alt

opinion » post-editorial

প্ল্যাটফর্ম সমাজে বাংলাদেশ: জ্ঞানের ভবিষ্যৎ কার হাতে?

মতিউর রহমান

: সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারের ফলে বিশ্বজুড়ে এক নতুন সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, যাকে গবেষক জোসে ভ্যান ডাইক, থমাস পোল এবং মার্টেইন দে ভাল “প্ল্যাটফর্ম সোসাইটি” বা প্ল্যাটফর্ম সমাজ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এই ধারণা অনুযায়ী, ইউটিউব, ফেসবুক কিংবা টিকটকের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং এগুলো এমন এক জটিল সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কাঠামো, যা মানুষের সংস্কৃতি, শিক্ষা, রাজনৈতিক কর্মকা- এবং এমনকি জ্ঞানচর্চাকেও নিয়ন্ত্রণ করে।

বাংলাদেশও এই বৈশ্বিক প্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। বরং দেশের দ্রুত ডিজিটাল রূপান্তর, বিশাল তরুণ জনসংখ্যা এবং মোবাইল ইন্টারনেটের দ্রুত প্রসার প্ল্যাটফর্ম সমাজকে এখানে বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। এর ফলে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক চর্চা, রাজনৈতিক গতিশীলতা এবং জ্ঞানের ভবিষ্যৎ এক নতুন প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে: আসলে কার হাতে রয়েছে এই ভবিষ্যতের মালিকানা?

বিগত দশকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে গ্রামীণ লোকসংগীত, বাউল গান, কিংবা আধুনিক ফিউশন সঙ্গীত এখন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। এর একটি ইতিবাচক দিক হলো এটি সংস্কৃতির গণতন্ত্রীকরণ ঘটিয়েছে। একজন প্রান্তিক শিল্পী তার গান সরাসরি শ্রোতার কাছে পৌঁছে দিতে পারছেন, যা আগে রেকর্ড কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল ছিল। একজন বাউল শিল্পী রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেন।

কিন্তু এই সম্ভাবনার পাশাপাশি একটি নতুন ধরনের বৈষম্যও তৈরি হচ্ছে। প্ল্যাটফর্মগুলো তাদের অ্যালগরিদমের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয় কোন কন্টেন্ট বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাবে। ফলে হাজারো প্রতিভাবান শিল্পী অ্যালগরিদমের জটিলতার কারণে অদৃশ্য থেকে যান। এভাবে প্ল্যাটফর্ম সংস্কৃতির যুক্তি স্থানীয় সৃজনশীলতাকে সুযোগ দিলেও তা একই সঙ্গে এক নতুন ধরনের শ্রেণিবৈষম্য তৈরি করছে, যেখানে সফলতা নির্ভর করছে প্রযুক্তির অদৃশ্য নিয়মের ওপর।

টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মের প্রসার আরও এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। শহর ও গ্রামের তরুণ-তরুণীরা সংক্ষিপ্ত ভিডিওর মাধ্যমে নিজেদের পরিচয় ও সৃজনশীলতা প্রকাশ করছে। এটি নারী, গ্রামীণ যুবক এবং অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য নিজেদের দৃশ্যমান করার এক নতুন ক্ষেত্র তৈরি করেছে। তারা এখন নিজেদের গল্প বলতে, নিজস্ব সংস্কৃতি তুলে ধরতে এবং বৈশ্বিক অঙ্গনে নিজেদের জায়গা করে নিতে পারছে। তবে এর একটি নেতিবাচক দিকও রয়েছে। টিকটক পশ্চিমা সংস্কৃতি, বাণিজ্যিকীকৃত ট্রেন্ড এবং বৈশ্বিক নন্দনতত্ত্বকে বাংলাদেশের তরুণ সমাজে গভীরভাবে প্রবাহিত করছে। এর ফলে স্থানীয় সংস্কৃতির বহুমাত্রিকতা ক্রমেই একটি গ্লোবালাইজড নান্দনিকতার ছাঁচে ঢালা হচ্ছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ফেসবুক এখন একটি অপরিহার্য অবকাঠামো। রাজনৈতিক দল, কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সবাই তাদের বার্তা পৌঁছাতে এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছে। ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনগুলো প্রমাণ করেছে যে ফেসবুক লাইভ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গণআন্দোলন সংগঠিত করার জন্য একটি শক্তিশালী মাধ্যম। এটি নাগরিকদের সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে এবং ঐতিহ্যবাহী গণমাধ্যমের বাইরে গিয়ে নিজেদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরার ক্ষমতা দিয়েছে।

তবে এর অন্ধকার দিকও রয়েছে। মিথ্যা তথ্য, গুজব, ঘৃণামূলক বক্তব্য এবং প্রোপাগান্ডার বিস্তারও এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ব্যাপক হয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো স্থানীয় রাজনৈতিক বক্তব্য এবং নাগরিক অধিকারের প্রশ্ন এখানে বহুলাংশে বহুজাতিক কর্পোরেট নীতিমালার ওপর নির্ভরশীল। ফেসবুক বা ইউটিউব তাদের নিজস্ব অ্যালগরিদমের মাধ্যমে কোন বক্তব্য দৃশ্যমান হবে তা নির্ধারণ করে। স্থানীয় সরকার বা নাগরিক সমাজের এখানে কার্যত কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। অর্থাৎ, রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং রাজনৈতিক ভঙ্গুরতাÑদুটিই একসঙ্গে তৈরি করছে এই প্ল্যাটফর্ম সমাজ। যখন কোনো প্ল্যাটফর্ম একটি রাজনৈতিক বক্তব্য সরিয়ে নেয়, তখন এটি স্থানীয় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে এবং এটি একটি দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য বড় হুমকি।

শিক্ষার ক্ষেত্রে ইউটিউব এখন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি প্রধান সহায়ক প্ল্যাটফর্ম। মাধ্যমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত পরীক্ষার প্রস্তুতি, কোডিং শেখা, বিদেশি ভাষা আয়ত্ত করাÑসবই সম্ভব হচ্ছে ইউটিউব টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে। কোভিড-১৯ মহামারীর সময় যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ছিল, তখন ইউটিউব ও ফেসবুক-ভিত্তিক অনলাইন ক্লাস শিক্ষার্থীদের জন্য একমাত্র ভরসা ছিল। এটি শিক্ষার সুযোগকে শহরের বাইরেও ছড়িয়ে দিয়েছে এবং জ্ঞানার্জনের প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও উন্মুক্ত করেছে।

তবে এর ফলে শিক্ষার মান ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে নতুন প্রশ্ন উঠেছে। একদিকে এটি জ্ঞানপ্রাপ্তিকে সহজ করেছে, অন্যদিকে স্থানীয় পাঠ্যক্রম ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রান্তিক অবস্থানে ঠেলে দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক কন্টেন্টের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে, যা বিজ্ঞাপননির্ভর এবং প্রায়শই স্থানীয় বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই প্ল্যাটফর্মগুলো জ্ঞানের বাণিজ্যিকীকরণ করছে, যেখানে শিক্ষাকে পণ্য হিসেবে দেখা হয়। ফলে জ্ঞানের এই বহিঃনির্ভরতা দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করার ঝুঁকি তৈরি করছে, কারণ স্থানীয় জ্ঞানচর্চা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রাসঙ্গিকতা হারাতে পারে।

প্ল্যাটফর্ম সমাজের অর্থনৈতিক প্রভাবও গভীর। বাংলাদেশের কোটি কোটি ব্যবহারকারী প্রতিদিন যে বিপুল পরিমাণ ডেটা তৈরি করছেন, তা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বিজ্ঞাপন বাজারকে সমৃদ্ধ করছে। এই ব্যবহারকারীদের মনোযোগ এবং ডেটা তাদের জন্য একটি মূল্যবান সম্পদ। কিন্তু এই বিপুল মুনাফার সামান্য অংশও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ফেরত আসছে না। ফলে ডিজিটাল শ্রম এবং ব্যবহারকারীর মনোযোগ গ্লোবাল কর্পোরেট পুঁজির জন্য কার্যত এক বিনামূল্যের সম্পদে পরিণত হচ্ছে।

ডেটা সার্বভৌমত্ব এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। বাংলাদেশের নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য, সামাজিক অভ্যাস এবং রাজনৈতিক পছন্দÑসবকিছুই বহুজাতিক প্ল্যাটফর্মের কাছে সহজলভ্য। অথচ রাষ্ট্র বা সমাজ এই ডেটার ওপর কোনো মালিকানা বা নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছে না। এটি কেবল অর্থনৈতিক বৈষম্যই নয়, জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও সম্ভাব্য ঝুঁকি তৈরি করছে। যখন একটি দেশের নাগরিকদের সংবেদনশীল তথ্য বিদেশি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে থাকে, তখন তা দেশীয় নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়।

তবুও বাংলাদেশের মানুষ কেবল ভুক্তভোগী নয়। অনেক সৃষ্টিশীল ব্যক্তি ও সংগঠন প্ল্যাটফর্মগুলোকে কৌশলগতভাবে ব্যবহার করে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছেন। স্বাধীন সংগীতশিল্পীরা এখন আর রেকর্ড কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল নন; তারা সরাসরি ইউটিউবের মাধ্যমে তাদের গান প্রকাশ করছেন। সামাজিক উদ্যোক্তারা ফেসবুকের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করছেন এবং সামাজিক পরিবর্তনমূলক আন্দোলন গড়ে তুলছেন। প্রান্তিক তরুণ-তরুণীরা টিকটকে নিজেদের অভিব্যক্তি তুলে ধরে নতুন সামাজিক পরিচয় গড়ে তুলছেন।

এটি প্রমাণ করে যে প্ল্যাটফর্ম সমাজ একতরফা শোষণ নয়, বরং এটি এক ধরনের ক্ষমতার ক্ষেত্র, যেখানে বৈশ্বিক অ্যালগরিদমের যুক্তির ভেতরেও স্থানীয় সৃজনশীলতা এবং প্রতিরোধ সম্ভব। মানুষ কেবল অ্যালগরিদমের পুতুল নয়, বরং তারা কৌশলগতভাবে এই প্ল্যাটফর্মগুলোকে ব্যবহার করে নিজেদের উদ্দেশ্য সাধন করতে পারে।

বাংলাদেশের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে এই প্ল্যাটফর্ম সমাজকে মোকাবিলা করা যায়। একদিকে প্ল্যাটফর্মগুলোকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করা সম্ভব নয়, কারণ তারা আধুনিক জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে, এদের ওপর অন্ধ নির্ভরতাও বিপজ্জনক। তাই প্রয়োজন একটি সংকর মডেল, যেখানে বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মগুলোর পাশাপাশি স্থানীয় জ্ঞানভিত্তিক অবকাঠামো তৈরি করা হবে।

রাষ্ট্রকে ডেটা সার্বভৌমত্ব নিয়ে কঠোর নীতি প্রণয়ন করতে হবে, যাতে ব্যবহারকারীর তথ্য সুরক্ষিত থাকে এবং বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলো স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে বাধ্য হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের ডিজিটাল অবকাঠামো তৈরি করতে হবে, যাতে স্থানীয় কন্টেন্ট উৎপাদন ও বিতরণ শক্তিশালী হয়। একইসঙ্গে তরুণ প্রজন্মকে ডিজিটাল সাক্ষরতা শেখাতে হবে, যাতে তারা অ্যালগরিদমের বিভ্রান্তি ও ভুয়া তথ্য থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারে।

বাংলাদেশের জ্ঞানের ভবিষ্যৎ এখন এক উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র। এখানে একদিকে রয়েছে বৈশ্বিক কর্পোরেট প্ল্যাটফর্ম, অন্যদিকে রয়েছে স্থানীয় আকাক্সক্ষা ও প্রতিরোধ। প্রশ্ন হলোÑএই প্রতিযোগিতার ফলাফল কার পক্ষে যাবে? যদি বাংলাদেশ কেবল ভোক্তা হয়ে থাকে, তবে জ্ঞানের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে সিলিকন ভ্যালির বোর্ডরুমে। কিন্তু যদি স্থানীয় সৃজনশীলতা, নীতি এবং উদ্যোগ একসঙ্গে এগিয়ে আসে, তবে প্ল্যাটফর্ম সমাজের ভেতরেও বাংলাদেশের নিজস্ব পথ তৈরি সম্ভব।

জ্ঞানের ভবিষ্যৎ কার হাতেÑএই প্রশ্নের উত্তর তাই নির্ভর করছে আজকের বাংলাদেশ কীভাবে ডিজিটাল নির্ভরতার ভেতর দিয়ে নিজের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে তার ওপর। প্ল্যাটফর্ম সমাজ কোনো দূর ভবিষ্যতের বাস্তবতা নয়; এটি ইতিমধ্যেই আমাদের প্রতিদিনের জীবনের অংশ। এখন লড়াই কেবল এটুকুইÑএই বাস্তবতা কার স্বার্থে কাজ করবে: বৈশ্বিক অ্যালগরিদমের, নাকি বাংলাদেশের নাগরিকদের?

[লেখক: গবেষক ও উন্নয়নকর্মী]

নরসুন্দর পেশার গুরুত্ব ও সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন

বিভাগভিত্তিক এমপিআর নির্বাচন পদ্ধতি

আনন্দবেদনার হাসপাতাল: সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার বাস্তবতা

ছবি

ভিন্ন ধরনের নির্বাচন, ভিন্ন ধরনের ফল

বেসরকারি খাতে সিআইবি’র যাত্রা: ঋণ ব্যবস্থার নতুন দিগন্ত

স্বাস্থ্যসেবায় মানবিকতা প্রতিষ্ঠা হোক

ছবি

নেপালে সরকার পতন ও বামপন্থীদের ভবিষ্যৎ

ডাকসু নির্বাচন ও সংস্কারপ্রয়াস: রাজনৈতিক চিন্তার নতুন দিগন্ত

নির্বাচন কি সব সমস্যার সমাধান

জিতিয়া উৎসব

ছবি

অলির পর নেপাল কোন পথে?

রম্যগদ্য: “মরেও বাঁচবি নারে পাগলা...”

অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শ্রীপুর পৌরসভা

ভূরিভোজ, উচ্ছেদ এবং আদিবাসী পাহাড়িয়া

অনলাইন সংস্কৃতিতে হাস্যরসের সমাজবিজ্ঞান

মামলাজট নিরসনে দেওয়ানি কার্যবিধির সংস্কার

বাস্তব মস্কো বনাম বিভ্রান্ত ইউরোপ

ছাত্রসংসদ নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ ছাত্ররাজনীতির গতিপ্রকৃতি

সড়ক দুর্ঘটনা: কারও মৃত্যু সাধারণ, কারও মৃত্যু বিশেষ

ঐকমত্য ছাড়াও কিছু সংস্কার সম্ভব

আবার বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম : সংকটে সাধারণ মানুষ

ডায়াবেটিস রোগীর সেবা ও জনসচেতনতা

ভিন্ন ধরনের ডাকসু নির্বাচন

ডাকসু নির্বাচন : পেছনে ফেলে আসি

প্রসঙ্গ : এলডিসি তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ

“কোপা চাটিগাঁ...”

ই-কমার্স হতে পারে প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন

ভারত-চীনের নতুন সমীকরণ

সাইবার যুগে মানুষের মর্যাদা ও নিরাপত্তা

ছবি

ভারত-চীন সম্পর্কে কৌশলগত উষ্ণতার সূচনা

ভারত-চীন সম্পর্কে কৌশলগত উষ্ণতার সূচনা

একজন নাগরিকের অভিমানী বিদায় ও রাষ্ট্রের নৈতিক সংকট

নিষিদ্ধ জালের অভিশাপে হুমকির মুখে সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য

আধিপত্যবাদের শৃঙ্খল এবং পুঁজির লুন্ঠন যাদের রক্তাক্ত করে, তাদের চাই একজোটে

জার্মানি : কৃচ্ছসাধনের বোঝা জনগণের কাঁধে

পাট চাষের সংকট ও সম্ভাবনা

tab

opinion » post-editorial

প্ল্যাটফর্ম সমাজে বাংলাদেশ: জ্ঞানের ভবিষ্যৎ কার হাতে?

মতিউর রহমান

সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারের ফলে বিশ্বজুড়ে এক নতুন সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, যাকে গবেষক জোসে ভ্যান ডাইক, থমাস পোল এবং মার্টেইন দে ভাল “প্ল্যাটফর্ম সোসাইটি” বা প্ল্যাটফর্ম সমাজ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এই ধারণা অনুযায়ী, ইউটিউব, ফেসবুক কিংবা টিকটকের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং এগুলো এমন এক জটিল সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কাঠামো, যা মানুষের সংস্কৃতি, শিক্ষা, রাজনৈতিক কর্মকা- এবং এমনকি জ্ঞানচর্চাকেও নিয়ন্ত্রণ করে।

বাংলাদেশও এই বৈশ্বিক প্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। বরং দেশের দ্রুত ডিজিটাল রূপান্তর, বিশাল তরুণ জনসংখ্যা এবং মোবাইল ইন্টারনেটের দ্রুত প্রসার প্ল্যাটফর্ম সমাজকে এখানে বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। এর ফলে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক চর্চা, রাজনৈতিক গতিশীলতা এবং জ্ঞানের ভবিষ্যৎ এক নতুন প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে: আসলে কার হাতে রয়েছে এই ভবিষ্যতের মালিকানা?

বিগত দশকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে গ্রামীণ লোকসংগীত, বাউল গান, কিংবা আধুনিক ফিউশন সঙ্গীত এখন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। এর একটি ইতিবাচক দিক হলো এটি সংস্কৃতির গণতন্ত্রীকরণ ঘটিয়েছে। একজন প্রান্তিক শিল্পী তার গান সরাসরি শ্রোতার কাছে পৌঁছে দিতে পারছেন, যা আগে রেকর্ড কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল ছিল। একজন বাউল শিল্পী রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেন।

কিন্তু এই সম্ভাবনার পাশাপাশি একটি নতুন ধরনের বৈষম্যও তৈরি হচ্ছে। প্ল্যাটফর্মগুলো তাদের অ্যালগরিদমের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয় কোন কন্টেন্ট বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাবে। ফলে হাজারো প্রতিভাবান শিল্পী অ্যালগরিদমের জটিলতার কারণে অদৃশ্য থেকে যান। এভাবে প্ল্যাটফর্ম সংস্কৃতির যুক্তি স্থানীয় সৃজনশীলতাকে সুযোগ দিলেও তা একই সঙ্গে এক নতুন ধরনের শ্রেণিবৈষম্য তৈরি করছে, যেখানে সফলতা নির্ভর করছে প্রযুক্তির অদৃশ্য নিয়মের ওপর।

টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মের প্রসার আরও এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। শহর ও গ্রামের তরুণ-তরুণীরা সংক্ষিপ্ত ভিডিওর মাধ্যমে নিজেদের পরিচয় ও সৃজনশীলতা প্রকাশ করছে। এটি নারী, গ্রামীণ যুবক এবং অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য নিজেদের দৃশ্যমান করার এক নতুন ক্ষেত্র তৈরি করেছে। তারা এখন নিজেদের গল্প বলতে, নিজস্ব সংস্কৃতি তুলে ধরতে এবং বৈশ্বিক অঙ্গনে নিজেদের জায়গা করে নিতে পারছে। তবে এর একটি নেতিবাচক দিকও রয়েছে। টিকটক পশ্চিমা সংস্কৃতি, বাণিজ্যিকীকৃত ট্রেন্ড এবং বৈশ্বিক নন্দনতত্ত্বকে বাংলাদেশের তরুণ সমাজে গভীরভাবে প্রবাহিত করছে। এর ফলে স্থানীয় সংস্কৃতির বহুমাত্রিকতা ক্রমেই একটি গ্লোবালাইজড নান্দনিকতার ছাঁচে ঢালা হচ্ছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ফেসবুক এখন একটি অপরিহার্য অবকাঠামো। রাজনৈতিক দল, কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সবাই তাদের বার্তা পৌঁছাতে এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছে। ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনগুলো প্রমাণ করেছে যে ফেসবুক লাইভ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গণআন্দোলন সংগঠিত করার জন্য একটি শক্তিশালী মাধ্যম। এটি নাগরিকদের সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে এবং ঐতিহ্যবাহী গণমাধ্যমের বাইরে গিয়ে নিজেদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরার ক্ষমতা দিয়েছে।

তবে এর অন্ধকার দিকও রয়েছে। মিথ্যা তথ্য, গুজব, ঘৃণামূলক বক্তব্য এবং প্রোপাগান্ডার বিস্তারও এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ব্যাপক হয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো স্থানীয় রাজনৈতিক বক্তব্য এবং নাগরিক অধিকারের প্রশ্ন এখানে বহুলাংশে বহুজাতিক কর্পোরেট নীতিমালার ওপর নির্ভরশীল। ফেসবুক বা ইউটিউব তাদের নিজস্ব অ্যালগরিদমের মাধ্যমে কোন বক্তব্য দৃশ্যমান হবে তা নির্ধারণ করে। স্থানীয় সরকার বা নাগরিক সমাজের এখানে কার্যত কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। অর্থাৎ, রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং রাজনৈতিক ভঙ্গুরতাÑদুটিই একসঙ্গে তৈরি করছে এই প্ল্যাটফর্ম সমাজ। যখন কোনো প্ল্যাটফর্ম একটি রাজনৈতিক বক্তব্য সরিয়ে নেয়, তখন এটি স্থানীয় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে এবং এটি একটি দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য বড় হুমকি।

শিক্ষার ক্ষেত্রে ইউটিউব এখন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি প্রধান সহায়ক প্ল্যাটফর্ম। মাধ্যমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত পরীক্ষার প্রস্তুতি, কোডিং শেখা, বিদেশি ভাষা আয়ত্ত করাÑসবই সম্ভব হচ্ছে ইউটিউব টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে। কোভিড-১৯ মহামারীর সময় যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ছিল, তখন ইউটিউব ও ফেসবুক-ভিত্তিক অনলাইন ক্লাস শিক্ষার্থীদের জন্য একমাত্র ভরসা ছিল। এটি শিক্ষার সুযোগকে শহরের বাইরেও ছড়িয়ে দিয়েছে এবং জ্ঞানার্জনের প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও উন্মুক্ত করেছে।

তবে এর ফলে শিক্ষার মান ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে নতুন প্রশ্ন উঠেছে। একদিকে এটি জ্ঞানপ্রাপ্তিকে সহজ করেছে, অন্যদিকে স্থানীয় পাঠ্যক্রম ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রান্তিক অবস্থানে ঠেলে দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক কন্টেন্টের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে, যা বিজ্ঞাপননির্ভর এবং প্রায়শই স্থানীয় বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই প্ল্যাটফর্মগুলো জ্ঞানের বাণিজ্যিকীকরণ করছে, যেখানে শিক্ষাকে পণ্য হিসেবে দেখা হয়। ফলে জ্ঞানের এই বহিঃনির্ভরতা দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করার ঝুঁকি তৈরি করছে, কারণ স্থানীয় জ্ঞানচর্চা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রাসঙ্গিকতা হারাতে পারে।

প্ল্যাটফর্ম সমাজের অর্থনৈতিক প্রভাবও গভীর। বাংলাদেশের কোটি কোটি ব্যবহারকারী প্রতিদিন যে বিপুল পরিমাণ ডেটা তৈরি করছেন, তা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বিজ্ঞাপন বাজারকে সমৃদ্ধ করছে। এই ব্যবহারকারীদের মনোযোগ এবং ডেটা তাদের জন্য একটি মূল্যবান সম্পদ। কিন্তু এই বিপুল মুনাফার সামান্য অংশও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ফেরত আসছে না। ফলে ডিজিটাল শ্রম এবং ব্যবহারকারীর মনোযোগ গ্লোবাল কর্পোরেট পুঁজির জন্য কার্যত এক বিনামূল্যের সম্পদে পরিণত হচ্ছে।

ডেটা সার্বভৌমত্ব এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। বাংলাদেশের নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য, সামাজিক অভ্যাস এবং রাজনৈতিক পছন্দÑসবকিছুই বহুজাতিক প্ল্যাটফর্মের কাছে সহজলভ্য। অথচ রাষ্ট্র বা সমাজ এই ডেটার ওপর কোনো মালিকানা বা নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছে না। এটি কেবল অর্থনৈতিক বৈষম্যই নয়, জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও সম্ভাব্য ঝুঁকি তৈরি করছে। যখন একটি দেশের নাগরিকদের সংবেদনশীল তথ্য বিদেশি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে থাকে, তখন তা দেশীয় নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়।

