alt

opinion » post-editorial

অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শ্রীপুর পৌরসভা

কামরুজ্জামান

: বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্রতি বছর বর্ষা এলেই শ্রীপুর পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। কোনো কোনো স্থানে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা যায় আবার কোনো কোনো স্থানে বৃষ্টি হলেই পানি জমে গিয়ে জলাবদ্ধতা শুরু হয়। শ্রীপুর পৌরসভা একটি প্রথম সারির পৌরসভা। এই পৌরসভা ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে এটি শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদ ছিল। বর্তমানে শ্রীপুর পৌরসভার বয়স ২৫ বছর হল। কিন্তু এই পৌরসভায় কোনো ধরনের আধুনিক নাগরিক সুযোগ সুবিধা এখনও দৃশ্যমান হয়নি। উন্নয়ন যা হয়েছে সেটা জীবনমানের স্বাভাবিক উন্নয়ন।

এই পৌরসভায় ইতোমধ্যে ১১৭ টি ভারি শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের একটি গবেষণার প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় - শ্রীপুর পৌরসভায় যেসব শিল্প কারখানা গুলো গড়ে উঠেছে এগুলোর সবই অপরিকল্পিত এবং বিক্ষিপ্তভাবে গড়ে উঠেছে।

স্বল্প আয়তনের এই পৌরসভায় এতোগুলো শিল্প কারখানা গড়ে উঠার ফলে এখানে যে আর্থসামাজিক পরিবর্তন হয়েছে সেটাও অপরিকল্পিত। বিশেষ করে বসতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কোনো নিয়মকানুন মানা হয়নি। যে যেভাবে পারছে বসতি গড়ে তুলেছে। শ্রীপুর পৌরসভায় শিল্প কারখানা গড়ে উঠার ফলে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন হয়েছে ভূমির ব্যাবহারে।

২০০০ সালের পূর্বে শ্রীপুর অঞ্চলের মানুষ সাধারণত কৃষি কাজ করে জীবীকা নির্বাহ করতো। কিন্তু হঠাৎ করেই শিল্প কারখানা গড়ে উঠায় এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কর্মের সন্ধানে মানুষ এখানে আসতে থাকায় অর্থনৈতিক কর্মকা-েরও পরিবর্তন শুরু হয়। এখানের স্থানীয় মানুষ বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ব্যবসায় সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। এছাড়াও কৃষি কাজ ছেড়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকা-ের সাথে জড়িত হয়। বর্তমানে শ্রীপুর পৌর অঞ্চল মূলত শিল্পাঞ্চল। এখানে বর্তামানে প্রায় ৩ লক্ষ লোকের বাস। এছাড়াও বিভিন্ন পেশার সাথে সম্পৃক্ত আরও প্রায় লাখ খানেক মানুষ ভাসমান অবস্থায় জীবন যাপন করছে।

শ্রীপুর পৌরসভায় নানাবিধ সমস্যার মধ্যে অন্যতম সমস্যা হচ্ছে - জলাবদ্ধতা। এই জলাবদ্ধতা দুই রকম। ১. স্থায়ী জলাবদ্ধতা ২. বৃষ্টি হলেই পানি জমে সাময়িক জলাবদ্ধতা। শ্রীপুর পৌরসভার জলাবদ্ধতা সৃষ্টির কারণ নানান কারন রয়েছে।

অপরিকল্পিত শিল্পায়ন : শ্রীপুর পৌর অঞ্চলে যে সকল শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে তার সবই এলোমেলোভাবে অপরিকল্পিত উপায়ে গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে কিছু কিছু শিল্প কারখানা লবলং খাল দখল করে গড়ে উঠেছে। আবার কিছু শিল্প কারখানা বাইদ জমিতে গড়ে উঠেছে। লবলং খাল ও ছৌক্কার খাল এবং শ্রীপুর পৌর অঞ্চলের বাইদ জমি মূলত বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার অন্যতম পথ। শিল্প কারখানা খালের পাড়ে এবং বাইদ জমিতে গড়ে উঠায় পানির প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে অনেক স্থানে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে আছে।

অপরিকল্পিত নগরায়ন : শিল্পায়ন হলে নগরায়ন হয় এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু নগরায়ন কোন উপায়ে হবে সেটি আলোচনায় বিষয়। তবে শ্রীপুর পৌর অঞ্চলের নগরায়ন প্রক্রিয়া পরিকল্পিত নয় এটা বলা যায়। কারণ হচ্ছে - ৪, ৫, ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডে যে সকল বাড়িঘর ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে তার সবই ব্যক্তিগত ইচ্ছায় এবং এলোমেলোভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। বাড়িঘর তৈরি করার সময় রাখা হয়নি পর্যাপ্ত রাস্তা ও পানি অপসারণের সুযোগ সুবিধা।

ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে না উঠা: শ্রীপুর পৌরসভা সুদীর্ঘ সময়েও পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকার কারণে মাওনা চৌরাস্তা, শ্রীপুর বাজারের কিছু অংশ, আনসার রোড, ১ নং সি এন্ড বি বাজার আশপাশের এলাকা, মাষ্টার বাড়ি বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে আছে।

খাল ও বাইদ জমি দখল ও দূষণ : শ্রীপুর পৌর অঞ্চলের নানা উৎস থেকে নির্গমন পানি মূলত বাইদ জমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে খালে গিয়ে পতিত হয়। অপরিকল্পিত কলকারখানা ও বসতবাড়ি ঘরে উঠায় এবং খাল ও বাইদ জমির প্রবাহ পথ দখল ও স্থাপনা নির্মাণ করায় পানির প্রবাহ স্থায়ীভাবে বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।

আবাসিক ও পৌর বর্জ্য অব্যবস্থাপনা : শ্রীপুর পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত নাজুক। বাসাবাড়ির ময়লা আবর্জনা, হাটবাজারের ময়লা আবর্জনা এবং শিল্প কারখানার তরল ও কঠিন বর্জ্য সবগুলোই মারাত্মক অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে।

আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত মানবিক পৌরসভা গড়ে তুলতে হলে শ্রীপুর পৌরসভার জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। আর এর জন্য প্রয়োজন স্বল্প মেয়াদী ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ। স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করার জন্য - বর্তমান যে-সব ড্রেন রয়েছে সেগুলো থেকে ময়লা আবর্জনা অপসারণ করতে হবে। পৌরসভার উদ্যোগে প্রতিনিয়ত ময়লা আবর্জনা অপসারণ করে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় জমা করতে হবে। পৌরসভার স্থায়ী জলাবদ্ধ জায়গাগুলো থেকে পানি অপসারণের জন্য নালা বা ড্রেন তৈরি করে দিতে হবে।

জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এর জন্য অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে। স্থায়ী এবং টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। লবলং খাল দখল ও দূষণমুক্ত এবং খনন কাজ করে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে হবে। ৯টি ওয়ার্ডের আবাসিক ও বানিজ্যিক জায়গাগুলোতে রাস্তা প্রসারিত করে উন্নত মানের টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। পৌর বর্জ্য, আবাসিক বর্জ্য এবং কলকারখানা থেকে উৎপাদিত তরল ও কঠিন বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তবেই শ্রীপুর পৌরসভার জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব।

[লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা কলেজ, গাজীপুর]

জিতিয়া উৎসব

ছবি

অলির পর নেপাল কোন পথে?

রম্যগদ্য: “মরেও বাঁচবি নারে পাগলা...”

ভূরিভোজ, উচ্ছেদ এবং আদিবাসী পাহাড়িয়া

অনলাইন সংস্কৃতিতে হাস্যরসের সমাজবিজ্ঞান

মামলাজট নিরসনে দেওয়ানি কার্যবিধির সংস্কার

বাস্তব মস্কো বনাম বিভ্রান্ত ইউরোপ

ছাত্রসংসদ নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ ছাত্ররাজনীতির গতিপ্রকৃতি

সড়ক দুর্ঘটনা: কারও মৃত্যু সাধারণ, কারও মৃত্যু বিশেষ

ঐকমত্য ছাড়াও কিছু সংস্কার সম্ভব

আবার বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম : সংকটে সাধারণ মানুষ

ডায়াবেটিস রোগীর সেবা ও জনসচেতনতা

ভিন্ন ধরনের ডাকসু নির্বাচন

ডাকসু নির্বাচন : পেছনে ফেলে আসি

প্রসঙ্গ : এলডিসি তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ

“কোপা চাটিগাঁ...”

ই-কমার্স হতে পারে প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন

ভারত-চীনের নতুন সমীকরণ

সাইবার যুগে মানুষের মর্যাদা ও নিরাপত্তা

ছবি

ভারত-চীন সম্পর্কে কৌশলগত উষ্ণতার সূচনা

ভারত-চীন সম্পর্কে কৌশলগত উষ্ণতার সূচনা

একজন নাগরিকের অভিমানী বিদায় ও রাষ্ট্রের নৈতিক সংকট

নিষিদ্ধ জালের অভিশাপে হুমকির মুখে সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য

আধিপত্যবাদের শৃঙ্খল এবং পুঁজির লুন্ঠন যাদের রক্তাক্ত করে, তাদের চাই একজোটে

জার্মানি : কৃচ্ছসাধনের বোঝা জনগণের কাঁধে

পাট চাষের সংকট ও সম্ভাবনা

সামাজিক-প্রযুক্তিগত কল্পনা: বাংলাদেশের উন্নয়ন চিন্তার নতুন দিগন্ত

অগ্রক্রয় মোকদ্দমায় উভয় পক্ষের আইনি ডিফেন্স

পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম

এক সাংবাদিকের খোলা চিঠি

বাংলাদেশের দারিদ্র্য বৃদ্ধি ও অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ

ক্লাউডবার্স্ট: মৃত্যুর বার্তা নিয়ে, আকাশ যখন কান্নায় ভেঙে পড়ে

রম্যগদ্য:“কবি এখন জেলে...”

কারা কর্তৃপক্ষের সীমাবদ্ধতা ও ‘কারেকশন সার্ভিস’-এর বাস্তবতা

ছবি

বাংলাদেশের শহর পরিকল্পনার চ্যালেঞ্জ ও করণীয়

ছবি

‘আজ ফির তুমপে পেয়ার আয়া হ্যায়’

tab

opinion » post-editorial

অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শ্রীপুর পৌরসভা

কামরুজ্জামান

বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্রতি বছর বর্ষা এলেই শ্রীপুর পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। কোনো কোনো স্থানে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা যায় আবার কোনো কোনো স্থানে বৃষ্টি হলেই পানি জমে গিয়ে জলাবদ্ধতা শুরু হয়। শ্রীপুর পৌরসভা একটি প্রথম সারির পৌরসভা। এই পৌরসভা ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে এটি শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদ ছিল। বর্তমানে শ্রীপুর পৌরসভার বয়স ২৫ বছর হল। কিন্তু এই পৌরসভায় কোনো ধরনের আধুনিক নাগরিক সুযোগ সুবিধা এখনও দৃশ্যমান হয়নি। উন্নয়ন যা হয়েছে সেটা জীবনমানের স্বাভাবিক উন্নয়ন।

এই পৌরসভায় ইতোমধ্যে ১১৭ টি ভারি শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের একটি গবেষণার প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় - শ্রীপুর পৌরসভায় যেসব শিল্প কারখানা গুলো গড়ে উঠেছে এগুলোর সবই অপরিকল্পিত এবং বিক্ষিপ্তভাবে গড়ে উঠেছে।

স্বল্প আয়তনের এই পৌরসভায় এতোগুলো শিল্প কারখানা গড়ে উঠার ফলে এখানে যে আর্থসামাজিক পরিবর্তন হয়েছে সেটাও অপরিকল্পিত। বিশেষ করে বসতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কোনো নিয়মকানুন মানা হয়নি। যে যেভাবে পারছে বসতি গড়ে তুলেছে। শ্রীপুর পৌরসভায় শিল্প কারখানা গড়ে উঠার ফলে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন হয়েছে ভূমির ব্যাবহারে।

২০০০ সালের পূর্বে শ্রীপুর অঞ্চলের মানুষ সাধারণত কৃষি কাজ করে জীবীকা নির্বাহ করতো। কিন্তু হঠাৎ করেই শিল্প কারখানা গড়ে উঠায় এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কর্মের সন্ধানে মানুষ এখানে আসতে থাকায় অর্থনৈতিক কর্মকা-েরও পরিবর্তন শুরু হয়। এখানের স্থানীয় মানুষ বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ব্যবসায় সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। এছাড়াও কৃষি কাজ ছেড়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকা-ের সাথে জড়িত হয়। বর্তমানে শ্রীপুর পৌর অঞ্চল মূলত শিল্পাঞ্চল। এখানে বর্তামানে প্রায় ৩ লক্ষ লোকের বাস। এছাড়াও বিভিন্ন পেশার সাথে সম্পৃক্ত আরও প্রায় লাখ খানেক মানুষ ভাসমান অবস্থায় জীবন যাপন করছে।

শ্রীপুর পৌরসভায় নানাবিধ সমস্যার মধ্যে অন্যতম সমস্যা হচ্ছে - জলাবদ্ধতা। এই জলাবদ্ধতা দুই রকম। ১. স্থায়ী জলাবদ্ধতা ২. বৃষ্টি হলেই পানি জমে সাময়িক জলাবদ্ধতা। শ্রীপুর পৌরসভার জলাবদ্ধতা সৃষ্টির কারণ নানান কারন রয়েছে।

অপরিকল্পিত শিল্পায়ন : শ্রীপুর পৌর অঞ্চলে যে সকল শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে তার সবই এলোমেলোভাবে অপরিকল্পিত উপায়ে গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে কিছু কিছু শিল্প কারখানা লবলং খাল দখল করে গড়ে উঠেছে। আবার কিছু শিল্প কারখানা বাইদ জমিতে গড়ে উঠেছে। লবলং খাল ও ছৌক্কার খাল এবং শ্রীপুর পৌর অঞ্চলের বাইদ জমি মূলত বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার অন্যতম পথ। শিল্প কারখানা খালের পাড়ে এবং বাইদ জমিতে গড়ে উঠায় পানির প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে অনেক স্থানে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে আছে।

অপরিকল্পিত নগরায়ন : শিল্পায়ন হলে নগরায়ন হয় এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু নগরায়ন কোন উপায়ে হবে সেটি আলোচনায় বিষয়। তবে শ্রীপুর পৌর অঞ্চলের নগরায়ন প্রক্রিয়া পরিকল্পিত নয় এটা বলা যায়। কারণ হচ্ছে - ৪, ৫, ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডে যে সকল বাড়িঘর ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে তার সবই ব্যক্তিগত ইচ্ছায় এবং এলোমেলোভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। বাড়িঘর তৈরি করার সময় রাখা হয়নি পর্যাপ্ত রাস্তা ও পানি অপসারণের সুযোগ সুবিধা।

ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে না উঠা: শ্রীপুর পৌরসভা সুদীর্ঘ সময়েও পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকার কারণে মাওনা চৌরাস্তা, শ্রীপুর বাজারের কিছু অংশ, আনসার রোড, ১ নং সি এন্ড বি বাজার আশপাশের এলাকা, মাষ্টার বাড়ি বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে আছে।

খাল ও বাইদ জমি দখল ও দূষণ : শ্রীপুর পৌর অঞ্চলের নানা উৎস থেকে নির্গমন পানি মূলত বাইদ জমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে খালে গিয়ে পতিত হয়। অপরিকল্পিত কলকারখানা ও বসতবাড়ি ঘরে উঠায় এবং খাল ও বাইদ জমির প্রবাহ পথ দখল ও স্থাপনা নির্মাণ করায় পানির প্রবাহ স্থায়ীভাবে বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।

আবাসিক ও পৌর বর্জ্য অব্যবস্থাপনা : শ্রীপুর পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত নাজুক। বাসাবাড়ির ময়লা আবর্জনা, হাটবাজারের ময়লা আবর্জনা এবং শিল্প কারখানার তরল ও কঠিন বর্জ্য সবগুলোই মারাত্মক অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে।

আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত মানবিক পৌরসভা গড়ে তুলতে হলে শ্রীপুর পৌরসভার জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। আর এর জন্য প্রয়োজন স্বল্প মেয়াদী ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ। স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করার জন্য - বর্তমান যে-সব ড্রেন রয়েছে সেগুলো থেকে ময়লা আবর্জনা অপসারণ করতে হবে। পৌরসভার উদ্যোগে প্রতিনিয়ত ময়লা আবর্জনা অপসারণ করে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় জমা করতে হবে। পৌরসভার স্থায়ী জলাবদ্ধ জায়গাগুলো থেকে পানি অপসারণের জন্য নালা বা ড্রেন তৈরি করে দিতে হবে।

জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এর জন্য অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে। স্থায়ী এবং টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। লবলং খাল দখল ও দূষণমুক্ত এবং খনন কাজ করে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে হবে। ৯টি ওয়ার্ডের আবাসিক ও বানিজ্যিক জায়গাগুলোতে রাস্তা প্রসারিত করে উন্নত মানের টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। পৌর বর্জ্য, আবাসিক বর্জ্য এবং কলকারখানা থেকে উৎপাদিত তরল ও কঠিন বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তবেই শ্রীপুর পৌরসভার জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব।

[লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা কলেজ, গাজীপুর]

back to top