ধনুভঙ্গ পণ ছিল বলেই তা সম্ভব হয়েছে। বকরি ঈদের আগে নোট মুদ্রণের তাগাদা ছিল প্রধান উপদেষ্টার, তাগাদা ছিল অর্থ উপদেষ্টার, তাগাদা ছিল গভর্নরের। শুনেছি, এই মহাযজ্ঞে গভর্নর ও অর্থ উপদেষ্টা নিয়মিত মনিটরিং করতেন। সৃষ্ট এই প্রেসারে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং টাকশালের সংশ্লিষ্ট কর্মীরা ছিলেন তটস্থ, এক মুহূর্তও নিশ্চিন্তে ছিলেন না। তবে স্বল্প সময়ে নোট মুদ্রণের কৃতিত্বের কিছুটা নোটের কাগজ ও কালি সরবরাহকারীদেরও রয়েছে। শুনেছি, টেন্ডার ডকুমেন্ট ও কার্যাদেশের শর্তাদি পরিপালনে তারা জেদ ধরেনি, টাকশালের অনুরোধে সরবরাহ সূচির অনেক আগেই কাগজ-কালি সরবরাহ করেছে। এক্ষেত্রে কাগজ-কালি প্রস্তুতকারকের স্থানীয় প্রতিনিধিও সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে, স্ব স্ব প্রিন্সিপালের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে, ত্বরিৎ উৎপাদনের গুরুত্ব বোঝাতে স্থানীয় প্রতিনিধিকে হয়তো নিজ খরচে প্রিন্সিপালের দ্বারে ঢুঁও মারতে হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বা টাকশাল ইচ্ছে করলেই যখন-তখন নোট উৎপাদন করতে পারে না। কারণ নোট উৎপাদনের সব কাঁচামাল বিদেশ থেকে দরপত্র আহ্বান করে প্রতিবছর আমদানি করতে হয়। সংগ্রহ নীতিমালা অনুসরণ করা হলে নোট সংশ্লিষ্ট যে কোন পণ্য সংগ্রহে কমপক্ষে ৬ মাসের প্রয়োজন হয়। কোন দরপত্রের কোন অফার রেসপন্সিভ না হলে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করে পণ্য সংগ্রহে আট মাসও লেগে যেতে পারে। সরবরাহকৃত নমুনা কাগজ বা কালি টাকশালের ল্যাবরটরির পরীক্ষায় প্রথমবার গ্রহণযোগ্য না হলে পুনরায় নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষায় অতিরিক্ত আরও এক মাস ব্যয়িত হয়। তবে টাকশালের নির্বাহী প্রধানের সক্রিয়তা না থাকলে অধস্তনদের ঢিলেমি এড়ানো কঠিন। মন্ত্রণালয়ের ঢিলেমির জন্যই শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদকে পদত্যাগ করতে হয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ যখন গভর্নর ছিলেন তখন তার সঙ্গে কাজ করতে হয়েছে। নোট উৎপাদন সংশ্লিষ্ট কাজ সম্পাদনে পণ্য সরবরাহকারী এবং তাদের স্থানীয় প্রতিনিধি বা লোকাল এজেন্টের ভূমিকা যে গুরুত্বপূর্ণ তা শিখেছিলাম তার কাছ থেকে। এক সময় উজবেকিস্তান নিয়মিত আমাদের নোটের কাগজ সরবরাহ করত, কিন্তু তাদের কোন সমুদ্রবন্দর না থাকায় তারা ব্যবহার করত ইরানের ‘বন্দর আব্বাস’ সমুদ্রবন্দর। ইরানের ওপর আমেরিকার অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে ইরানের সম্দ্রুবন্দর ব্যবহার করে উজবেকিস্তান নোটের কাগজ সরবরাহ করতে পারছিল না। ফলে কাগজের অভাবে আমাদের দেশে নোটের ক্রাইসিস তৈরি হয়। এই অবস্থায় গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সংশ্লিষ্ট লোকাল এজেন্টসহ আমাকে উজবেকিস্তানে পাঠিয়েছিলেন। আমরা কার্গো বিমানে কাগজ আনতে বাধ্য হয়েছিলাম। প্রিন্সিপাল এবং লোকাল এজেন্টের সহযোগিতা না পেলে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রস্তুত করে কাগজ আনা সম্ভব হতো না।