তবুও বাংলাদেশের মানুষ কেবল ভুক্তভোগী নয়। অনেক সৃষ্টিশীল ব্যক্তি ও সংগঠন প্ল্যাটফর্মগুলোকে কৌশলগতভাবে ব্যবহার করে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছেন। স্বাধীন সংগীতশিল্পীরা এখন আর রেকর্ড কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল নন; তারা সরাসরি ইউটিউবের মাধ্যমে তাদের গান প্রকাশ করছেন। সামাজিক উদ্যোক্তারা ফেসবুকের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করছেন এবং সামাজিক পরিবর্তনমূলক আন্দোলন গড়ে তুলছেন। প্রান্তিক তরুণ-তরুণীরা টিকটকে নিজেদের অভিব্যক্তি তুলে ধরে নতুন সামাজিক পরিচয় গড়ে তুলছেন।

এটি প্রমাণ করে যে প্ল্যাটফর্ম সমাজ একতরফা শোষণ নয়, বরং এটি এক ধরনের ক্ষমতার ক্ষেত্র, যেখানে বৈশ্বিক অ্যালগরিদমের যুক্তির ভেতরেও স্থানীয় সৃজনশীলতা এবং প্রতিরোধ সম্ভব। মানুষ কেবল অ্যালগরিদমের পুতুল নয়, বরং তারা কৌশলগতভাবে এই প্ল্যাটফর্মগুলোকে ব্যবহার করে নিজেদের উদ্দেশ্য সাধন করতে পারে।

বাংলাদেশের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে এই প্ল্যাটফর্ম সমাজকে মোকাবিলা করা যায়। একদিকে প্ল্যাটফর্মগুলোকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করা সম্ভব নয়, কারণ তারা আধুনিক জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে, এদের ওপর অন্ধ নির্ভরতাও বিপজ্জনক। তাই প্রয়োজন একটি সংকর মডেল, যেখানে বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মগুলোর পাশাপাশি স্থানীয় জ্ঞানভিত্তিক অবকাঠামো তৈরি করা হবে।

রাষ্ট্রকে ডেটা সার্বভৌমত্ব নিয়ে কঠোর নীতি প্রণয়ন করতে হবে, যাতে ব্যবহারকারীর তথ্য সুরক্ষিত থাকে এবং বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলো স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে বাধ্য হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের ডিজিটাল অবকাঠামো তৈরি করতে হবে, যাতে স্থানীয় কন্টেন্ট উৎপাদন ও বিতরণ শক্তিশালী হয়। একইসঙ্গে তরুণ প্রজন্মকে ডিজিটাল সাক্ষরতা শেখাতে হবে, যাতে তারা অ্যালগরিদমের বিভ্রান্তি ও ভুয়া তথ্য থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারে।

বাংলাদেশের জ্ঞানের ভবিষ্যৎ এখন এক উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র। এখানে একদিকে রয়েছে বৈশ্বিক কর্পোরেট প্ল্যাটফর্ম, অন্যদিকে রয়েছে স্থানীয় আকাক্সক্ষা ও প্রতিরোধ। প্রশ্ন হলোÑএই প্রতিযোগিতার ফলাফল কার পক্ষে যাবে? যদি বাংলাদেশ কেবল ভোক্তা হয়ে থাকে, তবে জ্ঞানের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে সিলিকন ভ্যালির বোর্ডরুমে। কিন্তু যদি স্থানীয় সৃজনশীলতা, নীতি এবং উদ্যোগ একসঙ্গে এগিয়ে আসে, তবে প্ল্যাটফর্ম সমাজের ভেতরেও বাংলাদেশের নিজস্ব পথ তৈরি সম্ভব।

জ্ঞানের ভবিষ্যৎ কার হাতেÑএই প্রশ্নের উত্তর তাই নির্ভর করছে আজকের বাংলাদেশ কীভাবে ডিজিটাল নির্ভরতার ভেতর দিয়ে নিজের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে তার ওপর। প্ল্যাটফর্ম সমাজ কোনো দূর ভবিষ্যতের বাস্তবতা নয়; এটি ইতিমধ্যেই আমাদের প্রতিদিনের জীবনের অংশ। এখন লড়াই কেবল এটুকুইÑএই বাস্তবতা কার স্বার্থে কাজ করবে: বৈশ্বিক অ্যালগরিদমের, নাকি বাংলাদেশের নাগরিকদের?

[লেখক: গবেষক ও উন্নয়নকর্মী]

back to top