alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

আলু চাষের আধুনিক প্রযুক্তি

মাহফুজ আলম

: বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫

(গতকালের পর)

২. সেচের সময়সূচি:

সেচ প্রয়োগের সময়কাল আলুর বৃদ্ধির বিভিন্ন পর্যায়ে ভিন্ন হতে পারে-

স্টোলন বের হওয়ার সময় (২০-২৫ দিন): বীজ রোপণের ২০-২৫ দিনের মধ্যে স্টোলন (কন্দ গঠনের প্রাথমিক ধাপ) বের হয়। এ সময়ে জমিতে পর্যাপ্ত রস নিশ্চিত করতে সেচ দেওয়া জরুরি।

গুটি বের হওয়ার সময় (৪০-৪৫ দিন): গুটি গঠনের সময়ে সেচ প্রয়োগ করতে হবে, কারণ এই পর্যায়ে মাটির আর্দ্রতার অভাব ফসলের ফলনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

আলু বৃদ্ধির সময়: আলুর বৃদ্ধির সময় (৫০-৬০ দিন) সেচ দেওয়া প্রয়োজন, তবে সঠিক পরিমাণে। এই সময়ে মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখলে কন্দের আকার বড় হয় এবং গুণগত মান উন্নত হয়।

৩. সেচ বন্ধ করার সময়:

জমি থেকে আলু উত্তোলনের ৭-১০ দিন আগে সেচ বন্ধ করতে হবে। এ সময় সেচ বন্ধ রাখলে আলুর খোসা শক্ত হয়, যা সংরক্ষণে সহায়ক।

৪. দাঁদ রোগ নিয়ন্ত্রণ:

দাঁদ রোগ প্রতিরোধের জন্য সেচ ব্যবস্থাপনায় বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন-

রসের ঘাটতি রোধ (৩০-৫০ দিন): আলু রোপণের ৩০-৫০ দিনের মধ্যে মাটিতে আর্দ্রতার ঘাটতি যেন না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

রসের আধিক্য রোধ (৬০-৬৫ দিন): আলু রোপণের ৬০-৬৫ দিনের পর জমিতে অতিরিক্ত আর্দ্রতা যেন না থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অতিরিক্ত আর্দ্রতা দাঁদ রোগ সৃষ্টি করতে পারে।

আলুর মড়ক রোগ দমন:

ছত্রাকের আক্রমনে এ রোগ হয়ে থাকে। প্রতি বছর আমাদের দেশে এ রোগের কারণে ব্যাপক ক্ষতি সাধতি হয়।

প্রতিরোধের উপায়- রোগমুক্ত জমি হতে শুকনা আলু বীজের জন্য সংগ্রহ করতে হবে। ফসল উঠার পর জমির আক্রান্ত গাছের পরিত্যক্ত অংশসমূহ পুড়ে ফেলতে হবে। গাছের গোড়ার মাটি উচু করে দিলে মাটির নীচে আলুকে রোগজীবানু আক্রমণ করতে পারে না। আলু ও টমেটো ছাড়া জমিতে অন্য ফসল যেমন ধান দিয়ে শস্য পর্যায় অবলম্বন করতে হবে। বৃষ্টির পর বা মাটি ভিজা অবস্থায় কখনও আলু উঠানো উচিৎ নয়। হিমাগারে আলু রাখার আগে রোগমুক্ত আলু বাছাই করে রাখতে হবে। আক্রান্ত জমিতে রোগ নিয়ন্ত্রণ না হওয়া পর্যন্ত সেচ প্রদান বন্ধ রাখতে হবে।

রোগ হওয়ার পর করণীয়:

জমিতে রোগ দেখা দিলে ৪/৫ দিন পর পর নিম্নবর্ণিত গ্রুপের যে কোন ছত্রাকনাশক বা পর্যায়ক্রমে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করে গাছ ভালভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে:

সিকিউর ৬০০ ডব্লিউজি (ম্যানকোজেব ৫০% + ফেনামিডন ১০%) অথবা এক্রোবেট এম জেড (ম্যানকোজেব ৬০% + ডাইমেথোমর্ফ ৯%) অথবা কমপ্যানিয়ন ৭৫ ডাব্লিউপি (ম্যানকোজেব ৬৩%+কার্বেন্ডাজিম ১২%) অথবা মেলোডি ডুও ৬৬.৮ ডব্লিউপি (প্রোপিনেব ৭০% + ইপ্রোভেলিকার্ব) ৪ গ্রাম +সিকিউর ৬০০ ডব্লিউজি ১ গ্রাম।

আলু উত্তোলন পদ্ধতি:

আলু উত্তোলনের সময় সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে ফসলের গুণগত মান অক্ষুণœ থাকে এবং সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত হয়। আলু উত্তোলনের জন্য শুষ্ক, উজ্জ্বল এবং ভালো আবহাওয়া নির্বাচন করতে হবে। উত্তোলনের ৭-১০ দিন আগে জমিতে সেচ বন্ধ করতে হবে, যাতে আলুর খোসা শক্ত হয়। এক সারির পর এক সারি কোদাল বা লাঙ্গল দিয়ে আলু উঠাতে হবে। উত্তোলনের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন আলু আঘাতপ্রাপ্ত না হয়। উত্তোলনের পর আলু প্রখর রৌদ্রে ফেলে রাখা যাবে না, কারণ তাতে আলুর মান নষ্ট হতে পারে। মাঠে প্রাথমিক বাছাইয়ের মাধ্যমে কাটা, ফাটা, ক্ষতিগ্রস্ত এবং আংশিক পচা আলু পৃথক করতে হবে। ভালো আলু থেকে এসব আলু আলাদা করে রাখতে হবে, যাতে গুণগত মান বজায় থাকে।

পরিবহন ও সংরক্ষণ:

আলু উত্তোলনের পর সতর্কতার সাথে বস্তা বা চট দ্বারা আবৃত ঝুড়িতে করে অস্থায়ী শেডে আনতে হবে।আলুর বস্তা বা ঝুড়ি আছড়ানো যাবে না, কারণ এতে আলুর চামড়া উঠে যেতে পারে বা আলু থেতলে যেতে পারে।

উপসংহার:

বাংলাদেশের জন্য আলু একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ফসল। আধুনিক পদ্ধতিতে আলু চাষ করলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং কৃষকের আর্থিক উন্নতি ঘটে। উচ্চ ফলনশীল জাত, উন্নত বীজ, সঠিক মাটি প্রস্তুতি, সার, সেচ, রোগ দমন প্রযুক্তি এবং ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করলে বাংলাদেশে আলু চাষ আরও লাভজনক হবে। সঠিক পরিকল্পনা, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, এবং বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নতির মাধ্যমে আলু দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কৃষকের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

[লেখক: পরিচালক (জনশক্তি ও প্রশিক্ষণ), বিএআরসি]

ই-বর্জ্য: নীরব বিষে দগ্ধ আমাদের ভবিষ্যৎ

ঢাকার জনপরিসর: আর্ভিং গফম্যানের সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ

আলু চাষের আধুনিক প্রযুক্তি

কলি ফুটিতে চাহে ফোটে না!

কৃষিতে স্মার্ট প্রযুক্তি

রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে লোকালাইজেশন অপরিহার্য

আইসিইউ থেকে বাড়ি ফেরা ও খাদের কিনারায় থাকা দেশ

বিচারবহির্ভূত হত্যার দায় কার?

ছবি

ট্রাম্পের ভেনেজুয়েলা কৌশল

অযৌক্তিক দাবি: পেশাগত নৈতিকতার সংকট ও জনপ্রশাসন

সড়ক দুর্ঘটনা এখন জাতীয় সংকট

কেন বাড়ছে দারিদ্র্য?

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পুনর্জন্ম

লবণাক্ততায় ডুবছে উপকূল

বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন ও বাস্তবতা

সড়ক দুর্ঘটনার সমাজতত্ত্ব: আইন প্রয়োগের ব্যর্থতা ও কাঠামোর চক্রাকার পুনরুৎপাদন

ছবি

অস্থির সময় ও অস্থির সমাজের পাঁচালি

ভারতে বামপন্থার পুনর্জাগরণ: ব্যাধি ও প্রতিকার

চিপনির্ভরতা কাটিয়ে চীনের উত্থান

একতার বাতাসে উড়ুক দক্ষিণ এশিয়ার পতাকা

ছবি

স্মরণ: শহীদ ডা. মিলন ও বৈষম্যহীন ব্যবস্থার সংগ্রাম

মনে পুরানো দিনের কথা আসে, মনে আসে, ফিরে আসে...

রাসায়নিক দূষণ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি

আছদগঞ্জের শুটকি : অতীতের গৌরব, বর্তমানের দুঃসময়

নবান্নের আনন্দ ও আমনের ফলন

‘প্রশ্ন কোরো না, প্রশ্ন সর্বনাশী’

ভূমিকম্প, অর্থনৈতিক চাপ এবং অনিশ্চয়তা: মানসিকতার নতুন অর্থনীতি

নবম পে স্কেল ও এর আর্থসামাজিক প্রভাব

মৃত্যুদণ্ড, তারপর...

জমির ভুয়া দলিল কীভাবে বাতিল করবেন?

জুলাই সনদ আদিবাসীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি

ব্যাংকের দুরবস্থা থামানো যাচ্ছে না কেন

আমন ধানে ব্রাউন প্ল্যান্টহপারের প্রাদুর্ভাব

বৈষম্য, অপচয় ও খাদ্যনিরাপত্তার সংকট

“বাঙালি আমরা, নহিতো...”

নারী নির্যাতন, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সমাজের দায়

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

আলু চাষের আধুনিক প্রযুক্তি

মাহফুজ আলম

বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫

(গতকালের পর)

২. সেচের সময়সূচি:

সেচ প্রয়োগের সময়কাল আলুর বৃদ্ধির বিভিন্ন পর্যায়ে ভিন্ন হতে পারে-

স্টোলন বের হওয়ার সময় (২০-২৫ দিন): বীজ রোপণের ২০-২৫ দিনের মধ্যে স্টোলন (কন্দ গঠনের প্রাথমিক ধাপ) বের হয়। এ সময়ে জমিতে পর্যাপ্ত রস নিশ্চিত করতে সেচ দেওয়া জরুরি।

গুটি বের হওয়ার সময় (৪০-৪৫ দিন): গুটি গঠনের সময়ে সেচ প্রয়োগ করতে হবে, কারণ এই পর্যায়ে মাটির আর্দ্রতার অভাব ফসলের ফলনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

আলু বৃদ্ধির সময়: আলুর বৃদ্ধির সময় (৫০-৬০ দিন) সেচ দেওয়া প্রয়োজন, তবে সঠিক পরিমাণে। এই সময়ে মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখলে কন্দের আকার বড় হয় এবং গুণগত মান উন্নত হয়।

৩. সেচ বন্ধ করার সময়:

জমি থেকে আলু উত্তোলনের ৭-১০ দিন আগে সেচ বন্ধ করতে হবে। এ সময় সেচ বন্ধ রাখলে আলুর খোসা শক্ত হয়, যা সংরক্ষণে সহায়ক।

৪. দাঁদ রোগ নিয়ন্ত্রণ:

দাঁদ রোগ প্রতিরোধের জন্য সেচ ব্যবস্থাপনায় বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন-

রসের ঘাটতি রোধ (৩০-৫০ দিন): আলু রোপণের ৩০-৫০ দিনের মধ্যে মাটিতে আর্দ্রতার ঘাটতি যেন না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

রসের আধিক্য রোধ (৬০-৬৫ দিন): আলু রোপণের ৬০-৬৫ দিনের পর জমিতে অতিরিক্ত আর্দ্রতা যেন না থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অতিরিক্ত আর্দ্রতা দাঁদ রোগ সৃষ্টি করতে পারে।

আলুর মড়ক রোগ দমন:

ছত্রাকের আক্রমনে এ রোগ হয়ে থাকে। প্রতি বছর আমাদের দেশে এ রোগের কারণে ব্যাপক ক্ষতি সাধতি হয়।

প্রতিরোধের উপায়- রোগমুক্ত জমি হতে শুকনা আলু বীজের জন্য সংগ্রহ করতে হবে। ফসল উঠার পর জমির আক্রান্ত গাছের পরিত্যক্ত অংশসমূহ পুড়ে ফেলতে হবে। গাছের গোড়ার মাটি উচু করে দিলে মাটির নীচে আলুকে রোগজীবানু আক্রমণ করতে পারে না। আলু ও টমেটো ছাড়া জমিতে অন্য ফসল যেমন ধান দিয়ে শস্য পর্যায় অবলম্বন করতে হবে। বৃষ্টির পর বা মাটি ভিজা অবস্থায় কখনও আলু উঠানো উচিৎ নয়। হিমাগারে আলু রাখার আগে রোগমুক্ত আলু বাছাই করে রাখতে হবে। আক্রান্ত জমিতে রোগ নিয়ন্ত্রণ না হওয়া পর্যন্ত সেচ প্রদান বন্ধ রাখতে হবে।

রোগ হওয়ার পর করণীয়:

জমিতে রোগ দেখা দিলে ৪/৫ দিন পর পর নিম্নবর্ণিত গ্রুপের যে কোন ছত্রাকনাশক বা পর্যায়ক্রমে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করে গাছ ভালভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে:

সিকিউর ৬০০ ডব্লিউজি (ম্যানকোজেব ৫০% + ফেনামিডন ১০%) অথবা এক্রোবেট এম জেড (ম্যানকোজেব ৬০% + ডাইমেথোমর্ফ ৯%) অথবা কমপ্যানিয়ন ৭৫ ডাব্লিউপি (ম্যানকোজেব ৬৩%+কার্বেন্ডাজিম ১২%) অথবা মেলোডি ডুও ৬৬.৮ ডব্লিউপি (প্রোপিনেব ৭০% + ইপ্রোভেলিকার্ব) ৪ গ্রাম +সিকিউর ৬০০ ডব্লিউজি ১ গ্রাম।

আলু উত্তোলন পদ্ধতি:

আলু উত্তোলনের সময় সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে ফসলের গুণগত মান অক্ষুণœ থাকে এবং সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত হয়। আলু উত্তোলনের জন্য শুষ্ক, উজ্জ্বল এবং ভালো আবহাওয়া নির্বাচন করতে হবে। উত্তোলনের ৭-১০ দিন আগে জমিতে সেচ বন্ধ করতে হবে, যাতে আলুর খোসা শক্ত হয়। এক সারির পর এক সারি কোদাল বা লাঙ্গল দিয়ে আলু উঠাতে হবে। উত্তোলনের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন আলু আঘাতপ্রাপ্ত না হয়। উত্তোলনের পর আলু প্রখর রৌদ্রে ফেলে রাখা যাবে না, কারণ তাতে আলুর মান নষ্ট হতে পারে। মাঠে প্রাথমিক বাছাইয়ের মাধ্যমে কাটা, ফাটা, ক্ষতিগ্রস্ত এবং আংশিক পচা আলু পৃথক করতে হবে। ভালো আলু থেকে এসব আলু আলাদা করে রাখতে হবে, যাতে গুণগত মান বজায় থাকে।

পরিবহন ও সংরক্ষণ:

আলু উত্তোলনের পর সতর্কতার সাথে বস্তা বা চট দ্বারা আবৃত ঝুড়িতে করে অস্থায়ী শেডে আনতে হবে।আলুর বস্তা বা ঝুড়ি আছড়ানো যাবে না, কারণ এতে আলুর চামড়া উঠে যেতে পারে বা আলু থেতলে যেতে পারে।

উপসংহার:

বাংলাদেশের জন্য আলু একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ফসল। আধুনিক পদ্ধতিতে আলু চাষ করলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং কৃষকের আর্থিক উন্নতি ঘটে। উচ্চ ফলনশীল জাত, উন্নত বীজ, সঠিক মাটি প্রস্তুতি, সার, সেচ, রোগ দমন প্রযুক্তি এবং ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করলে বাংলাদেশে আলু চাষ আরও লাভজনক হবে। সঠিক পরিকল্পনা, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, এবং বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নতির মাধ্যমে আলু দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কৃষকের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

[লেখক: পরিচালক (জনশক্তি ও প্রশিক্ষণ), বিএআরসি]

back to top