আরিফ উল্লাহ
রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলার প্রধান নিয়ামক হচ্ছে পর্যাপ্ত তহবিল ও এর সর্বোত্তম ব্যবহার কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি এই খাতে আমাদের হতাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর রোহিঙ্গা সংকটের অবস্থা আরো নাজুক হয়ে পড়ে। মানবিক সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলো হতবাক হয়ে যায়, তহবিল সংকট চরমে পৌঁছায়, বন্ধ হয়ে যায় অনেক চলমান প্রকল্প, এই ঘটনার পর লোকালাইজেশনের গুরুত্ব সকলের কাছে পরিষ্কার হতে থাকে, কিন্তু লোকালাইজেশন কেমন হবে, কোন এজেন্সির দায়িত্ব কেমন হবে, কে কোন পদ্ধতিতে কার্যক্রম পরিকল্পনা করবে তা পরিষ্কার নয়।
লোকালাইজেশন এর সহজ-সরল অর্থ হলো লোকাল এজেন্সিগুলোর দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করা, যাতে তারা সুন্দরভাবে স্বচ্ছতার সাথে মানবিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারে। এখন কথা হচ্ছে কারা এই সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করবে? এর উত্তর হলো ইউএন এজেন্সি ও দাতা সংস্থা এবং ক্ষেত্র বিশেষে সরকার এই কাজে সহায়তা করবে। এবার মনে প্রশ্ন আসতে পারে কোন ধরনের দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করবে? এর উত্তর হলো প্রতিটি সেক্টরে, যেমন ইউএন এজেন্সিগুলো তাদের প্যারামিটার দিয়ে যাচাই বাছাই করে যে সকল খাতে দুর্বলতা দেখা দিবে সেসব ক্ষাতে পরিবর্তন, পরিমার্জন, সংযোজন ও বিয়োজন করবে, যেমন নীতিমালা সমৃদ্ধি করা, মনিটরিং ও ইভালুয়েশন সেকশনের উন্নয়ন করা, পেশাগত মান বৃদ্ধির জন্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং ফাইনান্স ও অ্যাডমিনিস্ট্রেশনাল দক্ষতা বৃদ্ধি করার জন্য পরীক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান করা।
কেন স্থানীয় সংস্থাগুলোকে দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে ও তাদের অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন? আমরা যদি দেখি দিন দিন রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলা করা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে, একদিকে কমছে তহবিল, অন্য দিকে বাড়ছে রোহিঙ্গা জনসংখ্যা একই সাথে প্রতিদিন কোনো না কোনোভাবে নতুন নতুন রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে মাদক, অপহরণসহ অন্যান্য অপরাধ কর্মকাণ্ড। প্রথমত, স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নৈতিকভাবে যতখানি আন্তরিকতার সাথে কাজ করবে বিদেশী বা দেশের অন্য কোনো অঞ্চলের কোনো প্রতিষ্ঠান সেভাবে কাজ করতে পারবে না। কোনো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলে অন্য প্রতিষ্ঠান এই সমস্যা মোকাবেলা করায় যতোটা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তা ততটা কঠিন নয়।
দ্বিতীয়ত, স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ব্যয় অন্য এজেন্সির তুলনায় অনেক কম, এই প্রতিষ্ঠাগুলো স্থানীয় সম্পদের উৎকৃষ্ট ব্যবহার নিশ্চিত করতে সক্ষম এবং তারা তাই করে থাকে, এর ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা সেই কার্যক্রমকে নিজের মনে করে এবং সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য সহযোগিতা করে কারণ অঞ্চলের প্রতিও তাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। অন্যদিকে স্থানীয় সংস্থাগুলো স্থানীয় মানব সম্পদ কাজে লাগানোর প্রচেষ্টা করে, এতে করে অফিস থেকে ফিল্ড যাতায়াতের জন্য আলাদা কোনো যানবাহনের প্রয়োজন হয় না, স্থানীয় সংস্থার কর্মীদের নিজ কর্ম এলাকায় রাত্রি যাপন করতে হয়, যার ফলে কর্মীরা সঠিক সময়ে কর্মস্থলে পৌঁছাতে সক্ষম, এর ফলে সময়ের পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়।
তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো স্থায়িত্ব, যে সকল সংগঠনগুলো কক্সবাজারে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে বাধ্য, যাদের উৎপত্তি কক্সবাজার বা যারা কক্সবাজারে রোহিঙ্গা সংকটের অনেক বছর আগে থেকে কর্যক্রম পরিচালনা করে আসছে এবং যে সংগঠনগুলো দাতা সংস্থার সহযোগিতা ছাড়াও সংকট কালে রোহিঙ্গা শিবিরে কার্যক্রম চালিয়ে নিতে সক্ষম এবং যে সংগঠন কখনো তাদের কার্যক্রম গোটিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না বা অন্যত্র স্থানান্তর হবে না এমন সংগঠনগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কারণ তহবিল সংকটের সাথে সাথে অনেক সংস্থা তাদের অফিস বন্ধ করে চলে গিয়েছে, কিন্তু স্থানীয় সংস্থাগুলো শেষ দিন পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম চালিয়ে নিয়ে যাবে কেননা তারা নিজ এলাকার প্রতি ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ।
এবার নজর দেয়া যাক বর্তমান অবস্থার দিকে, আমরা যদি দেখি তাহলে কিছু বিষয় এখনই সংস্কার করা প্রয়োজন, যেমন আইএনজিও এবং ইউএন যে সকল সংস্থা রোহিঙ্গা শিবিরে কাজ করে তাদের উপস্থিতি কর্মস্থলে ৯টায় নিশ্চিত করতে হবে, আরআরআরসি অফিসের কর্মকর্তাদের জন্য উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থান নিশ্চিত করার বিষয়টি নিশ্চিত করা খুব জরুরী।
দাতা সংস্থা যখনই কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সিদ্ধান্ত নিবে তখন কল ফর প্রপোজাল এর সাথে কক্সবাজারে সংস্থার স্থায়ীত্ব ও সংস্থার এক্সিট স্ট্রেটেজি জানতে চাইবে। ইউএন এজেন্সিগুলো অবশ্যই স্থানীয় সংস্থাকে অধিক গুরুত্ব দিবে, বিশেষ করে যারা কক্সবাজারে কয়েকযুগ যাবত কাজ করে চলেছে। আমাদেরকে এটা নিশ্চিত করতে হবে এমন সংস্থাকে অর্থ আর দক্ষতা প্রদান করে কোনো লাভ হবে না যদিনা সে কক্সবাজারের স্থায়ী না হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বল্প খরচে অধিক কাজ আদায় করতে হবে অন্যথায় কক্সবাজারের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা একদিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তাই আমাদের উচিৎ কক্সবাজার রক্ষায় এগিয়ে আসা।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
[লেখক: উন্নয়নকর্মী]
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
আরিফ উল্লাহ
সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫
রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলার প্রধান নিয়ামক হচ্ছে পর্যাপ্ত তহবিল ও এর সর্বোত্তম ব্যবহার কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি এই খাতে আমাদের হতাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর রোহিঙ্গা সংকটের অবস্থা আরো নাজুক হয়ে পড়ে। মানবিক সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলো হতবাক হয়ে যায়, তহবিল সংকট চরমে পৌঁছায়, বন্ধ হয়ে যায় অনেক চলমান প্রকল্প, এই ঘটনার পর লোকালাইজেশনের গুরুত্ব সকলের কাছে পরিষ্কার হতে থাকে, কিন্তু লোকালাইজেশন কেমন হবে, কোন এজেন্সির দায়িত্ব কেমন হবে, কে কোন পদ্ধতিতে কার্যক্রম পরিকল্পনা করবে তা পরিষ্কার নয়।
লোকালাইজেশন এর সহজ-সরল অর্থ হলো লোকাল এজেন্সিগুলোর দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করা, যাতে তারা সুন্দরভাবে স্বচ্ছতার সাথে মানবিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারে। এখন কথা হচ্ছে কারা এই সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করবে? এর উত্তর হলো ইউএন এজেন্সি ও দাতা সংস্থা এবং ক্ষেত্র বিশেষে সরকার এই কাজে সহায়তা করবে। এবার মনে প্রশ্ন আসতে পারে কোন ধরনের দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করবে? এর উত্তর হলো প্রতিটি সেক্টরে, যেমন ইউএন এজেন্সিগুলো তাদের প্যারামিটার দিয়ে যাচাই বাছাই করে যে সকল খাতে দুর্বলতা দেখা দিবে সেসব ক্ষাতে পরিবর্তন, পরিমার্জন, সংযোজন ও বিয়োজন করবে, যেমন নীতিমালা সমৃদ্ধি করা, মনিটরিং ও ইভালুয়েশন সেকশনের উন্নয়ন করা, পেশাগত মান বৃদ্ধির জন্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং ফাইনান্স ও অ্যাডমিনিস্ট্রেশনাল দক্ষতা বৃদ্ধি করার জন্য পরীক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান করা।
কেন স্থানীয় সংস্থাগুলোকে দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে ও তাদের অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন? আমরা যদি দেখি দিন দিন রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলা করা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে, একদিকে কমছে তহবিল, অন্য দিকে বাড়ছে রোহিঙ্গা জনসংখ্যা একই সাথে প্রতিদিন কোনো না কোনোভাবে নতুন নতুন রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে মাদক, অপহরণসহ অন্যান্য অপরাধ কর্মকাণ্ড। প্রথমত, স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নৈতিকভাবে যতখানি আন্তরিকতার সাথে কাজ করবে বিদেশী বা দেশের অন্য কোনো অঞ্চলের কোনো প্রতিষ্ঠান সেভাবে কাজ করতে পারবে না। কোনো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলে অন্য প্রতিষ্ঠান এই সমস্যা মোকাবেলা করায় যতোটা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তা ততটা কঠিন নয়।
দ্বিতীয়ত, স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ব্যয় অন্য এজেন্সির তুলনায় অনেক কম, এই প্রতিষ্ঠাগুলো স্থানীয় সম্পদের উৎকৃষ্ট ব্যবহার নিশ্চিত করতে সক্ষম এবং তারা তাই করে থাকে, এর ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা সেই কার্যক্রমকে নিজের মনে করে এবং সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য সহযোগিতা করে কারণ অঞ্চলের প্রতিও তাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। অন্যদিকে স্থানীয় সংস্থাগুলো স্থানীয় মানব সম্পদ কাজে লাগানোর প্রচেষ্টা করে, এতে করে অফিস থেকে ফিল্ড যাতায়াতের জন্য আলাদা কোনো যানবাহনের প্রয়োজন হয় না, স্থানীয় সংস্থার কর্মীদের নিজ কর্ম এলাকায় রাত্রি যাপন করতে হয়, যার ফলে কর্মীরা সঠিক সময়ে কর্মস্থলে পৌঁছাতে সক্ষম, এর ফলে সময়ের পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়।
তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো স্থায়িত্ব, যে সকল সংগঠনগুলো কক্সবাজারে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে বাধ্য, যাদের উৎপত্তি কক্সবাজার বা যারা কক্সবাজারে রোহিঙ্গা সংকটের অনেক বছর আগে থেকে কর্যক্রম পরিচালনা করে আসছে এবং যে সংগঠনগুলো দাতা সংস্থার সহযোগিতা ছাড়াও সংকট কালে রোহিঙ্গা শিবিরে কার্যক্রম চালিয়ে নিতে সক্ষম এবং যে সংগঠন কখনো তাদের কার্যক্রম গোটিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না বা অন্যত্র স্থানান্তর হবে না এমন সংগঠনগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কারণ তহবিল সংকটের সাথে সাথে অনেক সংস্থা তাদের অফিস বন্ধ করে চলে গিয়েছে, কিন্তু স্থানীয় সংস্থাগুলো শেষ দিন পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম চালিয়ে নিয়ে যাবে কেননা তারা নিজ এলাকার প্রতি ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ।
এবার নজর দেয়া যাক বর্তমান অবস্থার দিকে, আমরা যদি দেখি তাহলে কিছু বিষয় এখনই সংস্কার করা প্রয়োজন, যেমন আইএনজিও এবং ইউএন যে সকল সংস্থা রোহিঙ্গা শিবিরে কাজ করে তাদের উপস্থিতি কর্মস্থলে ৯টায় নিশ্চিত করতে হবে, আরআরআরসি অফিসের কর্মকর্তাদের জন্য উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থান নিশ্চিত করার বিষয়টি নিশ্চিত করা খুব জরুরী।
দাতা সংস্থা যখনই কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সিদ্ধান্ত নিবে তখন কল ফর প্রপোজাল এর সাথে কক্সবাজারে সংস্থার স্থায়ীত্ব ও সংস্থার এক্সিট স্ট্রেটেজি জানতে চাইবে। ইউএন এজেন্সিগুলো অবশ্যই স্থানীয় সংস্থাকে অধিক গুরুত্ব দিবে, বিশেষ করে যারা কক্সবাজারে কয়েকযুগ যাবত কাজ করে চলেছে। আমাদেরকে এটা নিশ্চিত করতে হবে এমন সংস্থাকে অর্থ আর দক্ষতা প্রদান করে কোনো লাভ হবে না যদিনা সে কক্সবাজারের স্থায়ী না হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বল্প খরচে অধিক কাজ আদায় করতে হবে অন্যথায় কক্সবাজারের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা একদিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তাই আমাদের উচিৎ কক্সবাজার রক্ষায় এগিয়ে আসা।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
[লেখক: উন্নয়নকর্মী]