বাবুল রবিদাস

বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ফিনল্যান্ড
সুখ হলো জীবনীশক্তির উচ্ছ্বাস। বিস্তৃত অর্থে আনন্দ, পরিতৃপ্তি ও সন্তুষ্টির সম্মিলনই সুখ। জন্মের পর থেকে মানুষ সুখের পেছনে ছুটতে থাকে। কিন্তু সুখ আসলে ব্যক্তিনির্ভর; কোনো বিষয়কে দেখার দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতাই সুখকে আপেক্ষিক করে তোলে। সাধারণত কয়েকটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে সুখের উপাদান নির্ধারণ করা হয়-নিজের ভালো থাকার মূল্যায়ন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির প্রতি সন্তুষ্টি, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, জিডিপি, দুর্নীতিহীন পরিবেশ এবং বেকারমুক্ত জীবন।
মহাভারতের একটি গল্পেও আছে-“যার কোনো ঋণ নেই, সেই ব্যক্তিই সবচেয়ে সুখী।” প্রতি বছর ২০ মার্চ বিশ্ব সুখ দিবস পালিত হয়। মানুষের সার্বজনীন সুখ ও ভালো থাকার প্রত্যাশাকে সামনে রেখেই এদিনের সূত্রপাত। দিবসটিতে প্রকাশিত হয় সুখী দেশের তালিকা। বিশ্বের ১৪৩টি দেশকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকে বিশ্লেষণ করে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত জরিপ প্রতিবেদন ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট-এও ১৪৩টি দেশ অন্তর্ভুক্ত হয়।
এ বছরের প্রতিবেদনে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ফিনল্যান্ড। আর বাংলাদেশ আছে ১২৯তম স্থানে। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে নেপালের অবস্থান ৯৩তম, পাকিস্তানের ১০৮তম, মিয়ানমারের ১১৮তম এবং শ্রীলঙ্কার ১২৮তম। ভারতের অবস্থানও বাংলাদেশের মতো ১২৯তম। তালিকার শীর্ষস্থান দখল করেছে নরডিক দেশগুলো-ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড ও সুইডেন যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে। পঞ্চম স্থানে রয়েছে ইসরায়েল।
নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, লুক্সেমবার্গ, সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া অবস্থান করছে যথাক্রমে ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম স্থানে। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো-ধনী দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি শীর্ষ ২০-এ জায়গা পায়নি; যুক্তরাষ্ট্র ২৩তম এবং জার্মানি ২৪তম। বিপরীতে কোস্টারিকা ১২তম ও কুয়েত ১৩তম স্থানে উঠে এসেছে।
ফিনল্যান্ড কেন সুখী?
মাত্র ৫৫ লাখ মানুষের দেশ ফিনল্যান্ড। রাজধানী হেলসিঙ্কিতে বাস করেন দুই লাখের বেশি মানুষ, যাদের একটি বড় অংশ অভিবাসী-মূলত সোমালি ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত। বনজ সম্পদ এ দেশের অর্থনীতির মূলভিত্তি। যেখানে একটি দেশে পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় অন্তত ২৫ শতাংশ বনভূমি প্রয়োজন, সেখানে ফিনল্যান্ডের বনভূমি ৭৪ শতাংশ। কাঠ তাদের প্রধান প্রাকৃতিক সম্পদ, যা রপ্তানি আয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ সরবরাহ করে।
ফিনল্যান্ড জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবেও বিখ্যাত। বেকার, অসুস্থ, অক্ষম ও বয়স্ক নাগরিক রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা পান। রয়েছে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা-প্রতিটি পৌরসভায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র, যার ব্যয় বহন করে সরকার।
ফিনিশরা বই পড়তে ভালোবাসে; দেশজুড়ে দেড় হাজারের বেশি লাইব্রেরি আছে। প্রতি হাজার মানুষের জন্য টেলিভিশনের সংখ্যা ৬৯৩। সারা দেশে ৫৫টি দৈনিক প্রকাশিত হয়। তাদের ভাষা ফিনিশ হলেও সুইডিশ ভাষাকেও গুরুত্ব দিয়ে শেখানো হয়।
ফিনিশ সংস্কৃতিতে সময়ের মূল্য অত্যন্ত বেশি-সকাল ১০টা মানে ঠিক ১০টায়ই উপস্থিতি। নীরবতা, সংযম ও সরলতা তাদের সামাজিক চরিত্রের অংশ।
রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্ত শেয়ার করায় ফিনল্যান্ড পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দিতে চায়। ইতোমধ্যে তারা তুরস্কের অনুমোদন পেয়েছে; বাকি আনুষ্ঠানিকতা সময়ের অপেক্ষা।
বাংলাদেশি এক ব্যক্তি, যিনি দীর্ঘদিন ফিনল্যান্ডে বসবাস করেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন-১৭টি দেশ ভ্রমণ করে তিনি বুঝেছেন, নিরাপত্তা ও ব্যক্তিস্বাধীনতায় ফিনল্যান্ডের সমকক্ষ দেশ খুব কম।
ফিনল্যান্ড একটি সমাজকল্যাণমূলক রাষ্ট্র। আয়ের ভিত্তিতে কর আরোপ করা হয় এবং সেই কর থেকেই সরকার নাগরিকদের জন্য শিক্ষা, শিশুভাতা, মাতৃত্ব–পিতৃত্ব ভাতা, বেকার ভাতা, আবাসন সহায়তা, স্বাস্থ্যসেবা ও বয়স্ক ভাতার মতো সুবিধা প্রদান করে।
শীতপ্রধান ও অন্ধকারাচ্ছন্ন দেশের বাসিন্দাদের জন্য ভিটামিন-ডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বছরের বড় সময় সূর্যালোক কম থাকলেও ফিনিশরা নিয়মমাফিক জীবনযাপন ও পরিশ্রমী মনোভাব দিয়ে তা সামলে নেয়। লিঙ্গসমতায়ও ফিনল্যান্ড বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর একটি।
বাংলাদেশ থেকে বহু বছর ধরে শিক্ষার্থী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও ব্যবসায়ীরা ফিনল্যান্ডে যাচ্ছেন-উন্নত জীবন, স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় কল্যাণব্যবস্থার আকর্ষণে।
লেখক: আইনজীবী, জজ কোর্ট, জয়পুরহাট]
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বাবুল রবিদাস

বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ফিনল্যান্ড
শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
সুখ হলো জীবনীশক্তির উচ্ছ্বাস। বিস্তৃত অর্থে আনন্দ, পরিতৃপ্তি ও সন্তুষ্টির সম্মিলনই সুখ। জন্মের পর থেকে মানুষ সুখের পেছনে ছুটতে থাকে। কিন্তু সুখ আসলে ব্যক্তিনির্ভর; কোনো বিষয়কে দেখার দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতাই সুখকে আপেক্ষিক করে তোলে। সাধারণত কয়েকটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে সুখের উপাদান নির্ধারণ করা হয়-নিজের ভালো থাকার মূল্যায়ন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির প্রতি সন্তুষ্টি, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, জিডিপি, দুর্নীতিহীন পরিবেশ এবং বেকারমুক্ত জীবন।
মহাভারতের একটি গল্পেও আছে-“যার কোনো ঋণ নেই, সেই ব্যক্তিই সবচেয়ে সুখী।” প্রতি বছর ২০ মার্চ বিশ্ব সুখ দিবস পালিত হয়। মানুষের সার্বজনীন সুখ ও ভালো থাকার প্রত্যাশাকে সামনে রেখেই এদিনের সূত্রপাত। দিবসটিতে প্রকাশিত হয় সুখী দেশের তালিকা। বিশ্বের ১৪৩টি দেশকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকে বিশ্লেষণ করে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত জরিপ প্রতিবেদন ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট-এও ১৪৩টি দেশ অন্তর্ভুক্ত হয়।
এ বছরের প্রতিবেদনে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ফিনল্যান্ড। আর বাংলাদেশ আছে ১২৯তম স্থানে। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে নেপালের অবস্থান ৯৩তম, পাকিস্তানের ১০৮তম, মিয়ানমারের ১১৮তম এবং শ্রীলঙ্কার ১২৮তম। ভারতের অবস্থানও বাংলাদেশের মতো ১২৯তম। তালিকার শীর্ষস্থান দখল করেছে নরডিক দেশগুলো-ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড ও সুইডেন যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে। পঞ্চম স্থানে রয়েছে ইসরায়েল।
নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, লুক্সেমবার্গ, সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া অবস্থান করছে যথাক্রমে ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম স্থানে। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো-ধনী দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি শীর্ষ ২০-এ জায়গা পায়নি; যুক্তরাষ্ট্র ২৩তম এবং জার্মানি ২৪তম। বিপরীতে কোস্টারিকা ১২তম ও কুয়েত ১৩তম স্থানে উঠে এসেছে।
ফিনল্যান্ড কেন সুখী?
