মিহির কুমার রায়
‘স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল’Ñএই প্রবাদের আলোকে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) সবার জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার কথা বলে। এই লক্ষ্যে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। এর ফলে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, টিকাদান কর্মসূচির সাফল্য, গড় আয়ু বৃদ্ধি, সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ, এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি অর্জিত হয়েছে। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্যবিধি (ইউএইচসি) অর্জনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য প্রশাসন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যন্ত বিস্তৃত। দেশে বর্তমানে ৩০টি সরকারি এবং ৭৪টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক উদ্যোক্তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হাসপাতালগুলোও এ খাতে অবদান রাখছে।
স্বাস্থ্যখাতে বাজেট কেন অবহেলিত?
বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বরাদ্দ গত এক দশকে জিডিপির মাত্র ২% বা তারও কম, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন। উন্নত দেশগুলোতে এই হার ১০-২০%। মাথাপিছু স্বাস্থ্য ব্যয়েও বাংলাদেশ পিছিয়ে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতে ৪১ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা মোট বাজেটের ৫.১৯%। গত অর্থবছরে এটি ছিল ৩৮ হাজার ০৫১ কোটি টাকা (৪.৯৯%)। অর্থাৎ, বরাদ্দ বেড়েছে মাত্র ৩,৩৫৭ কোটি টাকা বা ০.২%।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)-তে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ ২০ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা, যা উন্নয়ন বাজেটের ৪১%। গত বছর এটি ছিল ৫১%। সংশোধিত এডিপি (আরএডিপি)-তে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বরাদ্দ ৫ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা, যা মূল এডিপির ১১ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা থেকে ৫ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা কম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বারবার বাজেট বাড়ানোর পরামর্শ দিলেও তা মানা হয়নি। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এডিপির ১১% বরাদ্দের কথা বলা হলেও বাস্তবে তা পূরণ হয়নি। বর্তমানে ৫৬টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, যার মধ্যে ২৮টি অবকাঠামো নির্মাণসংক্রান্ত এবং বাকিগুলো গবেষণা, দক্ষতা উন্নয়ন, ও সেবা স্বয়ংক্রিয়করণে নিয়োজিত। তবে বাজেটের বড় অংশ ব্যয় হয় মজুরি, বেতন, এবং প্রশাসনিক খরচে।
স্বাস্থ্যসেবার বাণিজ্যিকীকরণ
স্বাস্থ্যসেবার বাণিজ্যিকীকরণ বাংলাদেশে উদ্বেগজনক রূপ নিয়েছে। চিকিৎসা, যা মৌলিক মানবাধিকার, তা এখন বিত্তবানদের জন্য সহজলভ্য ব্যবসায়িক পণ্যে পরিণত হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে দীর্ঘ অপেক্ষা, চিকিৎসক ও নার্সের অভাব, এবং অপ্রতুল অবকাঠামো সেবার মান নষ্ট করছে। বিশ্বব্যাংকের ২০২১ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারি ব্যয় জিডিপির মাত্র ০.৯%, যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। প্রতি ৩ হাজার জনের জন্য মাত্র ১টি হাসপাতাল বেড রয়েছে, যা স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতা প্রকাশ করে।
বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয়বহুল, যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। প্রতি বছর প্রায় ৭ লাখ মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশে যায়, যার গড় ব্যয় ৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি এবং জটিল রোগের চাহিদা বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের বোঝা বাড়াচ্ছে। ২০২৩ সালে স্বাস্থ্যসেবা খাতে ৩০% বাজেট অপচয় হয়েছে, মূলত দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে। এই অবস্থায় সাশ্রয়ী ও মানসম্মত চিকিৎসা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় দক্ষতা ও জবাবদিহিতা
সরকারি হাসপাতালে নৈরাজ্যপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। কর্মীদের ৪০-৫০% প্রতিদিন অনুপস্থিত থাকেন, যা সেবার মানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য সরকারি হাসপাতালই প্রধান ভরসা, কিন্তু কর্মী সংকট ও অনুপস্থিতির কারণে রোগীদের ভোগান্তি বাড়ছে। বায়োমেট্রিক হাজিরা পদ্ধতি প্রবর্তন করা হলেও তা সফল হয়নি। দক্ষতা, পেশাদারিত্ব, এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের কঠোর তদারকি করতে হবে।
স্বাস্থ্যসেবায় মানবাধিকার
সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে বাজেট বাড়ানোর বিকল্প নেই। মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের ৬৮% ব্যক্তিগতভাবে বহন করতে হয়, যা দারিদ্র্যসীমার নিচে ঠেলে দিচ্ছে জনগণকে। বাজেট বৃদ্ধি করলে এই চাপ কমানো সম্ভব। স্বাস্থ্য গবেষণার জন্য বরাদ্দ থাকলেও গবেষকের অভাবে ১০০ কোটি টাকার বাজেট অব্যবহৃত থাকছে, যা উদ্বেগজনক।
বিগত সময়ে ১৩ হাজার ১২৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক গ্রামীণ জনগণকে ৩৪টি ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহ করছে। তবে, স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বরাদ্দ শতাংশের হারে কমে গেছে। গ্রাম-শহরের স্বাস্থ্যসেবার বৈষম্য কমাতে উন্নয়ন বাজেট বাড়ানো জরুরি। মেডিকেল শিক্ষায় বরাদ্দের ২২% ব্যয় হলেও আধুনিক উপকরণ, গবেষণা, এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ নেই। ১০৫টি মেডিকেল কলেজের বেশিরভাগে বেসিক সাইন্স বিভাগে শিক্ষকের অভাব রয়েছে। বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
মেডিকেল শিক্ষায় নৈতিকতার বিষয় থাকলেও চিকিৎসকদের আচরণে তা প্রতিফলিত হচ্ছে না। শপথ সত্ত্বেও অনেক চিকিৎসক ব্যবসায়িক মনোভাবে চিকিৎসা দিচ্ছেন। সমাজে চিকিৎসকদের প্রতি বাড়তি প্রত্যাশা থাকায় মধ্যবিত্ত চিকিৎসকরা পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্বের মধ্যে সংঘাতে পড়ছেন।
উপসংহার
স্বাস্থ্যসেবায় মানবিকতা প্রতিষ্ঠার জন্য বাজেট বাড়ানো, দক্ষতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, এবং বাণিজ্যিকীকরণের অশুভ চক্র ভাঙা জরুরি। গ্রাম-শহরের বৈষম্য কমাতে এবং মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে সরকারকে কার্যকর সংস্কার গ্রহণ করতে হবে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী উন্নত ও টেকসই বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। স্বাস্থ্যখাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ এই লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
[লেখক: সাবেক ডিন (ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ) ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা]
মিহির কুমার রায়
রোববার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
‘স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল’Ñএই প্রবাদের আলোকে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) সবার জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার কথা বলে। এই লক্ষ্যে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। এর ফলে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, টিকাদান কর্মসূচির সাফল্য, গড় আয়ু বৃদ্ধি, সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ, এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি অর্জিত হয়েছে। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্যবিধি (ইউএইচসি) অর্জনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য প্রশাসন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যন্ত বিস্তৃত। দেশে বর্তমানে ৩০টি সরকারি এবং ৭৪টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক উদ্যোক্তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হাসপাতালগুলোও এ খাতে অবদান রাখছে।
স্বাস্থ্যখাতে বাজেট কেন অবহেলিত?
বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বরাদ্দ গত এক দশকে জিডিপির মাত্র ২% বা তারও কম, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন। উন্নত দেশগুলোতে এই হার ১০-২০%। মাথাপিছু স্বাস্থ্য ব্যয়েও বাংলাদেশ পিছিয়ে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতে ৪১ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা মোট বাজেটের ৫.১৯%। গত অর্থবছরে এটি ছিল ৩৮ হাজার ০৫১ কোটি টাকা (৪.৯৯%)। অর্থাৎ, বরাদ্দ বেড়েছে মাত্র ৩,৩৫৭ কোটি টাকা বা ০.২%।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)-তে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ ২০ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা, যা উন্নয়ন বাজেটের ৪১%। গত বছর এটি ছিল ৫১%। সংশোধিত এডিপি (আরএডিপি)-তে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বরাদ্দ ৫ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা, যা মূল এডিপির ১১ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা থেকে ৫ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা কম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বারবার বাজেট বাড়ানোর পরামর্শ দিলেও তা মানা হয়নি। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এডিপির ১১% বরাদ্দের কথা বলা হলেও বাস্তবে তা পূরণ হয়নি। বর্তমানে ৫৬টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, যার মধ্যে ২৮টি অবকাঠামো নির্মাণসংক্রান্ত এবং বাকিগুলো গবেষণা, দক্ষতা উন্নয়ন, ও সেবা স্বয়ংক্রিয়করণে নিয়োজিত। তবে বাজেটের বড় অংশ ব্যয় হয় মজুরি, বেতন, এবং প্রশাসনিক খরচে।
