জাঁ- নেসার ওসমান
“আর নাই চিন্তা নাচি ধিনতা ধিনতা...নাই আর চিন্তা নাচি ধিনতা ধিনতা...”
“কিরে ভাই সাত সকালে সৃষ্টির্কতার নাম না জপে, এই সব নাচের শিক্ষকের তালিম নিয়ে নাচানাচি করছিস! বিষয়টা কী, কাল রাতে অধিক পরিমাণে কারণবারি পান করেছো নাকি?”
“কারণবারি! ফকিরনীর পোলার পান্তা খাওনের পয়সা নাই, কারণবারি! ফাইজলামির জায়গা পাননা মিয়া!”
“তাহলে এতো নর্তন-কুর্দনের এনার্জি পাস কোথা থেকে?”
“ভাইরে আন্নের বিগত স্বৈরাচারী সরকার বাঙালিরে ভেড়া বানায়া রাখছিলো, ভেড়া। ব্যা ব্যা ব্যা, কুনো হমুন্দি কুনো কথা কোইতো না, ব্যেবাগতে খালি ওস্তাদের লগে গলা মিলাইতো ব্যা ব্যা ব্যা...”
“আর এখন? কী এমন রাতারাতি পরিবেশ বদলে গেলো যে তোমায় ভোর সকালে সৃষ্টির্কতার নাম না জপে নাচানাচি করতে হবে?”
“ক্যান, আন্নের কি, পঞ্চইন্দ্রিয় ভোতা হইছেনি! চারিদিকের এই আনন্দঘন পরিবেশ আন্নের চক্ষুতে হড়ে ন?”
“আমার পঞ্চইন্দ্রিয়, চক্ষু, কর্ণ,নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বক সকলই সঠিক রুপে কাজ করছে, কেবল করোনার সময় নাসিকা একটু খটমট করেছে, তাতে ক্ষতি হয়নি বরং লাভই হয়েছে।”
“ওম্মারে, আন্নে কিয়া কন! নাসিকার বিদ্রোহ আন্নের লাই শুভবার্তা লইয়াইছে?”
“বুঝিসনা ব্যাটা যে সব বান্ধবীরা চটপটি, ফুচকা ও মুলাভর্তা দিয়ে ভূনা খিচুড়ি ভক্ষনে সিদ্ধহস্ত, তাদের সাথে করোনাকালে আলাপ চারিতায় কখনোই কোনো বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়নি। ঘন্টার পর ঘন্টা নির্ভাবনায় গল্প করেছি সকলই নাসিকার কল্যাণে। তা তোর বিগত স্বৈরাচারী সরকারের পঞ্চইন্দ্রিয় কি সঠিক ভাবে কাজ করেনি। তাই তারা এ্যতো বড় ষড়যন্ত্রের কিছুই টের পায়নি?”
“ভাই রে পঞ্চইন্দ্রিয়ের মাঝে ব্রেনের নাম নাই। ব্রেন মানে মস্তক, মস্তক মজক, বুঝলেন মজক যদি একটা ইন্দ্রিয় হইতো তায়লে হ্যারা টের পাইতো। জাউক্কা পুরান প্যাচাল পাইড়া লাভ নাই। আন্নে কি টের পাইছেন আমি ক্যালা নাচি?”
“আরে ভাই আমি ক্যান বাংলার আপামর পাঠক কেউই টের পাচ্ছে না তুই ক্যান ভোরসকালে সৃষ্টির্কতার নাম না জপে নাচানাচি করছিস।”
“ওই মিয়া আপনে দ্যাখেন নাই কয়দিন আগে মাইলস্টোন স্কুলের ছাদের উপর বিমান বাহিনীর ফাইটার প্লেন পইড়া নিরীহ কিছু শিশুকিশোরের জান কবচ করলো।”
“হ্যাঁ, দেখেছি, এই দুর্ঘটনার নিন্দা করার ভাষা আমার নেই। জীবনের কিছু বোঝার আগেই জীবনপ্রদীপ নিভলো। না না ভাই আমার বলার কিছুই নেই। কেবল সেই বাবা-মার জন্য আমার সমবেদনা জানানো ছাড়া আর কিছুই নেই। সত্য কথা বলতে কি, আমি মধ্যবিত্ত ভিরু বাঙালি একটা পোস্টার বা প্লাকার্ড হাতে নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়ানোর সাহসও নেই ভাই। তাই এসব নিয়ে অযথা লজ্জা দিস না।”
“ঘোমটা নায়লে আপনে নাই খুললেন, কিন্তু কামটা যে অদক্ষতার কারণে ঘটছে হ্যেইডাতো কোইবেন?”
“না ভাই আমি মধ্যবিত্ত ভিরু বাঙালি, আমি তাও বলতে পারবো না, যতক্ষণ না, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট কাগজে প্রকাশিত হয়।”
“ওই কোঁকড়ানো কালো বাবরি কেশ, আপনে যুদি কিছুই নিজ থ্যেইক্কা কোইতে না পারেন তায়লে পৃথিবীতে ঘুরেন ক্যান, যমালয়ে যায়া মৌউজ করেনগা।”
“তুই বুঝিস না আমাদের মতো ভিরু, কাপুরুষ, ডরপোকদের যমেও ছুঁয়ে দ্যেখে না। তাই হাজার চাইলে যমেও আমাদের টানে না! যাক বিমান দুর্ঘটনার বিষয়ে কি যেন বলছিলি?”
“কইতাছিলাম বিগত স্বৈরাচারী সরকার মাল খায়া কতগুলা অকিরনী ফকিরনীর দেশ থ্যেইক্কা বিমানে পাইলটগো ট্রেনিং দিয়া আনতো আর বাংলার ফাঁকিবাজ পোলারা ঠিক মতো ট্রেনিং না নিয়া বিদেশে শপিং কোইরা ফিইরা আইতো।”
“তো। এ আবার নতুন কথা কি শোনাচ্ছিস? এ তো, ধ্রুবসত্য বাঙালিরা বিদেশে ট্রেনিংয়ের নামে হাজার হাজার কোটি টাকার অপচয় করেছে। শুনেছি বর্তমান সরকার এইসব ট্রেনিংফ্রেনিং কাটছাট করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অপচয় রোধে স্বচেষ্ট।”
“জ্বী, অতক্ষনে অরিন্দম কহিলা বিষাদে, জানিনু ক্যামনে লক্ষণ আসি পসিল রক্ষপুরে...”
“মানে কিরে! এখানে আবার মাইকেল মধুসূদন দত্ত, মানে রাবণের পুত্র মেঘনাদ বধ কেন আসল?”
“আইল হেই লাইক্কা যে, বর্তমান সরকার যেমুন আকামে সরকারি ট্যাকায় গাড়ি কেনা, বিদেশ ভ্রমণ ব্যাবাগ ফালতু খরচ কমানের চেষ্টা করতাছে, একই লগে হ্যাতারা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ পইলট আইন্না আমাগো বৈামানিকদের ট্রেনিংদের, ফলে জিন্দেগিতে আর কুনো ফাইটার বিমান গোত্তা খায়া কুনো স্কুলের উপর পড়বো না।”
“কবে রে? কোথায় শুরু হলো এমনি পৃথিবীর সেরা ট্রেনিং?”
“ অলরেডি টাইগার লাইটিং, বাঘের বাচ্চা হাঙ্গর, মানে টইিগার শাকর্, দুই-তিনটা ট্রেনিং শেষ। অহন আমাগো পাইলটা আর কুনো দিন কুনো নাকবোঁচা, আলু-মালুরে, পাত্তা দিবো না। বুঝছেন কত্তবড় কাম হয়া গ্যাছেগা। পিরথীবির সেরা ট্রেনিং অহন বাংলাদেশের চট্টগ্রামে। ভাই বার আউলিয়ার পবিত্র ভূমি। আমাগো মানে বাংলার উন্নতি আর ঠ্যেকাইবো কেডা।”
“ওহ্ তোর কথায় সত্যি আমারো নাচতে ইচ্ছে করছে। সারা বিশ্বে আমরা আর ভেড়ার মতো ব্যা ব্যা ব্যা না কোরে, বুক ফুলিয়ে চলতে পারবো। তা ট্রেনিংটা দিচ্ছে কে?”
“আমাগো সরকারের সবথেইক্কা দিলের বন্ধু “দি ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা”।
“ওহ তাহলে তো আর কথায় নেই। বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়, হাতের মুঠোয় বিশ্ব...।”
“ঠিকই কোইছেন দু’নিয়া মেরি জেব মে, পৃথিবী আমার ফকেটে...”
[লেখক: চলচ্চিত্রকার]
জাঁ- নেসার ওসমান
বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
“আর নাই চিন্তা নাচি ধিনতা ধিনতা...নাই আর চিন্তা নাচি ধিনতা ধিনতা...”
“কিরে ভাই সাত সকালে সৃষ্টির্কতার নাম না জপে, এই সব নাচের শিক্ষকের তালিম নিয়ে নাচানাচি করছিস! বিষয়টা কী, কাল রাতে অধিক পরিমাণে কারণবারি পান করেছো নাকি?”
“কারণবারি! ফকিরনীর পোলার পান্তা খাওনের পয়সা নাই, কারণবারি! ফাইজলামির জায়গা পাননা মিয়া!”
“তাহলে এতো নর্তন-কুর্দনের এনার্জি পাস কোথা থেকে?”
“ভাইরে আন্নের বিগত স্বৈরাচারী সরকার বাঙালিরে ভেড়া বানায়া রাখছিলো, ভেড়া। ব্যা ব্যা ব্যা, কুনো হমুন্দি কুনো কথা কোইতো না, ব্যেবাগতে খালি ওস্তাদের লগে গলা মিলাইতো ব্যা ব্যা ব্যা...”
“আর এখন? কী এমন রাতারাতি পরিবেশ বদলে গেলো যে তোমায় ভোর সকালে সৃষ্টির্কতার নাম না জপে নাচানাচি করতে হবে?”
“ক্যান, আন্নের কি, পঞ্চইন্দ্রিয় ভোতা হইছেনি! চারিদিকের এই আনন্দঘন পরিবেশ আন্নের চক্ষুতে হড়ে ন?”
“আমার পঞ্চইন্দ্রিয়, চক্ষু, কর্ণ,নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বক সকলই সঠিক রুপে কাজ করছে, কেবল করোনার সময় নাসিকা একটু খটমট করেছে, তাতে ক্ষতি হয়নি বরং লাভই হয়েছে।”
“ওম্মারে, আন্নে কিয়া কন! নাসিকার বিদ্রোহ আন্নের লাই শুভবার্তা লইয়াইছে?”
“বুঝিসনা ব্যাটা যে সব বান্ধবীরা চটপটি, ফুচকা ও মুলাভর্তা দিয়ে ভূনা খিচুড়ি ভক্ষনে সিদ্ধহস্ত, তাদের সাথে করোনাকালে আলাপ চারিতায় কখনোই কোনো বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়নি। ঘন্টার পর ঘন্টা নির্ভাবনায় গল্প করেছি সকলই নাসিকার কল্যাণে। তা তোর বিগত স্বৈরাচারী সরকারের পঞ্চইন্দ্রিয় কি সঠিক ভাবে কাজ করেনি। তাই তারা এ্যতো বড় ষড়যন্ত্রের কিছুই টের পায়নি?”
“ভাই রে পঞ্চইন্দ্রিয়ের মাঝে ব্রেনের নাম নাই। ব্রেন মানে মস্তক, মস্তক মজক, বুঝলেন মজক যদি একটা ইন্দ্রিয় হইতো তায়লে হ্যারা টের পাইতো। জাউক্কা পুরান প্যাচাল পাইড়া লাভ নাই। আন্নে কি টের পাইছেন আমি ক্যালা নাচি?”
“আরে ভাই আমি ক্যান বাংলার আপামর পাঠক কেউই টের পাচ্ছে না তুই ক্যান ভোরসকালে সৃষ্টির্কতার নাম না জপে নাচানাচি করছিস।”
“ওই মিয়া আপনে দ্যাখেন নাই কয়দিন আগে মাইলস্টোন স্কুলের ছাদের উপর বিমান বাহিনীর ফাইটার প্লেন পইড়া নিরীহ কিছু শিশুকিশোরের জান কবচ করলো।”
“হ্যাঁ, দেখেছি, এই দুর্ঘটনার নিন্দা করার ভাষা আমার নেই। জীবনের কিছু বোঝার আগেই জীবনপ্রদীপ নিভলো। না না ভাই আমার বলার কিছুই নেই। কেবল সেই বাবা-মার জন্য আমার সমবেদনা জানানো ছাড়া আর কিছুই নেই। সত্য কথা বলতে কি, আমি মধ্যবিত্ত ভিরু বাঙালি একটা পোস্টার বা প্লাকার্ড হাতে নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়ানোর সাহসও নেই ভাই। তাই এসব নিয়ে অযথা লজ্জা দিস না।”
“ঘোমটা নায়লে আপনে নাই খুললেন, কিন্তু কামটা যে অদক্ষতার কারণে ঘটছে হ্যেইডাতো কোইবেন?”
“না ভাই আমি মধ্যবিত্ত ভিরু বাঙালি, আমি তাও বলতে পারবো না, যতক্ষণ না, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট কাগজে প্রকাশিত হয়।”
“ওই কোঁকড়ানো কালো বাবরি কেশ, আপনে যুদি কিছুই নিজ থ্যেইক্কা কোইতে না পারেন তায়লে পৃথিবীতে ঘুরেন ক্যান, যমালয়ে যায়া মৌউজ করেনগা।”
“তুই বুঝিস না আমাদের মতো ভিরু, কাপুরুষ, ডরপোকদের যমেও ছুঁয়ে দ্যেখে না। তাই হাজার চাইলে যমেও আমাদের টানে না! যাক বিমান দুর্ঘটনার বিষয়ে কি যেন বলছিলি?”
“কইতাছিলাম বিগত স্বৈরাচারী সরকার মাল খায়া কতগুলা অকিরনী ফকিরনীর দেশ থ্যেইক্কা বিমানে পাইলটগো ট্রেনিং দিয়া আনতো আর বাংলার ফাঁকিবাজ পোলারা ঠিক মতো ট্রেনিং না নিয়া বিদেশে শপিং কোইরা ফিইরা আইতো।”
“তো। এ আবার নতুন কথা কি শোনাচ্ছিস? এ তো, ধ্রুবসত্য বাঙালিরা বিদেশে ট্রেনিংয়ের নামে হাজার হাজার কোটি টাকার অপচয় করেছে। শুনেছি বর্তমান সরকার এইসব ট্রেনিংফ্রেনিং কাটছাট করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অপচয় রোধে স্বচেষ্ট।”
“জ্বী, অতক্ষনে অরিন্দম কহিলা বিষাদে, জানিনু ক্যামনে লক্ষণ আসি পসিল রক্ষপুরে...”
“মানে কিরে! এখানে আবার মাইকেল মধুসূদন দত্ত, মানে রাবণের পুত্র মেঘনাদ বধ কেন আসল?”
“আইল হেই লাইক্কা যে, বর্তমান সরকার যেমুন আকামে সরকারি ট্যাকায় গাড়ি কেনা, বিদেশ ভ্রমণ ব্যাবাগ ফালতু খরচ কমানের চেষ্টা করতাছে, একই লগে হ্যাতারা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ পইলট আইন্না আমাগো বৈামানিকদের ট্রেনিংদের, ফলে জিন্দেগিতে আর কুনো ফাইটার বিমান গোত্তা খায়া কুনো স্কুলের উপর পড়বো না।”
“কবে রে? কোথায় শুরু হলো এমনি পৃথিবীর সেরা ট্রেনিং?”
“ অলরেডি টাইগার লাইটিং, বাঘের বাচ্চা হাঙ্গর, মানে টইিগার শাকর্, দুই-তিনটা ট্রেনিং শেষ। অহন আমাগো পাইলটা আর কুনো দিন কুনো নাকবোঁচা, আলু-মালুরে, পাত্তা দিবো না। বুঝছেন কত্তবড় কাম হয়া গ্যাছেগা। পিরথীবির সেরা ট্রেনিং অহন বাংলাদেশের চট্টগ্রামে। ভাই বার আউলিয়ার পবিত্র ভূমি। আমাগো মানে বাংলার উন্নতি আর ঠ্যেকাইবো কেডা।”
“ওহ্ তোর কথায় সত্যি আমারো নাচতে ইচ্ছে করছে। সারা বিশ্বে আমরা আর ভেড়ার মতো ব্যা ব্যা ব্যা না কোরে, বুক ফুলিয়ে চলতে পারবো। তা ট্রেনিংটা দিচ্ছে কে?”
“আমাগো সরকারের সবথেইক্কা দিলের বন্ধু “দি ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা”।
“ওহ তাহলে তো আর কথায় নেই। বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়, হাতের মুঠোয় বিশ্ব...।”
“ঠিকই কোইছেন দু’নিয়া মেরি জেব মে, পৃথিবী আমার ফকেটে...”
[লেখক: চলচ্চিত্রকার]