জিয়াউদ্দীন আহমেদ
চট্টগ্রামের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্প এবং ঢাকার কাছে পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার নিমিত্তে দুটি বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি হয়েছে।
দেশের দুটি টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দুটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে, সরকার বলছে, চুক্তির কোন কিছু প্রকাশ করা যাবে না। এখানেই সকলের সন্দেহ। চুক্তির শর্ত অজ্ঞাত থাকায় অনেকে মনে করছে, দেশের স্বার্থ বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে, কেউ কেউ বলছে টার্মিনাল দুটি সামরিক উদ্দেশ্যেও ব্যবহৃত হবে। চুক্তি গোপন থাকলে জনগণের কল্পনার ডানা আরও বাড়তে থাকবে
চট্টগ্রামের লালদিয়া কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে ডেনমার্কভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস এবং ঢাকার পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মেডলগ। লালদিয়া টার্মিনাল দেওয়া হয়েছে ৪৮ বছরের জন্য এবং পানগাঁও টার্মিনাল দেওয়া হয়েছে ২২ বছরের জন্য। এই চুক্তি নিয়ে কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন মিডিয়ায় বিচার-বিশ্লেষণ চলছে। বেশিরভাগ বিচার-বিশ্লেষণ চুক্তির বিপক্ষে, যারা পক্ষে বলছেন তারাও দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন। সবার প্রশ্ন, চুক্তি করার ক্ষেত্রে সরকার এত তাড়াহুড়ো করছে কেন? কেউ কেউ এত দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তির বিপক্ষে যুক্তি পেশ করছেন। তবে চুক্তিটি গোপন রাখার কারণে পক্ষ-বিপক্ষের সবাই উদ্বিগ্ন।
তাড়াহুড়ো করে কাজ করার রীতি বাংলাদেশে নেই। বাংলাদেশে আমলাতন্ত্রের লাল ফিতায় আবদ্ধ নথি ঘুষ না দিলে সচরাচর নড়াচড়া করে না। সরকারের কোন দপ্তরে দ্রুত কাজ করার নজির না থাকায় অল্প সময়ে কোন কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে সবাই বিস্মিত হয়, খুঁত খোঁজার নিরীক্ষা চলে। ঘুষ ছাড়াও নথির স্থবিরতার কারণ আমলারা অপ্রয়োজনীয় কাজে বেশি ব্যস্ত থাকেন, ঘন ঘন বিদেশে গমন করেন, যতদিন বিদেশে থাকেন ততদিন দপ্তরের কাজ বন্ধ থাকে। বৈদেশিক মুদ্রার ক্রাইসিস থাকাকালীন সরকারের কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ প্রায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কিছুদিন পরই আবার পুরোদমে শুরু হয়ে যায়। বড় বড় কর্তাদের বিদেশ ভ্রমণকে জায়েজ করার জন্য ছোট ছোট কর্তাদের বিদেশ ভ্রমণকে স্বীকার করে নিতে হয়। দেশে আয়োজিত সেমিনার, কর্মশালা, প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণে কর্মকর্তাদের আগ্রহ একেবারেই থাকে না, কিন্তু একই বিষয়ে এই সকল আয়োজন বিদেশ হলে তা লুফে নেওয়ার প্রতিযোগিতা হয়।
দ্রুত কাজ করলে সবাই শুধু বিস্মিত হয় না, বিপদেরও আশঙ্কা থাকে। কম সময়ের মধ্যে চুক্তি করায় অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে এখন সন্দেহ করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার বিদায় নেওয়ার পর সরকারি নিরীক্ষা বিভাগ দ্রুত চুক্তি করার পশ্চাতে হাজারো আপত্তি উত্থাপন করবে। বহু বছর আগে দেশে অনবচ্ছিন্ন হরতাল ও অবরোধ চলাকালীন অবরোধের আওতা বহির্ভূত সাপ্তাহিক ছুটির দিনে জরুরি বিবেচনায় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির একটি সভা করেছিলাম, সরকারের নিরীক্ষা বিভাগ এই মর্মে আপত্তি উত্থাপন করে যে, বিদেশি সরবরাহকারীর সঙ্গে যোগসাজসে অর্থ আত্মসাত করার উদ্দেশ্যে ছুটির দিনে সভা করা হয়েছে। এই মহাবিপদ থেকে কিভাবে রক্ষা পেয়েছিলাম তা আর মনে নেই। ‘ড্যান্ডি ডায়িং লিমিটেড’-এর মালিক ছিলেন বিএনপির তারেক রহমান ও তাদের পরিবারের সদস্যবৃন্দ। ড্যান্ডি ডায়িং-এর লোন দ্রুত অনুমোদন করায় মিডিয়া চিৎকার দিয়ে খুঁত খুঁজতে শুরু করল। কেন এমন হয়? কারণ দ্রুত কাজ করার নিয়মকে ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজ আমলারা অনিয়মে পরিণত করে ফেলেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে তাড়াহুড়ো করে এই চুক্তি করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, কারণ তাদের মেয়াদ আসছে ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়ে যাচ্ছে, দলীয় সরকার এলে এই চুক্তি নাও হতে পারে। দলীয় সরকারের প্রশ্রয়ে শ্রমিক-কর্মচারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে, সামলানো সহজ হয় না। একই কারণে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক তাড়াহুড়ো করে সঞ্চয়পত্র বিক্রিসহ টাকা আদান-প্রদান সংশ্লিষ্ট সব কাউন্টার বন্ধ করে দিয়েছে। আগেও কয়েকবার বন্ধ করা হয়েছিল, কিন্তু কর্মচারী সংগঠনগুলোর প্রেসার ও বাস্তবতা বিচার করে আবার চালু করতে হয়েছে। খুব বেশি বেনিফিট না থাকায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও সরকারের সঞ্চয়পত্র বিক্রি ও সরকারি একাউন্টের লেনদেনে আগ্রহী নয়। গভর্নর থাকাকালীন ফখরুদ্দিন আহমেদ একবার তার ড্রাইভারকে একটি ছেঁড়ানোট বদলানোর জন্য একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকে পাঠিয়েছিলেন, ব্যাংক বদলিয়ে দেয়নি। কারণ অগ্রহণযোগ্য কোন নোট একবার গৃহীত হয়ে গেলে তার পুনর্ভরণের দায় বাণিজ্যিক ব্যাংককে বহন করতে হয়। দলীয় সরকার এসে যাতে আবার লেনদেন চালু করতে না পারে সেজন্য নাকি দ্রুত কাউন্টারগুলো ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে।
তাড়াহুড়ো করে চুক্তি করা হলেও স্বাক্ষর করার আগে বিভিন্ন শর্তের পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা প্রয়োজন, কারণ একবার স্বাক্ষর হয়ে গেলে তা স্বার্থবিরোধী হলেও জগদ্দল পাথরের মতো তা ঘাড়ের ওপর চেপে বসে, সরানো যায় না। কর্ণফুলী টার্মিনালের ফিজিবিলিটি স্টাডিতে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার পরিচয় না থাকায় এখন লোকসান হচ্ছে। প্রাক্কলন ঠিক থাকলে অন্তর্বর্তী সরকারে আমলে মেট্রোরেল নির্মাণ খরচ বেড়ে যেত না। উচ্চ সুদের ঋণে নির্মিত হম্বানটোটা সমুদ্রবন্দর নিয়ে শ্রীলঙ্কা বিপদে পড়েছে। চীনের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী হম্বানটোটা সমুদ্রবন্দর এবং তার সংলগ্ন ১৫ হাজার একর জমি শিল্পাঞ্চল তৈরির জন্য ৯৯ বছরের জন্য ইজারা দিতে হয়েছে। বন্দর পরিচালনার নিয়ন্ত্রণ শ্রীলঙ্কার হাতে না থাকায় এখন চীনের যুদ্ধ জাহাজও হম্বানটোটা বন্দরে ভিড়ছে, শ্রীলঙ্কা বাধা দিতে পারছে না। শ্রীলঙ্কা চাইলেও এই চুক্তি বাতিল করতে পারছে না, কারণ বাতিলের জরিমানা দিতে হলে শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হয়ে যাবে।
আরও একটি প্রশ্ন উত্থিত হচ্ছে যার উত্তর কারো কাছে নেই। দেশের দুটি টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দুটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে, সরকার বলছে, চুক্তির কোন কিছু প্রকাশ করা যাবে না। এখানেই সকলের সন্দেহ। চুক্তির শর্ত অজ্ঞাত থাকায় অনেকে মনে করছে, দেশের স্বার্থ বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে, কেউ কেউ বলছে টার্মিনাল দুটি সামরিক উদ্দেশ্যেও ব্যবহৃত হবে। চুক্তি গোপন থাকলে জনগণের কল্পনার ডানা আরও বাড়তে থাকবে। ১৯৭২ সনে সম্পাদিত ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তি’ নিয়ে গুজবের বন্যা বয়ে গিয়েছিল। বিরোধী দলের কথিত ‘গোলামী চুক্তি’ সম্পর্কে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ তার ‘এরা অব শেখ মুজিবুর রহমান’ বইটিতে বিশদ বর্ণনা করেছেন, তার ভাষ্য অনুযায়ী এই চুক্তি দেশের স্বার্থ বিরোধী ছিল না। কিন্তু মওদুদ আহমদের এই বইটি সাধারণ লোকজন পড়েনি।
আরেকটি প্রশ্ন হচ্ছে, বন্দর টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির দ্বারা পরিচালনার গরজ কেন অনুভূত হলো। হতে পারে বর্তমানে কন্টেইনার হ্যাণ্ডলিং ঠিকমত হচ্ছে না, কর্মীরা কাজে আন্তরিক নয়, ঘুষ না দিলে কাজ করে না। অবশ্য অনিয়ম ও ধীরগতির কারণে আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হওয়ায় অভিযোগ ব্যবসায়ীরা অনেক আগে থেকেই দিয়ে আসছে। আরেকটি কারণ হতে পারে, টার্মিনাল নির্মাণ বা কন্টেইনার হ্যাণ্ডলিংয়ের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সরঞ্জাম ক্রয়ের আর্থিক সামর্থ বাংলাদেশ সরকারের নেই। ইতঃপূর্ব নাকি বন্দর শ্রমিকদের বাধার মুখে কন্টেইনার হ্যাণ্ডলিং সংশ্লিষ্ট আধুনিক যন্ত্রপাতি সরকারের পক্ষে ক্রয় করা সম্ভব হয়নি। আরেকটি কারণ হতে পারে, দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে পানগাঁও টার্মিনাল অবিরত লোকসান দিচ্ছে। অন্যদিকে লালদিয়া টার্মিনালের অস্তিত্ব এখন নেই, চুক্তিবদ্ধ কোম্পানি ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা খরচ করে এই টার্মিনাল নির্মাণ করবে। প্রকল্পটিতে স্থানীয় অংশীদার হিসেবে রয়েছে কিউএনএস কনটেইনার সার্ভিসেস। এই টার্মিনাল চালু হবে ২০৩০ সনে।
লালদিয়া চালু হলে তা হবে চট্টগ্রাম বন্দরের পঞ্চম কনটেইনার টার্মিনাল। এই টার্মিনাল নির্মাণ সংশ্লিষ্ট চুক্তি সম্পাদনে অন্তর্বর্তী সরকারের খুব বেশি কৃতিত্ব নেই। কারণ লালদিয়া চরে টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৩ সনে। প্রকল্পটি অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদিত হওয়ার পর ৫টি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে মূল দরপত্রে অংশগ্রহণের জন্য প্রাকযোগ্য হিসেবে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত করা হয়। এই পর্যায়ে আওয়ামী লীগ সরকার দরপত্রের প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে জিটুজি ভিত্তিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০২১ সালের জুনে ডেনমার্ক সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের জিটুজি সমঝোতা হয়। ২০২৩ সনে লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করে প্রস্তাব দেয় ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালস এবং ২০২৪ সনের জানুয়ারি মাসে দুই দেশের যৌথ সভায় লালদিয়া প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, অন্তর্বর্তী সরকার এসে শুধু শর্তাদি সন্নিবেশ করে চুক্তিটি সম্পাদন করল।
চট্টগ্রামের লালদিয়া টার্মিনাল চালু হলে কন্টেইনার হ্যাণ্ডলিংয়ের সংখ্যা বেড়ে যাবে, আমদানি-রপ্তানি দ্রুত হবে। কিন্তু ১৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পানগাঁও টার্মিনাল মাত্র ১২ বছর পূর্বে ২০১৩ সনে উদ্বোধন করা হয়েছে, তাই এই টার্মিনালে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম না থাকার কথা নয়। এছাড়াও পানগাঁও নদী বন্দর থেকে বছরে আয় হয় ৫৬০ কোটি টাকা। তাই একটি লাভজনক টার্মিনালকে শুধু পরিচালনার জন্য বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়া সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত বলে মনে হচ্ছে না। সরকারের যুক্তি হচ্ছে বন্দরের সক্ষমতা বাড়লে বৈদেশিক বাণিজ্য গতিশীল হবে। কিন্তু বন্দরে সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিদেশি কোম্পানির অপরিহার্যতা কেন? সক্ষমতা বাড়ানোর প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে তা সমাধানের চেষ্টা নিয়ে কি অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হয়েছে? টার্মিনাল পরিচালনা বাবত বিদেশি কোম্পানিটি হয়তো বছরে ৫৬০ কোটি টাকার বেশি নিয়ে যাবে, তাও আবার বৈদেশিক মুদ্রায়। চুক্তির পর বেশি বেশি লাভ দেখানোর জন্য সরকার একটি চাণক্যনীতি গ্রহণ করেছে, কন্টেইনার হ্যাণ্ডলিং চার্জসহ বন্দরে প্রদেয় বিভিন্ন সেবার মূল্য ৩ থেকে ৪ গুণ বৃদ্ধি করে রাখা হয়েছে। এই বৃদ্ধির কারণে আমদানি-রপ্তানির খরচ বেড়ে যাবে, আমদানি খরচ বাড়লে মূল্যস্ফীতি বাড়বে, অন্যদিকে রপ্তানি খরচ বাড়লে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ও আয় কমে যেতে পারে।
বিদেশি বিনিয়োগ ও কর্মদক্ষতা বাড়ানোর জন্য একদিকে স্পর্শকাতর নদী ও সমুদ্রবন্দর পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশি কোম্পানির হাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে বিরাজমান অস্থির পরিবেশের কারণে দেশে অসংখ্য কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শুধু টার্মিনালের অনিয়ম দূর করে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হলে কাজ হবে না, পুরো দেশটিই অনিয়ম ও অকর্মে ভরা। যে দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার করার জন্য ১০ জন সৎ ও নিরপেক্ষ লোক পাওয়া যায় না, যেখানে বিমানবন্দরে যাত্রীর ব্যাগ কাটা হচ্ছে অহর্নিশ, যে দেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর লকারের খোঁজ নিতে লাগে ১৫ মাস, যে দেশে সরকার পরিবর্তনের পরপর বিভিন্ন সংস্থার নাম পরিবর্তনে খরচ করা হয় কোটি কোটি টাকা, সেই দেশে শুধু দুটি টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দিলে কি সমাধান মিলবে?
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
[লেখক: সাবেক নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক]
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
জিয়াউদ্দীন আহমেদ
শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
চট্টগ্রামের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্প এবং ঢাকার কাছে পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার নিমিত্তে দুটি বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি হয়েছে।
দেশের দুটি টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দুটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে, সরকার বলছে, চুক্তির কোন কিছু প্রকাশ করা যাবে না। এখানেই সকলের সন্দেহ। চুক্তির শর্ত অজ্ঞাত থাকায় অনেকে মনে করছে, দেশের স্বার্থ বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে, কেউ কেউ বলছে টার্মিনাল দুটি সামরিক উদ্দেশ্যেও ব্যবহৃত হবে। চুক্তি গোপন থাকলে জনগণের কল্পনার ডানা আরও বাড়তে থাকবে
চট্টগ্রামের লালদিয়া কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে ডেনমার্কভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস এবং ঢাকার পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মেডলগ। লালদিয়া টার্মিনাল দেওয়া হয়েছে ৪৮ বছরের জন্য এবং পানগাঁও টার্মিনাল দেওয়া হয়েছে ২২ বছরের জন্য। এই চুক্তি নিয়ে কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন মিডিয়ায় বিচার-বিশ্লেষণ চলছে। বেশিরভাগ বিচার-বিশ্লেষণ চুক্তির বিপক্ষে, যারা পক্ষে বলছেন তারাও দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন। সবার প্রশ্ন, চুক্তি করার ক্ষেত্রে সরকার এত তাড়াহুড়ো করছে কেন? কেউ কেউ এত দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তির বিপক্ষে যুক্তি পেশ করছেন। তবে চুক্তিটি গোপন রাখার কারণে পক্ষ-বিপক্ষের সবাই উদ্বিগ্ন।
তাড়াহুড়ো করে কাজ করার রীতি বাংলাদেশে নেই। বাংলাদেশে আমলাতন্ত্রের লাল ফিতায় আবদ্ধ নথি ঘুষ না দিলে সচরাচর নড়াচড়া করে না। সরকারের কোন দপ্তরে দ্রুত কাজ করার নজির না থাকায় অল্প সময়ে কোন কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে সবাই বিস্মিত হয়, খুঁত খোঁজার নিরীক্ষা চলে। ঘুষ ছাড়াও নথির স্থবিরতার কারণ আমলারা অপ্রয়োজনীয় কাজে বেশি ব্যস্ত থাকেন, ঘন ঘন বিদেশে গমন করেন, যতদিন বিদেশে থাকেন ততদিন দপ্তরের কাজ বন্ধ থাকে। বৈদেশিক মুদ্রার ক্রাইসিস থাকাকালীন সরকারের কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ প্রায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কিছুদিন পরই আবার পুরোদমে শুরু হয়ে যায়। বড় বড় কর্তাদের বিদেশ ভ্রমণকে জায়েজ করার জন্য ছোট ছোট কর্তাদের বিদেশ ভ্রমণকে স্বীকার করে নিতে হয়। দেশে আয়োজিত সেমিনার, কর্মশালা, প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণে কর্মকর্তাদের আগ্রহ একেবারেই থাকে না, কিন্তু একই বিষয়ে এই সকল আয়োজন বিদেশ হলে তা লুফে নেওয়ার প্রতিযোগিতা হয়।
দ্রুত কাজ করলে সবাই শুধু বিস্মিত হয় না, বিপদেরও আশঙ্কা থাকে। কম সময়ের মধ্যে চুক্তি করায় অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে এখন সন্দেহ করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার বিদায় নেওয়ার পর সরকারি নিরীক্ষা বিভাগ দ্রুত চুক্তি করার পশ্চাতে হাজারো আপত্তি উত্থাপন করবে। বহু বছর আগে দেশে অনবচ্ছিন্ন হরতাল ও অবরোধ চলাকালীন অবরোধের আওতা বহির্ভূত সাপ্তাহিক ছুটির দিনে জরুরি বিবেচনায় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির একটি সভা করেছিলাম, সরকারের নিরীক্ষা বিভাগ এই মর্মে আপত্তি উত্থাপন করে যে, বিদেশি সরবরাহকারীর সঙ্গে যোগসাজসে অর্থ আত্মসাত করার উদ্দেশ্যে ছুটির দিনে সভা করা হয়েছে। এই মহাবিপদ থেকে কিভাবে রক্ষা পেয়েছিলাম তা আর মনে নেই। ‘ড্যান্ডি ডায়িং লিমিটেড’-এর মালিক ছিলেন বিএনপির তারেক রহমান ও তাদের পরিবারের সদস্যবৃন্দ। ড্যান্ডি ডায়িং-এর লোন দ্রুত অনুমোদন করায় মিডিয়া চিৎকার দিয়ে খুঁত খুঁজতে শুরু করল। কেন এমন হয়? কারণ দ্রুত কাজ করার নিয়মকে ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজ আমলারা অনিয়মে পরিণত করে ফেলেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে তাড়াহুড়ো করে এই চুক্তি করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, কারণ তাদের মেয়াদ আসছে ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়ে যাচ্ছে, দলীয় সরকার এলে এই চুক্তি নাও হতে পারে। দলীয় সরকারের প্রশ্রয়ে শ্রমিক-কর্মচারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে, সামলানো সহজ হয় না। একই কারণে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক তাড়াহুড়ো করে সঞ্চয়পত্র বিক্রিসহ টাকা আদান-প্রদান সংশ্লিষ্ট সব কাউন্টার বন্ধ করে দিয়েছে। আগেও কয়েকবার বন্ধ করা হয়েছিল, কিন্তু কর্মচারী সংগঠনগুলোর প্রেসার ও বাস্তবতা বিচার করে আবার চালু করতে হয়েছে। খুব বেশি বেনিফিট না থাকায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও সরকারের সঞ্চয়পত্র বিক্রি ও সরকারি একাউন্টের লেনদেনে আগ্রহী নয়। গভর্নর থাকাকালীন ফখরুদ্দিন আহমেদ একবার তার ড্রাইভারকে একটি ছেঁড়ানোট বদলানোর জন্য একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকে পাঠিয়েছিলেন, ব্যাংক বদলিয়ে দেয়নি। কারণ অগ্রহণযোগ্য কোন নোট একবার গৃহীত হয়ে গেলে তার পুনর্ভরণের দায় বাণিজ্যিক ব্যাংককে বহন করতে হয়। দলীয় সরকার এসে যাতে আবার লেনদেন চালু করতে না পারে সেজন্য নাকি দ্রুত কাউন্টারগুলো ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে।
তাড়াহুড়ো করে চুক্তি করা হলেও স্বাক্ষর করার আগে বিভিন্ন শর্তের পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা প্রয়োজন, কারণ একবার স্বাক্ষর হয়ে গেলে তা স্বার্থবিরোধী হলেও জগদ্দল পাথরের মতো তা ঘাড়ের ওপর চেপে বসে, সরানো যায় না। কর্ণফুলী টার্মিনালের ফিজিবিলিটি স্টাডিতে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার পরিচয় না থাকায় এখন লোকসান হচ্ছে। প্রাক্কলন ঠিক থাকলে অন্তর্বর্তী সরকারে আমলে মেট্রোরেল নির্মাণ খরচ বেড়ে যেত না। উচ্চ সুদের ঋণে নির্মিত হম্বানটোটা সমুদ্রবন্দর নিয়ে শ্রীলঙ্কা বিপদে পড়েছে। চীনের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী হম্বানটোটা সমুদ্রবন্দর এবং তার সংলগ্ন ১৫ হাজার একর জমি শিল্পাঞ্চল তৈরির জন্য ৯৯ বছরের জন্য ইজারা দিতে হয়েছে। বন্দর পরিচালনার নিয়ন্ত্রণ শ্রীলঙ্কার হাতে না থাকায় এখন চীনের যুদ্ধ জাহাজও হম্বানটোটা বন্দরে ভিড়ছে, শ্রীলঙ্কা বাধা দিতে পারছে না। শ্রীলঙ্কা চাইলেও এই চুক্তি বাতিল করতে পারছে না, কারণ বাতিলের জরিমানা দিতে হলে শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হয়ে যাবে।
আরও একটি প্রশ্ন উত্থিত হচ্ছে যার উত্তর কারো কাছে নেই। দেশের দুটি টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দুটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে, সরকার বলছে, চুক্তির কোন কিছু প্রকাশ করা যাবে না। এখানেই সকলের সন্দেহ। চুক্তির শর্ত অজ্ঞাত থাকায় অনেকে মনে করছে, দেশের স্বার্থ বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে, কেউ কেউ বলছে টার্মিনাল দুটি সামরিক উদ্দেশ্যেও ব্যবহৃত হবে। চুক্তি গোপন থাকলে জনগণের কল্পনার ডানা আরও বাড়তে থাকবে। ১৯৭২ সনে সম্পাদিত ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তি’ নিয়ে গুজবের বন্যা বয়ে গিয়েছিল। বিরোধী দলের কথিত ‘গোলামী চুক্তি’ সম্পর্কে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ তার ‘এরা অব শেখ মুজিবুর রহমান’ বইটিতে বিশদ বর্ণনা করেছেন, তার ভাষ্য অনুযায়ী এই চুক্তি দেশের স্বার্থ বিরোধী ছিল না। কিন্তু মওদুদ আহমদের এই বইটি সাধারণ লোকজন পড়েনি।
আরেকটি প্রশ্ন হচ্ছে, বন্দর টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির দ্বারা পরিচালনার গরজ কেন অনুভূত হলো। হতে পারে বর্তমানে কন্টেইনার হ্যাণ্ডলিং ঠিকমত হচ্ছে না, কর্মীরা কাজে আন্তরিক নয়, ঘুষ না দিলে কাজ করে না। অবশ্য অনিয়ম ও ধীরগতির কারণে আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হওয়ায় অভিযোগ ব্যবসায়ীরা অনেক আগে থেকেই দিয়ে আসছে। আরেকটি কারণ হতে পারে, টার্মিনাল নির্মাণ বা কন্টেইনার হ্যাণ্ডলিংয়ের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সরঞ্জাম ক্রয়ের আর্থিক সামর্থ বাংলাদেশ সরকারের নেই। ইতঃপূর্ব নাকি বন্দর শ্রমিকদের বাধার মুখে কন্টেইনার হ্যাণ্ডলিং সংশ্লিষ্ট আধুনিক যন্ত্রপাতি সরকারের পক্ষে ক্রয় করা সম্ভব হয়নি। আরেকটি কারণ হতে পারে, দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে পানগাঁও টার্মিনাল অবিরত লোকসান দিচ্ছে। অন্যদিকে লালদিয়া টার্মিনালের অস্তিত্ব এখন নেই, চুক্তিবদ্ধ কোম্পানি ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা খরচ করে এই টার্মিনাল নির্মাণ করবে। প্রকল্পটিতে স্থানীয় অংশীদার হিসেবে রয়েছে কিউএনএস কনটেইনার সার্ভিসেস। এই টার্মিনাল চালু হবে ২০৩০ সনে।
লালদিয়া চালু হলে তা হবে চট্টগ্রাম বন্দরের পঞ্চম কনটেইনার টার্মিনাল। এই টার্মিনাল নির্মাণ সংশ্লিষ্ট চুক্তি সম্পাদনে অন্তর্বর্তী সরকারের খুব বেশি কৃতিত্ব নেই। কারণ লালদিয়া চরে টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৩ সনে। প্রকল্পটি অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদিত হওয়ার পর ৫টি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে মূল দরপত্রে অংশগ্রহণের জন্য প্রাকযোগ্য হিসেবে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত করা হয়। এই পর্যায়ে আওয়ামী লীগ সরকার দরপত্রের প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে জিটুজি ভিত্তিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০২১ সালের জুনে ডেনমার্ক সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের জিটুজি সমঝোতা হয়। ২০২৩ সনে লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করে প্রস্তাব দেয় ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালস এবং ২০২৪ সনের জানুয়ারি মাসে দুই দেশের যৌথ সভায় লালদিয়া প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, অন্তর্বর্তী সরকার এসে শুধু শর্তাদি সন্নিবেশ করে চুক্তিটি সম্পাদন করল।
চট্টগ্রামের লালদিয়া টার্মিনাল চালু হলে কন্টেইনার হ্যাণ্ডলিংয়ের সংখ্যা বেড়ে যাবে, আমদানি-রপ্তানি দ্রুত হবে। কিন্তু ১৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পানগাঁও টার্মিনাল মাত্র ১২ বছর পূর্বে ২০১৩ সনে উদ্বোধন করা হয়েছে, তাই এই টার্মিনালে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম না থাকার কথা নয়। এছাড়াও পানগাঁও নদী বন্দর থেকে বছরে আয় হয় ৫৬০ কোটি টাকা। তাই একটি লাভজনক টার্মিনালকে শুধু পরিচালনার জন্য বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়া সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত বলে মনে হচ্ছে না। সরকারের যুক্তি হচ্ছে বন্দরের সক্ষমতা বাড়লে বৈদেশিক বাণিজ্য গতিশীল হবে। কিন্তু বন্দরে সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিদেশি কোম্পানির অপরিহার্যতা কেন? সক্ষমতা বাড়ানোর প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে তা সমাধানের চেষ্টা নিয়ে কি অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হয়েছে? টার্মিনাল পরিচালনা বাবত বিদেশি কোম্পানিটি হয়তো বছরে ৫৬০ কোটি টাকার বেশি নিয়ে যাবে, তাও আবার বৈদেশিক মুদ্রায়। চুক্তির পর বেশি বেশি লাভ দেখানোর জন্য সরকার একটি চাণক্যনীতি গ্রহণ করেছে, কন্টেইনার হ্যাণ্ডলিং চার্জসহ বন্দরে প্রদেয় বিভিন্ন সেবার মূল্য ৩ থেকে ৪ গুণ বৃদ্ধি করে রাখা হয়েছে। এই বৃদ্ধির কারণে আমদানি-রপ্তানির খরচ বেড়ে যাবে, আমদানি খরচ বাড়লে মূল্যস্ফীতি বাড়বে, অন্যদিকে রপ্তানি খরচ বাড়লে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ও আয় কমে যেতে পারে।
বিদেশি বিনিয়োগ ও কর্মদক্ষতা বাড়ানোর জন্য একদিকে স্পর্শকাতর নদী ও সমুদ্রবন্দর পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশি কোম্পানির হাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে বিরাজমান অস্থির পরিবেশের কারণে দেশে অসংখ্য কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শুধু টার্মিনালের অনিয়ম দূর করে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হলে কাজ হবে না, পুরো দেশটিই অনিয়ম ও অকর্মে ভরা। যে দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার করার জন্য ১০ জন সৎ ও নিরপেক্ষ লোক পাওয়া যায় না, যেখানে বিমানবন্দরে যাত্রীর ব্যাগ কাটা হচ্ছে অহর্নিশ, যে দেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর লকারের খোঁজ নিতে লাগে ১৫ মাস, যে দেশে সরকার পরিবর্তনের পরপর বিভিন্ন সংস্থার নাম পরিবর্তনে খরচ করা হয় কোটি কোটি টাকা, সেই দেশে শুধু দুটি টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দিলে কি সমাধান মিলবে?
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
[লেখক: সাবেক নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক]