কামরুজ্জামান
সমাজ-সংস্কৃতি পরিবর্তনের পালা বদলে গেছে আমাদের ভূ-প্রকৃতি ও জনপদ। বদলে গেছে জীবন ও প্রকৃতি। বদলে গেছে পরিবার কাঠামো, বদলে গেছে সমাজ ও সমাজের রীতিনীতি। এই পরিবর্তনের যে জায়গাটায় সবচেয়ে বেশি ভাঙনের ঢেউ লাগে তা হলো-একান্নবর্তী পরিবার।
একান্নবর্তী পরিবারÑপরিবার ও সমাজ কাঠামোর এক বিস্ময়কর সেতুবন্ধনের নাম। এখন আমাদের দেশে একান্নবর্তী পরিবার খুঁজে পাওয়া ভার। গ্রামে কিংবা শহরে কোথাও একান্নবর্তী পরিবার খুঁজে পাওয়া যায় না। একটা সময় গ্রামের সবাই একান্নবর্তী পরিবারেই বসবাস করত। এই পরিবারে দাদা-দাদি, চাচা-চাচি, ফুপু, জেঠা-জেঠি, বাবা-মা ও ভাইবোন একসঙ্গে বসবাস করত। এক পাতিলে রান্নাবান্না হতো, একসঙ্গে বসে খাওয়াদাওয়া হতো। একান্নবর্তী পরিবারে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে বেড়ে উঠত, একসঙ্গে খেলাধুলা করত, একসঙ্গে খাবার খেত।
নিত্য জীবনযাপনের সব কাজ একসঙ্গেই হতো। এমনকি পড়ালেখা এবং ঘুমও হতো একসঙ্গে। সব মিলে নিয়মতান্ত্রিক পরিম-লে একটা পরিবার সবাইকে নিয়ে সুখ-দুঃখে এগিয়ে যেত। হিংসা-বিদ্বেষ ছিল না, ছিল পরিবারের সদস্যদের পরস্পরের প্রতি স্নেহ, মায়া, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। ঝগড়া ছিল না, তবে বুকভরা অভিমান ছিল। সে অভিমান পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠরা বসে বুঝিয়ে মিটমাট করে দিতেন।
আজকের দিনে একান্নবর্তী পরিবার নেই। একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে হয়ে গেছে একক পরিবার। এখন প্রতিটি পরিবারে শুধু হিংসা-বিদ্বেষ আর স্বার্থপরতায় ভরপুর। ছেলেমেয়েরা হয়ে পড়েছে ঘরবন্দী। মেনে নেয়া, মানিয়ে নেয়া, শেয়ারিং এসব এখন কেতাবি ভাষা। আত্মীয়স্বজন ও বড়দের প্রতি আচরণ, ছোটদের প্রতি স্নেহ ও ভালোবাসা এবং পারিবারিক শিক্ষা ক্রমশ নিচের দিকেই নামছে। প্রতিটি একান্নবর্তী পরিবারে একজন করে কর্তা থাকতেন। তিনিই পরিচালনা করতেন সবকিছু। এখন সবাই পরিচালক, সবাই কর্তা। প্রতিটি সদস্য যার যার মতো।
একান্নবর্তী পরিবারের কর্তা থাকতেন একজন সিনিয়র সদস্য। খুব বেশি বয়োবৃদ্ধ না হলে পরিবারের কর্তার ভূমিকা পালন করতেন দাদা। দাদা না থাকলে বাবা অথবা চাচা। একটা সংসারে সুখ থাকবে দুঃখ থাকবে। চাওয়া থাকবে, পাওয়া থাকবে, থাকবে মানঅভিমান। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কেউ কাউকে মানবে না, সব সময় ঝগড়াবিবাদ থাকবে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শোষণ ও বৈষম্য থাকলে সমস্যা সৃষ্টি হবেই। আর বর্তমান সময়ে এসবই বেশি হচ্ছে। আর এসবের প্রভাবেই ভেঙে পড়েছে একান্নবর্তী পরিবার।
আগের একান্নবর্তী পরিবারগুলোতে গৃহস্থালি কাজের দেখাশোনা প্রাপ্তবয়স্ক সব সদস্যই মিলেমিশে করত। তবে কৃষি ফসল উৎপাদন থেকে শুরু করে হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশু পালন ও বিক্রি এবং প্রয়োজনীয় পণ্যের কেনাকাটা একজনের হাত দিয়েই করা হতো। কোন পণ্য নিজেদের ব্যবহারে লাগবে এবং কোনটা বিক্রি করা হবে আবার তরিতরকারি থেকে শুরু করে গৃহস্থালি কাজের প্রয়োজনীয় পণ্য কোনটা কিনতে হবে তা একজনের হাত দিয়েই কেনাকাটা করা হতো। এতে অর্থ সাশ্রয় হতো। বছর শেষে পরিবারের সঞ্চয় থাকত। এখন সময় পাল্টে গেছে। একক পরিবারের কোনোটিতে দুজনই চাকরি করে কিন্তু বছর শেষে সঞ্চয় তো দূরের কথা আরও ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এটা হয় অপরিকল্পিত ও যার যার মতো করে চলার কারণে।
যৌথ পরিবার কিংবা একান্নবর্তী পরিবারে ছেলেমেয়েরা একটা নিয়মের মধ্যে থেকে শিক্ষা লাভ করত। একান্নবর্তী পরিবারের ছেলেমেয়েদের পারিবারিক শিক্ষার ভিত অনেক শক্ত ছিল। একাডেমিক পড়ালেখাও পরিবারের কঠোর নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে থেকে করতে হয়েছে। এখন সময় পাল্টে গেছে। বাবা-মা সন্তানকে অতি আদর করার কারণে সন্তানদের পড়ালেখা করাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। আবার শিক্ষকদের শাসনও ভালো চোখে দেখে না। ফলে অনেক সন্তান বিপথগামী হচ্ছে, অনেকেই যাচ্ছে উচ্ছন্নে।
পরিবারে শিশু ও কিশোর বয়সেই আদব-কায়দা শিক্ষা দেয়া হতো শক্ত হাতে। বড়দের সালাম দেয়া, সম্মানের সঙ্গে কথা বলা ও ছোটদের করণীয় সম্পর্কে প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যদের কাছ থেকেই শেখা হতো। একান্নবর্তী পরিবারে এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় শিক্ষা। ছোটদের প্রতি শাসনের পাশাপাশি স্নেহ ও ভালোবাসাও থাকত ভরপুর।
পরিবারের সদস্যদের বিয়ে-শাদি করানোর ব্যাপারে একান্নবর্তী পরিবারের কর্তাব্যক্তির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত ছিল। পাত্রপাত্রী দেখা, দুটি পরিবারে একে অপরের সম্পর্কে ভালো-মন্দ বিস্তারিত তথ্য নেয়া ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা বিষয়গুলো তখন গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হতো। সব ঠিকঠাক হলেই বিয়ে-শাদি পড়ানো হতো। তখন জাত বংশ পদমর্যাদা আর্থিক যোগ্যতা এসব ভালোভাবে বিবেচনা করা হতো। এখন পারিবারিক বা আনুষ্ঠানিক বিয়ের চেয়ে লাভ ম্যারেজ বেশি হচ্ছে। আবার বিয়ে করেই আলাদা হয়ে যাচ্ছে। ফলে সংসারে অশান্তি, ডিভোর্স এগুলো বেড়েই চলেছে।
একান্নবর্তী পরিবারের সবচেয়ে হৃদ্যতার জায়গা ছিল- আত্মীয়স্বজনের আগমন এবং খুশি মনে আপ্যায়ন।
মেহমানদের আপ্যায়ন ও সেবা করাটা আনন্দের একটি কাজ বলে মনে করা হতো। বিশেষ করে ফুপু ও বোনদের আগমন ও বেড়ানোটা আমাদের পারিবারিক সংস্কৃতির একটি চিরায়ত ঐতিহ্য ছিল। আমাদের পরিবারে দেখেছি ফুপুদের গরুর গাড়ি করে নিয়ে আসা হতো। বেড়ানো শেষ হলে আবার গরুর গাড়ি করে পাঠানো হতো। আমরা ছোটরা বাড়িতে মেহমান থাকলে আনন্দে মেতে থাকতাম। কিন্তু বর্তমান সময়ে একক পরিবার গড়ে উঠায়, জীবনযাপন প্রণালি ও যোগাযোগ মাধ্যম পরিবর্তন হওয়ায় এই সংস্কৃতি দিন দিন কমছে। এখন চা-নাস্তা আর হাই-হ্যালোর মাধ্যমে মেহমান বিদায় করা হয়।
একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে একক পরিবার গড়ে উঠায় এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাব ও জীবনযাপনের কলাকৌশল পরিবর্তন হওয়ায় পারিবারিক সম্পর্ক দিন দিন শীতল হচ্ছে এটাই সত্যি।
যৌথ পরিবার কিংবা একান্নবর্তী পরিবার প্রথা হয়তো আর ফিরে আসবে না। কিন্তু পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্কটা অন্তত ধরে রাখা প্রয়োজন। কারণ-বাংলার পরিবার, সমাজ ও সংস্কৃতির এক বিস্ময়কর সেতুবন্ধন হচ্ছে-রক্তের সম্পর্কের মানুষগুলোর পারস্পরিক মায়া ও ভালোবাসা। অন্তত এই মায়া এবং ভালোবাসাটা ধরে রাখা খুব প্রয়োজন।
[ লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা কলেজ, গাজীপুর ]
কামরুজ্জামান
বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫
সমাজ-সংস্কৃতি পরিবর্তনের পালা বদলে গেছে আমাদের ভূ-প্রকৃতি ও জনপদ। বদলে গেছে জীবন ও প্রকৃতি। বদলে গেছে পরিবার কাঠামো, বদলে গেছে সমাজ ও সমাজের রীতিনীতি। এই পরিবর্তনের যে জায়গাটায় সবচেয়ে বেশি ভাঙনের ঢেউ লাগে তা হলো-একান্নবর্তী পরিবার।
একান্নবর্তী পরিবারÑপরিবার ও সমাজ কাঠামোর এক বিস্ময়কর সেতুবন্ধনের নাম। এখন আমাদের দেশে একান্নবর্তী পরিবার খুঁজে পাওয়া ভার। গ্রামে কিংবা শহরে কোথাও একান্নবর্তী পরিবার খুঁজে পাওয়া যায় না। একটা সময় গ্রামের সবাই একান্নবর্তী পরিবারেই বসবাস করত। এই পরিবারে দাদা-দাদি, চাচা-চাচি, ফুপু, জেঠা-জেঠি, বাবা-মা ও ভাইবোন একসঙ্গে বসবাস করত। এক পাতিলে রান্নাবান্না হতো, একসঙ্গে বসে খাওয়াদাওয়া হতো। একান্নবর্তী পরিবারে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে বেড়ে উঠত, একসঙ্গে খেলাধুলা করত, একসঙ্গে খাবার খেত।
নিত্য জীবনযাপনের সব কাজ একসঙ্গেই হতো। এমনকি পড়ালেখা এবং ঘুমও হতো একসঙ্গে। সব মিলে নিয়মতান্ত্রিক পরিম-লে একটা পরিবার সবাইকে নিয়ে সুখ-দুঃখে এগিয়ে যেত। হিংসা-বিদ্বেষ ছিল না, ছিল পরিবারের সদস্যদের পরস্পরের প্রতি স্নেহ, মায়া, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। ঝগড়া ছিল না, তবে বুকভরা অভিমান ছিল। সে অভিমান পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠরা বসে বুঝিয়ে মিটমাট করে দিতেন।
আজকের দিনে একান্নবর্তী পরিবার নেই। একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে হয়ে গেছে একক পরিবার। এখন প্রতিটি পরিবারে শুধু হিংসা-বিদ্বেষ আর স্বার্থপরতায় ভরপুর। ছেলেমেয়েরা হয়ে পড়েছে ঘরবন্দী। মেনে নেয়া, মানিয়ে নেয়া, শেয়ারিং এসব এখন কেতাবি ভাষা। আত্মীয়স্বজন ও বড়দের প্রতি আচরণ, ছোটদের প্রতি স্নেহ ও ভালোবাসা এবং পারিবারিক শিক্ষা ক্রমশ নিচের দিকেই নামছে। প্রতিটি একান্নবর্তী পরিবারে একজন করে কর্তা থাকতেন। তিনিই পরিচালনা করতেন সবকিছু। এখন সবাই পরিচালক, সবাই কর্তা। প্রতিটি সদস্য যার যার মতো।
একান্নবর্তী পরিবারের কর্তা থাকতেন একজন সিনিয়র সদস্য। খুব বেশি বয়োবৃদ্ধ না হলে পরিবারের কর্তার ভূমিকা পালন করতেন দাদা। দাদা না থাকলে বাবা অথবা চাচা। একটা সংসারে সুখ থাকবে দুঃখ থাকবে। চাওয়া থাকবে, পাওয়া থাকবে, থাকবে মানঅভিমান। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কেউ কাউকে মানবে না, সব সময় ঝগড়াবিবাদ থাকবে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শোষণ ও বৈষম্য থাকলে সমস্যা সৃষ্টি হবেই। আর বর্তমান সময়ে এসবই বেশি হচ্ছে। আর এসবের প্রভাবেই ভেঙে পড়েছে একান্নবর্তী পরিবার।
আগের একান্নবর্তী পরিবারগুলোতে গৃহস্থালি কাজের দেখাশোনা প্রাপ্তবয়স্ক সব সদস্যই মিলেমিশে করত। তবে কৃষি ফসল উৎপাদন থেকে শুরু করে হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশু পালন ও বিক্রি এবং প্রয়োজনীয় পণ্যের কেনাকাটা একজনের হাত দিয়েই করা হতো। কোন পণ্য নিজেদের ব্যবহারে লাগবে এবং কোনটা বিক্রি করা হবে আবার তরিতরকারি থেকে শুরু করে গৃহস্থালি কাজের প্রয়োজনীয় পণ্য কোনটা কিনতে হবে তা একজনের হাত দিয়েই কেনাকাটা করা হতো। এতে অর্থ সাশ্রয় হতো। বছর শেষে পরিবারের সঞ্চয় থাকত। এখন সময় পাল্টে গেছে। একক পরিবারের কোনোটিতে দুজনই চাকরি করে কিন্তু বছর শেষে সঞ্চয় তো দূরের কথা আরও ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এটা হয় অপরিকল্পিত ও যার যার মতো করে চলার কারণে।
যৌথ পরিবার কিংবা একান্নবর্তী পরিবারে ছেলেমেয়েরা একটা নিয়মের মধ্যে থেকে শিক্ষা লাভ করত। একান্নবর্তী পরিবারের ছেলেমেয়েদের পারিবারিক শিক্ষার ভিত অনেক শক্ত ছিল। একাডেমিক পড়ালেখাও পরিবারের কঠোর নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে থেকে করতে হয়েছে। এখন সময় পাল্টে গেছে। বাবা-মা সন্তানকে অতি আদর করার কারণে সন্তানদের পড়ালেখা করাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। আবার শিক্ষকদের শাসনও ভালো চোখে দেখে না। ফলে অনেক সন্তান বিপথগামী হচ্ছে, অনেকেই যাচ্ছে উচ্ছন্নে।
পরিবারে শিশু ও কিশোর বয়সেই আদব-কায়দা শিক্ষা দেয়া হতো শক্ত হাতে। বড়দের সালাম দেয়া, সম্মানের সঙ্গে কথা বলা ও ছোটদের করণীয় সম্পর্কে প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যদের কাছ থেকেই শেখা হতো। একান্নবর্তী পরিবারে এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় শিক্ষা। ছোটদের প্রতি শাসনের পাশাপাশি স্নেহ ও ভালোবাসাও থাকত ভরপুর।
পরিবারের সদস্যদের বিয়ে-শাদি করানোর ব্যাপারে একান্নবর্তী পরিবারের কর্তাব্যক্তির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত ছিল। পাত্রপাত্রী দেখা, দুটি পরিবারে একে অপরের সম্পর্কে ভালো-মন্দ বিস্তারিত তথ্য নেয়া ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা বিষয়গুলো তখন গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হতো। সব ঠিকঠাক হলেই বিয়ে-শাদি পড়ানো হতো। তখন জাত বংশ পদমর্যাদা আর্থিক যোগ্যতা এসব ভালোভাবে বিবেচনা করা হতো। এখন পারিবারিক বা আনুষ্ঠানিক বিয়ের চেয়ে লাভ ম্যারেজ বেশি হচ্ছে। আবার বিয়ে করেই আলাদা হয়ে যাচ্ছে। ফলে সংসারে অশান্তি, ডিভোর্স এগুলো বেড়েই চলেছে।
একান্নবর্তী পরিবারের সবচেয়ে হৃদ্যতার জায়গা ছিল- আত্মীয়স্বজনের আগমন এবং খুশি মনে আপ্যায়ন।
মেহমানদের আপ্যায়ন ও সেবা করাটা আনন্দের একটি কাজ বলে মনে করা হতো। বিশেষ করে ফুপু ও বোনদের আগমন ও বেড়ানোটা আমাদের পারিবারিক সংস্কৃতির একটি চিরায়ত ঐতিহ্য ছিল। আমাদের পরিবারে দেখেছি ফুপুদের গরুর গাড়ি করে নিয়ে আসা হতো। বেড়ানো শেষ হলে আবার গরুর গাড়ি করে পাঠানো হতো। আমরা ছোটরা বাড়িতে মেহমান থাকলে আনন্দে মেতে থাকতাম। কিন্তু বর্তমান সময়ে একক পরিবার গড়ে উঠায়, জীবনযাপন প্রণালি ও যোগাযোগ মাধ্যম পরিবর্তন হওয়ায় এই সংস্কৃতি দিন দিন কমছে। এখন চা-নাস্তা আর হাই-হ্যালোর মাধ্যমে মেহমান বিদায় করা হয়।
একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে একক পরিবার গড়ে উঠায় এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাব ও জীবনযাপনের কলাকৌশল পরিবর্তন হওয়ায় পারিবারিক সম্পর্ক দিন দিন শীতল হচ্ছে এটাই সত্যি।
যৌথ পরিবার কিংবা একান্নবর্তী পরিবার প্রথা হয়তো আর ফিরে আসবে না। কিন্তু পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্কটা অন্তত ধরে রাখা প্রয়োজন। কারণ-বাংলার পরিবার, সমাজ ও সংস্কৃতির এক বিস্ময়কর সেতুবন্ধন হচ্ছে-রক্তের সম্পর্কের মানুষগুলোর পারস্পরিক মায়া ও ভালোবাসা। অন্তত এই মায়া এবং ভালোবাসাটা ধরে রাখা খুব প্রয়োজন।
[ লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা কলেজ, গাজীপুর ]