মাত্র ৫৫ লাখ মানুষের দেশ ফিনল্যান্ড। রাজধানী হেলসিঙ্কিতে বাস করেন দুই লাখের বেশি মানুষ, যাদের একটি বড় অংশ অভিবাসী-মূলত সোমালি ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত। বনজ সম্পদ এ দেশের অর্থনীতির মূলভিত্তি। যেখানে একটি দেশে পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় অন্তত ২৫ শতাংশ বনভূমি প্রয়োজন, সেখানে ফিনল্যান্ডের বনভূমি ৭৪ শতাংশ। কাঠ তাদের প্রধান প্রাকৃতিক সম্পদ, যা রপ্তানি আয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ সরবরাহ করে।
ফিনল্যান্ড জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবেও বিখ্যাত। বেকার, অসুস্থ, অক্ষম ও বয়স্ক নাগরিক রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা পান। রয়েছে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা-প্রতিটি পৌরসভায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র, যার ব্যয় বহন করে সরকার।
ফিনিশরা বই পড়তে ভালোবাসে; দেশজুড়ে দেড় হাজারের বেশি লাইব্রেরি আছে। প্রতি হাজার মানুষের জন্য টেলিভিশনের সংখ্যা ৬৯৩। সারা দেশে ৫৫টি দৈনিক প্রকাশিত হয়। তাদের ভাষা ফিনিশ হলেও সুইডিশ ভাষাকেও গুরুত্ব দিয়ে শেখানো হয়।
ফিনিশ সংস্কৃতিতে সময়ের মূল্য অত্যন্ত বেশি-সকাল ১০টা মানে ঠিক ১০টায়ই উপস্থিতি। নীরবতা, সংযম ও সরলতা তাদের সামাজিক চরিত্রের অংশ।
রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্ত শেয়ার করায় ফিনল্যান্ড পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দিতে চায়। ইতোমধ্যে তারা তুরস্কের অনুমোদন পেয়েছে; বাকি আনুষ্ঠানিকতা সময়ের অপেক্ষা।
বাংলাদেশি এক ব্যক্তি, যিনি দীর্ঘদিন ফিনল্যান্ডে বসবাস করেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন-১৭টি দেশ ভ্রমণ করে তিনি বুঝেছেন, নিরাপত্তা ও ব্যক্তিস্বাধীনতায় ফিনল্যান্ডের সমকক্ষ দেশ খুব কম।
ফিনল্যান্ড একটি সমাজকল্যাণমূলক রাষ্ট্র। আয়ের ভিত্তিতে কর আরোপ করা হয় এবং সেই কর থেকেই সরকার নাগরিকদের জন্য শিক্ষা, শিশুভাতা, মাতৃত্ব–পিতৃত্ব ভাতা, বেকার ভাতা, আবাসন সহায়তা, স্বাস্থ্যসেবা ও বয়স্ক ভাতার মতো সুবিধা প্রদান করে।
শীতপ্রধান ও অন্ধকারাচ্ছন্ন দেশের বাসিন্দাদের জন্য ভিটামিন-ডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বছরের বড় সময় সূর্যালোক কম থাকলেও ফিনিশরা নিয়মমাফিক জীবনযাপন ও পরিশ্রমী মনোভাব দিয়ে তা সামলে নেয়। লিঙ্গসমতায়ও ফিনল্যান্ড বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর একটি।
বাংলাদেশ থেকে বহু বছর ধরে শিক্ষার্থী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও ব্যবসায়ীরা ফিনল্যান্ডে যাচ্ছেন-উন্নত জীবন, স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় কল্যাণব্যবস্থার আকর্ষণে।
লেখক: আইনজীবী, জজ কোর্ট, জয়পুরহাট]