স্বাস্থ্যসেবার বাণিজ্যিকীকরণ
স্বাস্থ্যসেবার বাণিজ্যিকীকরণ বাংলাদেশে উদ্বেগজনক রূপ নিয়েছে। চিকিৎসা, যা মৌলিক মানবাধিকার, তা এখন বিত্তবানদের জন্য সহজলভ্য ব্যবসায়িক পণ্যে পরিণত হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে দীর্ঘ অপেক্ষা, চিকিৎসক ও নার্সের অভাব, এবং অপ্রতুল অবকাঠামো সেবার মান নষ্ট করছে। বিশ্বব্যাংকের ২০২১ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারি ব্যয় জিডিপির মাত্র ০.৯%, যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। প্রতি ৩ হাজার জনের জন্য মাত্র ১টি হাসপাতাল বেড রয়েছে, যা স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতা প্রকাশ করে।
বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয়বহুল, যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। প্রতি বছর প্রায় ৭ লাখ মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশে যায়, যার গড় ব্যয় ৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি এবং জটিল রোগের চাহিদা বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের বোঝা বাড়াচ্ছে। ২০২৩ সালে স্বাস্থ্যসেবা খাতে ৩০% বাজেট অপচয় হয়েছে, মূলত দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে। এই অবস্থায় সাশ্রয়ী ও মানসম্মত চিকিৎসা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় দক্ষতা ও জবাবদিহিতা
সরকারি হাসপাতালে নৈরাজ্যপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। কর্মীদের ৪০-৫০% প্রতিদিন অনুপস্থিত থাকেন, যা সেবার মানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য সরকারি হাসপাতালই প্রধান ভরসা, কিন্তু কর্মী সংকট ও অনুপস্থিতির কারণে রোগীদের ভোগান্তি বাড়ছে। বায়োমেট্রিক হাজিরা পদ্ধতি প্রবর্তন করা হলেও তা সফল হয়নি। দক্ষতা, পেশাদারিত্ব, এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের কঠোর তদারকি করতে হবে।
স্বাস্থ্যসেবায় মানবাধিকার
সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে বাজেট বাড়ানোর বিকল্প নেই। মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের ৬৮% ব্যক্তিগতভাবে বহন করতে হয়, যা দারিদ্র্যসীমার নিচে ঠেলে দিচ্ছে জনগণকে। বাজেট বৃদ্ধি করলে এই চাপ কমানো সম্ভব। স্বাস্থ্য গবেষণার জন্য বরাদ্দ থাকলেও গবেষকের অভাবে ১০০ কোটি টাকার বাজেট অব্যবহৃত থাকছে, যা উদ্বেগজনক।
বিগত সময়ে ১৩ হাজার ১২৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক গ্রামীণ জনগণকে ৩৪টি ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহ করছে। তবে, স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বরাদ্দ শতাংশের হারে কমে গেছে। গ্রাম-শহরের স্বাস্থ্যসেবার বৈষম্য কমাতে উন্নয়ন বাজেট বাড়ানো জরুরি। মেডিকেল শিক্ষায় বরাদ্দের ২২% ব্যয় হলেও আধুনিক উপকরণ, গবেষণা, এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ নেই। ১০৫টি মেডিকেল কলেজের বেশিরভাগে বেসিক সাইন্স বিভাগে শিক্ষকের অভাব রয়েছে। বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
মেডিকেল শিক্ষায় নৈতিকতার বিষয় থাকলেও চিকিৎসকদের আচরণে তা প্রতিফলিত হচ্ছে না। শপথ সত্ত্বেও অনেক চিকিৎসক ব্যবসায়িক মনোভাবে চিকিৎসা দিচ্ছেন। সমাজে চিকিৎসকদের প্রতি বাড়তি প্রত্যাশা থাকায় মধ্যবিত্ত চিকিৎসকরা পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্বের মধ্যে সংঘাতে পড়ছেন।
উপসংহার
স্বাস্থ্যসেবায় মানবিকতা প্রতিষ্ঠার জন্য বাজেট বাড়ানো, দক্ষতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, এবং বাণিজ্যিকীকরণের অশুভ চক্র ভাঙা জরুরি। গ্রাম-শহরের বৈষম্য কমাতে এবং মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে সরকারকে কার্যকর সংস্কার গ্রহণ করতে হবে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী উন্নত ও টেকসই বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। স্বাস্থ্যখাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ এই লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
[লেখক: সাবেক ডিন (ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ) ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা]