জাঁ-নেসার ওসমান
“ই য়েয়য়... মাভৈঃ মাভৈঃ আসছে এবার শুভ দিন, কালি-কলম হাতে নিন। দিকে দিকে একি শুনি, বন্ধ চাঁদা আজ এখুনি। আর নাই দুশ্চিন্তা, নাচি তা ধিন, ধিন তা... ঢিংকা চিকা ঢিংকা চিকা, ইহা ইহা, ওঃ ওঃ ওহ...”
“কি রে ভাই, সারা জাতি যেখানে শাক-সব্জির গরমে অতিষ্ঠ, বিভিন্ন দুশ্চিন্তায় মূহ্যমান, সেখানে তুই মহানন্দে মাইকেল জ্যাকসনের মতো ব্রেকড্যান্স করছিস! এর মাজেজা কী?”
“আরে মিয়াভাই বাস্তব যদি আন্নেরে আগামি সোনালি দিনের ইশারা দ্য্যয়, তয় আন্নে নাচতেন ন?”
“বলিস কী! এইরকম ক্রান্তিলগ্নে তুই যদি একটু শুভদিনের ইঙ্গিত দিতে পারিস তাহলে পাবলিক শুধু নিজে নাচবে না তোকে শুদ্ধ মাথায় তুলে নাচবে!”
“তায়লে জলদি আমারে মাথায় লন আর নর্তন-কুর্দন শুরু করেন।”
“মানে কী? তুমি কী এমন আশার আলো দেখাচ্ছো যে, তোমায় মাথায় তুলে নাচতে হবে?”
“ওম্মারেমা, আন্নে কি মিয়া সারা জীবন খান আর ল্যাদান, সমাজের আকার-ইঙ্গিত, সমাজের পাবলিকের রং ঢং দ্যেইখ্যাও কি বোজেন না, এবার আসছে শুভদিন, কালি-কলম হাতে নিন।”
“এই যে চারিদিকে জ্বালাও-পোড়াও, বাসর রাতে স্বামী জবাই, হাতুড়ি মেরে সহকর্মী খুন এসবের মাঝে শুভ দিনের কী আলামত তুই দেখছিস সে তুইই জানিস। তোর ভাষায় আমি তো শুধু খাই আর ল্যাদাই, সমাজের কিছুই বুঝতে পারি না।”
“সোনাভাই বোজেন না, আপনের এই জ্বালাও-পোড়াওয়ের মাধ্যেই সুনালি দিনের আলুর দিশারী পুর্ব দিগন্তে সূর্য্য উঠেছের মতুন আশার আলো জ্বলতাছে।”
“ওই ব্যাটা বেশি না পে্যঁচায়া বল দেখি কোথায় তুই আশার আলো দেখছিস? ”
“ক্যান মিয়া ভাই আপনে দেখতাছেন না, এই যে, হাজার হাজার জনতা সমাজের ব্যাবাগ ভাওতাবাজী ধরী ধরী ঠাইট মারি ফ্যালার। সমাজে কুনোই কুসংস্কার রাইখতো ন। ব্যাবাগরে হিডি ফ্যাটাই হ্যালাইবো।”
“বুঝলাম সাধারণ মানুষের অশিক্ষা-কুশিক্ষার সুযোগে কিছু লোক যারা মানুষের আবেগকে পুঁজি করে ধর্মীয় লেবাস চড়িয়ে ব্যবসা করছিলো তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার আক্রমণ চালাচ্ছে, যাতে সাধারণ মানুষের অশিক্ষা-কুশিক্ষার সুযোগে আর কেউ ব্যবসা করতে না পারে। কিন্তু এর মাঝে তুই সারা জাতির মুক্তির কী দেখতে পেলি?”
“ক্যান ভাই এর পরেও কি আন্নে কোইবেন সামনে আশার আলো নাই!”
“আশার আলো কোথায় দ্যেখবো! তুই কি সমাজের দূর্নীতি, ঘুষ খাওয়া, মিথ্যা বলা, ওজনে কম দেওয়া এসব বন্ধ করতে পারবি?”
“আরে মিয়া আন্নে বোজেন না ক্যান, মনে করেন ফিরে আসছে ‘দ্যা গোল্ডেন এজ অব ইসলাম’ বাগদাদের আব্বাসীয় বংশের বাদশাহ হারুনর রশীদের মতো এক প্রশাসক পাইলেন যিনি দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভিক্ষুকের ছদ্মবেশে ঘুইরা ঘুইরা দেখতো দেশের অবস্থা ক্যামোন। তারপর দেশ পরিচালনা করতেন।”
“এ্যাহ্ এদেশে ভিক্ষুকের ছদ্মবেশ, ওই যে স্বৈরাচারের দোসর খাদ্যমন্ত্রী, সে পাবলিক ঠিকমতো বন্যার ত্রাণ পায় কিনা দ্যেখার জন্য ছদ্মবেশে বন্যাদুর্গতদের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। আর সেইরকম সৎ নিষ্ঠাবান নির্লোভ মানুষটার দেহাবসানের পর তার শেষকৃত্যেও তোরা ঝামেলা করলি! অ্যাঁহ্; বাদশাহ হারুনর রশীদ!”
“আরে ভাই এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তবুও আমি কমু, বাদশাহ হারুনর রশীদের সময় শিল্পসাহিত্যে “বায়েত-আল-হীকমা’র মতুন লাইব্রেরি নির্মাণ হোইছে, হাতির দাঁতের তৈরি দাবার গুটির চল আছিলো। দোয়া করেন সৃষ্টিকর্তা যেন আমগোরে এই রহম একজন বাদশাহ দ্যায় যিনি বার্মাকিডের মতুন বিচক্ষণ সভাসদ দিয়া দেশ পরিচালনা করবো আর সোনার বাংলা গঠন করবো।”
“কিন্তু ভাই তোর দেশে এ্যমোন প্রশাসক কোথায় পাবি? এরাতো সবাই বলে আপনারা যদি আমকে ক্ষমতায় বসান তাহলে আমি হ্যান করেঙ্গা ত্যান করেঙ্গা আসলে সবাই কেবল নিজের পকেট ভরেঙ্গা! এরা তো নিজেদের জনগণের সেবক মনে করে না মনে করে জনগনের প্রভু! এই মানসিকতাসম্পন্ন লোকরা করবে তোর বাদশাহ হারুনর রশীদের মতো দেশ পরিচালনা! হাঃ হাঃ হাসাইস না ভাই হাসাইস না, তোর জুলাই আন্দোলন না না ছত্রিশে জুলাইয়ের পরে ভেবেছিলাম তোরা সব তরুণ তোরা অন্তত টাকার কাছে হারবি না, তা না, তোরা টাকার কাছে ধরাতো খেলিই, তাছাড়া বাঙালির জাতিসত্তা নিয়ে টান দিলি! বিগত স্বৈরাচারও যা করতে সাহস পায়নি। তোর দেশে তো এখন মরেও শান্তি নেই!”
“কী কন, বিগত স্বৈরাচার তো আমাগো দশ-বারটা ভায়ের লাশগুলা থানায় নিয়া পোড়ায় নাই! আর আমরা মাত্র একটা লাশ পোড়াইছি তো কি হোইছে?”
“এইভাবে বিচার করলে কী চলে! তুমি দশটা খুন করেছো, গুম করেছো বিশটা, আমরা মাত্র গুটিকয়েক, চলছে ভালোই দেশটা! বাঙালি হয়ে বাঙালির সাথে এই বর্বরতা, এই পৈশাচিকতা কি মানায় বল?”
“কিন্তু ভাই আমি কয়া দিলাম আপনে দ্যেইখেন, এবার যারা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাইবো হ্যেরা আর চাকুরি বাণিজ্য, হকারের চান্দা, প্রজেক্টের ঘুষ, কাবিখার খাওন খাইতে সাহস পাইবো না। কারণ এইসব দুর্নীতি করলে পাবলিকে হুমুন্দিগো দরজার চৌকাঠ পর্যন্ত খুইল্লা নিবো।”
“যদি তোর কথা বাস্তবে সত্যি হয় তাহলে সারাদেশ তোর সাথে নাচবে গাইবে, আর বলবে, “আসছে এবার শুভদিন, কালি-কলম হাতে নিন। দিকে দিকে একি শুনি, বন্ধ চাঁদা আজ এখুনি। আর নাই দুশ্চিন্তা, নাচি তা ধিন, ধিন তা... নাচি তা ধিন, ধিন তা... ”
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
[লেখক: চলচ্চিত্রকার]
জাঁ-নেসার ওসমান
বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
“ই য়েয়য়... মাভৈঃ মাভৈঃ আসছে এবার শুভ দিন, কালি-কলম হাতে নিন। দিকে দিকে একি শুনি, বন্ধ চাঁদা আজ এখুনি। আর নাই দুশ্চিন্তা, নাচি তা ধিন, ধিন তা... ঢিংকা চিকা ঢিংকা চিকা, ইহা ইহা, ওঃ ওঃ ওহ...”
“কি রে ভাই, সারা জাতি যেখানে শাক-সব্জির গরমে অতিষ্ঠ, বিভিন্ন দুশ্চিন্তায় মূহ্যমান, সেখানে তুই মহানন্দে মাইকেল জ্যাকসনের মতো ব্রেকড্যান্স করছিস! এর মাজেজা কী?”
“আরে মিয়াভাই বাস্তব যদি আন্নেরে আগামি সোনালি দিনের ইশারা দ্য্যয়, তয় আন্নে নাচতেন ন?”
“বলিস কী! এইরকম ক্রান্তিলগ্নে তুই যদি একটু শুভদিনের ইঙ্গিত দিতে পারিস তাহলে পাবলিক শুধু নিজে নাচবে না তোকে শুদ্ধ মাথায় তুলে নাচবে!”
“তায়লে জলদি আমারে মাথায় লন আর নর্তন-কুর্দন শুরু করেন।”
“মানে কী? তুমি কী এমন আশার আলো দেখাচ্ছো যে, তোমায় মাথায় তুলে নাচতে হবে?”
“ওম্মারেমা, আন্নে কি মিয়া সারা জীবন খান আর ল্যাদান, সমাজের আকার-ইঙ্গিত, সমাজের পাবলিকের রং ঢং দ্যেইখ্যাও কি বোজেন না, এবার আসছে শুভদিন, কালি-কলম হাতে নিন।”
“এই যে চারিদিকে জ্বালাও-পোড়াও, বাসর রাতে স্বামী জবাই, হাতুড়ি মেরে সহকর্মী খুন এসবের মাঝে শুভ দিনের কী আলামত তুই দেখছিস সে তুইই জানিস। তোর ভাষায় আমি তো শুধু খাই আর ল্যাদাই, সমাজের কিছুই বুঝতে পারি না।”
“সোনাভাই বোজেন না, আপনের এই জ্বালাও-পোড়াওয়ের মাধ্যেই সুনালি দিনের আলুর দিশারী পুর্ব দিগন্তে সূর্য্য উঠেছের মতুন আশার আলো জ্বলতাছে।”
“ওই ব্যাটা বেশি না পে্যঁচায়া বল দেখি কোথায় তুই আশার আলো দেখছিস? ”
“ক্যান মিয়া ভাই আপনে দেখতাছেন না, এই যে, হাজার হাজার জনতা সমাজের ব্যাবাগ ভাওতাবাজী ধরী ধরী ঠাইট মারি ফ্যালার। সমাজে কুনোই কুসংস্কার রাইখতো ন। ব্যাবাগরে হিডি ফ্যাটাই হ্যালাইবো।”
“বুঝলাম সাধারণ মানুষের অশিক্ষা-কুশিক্ষার সুযোগে কিছু লোক যারা মানুষের আবেগকে পুঁজি করে ধর্মীয় লেবাস চড়িয়ে ব্যবসা করছিলো তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার আক্রমণ চালাচ্ছে, যাতে সাধারণ মানুষের অশিক্ষা-কুশিক্ষার সুযোগে আর কেউ ব্যবসা করতে না পারে। কিন্তু এর মাঝে তুই সারা জাতির মুক্তির কী দেখতে পেলি?”
“ক্যান ভাই এর পরেও কি আন্নে কোইবেন সামনে আশার আলো নাই!”
“আশার আলো কোথায় দ্যেখবো! তুই কি সমাজের দূর্নীতি, ঘুষ খাওয়া, মিথ্যা বলা, ওজনে কম দেওয়া এসব বন্ধ করতে পারবি?”
“আরে মিয়া আন্নে বোজেন না ক্যান, মনে করেন ফিরে আসছে ‘দ্যা গোল্ডেন এজ অব ইসলাম’ বাগদাদের আব্বাসীয় বংশের বাদশাহ হারুনর রশীদের মতো এক প্রশাসক পাইলেন যিনি দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভিক্ষুকের ছদ্মবেশে ঘুইরা ঘুইরা দেখতো দেশের অবস্থা ক্যামোন। তারপর দেশ পরিচালনা করতেন।”
“এ্যাহ্ এদেশে ভিক্ষুকের ছদ্মবেশ, ওই যে স্বৈরাচারের দোসর খাদ্যমন্ত্রী, সে পাবলিক ঠিকমতো বন্যার ত্রাণ পায় কিনা দ্যেখার জন্য ছদ্মবেশে বন্যাদুর্গতদের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। আর সেইরকম সৎ নিষ্ঠাবান নির্লোভ মানুষটার দেহাবসানের পর তার শেষকৃত্যেও তোরা ঝামেলা করলি! অ্যাঁহ্; বাদশাহ হারুনর রশীদ!”
“আরে ভাই এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তবুও আমি কমু, বাদশাহ হারুনর রশীদের সময় শিল্পসাহিত্যে “বায়েত-আল-হীকমা’র মতুন লাইব্রেরি নির্মাণ হোইছে, হাতির দাঁতের তৈরি দাবার গুটির চল আছিলো। দোয়া করেন সৃষ্টিকর্তা যেন আমগোরে এই রহম একজন বাদশাহ দ্যায় যিনি বার্মাকিডের মতুন বিচক্ষণ সভাসদ দিয়া দেশ পরিচালনা করবো আর সোনার বাংলা গঠন করবো।”
“কিন্তু ভাই তোর দেশে এ্যমোন প্রশাসক কোথায় পাবি? এরাতো সবাই বলে আপনারা যদি আমকে ক্ষমতায় বসান তাহলে আমি হ্যান করেঙ্গা ত্যান করেঙ্গা আসলে সবাই কেবল নিজের পকেট ভরেঙ্গা! এরা তো নিজেদের জনগণের সেবক মনে করে না মনে করে জনগনের প্রভু! এই মানসিকতাসম্পন্ন লোকরা করবে তোর বাদশাহ হারুনর রশীদের মতো দেশ পরিচালনা! হাঃ হাঃ হাসাইস না ভাই হাসাইস না, তোর জুলাই আন্দোলন না না ছত্রিশে জুলাইয়ের পরে ভেবেছিলাম তোরা সব তরুণ তোরা অন্তত টাকার কাছে হারবি না, তা না, তোরা টাকার কাছে ধরাতো খেলিই, তাছাড়া বাঙালির জাতিসত্তা নিয়ে টান দিলি! বিগত স্বৈরাচারও যা করতে সাহস পায়নি। তোর দেশে তো এখন মরেও শান্তি নেই!”
“কী কন, বিগত স্বৈরাচার তো আমাগো দশ-বারটা ভায়ের লাশগুলা থানায় নিয়া পোড়ায় নাই! আর আমরা মাত্র একটা লাশ পোড়াইছি তো কি হোইছে?”
“এইভাবে বিচার করলে কী চলে! তুমি দশটা খুন করেছো, গুম করেছো বিশটা, আমরা মাত্র গুটিকয়েক, চলছে ভালোই দেশটা! বাঙালি হয়ে বাঙালির সাথে এই বর্বরতা, এই পৈশাচিকতা কি মানায় বল?”
“কিন্তু ভাই আমি কয়া দিলাম আপনে দ্যেইখেন, এবার যারা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাইবো হ্যেরা আর চাকুরি বাণিজ্য, হকারের চান্দা, প্রজেক্টের ঘুষ, কাবিখার খাওন খাইতে সাহস পাইবো না। কারণ এইসব দুর্নীতি করলে পাবলিকে হুমুন্দিগো দরজার চৌকাঠ পর্যন্ত খুইল্লা নিবো।”
“যদি তোর কথা বাস্তবে সত্যি হয় তাহলে সারাদেশ তোর সাথে নাচবে গাইবে, আর বলবে, “আসছে এবার শুভদিন, কালি-কলম হাতে নিন। দিকে দিকে একি শুনি, বন্ধ চাঁদা আজ এখুনি। আর নাই দুশ্চিন্তা, নাচি তা ধিন, ধিন তা... নাচি তা ধিন, ধিন তা... ”
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
[লেখক: চলচ্চিত্রকার]