রেজাউল করিম খোকন
স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে আগামী বছরই উত্তরণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ১৩ মার্চ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে সিদ্ধান্ত হয়, ২০২৬ সালে ২৪ নভেম্বর নির্ধারিত সময়েই বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ হবে। ব্যবসায়ীরা এলডিসি উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার দাবি করছেন। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্ত হচ্ছে আগামী বছরের ২৪ নভেম্বর জাতিসংঘ নির্ধারিত সময়ে এলডিসি থেকে বের হবে বাংলাদেশ। এলডিসি উত্তরণ মসৃণ করতে একটি কমিটি কাজও করছে
নির্ধারিত সময়ে এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা এবং অন্যান্য দিক থেকে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে, এটা অস্বীকার করা যায় না। তবে যেহেতু বাংলাদেশ বাড়তি সময়ের অনুরোধ করতে পারে, প্রয়োজনে সরকার জাতিসংঘের কাছে উত্তরণ প্রক্রিয়া পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করতে পারে। অবশ্য, জাতিসংঘ সেই আবেদন গ্রহণও করতে পারে, আবার নাও করতে পারে। তাই আমাদের শক্তিশালী যুক্তি দাঁড় করাতে হবে।
বিভিন্ন সূচকে হয়তো যথেষ্ট দৃঢ় যুক্তি উপস্থাপন করা সম্ভব হবে না। তবে বৈশ্বিক বাণিজ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের পাল্টা শুল্কনীতি কিংবা দেশের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনসহ অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কারণকে সামনে এনে যুক্তি তুলে ধরা যেতে পারে।
এলডিসি থেকে বের হলে সবচেয়ে বেশি চাপে পড়বে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত। শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা উঠে যাবে, ফলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর নিয়মিত হারে শুল্ক আরোপ করা হবে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বাড়তি শুল্কের কারণে বছরে প্রায় ৫৩৭ কোটি ডলার, অর্থাৎ সাড়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকার মতো রপ্তানি কমে যেতে পারে।
বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে ওষুধশিল্পও। এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে এ খাতে মেধাস্বত্ব (পেটেন্ট) সংক্রান্ত বিধিবিধান আরও কড়াকড়িভাবে কার্যকর হবে। বর্তমানে এলডিসি মর্যাদার কারণে বাংলাদেশি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন ওষুধ উদ্ভাবনকারী প্রতিষ্ঠানকে মেধাস্বত্বের জন্য অর্থ প্রদান করতে হয় না। কিন্তু উত্তরণের পর এ অর্থ দিতে হলে অনেক ওষুধের দাম বেড়ে যাবে, যা সাধারণ নাগরিকদের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। এ কারণে এলডিসি মর্যাদায় বাংলাদেশ ওষুধশিল্প সবচেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করেছে। ইতোমধ্যে এ খাত একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে, এলডিসি থেকে বের হয়ে গেলে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর কাছ থেকে সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার সুযোগ সীমিত হবে। যদিও বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)সহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে সহজ ও কঠিন শর্তের ঋণ নেওয়া শুরু করেছে। পাশাপাশি নগদ সহায়তা, ভর্তুকি ও করছাড়ের ক্ষেত্রে আরও কড়াকড়ি আরোপিত হতে পারে। কৃষি, শিল্প, রেমিট্যান্সসহ বিভিন্ন খাতে এ ধরনের সহায়তা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
তবে এলডিসি থেকে উত্তরণের ইতিবাচক দিকও রয়েছে। বাংলাদেশকে পূর্ণাঙ্গ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হবে, যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রতিফলন। বাড়তি সক্ষমতার কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে তুলনামূলক বেশি সুদে হলেও বড় অঙ্কের ঋণ নিতে পারবে। একই সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হওয়ার সুযোগও বাড়বে। তবে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে অনুকূল বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরি করাই হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।
স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের নির্ধারিত সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা। তাঁদের মতে, এই মুহূর্তে এলডিসি থেকে বের হলে রপ্তানি খাতসহ নানা খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। সম্প্রতি এক সেমিনারে ব্যবসায়ীরা এ দাবি জানান। তাদের বক্তব্যের পর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। এখন প্রশ্ন উঠেছেÑএলডিসি থেকে উত্তরণের সময় পেছানো কতটা যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত? সরকারের পক্ষে সময় বৃদ্ধির আবেদন করার মতো যথেষ্ট কারণ আছে কি? সরকার চাইলে কি সহজে সময় পেছাতে পারবে?
জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আট বছরের প্রস্তুতিমূলক প্রক্রিয়া ও একাধিক মূল্যায়ন শেষে ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তীর্ণ হবে। অর্থাৎ হাতে আছে মাত্র ১৫ মাসের কিছু বেশি সময়। এই পর্যায়ে এসে উত্তরণের সময় পিছিয়ে দেওয়ার দাবি উঠেছে। উল্লেখ্য, এলডিসি থেকে কোন দেশ বের হবে তা সুপারিশ করে জাতিসংঘের উন্নয়ন নীতি কমিটি (সিডিপি)। এ জন্য প্রতি তিন বছর অন্তর এলডিসিগুলোর ত্রিবার্ষিক মূল্যায়ন করা হয়। মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতাÑএই তিন সূচকের ভিত্তিতে উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়। যেকোনো দুটি সূচকে উত্তীর্ণ হতে হয়, অথবা মাথাপিছু আয় নির্দিষ্ট সীমার দ্বিগুণ হতে হয়। সময়ের সঙ্গে এসব মানদ-ও পরিবর্তিত হয়।
বাংলাদেশ ২০১৮ ও ২০২১ সালের ত্রিবার্ষিক মূল্যায়নে তিনটি সূচকেই উত্তীর্ণ হয়। ২০২১ সালেই বাংলাদেশকে ২০২৪ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করা হয়।
গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থান ঘটে। এরপর অর্থনীতিতে কিছু সংস্কার হয়। এক বছরে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাংক খাতেও কিছু সংস্কার হয়েছে, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মূল্যস্ফীতি কমেছে। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা দাবি করছেন, দেশের অর্থনীতি আগের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। ফলে প্রশ্ন উঠছেÑএ অবস্থায় বাংলাদেশ সময় পেছাতে চাইলে কী যুক্তি দেখাবে? তবে এখনও দুর্বলতা রয়ে গেছে দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তোলা, রাজস্ব খাতের সংস্কার, বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন এবং সামাজিক খাত শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে।
রপ্তানিমুখী পোশাক ও ওষুধ শিল্পসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা এলডিসি থেকে উত্তরণ ৩ থেকে ৬ বছর পিছিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছেন। ব্যবসায়ীদের মতে, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের পণ্যের রপ্তানিতে গড়ে ১২ শতাংশ শুল্ক আরোপ হতে পারে। যদি জিএসপিসহ অন্যান্য বাণিজ্য সুবিধা নিশ্চিত করা না যায়, তাহলে রপ্তানি ৬ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। তাঁদের দাবি, উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় অনুকূল অর্থনৈতিক বাস্তবতা বাংলাদেশে এখনও তৈরি হয়নি।
এলডিসি থেকে উত্তরণের পথে বাংলাদেশের অন্যতম বড় বাধা হলো বিদ্যুৎ ও গ্যাসসংকট। নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ না থাকলে তৈরি পোশাক, বস্ত্র ও ওষুধশিল্পের মতো প্রধান খাতগুলো বৈশ্বিক বাজারের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হবে। এতে উত্তরণের ঝুঁকি আরও বাড়বে।
অন্যদিকে, বৈশ্বিক সুদের হার বেড়েছে, দেশের অভ্যন্তরে খেলাপি ঋণও বাড়ছে। এতে ঋণপ্রবাহ কমছে, বিদেশি বিনিয়োগও হ্রাস পাচ্ছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত পাল্টা শুল্ক রপ্তানি খাতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেছে। এর সঙ্গে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাবও বাংলাদেশের জন্য নতুন ঝুঁকি তৈরি করছে।
এ অবস্থায় বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকট সমাধান, অবকাঠামো ও সরবরাহ শৃঙ্খল উন্নয়ন, ব্যবসার খরচ কমানো, রপ্তানি খাতকে বৈচিত্র্যময় করা, স্মার্ট কূটনীতির মাধ্যমে বাজার ধরে রাখা, আর্থিক খাতের সংস্কার এবং বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার মতো প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। এসব বাস্তবায়নের জন্য অন্তত পাঁচ বছর সময় বাড়ানো জরুরি। যদি এলডিসি উত্তরণের সময় ২০৩২ সাল পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া যায়, তবে সরকার ও বেসরকারি খাত উভয়েই যথাযথ প্রস্তুতি নিতে পারবে। এতে বাংলাদেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনকে চ্যালেঞ্জ নয়, বরং বড় সুযোগে রূপান্তর করতে সক্ষম হবে। কিন্তু অপ্রস্তুত অবস্থায় বা অকাল উত্তরণ হলে নানা সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ ইতিমধ্যে এলডিসি উত্তরণের বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও আগের ধারাবাহিকতায় প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছিল। তবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো, নির্ধারিত সময়ের বদলে আরও কিছুটা সময় পেলে দেশটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারত। এর আগেও বেশ কয়েকটি দেশের এলডিসি উত্তরণের সময় পিছিয়েছে। কোনো কোনো দেশ নিজ উদ্যোগে আবেদন করেছে, আবার কখনো জাতিসংঘ নিজেই বিশেষ পরিস্থিতির কারণে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়Ñমিয়ানমারের উত্তরণ জাতিসংঘ নিজেই পিছিয়ে দেয়। গৃহযুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ দেখিয়ে ২০২৩ সালে সলোমন দ্বীপপুঞ্জ উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করে। সিডিপি মূল্যায়নের পর দেশটির উত্তরণের সময় তিন বছর বাড়িয়ে ২০২৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়। আফ্রিকার দেশ অ্যাঙ্গোলা তেলের দাম কমে যাওয়ায় অর্থনীতি ও সামাজিক খাতের সূচকগুলো ভেঙে পড়ে। তাই তারা সরাসরি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আবেদন করে এবং পর্তুগালের সহায়তায় অতিরিক্ত সময় পায়।
অন্যদিকে, মিয়ানমার স্বেচ্ছায় এলডিসি থেকে বের হতে চাইলেও সিডিপি তা অনুমোদন দেয়নি। চার বছর আগে দেশটি নিয়ে পর্যালোচনার মাত্র দুই সপ্তাহ আগে সেখানে সামরিক অভ্যুত্থান হয়, যা রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে। এ কারণে সিডিপি দেশটির উত্তরণ ২০২৭ সাল পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়। একইভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মালদ্বীপ ও নেপালেরও নির্ধারিত সময়ে এলডিসি উত্তরণ সম্ভব হয়নিÑমালদ্বীপে সুনামি আর নেপালে ভূমিকম্পের কারণে।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে প্রথমবার এলডিসি তালিকা তৈরি করা হয়। এখন পর্যন্ত মোট আটটি দেশ এই তালিকা থেকে উত্তীর্ণ হয়েছে। দেশগুলো হলোÑভুটান, বতসোয়ানা, কেপ ভার্দে, ইকুইটোরিয়াল গিনি, মালদ্বীপ, সামোয়া, ভানুয়াতু এবং সাও টোমে অ্যান্ড প্রিন্সিপে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলো ইতিমধ্যে বিভিন্ন প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, বেসরকারি খাতকেও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। বর্তমান ধারা বজায় থাকলে আগামী পাঁচ বছর পরও পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই উত্তরণের প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করেছে। ফলে উত্তরণ অনিবার্য। তবে সঠিক সময়ে ও সঠিকভাবে উত্তরণ নিশ্চিত করতে দরকষাকষি ও সময় বাড়ানোর চেষ্টা করা প্রয়োজন। কারণ আমাদের কাছে যথেষ্ট যুক্তি ও নজির রয়েছে। একই ধরনের পরিস্থিতিতে অন্য কয়েকটি দেশও বাড়তি সময় পেয়েছে, সেটিও বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে।
প্রশ্ন হচ্ছে মাত্র তিন বছর সময় পিছিয়ে নিলে এবং নতুনভাবে নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নিলেই কি বিদ্যুৎ সংকট, যানজটসহ অবকাঠামোগত সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যাবে? বৈশ্বিক রাজনীতি এখন অস্থির ও অনিশ্চিত, সেটি মাথায় রেখে আমাদের এগোতে হবে।
আগামী বছর বাংলাদেশ যখন এলডিসি তালিকা থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত পথে পৌঁছাবে, তখন অনেক দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
[লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার]
রেজাউল করিম খোকন
বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে আগামী বছরই উত্তরণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ১৩ মার্চ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে সিদ্ধান্ত হয়, ২০২৬ সালে ২৪ নভেম্বর নির্ধারিত সময়েই বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ হবে। ব্যবসায়ীরা এলডিসি উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার দাবি করছেন। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্ত হচ্ছে আগামী বছরের ২৪ নভেম্বর জাতিসংঘ নির্ধারিত সময়ে এলডিসি থেকে বের হবে বাংলাদেশ। এলডিসি উত্তরণ মসৃণ করতে একটি কমিটি কাজও করছে
নির্ধারিত সময়ে এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা এবং অন্যান্য দিক থেকে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে, এটা অস্বীকার করা যায় না। তবে যেহেতু বাংলাদেশ বাড়তি সময়ের অনুরোধ করতে পারে, প্রয়োজনে সরকার জাতিসংঘের কাছে উত্তরণ প্রক্রিয়া পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করতে পারে। অবশ্য, জাতিসংঘ সেই আবেদন গ্রহণও করতে পারে, আবার নাও করতে পারে। তাই আমাদের শক্তিশালী যুক্তি দাঁড় করাতে হবে।
বিভিন্ন সূচকে হয়তো যথেষ্ট দৃঢ় যুক্তি উপস্থাপন করা সম্ভব হবে না। তবে বৈশ্বিক বাণিজ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের পাল্টা শুল্কনীতি কিংবা দেশের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনসহ অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কারণকে সামনে এনে যুক্তি তুলে ধরা যেতে পারে।
এলডিসি থেকে বের হলে সবচেয়ে বেশি চাপে পড়বে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত। শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা উঠে যাবে, ফলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর নিয়মিত হারে শুল্ক আরোপ করা হবে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বাড়তি শুল্কের কারণে বছরে প্রায় ৫৩৭ কোটি ডলার, অর্থাৎ সাড়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকার মতো রপ্তানি কমে যেতে পারে।
বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে ওষুধশিল্পও। এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে এ খাতে মেধাস্বত্ব (পেটেন্ট) সংক্রান্ত বিধিবিধান আরও কড়াকড়িভাবে কার্যকর হবে। বর্তমানে এলডিসি মর্যাদার কারণে বাংলাদেশি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন ওষুধ উদ্ভাবনকারী প্রতিষ্ঠানকে মেধাস্বত্বের জন্য অর্থ প্রদান করতে হয় না। কিন্তু উত্তরণের পর এ অর্থ দিতে হলে অনেক ওষুধের দাম বেড়ে যাবে, যা সাধারণ নাগরিকদের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। এ কারণে এলডিসি মর্যাদায় বাংলাদেশ ওষুধশিল্প সবচেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করেছে। ইতোমধ্যে এ খাত একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে, এলডিসি থেকে বের হয়ে গেলে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর কাছ থেকে সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার সুযোগ সীমিত হবে। যদিও বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)সহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে সহজ ও কঠিন শর্তের ঋণ নেওয়া শুরু করেছে। পাশাপাশি নগদ সহায়তা, ভর্তুকি ও করছাড়ের ক্ষেত্রে আরও কড়াকড়ি আরোপিত হতে পারে। কৃষি, শিল্প, রেমিট্যান্সসহ বিভিন্ন খাতে এ ধরনের সহায়তা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
তবে এলডিসি থেকে উত্তরণের ইতিবাচক দিকও রয়েছে। বাংলাদেশকে পূর্ণাঙ্গ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হবে, যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রতিফলন। বাড়তি সক্ষমতার কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে তুলনামূলক বেশি সুদে হলেও বড় অঙ্কের ঋণ নিতে পারবে। একই সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হওয়ার সুযোগও বাড়বে। তবে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে অনুকূল বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরি করাই হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।
স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের নির্ধারিত সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা। তাঁদের মতে, এই মুহূর্তে এলডিসি থেকে বের হলে রপ্তানি খাতসহ নানা খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। সম্প্রতি এক সেমিনারে ব্যবসায়ীরা এ দাবি জানান। তাদের বক্তব্যের পর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। এখন প্রশ্ন উঠেছেÑএলডিসি থেকে উত্তরণের সময় পেছানো কতটা যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত? সরকারের পক্ষে সময় বৃদ্ধির আবেদন করার মতো যথেষ্ট কারণ আছে কি? সরকার চাইলে কি সহজে সময় পেছাতে পারবে?
জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আট বছরের প্রস্তুতিমূলক প্রক্রিয়া ও একাধিক মূল্যায়ন শেষে ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তীর্ণ হবে। অর্থাৎ হাতে আছে মাত্র ১৫ মাসের কিছু বেশি সময়। এই পর্যায়ে এসে উত্তরণের সময় পিছিয়ে দেওয়ার দাবি উঠেছে। উল্লেখ্য, এলডিসি থেকে কোন দেশ বের হবে তা সুপারিশ করে জাতিসংঘের উন্নয়ন নীতি কমিটি (সিডিপি)। এ জন্য প্রতি তিন বছর অন্তর এলডিসিগুলোর ত্রিবার্ষিক মূল্যায়ন করা হয়। মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতাÑএই তিন সূচকের ভিত্তিতে উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়। যেকোনো দুটি সূচকে উত্তীর্ণ হতে হয়, অথবা মাথাপিছু আয় নির্দিষ্ট সীমার দ্বিগুণ হতে হয়। সময়ের সঙ্গে এসব মানদ-ও পরিবর্তিত হয়।
বাংলাদেশ ২০১৮ ও ২০২১ সালের ত্রিবার্ষিক মূল্যায়নে তিনটি সূচকেই উত্তীর্ণ হয়। ২০২১ সালেই বাংলাদেশকে ২০২৪ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করা হয়।
গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থান ঘটে। এরপর অর্থনীতিতে কিছু সংস্কার হয়। এক বছরে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাংক খাতেও কিছু সংস্কার হয়েছে, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মূল্যস্ফীতি কমেছে। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা দাবি করছেন, দেশের অর্থনীতি আগের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। ফলে প্রশ্ন উঠছেÑএ অবস্থায় বাংলাদেশ সময় পেছাতে চাইলে কী যুক্তি দেখাবে? তবে এখনও দুর্বলতা রয়ে গেছে দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তোলা, রাজস্ব খাতের সংস্কার, বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন এবং সামাজিক খাত শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে।
রপ্তানিমুখী পোশাক ও ওষুধ শিল্পসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা এলডিসি থেকে উত্তরণ ৩ থেকে ৬ বছর পিছিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছেন। ব্যবসায়ীদের মতে, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের পণ্যের রপ্তানিতে গড়ে ১২ শতাংশ শুল্ক আরোপ হতে পারে। যদি জিএসপিসহ অন্যান্য বাণিজ্য সুবিধা নিশ্চিত করা না যায়, তাহলে রপ্তানি ৬ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। তাঁদের দাবি, উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় অনুকূল অর্থনৈতিক বাস্তবতা বাংলাদেশে এখনও তৈরি হয়নি।
এলডিসি থেকে উত্তরণের পথে বাংলাদেশের অন্যতম বড় বাধা হলো বিদ্যুৎ ও গ্যাসসংকট। নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ না থাকলে তৈরি পোশাক, বস্ত্র ও ওষুধশিল্পের মতো প্রধান খাতগুলো বৈশ্বিক বাজারের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হবে। এতে উত্তরণের ঝুঁকি আরও বাড়বে।
অন্যদিকে, বৈশ্বিক সুদের হার বেড়েছে, দেশের অভ্যন্তরে খেলাপি ঋণও বাড়ছে। এতে ঋণপ্রবাহ কমছে, বিদেশি বিনিয়োগও হ্রাস পাচ্ছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত পাল্টা শুল্ক রপ্তানি খাতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেছে। এর সঙ্গে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাবও বাংলাদেশের জন্য নতুন ঝুঁকি তৈরি করছে।
এ অবস্থায় বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকট সমাধান, অবকাঠামো ও সরবরাহ শৃঙ্খল উন্নয়ন, ব্যবসার খরচ কমানো, রপ্তানি খাতকে বৈচিত্র্যময় করা, স্মার্ট কূটনীতির মাধ্যমে বাজার ধরে রাখা, আর্থিক খাতের সংস্কার এবং বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার মতো প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। এসব বাস্তবায়নের জন্য অন্তত পাঁচ বছর সময় বাড়ানো জরুরি। যদি এলডিসি উত্তরণের সময় ২০৩২ সাল পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া যায়, তবে সরকার ও বেসরকারি খাত উভয়েই যথাযথ প্রস্তুতি নিতে পারবে। এতে বাংলাদেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনকে চ্যালেঞ্জ নয়, বরং বড় সুযোগে রূপান্তর করতে সক্ষম হবে। কিন্তু অপ্রস্তুত অবস্থায় বা অকাল উত্তরণ হলে নানা সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ ইতিমধ্যে এলডিসি উত্তরণের বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও আগের ধারাবাহিকতায় প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছিল। তবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো, নির্ধারিত সময়ের বদলে আরও কিছুটা সময় পেলে দেশটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারত। এর আগেও বেশ কয়েকটি দেশের এলডিসি উত্তরণের সময় পিছিয়েছে। কোনো কোনো দেশ নিজ উদ্যোগে আবেদন করেছে, আবার কখনো জাতিসংঘ নিজেই বিশেষ পরিস্থিতির কারণে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়Ñমিয়ানমারের উত্তরণ জাতিসংঘ নিজেই পিছিয়ে দেয়। গৃহযুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ দেখিয়ে ২০২৩ সালে সলোমন দ্বীপপুঞ্জ উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করে। সিডিপি মূল্যায়নের পর দেশটির উত্তরণের সময় তিন বছর বাড়িয়ে ২০২৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়। আফ্রিকার দেশ অ্যাঙ্গোলা তেলের দাম কমে যাওয়ায় অর্থনীতি ও সামাজিক খাতের সূচকগুলো ভেঙে পড়ে। তাই তারা সরাসরি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আবেদন করে এবং পর্তুগালের সহায়তায় অতিরিক্ত সময় পায়।
অন্যদিকে, মিয়ানমার স্বেচ্ছায় এলডিসি থেকে বের হতে চাইলেও সিডিপি তা অনুমোদন দেয়নি। চার বছর আগে দেশটি নিয়ে পর্যালোচনার মাত্র দুই সপ্তাহ আগে সেখানে সামরিক অভ্যুত্থান হয়, যা রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে। এ কারণে সিডিপি দেশটির উত্তরণ ২০২৭ সাল পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়। একইভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মালদ্বীপ ও নেপালেরও নির্ধারিত সময়ে এলডিসি উত্তরণ সম্ভব হয়নিÑমালদ্বীপে সুনামি আর নেপালে ভূমিকম্পের কারণে।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে প্রথমবার এলডিসি তালিকা তৈরি করা হয়। এখন পর্যন্ত মোট আটটি দেশ এই তালিকা থেকে উত্তীর্ণ হয়েছে। দেশগুলো হলোÑভুটান, বতসোয়ানা, কেপ ভার্দে, ইকুইটোরিয়াল গিনি, মালদ্বীপ, সামোয়া, ভানুয়াতু এবং সাও টোমে অ্যান্ড প্রিন্সিপে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলো ইতিমধ্যে বিভিন্ন প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, বেসরকারি খাতকেও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। বর্তমান ধারা বজায় থাকলে আগামী পাঁচ বছর পরও পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই উত্তরণের প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করেছে। ফলে উত্তরণ অনিবার্য। তবে সঠিক সময়ে ও সঠিকভাবে উত্তরণ নিশ্চিত করতে দরকষাকষি ও সময় বাড়ানোর চেষ্টা করা প্রয়োজন। কারণ আমাদের কাছে যথেষ্ট যুক্তি ও নজির রয়েছে। একই ধরনের পরিস্থিতিতে অন্য কয়েকটি দেশও বাড়তি সময় পেয়েছে, সেটিও বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে।
প্রশ্ন হচ্ছে মাত্র তিন বছর সময় পিছিয়ে নিলে এবং নতুনভাবে নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নিলেই কি বিদ্যুৎ সংকট, যানজটসহ অবকাঠামোগত সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যাবে? বৈশ্বিক রাজনীতি এখন অস্থির ও অনিশ্চিত, সেটি মাথায় রেখে আমাদের এগোতে হবে।
আগামী বছর বাংলাদেশ যখন এলডিসি তালিকা থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত পথে পৌঁছাবে, তখন অনেক দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
[লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার]