জাঁ-নেসার ওসমান
“বাহ দারুন দ্যেখাইলেন, নির্বাচনের আগে কোপা আমেরিকার মতো. কোপা চাটিগাঁ ফুটবল টুর্নামেন্ট ছাড়তাছেন! দারুণ দারুণ, পাবলিকে নির্বাচনের আগে একটু আমোদ-ফুর্তি লয়া বিজি থাকপে, এই ফাঁেক নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন কইরালাইবেন, দারুণ বুদ্ধি খাটাইছেন! সাধু সাধু।”
“আরে বুড়বক, এই কোপা সেই কোপা নয়রে এইকোপা জোরবা গ্রামের...”
“ও ও বুজছি বুজছি,“নিকোস কাজানসাকিসের লেখা জোরবা দ্যা গ্রিক, উপন্যাসে মানুষের নৈতিকতা নিয়া যে কথা বোলছে, হেইরকম নৈতিকতা শুদ্ধ নির্বাচন কোরবেন। হেইডা তো ভালো কথা...”
“ধুৎ স্ত্রীর ছোট ভ্রাতা, কথা শেষ করতে দেয় না। আমি বলছিলাম কোপা আমেরিকার মতো এটা কোনো সকার টুর্নামেন্ট না, এটা হলো এই যে কদিন আগে রাত এগারোটার পর জোরবা গ্রামের এক তরুণী ভাড়াটিয়া, ভাড়া বাসায় প্রবেশ করতে গেলে দারোয়ান ভাই তাকে ঘুষি মারাতে গ্রামবাসী ও ছাত্রদের মাঝে প্রচ- কোপাকুপির কা- ঘটে, আমি সে কথা বোলছিলাম।”
“কী কন এই রাত এগারোটার পর ভাড়াটিয়ার গৃহ প্রবেশ লইয়া গ্রামবাসী বনাম ছাত্রগো... না না বিষয়টা ভালা না!’
“কোপা-কুপি কখনোই ভালা না!”
“কিন্তু রাইতে গৃহে ফিরছে একজন, গৃহের দারোয়ানও একজন, তয় পুরা গ্রামবাসী বনাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোপাকুপি খেলা, ব্যাপারটা ক্যামোন ঘোলাটে লাগছে গুরু?”
“তোর তো, বামাদিগের মতো স্বভাব, সব কিছুতেই ঘোলাটে দেখিস, ইট দিয়ে মাথা থেঁৎলে হত্যা তুই বললি, বিশেষ কোনো রাজনৈতিক নেতাদের হেয় করার চেষ্টা। লাইব্রেরি থেকে ছেলেরা বিগত স্বৈরাচারের সময় প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বিশ্বজ্ঞানকোষ, গীতাঞ্জলী, বিষের বাঁশি এসব বই পোড়ালো, তুই বললি ওই বিশেষ কোনো রাজনৈতিক নেতাদের হেয় করার চেষ্টা, আবার উপদেষ্টা বানাবো বলে দুই’শ কোটি টাকার অগ্রিম চেক কালেকশন, তুই বললি বিশেষ কোনো রাজনৈতিক নেতাদের হেয় করার চেষ্টা, এখন এই কোপা চাটিগাঁতে আবার কী ঘোলাটে দেখছিস তুইই জানিস!”
“আন্নে দেখি ফিডারে দুধ খাওনের পোলার ন্যায় ওঁয়া উঁয়া কোরতাছেন, মিয়া দ্যেখেন নাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রগো নির্বাচন, হোইবো? হোইবো না? এই লয়াই কতো ক্যাচাল। প্রশাসকরা পেরেশান, আর এহানে তো বাঙালি হয়া নিরস্ত্র বাঙালিরে কোপানো জঘইন্যো। আন্নে বুঝেন না, এইসব কিয়ের আলামত?”
“কিয়ের আলামত? নির্বাচন...”
“আরে নির্বাচনের তো মাস ঘোষণা হোইছে, এই নিয়া কুনোই কতা নাই। কিন্তু আমি কোই কী, ঘোলা পানিতে মাছ শিকার মানে বুঝেন?”
“বাহ এখানে বাঙালি বাঙালি নিজেরা নিজেরা মারামারি কোরে নিরস্ত্র এক ছাত্রকে প্রায় তারই বয়েসী আর এক বাঙালি ছেলে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে জখম কোরছে, দোতলা থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিচ্ছে এই বর্বরতা বিগত শত বছরেও কেউ দেখেনি! এর মাঝে তুই মাছ কোথায় পাচ্ছিস যে শিকার করবি?”
“আরে ভাইডি, এই মাছ আক্ষরিক মাছ না, এই মাছ হোইলো সমাজে গন্ডগোল বাজায়া দিয়া, নির্বাচনের সময় পাবলিকের উপস্থিতি কম হোইবো, আর এই ফাঁকে কে কোন দিক দিয়া নির্বাচনের বৈতরণী পার করবো কে জানে!”
“তুই তাহলে এই সকল অসংগতিকে কেবল নির্বাচনের ঘোট পাকানোর পাঁয়তারা বোলে চিহ্নিত কোরছিস? নির্বাচন হোয়ে গেলে আর কখোনোই বাঙালি বাঙালি মারামারি কোরবে না, নির্বাচনের পর গ্রামবাসী ও ছাত্রদের মাঝে কোপাকুপি বন্ধ!”
“নিচ্ছয়। দেইখেন যেই মুহুর্তে নির্বাচন হোইছে আর নির্বাচিত সরকার প্রশাসনে বোইছে, লগে লগে সাদা পাত্থর, বাঙালি কাঙালি মাইরপিট, বিনা বিচারে নারীর উপর অত্যাচারীর খোলা আকাশে ঘুইরা ব্যেড়ান, সব জাদুর মতো গায়েব। ”
“মানে কি রে, তুই তো দেখি আলাদীনের জাদুই চ্যেরাগের মতো এক নিমিষেই বাংলার গত পঞ্চাশ বছরের পাপ এক নির্বাচনেই খতম করবি?”
“জাদুর চ্যেরাগ কন আর যাই কন, এইসব মব ভায়োলেন্স, জুতার মালা গলায় দিয়া শ্বশুর বাড়ি যাই, এই সব বন্দ হোইবো? কন ক্যান?”
“কোইলাম, তুই ক, ক্যান?”
“কারণ সিম্পেল, পাবলিকে দেখছে এইবার যারা প্রশাসনে আইবো হ্যেরা যদি চুদুরবুদুর করে তয় পাবলিকে, ঘর-বাড়ির চৌকাঠ পর্যন্ত খুইল্লা লয়া যাইবো। দেহেন নাই ইন্দোনেশিয়ায় পুলিশের গাড়ির লগে বাড়ি খায়া এক পাবলিক মারা গ্যেছে, ব্যাস লগে লগে হাজার হাজার পাবলিকে প্রতিবাদ কোইরা প্রশােিনর বারোটা বাজাইছে। এইসব দ্যেইখা আমাগো পাবলিকেভী ভালা হয়া যাইবো। চাই শুধু এক নির্বাচন।”
“তোর মুখে ঘি-র্শকরা, তোর কথাই যেন সত্য হয়। চল তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবাই স্বচেষ্ট হই।”
“আলবৎ, সবাই মিলে চেষ্টা করলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবেই হবে।”
“তোর সাথে আম-জনতার প্রতিনিধি হয়ে আমিও বলতে চাই, সবাই মিলে চেষ্টা করলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবেই হবে।”
[লেখক: চলচ্চিত্রকার]
জাঁ-নেসার ওসমান
বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
“বাহ দারুন দ্যেখাইলেন, নির্বাচনের আগে কোপা আমেরিকার মতো. কোপা চাটিগাঁ ফুটবল টুর্নামেন্ট ছাড়তাছেন! দারুণ দারুণ, পাবলিকে নির্বাচনের আগে একটু আমোদ-ফুর্তি লয়া বিজি থাকপে, এই ফাঁেক নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন কইরালাইবেন, দারুণ বুদ্ধি খাটাইছেন! সাধু সাধু।”
“আরে বুড়বক, এই কোপা সেই কোপা নয়রে এইকোপা জোরবা গ্রামের...”
“ও ও বুজছি বুজছি,“নিকোস কাজানসাকিসের লেখা জোরবা দ্যা গ্রিক, উপন্যাসে মানুষের নৈতিকতা নিয়া যে কথা বোলছে, হেইরকম নৈতিকতা শুদ্ধ নির্বাচন কোরবেন। হেইডা তো ভালো কথা...”
“ধুৎ স্ত্রীর ছোট ভ্রাতা, কথা শেষ করতে দেয় না। আমি বলছিলাম কোপা আমেরিকার মতো এটা কোনো সকার টুর্নামেন্ট না, এটা হলো এই যে কদিন আগে রাত এগারোটার পর জোরবা গ্রামের এক তরুণী ভাড়াটিয়া, ভাড়া বাসায় প্রবেশ করতে গেলে দারোয়ান ভাই তাকে ঘুষি মারাতে গ্রামবাসী ও ছাত্রদের মাঝে প্রচ- কোপাকুপির কা- ঘটে, আমি সে কথা বোলছিলাম।”
“কী কন এই রাত এগারোটার পর ভাড়াটিয়ার গৃহ প্রবেশ লইয়া গ্রামবাসী বনাম ছাত্রগো... না না বিষয়টা ভালা না!’
“কোপা-কুপি কখনোই ভালা না!”
“কিন্তু রাইতে গৃহে ফিরছে একজন, গৃহের দারোয়ানও একজন, তয় পুরা গ্রামবাসী বনাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোপাকুপি খেলা, ব্যাপারটা ক্যামোন ঘোলাটে লাগছে গুরু?”
“তোর তো, বামাদিগের মতো স্বভাব, সব কিছুতেই ঘোলাটে দেখিস, ইট দিয়ে মাথা থেঁৎলে হত্যা তুই বললি, বিশেষ কোনো রাজনৈতিক নেতাদের হেয় করার চেষ্টা। লাইব্রেরি থেকে ছেলেরা বিগত স্বৈরাচারের সময় প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বিশ্বজ্ঞানকোষ, গীতাঞ্জলী, বিষের বাঁশি এসব বই পোড়ালো, তুই বললি ওই বিশেষ কোনো রাজনৈতিক নেতাদের হেয় করার চেষ্টা, আবার উপদেষ্টা বানাবো বলে দুই’শ কোটি টাকার অগ্রিম চেক কালেকশন, তুই বললি বিশেষ কোনো রাজনৈতিক নেতাদের হেয় করার চেষ্টা, এখন এই কোপা চাটিগাঁতে আবার কী ঘোলাটে দেখছিস তুইই জানিস!”
“আন্নে দেখি ফিডারে দুধ খাওনের পোলার ন্যায় ওঁয়া উঁয়া কোরতাছেন, মিয়া দ্যেখেন নাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রগো নির্বাচন, হোইবো? হোইবো না? এই লয়াই কতো ক্যাচাল। প্রশাসকরা পেরেশান, আর এহানে তো বাঙালি হয়া নিরস্ত্র বাঙালিরে কোপানো জঘইন্যো। আন্নে বুঝেন না, এইসব কিয়ের আলামত?”
“কিয়ের আলামত? নির্বাচন...”
“আরে নির্বাচনের তো মাস ঘোষণা হোইছে, এই নিয়া কুনোই কতা নাই। কিন্তু আমি কোই কী, ঘোলা পানিতে মাছ শিকার মানে বুঝেন?”
“বাহ এখানে বাঙালি বাঙালি নিজেরা নিজেরা মারামারি কোরে নিরস্ত্র এক ছাত্রকে প্রায় তারই বয়েসী আর এক বাঙালি ছেলে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে জখম কোরছে, দোতলা থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিচ্ছে এই বর্বরতা বিগত শত বছরেও কেউ দেখেনি! এর মাঝে তুই মাছ কোথায় পাচ্ছিস যে শিকার করবি?”
“আরে ভাইডি, এই মাছ আক্ষরিক মাছ না, এই মাছ হোইলো সমাজে গন্ডগোল বাজায়া দিয়া, নির্বাচনের সময় পাবলিকের উপস্থিতি কম হোইবো, আর এই ফাঁকে কে কোন দিক দিয়া নির্বাচনের বৈতরণী পার করবো কে জানে!”
“তুই তাহলে এই সকল অসংগতিকে কেবল নির্বাচনের ঘোট পাকানোর পাঁয়তারা বোলে চিহ্নিত কোরছিস? নির্বাচন হোয়ে গেলে আর কখোনোই বাঙালি বাঙালি মারামারি কোরবে না, নির্বাচনের পর গ্রামবাসী ও ছাত্রদের মাঝে কোপাকুপি বন্ধ!”
“নিচ্ছয়। দেইখেন যেই মুহুর্তে নির্বাচন হোইছে আর নির্বাচিত সরকার প্রশাসনে বোইছে, লগে লগে সাদা পাত্থর, বাঙালি কাঙালি মাইরপিট, বিনা বিচারে নারীর উপর অত্যাচারীর খোলা আকাশে ঘুইরা ব্যেড়ান, সব জাদুর মতো গায়েব। ”
“মানে কি রে, তুই তো দেখি আলাদীনের জাদুই চ্যেরাগের মতো এক নিমিষেই বাংলার গত পঞ্চাশ বছরের পাপ এক নির্বাচনেই খতম করবি?”
“জাদুর চ্যেরাগ কন আর যাই কন, এইসব মব ভায়োলেন্স, জুতার মালা গলায় দিয়া শ্বশুর বাড়ি যাই, এই সব বন্দ হোইবো? কন ক্যান?”
“কোইলাম, তুই ক, ক্যান?”
“কারণ সিম্পেল, পাবলিকে দেখছে এইবার যারা প্রশাসনে আইবো হ্যেরা যদি চুদুরবুদুর করে তয় পাবলিকে, ঘর-বাড়ির চৌকাঠ পর্যন্ত খুইল্লা লয়া যাইবো। দেহেন নাই ইন্দোনেশিয়ায় পুলিশের গাড়ির লগে বাড়ি খায়া এক পাবলিক মারা গ্যেছে, ব্যাস লগে লগে হাজার হাজার পাবলিকে প্রতিবাদ কোইরা প্রশােিনর বারোটা বাজাইছে। এইসব দ্যেইখা আমাগো পাবলিকেভী ভালা হয়া যাইবো। চাই শুধু এক নির্বাচন।”
“তোর মুখে ঘি-র্শকরা, তোর কথাই যেন সত্য হয়। চল তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবাই স্বচেষ্ট হই।”
“আলবৎ, সবাই মিলে চেষ্টা করলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবেই হবে।”
“তোর সাথে আম-জনতার প্রতিনিধি হয়ে আমিও বলতে চাই, সবাই মিলে চেষ্টা করলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবেই হবে।”
[লেখক: চলচ্চিত্রকার]