তুলা উজবেকিস্তানের প্রধান অর্থকরী ফসল, এবং এই তুলা দিয়েই নোটের কাগজ তৈরি হয়। কিন্তু ইরানের ওপর আমেরিকার আরোপিত অবরোধ অব্যাহত থাকায় আর কখনো উজবেকিস্তান টাকশালের দরপত্রে অংশগ্রহণ করেনি। উজবেকিস্তান দরপত্রে অংশগ্রহণ না করায় এই ব্যবসা চলে যায় ইউরোপের কয়েকটি কাগজ প্রস্তুতকারকের হাতে। ইউরোপের দর সব সময় বেশি। ইউরোপের নিরাপত্তামূলক কাগজ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর একচেটিয়া ব্যবসায় ছেদ টানার অভিপ্রায়ে ইন্দোনেশিয়ার ‘পিটি পুরা’কে নোটের কাগজ সরবরাহকারী হিসেবে টাকশালের তালিকাভুক্ত করা হয়। পিটি পুরা তালিকাভুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো তাদের দর কমাতে শুরু করে। মেশিন সরবরাহের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। চীন দরপত্রে অংশগ্রহণ না করলে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো তাদের মেশিনের দর বাড়িয়ে দেয়, চীন অংশগ্রহণ করলে দাম কমায়। তবে ঘুষ এবং দুর্নীতির প্রশ্রয় থাকলে চীন দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে পারে না, দরপত্রে এমন শর্ত আরোপ করা হয় যাতে চীনের অংশগ্রহণ অসম্ভব হয়ে ওঠে। অবশ্য টাকশালের প্রয়োজনীয় সব কাগজ সরবরাহের সক্ষমতা ইন্দোনেশিয়ার পিটি পুরার নেই। ইউরোপীয় কাগজ প্রস্তুতকারক তা জানে এবং জানে বলেই অনেক সময় প্রতিযোগিতামূলক দর নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। চীনকেও কাগজ-কালি সরবরাহে আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা হয়েছিল, চীন এগিয়ে এলে নোটের কাগজ-কালির দর আরও কমবে।

নোটের কাঁচামাল সরবরাহকারী সীমিত হওয়ায় নোটের উৎপাদন খরচ কমানো সম্ভব হয় না। নোটের কালি সরবরাহ করে জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডের মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান। কালি সরবরাহের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান হচ্ছে সুইজারল্যান্ডের ‘সিকপা’। এই প্রতিষ্ঠানটি বহু বছর ধরে পরিবর্তনশীল কালি ‘ওভিআই’ কোন টেন্ডার ছাড়াই সরবরাহ করে আসছে, এখন এই কালির পরিবর্তে নোটে ব্যবহৃত হচ্ছে ‘স্পার্ক’। নতুন ডিজাইনের উচ্চ মূল্যমানের চারটি নোটের ডানপাশের উপরে লিখিত সংখ্যায় লেখা মূল্যমানে এই কালির ব্যবহার হচ্ছে। এই কালির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নোট কাত করে আবার সোজা করলে কালির ছায়া ওঠানামা করে। তবে এই বৈশিষ্ট্যের আরও স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান দেখা যায় চীনের কিছু বাণিজ্যিক পণ্যে। চীনের সরকারি নোটমুদ্রণ ছাপাখানা থেকে স্পার্ক জাতীয় কালির মুদ্রিত নমুনা টাকশালকে সরবরাহ করা হয়েছিল। নোট মুদ্রণে যত খরচ হয় তার প্রায় আশি শতাংশ খরচ হয় ওভিআই বা স্পার্ক খাতে। একই মানসম্পন্ন স্পার্ক জাতীয় কালির উৎস অন্যত্র পাওয়া গেলে নোটের উৎপাদন খরচ অনেক কমে যাবে। তবে নোটে কাগজ-কালি ব্যবহারের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্যবহারকারী থেকে সনদের সংখ্যাধিক্য চাহিদা নতুন প্রস্তুতকারককে দরপত্রে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখে।

বাংলাদেশ একটি অদ্ভুত দেশ। এই দেশে সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির ইমেজ গড়তে দেয়া হয় না। ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, আমেরিকা প্রভৃতি দেশে সর্বজনগ্রাহ্য জাতির পিতা থাকলেও বাংলাদেশে নেই। পাকিস্তানে এখনো জাতির পিতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ছবিযুক্ত নোট মুদ্রণ করা হয়, ভারতের নোটে থাকে মহাত্মা গান্ধীর ছবি। আর বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সংযোজন করা হয়, আর ক্ষমতা হারানোর সঙ্গে সঙ্গে নোট থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সরানোর তোড়জোড় শুরু হয়। শুধু কী তাই! সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন স্থাপনার নাম পরিবর্তন শুরু হয়। প্রতিহিংসার এই রাজনীতির বলী হয় সরকারের কোষাগার, হাজার হাজার কোটি টাকার অপচয় হয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারও এই খেলার গতানুগতিকতায় মেতে ওঠেছে। এই সরকার শুধু নোটের ডিজাইন পরিবর্তন করছে না, পরিবর্তন করছে বিভিন্ন স্থাপনার নামও। তবে গণ-অভ্যুত্থানের পর নোটের ডিজাইনে পরিবর্তন আনা এই সরকারের জন্য জরুরি ছিল।

নয়টি মূল্যমানের নয়টি নোটের ডিজাইন চূড়ান্ত করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। নোটের প্রাথমিক ডিজাইন করা হয় টাকশালে। তারপর তার ওপর রংতুলি চালানো হয় ডিজাইন এডভাইজরি কমিটির একাধিক বৈঠকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে দেশের প্রখ্যাত আর্টিস্টদের নিয়ে গঠিত এই এডভাইজরি কমিটি। কিন্তু নোট ডিজাইনে দেশের আর্টিস্টদের সম্যক জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা একেবারেই নেই। তাই আমাদের নোটের ডিজাইনে খুব বেশি মানোন্নয়ন হচ্ছে না। আমাদের নোটের ডিজাইন অনেকটা ফ্ল্যাট, সাদামাটা, কোন বৈচিত্র্য নেই। যারা আর্টিস্ট তাদের নোটে নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সংযোজনের স্বাধীনতা ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই। অন্যদিকে নোটের ওরিজিনেশন করার সক্ষমতাও টাকশালের নেই, টেন্ডার করে এই ওরিজিনেশন বা প্লেট বিদেশ থেকে সংগ্রহ করতে হয় এবং তা সময় সাপেক্ষ। এই সক্ষমতা অর্জনে দেড় থেকে দুইশ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রয়োজন। এই বিনিয়োগ অপ্রয়োজনীয়, কারণ নোটের ডিজাইন পরিবর্তনের সঙ্গে সরকার পরিবর্তনের সম্পর্ক রয়েছে। ডিজাইন এবং তাৎক্ষণিক কিছু প্লেট বিদেশ থেকে সংগ্রহ করতে দশ কোটি টাকার বেশি খরচ হওয়ার কথা। কমপক্ষে পাঁচ বছর পার না হলে সরকারের পরিবর্তন হয় না, তাই এত বড় বিনিয়োগ করে তা লোকবলসহ পাঁচ বছর অলস বসিয়ে রাখা অর্থহীন।

নতুন নোটের জলছাপ হচ্ছে ‘বাঘের মাথা’। জলছাপ হিসেবে বাঘের মাথার ব্যবহার এক সময় নোটে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এই মাথা এত জটিল যে, এই মাথায় থ্রি ডি’র ইফেক্ট আনা সম্ভব হয় না। এছাড়াও নকল নোটে বাঘের মাথার ছায়া আনা সহজ। নকল নোটে বাঘের মাথার জলছাপের ছায়া থাকে বিধায় অনেকে বিভ্রান্ত হয়, নকল নোটকে আসল নোট মনে করে। এই সব কারণে বঙ্গবন্ধু সিরিজে জলছাপ হিসেবে বাঘের মাথার ব্যবহার বাদ দেয়া হয়েছিল, কিন্তু নতুন নোটে কেন তা আবার নির্বাচন করা হলো তা স্পষ্ট নয়।

নতুন ডিজাইনের যে তিনটি নোট ইস্যু করা হয়েছে তাদের কালারে কোন নতুনত্ব নেই, বঙ্গবন্ধু সিরিজের নোটগুলোর রং রেখে দেয়া হয়েছে, তবে হাল্কা করে। এক হাজার টাকার মূল্যমানের নোটে স্মৃতিসৌধের নিচের দিকে একটি দৃষ্টিকটু স্পট দেখা যায়, তা কি ডিজাইনের অংশ, না ওরিজিনেশনের ত্রুটি! বর্তমানে প্রবীণ এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের (অন্ধ নয়) জন্য সংখ্যায় লেখা একটি মূল্যমান বিভিন্ন দেশের নোটে বড় করে ছাপা হয়। যারা কালার ব্লাইন্ড তারা রং দেখে নোট শনাক্ত করতে পারে না, সংখ্যায় বড় করে লেখা মূল্যমান দেখে নোট চিনতে পারে। কিন্তু ইতোমধ্যে ইস্যুকৃত নোটগুলোতে এই অপরিহার্য বৈশিষ্ট্যটি পরিদৃষ্ট হয়নি। নতুন নোটগুলোকে লটারির টিকেট বলে অনেকে উপহাস করছে, তবে বিরোধী পক্ষের এমন উপহাস আগেও হয়েছে। ডিজাইন নিয়ে সবার ঐকমত্য আশা করা ঠিকও হবে না। নতুন নোটগুলোর ডিজাইন ও বৈশিষ্ট্যগুলো সংযোজন করে বিদ্যমান সফটওয়্যার হালনাগাদ করা না হলে এটিএম বুথ নতুন নোট চিনতে পারবে না। তাই এটিএম বুথে নতুন নোটের ব্যবহার করার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

ডিজাইনের সীমাবদ্ধতা কাটাতে প্রয়োজনে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেয়া যেতে পারে। মালদ্বীপে বর্তমানে প্রচলিত সবগুলো নোট ডিজাইন করে দিয়েছে একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান। প্রায় বারো বছর পূর্বে মালদ্বীপের নতুন ডিজাইনের নোট উদ্বোধনকালে আমার উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল। পলিমার সাবস্ট্রেটে নোটগুলোর ডিজাইন ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ ও সৌন্দর্যম-িত। বহু যুগব্যাপী মার্কিন ডলারের ডিজাইনে খুব বেশি পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। নয়টি নোটের মানসম্পন্ন ডিজাইন করে মুদ্রণ সম্পন্ন করতে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগে। আগস্ট মাসে নতুন নোট মুদ্রণের পরিকল্পনা গৃহীত হলে গভর্নর এবং অর্থ উপদেষ্টাকে এত উদ্বিগ্ন থাকতে হতো না। অন্যদিকে প্রয়োজনের তুলনায় কম সময়ের মধ্যে নোট মুদ্রণ করতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং টাকশালের সংশ্লিষ্ট কর্মীদের গলদঘর্ম হতে হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং টাকশালকে তাই অভিনন্দন।

[ লেখক : সাবেক নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক ]

সরকারি হাসপাতালের পরিবেশ

আমেরিকার অলিগার্কি পতনের আখ্যান

রম্যগদ্য : ‘উহু উহু, তোরে মাফ করা যায় না...’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট : সংকোচন, সংকট ও সম্ভাবনার প্রতিফলন

আম রপ্তানি : বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ

ছবি

সামাজিকমাধ্যম গুরুত্বহীন নয়

জমির শ্রেণী চেনার উপায় ও পরিবর্তনের নিয়ম-কানুন

বাংলাদেশ : “রক্তে জন্ম আর পানিতে মরণ”

রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের হতাশা ও উপজেলা পর্যায়ের অদক্ষতা : কে নেবে দায়িত্ব?

তরল সম্পর্কের গোলকধাঁধা

পরিবার থেকে রাষ্ট্র : ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের উপায়

বাজেটে বৈষম্য কমানোর কোনো স্পষ্ট প্রতিফলন আছে কি

চোখের নজর কম হলে আর কাজল দিয়ে কী হবে

রম্যগদ্য : ‘নির্বাচন, না নীর-বচন...’

প্লাস্টিক দূষণ নয়, প্রকৃতির পাশে দাঁড়ান

কোরবানির পর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

ত্যাগের মহিমায় ঈদুল আজহা

নাম ও মর্যাদা : অর্থবহ নামকরণে বৈষম্য রোধের আহ্বান

ডিজিটাল পুঁজিবাদের যুগে নগর বাংলাদেশের শ্রেণী কাঠামো

পারিবারিক শিক্ষা ও রাষ্ট্রসংস্কার : ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের পথরেখা

প্রসঙ্গ : রাজধানীর যানজট

নবায়নযোগ্য জ্বালানি : চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

ছবি

তাহলে একাত্তরে হয়নিকো কোনো অপরাধ!

ঈদযাত্রা হোক নিরাপদ

আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য কৌশলে বাস্তববাদী বাঁক

রম্যগদ্য : ‘জনগণের ভালোবাসা কি আমার ব্যাংক-ব্যালেন্স বাড়াইবো?’

ভালো থাকার কঠিন কলা : কিছু সরল সত্য

নীরব ঘাতক তামাক

পরিবেশবান্ধব নগর গঠনে রাজনীতিবিদদের ভূমিকা

নিয়ন্ত্রণহীন নেটজগৎ ও ফেইসবুক : সমাজে বিভ্রান্তির ডিজিটাল উৎপত্তি

বস্তিবাসী নারী : অদৃশ্য শক্তির আখ্যান

চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল : বিতর্ক, নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থের প্রশ্ন

সংস্কারের ভবিষ্যত কী?

বজ্রপাত, ঘূর্ণিঝড় চায় না তো কেউ, প্রকৃতির নিয়মে আসে কিন্তু তাই!

কেন থমকে আছে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি

বদলাচ্ছে সমাজ, বদলাচ্ছে অর্জনের গল্প

tab

উপ-সম্পাদকীয়

নতুন নোট, নতুন বিতর্ক

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫

‘নতুন বাংলাদেশ’র নতুন নোট অবশেষে বাজারে এসেছে, তবে বৃহত্তর জনগণের হাতে আসেনি। কোরবানি ঈদের আগে নোট বাজারে আনার ধনুভঙ্গ পণ ছিল বলেই তা সম্ভব হয়েছে। বকরি ঈদের আগে নোট মুদ্রণের তাগাদা ছিল প্রধান উপদেষ্টার, তাগাদা ছিল অর্থ উপদেষ্টার, তাগাদা ছিল গভর্নরের। শুনেছি, এই মহাযজ্ঞে গভর্নর ও অর্থ উপদেষ্টা নিয়মিত মনিটরিং করতেন। সৃষ্ট এই প্রেসারে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং টাকশালের সংশ্লিষ্ট কর্মীরা ছিলেন তটস্থ, এক মুহূর্তও নিশ্চিন্তে ছিলেন না। তবে স্বল্প সময়ে নোট মুদ্রণের কৃতিত্বের কিছুটা নোটের কাগজ ও কালি সরবরাহকারীদেরও রয়েছে। শুনেছি, টেন্ডার ডকুমেন্ট ও কার্যাদেশের শর্তাদি পরিপালনে তারা জেদ ধরেনি, টাকশালের অনুরোধে সরবরাহ সূচির অনেক আগেই কাগজ-কালি সরবরাহ করেছে। এক্ষেত্রে কাগজ-কালি প্রস্তুতকারকের স্থানীয় প্রতিনিধিও সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে, স্ব স্ব প্রিন্সিপালের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে, ত্বরিৎ উৎপাদনের গুরুত্ব বোঝাতে স্থানীয় প্রতিনিধিকে হয়তো নিজ খরচে প্রিন্সিপালের দ্বারে ঢুঁও মারতে হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বা টাকশাল ইচ্ছে করলেই যখন-তখন নোট উৎপাদন করতে পারে না। কারণ নোট উৎপাদনের সব কাঁচামাল বিদেশ থেকে দরপত্র আহ্বান করে প্রতিবছর আমদানি করতে হয়। সংগ্রহ নীতিমালা অনুসরণ করা হলে নোট সংশ্লিষ্ট যে কোন পণ্য সংগ্রহে কমপক্ষে ৬ মাসের প্রয়োজন হয়। কোন দরপত্রের কোন অফার রেসপন্সিভ না হলে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করে পণ্য সংগ্রহে আট মাসও লেগে যেতে পারে। সরবরাহকৃত নমুনা কাগজ বা কালি টাকশালের ল্যাবরটরির পরীক্ষায় প্রথমবার গ্রহণযোগ্য না হলে পুনরায় নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষায় অতিরিক্ত আরও এক মাস ব্যয়িত হয়। তবে টাকশালের নির্বাহী প্রধানের সক্রিয়তা না থাকলে অধস্তনদের ঢিলেমি এড়ানো কঠিন। মন্ত্রণালয়ের ঢিলেমির জন্যই শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদকে পদত্যাগ করতে হয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ যখন গভর্নর ছিলেন তখন তার সঙ্গে কাজ করতে হয়েছে। নোট উৎপাদন সংশ্লিষ্ট কাজ সম্পাদনে পণ্য সরবরাহকারী এবং তাদের স্থানীয় প্রতিনিধি বা লোকাল এজেন্টের ভূমিকা যে গুরুত্বপূর্ণ তা শিখেছিলাম তার কাছ থেকে। এক সময় উজবেকিস্তান নিয়মিত আমাদের নোটের কাগজ সরবরাহ করত, কিন্তু তাদের কোন সমুদ্রবন্দর না থাকায় তারা ব্যবহার করত ইরানের ‘বন্দর আব্বাস’ সমুদ্রবন্দর। ইরানের ওপর আমেরিকার অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে ইরানের সম্দ্রুবন্দর ব্যবহার করে উজবেকিস্তান নোটের কাগজ সরবরাহ করতে পারছিল না। ফলে কাগজের অভাবে আমাদের দেশে নোটের ক্রাইসিস তৈরি হয়। এই অবস্থায় গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সংশ্লিষ্ট লোকাল এজেন্টসহ আমাকে উজবেকিস্তানে পাঠিয়েছিলেন। আমরা কার্গো বিমানে কাগজ আনতে বাধ্য হয়েছিলাম। প্রিন্সিপাল এবং লোকাল এজেন্টের সহযোগিতা না পেলে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রস্তুত করে কাগজ আনা সম্ভব হতো না।

তুলা উজবেকিস্তানের প্রধান অর্থকরী ফসল, এবং এই তুলা দিয়েই নোটের কাগজ তৈরি হয়। কিন্তু ইরানের ওপর আমেরিকার আরোপিত অবরোধ অব্যাহত থাকায় আর কখনো উজবেকিস্তান টাকশালের দরপত্রে অংশগ্রহণ করেনি। উজবেকিস্তান দরপত্রে অংশগ্রহণ না করায় এই ব্যবসা চলে যায় ইউরোপের কয়েকটি কাগজ প্রস্তুতকারকের হাতে। ইউরোপের দর সব সময় বেশি। ইউরোপের নিরাপত্তামূলক কাগজ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর একচেটিয়া ব্যবসায় ছেদ টানার অভিপ্রায়ে ইন্দোনেশিয়ার ‘পিটি পুরা’কে নোটের কাগজ সরবরাহকারী হিসেবে টাকশালের তালিকাভুক্ত করা হয়। পিটি পুরা তালিকাভুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো তাদের দর কমাতে শুরু করে। মেশিন সরবরাহের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। চীন দরপত্রে অংশগ্রহণ না করলে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো তাদের মেশিনের দর বাড়িয়ে দেয়, চীন অংশগ্রহণ করলে দাম কমায়। তবে ঘুষ এবং দুর্নীতির প্রশ্রয় থাকলে চীন দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে পারে না, দরপত্রে এমন শর্ত আরোপ করা হয় যাতে চীনের অংশগ্রহণ অসম্ভব হয়ে ওঠে। অবশ্য টাকশালের প্রয়োজনীয় সব কাগজ সরবরাহের সক্ষমতা ইন্দোনেশিয়ার পিটি পুরার নেই। ইউরোপীয় কাগজ প্রস্তুতকারক তা জানে এবং জানে বলেই অনেক সময় প্রতিযোগিতামূলক দর নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। চীনকেও কাগজ-কালি সরবরাহে আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা হয়েছিল, চীন এগিয়ে এলে নোটের কাগজ-কালির দর আরও কমবে।

নোটের কাঁচামাল সরবরাহকারী সীমিত হওয়ায় নোটের উৎপাদন খরচ কমানো সম্ভব হয় না। নোটের কালি সরবরাহ করে জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডের মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান। কালি সরবরাহের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান হচ্ছে সুইজারল্যান্ডের ‘সিকপা’। এই প্রতিষ্ঠানটি বহু বছর ধরে পরিবর্তনশীল কালি ‘ওভিআই’ কোন টেন্ডার ছাড়াই সরবরাহ করে আসছে, এখন এই কালির পরিবর্তে নোটে ব্যবহৃত হচ্ছে ‘স্পার্ক’। নতুন ডিজাইনের উচ্চ মূল্যমানের চারটি নোটের ডানপাশের উপরে লিখিত সংখ্যায় লেখা মূল্যমানে এই কালির ব্যবহার হচ্ছে। এই কালির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নোট কাত করে আবার সোজা করলে কালির ছায়া ওঠানামা করে। তবে এই বৈশিষ্ট্যের আরও স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান দেখা যায় চীনের কিছু বাণিজ্যিক পণ্যে। চীনের সরকারি নোটমুদ্রণ ছাপাখানা থেকে স্পার্ক জাতীয় কালির মুদ্রিত নমুনা টাকশালকে সরবরাহ করা হয়েছিল। নোট মুদ্রণে যত খরচ হয় তার প্রায় আশি শতাংশ খরচ হয় ওভিআই বা স্পার্ক খাতে। একই মানসম্পন্ন স্পার্ক জাতীয় কালির উৎস অন্যত্র পাওয়া গেলে নোটের উৎপাদন খরচ অনেক কমে যাবে। তবে নোটে কাগজ-কালি ব্যবহারের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্যবহারকারী থেকে সনদের সংখ্যাধিক্য চাহিদা নতুন প্রস্তুতকারককে দরপত্রে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখে।

বাংলাদেশ একটি অদ্ভুত দেশ। এই দেশে সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির ইমেজ গড়তে দেয়া হয় না। ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, আমেরিকা প্রভৃতি দেশে সর্বজনগ্রাহ্য জাতির পিতা থাকলেও বাংলাদেশে নেই। পাকিস্তানে এখনো জাতির পিতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ছবিযুক্ত নোট মুদ্রণ করা হয়, ভারতের নোটে থাকে মহাত্মা গান্ধীর ছবি। আর বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সংযোজন করা হয়, আর ক্ষমতা হারানোর সঙ্গে সঙ্গে নোট থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সরানোর তোড়জোড় শুরু হয়। শুধু কী তাই! সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন স্থাপনার নাম পরিবর্তন শুরু হয়। প্রতিহিংসার এই রাজনীতির বলী হয় সরকারের কোষাগার, হাজার হাজার কোটি টাকার অপচয় হয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারও এই খেলার গতানুগতিকতায় মেতে ওঠেছে। এই সরকার শুধু নোটের ডিজাইন পরিবর্তন করছে না, পরিবর্তন করছে বিভিন্ন স্থাপনার নামও। তবে গণ-অভ্যুত্থানের পর নোটের ডিজাইনে পরিবর্তন আনা এই সরকারের জন্য জরুরি ছিল।

নয়টি মূল্যমানের নয়টি নোটের ডিজাইন চূড়ান্ত করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। নোটের প্রাথমিক ডিজাইন করা হয় টাকশালে। তারপর তার ওপর রংতুলি চালানো হয় ডিজাইন এডভাইজরি কমিটির একাধিক বৈঠকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে দেশের প্রখ্যাত আর্টিস্টদের নিয়ে গঠিত এই এডভাইজরি কমিটি। কিন্তু নোট ডিজাইনে দেশের আর্টিস্টদের সম্যক জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা একেবারেই নেই। তাই আমাদের নোটের ডিজাইনে খুব বেশি মানোন্নয়ন হচ্ছে না। আমাদের নোটের ডিজাইন অনেকটা ফ্ল্যাট, সাদামাটা, কোন বৈচিত্র্য নেই। যারা আর্টিস্ট তাদের নোটে নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সংযোজনের স্বাধীনতা ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই। অন্যদিকে নোটের ওরিজিনেশন করার সক্ষমতাও টাকশালের নেই, টেন্ডার করে এই ওরিজিনেশন বা প্লেট বিদেশ থেকে সংগ্রহ করতে হয় এবং তা সময় সাপেক্ষ। এই সক্ষমতা অর্জনে দেড় থেকে দুইশ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রয়োজন। এই বিনিয়োগ অপ্রয়োজনীয়, কারণ নোটের ডিজাইন পরিবর্তনের সঙ্গে সরকার পরিবর্তনের সম্পর্ক রয়েছে। ডিজাইন এবং তাৎক্ষণিক কিছু প্লেট বিদেশ থেকে সংগ্রহ করতে দশ কোটি টাকার বেশি খরচ হওয়ার কথা। কমপক্ষে পাঁচ বছর পার না হলে সরকারের পরিবর্তন হয় না, তাই এত বড় বিনিয়োগ করে তা লোকবলসহ পাঁচ বছর অলস বসিয়ে রাখা অর্থহীন।

নতুন নোটের জলছাপ হচ্ছে ‘বাঘের মাথা’। জলছাপ হিসেবে বাঘের মাথার ব্যবহার এক সময় নোটে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এই মাথা এত জটিল যে, এই মাথায় থ্রি ডি’র ইফেক্ট আনা সম্ভব হয় না। এছাড়াও নকল নোটে বাঘের মাথার ছায়া আনা সহজ। নকল নোটে বাঘের মাথার জলছাপের ছায়া থাকে বিধায় অনেকে বিভ্রান্ত হয়, নকল নোটকে আসল নোট মনে করে। এই সব কারণে বঙ্গবন্ধু সিরিজে জলছাপ হিসেবে বাঘের মাথার ব্যবহার বাদ দেয়া হয়েছিল, কিন্তু নতুন নোটে কেন তা আবার নির্বাচন করা হলো তা স্পষ্ট নয়।

নতুন ডিজাইনের যে তিনটি নোট ইস্যু করা হয়েছে তাদের কালারে কোন নতুনত্ব নেই, বঙ্গবন্ধু সিরিজের নোটগুলোর রং রেখে দেয়া হয়েছে, তবে হাল্কা করে। এক হাজার টাকার মূল্যমানের নোটে স্মৃতিসৌধের নিচের দিকে একটি দৃষ্টিকটু স্পট দেখা যায়, তা কি ডিজাইনের অংশ, না ওরিজিনেশনের ত্রুটি! বর্তমানে প্রবীণ এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের (অন্ধ নয়) জন্য সংখ্যায় লেখা একটি মূল্যমান বিভিন্ন দেশের নোটে বড় করে ছাপা হয়। যারা কালার ব্লাইন্ড তারা রং দেখে নোট শনাক্ত করতে পারে না, সংখ্যায় বড় করে লেখা মূল্যমান দেখে নোট চিনতে পারে। কিন্তু ইতোমধ্যে ইস্যুকৃত নোটগুলোতে এই অপরিহার্য বৈশিষ্ট্যটি পরিদৃষ্ট হয়নি। নতুন নোটগুলোকে লটারির টিকেট বলে অনেকে উপহাস করছে, তবে বিরোধী পক্ষের এমন উপহাস আগেও হয়েছে। ডিজাইন নিয়ে সবার ঐকমত্য আশা করা ঠিকও হবে না। নতুন নোটগুলোর ডিজাইন ও বৈশিষ্ট্যগুলো সংযোজন করে বিদ্যমান সফটওয়্যার হালনাগাদ করা না হলে এটিএম বুথ নতুন নোট চিনতে পারবে না। তাই এটিএম বুথে নতুন নোটের ব্যবহার করার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

ডিজাইনের সীমাবদ্ধতা কাটাতে প্রয়োজনে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেয়া যেতে পারে। মালদ্বীপে বর্তমানে প্রচলিত সবগুলো নোট ডিজাইন করে দিয়েছে একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান। প্রায় বারো বছর পূর্বে মালদ্বীপের নতুন ডিজাইনের নোট উদ্বোধনকালে আমার উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল। পলিমার সাবস্ট্রেটে নোটগুলোর ডিজাইন ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ ও সৌন্দর্যম-িত। বহু যুগব্যাপী মার্কিন ডলারের ডিজাইনে খুব বেশি পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। নয়টি নোটের মানসম্পন্ন ডিজাইন করে মুদ্রণ সম্পন্ন করতে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগে। আগস্ট মাসে নতুন নোট মুদ্রণের পরিকল্পনা গৃহীত হলে গভর্নর এবং অর্থ উপদেষ্টাকে এত উদ্বিগ্ন থাকতে হতো না। অন্যদিকে প্রয়োজনের তুলনায় কম সময়ের মধ্যে নোট মুদ্রণ করতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং টাকশালের সংশ্লিষ্ট কর্মীদের গলদঘর্ম হতে হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং টাকশালকে তাই অভিনন্দন।

[ লেখক : সাবেক নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক ]

back to top